আমার বইবেলা

মরুদ্যান এর ছবি
লিখেছেন মরুদ্যান [অতিথি] (তারিখ: মঙ্গল, ১২/০৬/২০১২ - ৬:৪২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

"চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে" খুব পছন্দের একটা গান আমার। যতবারই গাইতে যাই কেন যেন চোখে পানি চলে আসে।

সচলে সেদিন শিশিরকণা বলল আমার নাকি রাইটার্স ডায়রিয়া হয়েছে, কথা মিথ্যা না। খুব অল্প সময়ে কয়েকটা লেখা নামিয়ে ফেলেছি, অথচ মাঝে অনেকদিন (প্রায় তিন বছর) কিছুই লেখিনি। স্কুলে থাকতে কিশোর তারকালোক, ছোটদের কাগজ নাহলে স্কুল ম্যাগাজিনে ১-২ টা লেখা পাঠাতাম। তারপর সে কি অপেক্ষা ছাপা হল কিনা দেখার জন্য!! ছাপা হওয়ার পর দৌড়ে গিয়ে আম্মা কে দেখিয়েছি, পরে হয়তো আম্মা আব্বা কে বলেছে। খুশি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু উৎসাহটা তেমন ভাবে কখনো দেয়নি। আমার আব্বার একটাই কথা ছিল, পড়াশুনা কর, আর কিছু না করলেও চলবে। আমি পড়ার বই পড়তে চাইতাম না তেমন, আমাকে কেউ গল্পের বই দিয়ে বসিয়ে দিলে আর কিছু লাগতনা। বইয়ের ফাঁকে, তলায় গল্পের বই মিশিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা পড়েছি। আম্মাও বাসার কাজকর্মের মাঝে সময় পেলে পড়ত, খুব বেশি না হলেও পড়ত। সাতকাহন, লোটাকম্বল, মেমসাহেব, দায়বন্ধন সহ বেশ কিছু বই ছিল আম্মার। এগুলা আমার ধরা বারণ ছিল, একেবারে নিষিদ্ধ। প্রথম দিকে আমার সময়ও ছিলনা এগুলো পড়ার।

আমার প্রথম গল্পের বই পড়া শুরু হয় ঠাকুরমার ঝুলি দিয়ে। লাল কমল, নীল কমল, রাক্ষস, খোক্কস, ব্যাঙ্গম আর ব্যাঙ্গমী একেবারে আমার মনে গেঁথে গিয়েছিল। কতবার যে পড়েছি তার ইয়ত্তা নেই, বইটা আমার ছিলনা যদিও। চট্টগ্রাম থেকে সাড়ে তিন বছর বয়সে ঢাকা চলে আসি। আব্বার তখনো পোস্টিং চাটগাঁ তেই, তাই প্রথম এক দেড় বছর আমি আর আম্মা নানুদের সাথে থাকতাম। বইটা একদম ছেঁড়া খোঁড়া অবস্থায় খুঁজে পাই নানার পুরানো কাঠের আলমারির নিচের ড্রয়ারে। মলাট নেই, তেলাপোকার ডিম দিয়ে ভরা, সব সেলাই খোলা। সেই বই পরে আমি নিচের বাঁধাইয়ের দোকানে থেকে বাঁধাই করে এনেছিলাম। গাঢ় নীল রঙের চারকোনা বরফি বরফি প্রিন্টের বাঁধাই ছিল। বইটা এখনও আছে!! নিজের প্রথম গল্পের বই হয় তার পরের জন্মদিনে। মেজ খালা কিনে দিল আরেকটা রূপকথার বই, নামটা মনে করতে পারছিনা, কিন্তু অসম্ভব ভাল ভাল গল্প ছিল ঐটায়। প্রচ্ছদ টা আমার এখনো আবছা আবছা মনে আছে, সবুজ রঙের উপরে একটা মোহর ভর্তি ঘড়া, সামনে বসা রাজকুমারী এমন কিছু একটা ছিল। এই বইটাও থাকার কথা, এবার দেশে গিয়ে খুঁজতে হবে। এরপর শুরু হল আমার রূপকথা পড়া, অল্প কিছুদিনেই ঘর ভরে গেল বইয়ে, আরেকটা ব্যাপার সবাই বুঝে গিয়েছিল আমি বই পেলে খুব খুশি হই, তাই খেলনার বদলে উপহারে বইয়ের সংখ্যা বাড়তে থাকে।

আমার ছোট খালা তখন পড়ে কামরুন নেসা স্কুলে। খালা সবসময় পাশের বাসার রত্না খালার সাথেই যাওয়া আসা করত, যেহেতু একই স্কুল, আর স্কুল থেকে বাসা ছিল ১০ মিনিটের হাঁটা রাস্তা। কিন্তু মাঝে মাঝে রত্না খালা স্কুল কামাই দিলে খালাকে কেউ না কেউ আনতে যেত। এমনি একদিন নানা আনতে গ্যাছে খালাকে, সাথে আমিও গ্যাছি। স্কুলের পাশেই বইয়ের দোকান, আমরা ছুটির একটু আগে যাওয়াতে নানাকে নিয়ে ঢুকলাম বইয়ের দোকানে। বই দেখতে দেখতে চোখে পড়ল একটা বই, আনন্দ পাবলিসার্সের, লিখা সুকুমার রায় (নাকি সত্যজিৎ রায়?) সম্পাদিত গল্পসমগ্র। নানার কাছে বায়না ধরলাম যে বইটা কিনে দিতে হবে। ছোট করে বলে রাখি নানী আমাকে দিয়ে নানা কে বিবিধ যন্ত্রণা দিত। নানা সিগারেট খেত, নানী ব্যাপারটা দুই চোখে দেখতে পারতনা। গোল্ড লিফ বা বাংলা ফাইভ কে তখন থেকেই চিনি। আমার কাজ ছিল নানা বাইরে থেকে আসলেই লম্ফ ঝম্ফ দিয়ে নানার মুখের কাছে গিয়ে সিগারেটের গন্ধ আছে কিনা শোঁকা আর তারপর নানীর কাছে গিয়ে রিপোর্ট করা যে নানা বাইরে থেকে ধুঁয়া খেয়ে আসছে। আমি ছিলাম আমার নানা নানীর সবচেয়ে বড় নাতি, আর তখন আমার আর কোন খালা মামার বিয়ে হয়নি। তাই আমার ছিল একচ্ছত্র আধিপত্য। নানী আরো শিখিয়েছিল নানা কে কিপটা বলে ডাকার জন্য, কারণ নানী চিনি পেঁয়াজ আনার জন্য বাজারে যেতে বললেই নানা অনেক ক্যাওম্যাও করত যে "এত চিনি দিয়া করে কি", "এত পিঁয়াজ খাইলে ক্যামনে হইব" ইত্যাদি ইত্যাদি। এই জন্য নানীর আমাকে দিয়ে এই চিকিৎসা। যাই হোক নানা বইটা কিনে দিল, বাসায় এনেই গোগ্রাসে পড়া শুরু করলাম। প্রথম গল্প রাবণ কে নিয়ে, রাবণের জন্ম আর দেবতাদেরকে জ্বালানোর জন্য তার বিভিন্ন কুকীর্তি। বইটা অনেক মজা লাগল, গল্পের মাঝে মাঝে আবার স্কেচ করা ছবি। জানলাম ঠাকুরমার ঝুলির বাইরেও রাক্ষস আছে যে কিনা আবার জামা কাপড় পরে, প্রাসাদে থাকে, বিয়ে শাদি করে। দ্বিতীয় গল্প ছিল গুপি গাইন বাঘা বাইন, এই গল্পে এসে বনের মধ্যে ভূতের রাজার অংশটুকুতে এসে ছবি দেখে আর বর্ণনা পড়ে বেশ ভয় পেয়েছিলাম মনে আছে। তারপর অনেকদিন একা রুমে ওই গল্পটা পড়িনি।

