আমাকে আর কেউ পছন্দ করে কিনা তা আমার জানা নেই, কিন্তু পুলিশ নির্ঘাৎ আমাকে পছন্দ করে। তা নাহলে কি আর আমার পেছনে লেগে থাকতে পারে? বলুন, আপনারাই বলুন। আরে ভাই, আমিতো মানুষ, রোবটতো আর নই যে সব কিছু সবসময় ঠিক মত করতে পারব। আর মানুষ মাত্রেই ভুল করে।
হাজার হলেও বাংলাদেশ থেকে আসা বাঙ্গালি আমি। তাই বাঙ্গালি ধাঁচ অনুসরণ করতে গিয়ে আমেরিগো ভেসপুচির দেশ আমেরিকার ম্যাসেচুসেটস নামক স্টেটের বোস্টন নামক শহরে ভ্রমণে গিয়ে পুলিশের সাথে আমার দেখা হয়ে গেল। শুধু দেখা হলে কথা ছিলনা, কিন্তু তার পাশাপাশি পুলিশের রীতিমত বকাও খেয়ে গেলাম। যাই হোক, আমার উপর বিরক্ত হয়ে থাকলে দুঃখিত। এখুনি শুরু করছি মূল কাহিনী।
বাংলাদেশের ঢাকা শহরের সেন্ট যোসেফের দুই তুখোর ছাত্র, যাঁরা নাকি এখন Phd করছে, পরিকল্পনা করল নিউ ইয়র্ক হয়ে বোস্টন ঘুরতে যাবার। যেহেতু আমি জানি যে, আমার সাথের পরিকল্পনাকারীরা দুজনেই পরিকল্পনার ব্যাপারে চমৎকার, তাই আমি আদৌ মাথা ঘামালাম না সেই ব্যাপারে। যথারীতি সময় মত আমরা রওনা দিয়ে পৌঁছে গেলাম নিউ ইয়র্কে। সেখান থেকে আমাদের সাথে আরও তিনজন যোগ দিল বোস্টন ভ্রমণে। বের হয়ে গেলাম বোস্টনের উদ্দেশ্যে।
গাড়ি চালাচ্ছি আমি, আর আমার পাশে বসা আমারই এক গৃহসংগী তুহিন। তুহিন বারবার আমাকে সাবধান বাণী দিচ্ছিল যেন আমি গাড়ি গতিসীমার মধ্যে থেকে চালাই। এমনিতেই আমার ইতিহাস ভালনা, কে জানে কখন পুলিশ আটকে ফেলে। আর পেছনে বসে ছিল বাকি চারজন। তাই বলে কিন্তু শুধু এসব বাণীই যে চলছিল তা নয়, পাশাপাশি চলছিল চুটিয়ে আড্ডা আর বিভিন্ন দুষ্টুমি। এভাবেই বিভিন্ন কথা চালাচালির মধ্য দিয়ে আমরা এক সময় ঢুকে গেলাম বোস্টন শহরে।
বোস্টন শহরটি যেন এক মাকড়সার জাল। এক স্থানে এসে বুঝতে পারলাম ডানে যেতে হবে। কিন্তু কোন ডানে যাব সে নিয়ে দ্বিধায় পড়ে গেলাম। কেননা আমরা উপলব্ধি করলাম যে, আমরা এক সাত রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছি। এই দ্বিধাগ্রস্ততার মাঝেই চলে গেলাম এক দিকে। অল্প একটু দূর যেতে না যেতেই পিছে বেজে উঠল পুলিশের গাড়ির বিরক্তিকর ধ্বনি। আর এরই সাথে বাকি পাঁচজন বিভিন্নভাবে যা বলে উঠল, তার সারমর্ম দাঁড়ায় অনেকটা এরকম -
