পুলিশের সাথে আমার দহরম মহরম না থাকলেও তাদের সাথে আমার দেখা-সাক্ষাৎ প্রচুর হয়েই যায় বিভিন্ন কারণে। যদিও পুলিশের ব্যাপারে আমার বিন্দু মাত্র আগ্রহ নেই, কিন্তু আমার প্রতি মনে হয় তাদের অনেক আগ্রহ আছে। যাই হোক, মূল বক্তব্যে আসি, বাজে কথা বলে সময় নষ্ট করার কোন মানে হয় না, যদিও পুরাটাই বাজে কথায় ভরা।
কাহিনী শুরু করবার পূর্বেই বলে নিই যে পরিচয় গোপন রাখার জন্য মূল ঘটনা ঠিক রেখে চরিত্রদের সাথে সম্পর্ক এবং নাম বদলে বলব, যাতে কেউ কখনই আসল পরিচয় বের করে ফেলতে না পারে। কারণ, আমাকে প্রকৃত পরিচয় প্রকাশের অনুমতি দেয়া হয়নি।
একদিন সকালে আমার এক বন্ধু তার প্রেমিকাকে সাথে নিয়ে বের হলো রিক্সা ভ্রমণে। তারা নাকি সারাদিন ঘুরে বেড়াবে রিক্সায় করে। তারপর সন্ধ্যাবেলা ফিরে এসে চলে যাবে যে যার বাড়ি। এখন ওদের সমস্যা হলো, তাদের সাথের গাড়িগুলো কোথায় থাকবে, এবং যদি তাদের বাবা-মারা ফোন করে বসে, তাহলে সেক্ষেত্রে তারা কি করবে। যথারীতি আমার বন্ধুবর আমার নামটি তাদের বাসায় বলে আসল, এবং আমি যেখানে থাকতাম সেখানেই গাড়ি রেখে গেল। আর আমিও uncle-aunty কে ফোনে বলে দিলাম যে ও আমার সাথেই থাকবে। অর্থাৎ কিনা আমার মাথায় কাঁঠাল ভাঙ্গার পরিপূর্ণ ব্যবস্থা করে দিলাম।
দুই প্রেমিক-প্রেমিকা মিলে ঘুরে বেড়াতে সময় নেবে প্রচুর। আমি এর মাঝে অন্য কিছু করতে পারি নির্দ্বিধায়। এই ভেবে আমিও বাইরে কোথাও যাবার পরিকল্পনা নিয়ে বসে গেলাম আরও কিছু বন্ধুর সাথে। যেমনি ভাবা তেমনি কাজ। দ্রুত একটি মাইক্রোবাসের ব্যাবস্থাও করা হয়ে গেল। তাও এসব করতে প্রায় ঘন্টা তিনেক সময় লেগে গেল। যেইনা আমরা বের হলাম বাসা থেকে, ওমনি দেখি আমার সেই প্রেমিক বন্ধু (ধরে নিচ্ছি তার নাম ছিল রনি) আমাকে ফোন করেছে। ফোন ধরলাম। অপর প্রান্ত গম্ভীর কণ্ঠে প্রশ্ন করল,
- আজমীর তুই কইরে?
- আমি এখন সিঁড়িতে। বাইরে যাচ্ছি। কেন? কোন কাজ আছে কি?
- হু। একটু গোলমাল হইয়া গেছে। তোর সাথে কি পোলাপান আছে, নাকি আসে নাই?
- নাহ, আমার সাথে মোটামুটি অনেকে public আছে, যাদের সবাইরে তুই চিনবি না। কেন? কি হলো হঠাৎ যে সবাইকে খুঁজে বেড়াচ্ছিস? কোন ঝামেলা হয় নাই তো আবার?
- হু, ঝামেলাই। গ্যাঞ্জাম লাগসে, আমি আমার এলাকার পোলাপানরে খবর দিসি, এখন তুইও যেই কয়জন পারিস, নিয়া চইল্ল্যা আয়।
- আসতে পারি, but গ্যাঞ্জামে আমি নাই। যদি মিটমাটের কথা হয়, তাহলে আমি আছি।নাইলে কিন্তু আমি নাই। গ্যাঞ্জাম নিশ্চয় লাগসে তোর girl friend নিয়া। নিশ্চয় কোন টিটকারি মারার পর তুই ওর সামনে hero সাজতে গিয়া পালটা কিছু বলেছিস, and then কথা কাটাকাটি, এবং গ্যাঞ্জাম শুরু। এছাড়াতো মনে হয় না কিছু হয়েছে। কি ঠিক বললাম, নাকি ভুল বললাম?
