এক
"ক্রিসমাসে তোমার প্ল্যান কি?" দাঁড়িগোঁফ ভরা মুখে আনন্দের হাসি নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন কম্পিউটার সায়েন্সের ডাঁকাবুকো প্রফেসর ডক্টর অ্যান্ডারসন।
"কোনো প্ল্যান নাই।"
"প্ল্যান নাই মানে? বলো কী! আমি তো টরন্টো যাচ্ছি। বউ-বাচ্চার সাথে ক্রিসমাস করবো।" চোখ টিপে বলেন ডক্টর অ্যান্ডি। উনি যে ক্রিসমাসে টরন্টো যাচ্ছেন তা আগে থেকেই জানা আছে শাহেদের। এর আগে উনি নিজেই কমপক্ষে চার-পাঁচবার সে কথা জানিয়েছেন।
"এক কাজ করো। একেবারে দেশে চলে যাও। না-কি? বাবা-মার সাথে ক্রিসমাস করো। দু'হপ্তার ছুটি তো পাচ্ছই? গ্লাস ভর্তি এগনগ আর ওভেন থেকে বের করা টার্কির ঘ্রাণ না পেলে আমার তো মনেই হয় না ক্রিসমাস হচ্ছে!"
ডক্টর অ্যান্ডারসন ভালো মতোই জানেন শাহেদ নাস্তিক। আর ওর পুরো নাম দেখে ওর জন্ম যে একটি মুসলিম পরিবারে হয়েছে তা অনুমান করাও কষ্টসাধ্য নয়। কিন্তু শাহেদ লক্ষ্য করে দেখেছে ক্রিসমাস কানাডিয়ানদের জীবনযাত্রার সাথে এমন অবিচ্ছেদ্য ভাবে জুড়ে গেছে যে এক ইহুদি ছাড়া আর কেউ ক্রিসমাস পালন করছে না এটা তারা ঠিক তাদের মাথায় নিতে পারে না।
শাহেদ খুব নির্লিপ্ত গলায় বলে, "আমার বাবা-মা বেঁচে নেই। পাঁচ বছর আগে তাঁরা মারা গেছেন।"
শাহেদের কথায় অ্যান্ডারসনের হাসি দপ করে নিভে যায়। তিনি বলেন, "খুব দুঃখিত শাহেদ! আমার কোনো ধারণা ছিলো না। যদি কিছু মনে না করো জানতে পারি কি... কিভাবে?"
"একটি দুর্ঘটনায়।"
প্রফেসর আর কথা বাড়ান না। শাহেদের পড়ার জন্য এক তাড়া পেপার প্রিন্ট করে রেখেছিলেন। শাহেদ সেগুলো ব্যাগে ঢুকিয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসে।
গত পাঁচ বছরে এই প্রশ্নটি ওকে হাজারবার শুনতে হয়েছে। কিভাবে ওর বাবা-মার মৃত্যু হলো? মৃত্যুর কারণ এতই কুরুচিপূর্ণ যে শাহেদ চেষ্টা করেছে প্রতিবারই প্রশ্নটি এড়িয়ে যেতে। পশ্চিমারা সাধারণত "দুর্ঘটনা" শোনার পর আর কথা বাড়ায় না। বুঝে নেয় প্রসঙ্গটি শাহেদের পছন্দ নয়। কিন্তু সমস্যা হয়ে যায় যখন বাঙালি, বিশেষত বয়স্ক কোনো বাঙালির সাথে কথা হয়। তারা প্রশ্ন করতেই থাকেন, "কিসের দুর্ঘটনা? ক্যামনে হইলো? কবে হইলো? ক্যানো?" প্রথম দিকে বাধ্য হয়ে একটি-দু'টি করে প্রশ্নের জবাব দিতো ও। এখন সরাসরি বলতে শিখেছে, "আমি এ বিষয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না।"
প্রফেসরের রুম থেকে বের হয়ে দো'টানায় পড়ে যায় শাহেদ। মাস্টার্সের দ্বিতীয়বর্ষে ওর কোনো ক্লাস নেই। আজ ল্যাবেও কোনো কাজ জমে নেই। স্কুলে আসার প্রধান কারণ ছিলো অ্যান্ডির সাথে দেখা করা। বাবা-মা'র প্রসঙ্গ চলে আসায় সে সাক্ষাতপর্ব নিমিষেই শেষ হয়ে গেলো। এখন এতো সকাল সকাল আর বাসায় ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে না।
একটি কাজ করা যায়। টিম হর্টনস থেকে এক কাপ হট-চকোলেট নিয়ে অফিসে গিয়ে বসা যায়। "গবেষণা সহায়ক" হিসেবে ওকে স্কুল থেকে চমৎকার অফিস দেয়া হয়েছে। একজন মাস্টার্স ছাত্রের প্রেক্ষিতে রুমটি অসাধারণই বলতে হবে। আকারে ছোট হলেও রুমে কাজ করার টেবিল, একটি হাই কনফিগারেশন ডেস্কটপ কম্পিউটার, বড় বইয়ের শেলফ, দেয়ালে কয়েকটি প্রোজেক্ট পোস্টার, সস্তা কাউচ, টবে দু'টো বাহারি গাছ... সবই আছে।
