কিছু না বলা এলোমেলো কথা

আজমীর এর ছবি
লিখেছেন আজমীর (তারিখ: সোম, ১৫/০৬/২০০৯ - ১২:২৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মা-বাবার প্রবল ইচ্ছের কারণেই তীব্র প্রতিবাদ করেও দেশের বাইরে পড়তে যাওয়াটা আমি প্রতিহত করতে পারিনি। কিন্তু সে পর্ব শেষে ফিরে আসার সময় শেষ মূহুর্তে আমার যে অভিজ্ঞতা হল তাই এখন আমিরাতের উড়োজাহাজে বসে আমি লিখছি।

আমাকে পড়তে পাঠানো হয় ভার্জিনিয়া টেক নামক এক বিশ্ববিদ্যালয়ে। এটি আমেরিকার ভার্জিনিয়ার ব্ল্যাক্সবার্গ নামক ছোট্ট গ্রামে অবস্থিত। এখানে আমার পাঁচ বছরের যাত্রা শেষে আমি চিন্তা করি দেশে ফিরে যাবার। সেই অনুযায়ী ১লা জুন, ২০০৯, সোমবার আমি আসি রওনক বিমানবন্দরে। এখানে আমাকে বিদায় দিতে বেশ কয়েকজন আসেন। তাঁরা আমাকে বিদায় দিলেন। এখন ঠিক সেই মুহূর্তে আমার মনে কি চলছিল, এবং প্লেনে উঠেই আমি কি ভাবছিলাম, তাই বলার চেষ্টা করব।

“তুহিন আর ইশতিয়াক আমার সাথে আমাকে নামাতে যাবে ভেবেছিলাম, কিন্তু এখন দেখি বিদিষাদি, রিমি ভাবী, সোমা ভাবী, দিপু ভাই, লিখন ভাই এসেছেন। দেখে প্রথমেই মনে হল যে বাংলাদেশে ফেরত যাচ্ছিনা, বাংলাদেশ থেকে বিদেশ যাচ্ছি। এটা ভাবতেই প্রথমে হাসি পেল, কিন্তু তারপরই মনটা খারাপ হয়ে গেল। এই লোকগুলা যদি যাবার আগে জড়িয়ে ধরে, কিংবা আবেগপ্রবণ হয়ে উঠে, তাহলে খুবই সমস্যা হয়ে যাবে। আমার ভাবমূর্তি অনুযায়ী আমি হলাম সদা সর্বদা হাস্যোজ্জ্বল। আমাকে সবাই সবসময় হাসি মুখে দেখেই অভ্যস্ত। এখন লোকজনের সামনে চোখের পানি বের হলে বেশ একটা বেকায়দা অবস্থা হবে। আর আমি এটা চাইনা। আচ্ছা, এক কাজ করলে হয়, সবার টানা হাসি-ঠাট্টা করতে থাকি। তাহলে কেউ এই ধরনের কিছু করার আদৌ সুযোগ পাবেনা। হুম, এটাই করতে হবে।”

তারপর বিমানবন্দরে পৌঁছাবার পর ব্যাগ দেয়া, কাগজপত্রের কাজ ইত্যাদি করে শেষ করতে বেশ খানিকটা সময় চলে গেল। বিমানবন্দরের দোতলায় আমরা সবাই একসাথে কিছুক্ষণ বসে আমি security এর সারিতে দাঁড়িয়ে গেলাম। আমি যখন শেষ মুহুর্তে দাঁড়িয়ে আছি, তখন সবাই একে একে আমাকে জড়িয়ে ধরা শুরু করল। এই বাজে কাজটির সূচনা করেন দিপু ভাই। বাজে কাজ কেন বললাম? কারণ, আমার হাসি ধরে রাখার শক্তিকে চুরমার করে দিচ্ছিল এই কাজ। যাই হোক, বাজে কথা না লিখে তার চেয়ে লিখি তখন আমার মন কি বলছিল।

