ভূমিকা: আবার অনেক দিন পর আলসেমিকে পরাজিত করে লেখার জন্য বসলাম। শিরোনাম সম্পর্কে আগে বলে নেই, দুবাই ভ্রমণের ছবি নিয়ে এটা প্রথম লেখা, কিন্তু ছবি বিষয়ক পোস্ট হিসেবে তিন নম্বর। আগের দুইটা দেখতে চাইলে চিপি দেন ছবি ব্লগ-১ অথবা ছবি ব্লগ-২।
ভূমিকা: আবার অনেক দিন পর আলসেমিকে পরাজিত করে লেখার জন্য বসলাম। শিরোনাম সম্পর্কে আগে বলে নেই, দুবাই ভ্রমণের ছবি নিয়ে এটা প্রথম লেখা, কিন্তু ছবি বিষয়ক পোস্ট হিসেবে তিন নম্বর। আগের দুইটা দেখতে চাইলে চিপি দেন ছবি ব্লগ-১ অথবা ছবি ব্লগ-২।
২০১০ এর জুলাইয়ে কাতারে চলে আসার পর আমরা ২ জন (আমি আর আমার উত্তমার্ধ) অন্য কোন দেশে ঘুরতে যাইনি, যা ঘুরাঘুরি সব কাতারের ভিতরে। তাই অনেক কষ্টে ছুটি যোগাড় করে দুবাইয়ে গেলাম এই এপ্রিলে। প্রথমে টিকেট কাটলাম ১০ তারিখের, এমিরেটসে, অফারে টিকেটের দাম কম ছিল কিন্তু নন-রিফান্ডেবল আর তারিখ পরিবর্তনের অযোগ্য। সবই ঠিক ছিল, কিন্তু মাথায় বাজ পড়ল যখন এমিরেটস কর্মকর্তা চেক ইনের সময় বলল আমার বউ যেতে পারবেনা। কারণ তার কাতারি ভিসার ভ্যালিডিটি ১০ তারিখ থেকে হিসাব করলে এক মাসেরও কম। আমাদের অন এ্যরাইভাল ভিসা পাওয়ার কথা, আর আমি জানতাম আমার কাতারি ভিসা ঠিকঠাক থাকলেই চলবে, 'অভিজ্ঞ' লোকজন তাই বলেছিল। ভেবেছিলাম ফিরে এসে বউয়ের ভিসা নবায়ন করব, কিন্তু হায়! কি আর করা, গেলাম না ঐদিন, আমার অনেকগুলা টাকা গচ্চা গেল। পরের দিন সকালে ভিসা নবায়ন করলাম, ফ্লাই দুবাইয়ের টিকেট কাটলাম, এবং অবশেষে রাতে ঠিকঠাক ইমিগ্রেশন পার হতে পারলাম। ছবি ব্লগ এখান থেকে শুরু।
সতর্কীকরণ: ট্যুর ছিল মোটামুটি দৌড়ের উপর, সময় নিয়ে পারফেক্ট ছবি তুলার উপায় ছিলনা। ছবি বেশিরভাগই ধর তক্তা মার পেরেক স্টাইলে তোলা। তাই ছবির গুণাগুণে হতাশ হতে পারেন, হলেও অসুবিধা নাই, যা হওয়ার তা হয়ে গেছে।
গেট নাম্বার ৩২, এটা দিয়েই আমাদের ফ্লাই দুবাইয়ের ফ্লাইটে যেতে হবে। বাক্স-প্যাটরা নিয়ে তাই গেটের সামনে এসে বসলাম। দেখলাম কেউ বইয়ের পাতা উল্টায়, কেউ ল্যাপি ল্যাপের উপর নিয়ে গুঁতাগুঁতি করে, বউও স্মার্টফোন নিয়া বসে গেল ফেসবুকিংয়ে। আমার স্মার্টফোন নাই কিন্তু মোটামুটি স্মার্ট ক্যামেরা আছে, তাই উহা নিয়াই ঝাঁপ দিলাম।
আমাদের দুইজনের পাসপোর্ট, একটা স্মার্ট (মেশিন রিডেবল) আরেকটা আনস্মার্ট। বলেন দেখি কোনটা কোন্ টাইপ?