নিজের অফিসে ঢুকে মেশিন চালু করে হট-চকোলেটে চুমুক দেয় শাহেদ। লিনাক্স বুট হচ্ছে। বুটস্ক্রিনের দ্রুত পরিবর্তন হওয়া, আর সেখানে ভেসে ওঠা সবুজ "OK" মেসেজ দেখতে দেখতে হঠাৎ ওর মনে প্রশ্ন জাগে এই জীবনের মানে কি? কার জন্য এই বেঁচে থাকা? কিসের জন্য রাতদিন এই কষ্ট করা? ওর অর্থহীন জীবনের ডায়রিতে প্রতিদিন একটি নতুন সকাল জুড়ে কার কি লাভ হচ্ছে? ওর জীবনে তো কোনো আনন্দ নেই! ধর্মে বিশ্বাস নেই বলে পাপ-পূর্ণ্যের হিসাব-নিকাশ আর বেহেশত-দোজখের ভয়-আকাঙ্খাও নেই। ধার্মিকদের এই একটি কারণেই মাঝে মাঝে খুব হিংসা হয় ওর। ওদের দৃঢ় বিশ্বাস এই জীবনের একটি বিশেষ অর্থ আছে, লক্ষ্য আছে। আমাদের জীবন হঠাৎ ঘটে যাওয়া কোনো দুর্ঘনার ফল নয়, বরং কোনো বড় পরিকল্পনার অংশ। এ চিন্তাই তো বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ঠ!
কিন্তু যারা শাহেদের মতো নাস্তিক, তাদের বাঁচার তাগিদ আসে অন্য কোথাও থেকে। হতে পারে ভালোবাসার কেউ। একটি ফুল-পাখি। কিংবা সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক কিছু। অথবা অনেক নাস্তিক যেমন বলেন, "ওসব কিচ্ছু নয়। বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে কারণ বেঁচে থাকার প্রতি মূহূর্ত আমার ভালো লাগে!" একটি দীর্ঘশ্বাস নেমে আসে শাহেদের অবসন্ন দেহ থেকে। হায় রে! সেও যদি এমন কথা বলতে পারতো!
বাট্রার্ন্ড রাসেল এর সাথে গলা মিলিয়ে হুমায়ুন আজাদ স্যার বলেন, "এ জীবনটা অন্ধকারের মাঝে একটা ক্ষণস্থায়ী আলোর ঝিলিক মাত্র, যে ঝিলিকের আগেও অন্ধকার, পরেও অন্ধকার।" শাহেদ জানে সেই আলোর ঝিলিক নিজের ইচ্ছেতে শেষ করে দেবার সাধ্য তার আছে। তবে কেন সে সেই ক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার করবে না?
কম্পিউটার চালু হবার আগেই শাহেদ সির্দ্ধান্ত নিয়ে ফেলে ও আত্মহত্যা করবে!
দুই
দুম করে সিদ্ধান্ত নেবার মতো মানুষ শাহেদ নয়। আত্মহত্যার চিন্তা হুট করে এলেও সারাটি দিন শাহেদ সেই সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়ে চিন্তা করে। ওর মনে হয় আসলেই ওর অহেতুক জীবন বয়ে বেড়ানোর কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। বিকেলে টিভির সামনে কোলের উপর নিজের ল্যাপটপ নিয়ে বসে শাহেদ। সিদ্ধান্ত যখন নেয়া হয়েছে কাজটি সুচারু হতে হবে।
প্রথমে দেখতে হবে ওর আত্মহত্যায় কারো কোনো ক্ষতি হচ্ছে কি-না? কারো ক্ষতি করে আত্মহত্যা করা স্বার্থপরের মতো কাজ হয়ে যাবে। যদি কারো ক্ষতি না হয় তাহলে দেখতে হবে "কখন" এবং "কিভাবে" আত্মহত্যা করা যায়। ওর আত্মহত্যায় কেউ কষ্ট পাবে নাকি সেটিও বিবেচনায় রাখতে হবে।
দেশে ওর ছোটমামা, ছোটখালা আর সৎ বড়চাচা ছাড়া আর কেউ নেই। ওদের কারোরই ওর মৃত্যুতে কাতর হয়ে ওঠার সম্ভাবনা নেই। দেশে ফেলে আসা বন্ধু-বান্ধবরা জানলে নির্ঘাত কষ্ট পাবে। কিন্তু ওরা জানবেই বা কিভাবে? গত পাঁচ বছর ধরে ও আস্তে আস্তে দেশের সবার সাথেই সম্পর্ক ছেদ করেছে। আর জানলেও এতদিন পরে ওর মৃত্যুসংবাদ ওদের মনে তেমন গাঢ় ছাপ ফেলবে কি? মনে তো হয় না!