এরপর থেকে আনন্দ পাবলিসার্সের লোগোটা চিনে রেখেছিলাম, বইয়ের দোকানে গেলেই খুঁজে বের করতাম ওই লোগোওয়ালা কোন ছোটদের বই আছে কিনা। এর মাঝে একবার আব্বা ঢাকা বইমেলা থেকে অনেকগুলা বই কিনে দিল। সেখানে একটা বইয়ের কথা খুব মনে পড়ছে, নাম ছিল "দেশে বিদেশে শিকার কাহিনী" আনন্দ পাবলিসার্স থেকে ছাপা। সেখানে জিম করবেটের বেশ কিছু শিকার কাহিনী ছিল, ভারতীয় উপমহাদেশের বাঘ আর আফ্রিকার বাইসন আর কুমির শিকারের কাহিনী, সাথে ঘটনার সাথে মিল রেখে কিছু অনবদ্য স্কেচ! এই বইটা আমি কম করে হলেও শ'খানেক বার পড়েছি। এটাও থাকার কথা আমার আলমারিতে।

আগে শুক্রবার সকাল সোয়া আটটা বা আটটা বিশের দিকে একটা মজার অনুষ্ঠান হত, "দ্যা ক্রিস্টাল মেইয"। কারো মনে আছে কিনা জানিনা, একটা টাকমাথা লোক কালো রঙের উপরে চিতাবাঘের বুটি দেয়া একটা ওভারকোট পরে উপস্থাপনা করত। ছবিটা দেখলে হয়তো মনে পড়বে

আমি এই অনুষ্ঠানের একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলাম, শুক্রবার আব্বা আম্মা একটু বেলা করে উঠত, নয়টা সাড়ে নয়টার দিকে। কিন্তু আমি উঠে যেতাম আটটার আগে, আম্মা এ্যালার্ম দিয়ে রাখত আমাকে উঠিয়ে দেয়ার জন্য। কোন কোন শুক্রবার ঘুম ভেঙে যেত ছয়টা বা সাড়ে ছয়টায়, তখন ঘুম থেকে উঠে আমার কাজ ছিল বাসি মুখে সোয়া আটটার আগ পর্যন্ত বিছানায় উপুড় হয়ে বই পড়া। এই রকম সকালবেলা গুলোতে একটা গল্প বার বার পড়তাম, গল্পের নাম ছিল 'কলাবতী'। গল্পটা যতটুকু মনে আছে বলছি,

কলাবতীর মা মারা যাবার পর তার বাবা আরেকটা বিয়ে করে। নতুন মা সংসারে তার একটা মেয়ে নিয়ে হাজির হয়। মেয়েটা কলাবতীরই বয়সী কিন্তু খুব হিংশুটে আর ঝগড়াটে। সৎ মার সংসারে কলাবতীর অনেক কষ্ট, সব কাজ তাকে দিয়ে করায় আর একদমই খেতে দেয়না। খিদের জ্বালায় কলাবতী পুকুর ঘাটে যেয়ে একদিন খুব কাঁদছে। এসময় সে হঠাৎ শুনতে পেল কে যেন তার নাম ধরে আস্ত আস্তে ডাকছে। তাকিয়ে দেখে একটা বড় কাছিম সাঁতার কেটে ঘাটের কাছে এসেছে। কাছিমটা আবার মানুষের ভাষায় কথা বলে উঠল, "কাঁদছ কেন কলাবতী?"

কলাবতী তার দু:খের কারণ খুলে বলল। শুনে কাছিম টা বলল, "তুমি কাল দুপুরের খাওয়ার পর এই সময়টাতে বাসন মাজতে পুকুর ঘাটে এস।" একথা বলে কাছিমটা চলে গেল।

পরের দিন কলাবতী কথামত দুপুরে খাওয়ার পর এঁটো বাসন নিয়ে পুকুরঘাটে বসে আছে। বরাবরের মতন আজকেও তাকে একটু খানি বাসি পান্তা খেতে দিয়েছে সৎমা। খিদেয় পেট জ্বলছে কলাবতীর। এমন সময় দেখতে পেল কাছিমটা আসছে সাঁতার কেটে। ঘাটে এসে কাছিমটা মুখ খুলল। কি অবাক কাণ্ড! মুখের ভিতর দুইটা ডিম। কাছিম কলাবতীকে বলল, "এই ডিম দুটি নাও। এখন থেকে আমি প্রতিদিন তোমাকে দুটো করে ডিম দেব, তুমি লুকিয়ে লুকিয়ে খেয়ে নিও। কিন্তু খবরদার ভুলেও কেউ যাতে না জানে।" কলাবতী কাছিমকে অনেক ধন্যবাদ দিল, ডিম দিয়ে কাছিম চলে গেল।

সেই থেকে কলাবতীর খিদের কষ্ট অনেক কমে গেল। সে কাছিমটাকে মা বলে ডাকে, তার কাছে মনে হয় এ যেন তার সেই মরে যাওয়া মা, তার কষ্ট সহ্য করতে না পেরে অন্য রূপ ধরে ফিরে এসেছে। এদিকে যতই দিন যায় কলাবতী আরও ডাগর আর সুন্দর হয়ে উঠে। সৎমার চোখ টাটায়, তার নিজের মেয়ে কালো আর একদম কুৎসিত। সে কিছুতেই বুঝে পায়না, না খেতে পেয়েও কলাবতী কি করে এত সুন্দরী হয়ে উঠছে দিনকে দিন। তার সন্দেহ হয় কলাবতী নিশ্চয়ই কিছু চুরি করে খাচ্ছে, তাই সে তার নিজের মেয়েকে বলে কলাবতীর দিকে চোখ রাখতে।

পরের দিন কলাবতী যখন দুপুরের এঁটো বাসন নিয়ে ঘাটে যাচ্ছে, তখন সৎ বোন তার পিছু নিল আর পুকুরের ধারে একটা ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে রইল। সে দেখতে পেল কলাবতী ঘাটে বাসন গুলো নামিয়ে রেখে 'মা' 'মা' করে কাকে জানি ডাকল। একটু পর একটা বিশাল কাছিম সাঁতার কেটে পুকুরের পানি থেকে উঠে আসল আর এসে কলাবতীকে ২টা ডিম দিয়ে গেল। কলাবতী ডিম নেয়ার পর কাছিম টা আবার হারিয়ে গেল পানির নীচে। বাড়ি ফিরে সে তার মায়ের কাছে এই ঘটনা বর্ণনা করল। সৎমা ভাবল "এই তাহলে ঘটনা?? দাঁড়া তোকে দেখাচ্ছি মজা!!"