আমি এ্যাপল ঠিক পছন্দ করতে পারিনা, এদিকে আবার ক্যাননকে খুব ভাল পাই, হঠাৎ মাথায় আইডিয়া বাত্তি জ্বলে উঠল।
বলাই বাহুল্য এই জিনিসের কনসেপ্ট পর্যায় থেকে জাতে উঠার কোন সম্ভাবনা আপাতত নাই।
ফ্লাইটের আর ১০ মিনিট বাকি কিন্তু গেটে তখনও ফ্লাই দুবাইয়ের কোন অফিসারের দেখা নাই, পাবলিক অলরেডি কাউমাউ শুরু করে দিয়েছে। কেউ কেউ পাশেই হেল্পডেস্কে দাঁড়ানো নিরীহ চেহারার একটা ফিলিপিনো মেয়েকে ধুয়ে দিচ্ছে যেন এই মেয়ের দোষে ফ্লাইট লেইট হচ্ছে। আমাদের কোন তাড়াহুড়া নেই, তাই আমরা গ্যাঁট হয়ে বসে মজা দেখছি।
যাই হোক নির্দিষ্ট সময়ের ২৫ মিনিট পর ফ্লাই দুবাইয়ের ২ জন অফিসার আসল, আর আমরা সবাই হুড়াহুড়ি করে গেট পার হয়ে বাসে উঠলাম, বাস নিয়ে গেল প্লেনের কাছে, বেশ সুন্দর চকচকে প্লেন, একটা বোয়িং ৭৩৭।
ফ্লাইটে তেমন ইন্টারেস্টিং কিছু ঘটেনাই। হেডফোন টাকা দিয়ে নিতে হবে দেখে শব্দ ছাড়াই ট্রান্সফর্মার্স-৩ এর শেষ ৪০ মিনিট দেখলাম, আগে দেখা ছিল তাই কোথায় কে কি বলে ঐটা কল্পনা করে চালায় দিলাম। ৫০ মিনিট পর দেখি নিচে মিটিমিটি আলোর সারি দেখা যায়, বুঝলাম দুবাই চলে এসেছে। আমার বউ সবসময় জানালার পাশে বসে, কোন মাফ নাই। তাই ওর ঘাড়ের উপর দিয়ে হামলে পড়লাম, কয়েকটা ছবিও তুললাম। একে তো কাঁপাকাঁপি তার উপর ঝাপসা জানালা!:(। নিচের ছবিটা সবচেয়ে কম জঘন্য
উড়ুক্কু জাহাজ অবতরণের পর আবার দৌড়াদৌড়ি। অন এ্যারাইভাল ভিসার ফর্ম ফিলাপ, টাকা জমা দেয়া, রেটিনা স্ক্যান করে ইমিগ্রেশন পার হলাম। বিমানবন্দর থেকে আমাদের সংগ্রহ করতে এসেছিলেন দুবাই প্রবাসি বুয়েটের এক সিনিয়র ভাই। তার বউ আবার আমার বউয়ের বান্ধবী, উনাদের বাসায়ই আমাদের থাকার কথা। আমাদের যাত্রা বিলম্ব আর ভিসা প্রসেসিং মিলিয়ে বেচারারারা দেড় ঘন্টা যাবৎ অপেক্ষা করছেন, তাই বের হয়েই "আরে ভাইয়া আপনাকে দেখে যে কি ভাল লাগছে" টাইপ ব্যাপক একটা হাসি দিলাম। তারপর লাগেজ গাড়িতে উঠিয়ে রওনা দিলাম উনাদের বাসার দিকে, যেতে যেতে ভাইয়া জিজ্ঞেস করলেন আমরা কি খাব। শুনেই মনটা খুশিতে আনচান করে উঠল, কিন্তু আমার বউ আগে থেকেই বলে নিয়ে আসছে যে এখানে আমার হালুম হালুম খাওয়া বাদ দিতে হবে, বান্ধবীর সামনে তার প্রেস্টিজের ব্যাপার। তাই খুবই ক্ষীণ কণ্ঠে বললাম "না ভাইয়া, সন্ধ্যার পর খেয়ে প্লেনে উঠেছি, একদম কষ্ট করবেন না হেহে "। কিন্তু ভাইয়া ভাল মানুষ, আমার কথায় না ভুলে একটা ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেলেন।
অর্ডার দেয়া হল মাটন কড়াই, চিকেন ঝালফ্রাই, বাটার নান আর আপ্পাম। আপ্পাম একধরনের দক্ষিণ ভারতীয় রুটি, খুবই নরম আর তুলতুলে, অনেকটা আমাদের দেশের ছিট/ছিটা রুটির কাছাকাছি। মাংস ভুনার সাথে অমৃত!!