এবার দেখা যাক কানাডাতে কি অবস্থা। এখানে সহপাঠি, সহকর্মী আর শিক্ষকেরা ওর মৃত্যুসংবাদে চমকে যাবে সেই বিষয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু ও সবার সাথেই একটি দূরত্ব বজায় রাখে। তাই সেই চমকের কষ্টে রূপান্তরিত হবার সম্ভাবনা খুবই কম।
তবে ক্ষতির প্রশ্নে একটু সমস্যা হয়ে যাচ্ছে। ওর মৃত্যুতে সামান্য কিছু ক্ষতি হতে পারে। প্রথমত ধরা যাক অ্যান্ডির কথা। ওর সাথে গত এক বছর ধরে "প্যাটার্ন রেকগনিশন"-এ গবেষণা করছে শাহেদ। এখন হঠাৎ করেই সে "নাই" হয়ে গেলে বেচারা সমস্যায় পড়ে যাবে। এর একটি সহজ সমাধান অবশ্য মাথায় আসছে। ডিপার্টমেন্টে নতুন এক মেধাবী ছেলে এসেছে - ব্রায়ান। শাহেদের গবেষণায় খুব আগ্রহ। ওর আগ্রহ দেখে অ্যান্ডিও বলছে শাহেদের গ্রাজুয়েশন হয়ে গেলে ব্রায়ান ইচ্ছে করলে ওর গবেষণাটা চালিয়ে যেতে পারে। অতি উৎসাহী ব্রায়ানও তাই মাঝে মাঝেই ওর অফিসে এসে বসে থাকে। এটা ওটা প্রশ্ন করে গবেষণার অগ্রগতি বোঝার চেষ্টা করে। ছেলেকে একদিন দু'তিন ঘন্টা ব্রিফ দিলেই সে মোটামুটি ব্যাপারটি বুঝে নেবে। কথাটি ভেবে হাসিই চলে আসে শাহেদের। এক বছরের গবেষণা বোঝাতে সময় লাগবে মোটে দুই ঘন্টা!
যাক, তবুও তো এই সমস্যার একটা সমাধান হলো।
আরেক ক্ষতি হবে বাড়িওয়ালীর। যে বুড়ি ভদ্রমহিলা শাহেদকে বাসা ভাড়া দিয়েছেন তিনি মাসে সাতশো করে ডলার পান। সেই অর্থপ্রাপ্তি ক্রিসমাসের আগে আগে বিনা নোটিশে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আর আত্মহত্যা হওয়া বাসা ভাড়া দেয়াটাও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। কানাডার মত উন্নত দেশেও কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষের অভাব নেই।
বাসা ভাড়া নেয়ার রেওয়াজ অনুযায়ী অবশ্য ভদ্রমহিলাকে প্রথম আর শেষ মাসের ভাড়া অগ্রীম দেয়া আছে। আজ মাসের চৌদ্দ তারিখ। তার মানে ষোলো আর একত্রিশ দিন মিলিয়ে মোট সাতচল্লিশ দিন সময় পাচ্ছেন তিনি বাসা আবার ভাড়া দেবার জন্য। তবে এর মধ্যে থেকে বিশ দিন বাদ দেয়া যাক পুলিশী ঝামেলার জন্য। সেক্ষেত্রে বেচারীর আসলেই ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে! এক কাজ করে ব্যাপারটি কাটাকুটি করা যায়। শাহেদ যদি বুড়িকে দুই মাসের ভাড়া অগ্রীম দিয়ে দেয় তাহলে ভদ্রমহিলা প্রয়োজনের চেয়েও বেশি সময় পাচ্ছেন বাসা ভাড়া দেবার জন্য।
আর কিছু? একটু ভাবতেই শাহেদের মনে পড়ে ওর ক্রেডিটকার্ডগুলোতে বেশ ভালো রকমের দেনা পড়ে আছে। এই নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই অবশ্য। সামান্য ক'টা ডলারের জন্য চড়া সুদ নিয়ে যেই পরিমান অর্থ তারা এই পর্যন্ত কামিয়ে নিয়েছে তাই যথেষ্ঠ। সমস্যা হতো যদি খুব খুব-বড় রকমের দেনা থাকত। কিংবা কানাডাতে যদি ওর কোনো নিকট আত্মীয় থাকতো। তাহলে দেনাগুলো সব গিয়ে সেই আত্মীয়ের উপর পড়তো। তা না থাকায় নিয়মানুযায়ী ওর মৃত্যুর পর-পরই কানাডা ক্রেডিট ডিপার্মেন্ট ওর নেবার মত স্থাবর-আস্থাবর সম্পত্তি (যা বলতে গেলে প্রায় শূন্য) বাগিয়ে নিয়ে ওর ক্রেডিটফাইল চিরতরে বন্ধ করে দেবে।
এখন দুঃস্বপ্নের মত লাগে কিন্তু এই ক্রেডিটকার্ডগুলোই এক সময় ওর জীবন রক্ষা করেছে! বাবা-মার মৃত্যুসংবাদ পেয়ে দেশে ফিরে গিয়ে যা দেখলো শাহেদ তাতে ও দুই দিন শুধু বমি করেছে। ততদিনে বাবার ব্যাবসা-সম্পত্তি সব চলে গেছে ক্ষমতাধর সৎ চাচার হাতে। চাচা অবশ্য পিঠে কপট হাত রেখেছিলেন, "সব তো তুমারই! আমি কেবল তুমার হইয়া সামলাইতেছি। তুমি কানাডাতে চইলা যাও। বাপ-মা'র খুব শখ আছিল তুমি পিএইচডি করবা। তুমার বাপ যেমুন টাকা পাঠাইতো আমিও পাঠামু। তুমি লেখাপড়াটা শেষ কইরা আইসো!"