পরের দিন দুপুরে কলাবতীর বাবা ক্ষেত থেকে ফিরে দেখতে পেল তার বউ দাওয়ায় শুয়ে পেট চেপে আহ উহ করে ব্যথায় কাতরাচ্ছে। সে তখনই কবিরাজ ডাকতে চাইল কিন্তু সৎমা বলল, "ওগো এ সাধারণ ব্যথা নয়। কবিরাজের ওষুধে কিছুই হবেনা আমার। আমি জানি এর আসল ওষুধ। কাছিমের মাংস খেলেই শুধু এই অসুখ সারবে "।

-"কিন্তু এখন কাছিম কোথায় পাব?", কলাবতীর বাবা জিজ্ঞেস করল।

-"আমাদের পুকুরেই একটা বড় কাছিম আছে, আমি অনেকবার দেখেছি। ওটাকেই ধরে কেটেকুটে রান্না কর, আর পারছিনা ব্যথায়, উ উ উ উ উ"।

কলাবতী এই কথা শুনে বেজায় ভয়ে পেয়ে গেল। একছুটে চলে গেল পুকুর ঘাটে, মা মা বলে ডাকতেই কাছিম এসে হাজির হল ঘাটে। কলাবতী কাঁদতে কাঁদতে বলল সব ঘটনা। কাছিম তখন বলল, "কেঁদোনা মেয়ে, ভাগ্যে যা আছে তাই হবে।শোন, আমার মাংস থেকে তোমাকেও হয়তো কয়েকটুকরা খেতে দেবে, ওটা না খেয়ে টুকরোগুলো এই পুকুর পাড়েই কোথায় পুঁতে রেখ।"

কলাবতীর বাবা সহ আরো কয়েকজন একটা জাল এনে পুকুরে ফেলল, একটু পরেই কাছিম জালে ধরা পড়ল। তারপর এটাকে কেটেকুটে সুন্দর ব্যাঞ্জণ রান্না হল, খেয়ে সৎমা তড়াক করে উঠে তার স্বামী কে বলল, "দেখেছো, আমি একদম ভাল হয়ে গ্যাছি।" কলাবতীকেও কয়েক টুকরো মাংস দিল খেতে, কলাবতী তা না খেয়ে কথামত পুকুর পাড়ে পুঁতে রাখল। পরের দিন বাসন মাজতে গিয়ে দেখল যেখানে পুঁতে রেখেছিল, সেখান থেকে খুব সুন্দর একটা ডালিম গাছ গজিয়েছে। কলাবতীর খুশি আর দেখে কে!! সে গাছের কাছে গিয়ে আবার 'মা' 'মা' করে ডাক দিল, তখন গাছটা তাকে দুইটা ডালিম দিল আর বলল প্রতিদিন যেন কলাবতী এসে ডালিম দুটো নিয়ে যায়।

দিন গড়িয়ে মাস যায়, মাস ঘুরিয়ে বছর। কলাবতীর এখন উপচে পরা রূপ। সৎমা কিছুতেই বুঝতে পারেনা না খেয়ে না খেয়ে একটা মেয়ের রূপ এত খোলতাই হয় কিভাবে। সে আবারও সন্দেহ করল যে নিশ্চয়ই কলাবতী বাইরে থেকে নাহয় চুরি করে কিছু খাচ্ছে। একদিন সে নিজেই লুকিয়ে লুকিয়ে কলাবতীর উপর চোখ রাখল, আর দেখতে পেল গাছের ডালিম দেওয়ার ঘটনা। কলাবতী চলে আসার পর সে নিজেই একটা কুড়াল নিয়ে গিয়ে গাছটা কেটে ফেলল। পরের দিন কলাবতী গিয়ে দেখল গাছটা আর নেই, কেউ কেটে ফেলেছে। সে বুঝল এটা কার কাজ। কলাবতী অনেক কাঁদল পুকুরপাড়ে বসে বসে। এবার বুঝি তার মা সারাজীবনের জন্য হারিয়ে গেল!

কয়েকদিন পর কলাবতী বাজারে যাচ্ছিল, সৎমার হুকুমে তার সৎ বোনের জন্য মিষ্টি কিনতে। এসময় রাস্তা দিয়ে ঐ গ্রামের জমিদার যাচ্ছিল, কলাবতীর রূপ দেখে সে একেবারে মুগ্ধ হয়ে গেল। সে ঠিক করল এই মেয়েকেই সে বিয়ে করবে। খোঁজ খবর নিয়ে সে কলাবতীর বাবার কাছে ঘটক পাঠাল, কলাবতীর বাবা তো মহা খুশি। সে সাথে সাথেই বলল যে জমিদারকে জামাই হিসাবে পাবে এটা তার মহাসৌভাগ্য। কিন্তু সৎমার তো এ কথা শুনে গা জ্বলে গেল, তার মেয়ে থাকতে জমিদারের সাথে বিয়ে হবে কলাবতীর! অসম্ভব! সে মনে মনে একটা দুষ্টু বুদ্ধি আঁটল।

বিয়ের আগের দিন রাতে কলাবতীর সৎমা কলাবতীকে জোর করে ভাঁড়ারঘরে আটকে রাখল। আর ঠিক করে রাখল সকালে কলাবতীর জায়গায় তার নিজের মেয়েকে সাজিয়ে গুজিয়ে বড় ঘোমটা পরিয়ে জমিদারের সাথে বিয়ে করিয়ে দেবে। পরের দিন সকালে দেখা গেল এক অদ্ভুত কাণ্ড। কলাবতীদের সদর দরজার ঠিক সামনে এক বিরাট তাল গাছ গজিয়েছে, এত উঁচু যেন আকাশ ছুঁয়ে আছে। এক রাতে এই গাছ কোথা থেকে আসল কেউ বুঝতে পারলনা। জমিদার বরযাত্রী নিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে, ভিতরে ঢুকতে পারছেনা। সৎমা বুঝতে পারল যে এর পিছনে কলাবতীর সেই মায়ের হাত আছে, সে চিৎকার করে বলল গাছটাকে কুড়াল দিয়ে কেটে ফেলতে। লোকজন কুড়াল দিয়ে গাছ কাটতে গেল, কিন্তু গাছ এত শক্ত একটা কাটা দাগও লাগছেনা গায়ে। উল্টো কোপ দেয়ার সময় একজনের হাত থেকে কুড়াল ফসকে সৎমার গায়ে গিয়ে পড়ল, সাথে সাথে মারা পড়ল সে। মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে মেয়ে ঘোমটা ভুলে কাঁদতে কাঁদতে ভিতর থেকে বাইরে দৌড়ে আসল। জমিদার তখন দেখলেন, আরে এটা তো সেই মেয়ে না যাকে তিনি ভালবেসেছেন। জমিদারের কথায় কলাবতীর খোঁজ পড়ল তখন, খুঁজতে খুঁজতে তাকে পাওয়া গেল ভাঁড়ারঘরে। জমিদার তখন ঘোষণা দিলেন এই মেয়েই তো তার আসল বউ, যে বউ সেজে আছে সে নকল। তারপর ঘরের বাইরেই পুরোহিতের সামনে কলাবতীকে বিয়ে করলেন। বিয়ে শেষ হওয়ার পরই এক অদ্ভুত কাণ্ড ঘটল, সবার সামনেই তাল গাছটা নিজে নিজে মাটি থেকে শিকড়সুদ্ধ উঠে সোঁ সোঁ করে আকাশের দিকে উড়ে চলে গেল।

