এইবার যে ছবিগুলা দেখাব বা যেই ট্যুর নিয়া আলাপ করব সেইটা অনেক আগের। অনেক মানে আবার অনেএএএএএএক না, ছোট্ট কইরা অনেক। এক বছরের কিছু বেশি হইসে হয়তো। তখন আমি কাতারে নতুন।খালি শুনি মানুষের কাছে মরুভূমি মরুভূমি, আর চিন্তা করি হায় আমি কবে দেখব?
এইবার যে ছবিগুলা দেখাব বা যেই ট্যুর নিয়া আলাপ করব সেইটা অনেক আগের। অনেক মানে আবার অনেএএএএএএক না, ছোট্ট কইরা অনেক। এক বছরের কিছু বেশি হইসে হয়তো। তখন আমি কাতারে নতুন।খালি শুনি মানুষের কাছে মরুভূমি মরুভূমি, আর চিন্তা করি হায় আমি কবে দেখব? অপেক্ষা করতে করতে একদিন কপাল খুলল, আমি আর আমার ২ চাইনিজ, ১ ফিলিপিনো, এক শ্রীলঙ্কান কলিগ মিলে বের হইলাম মরুভূমি দেখতে। শ্রীলঙ্কানটা আগে অনেক বার গেসে, ও ই আমাদের নিয়া যাইতেসিল ওর গাড়িতে করে। মরুভূমি যেখানে গিয়া দেখতে হয় ঐ জায়গাটার নাম উম্ম সাইয়ীদ বা মেসাইয়ীদ। দোহা থেকে প্রায় ৫০ কিমি দূরে, আমরা যাইতেসিলাম গারাফা থেকে, তাই ওখান থেকে আরো বেশি দূর। মেসাইয়ীদ জায়গাটা পারস্য গালফের (Persian Gulf) পারে। তাই একটা অনন্য বৈশিষ্ট্য হইতেসে যে মরুভূমির ঠিক সাথেই সমুদ্র। মরুভূমির উঁচু উঁচু স্যান্ড ডিউন্স থেকে হু-উ-শ করে নামলেই পানি। বড়ই মজাদার!
আমরা দুপুরে খাওয়ার পর সাড়ে তিনটার দিকে রওনা দিয়া পৌনে পাঁচটার দিকে মনে হয় পৌঁছাইসিলাম, ঠিক মনে নাই। থাক সময়টা তত জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যু না । গিয়া নামার পর দেখি বামে সমুদ্র ডানে ডিউন্স। আহা! যা একখান দৃশ্য। সূর্যরে পিছনে রাইখা সমুদ্রের দিকে মুখ ফিরায়া দাঁড়াইলাম। সমুদ্র ঝকঝকা নীল, আকাশও হালকা নীল, দেখলাম আমার লম্বা ছায়া পড়সে। ক্লিক!
অনেকে গোসল প্লাস জলকেলি করতেসিল, সাথে বাড়তি কাপড় আনিনাই তাই নামলাম না। ঘুরাঘুরি শুরু করলাম। বালুতে বইসা মনে হইল এটাও ধূলার একটা সমুদ্র। ছোট ছোট অগুনতি ঢেউ।
সামনেই একটা মোটামুটি উঁচা ডিউন্স। নিচে থিকা আকাইম্যা লোকজন ফোর-হুইলার নাইলে ডিউন বাগি নিয়া ভোঁ কইরা উপ্রে উঠে তারপর ঢাল বাইয়া হু-উ-শ কইরা নাইমা যায়, আর এই জিনিসটা একবার দুইবার না, টানা করতেই থাকে। দুর্ঘটনা হয়না তা না, হয়, মানুষ মরেও। তারপরও সারা বিকাল, সন্ধ্যা রাত এরম করতেই থাকে। এবং একটা বড় সংখ্যক লোকজন টাল