প্রতিবাদ-প্রতিশোধ নেবার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলো ও। আত্মীয়রা সবাই একজোট হয়ে গেলেন। বাবার তরতর করে সাফল্যের শিখরে ওঠা নিয়ে যে এত ঈর্ষা জমা ছিল সবার মনে তা ও কল্পনাও করতে পারেনি। অস্বাভাবিক মৃত্যুর কেসটিও পুলিশকে টাকা খাইয়ে কিভাবে যেনো গায়েব করে দিলেন চাচা। এত অসহায় আগে কখনো বোধ করেনি শাহেদ।
একদিন পার্কে একা বসে হাউমাউ করে কাঁদছে দেখে কাছে এসে বসে মাঝবয়সী এক বাদালওয়ালা। প্রগাঢ় মমতায় হাত রাখে গুমড়ে গুমড়ে ওঠা শাহেদের পিঠে। কি মনে করে যেনো অচেনা বাদামওয়ালাকে সব কথা বলে ফেলে ও। নির্বাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকেন বাদামওয়ালা। আস্তে করে বলে, "ভাইজান আপনি আবাত বিদিশ ফিরি যান। এহান থাকলি বাঁচতি পারতেন নো!"
সে উপদেশ বাধ্যছেলের মতো মেনে নেয় শাহেদ। দেশে থাকলে আসলেই ওর জীবনসংশয় হতো। আর ততোদিনে ওদের বাড়িও দখল হয়ে গেছে। আত্মীয়-স্বজনরা রোজই সেখানে বাটোয়ারা নিয়ে বৈঠক বসাচ্ছে। তাই এসব ছেড়ে-ছুঁড়ে কানাডাতে পালিয়ে এসে হাঁফ ছেড়ে বাঁচার ব্যাপারটিও ছিলো।
পরাজিত যোদ্ধার মতো বাবা-মার কবর জিয়ারতে যায় শাহেদ। সংকোচে মাথা নিচু করে বলে, "পারলাম না বাবা! আমি তোমার মত যুদ্ধ জিততে পারলাম না। তোমার কাপুরুষ ছেলেকে ক্ষমা করে দিও মা!"
কানাডায় ফিরে এলো শাহেদ। মাস ঘুরে নতুন বছর এলো। একটি টাকাও পাঠালেন না চাচা। টাকা পাঠাবে সেই অবাস্তব চিন্তা অবশ্য ওর মাথাতে ছিলোও না। প্রথমেই নিজের শখের গাড়িটি বিক্রি করে দিল ও। পরে একে একে বিক্রি করার মতো যা ছিলো সবই। সারা জীবনে অর্থকষ্ট কাকে বলে জানে নি। বুঝতে পারে শাহেদ প্রাচুর্যের মুখশে মুখ লুকিয়ে আসল পৃথিবীই ওর দেখা হয়নি।
সেই সময় একটি খন্ডকালীন চাকরি খুঁজতে খুঁজতে ক্রেডিটকার্ডের দেনা বাড়তে লাগলো। ভাগ্য সহায় ছিলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনের সাথে দেখা করার পরে লেখাপড়ার বেতন কমিয়ে অর্ধেক করে দিলেন তিনি। লাইব্রেরিতে একটা চাকরিও জুটিয়ে দিলেন। প্রচন্ড কৃতজ্ঞ শাহেদ ভদ্রলোকের উপর। তার সাহায্য না পেলে এতদূর কোনো ভাবেই আসা সম্ভব হতো না। লেখাপড়ায় আগে থেকেই ভালো ছিলো। সেই সাথে "কিছু করতে হবে" জিদ যোগ হওয়ায় প্রচন্ড ভালো ফলাফল হলো আন্ডারগ্র্যাজুয়েটে। বের হয়েই পেয়ে গেলো সরকারি গবেষণা ফান্ড। সেই সাথে চড়া ফান্ডিং সহ মাস্টার্সে অ্যাডমিশন। অর্থকষ্ট দূর হয়ে গেলো।
মনকে জোর করে বর্তমানে নিয়ে আসে শাহেদ। ল্যাপটপে নোটপ্যাড খুলে দ্রুত নোট নেয়:
আরেকটি ব্যাপার চট করে মাথায় আসলো ওর। পুলিশ আসবে ভালো কথা কিন্তু কতক্ষণ পর? সামনে ক্রিসমাস তাই এমনিতেই সবাই ছুটির আমেজে আছে। এছাড়া ও থাকে একা। কেউ নিয়মিত ফোন করে না যে ও ফোন না ধরলে দুঃশ্চিন্তা করবে। একবার সংবাদপত্রে পড়েছিল শাহেদ - মন্ট্রিয়লে এক বৃদ্ধা মহিলা নিজের বাসায় মরে পড়ে ছিলেন। কেউ জানতো না। ঘটনা ধরা পড়ে যখন তাঁর মরদেহ পঁচে গন্ধ ছড়াতে শুরু করে। এমন হলে তো সমস্যা! ওর মরদেহ পঁচে-গলে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে এমন বিতিকিচ্ছিরি ঘটনা মোটেই ঘটতে দেয়া যায় না।