“দিপু ভাই শুরু করেছে ঠিকই, কিন্তু সবাই মনে হয় একই কাজ করত। অর্থাৎ যেই শুরু করুকনা কেন, এটা যেন হবারই ছিল। কিন্তু একি! দিপু ভাইর চোখটা একটু যেন লাল মনে হচ্ছে। দিপু ভাই আমার মাঝে এমন কি দেখল যে তার হৃদয়ে আমার জন্য এত স্নেহ-ভালবাসা জমা আছে। আমি জানিনা। আসলেই আমি জানিনা। জানতে চাইওনা এখন। সেটা আরও বেশি কষ্টকর হবে। হে খোদা, আমাকে তুমি সাহায্য কর। আমার চোখের অশ্রু যেন কোন মূল্যেই বের নাহয়।”

…… (কিছু কথা বিনিময় – যেমন – ভাল থেক, সাবধানে যেও ইত্যাদি ইত্যাদি) …………

“এখন লিখন ভাইকে করমর্দন করেই হয়তো পার পাওয়া যাবে। আমি আসলেই ভাবিইনি যে লিখন ভাই আসবে। উনি হলেন কর্মব্যাস্ত মানুষ। উনি আসবেন ভাবাটাই অস্বাভাবিক। লিখন ভাইয়ের সাথে কোলাকুলি করতে গিয়ে অবাক হয়ে যাচ্ছি। হাসি মুখে বিদায় দিলেও, এখানে বিদায় বেলায় হাজির হয়ে যাবেন আমি আদৌ ভাবিনি। আজকের দিনের চমক। কি সুন্দর করেই না বোঝাতে চেষ্টা করলেন যেন আমি এখন চলে না যাই। গেলেও যেন আবার ফিরে আসি। লিখন ভাই, আপনাকে কিভাবে বলি যে কি কষ্ট আমারও হচ্ছে এখান থেকে চলে যেতে। কিন্তু কি করব বলব বলুন, দেশের মাটিতে আমাকে যে ফিরে যেতেই হবে। আমার স্থায়ী ঠিকানা যে ওখানেই। তবে আপনাদের আমি কখনই ভুলবনা। সে যে আদৌ সম্ভব না।”

…… (কিছু কথা বিনিময় – যেমন – ভাল থেক, সাবদানে যেও ইত্যাদি ইত্যাদি) …………

“ইশতিয়াক যাবার আগে যে একখানা কোলাকুলি পর্ব করবে সে আমি আগেই জানি। কিন্তু শয়তানটা এটা কি শুরু করল। এভাবে কেন ধরে আছে। দিপু ভাই আর লিখন ভাই পার করে দিলাম, কিন্তু এই শয়তান দেখি আমার সকল শক্তির শেষ করে দিচ্ছে। চোখে হালকা জ্বালা অনুভব করছি। কিন্তু না, এরা কোন মূল্যেই আমার এক ফোঁটা অশ্রুও দেখতে পারবেনা। কিন্তু ভাই ইশতিয়াক, ছাড় ভাই, তুমি এভাবে ধরলে আমি আর শক্ত থাকতে পারবনা। চোখের জ্বালাটা বেড়েই যাচ্ছে। ভাই আমার, তোমাকে মুখে না, মন থেকেই ভাই মনে করি, তাই এভাবে বিদায় বেলায় আমার কষ্টটা আর বাড়িয়ে দিও না। আমাকে শক্ত থাকতে দাও। আমি অনুভব করছি আমার চোয়াল শক্ত হয়ে গিয়েছে এবং চোখের জ্বালাটা আরও বেড়েছে। এভাবে ভাই পরীক্ষা নিওনা আমার, আমি পারবনা। এই পরীক্ষায় পাস করা যে আমার দ্বারা সম্ভব হবেনা। আমি ফেল করতে চাইনা। একি, বন্ধন দেখি আরও দৃঢ় হচ্ছে। কিন্তু আমি যে আজ কিছুতেই কাঁদবনা। কিছুতেই না। কিছুতেই না। বুকের ভেতর কেমন জানি ব্যাথা করছে। যাক ইশতিয়াক আস্তে আস্তে ছেড়ে দিচ্ছে। কিন্তু একি! ওর চোখটা যে ভেজা মনে হলো। আমার দিকে তাকালও না। আসলেই কি কেঁদে দিল। নাকি শুধুই আমার দেখার ভুল? না, এ আমার ভুল নয়। মনটা দেখি আরও খারাপ হয়ে যাচ্ছে। … আল্লাহ, সাহায্য কর।”