কলাবতী বাকি জীবন জমিদারের বউ হিসেবে খুব সুখে শান্তিতে কাটালো।

গল্পটার কিছু খুঁটিনাটি ঘটনা মনে ছিলনা, বয়স হয়েছে তো! আমি নিজে থেকে কিঞ্চিৎ বানিয়ে নিয়েছি, কিন্তু আসল ঘটনা সব ঠিক আছে। আর কেউ পুরো গল্পটা হুবুহু জেনে থাকলে সেটা মন্তব্য অংশে জানাতে পারেন।

যা বলছিলাম তখন, আরেকটু বড় হয়ে আমার হাতে আসল তিন গোয়েন্দা, গোয়েন্দা রাজু, ওয়েস্টার্ন, কুয়াশা, আর পাক্ষিক ম্যাগাজিন হিসাবে রাখতাম প্রথমে কিশোর তারকালোক। পরে এর সাথে আরো যোগ হয় ছোটদের কাগজ। মাসুদ রানা কেন যেন তখন পড়তাম না, অনেক পরে গিয়ে পড়েছি, কলেজে। তাও খুব বেশি না, আমার তেমন ভাল লাগেনা মসুদ রানা। এরপর স্বাদ পেলাম ফেলুদা কাকাবাবু আর শীর্ষেন্দুর কিশোর উপন্যাসগুলোর। মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি, কুঞ্জপুকুরের কাণ্ড, পাগলা সাহেবের কবর, বনি, সোনার মেডেল, বক্সার রতন আরো কত কি! তার উপর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম আনন্দমেলার বার্ষিক পূজো সংখ্যার জন্য। তখন পূজো সংখ্যা ১০০ টাকায় পাওয়া যেত মনে আছে। মতি নন্দীর খেলাধূলার উপর কিশোর উপন্যাস গুলা কি যে ভাল লাগত। এই বছর দুই আগেও একবার বের করে পড়েছিলাম একটা। পরবর্তীতে পছন্দের তালিকায় আসে শাহরিয়ার কবিরের উপন্যাস। নুলিয়াছড়ির সোনার পাহাড়, হানাবাড়ির রহস্য এই নাম দুইটা মনে পড়ছে। আরেকটা বই খুব ভাল লাগত, অনেক বার পড়েছি, গল্পটা ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঙালি-পাহাড়ি সমস্যার উপর। নামটা ছিল মনে হয় 'সীমান্তে সংঘাত', কিন্তু আমি শিওর না, কারো মনে থাকলে আওয়াজ দ্যান। পরে জাফর ইকবালের সায়েন্স ফিকশন আর কিশোর উপন্যাসের দিকে ঝুঁকে পড়েছিলাম, কিছু বের হলেই কিনে ফেলতাম। বলাই বাহুল্য পরের দিকে কিছু বই ভাল লাগেনি।

আরেক ধরনের বইয়ের কথা না বললেই নয়। আমি এক জন্মদিনে দুইটা বই পেলাম 'দম ফাটানো হাসির গল্প' আর 'হাসির ভাণ্ডার'। খুব আশা নিয়ে বসলাম অনেক অনেক হাসব, দু:খের কথা সর্বসাকুল্যে একটা গল্পে হাসতে পারলাম। এরপর থেকে যেকোন দম ফাটানো হাসির গল্প টাইপ নাম দেখলে সে বই সযত্নে এড়িয়ে যেতাম। হাসি পেত বেশি নন্টে ফন্টে, হাঁদা-ভোঁদা, বাঁটুল দি গ্রেট আর টিনটিন পড়ে। চাচা চৌধুরী কিছুদিন পড়েছি, পরে আর ভাল লাগতনা।

ওয়েস্টার্ন পড়ে পড়ে সুপার ফাস্ট পিস্তল ড্র কেমন করে করছে গল্পের নায়কেরা যেন চোখের সামনে দেখতে পেতাম। মুখস্হ হয়ে গিয়েছিল বিভিন্ন জাতের ঘোড়ার নাম যেমন স্ট্যালিয়ন, বে, গেল্ডিং, এ্যাপালুসা। বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্র যেমন কোল্ট, স্মিথ এ্যান্ড ওয়েসন, ব্রাউনিং, কারবাইন, হেনরি রিপিটার, উইনচেস্টার ইত্যাদি। তারপর ভিন্ন ভিন্ন রেড ইন্ডিয়ান গোত্র যেমন এ্যাপাচি, চেরোকি, উতে, শাইয়্যান, মোহাউক, নাভাজো ইন্ডিয়ানদের নাম মনে পড়ছে। আমার খুব পছন্দের কয়েকজন ওয়েস্টার্ন চরিত্রের কথা না বললেই নয়। ফ্র্যাঙ্ক শ্যানন, টম প্রেস্টন, এরফান জেসাপ, সাবাডিয়া, ওয়াইল্ড বিল হিকক, এ্যালান ডিলান এদেরকে নিয়ে আমি স্বপ্ন পর্যন্ত দেখেছি। আমার আরেকটা ওয়েস্টার্ন পাগল বন্ধু ছিল, আমরা দুইজন আলোচনা করতাম কে বেশি ফাস্ট শ্যানন নাকি সাবাডিয়া। আমি ছিলাম শ্যাননের পক্ষে, ও ছিল সাবাডিয়ার। আব্বার পুরানো বেল্ট কোমরে লাগিয়ে হোলস্টার বানিয়ে বাসায় আয়নার সামনে খেলনা রিভলবার দিয়ে ফাস্ট ড্র করে কাটিয়েছি অনেক সময়। ইচ্ছা ছিল বড় হয়ে একটা হাতির দাঁতের হাতল ওয়ালা কোল্ট রিভলবার কিনব, আর পিস্তলওয়ালা ছিনতাইকারী আসলে সাপের ছোবলের চেয়েও বেশি ক্ষীপ্রতায় পিস্তল ড্র করে ছিনতাইকারীকে শিক্ষা দিব। হায়রে সেসব দিন!!!

আমার অনেক অনেক প্রিয় একটা বই হচ্ছে 'সেরা সন্দেশ'। এত মজার বই কখনও বের হয়েছে কিনা সন্দেহ। এই বই নিয়ে তিন চার ঘন্টা এমনিতেই কাটিয়ে দেওয়া যায়। এখন বেশি বই পড়া হয়না, পড়ার জন্য সচলায়তন মুক্তমনাই ভরসা, মাঝে মাঝে কিছু ইবুক। দুই বছর ধরে বই মেলায়ও যাওয়া হয়না। আবার কবে যেতে পারব কে জানে! নতুন বই কিনে এনে কাপড় না খুলেই বই নিয়ে বসে পরার যে আনন্দ তখন ছিল তা কি কোনদিন আর ফিরে আসবে? <দীর্ঘশ্বাস>

সকাল থেকেই বইয়ের আলমারিটার কথা খুব মনে পড়ছে, খুব ইচ্ছা করছে পুরোনো বই গুলোর গায়ে হাত বুলাতে। সুখের কথা আর ১৬ দিন পরই দেশে যাচ্ছি, ওদেরকে আবার দেখব!! সবাই ভাল থাকবেন, হ্যাপি রিডিং!