আত্মহত্যার ঠিক আগেই জরুরি নাম্বারে ডায়াল করলে কেমন হয়? সেক্ষেত্রে একটু ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে। ওদের রেসপন্স টাইম এতো ভালো হয়তো দেখা যাবে ও মারা যাবার আগেই প্যারামেডিক এসে উপস্থিত! আর অসফল আত্মহত্যার মত ন্যাক্কারজনক আর কিছু হতে পারে না। পুলিশ ওর পরিচিত সব্বাইকে ওর অপ্রকৃতস্থ মানসিক অবস্থা নিয়ে সতর্ক করে দেবে। এরপর থেকে সবাই ওর দিকে এমন ভাবে তাকাবে যেন ও ভিনগ্রহের কোনো বানরবিশেষ! সেই সাথে যোগ হবে বাধ্যতামূলক প্রতিদিন তিন বার কাউন্সেলকে ফোন করে নিজের হাল-হকিকত বর্ণনা আর সপ্তাহে একদিন মুখোমুখি কাউন্সেলিং সেশন!
এই সমস্যারও একটি চমৎকার একটা সমাধান মাথায় চলে আসলো শাহেদের। অ্যানসারিং মেশিনে একটি মেসেজ রাখলেই হয়ে যাচ্ছে। মেসেজটি হবে এই রকমের, "এই মেসেজ শোনমাত্র পুলিশকে কল করে জানান আমি, শাহেদ রহমান, আত্মহত্যা করেছি। এটি কোনো স্থূল ঠাট্টা নয়!" ধরা যাক আত্মহত্যার সময় ঠিক হয়েছে দুপুর দু'টো, তাহলে নির্ভরযোগ্য কাউকে বিকাল চারটের দিকে ওকে ফোন করতে বলতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় অ্যান্ডিকে বললে। ও যে রকমের রিরিয়াস মানুষ ওর যদি সন্দেহও হয় এটি ঠাট্টা তবুও ও সাথে সাথেই পুলিশ ডাকবে শুধু নিশ্চিত হওয়ার জন্য। ল্যাপটপে নোট নিতে নিতে ভাবে শাহেদ আত্মহত্যার ব্যাপারটি প্রথমে যতো সহজ মনে হচ্ছিলো আসলে ততো সহজ নয়। একটি পরিস্কার আত্মহত্যার কাঠামো তৈরি করা যথেষ্ঠ ঝামেলার কাজ!
এবার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় - আত্মহত্যার পদ্ধতি! কাজটি বাসায় করা হবে বলে এমনিতেই অবশ্য হাতে বেশি উপায় নেই। ল্যাপটপে ইন্টারনেট ব্রাউজার খুলে গুগলে "ঘরের মধ্যে আত্মহত্যার পদ্ধতি" লিখে সার্চ দেয় শাহেদ। ফলাফল দেখে বিস্ময়ে চোখ কপালে ওঠে ওর। আঠারো লক্ষ নব্বুই হাজার ম্যাচ! মানুষের তো দেখা যাচ্ছে আত্মহত্যাতে ভালোই আগ্রহ! কয়েকটি সাইট ঘুরে দেখে ব্রাউজার বন্ধ করে শাহেদ। যা দেখার দেখা হয়ে গেছে। সবই পদ্ধতিই আগে থেকে জানা। কিছু কিছু সাইটে আবার সেসব জানা পদ্ধতিতেই জোর করে নাটকীয়তা আনা হয়েছে। অতো নাটক করতে গেলে আসল কাজই গুবলেট হয়ে যাবার সম্ভাবনা। এরচে' সনাতন পদ্ধতিগুলোই দেখা যাক:
মুচকি হেসে নোট নেয় শাহেদ, আত্মহত্যার পদ্ধতি - রক্তস্বল্পতা!
তিন
গাড়ি পার্ক করে সুপারস্টোরের দিকে হাঁটে শাহেদ। অনেক হিসাব করে আগামীকাল দুপুর দু'টোয় আত্মহত্যার দিনতারিখ ঠিক হয়েছে। গত কয়েকটি দিন খুব ব্যস্ত কেটেছে সব পরিকল্পনা মতো সাজাতে। কাজগুলো করতে যে এতো সময় লাগবে তা ও আগে বুঝতে পারেনি। যেমন ওর ধারনা ছিল ব্রায়ানকে গবেষণা দু'ঘণ্টাতেই বুঝিয়ে দেয়া যাবে। সেটি হয়নি। পাক্কা দু'দিন সময় লেগেছে!