…………… কিছু কথা বিনিময় …………………………………

“সামনেই দেখি তুহিন দাঁড়িয়ে আছে। তুহিন মনে হয় খালি করমর্দন পর্ব দিয়েই শেষ করে দিবে। কিন্তু ইশতিয়াকের কারণে মনটা জানি কেমন হয়ে গেল। নাহ, তুহিন না করলেও ওর সাথে কোলাকুলিটা আমিই করব। ওকে আমিই hug দেব। তুহিনকে কোনদিনও বলা হবেনা যে আমি ওকে কি পরিমাণ পছন্দ করি। এই ছেলেটাকে আমি নাম ধরে ডাকি। এই ছেলেটা একাধারে আমার বন্ধু, ভাই, অভিভাবক। অন্তত আমার চোখে তাই। আমি আমার ছোট ভাইদের সাথে যেমন করি ও আমার সাথে তেমনই করে। আমি এরকম একজন ভাই চেয়েছিলাম। আমি ভুল করলে যেমন ঝাড়ি দিয়ে দিল, তেমন করে আবার একসাথে হৈচৈও করে। তাই, তুমি দাও বা না দাও, কিচ্ছু যায় আসেনা তুহিন, আমি hug দেবই। কিন্তু একি, এত ছোট করে hug দিতে গিয়েও দেখি আমার বুকের মাঝে কেমুন জানি একটা ব্যাথা করছে। আমার দম বন্ধ হয়ে আসতে চাচ্ছে। শ্বাসকষ্টের সমস্যাতো তুহিনের, কিন্তু আমার কেন এরকম হচ্ছে?! কিন্তু না, ঐ অশ্রুজল কিছুতেই আমার সাথে জয়লাভ করতে পারবে না। আমি দেবনা আমাকে পরাজয়ের গ্লানি দিতে। কিন্তু আমি যে জানি ওর মনটা কিরকম শিশুর মত। আমাকে বিরক্তির সাথে বকেছে। কিন্তু সেরকম অধিকার নিয়ে বকতে পারেনি। কিন্তু ভাই, আমি তোমাকে মন থেকে সে অধিকার দিয়ে দিয়েছি অনেক আগেই। কখনও শুনেছি, কখনও শুনিনি। কি হলো আমার?! সব এভাবে কেন চোখের সামনে দিয়ে ভেসে যাচ্ছে।নাহ ছেড়ে দিই। বেশি সময় ধরে hug দিলে আমার নিজেরই অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে। তুহিন হয়তো হাসবে আমি কি ভাবছি শুনলে। অবশ্য ওকে বলবও না। কিন্তু একি ভাই, এই সর্বদা কৌতুক করতে থাকা তুহিনের চোখ দেখি আমার দিকে তাকাল না। ওর ডান দিকে তাকিয়ে ঘুরে গেল। ওর চোখের কোণ দেখি হালকা লাল। ওর সেই চিরন্তন তীক্ষ্ণ দৃষ্টির স্থানে অন্য এক দৃষ্টি - একটু টলমল মনে হলো। নাহ মনটা আরও বিক্ষিপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আমি জানি ওর মনটা শিশুর মতই, কিন্ত তবুও কেমন জানি লাগছে এটা ভাবতেই যে তুহিনের চোখে পানি। almost অসম্ভব ব্যাপার। মনের জোরের অবস্থাতো আমার খারাপ।”

পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বিদিষাদির দিকে এগিয়ে যেতে যেতে মনে মনে আবার শুরু হল –