খাওয়াদাওয়া শেষ করে পেটে হাত বুলাতে বুলাতে বাসায় গিয়ে দিলাম ঘুম। বেশিক্ষণ ঘুমানোর উপায় ছিলনা, পরদিন সকাল ১০ টায় অস্ট্রেলিয়ান কনস্যুলেটে আমার এ্যপয়েন্টমেন্ট। ভাইয়ার বাসা দুবাই শহর থেকে একটু দূরে, আবুধাবি-দুবাইয়ের মাঝামাঝি। ভাইয়া চাকরি করেন স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে, তাই উনার সাথে সকাল সকাল উনার অফিস পর্যন্ত আসলাম। অফিস ডি আই এফ সি (দুবাই ইন্টারন্যাশনাল ফিনান্সিয়াল সেন্টার) তে, চমৎকার একটা জায়গা। এমন জায়গায় অফিস করলে মন মেজাজ এমনিই ভাল থাকার কথা। চোখের খুবই আরাম হচ্ছিল, চারিদিকে কর্পোরেট সুন্দরীদের ছড়াছড়ি। আহা আরব, ভারতীয়, ইউরোপীয় সবরকমই আছে! সেই অফিসে চমৎকার বিরাট একটা ব্যালকনি আছে যেখানে চা-কফি, সিগারেট, নাস্তা সবকিছু পাওয়া যায়। দেখলাম খোলা হাওয়ায় অনেকেই ছাতার তলে বসে উদাস উদাস মুখে চা-কফি খাচ্ছে।
সেখান থেকে ট্যাক্সি করে গেলাম বারজুমান টাওয়ারে, অস্ট্রেলিয়ান কনস্যুলেটের অফিস ২৬ তলায়। বউ যেতে পারবেনা, তাই ওকে অপেক্ষা করতে হবে ৪ তলার লবিতে। সেটাও চমৎকার একটা জায়গা!
কাজ শেষে নিচে নামে আসলাম, ঠিক করলাম একটু আশপাশ ঘুরে দেখব, তারপর যাব ইবনে বতুতা মলে। যেই কম্পাউন্ডে আমরা উঠেছি তার বাইরেই এই মল।
যাহোক বারজুমান টাওয়ারের পাশেই আর একটা ছোট মল, একটা ব্যাপার খারাপ লাগল যে একই জিনিসের দাম কাতারে অনেক বেশি দুবাইর চেয়ে। হা-হুতাস করতে করতে মল থেকে বের হয়ে আবার ফুটপাথ ধরে একটু হাঁটতেই দেখলাম একটা মেট্রো স্টেশন দেখা যাচ্ছে সামনে; কয়েক মাস আগেই উদ্বোধন হয়েছে দুবাই মেট্রো, স্টেশনের নাম আল-কারামা। দূরে দেখা যাচ্ছে বুর্জ খলিফা, পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচা বিল্ডিং।
দুবাইয়ের রাস্তায় রাস্তায় সিটি ট্যুরের বাস দেখা যায়, বাসে বসা ট্যুরিস্টদের মধ্যে সাদা চামড়াই বেশি। এটা করা আমার মতে হুদাই পয়সা খরচ, খুবই কম সময়ে অনেক কিছু দেখায়, ভাল করে কিছু্ই দেখা যায়না। এর চেয়ে নিজেরা মেট্রো বা বাসে করে ঘুরলে ভাল আর সস্তা।
আসেন এবার স্টেশনের ভিতরে যাই
এই রুট টা দিয়ে আমরা ৭ দিনে অনেক আসা যাওয়া করেছি। সব বড় বড় মল, দেখার মতন আর গুরুত্বপূর্ণ জায়গা গুলাতে মেট্রো স্টেশন আছে, ব্যাংককেও দেখেছি এমন। চমৎকার ব্যবস্হা।
এবার ট্রেনে উঠি, আহা কি চমৎকার! বসার জায়গা নাই।
যেতে যেতে দেখি বুর্জ খলিফার কাছাকাছি এসেছি, ওরে কত্ত উঁচা! ৭-৮ টা স্টেশন যাবার পরে ট্রেন ফাঁকা হয়ে গেল, বসার জায়গা পেলাম।
আমরা যে স্টেশনে নামলাম তার নাম জেবেল আলি। এর সাথেই ইবনে বতুতা মল। আর ডান দিকে তাকালেই দেখা যায় জেবেল আলি ভিলেজের প্রবেশমুখ, যেটা দুবাইয়ের হোটেল আটলান্টিসের আদলে বানানো। স্টেশন থেকে নামলেই সারি সারি বাস আর ট্যাক্সি দাঁড়ানো।
আজ এখানেই শেষ, পরের পর্ব শুরু করব ইবনে বতুতা মল থেকে, সে এক দেখার মতন জায়গা!!