হইয়া নেয়, ধরেন একবার নাইমা আবার উইঠা আসল তারপর সুরুৎ কইরা দুই চুমুক লাগায়া আবার হু-উ-শ। আমি হাঁচড়ায় পাঁচড়ায় উপ্রে উঠলাম, যা ভাবসিলাম তার থেকে অনেক বেশি কষ্ট হইসে, বালিতে পা ডুইবা যায় তাই ঢাল বাইয়া উঠা ঠিক সহজ হয়নাই আমার জন্য (আমার ওজন বেশি এইটা মনে হয় কারণ না ।) উপ্রে উইঠা একটু দাঁড়াইলাম জিরানোর জন্য।
নিচে গাড়িগুলা পিচ্চি পিচ্চি দেখা যাইতেসে, আমার আশপাশ দিয়া ভুম ভুম আওয়াজ করতে করতে বাগি আসা যাওয়া করতেসে, সতর্ক না থাকলে চাপা খাওনের সমূহ সম্ভাবনা! তাই একটা ফাঁকা জায়গার দিকে রওনা হইলাম। ওই জাগায় আইসা মনটা আবার ভাল হইয়া গেল, মরু আর আকাশের মাঝে সমুদ্র স্যান্ডউইচ হইয়া আছে। আর কিছু নাই দৃষ্টিসীমার ভিতরে।
তখন খেয়াল হইল আয়হায় সূর্য ডুবতেসে, মরুভূমিতে সূর্যাস্ত ঠিকমত না দেখলে আর কি দেখলাম! সামনে আরো উঁচু ডিউন্সের আড়ালে সূর্য ঢাকা পইরা গেসে। তাই দিলাম একটা দৌড়। আবারো হাঁচড়ায় পাঁচড়ায় গিয়া দেখি সূর্য ততক্ষণে অর্ধেক ডুইবা গেসে। কয়েকটা ছবি নিলাম, পছন্দ হইলনা, কেমন জানি ম্যানম্যানা, ইয়ে মানে মনে হইল ছবি দেইখা মনটা খুশি খুশি লাগতেসেনা। উপুড় হইয়া শুইয়া পড়লাম বালুর উপরে, তারপরেই মনে হইল পাইসি!
সূর্য যে জায়গাটা দিয়া ডুবতেসিল ঠিক ঐ জায়গাটা থেকে সেসময় তিনজন বাগি চালায়া আসছিল, দেইখা আমার কেন জানি মনে হইল এরা যুদ্ধ জয় করসে, এরা Raiders from the Sun! ব্যাপক ভাবসাব!
এরপর যা হইল ঐটা আমি কোনদিন ভুলবনা। সূর্য মামা ডুবার সময় কি যে একটা রঙ ছড়ায়া গেলনা মরুর উপ্রে! উহা বলার মতন না, লিখারও মতন না, শুধু চোখ দিয়া চাইটা চাইটা খাওয়ার মতন। মনে হইল সোনার গুঁড়া ছিটায়া দিয়া গেসে কেউ সবজায়গায়! ছবিতে ঐ সৌন্দর্য্য ধরা সম্ভব না।
এরপর কিছুক্ষণ ব্রাউনীয় মোশন স্টাইলে (ইতস্তত: বিক্ষিপ্ত) ঘুরাঘুরি করলাম, ইতিউতি তাকাইলাম। অনেক দূরে দেখি একটা
ল্যান্ড ক্রুজারের উপ্রে একজন একাকী বইসা আছে আর নিচ থেকে আরেকজন ছবি তুলতেসে। একটা জুম লেন্স থাকলে ভাল একখান সিলুয়েট পাইতাম, কি আর করা! হা-হুতাস করতে করতে যা আছে তা দিয়াই
এবার ফিরতি পথ ধরলাম, বাকিদের সাথে বইসা একটু খাওয়াদাওয়া করব এরকম ইচ্ছা। পথে যাইতে যাইতে আবার একটা মোমেন্ট, পাইলাম উহাকে (সিলুয়েট) পাইলাম!