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

স্কুলের বই কার পড়তে ভাল লাগছে- ইট্টু আওয়াজ দিয়েন... আহা- লুকিয়ে পড়ার সেইসব দিন...
স্কুলের লাইব্রেরী থেকে বই নিয়ে কোনদিন একবারে পড়ে ফেলতাম- বিকেলে বাইরে যাওয়া- খেলাকরা বাদ দিয়ে...
ফেলুদা সবসময়ের প্রিয়...
এখনো পড়ি- কয়েকটা বই আধ খাওয়া করে পড়ছি- একটু একটু করে... পড়েই আনন্দ... হাসি
চলুক
কলাবতীর গল্পটা আলাদা করে পোস্ট করতে পারতেন...

কড়িকাঠুরে

মরুদ্যান এর ছবি

আলাদা পোস্ট? নাহ এটাই ঠিকাছে মনে হয় হাসি

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

 মেঘলা মানুষ এর ছবি

ওরে, তুমি তো দেখি স্লগ ওভারে ব্যাটিংয়ের মত লেখা শুরু করেছ! লেখা ভাল হচ্ছে, স্লগিং অব্যাহত থাকুক! অপরাজিত ব্যাটসম্যানের মত যেন লেখা শেষ না হয় হাততালি

মরুদ্যান এর ছবি

হা হা হাসি

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

লুৎফর রহমান রিটন এর ছবি

ভালো লাগলো তোমার ছেলেবেলার বই পড়ার কাহিনি।
ছোটদের কাগজে তোমার লেখা ছাপা হয়েছিলো?

হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!

মরুদ্যান এর ছবি

ছোটদের কাগজে লেখা দিয়েছিলাম কিনা ঠিক মনে করতে পারছিনা, কিন্তু কিশোর তারকালোকে হয়েছিল কয়েকবার সেটা মনে আছে।
সবচেয়ে ভাল লাগত ছোটদের কাগজের প্রচ্ছদ!

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

রিসালাত বারী এর ছবি

কলাবতীর গল্পটার একটা ভার্সন রাশিয়ান রূপকথায় ছিল, আরেকটাক ভার্সন ছিল ইউক্রেনের লোককথায়। এইটার নাম ছিল সম্ভবত "হাভ্রোচেশকা" দেঁতো হাসি ওয়েস্টার্ন নায়কদের মধ্যে এলান ওসমানকে আমার তেমন ভাল্লাগতো না। রওশন জামিলের ওয়েস্টার্ণ গুলো উত্তম পুরুষে লেখা হতো বলে কেন যেন ভাল লাগে নাই। প্রিয় ছিল কাজী মাহবুব হোসেনের ওয়েস্টার্ণ।

আর হুম্যানের বইয়ের কথা লেখস নাই ক্যান খাইছে

মরুদ্যান এর ছবি

ওসমান দেরকে আমারো তেমন ভাল লাগেনাই। রওশন জামিলের কাহিনী গুলা তেমন জমজমাট ছিলনা। আমার ভাল লাগত কাজী মাহবুব হোসেন, কাজী আনোয়ার হোসেন আর শওকত হোসেনের লেখা।

ছোট বেলায় হু‌ম্যান খুব কম পড়সি খাইছে

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

শিশিরকণা এর ছবি

রক বেনন আসার আগেই কি ওয়েস্টার্ন পরা ছেড়ে দিয়েছ নাকি? সেবা ছাড়াও আরও কিছু প্রকাশনী থেকেও ওয়েস্টার্ন বের হতো। নীলক্ষেত থেকে খুজে পেয়েছিলাম, তবে অত জাতের না।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

মরুদ্যান এর ছবি

রক বেনন পড়েছি, কিন্তু সুপার হিরো লিস্টে উঠতে পারেনাই দেঁতো হাসি

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

অরফিয়াস এর ছবি

বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা, মনে হলো নিজের ছেলেবেলা পড়ছি !! এত মিল কিভাবে হয় ? যেসব বই এর কথা বললেন এমনকি যে অনুষ্ঠানটার কথা বললেন সেটাও মিলে গেলো এবং কম বেশি প্রায় একই ভাবে !! যাই হোক, এইতো ৩/৪ দিন হলো বাড়িতে এসেছি। কালকেই পুরনো বইয়ের আলমিরাতে ওয়েস্টার্ন এর একটা ভলিউম আর তিন গোয়েন্দার সব ভলিউম দেখলাম, মাঝে মাঝে মনে হয় পুরনো দিনগুলো হাত দিলেই ছোঁয়া যাবে।

----------------------------------------------------------------------------------------------

"একদিন ভোর হবেই"

মরুদ্যান এর ছবি

বিশ্বাস করলাম। এটাও বুঝতে পারলাম আপনার বইবেলাও অসাম ছিল! খাইছে

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

ধুসর জলছবি এর ছবি

স্মৃতিকথা তাও আবার বই নিয়ে, চমৎকার লাগল। আমারও বই ছিল প্রথম বন্ধু,আর পাঠ্যবই প্রথম শত্রু। রূপকথা দিয়েই বই পড়া শুরু।পছন্দের বইয়ের তালিকার অনেক কিছুই মিলে গেল। ' দ্যা ক্রিস্টাল মেইজ' খুবই পছন্দের একটা অনুষ্ঠান ছিল ছোটবেলায় । চলুক

মরুদ্যান এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

Guest_Writer নীলকমলিনী এর ছবি

আমার বই পড়া শুরু বড়দের বই দিয়ে। সরকারী চাকুরে বাবা নানান জায়গায় বদলি হতেন, আর মা প্রথমেই সে জায়গার লাইব্রেরীর সদস্য হয়ে বই আনাতেন। আমার ছোট বেলা থেকেই বই পড়ার নেশা (এখনও একই রকম আছে, আমি এখনো সবসময়য়ই পড়ি)। ফলে মার জন্য আনা বই গুলো পড়ে নিতাম। মনে আছে ফাইভ নাকি সিক্স এ বলাকার মন পড়েছিলাম। সেসময় শঙ্কর, আশুতোষ, নীহাররঞ্জন রায়, বনহুর, আশাপূর্ণা দেবী, বিমল মিত্র, যাযাবর, সমরেশ বসু সব পড়ে ফেলেছি। কিছু বুঝছি, কিছু বুঝিনি। এইট নাইন থেকেই শুরু হয় বুদ্ধদেব বসু, শওকত উসমান, হুমায়ুন আহমে্‌দ শওকত আলী, সুনীল, ভাল যেকোনো লেখকের বই। হুমায়ুন আহমেদকে বেশিদিন ভাল লাগেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় নুই মার্কেটের একটি বইয়ের দোকানে গিয়ে আমি আর এক বান্ধবী বই পড়ে আসতাম । মালিক ছিল তরুন একটি ছেলে, আমাদের কিছুই বলত না।
তবে দশ বছর বয়েসে আরব্য রজনী টা একটু বেশী ছিল, এখন মনে হয় সেটা। বিশেষ করে আঁকা ছবিগুলো।