“ও খোদা, বিদিষাদির দেখি hug দেবার আগেই চোখ ভেজা। যদিও আমার কোন আপন বোন নেই। কিন্তু বাজি ধরে বলতে পারি অনেকের আপন বোনও হয়তো এত আপন হবেনা। বিদিষাদির এই আপন করে নিতে পারার গুণটা আছে বলেই হয়তোবা বৌদি থেকে দিদি হয়ে গিয়েছে। ও হ্যাঁ, শুরুতেতো বৌদি বলেই ডাকতাম। কিন্তু দিদির মাঝে স্নেহময়ী একটা ভাব আছে। সেজন্যই এখন আমার দিদি। প্রথমবার আমার ভাইগুলাকে ফেলে আসতে যেমন কষ্ট হয়েছিল, এখনও তেমনি হচ্ছে। আমার সারা জীবন ধরে এরকম করেই মনে হয় বার বার খালি বিচ্ছেদ বেদনার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। দিদিকে হয়তো কোনদিনও বলা হবেনা যে তাঁকে আমি কতখানি শ্রদ্ধা করি, পছন্দ করি। হয়তো কখনই বলা হবেনা যে এই শেষ মূহুর্তে আমার কি পরিমাণ কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আমি তোমাকে কোন চোখের পানি দেখাবনা। খালি হাসব। তুমি দেখবে যে আমার সামনে কেঁদে কোনই লাভ নেই। নাহ, বুকের বাম দিকে আবার ব্যাথা করা শুরু হয়েছে। আজকে মনে হয় সবাই মিলে আমার হার্ট ফেল করিয়ে ছাড়বে। আমি অনুভব করতে পারছি যে আমার চোখ এখন রীতিমত জ্বলছে। কিন্তু আমি চোখের পানি ফেলবনা। কিছুতে না। নাহ, তাড়াতাড়ি ভাগি। পাশে রিমি ভাবী দাঁড়ানো আছেন। উনাকে বিদায় জানাই। তানাহলে বিদিষাদি আমাকে কাঁদিয়ে ছাড়বেন। আসলেই ভাইদের জন্য বোন থাকাটা ভালনা। বিদায় দেয়া যায় না।”

…… (কিছু কথা বিনিময় – যেমন – ভাল থেক, সাবদানে যেও ইত্যাদি) …………

“রিমি ভাবী অবশ্য আমার মতে সবসময় একটু রক্ষণশীল, conservative আরকি। যদিও আমরা উনার এক্কেবারে ছোট ভাইর মত, তবুও উনি দেখি বেশ খানিকটা দূরত্ব মেনে চলেন। অবশ্য কালকে রাতে এসেছিলেন সময়তো কাঁধে হাত বুলিয়ে বলেছিলেন যেন ভাল থাকি এবং আরও কি যেন। আজকেও হয়তো তেমনি কিছু হবে। উনি hug দেবার দিকে আদৌ যাবেননা। ভালই হলো অবশ্য। মনটাকে একটু শান্ত করার সময় পাব। এমনিতেই বুকের ব্যাথা, আর চোখের পানি আটকাতে আমার প্রাণ যায় যায় অবস্থা। রিমি ভাবীর উপদেশ শুনতে শুনতে মনটাকে একটু শান্ত করে আনি। একি!!! আমি কি ভুল দেখছি নাকি??!! ভাবী দেখি হাত বাড়িয়ে দিলেন। তাহলে বিদায় বেলায় উনিও hug দিবেন??!! আমি হাসব, না কাঁদব, নাকি অন্য কিছু করব তাতো বুঝে উঠতে পারছিনা। সব এলোমেলো লাগছে। শান্ত না হয়েতো মন আরও অশান্ত হয়ে যাচ্ছে। তাহলে আমার conservative ধারণা ভুল ছিল। আর যদি ধারণা ঠিক হয়ে থাকে, তাহলে hug দেবার অর্থ হচ্ছে ভাবীর যে এতখানিক আদর করতেন, এতখানি স্নেহ-মায়া-মমতা বোধ ছিল, তার কিছুই আমি বুঝতে পারিনি। আমি এত অপদার্থ যে কিছুই বুঝিনি। ভাবীকে এটা বলাও হবেনা, ক্ষমাও চাওয়া হবেনা এজন্য। আল্লাহই জানে কেন যে এরকম নীরব স্নেহ-ভালোবাসা দেবার মত মানুষগুলোকে চিনতে আমার এত দেরি হয়ে যায়। ভাবী, হয়তো আপনাকে আর নাসিম ভাইকে বলা হবেনা, কিন্তু আমি মনে মনে জানব যে, আমার দ্বারা সম্ভব হলে খালি আপনারা একটা আওয়াজ দিলেই এই বান্দা তার সাধ্যানুযায়ী ছুটে যাবার চেষ্টা করবে। এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নাই। কিন্তু আমি জানিনা কখনও মুখে এটা বলতে পারব কিনা। উফ, এটাতো আমার জন্য বেশ একটা চমক ছিল বটে। তবে আমার মনে থাকবে। যাক রিমি ভাবীর চমকও শেষ। এখন খালি সোমা ভাবী রইল bye bye বলার জন্য।কিন্তু রিমি ভাবীর চমকটা বরং দুঃখ আরও বাড়িয়ে দিল, কারণ আমি অপদার্থ আগে বুঝিনি।”