বুড়িকে অগ্রিম ভাড়া দেয়া নিয়েও সমস্যা হয়েছে। উনি কিছুতেই অগ্রিম নিতে চান না। একসাথে বেশি টাকা হাতে আসলে নাকি তার সব বিংগো আর ক্যাসিনোতে উড়িয়ে দেবার অভ্যাস আছে! এটা-সেটা বলে, অনেক বুঝিয়ে, অবশেষে বুড়িকে রাজি করানো গেছে।
অ্যান্ডারসনকে আগামীকাল বিকাল পাঁচটায় বাসায় কল দিতে বলতে গিয়েও ফ্যাকড়া। অ্যান্ডি বলে মোবাইল থাকতে ও কেনো বাসার নাম্বারে কল করবে? এই প্রশ্নটি যে অ্যান্ডি করতে পারে তা আগে ওর মাথাতেই আসেনি! এদিকে সমস্যা হচ্ছে ওর মোবাইল-প্ল্যানে ভয়েসমেইল নেই। কাজেই পরিকল্পনা ঠিক রাখতে হলে বাসাতেই কল দিতে হবে। অ্যান্ডিকে শেষে কোনো এক রকমে বুঝ দেয়া গেছে।
আরেকটি দিন গেছে সব দেনা-পাওনা চুকাতে। বাসায় লাইব্রেরির বই ছিলো। ব্লকবাস্টারের ডিভিডি ছিলো। সেগুলো ফেরত দেয়া হয়েছে। ব্যাঙ্কে যতো টাকা ছিল তার কিছু রেখে বাকি সব চ্যারিটিতে ডোনেট করা হয়েছে। সুইসাইড নোটগুলোও সব তৈরি। ওর বাসায় সিডি, ডিভিডি, বই সহ আর যা যা কিছু আছে তার একটি পূর্ণ তালিকা বানাতে গেছে আরেকটি দিন। সেই লিস্টে ঠিক ঠিক করে লিখে রেখেছে ওর কোন জিনিসটি যাবে স্যালভেশন আর্মিতে, কোনটি রেডক্রসে, আর কোনটি স্কুলের লাইব্রেরিতে। ওর ইচ্ছে ওর মৃতদেহ কোনো মেডিকেল স্কুলে ডোনেট করা। সেটিও স্পষ্ট ভাবে লিস্টে লেখা আছে। বাসাও একটু সাফ-সুতরো করা হয়েছে। পুলিশের রিপোর্টে নিজের বাসস্থান সম্পর্কে কোন বাজে মন্তব্য চায় না শাহেদ!
আজ শেষ দিনে ও বের হয়েছে জীবনের শেষ কেনাকাটাগুলো সেরে ফেলতে। কিউবান রোমিও-জুলিয়েট সিগার লাগবে। কবে যেনো শুনেছিল একটি শলাকার দামই নাকি একশো ডলার! নতুন বক্সার কিনতে হবে। মৃতদেহ আবিষ্কার করার পরপরই পুলিশ অসংখ্য ছবি তোলে। উলঙ্গ অবস্থায় মৃত্যুর পরেও ছবি তুলতে আপত্তি আছে ওর। তাই নগ্ন ভাবে বাথটাবে নামা যাবে না। নতুন বক্সার পরে তবেই বাথটাবে নামবে। ওন্টারিও ভিনইয়ার্ডের সবচেয়ে দামি রেড ওয়াইন কিনতে হবে। আর কিনতে হবে ধমনী কাটার জন্য নকশাকাটা একটি ইটালিয়ান ক্ষুর। কাজটি ব্লেড দিয়েই করা যেতো। কিন্তু জীবনের শেষ কাজে শাহেদ একটি আভিজাত্যের ছাপ রেখে যেতে চাচ্ছে।
সব কেনাকাটা দেড় ঘন্টার মধ্যেই শেষ হয়ে গেলো।
আজ দিনটি শীতকালের প্রেক্ষীতে বেশ সুন্দরই বলতে হবে। চমৎকার রোদ উঠেছে। বাতাস কম। ঠান্ডাও প্রায় নেই বললেই চলে। সুপারস্টোরের পাশেই ছোট্ট লেক। যদিও এখন সেটিকে লেক বলে চেনার উপায় নেই। পুরোই বরফ হয়ে আছে। লেকের পাশে বেঞ্চগুলোও সব তুষারে সাদা।
স্টোর থেকে বেরিয়ে লম্বা পা ফেলে সেদিকেই হেঁটে যায় শাহেদ। তুষার সরিয়ে বসে পড়ে একটি বেঞ্চের উপর। সূর্যের আলো বরফ-লেকে পড়ে কী চমৎকারই না লাগছে! শাহেদের বামপাশের মেপ্যল গাছটায় জমে থাকা তুষার বাতাসের সাথে অল্প অল্প করে লেকে ঝরে পড়ছে। হাত দিয়ে আড়াল করে একটি সিগারেট ধরায় শাহেদ। ঠিক এই সময়, হঠাৎ করেই, কোনো নোটিশ ছাড়াই, চোখে পানি চলে আসে ওর। এক ফোঁটা দু'ফোঁটা করে পড়তেই থাকে... আবিরাম।
এ কেমন অভিমান ওর সবার উপর? জীবনের কাছে কি এমন চেয়েছে ও যে না পাওয়ার অভিমানে চলে যেতে হচ্ছে? অর্থহীন এই জীবনটাকে ঘিরে কত কামনা-বাসনা-সুখ-আশা-ভালোবাসা-আনন্দ মানুষের... তার ছিটেফোঁটার ছাঁটও কি পেতে পারতো না ও? সিগারেট দূরে ছুঁড়ে ফেলে শাহেদ, মুখে বিস্বাদ লাগছে সবই!