- তুমি মানেই পুলিশের সাথে দেখা। লাল বাতি মেরে দিয়েছিলে নাকি ডানে আসার সময়? তা নাহলে হঠাৎ কথা নেই বার্তা নেই তোমাকে থামাবে কেন? উফ, তোমাকে নিয়ে আর পারা গেলনা।
ভাবলাম, হয়তো আমারই দোষ। কিন্তু আমিতো জানামতে কোন আইন এবার ভংগ করিনি। তবে আবার কি করলাম। পিছে পুলিশ, আর গাড়ির ভেতর ১০ খানা চোখ আমার দিকে তাকানো, ভাল রকমের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি। এর মাঝে কি করব ঠিক বুঝে উঠতে পারছিনা, বেকায়দা অবস্থা পুরা। এই পরিস্থিতিতে তেমন কিছুই আর চিন্তা করতে পারছিনা। তাও দ্রুত চিন্তার চেষ্টা করছি থামাবার কারণ এবং সে অনুযায়ী কি চাপাবাজি করা যেতে পারে। এমনি সময় এক কৃষ্ণাংগ পুলিশ এসে দাঁড়াল যাত্রী আসনের পাশে।
পুলিশ আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষণ। তারপর শুরু করল তার প্রশ্নবাণ। একেতো আমি বাংলাদেশ থেকে আগত এক বেকুব বাঙ্গালি, তার উপর কৃষ্ণাংগের ইংরেজি, সেই বিচিত্র উচ্চারণের কথা বুঝতে আমার জান বের হয়ে যাবার উপক্রম। তো, আসেন, শোনেন আমার আর পুলিশের সে কথোপকথন। পুলিশ থেকেই শুরু করি। (যদিও বঙ্গানুবাদে আমি ভাল নই, তবুও চেষ্টা করছি আরকি)
- হচ্ছেটা কি এখানে?
- দুঃখিত, ঠিক বুঝলাম না।
- তা তোমাদের ছবিটি দেখেছ?
- দুঃখিত, ঠিক বুঝলাম না। (কি বলতাসে কিসসুইতো বুঝিনা)
- তোমাদের গাড়ির ছবিটা দেখেছ?
- (এদিক ওদিক তাকিয়ে অবাক হয়ে) ছবি?! কি ছবি?!! কোথায় ছবি?!!!
- আরে তোমাদের গাড়ির ছবির কথা বলছি।
- গাড়িরতো কোন ছবি আমাদের সাথে নেই! (কি আবোলতাবোল বলে এগুলা?!!)
- আরে বোকা, গাড়ির ভেতরের কথা বলছি।
- ও আচ্ছা। কেন? গাড়ির কি হল? গাড়িতো ঠিকই চলছে।
- আরে ধুর, তোমার গাড়িতে কটা সিট বেল্ট আছে বল দেখি।
- (ও আচ্ছা, ব্যাটা তাইলে ৫ জনের স্থানে ৬ জন উঠেছি বলিয়া ধরিয়াছেন। এখন দেখি কাল্লু মামার হাত হইতে কি রেহাইখানা পাওয়া সম্ভব হইয়া উঠে কিনা) মানে, দুঃখিত, আমিতো কখনও গুনে দেখিনি। তবে বললে আমি এখন গুনে দেখতে পারি।
- আমারতো মনে হয় ৫ টার বেশি নেই।
- (জ্বি মামা, এটা আমিও জানি) হতে পারে। মনে হয় ২ টা আছে। আমার আর আমার পাশের জনের।
- না, ৫ টা আছে। কিন্তু তোমার গাড়িতে ৬ জন বসা কেন?