…… (কিছু কথা বিনিময় – যেমন – ভাল থেক, সাবদানে যেও ইত্যাদি) …………

“ সর্বশেষে দাঁড়িয়ে আছেন সোমা ভাবী। সোমা ভাবীওতো শক্ত মনের কিন্তু আবেগপ্রবণ মানুষ। ভাবীর এই দিকটা, এই মনের শক্তিটা আমার খুবই পছন্দ। কিন্তু ভাবীর মাঝে যে একটা শিশু শিশু ভাব আছে, সেটাও বেশ মজার। ভাবীকে কি যাবার বেলায় এটা বলব? নাহ, থাক। কিছু কথা না বলাই মনে হয় ভাল। আমি জানি সোমা ভাবী অবশ্যই জড়িয়ে ধরবেন, এবং এখন আমার যা অবস্থা, তাতে আমি বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারবনা। যা আশা করেছিলাম তাই হচ্ছে। নাহ, তাড়াতাড়ি security-র নাম করে ভাগি। ... আবার কবে দেখা হবে জানিনা, কিন্তু মনে থাকবে আমার সবসময়। আহারে আযানটাকে আবার কবে দেখব কে জানে ... আয়রাটাও অনেক বড় হয়ে যাবে। কি আর করার। নাহ, জলদি security-র নাম করে ভাগি। ...”