আপনার লেখাটি পড়ে নিজের ছোট বেলার বই পড়ার কথা মনে হয়ে গেল। সুন্দর সময়টি মনে করিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।

মরুদ্যান এর ছবি

আমি এগুলোতে হাত দিয়েছি একটু বড় হয়ে হাসি

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

তিথীডোর এর ছবি

এখন পর্যন্ত সেরা লেখা। চলুক
নস্টালজিকদের ভালু পাই। হাসি

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

মরুদ্যান এর ছবি

হাসি আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

ম্যাক্স ইথার এর ছবি

আহা। মুগ্ধ হয়ে পড়লাম। মরূদ্যান আমাকেও নস্টালজিয়ায় ফেলে দিলেন । সেবার বই কেনার জন্য প্রতিমাসে আমার বাজেট থাকতো আলাদা। আলাদা বলতে বাজার থেকে চুরি করা টাকা আর কোচিং বাবদ পাওয়া টাকা। নেহাত কম হতোনা। সেকালে প্রতিমাসে প্রায় হাজার খানেক। বাংলাবাজারে মাসে দুতিনবার ঢুঁ না মারলে মনটা আকু পাকু করতো। রিকশা ভর্তি করে বই আনতাম। সেবা’র একটা বই এর দাম তখন বড়জোর ২০/২৫ টাকা ছিল। আর কিনতাম আনন্দ প্রকাশনীর বই, বাধাই ছিলো চমৎকার। ৩৮ বাংলাবাজারের ভেতরের দিকে একটু এগোলে দোতালাতে তখন ভারতীয়ও প্রকাশনীগুলোর বই পাওয়া যেত । আমি সুনীলের বইয়ের অসম্ভব ভক্ত ছিলাম। বিশেষকরে নীললোহিতের। মুগ্ধ হয়ে পড়তাম। সাথে শীর্ষেন্দু, সমরেশ... আহা ...। মনে আছে শীর্ষেন্দু’র (নাকি শিবরাম ) চৌরঙ্গী বইটা পড়ে এতই মোহিত হয়েছিলাম যে ৯৬ তে যখন প্রথম কলকাতা যাই খুজে খুজে এসপ্ল্যানেডে চৌরঙ্গী হোটেলে উঠেছিলাম ...হা...হা...হা...হা । আমাদের বাসার বারিউলির ছত মেয়েটিও বেশ বই পড়ুয়া ছিল । তার কাছেই আমার নন্টে ফন্টে, হাঁদা ভোঁদা’র হাতে খড়ি । আপনার লেখা পড়ে আবার সেই কার্টুনগুলো যেন চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে উঠছে । হয়তো আর কোনদিন মনেই পড়তোনা চরিত্রগুলার কথা । তিনগোয়েন্দার ভক্ত ছিলাম । আমার বাবার মামার বাসায় বাবা প্রায়ই যেতেন, সাথে আমি। একটা রিডিং রুম মতো ছিল । মস্ত দুইটা আলমারি । একটাতে শুধু সেবার বই । মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকতাম আর ভাবতাম একদিন আমার এরকম একটা আলমারি হবে । কিশোর পত্রিকার নিয়মিত গ্রাহক ছিলাম । সাথে রহস্য পত্রিকারও। পরের দিকে যায়যায়দিনের । মনে আছে বাংলাবাজারে পুরনো ম্যাগাজিনের দোকান থেকে কতো ম্যাগাজিন কিনেছি । নিউমার্কেটের সামনে দুইটা ম্যাগাজিনের দোকান আছে... একসময় এদের হিংসা হতো । ভাবতাম আহা ... আমার যদি এরকম একটা দোকান থাকতো তাহলে রথ দেখা কলা বেচা দুইটাই হতো ।
এখন বেশিরভাগ বই পড়া হয় ইবুক আকারে... ইবুক রিডারে । বেশিরভাগই ইংরেজি । একটা ছোট শেলফ যদিও আছে । তবু ... ইবুক রিডারই ভালো লাগে । অনেক ধন্যবাদ এত চমৎকার একটা লেখার জন্য ।

মরুদ্যান এর ছবি

আপনাকেও ধন্যবাদ!

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আহা, কত পুরাতন স্মৃতি মনে করিয়ে দিলেন। সেই সব দিন, সে কি আর আসবে ফিরে!
লেখা ভাল হয়েছে।

মরুদ্যান এর ছবি

পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়.... হাসি

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

বষাস্নাত এর ছবি

আমার ছোটবেলার পড়া বই এর তালিকার সাথে অনেকটাই মিলে গেল।ইস্ কি এক নেশার মধ্যে বইগুলো পড়তাম।এখনও পড়ার কিছু পেলে না পড়া পর্যন্ত শান্তি হয় না।আর কি নাম মনে করিয়ে দিলেন নুলিয়াছড়ির সোনার পাহাড় কতবার যে বইটা পড়েছি ক্লাস ফাইভ এ থাকতে তার হদিস নাই।পরে এক ফুফাতো বোন পড়ার জন্য নিয়ে বইটা হারিয়ে ফেলে।অনেক খুজেও আর পাইনি।উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পরে চাচীর বাসায় বেড়াতে গিয়ে বইটা দেখতে পাই আবার ঝাপিয়ে পরে বইটা পড়া কিন্তু আগের মত আর অনুভুতি হয়না তাহলে কি সত্যিই বড় হয়ে গেলাম?অনেক চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম।এখন মনে পড়লেই হাসি।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

একটা গল্প ছিল না? 'পাঠকের মৃত্যু'? পাঠক, দর্শক, শ্রোতা সবারই একসময় মৃত্যু ঘটে, বা নতুন পাঠক, দর্শক বা শ্রোতার জন্ম নেয়। ওই যে মানুষ মরে গেলে পঁচে যায় আর বেচে থাকলে বদলায়।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

মরুদ্যান এর ছবি

কার বই এটা?? পড়িনি মনে হচ্ছে।

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

এটা বই না, একটা ছোট গল্প, আমাদের কোন এক ক্লাসের বাংলা টেক্সট বইয়ে ছিল। কার লেখা ঠিক মনে পড়ছে না। কাহিনীটা এককথায় এরকমঃ

একদিন রেলস্টেশানে ট্রেন দু-ঘন্টা দেরিতে আসবে। ওইসময় একটা বই হাতে পান লেখক। গোগ্রাসে গিলতে শুরু করেন বইটা। কিন্তু শেষে গিয়ে দেখেন বইটার শেষটার বেশ বড় অংশটা নেই। পাতা কেউ কেটে নিয়েছে। এমনকি বইটার বোধহয় নামধামও ঠিকমত জানতে পারেননি, মলাট ছিল না বা এরকম কিছু।

এরপর প্রায় দশ বছর পর, কোন এক বাসায় গিয়ে বইটা পেয়ে যান লেখক। ওই আগ্রহ কিন্তু তখনও আছে। সব কিছু বাদ দিয়ে বসে যান ওই বই নিয়ে। কিন্তু মনে হতে থাকে কিছু একটা মিলছে না, মিলছে না। এটাই কি সেই বই? নিশ্চিত হওয়া গেল, হ্যাঁ সেই বইই। কিন্তু সেই আগের ভালোলাগার কিছুমাত্র অবশিষ্ট নেই।

লেখকের উপলব্ধি- 'দশ বছর আগের সেই পাঠক আর নেই, পাঠকের মৃত্যু হয়েছে'

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

মরুদ্যান এর ছবি

হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পড়েছে। হাসি

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

সত্যপীর এর ছবি

পাঠকের মৃত্যু গল্পটি বনফুলের।

..................................................................
#Banshibir.