- বলসিস ঠিকওনা ভুলওন, কিন্তু এখন মেজাজ খারাপ, আরও মাথা গরম করিস না। আইলে আয়, না আইলে direct বল। এত কথার প্যাচ দিসনা। মেজাজ আরও খারাপ হইয়া যাইতাসে।
- Ok. আমি আসতেসি।
তারপর আমাদের মাইক্রোবাস, যা কিনা বহু কষ্টে যোগাড় করা হয়েছিল ঘুরে বেড়াবার জন্য, তা নিয়ে উত্তরা গেলাম দুই প্রেমিক-প্রেমিকার নতুন কাহিনি দেখতে। ও আচ্ছা, কোথা থেকে উত্তরা গেলাম সেটাতো বলিনি। আমরা ধানমন্ডি থেকে উত্তরা গিয়েছিলাম। গাড়ির মধ্যে বসে আমাদের আলোচনার এটাও একটা বিষয় ছিল যে, ওরা যদি রিক্সা ভ্রমণে বের হয়ে থাকে তাহলে এটা কিভাবে সম্ভব যে এত দ্রুত উত্তরা গিয়ে বসে আছে। যাই হোক, ওখানে গেলেই জানা যাবে কীভাবে এবং কেন ওরা উত্তরা গেল। বৃথাই এই প্রসঙ্গে আমাদের বিতর্কের কোনই মানে হয়না। ঢাকা শহরের ঐতিহাসিক ট্রাফিক জ্যামের কারণে আমাদের পৌঁছাতে দীর্ঘ এক ঘন্টা সময় লেগে গেল। গিয়ে দেখি সেখানে প্রায় জনা বিশেক ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।
আমরা ছাড়াও একই সময় আরও দুইটি মাইক্রোবাস এসে দাঁড়াল। তারপর কোন ধরনের কথা হবার আগেই দেখলাম সেই জনা বিশেক ছেলে দাঁড়িয়ে আছে একজন ছেলেকে ঘিরে, যে নাকি মাঝে দাঁড়িয়ে আছে, এবং একজন একজন করে প্রত্যেকে তাকে চড় মারছে। সেই ছেলেটি আর কেউ নয়, আমার গাধা ধরনের সে বন্ধুটি। তাই দেখে কোন ধরনের কথা বলার আগেই, কিংবা শান্তির কথা শুরু করবার পূর্বেই আমার সাথের বাকিরা দেখি ঝাঁপিয়ে পড়ল। তারপর এক এক আজব মারামারি শুরু হয়ে গেল। এরই মাঝে কোথা থেকে জানি উত্তরা পুলিশ এসে পড়ল। তারপর সবাইকে ধরল। যথারীতি আমিও ধরা পড়লাম সেই দলের সাথে। তারপরে শুরু হলো আমার পুলিশের সাথে কথা বলা। আমি জানতাম মূল শত্রুটি কে। অর্থাৎ, কিনা প্রথম কে কথা বলেছিল। আমি বললাম যে, ওই ছেলেটি এবং তার তিন সংগী আমার সেই বন্ধুটির বান্ধবীকে হাত ধরে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে যাবার চেষ্টা করলে আমরা বাঁধা দিই, এবং সকল গোলমালের সূত্রপাত হয় সেখানেই। আমি সাক্ষী হিসাবে ডাক দিলাম ওদের দলেরই ছেলেদের। পুলিশের হাত হতে বাঁচার জন্য ওরাও আমাদের পক্ষেই সাক্ষ্য দিয়ে দিল। তখন পুলিশ অপর পক্ষের তিনজনকে ধরে কিছু চড়-থাপ্পর মেরে, কিছু টাকা খেয়ে ছেড়ে দিল। আমাদেরকে অনুরোধ করল চলে যেতে। যদিও আমার কোন দোষ ছিলনা, আমি আদৌ মারামারি করিনি, কিংবা বেকায়দায় পড়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম, তবুও পুলিশের সাথে আমার কথা বলতেই হলো, এবং দেখা হয়েই গেল।
মন্তব্য
হুম।
আজমীর—পুলিশ ভাই ভাই।
আমেরিকায় আইসাও রক্ষা নাই।
কি মাঝি? ডরাইলা?
তা যা বললেন দ্রোহী ভাই।
আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.
আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.
মোটামুটি লাগল।
অভী আগন্তুক
----------------
পুলিশের জন্য হ্যাঁ বলুন।
নিজে সচেতন থাকুন।
আপনি তো বিশাল হিরো...
---------------------------------
আমি ওকে বলি প্রত্যুৎপন্নবাটপারিত্বে পারদর্শী।
প্রত্যুৎপন্নবাটপারিত্ব - শব্দটা তো দারুণ বানিয়েছেন, ইশতি !
পছন্দ হলো খুব।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
তাও ভালো, ঢাকায় থাকতে কখনও পুলিশি ঝামেলায় পড়ি নাই, তবে ব্যাপক মজা পাইলাম। আপনার ৩ ের াগের কাহিনী আসতেছেনা যে বস???
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
নতুন মন্তব্য করুন