তারপর security পার করলাম।

“ যাক, পার হয়ে গেলাম। আমি কি পেছনে ফিরে তাকাব? নাকি বাদ দেব। নাহ, বিদায় জানাই। গেটের সামনে থেকে হাত নেড়ে বিদায় জানিয়ে দিই। … বিদায় জানানি খতম, এখন একটু বসি। হে আমার চোখ, আর তোমাদের কষ্ট দেবনা। এখন আমি কাঁদব। এখন আর কেউ আমার সামনে নেই। …… কেন আমাকে এত ভালোবাসা দিল সবাই?!! …… আমি কাঁদছি কেন? …… জানিনা, কিছুই জানিনা। …… আমিতো দেশে ফিরে যাচ্ছি। তবে কেন আমার এত দুঃখ হচ্ছে?!! জানি না। আমার জানা নেই। …… এখানকার দীর্ঘদিনের বসবাসে মনে হয় আমার নিজের একটা পরিবার দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। …… আজকে আমি আমার এক পরিবারের কাছে যাচ্ছি আমার আরেক পরিবারকে ছেড়ে। … আল্লাহ, কেন এমন হয়? কেন মনে এত দুঃখ হয়? কেন আমি সীমার হলাম না? কেন আমাকে পাথরের মত শক্ত করে দিলেনা? …… আল্লাহ, আমি কিভাবে এত স্নেহ-ভালোবাসা-আদরের ঋণ শোধ করব? জানিনা। আমি কিচ্ছু জানিনা। ... ভালোবাসার দুঃখ আসলে বেশি ... আপন হয়ে যাবার মাঝেও অনেক দুঃখ ... I hate বিদায় ... চুপ করে বের হয়ে যেতাম, কেউ জানতেও পারতনা, সেটাই ভাল হতো ... এত চোখের পানি ফেলতে হতোনা ... বুকের মধ্যে এত কষ্ট হতোনা ... মনে হচ্ছে চিৎকার করে বুকের যন্ত্রণাগুলা বের করে দিই ... তাওতো করতে পারছিনা ... চোখের পানি কেন, কোন পানিই এই জ্বালা বন্ধ করতে পারবেনা ... ধুর, হয়ে থাকতাম একঘরে, সেওতো ভাল ছিল, তাহলেও এত দুঃখ পেতে হতনা ... বলা হয়ে উঠেনি কি পরিমাণ ভালোবাসি ... কোনদিন বলতে পারব কিনা জানিনা ........................... দেখি boarding হচ্ছে ... plane এ উঠে যাই ... এই দীর্ঘ রাস্তা পার হতে হবে ... দেশে গিয়েও অনেক কাজ আছে ... সেগুলা নিয়ে চিন্তা করতে হবে ... কিন্তু বারবার কেন আমার ওদের কথা মনে পড়ছে? ... আহহা, এখন প্লেনে ঊথার আগে যে রাস্তা দিয়ে হাঁটব, এখান থেকেতো দোতলা দেখা যায় ... ওরা দেখি ওখানে দাঁড়িয়ে আছে ... আমি তাকাবনা ... এটার কথা ভাবিনি ... আমি ওদের আমার অশ্রু কিছুতেই দেখতে দেবনা ... ওরা দেখবে আমি হাসি মুখেই চলে গিয়েছি ... উফ, এই সিঁড়ি পার করলেই আমি প্লেনের ভেতরে। তখন আমাকে আর এখতে পারবেনা। আর কয়েকটা step পার করলেই আমি ভেতরে ... কন্তু আমার পেছনের এই কালো মোটা মহিলা আমাকে ডাক দিচ্ছে কেন? ও আচ্ছা, সে আমাকে দেখিয়ে দিল যে আমার family member রা আমাকে হাত নেড়ে বিদায় দিচ্ছে। আমিও চট করে হাত নেড়ে ভেতরে ঢুকে যাই। ......... সিট খুঁজে বের করি। ... নাহ কান্না থামাতে হবে। কি করি? কি করি? ... হাহ, idea পেয়েছি। লিখতে থাকি। তাহলে হয়তো সময়টাও কেটে যাবে আর দুঃখটাও ভুলে থাকা যাবে .... তবে আজকের এই Roanoke Airport এর কথা মনে হয় আমি কোনদিনই ভুলতে পারবনা। সেটা কখনই সম্ভব না। ..........................”

আশা করি যদি কেউ এই লেখা পড়েন, তবে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতেই দেখবেন। কেননা, আমার লেখার হাত মোটেও ভালনা, এবং আমি ঠিক লেখার উদ্দেশ্যে লিখিনি। তখন শুধুই অশ্রু ধারাকে থামাবার জন্য কিছু করা দরকার বলে লিখেছিলাম। আর এটা সচলায়তনে দেবার সময় কেন জানি আবার পড়ে ভুলগুলো ঠিক করতে ইচ্ছে করলনা। মনে হলো, মনের মাঝে সবসময়তো আর ১০০% ঠিক চিন্তা করিনা, তাই ভুল কিছু থাকলে, থেকে যাকনা, কিইবা ক্ষতি হবে তাতে। মনের মাঝের কিছু কথা অনেক সময় বলা হয়ে উঠে না, তাই লিখে দিলাম। কেউ যদি পড়ার পর মনে করেন যে, খুবই বাজে লেখা হয়েছে, তবে আপনার সময় নষ্টের জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আর সেজন্য আমাকে বকা দিয়ে মন্তব্য করলে আমি একটুও দুঃখ পাবনা। আর দীর্ঘ না করে এখানেই সমাপ্ত টানি। ধন্যবাদ এতখানি পড়ার জন্য।


মন্তব্য

অমিত এর ছবি

শুধু যাওয়া আসারে ভাই, শুধুই যাওয়া আসা

আজমীর এর ছবি

ঠিকই বলেছেন

আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.

আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.