- (ঠিক আছে মামু, তোমারে আরেকটু প্যাচাই) মানে ... আমরা ৬ জন ঘুরতে বের হয়েছিতো ... তাই ৬ জন বসা।
- ৫ টা বেল্ট থাকলে ৫ জনের বেশি বসা যায় না। এটা এখানকার আইন। আমি জানিনা তোমাদের ভার্জিনিয়াতে কি নিয়ম, কিন্তু এখানে এটাই নিয়ম।
- (ভার্জিনিয়া মামা আমার না, আমার হইল গিয়া বাংলাদেশ। ওইখানে ৫ জনের জায়গাতে ৫০ জন বইলেও সমস্যা নাই। তবে তোমারেতো এটা বলা যাইবনা) ও আচ্ছা। তাহলে মনে হয় আমার এখানে ৬ টা বেল্ট আছে।(মাথা চুলকাতে চুলকাতে উত্তর দিই আমি)
- হতেই পারেনা। তোমার ৫ টাই আছে। তবে, যেহেতু তুমি জানতেনা, তাই এই আইন ভংগের জন্য তোমাকে আমি জরিমানা করব না। কিন্তু একজনকে এখানে নেমে যেতে হবে।
- কী?!! কিন্তু আমরা এই এলাকা আদৌ চিনিনা।
- সেটা একটা সমস্যা বটে, কিন্তু আমাকেও আইন অনুযায়ী চলতে হবে। একজন নেমে যাও, আমি তোমাকে কোন টিকেট দেব না, জরিমানাও করব না। দুঃখিত, এছাড়া আমার কিছু করার নেই।
- (ধুর ব্যাটা, তুই দুঃখিত হইলে আমার কি। দিলি একটা ভেজালে ফালাইয়া) ঠিক আছে, তবে তাই হোক। আচ্ছা আমরা কি একজনকে নামিয়ে এসে আবার একজনকে তুলে নিতে পারি? (একটু ভোলা সাজার চেষ্টা আরকি)
- তা করতে পার। তাতেতো কোন সমস্যা নেই।
- ও আচ্ছা। ধন্যবাদ তোমাকে কোন জরিমানা না করার জন্য। আমরা তবে তাই করি।
- ঠিক আছে। সাবধানে চালাও। ভাগ্য তোমার সহায় হোক। আর দেখে যাও এই চক্করের নাম। কাউকে বললেই দেখিয়ে দেবে।
- আচ্ছা ঠিক আছে। (নিকুচি করি তোর চক্করের নামের)
পেছন থেকে ২ জন নেমে গেল। একজন নেমে গেলে একা হয়ে যাবে বলেই ২ জন নেমে গেল। তারপর মাকড়সার জালের মত পেঁচানো বোস্টন শহরের রাস্তায় ঘুরতে ঘুরতে আমরা আরও ২ জনকে আমাদের গন্তব্যস্থলে নামিয়ে বহু কষ্টে হাজারো রাস্তার মাঝে হারাতে হারাতে ফিরে সে ২ জনের কাছে। এই নামানো-উঠানো কাজটি করতে আমাদের লেগে গেল প্রায় ১.৫ ঘন্টার মত। তুহিন এই সময় আমার দিকনির্দেশক হিসেবে চমৎকার সাহায্য না করলে আমার একার পক্ষে কখনই এই কাজটি করা সম্ভব হয়ে উঠতনা।
একেতো খেলাম পুলিশের বকা, তার উপর বাকিরা আমাকে বকা দিল এই বলে যে, আমি আগেও এখানে এসেছিলাম এবং এই আইন জানা থাকার পরেও আমি কেন তাদের আগে থেকে বলিনি। আরে পাঠক/পাঠিকা আপনারাই বলুন, আমি হলাম বাংলাদেশের বাঙ্গালি, বোকাসোকা মানুষ, আমেরিকার এত নিয়ম-কানুন কি আর আমার মনে থাকে? একটু নাহয় ভুল হয়েই গিয়েছে, এতে কি আমার কোন দোষ আছে?
** বানান ভুল হলে ধরিয়ে দেবেন।
মন্তব্য
মজা লাগলো। তোমার পুরো আমেরিকা-অস্ট্রেলিয়া ভ্রমন বৃত্তান্ত এখানে লিখে ফেল!
________________________________________
আমার আসল নাম মনওয়ার হোসেন। মনওয়ার নিকটার জানি কি হল, ঢুকতে পারি না।
লেখালেখির ব্যাপারে আমার ধৈর্য একটু কম কিনা, তাই মনে হয়না পুরা বৃত্তান্ত আমার দ্বারা লেখা হয়ে উঠবে।
আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.
আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.