মরুদ্যান এর ছবি

ঠিক বলেছেন হাসি

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

 মেঘলা মানুষ এর ছবি

পাঠকের মৃত্যুর ঘটনা সংক্ষেপ:

একলোক একটা বই অর্ধেক পড়ে বাকিটা পড়তে পারেনি। অনেক বছর পর অনেক কষ্ট করে ওই বইটাই যোগাড় করে পড়তে বসতে গিয়ে সে টের পায় একদম ভাল লাগছে না ("এরকম অখাদ্যও মানুষ লেখে নাকি?")। শেষমেষ, বাধ্য হয়ে বইটা ছুঁড়ে ফেলে দেয় সে। আগের পাঠকের মৃত‌্যু ঘটেছে, কারণ সে আর আগের মত নেই।

মরুদ্যান এর ছবি

থ্যাংকু মিয়া তোমারে!

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

মরুদ্যান এর ছবি

আমার বই যারা হারিয়ে ফেলেছে বা নিয়ে নষ্ট করেছে তাদের উপর আল্লাহর গযব পড়বে! রেগে টং

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

শিশিরকণা এর ছবি

আমার বই যারা নিয়ে ফেরত দেয়নি তাদের একখান লিখিত তালিকা সযতনে রেখে দিয়েছি, হাশরের ময়দানে যথা সময়ে পেশ করা হবে।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

মরুদ্যান এর ছবি

আবার জিগায়! কিন্তু যারা আমার ফুটফুটে ঝকমকে বই ছিঁড়ে খুঁড়ে ফেরত দিসে তাদের দুনিয়াতেই শাস্তি দিতে মনে চায়!! রেগে টং

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

কৌস্তুভ এর ছবি

আরিব্বাপ, লম্বা লেখা! তবে বেশ হয়েছে। দেঁতো হাসি

মরুদ্যান এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- হাসি

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

বহুতদিন বই পড়া হয় না। পড়ার অভ্যাসটা ছুটেই গেছে বলতে গেলে। ই-বুক পড়ে কেমন যেন শান্তি পাই না।

আপনে তো বস পুরাই ডেলিভারি মোডে আছেন। প্রতিদিন দেখি নতুন নতুন লেখা। তা এখন খাচ্ছেন কী কন দেহি?

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

মরুদ্যান এর ছবি

হাহাহা যা খাইলে ডায়রিয়া হয়!! হো হো হো

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

জোলাপ?

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

মরুদ্যান এর ছবি

খায়া দেখতারো, কিন্তু থিসিস শেষ কইরা খাইও খাইছে

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

থিসিস শেষ করতে না করতেই আজ্রাইলের বুকিং দিয়া থুইছি। সেপ্ট থিকা পিচডি স্টার্ট দিতাছি তাও আবার চাইনীজ পীরের মুরিদ হইয়া। তার লগে কয়েকটা মেইল চালাচালি কইরাই বুঝতে পারছি, সে আল্লাহর রহমতে আজ্রাইলের কাম ভালই চালাইতে পারবে। সো জোলাপ খাওনের টাইম নাই ভাই মন খারাপ

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

মরুদ্যান এর ছবি

মরসো! খাইছে
আমার প্রাণের বন্ধু চৈনিক পীরের দৌড়ানি দৈনিক খাইয়া দেড় বছর পর তাঁর কাছ থিকা পলায়ন কইরা অন্য পীর ধইরা বাঁচসে শয়তানী হাসি

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

ওঁয়া ওঁয়া

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

ক্রেসিডা এর ছবি

এরজন্যই আমি কাউরে বই দেই না। এই একটা জিনিষ কখনো ফেরৎ দেয়া হয় নি, পাওয়া ও যায় না।

দুর্দান্ত লিখেছেন।

__________________________
বুক পকেটে খুচরো পয়সার মতো কিছু গোলাপের পাঁপড়ি;

মরুদ্যান এর ছবি

ফেরৎ দেননাই?? তাইলে তো আপনিও পাপীর দলে খাইছে

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

শিশিরকণা এর ছবি

ক্রিস্টাল মেজ আমাদের দুই ভাই-বোনের হেব্বি ফেভারিট ছিল। দেখা তো বটেই, আইডিয়া নকল করে আমরা খেলা গুলাও তৈরি করতাম, যেমন গুলতি মেরে নিশানা কাত করে ফেলতে পারলে একটা বড় সাইজের পুতি ( ক্রিস্টালের প্রক্সি) গড়িয়ে নামবে, বা ওয়াটার গান দিয়ে পাত্র ভরতে পারলে পুতিটা ভেসে পাশের পাত্রে পড়বে এইরকম, কাগজ, শোলা হাতের আশে পাশের জিনিস আর কল্পনা দিয়ে বানানো। ওহ! সূত্র খুঁজে খুঁজে রহস্য সমাধান করে ক্রিস্টাল বের করাটা তো মাস্ট। হাসি

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

মরুদ্যান এর ছবি

হ ঐ আমলে এমন সুন্দর আধুনিক গেম শো আর ছিল বলে মনে পড়েনা। কিন্তু টাক লোকটা প্রাণ ছিল অনুষ্ঠানের। পরে যখন ঐ লোকটার বদলে অন্য আরেকজন আসল দেখার আগ্রহই পাইনি। বলা যায় 'দর্শকের মৃত্যু' হয়েছে। দেঁতো হাসি

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

রংধনুর কথা এর ছবি

নিজের ছোট বেলার কথা মনে পরে গেল।।।। হাততালি

মরুদ্যান এর ছবি

আমদের সবার ছোটবেলাটাই মনে হয় এক রকমের ছিল, অন্তত এখানে যারা বলেছেন তাদের।

খুব খারাপ লাগে যখন দেখি বিকালে বরফ পানি, ফুল টোকা, মাংস চোর খেলা বাদ দিয়ে অথবা একটা গল্পের বই না পড়ে পিচ্চি পিচ্চি পোলাপান মডার্ন ওয়ারফেয়ার অথবা কিলজোন নামক গেমে চোখমুখ শক্ত করে বিপক্ষ কে গুলি করে বা ছুরি মেরে কিমা বানিয়ে দিচ্ছে। কাউকে মারার পর সে কি উল্লাস!!

এরাই ভবিষ্যতের লাইভ ডেথম্যাচের একনিষ্ঠ দর্শক বা উদ্যোক্তা হবেনা তা কে বলতে পারে??