অনীক আন্দালিব এর ছবি

আজমীর, আপনার লেখাটা পড়ে মন্তব্য করার জন্যেই লগইন না করে পারলাম না। আপনি যেভাবে লিখেছেন, সেটাই আসলে সবচেয়ে সৎ সবচেয়ে খাঁটি অনুভূতি, আবেগ। আমার নিজের এমন অভিজ্ঞতা নেই, যতবার প্রিয়জনদের ছেড়ে কোথাও গেছি, সেটা ছিল দেশের ভেতরেই। তবু আপনার লেখায় সেই ছবিটা পুরোপুরি স্পষ্ট হয়ে উঠলো।

দেশে ফিরছেন জেনেও ভাল লাগছে, আবার বিদেশে "স্বজন" ছেড়ে আসলেন জেনেও খারাপ লাগছে।

বিপ্লব রহমান এর ছবি

বিমানবন্দর মানেই সম্পর্কের কাটাকুটি।...
মনটা খুব খারাপ করে দিলেন ভাই। মন খারাপ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

আজমীর এর ছবি

দুঃখিত ভাই ... লেখাটা দেবার সময়ই আমার মন খারাপ লাগছিল ... তাহলে তখনকার অবস্থা বোঝেন

আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.

আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.

রানা মেহের এর ছবি

মন খারাপ হয়ে গেল আজমীর
ভালো থাকুন
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

শামীম এর ছবি

ইন্টারনেট আছে, ফেসবুক-ইমেইল-ম্যাসেঞ্জার-স্কাইপ আছে .... আর এরোপ্লেনও আছে ... কাজেই মন খারাপ করবেন না।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

আজমীর এর ছবি

মস্তিষ্ক আপনার কথা মেনে নেয়, কিন্তু মনটা যে ভাই মানতে চায়না।

আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.

আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.

তানবীরা এর ছবি

হুমম সব আছে, শুধু ছুয়ে দেখার কিছুই নেই। একটু উষন তার জন্য
---------------------------------------------------------
রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা
সূর্য নাহি ফেরে শুধু ব্যর্থ হয় তারা

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

মানুষ হয়ে জন্মানোর এই এক সমস্যা। মায়া, আদর, ভালবাসা-- এসবের বাঁধনে জড়িয়ে যেতে হয়, সেখান থেকে পরিত্রাণের পথ নেই।

আজমীর এর ছবি

আমি আপনার সাথে একমত।

আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.

আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

মন ভালো হোক আপনার, আজমীর।
ভালো থাকুন।

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

অনিকেত এর ছবি

বিদায় নেয়াটা সব সময়ই বড় বেদনার। সময়ের সাথে সাথে আমরা অনেক মানুষ কে আপন করে নিই। কিছু মানুষ কে শত্রুও করে নিই। কিন্তু বিদায়বেলা আমাদের আর কোন শত্রু থাকেনা। চোখের জলে সব তখন মিলে মিশে একাকার।বিদায় নেবার সময় জানা যায় ছোট্ট এই হৃদয়টাকে কত জন, কত স্মৃতি কত নিবিড় করে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছিল।

আপনার এই লেখায় একেবারে নিখাদ অনুভূতিগুলো উঠে এসেছে।

'সব ঠিক হয়ে যাবে'-জাতীয় স্তোক বাক্য দিতে চাই না। প্রতিটি মানবিক সম্পর্ক অনন্য। কাজেই এদের ফেলে রেখে যাবার যে বেদনাটুকু অনুভব করছেন সেটা একটা মহত্তম অনুভূতি। সারা জীবন এই অনুভূতিটা মনে রাখার চেষ্টা করবেন।

---কারন এই অনুভূতিটা হল ভালবাসার অনুভূতি, ভালবাসতে পারার অনুভূতি, ভালবাসা পাবার অনুভূতি---!

মঙ্গল হোক!!

আজমীর এর ছবি

এই অনুভূতি কখনই ভোলা সম্ভব নয়।

আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.

আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

আমারও মনটা খারাপ হয়ে গেল। আপনি একদম বিশুদ্ধ অনুভূতির কথা লিখেছেন। একদম ছুঁয়ে গেল। তবে মন খারাপ করবেন না। এটাই তো জীবন। আর, ছেড়ে আসা মানেই তো আর বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া নয়। নিশ্চয়ই যোগাযোগ থাকবে আপনাদের। কে জানে, হয়ত আবার দেখাও হয়ে যাবে খুব শিগগীরই। ভাল থাকবেন। অনেকদিন পর দেশে আসলেন। ভাল সময় কাটান।

আজমীর এর ছবি

যোগাযোগ আছে, এবং ইনশাল্লাহ দেখাও হবে। ছেড়ে আসা মানেই যে বিচ্ছিন্ন হওয়া নয়, তা আমি জানি, তবুও মন মানতে চায়না।

আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.

আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

স্বাগতম বাংলাদেশে। বিদেশে পড়ে টরে আবার স্থায়ীভাবে দেশে ফেরত আসে খুব কম লোকই... আপনাকে বিরাট অভিনন্দন
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

আজমীর এর ছবি

ধন্যবাদ।

আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.

আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.

সিরাত এর ছবি

আহা! যাই হোক ভাই, যে কয়দিন ছিলা খুব দারুন ব্যবহার করে আসছো। আর দারুন কিছু মানুষ পাইসো।

আমিও নজরুল ভাইয়ের সাথে একমত। দেশে ফিরে আসাটা কমই হয়। ভাল! হাসি

আজমীর এর ছবি

আসলেই মানুষগুলো দারুন পেয়েছিলাম।

আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.

আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.

গৌতম এর ছবি

এই ধরনের লেখাগুলো পড়তে খারাপও লাগে, ভালো লাগে। খারাপ লাগে লেখকের খারাপ লাগার অনুভূতিটাকে ধরতে পেরে। ভালো লাগে লেখকের তাৎক্ষণিক আবেগিক দিকটার সাথে পরিচিত হওয়া যায়, একজন মানুষকে ধরতে পারার জন্য, বুঝতে পারার জন্য যেটা খুবই দরকার।

ভালো থাকবেন।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

হাবিজাবি বাদ দিয়ে ভ্রমণকাহিনী পোস্টানো শুরু করো! কী সব হুদা প্যাঁচাল লাগাইসো। কথা দিসিলা জন্মদিনের পোস্টে বলা গল্পগুলার বিস্তারিত লিখবা, মনে আসে? পুলিশের কাহিনীগুলাও জমা। ইন্টারনেটের ভূতও।

আজমীর এর ছবি

ওহহো, একদম ভুলেই গিয়েছিলাম ... দেখি, ২ টা দিন সময় দাও দেখি, তারপর শুরু করছি একটা একটা করে পোস্টানি

আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.

আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.

অতিথি লেখক এর ছবি

এই যে বস, মিয়া আপনে তো কঠিন লোক, এটা যদি আপনার এলোমেলো কথা হয়, তাহলে আমি ডরাইছি। আর ক্ষমরা চাইতেছেন কি জন্যে? স্বার্থপরের মত দু:খটা ধরে রাখতে চান, একা একা ভোগ করবেন, আমাদের দিবেন না মন খারাপ । বিদায়ী কষ্টের জন্য স্বান্তনা দিয়ে আপনার কষ্ট আরো বাড়ানোর চেষ্টা করব না, দেশে আসেন, দেখেন সবাই অধীর আগ্রহে আপনার জন্য অপেক্ষা করে আছে, আমার তো আপনার কথা ভেবে হিংসা হচ্ছে রে ভাই।

সাইফ

আজমীর এর ছবি

আপনে কিন্তু বেশ গুছিয়ে কথা বলেন।

আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.

আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.

অনিন্দিতা চৌধুরী এর ছবি

পড়ে মনটা খারাপ হয়ে গেল।
আসলে ভালবাসা ,স্নেহ , আদরের প্রতিদান হয় না।
এর স্বীকৃতিটাই আসল।
স্বাগতম।
ভাল থাকবেন।

আজমীর এর ছবি

আসলে ভালবাসা ,স্নেহ , আদরের প্রতিদান হয় না।

১০০% ভাগ খাঁটি কথা বলেছেন।

আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.

আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।