মরুদ্যান
মন্তব্য
ছবিগুলো সুন্দর।
সাথে আরেকটু বেশি বিবরণ পেলে ভাল লাগতো।
পরের পোস্টে আরো বেশি বিবরণ দেয়ার চেষ্টা করব।
ভ্রমন করলেন কই ভাই? ছবি দেখে তো মনে হচ্ছে দুবাই এর রাস্তা দিয়ে যাবার সময় কিংবা গাড়িতে উঠে যা যা দেখছেন সেগুলার ছবি দিছেন শুধু।
যাই হোক, দুবাইয়ে সুন্দরী ললনার দেখা মেলে না ভাই?
ভাই এই শেষ শেষ না। আপনার মনের মতন ছবি হবে পরের বার আশা করি।
কবে যে টাকা হবে, আর শুধু ভ্রমনের জন্যে কিছু আলাদা বাজেট রাখতে পারবো!!! হিংসে হয়। ভালো লাগলো অনেক। কি আর করার, অন্তত আপনার ছবি দেখে দুধের স্বাদ তো ঘোলে মিটাতে পারছি!
ক্রেসিডা
আশা হারায়েন না, আমিও একসময় ভাবতাম যে আমি কবে যেতে পারব!
মরুদ্যান
দুবাই যামু টেকা দেন!!
২/৩টা ছবি বাদে আমি কিন্তু কোন ছবিই দেখতে পারছি না । সমস্যাটা কি আমার কম্পুতে ??
আমি দেখতে পাচ্ছি এখনও। আপনার সমস্যা টা কেন হচ্ছে বলতে পারলাম না।
বুঝলাম না বেশিরভাগ ছবিই দেখতে পাচ্ছি না
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
কেন হচ্ছে বুঝলাম না, আমি এখনও ঠিকঠাক দেখতে পাচ্ছি।
বেশীরভাগ ছবি দেখতে না পেলেও বর্ণনা পড়ে আঁশ মেটালাম। লেখককে অনেক ধন্যবাদ।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
অনেক ধন্যবাদ!! কিন্তু কেউ ছবি দেখতে পারছেনা কেন??
ছবিগুলো ভালই লাগল।
কিন্তু ঐ মাংসের ছবিটা দেখেই কেমন কেমন যেন লাগছে।
আপনি কি ছবি গুলো দেখতে পারছেন? অনেকেই পারছেনা!!
আপনি কি নিরামিষাশী? আপনার অস্বস্তির কারণ হয়ে থাকলে দু:খ প্রকাশ করছি।
খাড়ান, একটু দম লইয়া নেই।
আসলে আমি ভীষণভাবে 'মাংশাষী প্রাণী' তো, তাই লোভের চোটে কেমন কেমন লাগছিল।
এইবারে বুঝলেন ভাইয়া।
ও হ্যাঁ, আমি ছবি দেখতে পারছি মাত্র পাঁচ-ছটা ।
মড়ুমামা কিছু করেন।
আম্মো খালি কয়েকটা ছবি দেখতে পারছি। খেলুম না কৈলাম।
ভাই, আমার দোষে হল না টেকি প্রবলেম বুঝতে পারছিনা। মডুভাইয়ের সাহায্য চাইলাম, দেখা যাক কি হয়!
দোস্ত বেশ কিছু ছবি দেখতে পারছিনা।
কি জানি কি হইল! কন্ট্যাক্টে সাহায্য চেয়ে ইমেইল করলাম। কিন্তু আমি দেখতে পারছি কেন?? ক্যাশে ক্লিয়ার করলাম, তাও দেখাচ্ছে!
এখন আমিও দেখতে পাচ্ছিনা!
ছবিগুলো না দেখে লেখাটার পুরো রসাস্বাদন সম্ভব হচ্ছে না ওয়েসিস ভাই। এম্ব্যাডিং-এ সমস্য হয়ে থাকতে পারে। সেটা একটু চেক করে নিতেন যদি! সাথে ছবিগুলোর প্রাইভেসি সেটিংস...
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ধুগো ভাই, আমি অনেক বার অন্তত ২০ বার প্রিভিউ চেক করে পোস্ট দিলাম। আর ছবি শুধু ২ টা ফ্লিকার থেকে এম্বেড করা, বাকীগুলা সরাসরি আপলোড করা এখানে। আজকে সকাল পর্যন্ত আমি দেখতে পাচ্ছিলাম, পরে আমিও আর দেখতে পাচ্ছিনা! খুবই অদ্ভুত!
নতুন মন্তব্য করুন