"ভাইয়া আপনি কি শাহেদ?"
হঠাৎ নারীকন্ঠে বাংলা শুনে চমকে ওঠে শাহেদ। তাড়াতাড়ি আড়াল করে বাম হাতে চোখ মোছে। কখন যেনো ওর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে সাদা উইন্টার জ্যাকেট আর নীল ডেনিম ট্রাউজার পরা মিষ্টি-শ্যামলা চেহারার লম্বা একহারা একটি মেয়ে!
চার
মেয়েটি পিঠে পর্বতসমান ব্যাগ ঝুলিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
"জ্বী আমি শাহেদ। ...তোমাকে কি আমি চিনি?"
হাসে মেয়েটি, "নাহ। আগে তো পরিচয় হয়নি! আমার নাম প্রভা। এই সেমিস্টারেই এসেছি। বাংলাদেশ থেকে।"
মেয়েটি যে নতুন এসেছে তা আগেই অনুমান করা গেছে। প্রথমত মেয়েটিকে আগে কক্ষনো দেখেনি ও। এই ছোট্ট শহরে বাঙালিরা মোটামুটি সবাই সবাইকে ব্যক্তিগত ভাবে না হলেও চেহারায় চেনে। আর স্থানীয় বাঙালিদের মাঝে নাকউঁচু হিসেবে নাম আছে ওর। ওরা কখনোই যেচে পড়ে ওর সাথে কথা বলতে আসবে না।
"কোন ডিপার্টমেন্টে এসেছো?"
"কম্পিইউটার সায়েন্সে। আমি অ্যামাতে ছিলাম। ওখান থেকে ক্রেডিট ট্রান্সফার করে এখানে থার্ড ইয়ারে এসেছি।"
মেয়েটি কম্পিউটার সায়েন্সে জেনে একটু অবাকই হয় শাহেদ। এক সময় দেশে কম্পিউটার সায়েন্সের ক্রেজ উঠেছিলো। কিন্তু এখন কম্পিউটার সায়েন্সের পড়ন্ত সময়। ও থাকা অবস্থায় ওর বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশ থেকে কাউকেই কম্পিউটার সায়েন্সে পড়তে আসতে দেখেনি ও।
"আপনাকে আমি আগেই দেখেছি। সেদিন স্কুলের টিম হর্টনস থেকে কফি নিচ্ছিলেন। তখন জামাল ভাই আপনাকে দেখিয়ে বললেন আপনিও কমপিউটার সায়েন্সে আছেন। মাস্টার্স করছেন। তবে সেদিন আপনার মুখ এত গম্ভির ছিলো যে আমি আর কথা বলার সাহস পাইনি।"
সর্বনাশ! মেয়েটির ইতিমধ্যেই জামাল ভাইয়ের সাথে পরিচয় হয়ে গেছে? জামাল ভাই-ভাবি দু'জনই কুৎসা রটানোয় ওস্তাদ। কারো সম্পর্কেই তাদেরকে কখনো ভালো কিছু বলতে শোনেনি শাহেদ। মেয়েটিকে তো তখনই জামাল ভাইয়ের শাহেদ-বিষয়ক জ্ঞান দিয়ে দেবার কথা ছিল।
ওর ধারনাকে সত্যি প্রমানিত করতেই যেনো প্রভা বলে, "...আর জামাল ভাই ঠিক সেই সময় আপনার সম্পর্কে অনেক আজে-বাজে কথা বললেন। তাই ভরসাও পাইনি! অবশ্য পরে বুঝেছি উনার কোনো কথাই বিশ্বাস করা যায় না। সবার সম্পর্কেই আজেবাজে কথা বলেন।"
মেয়েটির পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা আর সারল্যে মুগ্ধ হয় শাহেদ।
"...আমি মাত্র ক'দিন হলো এসেছি। আমার সাথে এখানে কারোরই পূর্বপরিচয় নেই। উনি তবুও আমাকে নিয়ে বানিয়ে বানিয়ে অনেক আজেবাজে কথা বলে ফেলেছেন। আমি নাকি বড়লোকের বখে যাওয়া মেয়ে। বাংলাদেশে আমাকে সামলাতে না পেরে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছেন বাবা-মা!" গালে টোল ফেলে মিষ্টি করে হাসে প্রভা।
সম্ভব। জামাল দম্পত্তির পক্ষে সবই সম্ভব।
"আরে! আপনাকে তো কথাই বলতে দিচ্ছি না। আমি আসলে অনেক বেশি কথা বলি। মা বলেন। এখানে একটু বসি?" অনুমতির তোয়াক্কা না করেই কাঁধের গন্ধমাদন ব্যাগটি একপাশে ফেলে সাবলিল ভাবে বেঞ্চের বাকি তুষার সরিয়ে শাহেদের পাশে বসে পড়ে প্রভা।
"আমার সাথে কেনো কথা বলতে চাইছিলে? কোনো দরকার?"