আপনার পুলিশ প্রীতির কথা শুনে আমার বাল্যবন্ধু খোকনের কথা মনে পড়ে গ্যালো। ও ব্যাটার পুলিশ ভাগ্য খুব খারাপ। একবার ধানমন্ডি লেকে আড্ডা দেয়ার সময় ধরে নিয়ে গ্যালো সাদা পোশাকের পুলিশ। তারপর একদিন হাজতবাস শেষে মুক্তি। আরেকবার রাত-দুপুরে আড্ডা ফেরতা পথে আমরা পার পেলেও ও-ই খেলো পুলিশের রাম থাপ্পর। অন্য একদিন ধাওয়াও জুটলো ওর কপালে। ঘটনা আরো আছে। এজন্য ওর সাথে চলতে ফিরতে আমাদের এখন ভয় লাগে। এই বুঝি পুলিশের আছর পড়ল।
ধানমন্ডি পুলিশ যদিও আমাকেও ধরেছিল, তবে হাজতবাস করতে হয়নি। তখন ধানমন্ডি থানা ছিল কাঁটাবনে। সে আরেক ইতিহাস, সময় করে সেটিও বলবনে।
আপনার ওই বন্ধুর কাছ থেকে জেনে নিয়ে কাহিনীগুলো তুলে ধরুননা, আমরাও জানি।
আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.
আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.
বস্টনে কিন্তু আরো একবার যাওয়া হয়েছিল আজমীরের। আমার সাথে। সেবার... থাক, আজমীরই বলুক। শুধু মনে করিয়ে দিলাম যে বস্টনের কাহিনী আরো এক পর্ব চলতে পারে।
সেটাতো পুলিশ ও আমি পর্বে আসবে বলে মনে হয় না। তবে হ্যাঁ, আমার সাথে ঘটা সব আজব কাহিনীর মধ্যে আসতে পারে।
আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.
আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.
খাইসে রে.........
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
ভাই এটা কম, মায়ামিতে আরও কড়া বকা খেয়েছি।
আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.
আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.
পুলিশটাতো খুব ভদ্র । আমাদের পুলিশগুলো এর থেকে অনেক বেশি খারাপ হয় ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
বেশিরভাগ হলেও সবাই না। কি বলেন ভাই, যে ধমক মেরে মেরে কথা বলছিল, আমারতো অবস্থাই খারাপ করে দেবার যোগাড়।
আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.
আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.
এত মজার লেখা অনেকদিন পড়িনি। ইশতির সব বন্ধুরাই এরকম করে লেখে নাকি? লেখার মাঝখানে ব্যাখ্যা দেয়ার মত যে কথাগুলো, সেগুলো পড়ে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছি। যেমন
ইশতি বলে কথা, তার ছোঁয়াচে রোগের কারণে তার আশেপাশের সবাই একটু আধটু লেখা শিখেছে। আমিও সেরকম একজন আরকি।
মজা পাওয়ার জন্য ধন্যবাদ। এগুলা হলো মনে মনে কি ভাবছিলাম তাই তুলে ধরা।
আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.
আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.
আজমীর। বন্ধ পড়লে দলবল নিয়া চইলা আসো একদিন ............
রাজাকার ইস্যুতে
'মানবতা' মুছে ফেলো
টয়লেট টিস্যুতে
ইচ্ছা আছে।
আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.
আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.
ঐটা কি আসলেই পুলিশ আছিলো?
...........................
Every Picture Tells a Story
নাঃ, পুলিশ নামক শয়তান ছিল। যে ৬ জন ছিলাম, তারাই জানি কি যন্ত্রণাটাই সেদিন দিয়েছিল।
আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.
আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.
আজমী ভাই আম্রিকাতে জিপিএস নাই? আম্রিকান পুলিশের মায়া দয়া হেজ, ডাচ পুলিশ নট
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
সে সময় জিপিএস ছিলনা আমাদের, মানচিত্রই ছিল ভরসা।
আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.
আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.
হা হা হা, আপনে ভাই কঠিন জিনিষ, ৯ খান টিকিটের গল্প ঝাড়বেন না? ঐটা কি পর্দার আড়ালে থেকে যাবে?
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
যত দ্রুত সম্ভব দেবার চেষ্টা করব
আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.
আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.
নতুন মন্তব্য করুন