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

অতিথি লেখক এর ছবি

একবার আমার দু ভাগ্নেকে দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম- কী যেন একটা গেম খেলছিল । ওদের দিকে তাকিয়ে দেখি একেকজন দরদর করে ঘামছে, চোখ মুখ লাল হয়ে যাচ্ছে- আর শরীরের কী ভঙ্গি- চোখেমুখে উত্তাপ, মাথার চুল এলোমেলো, হাত-পা ছোঁড়াছুড়ি করছিল এমনভাবে মনে হচ্ছিলো ওরা যেন সত্যিই কোন যুদ্ধের ময়দানে ।

একজন হারার পর সে কী অভিব্যক্তি চোখেমুখে- আর যে বিজয়ী... ওহ...

কড়িকাঠুরে

রংধনুর কথা এর ছবি

The Crystal Maze ছোট বেলায় খুব পছন্দের প্রোগ্রাম ছিল।।।

মরুদ্যান এর ছবি

আমার এখনো ভাল লাগে। ইউটিউবে আছে কিন্তু। দেঁতো হাসি

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

সত্যপীর এর ছবি

ইয়াল্লা কন কি? ইউটিউবে ক্রিস্টাল মেইজ আসে? বাসায় গিয়াই দিতেসি খোঁজ দ্য সার্চ দেঁতো হাসি

..................................................................
#Banshibir.

মরুদ্যান এর ছবি

দেঁতো হাসি

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

শিশিরকণা এর ছবি

আগে বলবা না?? ম্যাঁও

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

রংধনুর কথা এর ছবি

ইউটিউবে দেখলাম।।।আপনার সাথে একমত।এখনকার পোলাপান খেলা বলতে কিছুই বোঝেনা অথচ আগের সেই খেলাগুলোকে এখনো চরম মিস করি।

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

দেশে আসো! জলদি! দেঁতো হাসি

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

মরুদ্যান এর ছবি

দেঁতো হাসি

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

নীড় সন্ধানী এর ছবি

আহ হা!! কি মনে করায়ে দিলেন!!!!

সেই ওয়েস্টার্ন সাবাডিয়ার বইগুলো খুঁজতে বেরোবো আজকে। আমি পুরাই সাবাডিয়া ফ্যান ছিলাম দেঁতো হাসি

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

মরুদ্যান এর ছবি

পেলে জানায়েন দেঁতো হাসি

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

মর্ম এর ছবি

লেখাটা ভাল লেগেছিল, সুযোগ যখন হয়েছে- ভাল লাগাটা জানিয়ে গেলাম এ যাত্রায়!

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

মরুদ্যান এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

প্রদীপ্তময় সাহা এর ছবি

পড়েছিলাম আগেই, মন্তব্য করাটা বাকি ছিল।
অনেক পুরোন বই এর কথা মনে করিয়ে দিলেন।
পাগলা দাশু, বত্রিশ পুতুলের গল্প, সিন্দবাদের জাহাজ, ঠাকুমার ঝুলি।
সত্যি একদম ছোটবেলার এই বইগুলোর কথা যখন মনে আসে তখন কি সুন্দর ভাবে তাদের প্রচ্ছদগুলোও ভেসে ওঠে মনে।

মরুদ্যান এর ছবি

আর ১০ দিনও নাই দেঁতো হাসি আবার দেখুম সব প্রচ্ছদ!!

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

অতিথি লেখক এর ছবি

এতো মিল হ‌য় কি করে? আমারও বেড়ে উঠা চট্টগ্রাম-এ।

মরুদ্যান এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

অতিথি লেখক এর ছবি

এতো মিল হ‌য় কি করে? আমারও বেড়ে উঠা চট্টগ্রাম-এ। স্কুলে যাওয়ার জন‌্য ২ টাকা পেতাম বাস ভাড়া হিসাবে। হেটে স্কুলে আসা যাওয়া করেছি টাকা জমানোর জন্য। সেই টাকা সারা মাস ধরে জমিেয় অপেক্ষা করতাম কখন তিন গোেয়ন্দা বের হবে। নতুন বইয়ের খবর পেলেই ছুটে যেতাম সেন্ট্রাল প্লাজার বুক ল্যান্ডে। এছাড়াও সারা চট্টগ্রাম শহর টো টো করে ঘুরতাম পুরাতন বইয়ের নেশায়।

ছিলো অমর বই ঘর। পুরাতন বইয়ের দোকান। ঘন্টার পর ঘন্টা পার করে দিতে পারতাম বই দেখে। অনেক সময়-ই দেখা যেত বই পছন্দ হ‌য়েছে কিন্তু টাকা নাই। তখন বাধ্য হয়ে কিছু বই ফেরত দিেত হত। আমার জন‌্য সেটা ছিলো Sophie's Choice। আমার এক বন্ধু ছিলো আমার Partner in crime। দুই জনের মধে্য রীিতমত প্রতিযোগিতা চলত কে কার আগে রেয়ার বই খুজে বের করবে।

একবার এক মজার কান্ড হয়েছিল। তখন আমি এবং আমার সেই বন্ধু তখন জুল ভানর্ -এর চরম ভক্ত। সেবা থেকে প্রকাশিত জুল ভানর্ -এর বই পরে ফেলেছি শুধু "নোঙর ছেড়া" পাইনি। ঘাট ফরহাদবেগ-এর এক টঙ বইয়ের দোকানে দুইজনে বই খুজতে গিয়ে আমি আবিষ্কার করলাম "নোঙর ছেড়া"। "আহা! আমি পাইলাম, ইহাকে পাইলাম" - এই ছিল আমার অবস্থা। আর আমার সেই বন্ধুর চেহারা! আজো মনে পড়ে। মনে হচ্ছিল পারলে নিজের মাথার চুল সব ছিড়ে ফেলে। যাই হোক, আমাদের চুক্তি অনুযায়ী আমি আগে পড়ে তাকে দিলাম পড়তে। সে ফেরত ও দিল। তার কিছু দিন পর দেখি আমার "নোঙর ছেড়া" নাই। গেল কই, গেল কই?!! সারা বাড়ী তন্ন তন্ন করেও খুজে পেলাম না। মনে হল আমার কাছ থেকে কেউ আমার গুপ্তধন চুরি করে নিয়েছে। এক সময় হাল ছেড়ে দিলাম। এর অনেকদিন পর আমার সেই বন্ধুর বাড়ী বদল করার সময় সাহায্য করতে গিয়ে তার স্টীল আলমারী-র গোপন কুঠুরীতে আবিষ্কার করলাম "নোঙর ছেড়া"। কিন্তু বন্ধুতার খাতিের কিছু বললাম না। তাছাড়া দেখলাম বই টা সে বেশ যতন করে রেখেছিলো।

সীমান্তে সংঘাত ঠিক আছে। আমার সবচেয়ে ভাল লেগেছিলো "নিকোলাস রোজারিওর ছেলেরা"

মরুদ্যান এর ছবি

হাসি

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

এক লহমা এর ছবি

খুব ভাল লাগল। আমি এ-পার বাংলার লোক, তাই বই-এর তালিকা কিঞ্চিৎ অন্যরকম ছিল, কিন্তু আবেগের অভিজ্ঞতা এক-ই রকম।

মরুদ্যান এর ছবি

হাসি

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হাততালি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

মরুদ্যান এর ছবি

লইজ্জা লাগে

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।