তখন মানুষজনও আস্তে আস্তে ফিরতেসে। ল্যান্ড ক্রুজারগুলা ধূলাবালিতে পুরা মাখামাখি, আমার কাছে মনে হইল বেচারারা বিধ্বস্ত চেহারা নিয়া ক্লান্ত মনে ধীরে ধীরে ফেরত যাইতেসে।
এরপর নিচে নাইমা খাওয়া দাওয়া আর গল্প গুজব কইরা গাড়ি চাইপা বাড়িতে আইসা পড়লাম। (রাস্তায় ঘুমাইসি তাই ডিটেইলস্ নাই কোন )
আজকে এই পর্যন্তই।
মরুদ্যান
মন্তব্য
ভাষাটা কেনো জানি পছন্দ হলো না।
এনিওয়ে, আরো ছবি, আরো লেখা আসুক
-------------------------------------------------
ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
ফীডব্যাকের জন্য ধন্যবাদ। যদি বেশিরভাগ পাঠক অপছন্দ করে তাহলে আর এই কথ্য ভাষায় লিখবনা। দৈনন্দিন জীবনে আমি গল্প করার সময় ঠিক এইভাবেই বলি, সেটাই ব্যবহার করলাম
২ নম্বর ছবির ধারনাটা চমৎকার লাগল। সোনার গুঁড়ো হয়ে সূর্যরশ্মি ছড়িয়ে যাবার দৃশ্যটা দারুণ।
facebook
ভালো লাগল। তবে লেখার ভাষাটা আরেকটু স্বচ্ছ হলে ভালো হয়।
ডাকঘর | ছবিঘর
ধন্যবাদ। স্বচ্ছ মানে কি শুদ্ধ?
বস। শুদ্ধ অশুদ্ধ বলে কিছু হয়না । আপনার যেভাবে প্রকাশ করতে সুবিধা হয়, সেভাবেই লিখুন।
ডাকঘর | ছবিঘর
ইয়া মওলা !!
ফটোস দেইখা আমি ইন্তেকাল ফরমাইলাম !!
নো কিডিং ! মাথা পুরা আউলা-ঝাউলা হয়ে গেল এরকম রূপবতী মরুভূমি দেখে। শেষ থেকে দুই নাম্বার ছবিটা ফটোশপড্? এমন সুন্দর হল কেম্নে?! এত সুন্দর হওয়ার দরকারটাই বা কি?!
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
হাহাহা।
শেষ থেকে দুই নাম্বার ছবিটা ফটোশপড্ না, হালকা পোস্ট প্রসেস্ড্। যদ্দূর মনে পড়ে কন্ট্রাস্ট আর কিছু সেটিং এদিক সেদিক
ভাষা আমার কাছে কোন সমস্যা মনে হয়নি। যেভাবে লেখায় ভাল ভাবে আবেগ ফুটিয়ে তোলা যায় সেটাই উপযোগী, সাবলিল হলেই যথেষ্ট। ইমো/স্মাইলি ব্যবহারের আধিক্য লেখার ভাবকে পরিবর্তন করে দিতে পারে। এবারের প্রত্যেক্টা ফটোই চোখের আরাম দিছে, বিশেষ করে আপ্নার সিলুএট পাওয়া ছবিটা দেখে ইউরেকা (? ) বলে চিল্লায় উঠতে ইচ্ছে হচ্ছিল। রেটিং দিতে পারলে ৪ তারা দিয়ে আরেক তারা গ্রেজ ( ) দিয়ে দিতাম। সুন্দর জায়গা।
শাফি।
হাহাহা । এবার ফ্লিকার থেকে এম্বেড করেছি তাই আরাম লাগছে, আগের ছবিগুলা এভাবে দিলে আরেক্টু ভাল লাগত সবার। সে যাই হোক আবার ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
উপর থিকা পাঁচ নম্বর ছবিটাতে নীচের দিকে যে ঝাপসা পার্টটা দেখা যাইতাছে, ঐডা কী বালু ?
ছবিগুলা দারুণ হইছে, আগের পোষ্টটার চাইতে আরও ভালো ।
ভাষা নিয়া তেমন কিছু চিন্তার নাই, যেভাবে কইয়া শান্তি পান কন ।
চালায়ে যান ।
ভালো থাইকেন ।
হ বালু। উপুড় হইয়া শুইয়া ছিলাম, তাই বালির ভিতরে কাইন্ড অফ ঢুইকা ছিলাম, বালু নরম আমি ভারি । মন্তব্যের জন্য
@প্রদীপ্তময় সাহা, আগের জবাবে ধন্যবাদ আসেনাই কেন বুঝলাম না, এই লন
ধইন্যার লিগা ধইন্যবাদ ।
রক রক রকি, শেষ থেকে দুই নম্বর ছবি মনে হয় তোর ফেসবুকে কমেন্টাইছিলাম অথবা ফ্লিকারে। মনে নাই। ওইটা পুরাই রকিং। শেষ থেকে ৪ ও ভাল লেগেছে। সূর্যাস্তের ছবি অবশ্য তেমন ভাল লাগেনাই। সূর্যোদয় বা সূর্যাস্তের ছবিতে আমি দিগন্ত রেখা বাঁকা রাখা ভালু পাইনা। যদিও অনেকরেই তুলতে দেখ্সি এইভাবে, ট্রায়াংগাল রুল ফলো করে। লেখা ছবি তোলা চলুক।
। মনে হয় ফেসবুকে। আমারও মনে নাই। সূর্যোদয় বা সূর্যাস্তের ছবিতে আমি দিগন্ত রেখা বাঁকা রাখা আমারও ঠিক ভাল লাগেনা, সোজা ছবিও তুলছি, কিন্তু সোজা ছবিগুলা কেন জানি আমার ভাল লাগেনাই। এটা মনে হইল জুতের হইসে, পুরাই ইন্সটিংক্ট!
বেশ কিছু ছবি ব্যাপক সুন্দর, মরুভূমিতে কখনো ঘুরতে যাওয়ার কথা মনে হয়নি, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এইটাকে ও ট্রাভেল লিস্টিতে ঢোকানো লাগবে।
মরুভূমি সুন্দর আবার ভয়ানকও। ঠিক সমুদ্রের মতনই। ডেজার্ট সাফারি খুবই উপভোগ্য, চেষ্টা করে দেখতে পারেন।
@ morudyan
"দৈনন্দিন জীবনে আমি গল্প করার সময় ঠিক এইভাবেই বলি, সেটাই ব্যবহার করলাম"-কিন্তু 'গল্প করার সময়' আপনি এক ভাবে অর্থাৎ এক ভাষা বলেন আর আমি আমি বলি অন্য ভাবে, অন্য ভাষায়। কাজেই সাহিত্যে এর ব্যবহার চলে না, জগাখিচূড়ি হয়ে যাবার চান্স। আর সে জন্যেই প্রমিত ভাষার ব্যবহার, আর সেটাই কাম্য ভাষা। তবে হ্যাঁ, পরীক্ষামূলক ভাবে এটা চলতে পারে, যেমনটি আপনি বলেছেন।
সাহিত্যের ভাষা বলে কি কিছু আছে? ধরেন যদি আমি আপনার ভাষা টা একদমই না জানতাম তাহলে আমি আমার জবানিতে তো আমার ভাষায়ই বলতাম তাই না? চলিত ভাষায় যখন প্রথম সাহিত্য রচনা শুরু হয় পণ্ডিতেরা মনে হয় আপনার মতই এভাবে বলেছিল যে "ব্লা ব্লা ব্লা"। যাই হোক মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।(মরুদ্যান নামটা ইংরেজিতে কেন লিখেছেন বুঝলামনা!)
না না ভাই, ভাষা নিয়ে (এমনকি সচলেও) বহু আলোচনা-সমালচনা হয়ে গেছে। ভাষা (এক্সেন্ট) মনে হয় সমস্যা নয়। সাহিত্যে প্রমিত ভাষা-ঠিকাছে, কিন্তু ব্যপারটা মনে হয় আপেক্ষিক।
শাফি।
হ
মন্তব্য ২১-এর সূত্রে : ওটা ইংরেজিতে লিখেছিলাম কারণ বাংলা ফন্ট আসছিলো না। দেশে ফিরে অনেক দিন পর কম্পিউটারে হাত দিয়েছি তো।
মন্তব্য ২২-এর সূত্রে - ভাষা (এক্সেন্ট) লিখেছেন। আপনি কি ভাষা (ডায়ালেক্ট) বোঝাতে চেয়েছেন ? ভাষা সম্পর্কিত চলতেই থাকুক।
ছবি গুলো ভালু পাইছি। পরের পর্বগুলো দিতে থাকুন ।
-স্বপ্নাদিষ্ট
=======================
যে জাতি নিজের ভাগ্য নিজে পরিবর্তন করে না, আল্লাহ তার ভাগ্য পরিবর্তন করেন না।
ওয়েসিস ভাই, কাতারে এতো সুন্দর সমুদ্র সৈকত আছে, বিকিনি পরা বালিকা নাই?
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
দেখা যায়, কিন্তু খুব কম!
চলুক
__________________
জানি নিসর্গ এক নিপুণ জেলে
কখনো গোধূলির হাওয়া, নিস্তরঙ্গ জ্যোৎস্নার ফাঁদ পেতে রাখে
নতুন মন্তব্য করুন