"এমনিই ভাইয়া! আমিও কম্পিউটার সায়েন্সে আপনিও কম্পিউটার সায়েন্সে। ব্যাপার আছে না?"
একই বিষয়ে পড়ার মধ্যে কি ব্যাপার আছে তা পরিষ্কার ভাবে না বুঝেও সায় দেয় শাহেদ। ওর মনে এখন ক্ষীণ সন্দেহ হচ্ছে যে আর কিছু না - ওকে কাঁদতে দেখেই আগ বাড়িয়ে কথা বলতে এসেছে মেয়েটি। অথচ এখন এমন ভাব দেখাচ্ছে যেনো বিষয়টি ও লক্ষ্যই করেনি। মনে মনে কৃতজ্ঞ হয় শাহেদ।
মেয়েটি অনর্গল কথা বলতে পারে। এক বিষয় থেকে আরেক বিষয়ে কোনো পূর্বাভাস ছাড়াই লাফ দিতে পারে। আর কথা বলার সময় এমন একটি আবহ তৈরি করে রাখে যে যখন যা নিয়ে কথা বলছে তখন তা ছাড়া আর কিছুই মাথায় আসে না। মেয়েটির উদ্দেশ্য যদি থাকে কথা বলে ওর মন ভালো করে দেবার তবে বলতে হবে সে কাজে মেয়েটি পূর্ণভাবেই সফল হয়েছে। ওর কথা বলার ভঙ্গিতে কেমন যেনো একটি শিশুসুলভ সারল্য আছে যা শাহেদের ভালো লাগছে। একটু আগের সেই মন খারাপ করা ভাব নিমিষেই উবে গেছে কর্পূরের মত।
প্রভার ব্যাগ বেঞ্চের সাথে হেলান দিয়ে রাখা ছিলো। সেটি উলটে পড়ার শব্দে ফিরে তাকায় দু'জনে।
আঙ্গুল তুলে ব্যাগ দেখিয়ে শাহেদ বলে, "এতো বড় ব্যাগ নিয়ে কোত্থেকে এলে? নাকি যাচ্ছিলে কোথাও?"
"সুপারস্টোরে গিয়েছিলাম। ব্যাগ ভর্তি বাজার। আগামীকাল খিচুড়ি-মাংস করবো। আজ সকালে মা'র কাছ থেকে রেসিপি নিয়েছি। শীতের দিনে মজা লাগবে না খিচুড়ি-মাংস? সাথে বেগুন ভাজা।"
মাথা নেড়ে সায় দেয় শাহেদ।
"আমি রান্না জানিনা বললেই চলে। দেশে মাঝে মাঝে শখ করে রান্না করেছি। তাও মা সবসময় সাথে থাকতেন। আপনি নিশ্চই এতদিনে ওস্তাদ বাবুর্চি হয়ে গেছেন?"
"আমি রান্না জানিনা!"
"আরে যাহ!" অবিশ্বাসের হাসি হাসে প্রভা, "জানি না বললেই হলো? খান কি তাহলে?"
"প্রিকুকড খাবার কিনি। আর পাস্তা-ম্যাকরনি-নুডলস-উইংস-পাউরুটি-মাখন-ফল-সসেজ-স্টেক মিলিয়ে ভালোই চলে যায়।"
বড় বড় চোখে তাকিয়ে থাকে প্রভা, "ভাত? আপনি ভাত খান না?"
"খাই তো!" আমতা আমতা করে বলে শাহেদ, "প্রায়ই ইন্ডিয়ান কিংবা চাইনিজ রেস্টোরেন্টে গিয়ে পেট পুরে ভাত খাই।"
"সেটা আর ক'দিন! মাসে তিনবার, চারবার? আপনি বেঁচে আছেন কিভাবে?"
বোকার মতো দাঁত বের করে হাসে শাহেদ।
"শেষ কবে দেশে গেছেন আপনি?"
বুকে রক্ত ছলাৎ করে ওঠে শাহেদের, "পাঁচ বছর আগে!"
"ছেলে বলে কি!" আঁতকে ওঠে প্রভা, "এর মাঝে যান নি কেনো? কিভাবে পারেন? আমি তো এই সামনের সামারেই যাব বলে ঠিক করেছি। মাত্র কয়েক হপ্তা গেছে। এরই মধ্যেই সবাইকে এত্তো-এত্তো মিস করছি! আপনিও চলেন এবার আমার সাথে। আচ্ছা আন্টি জানেন আপনি ভাত খান না?"
মাথা নিচু করে চোখের পানি আটকাতে চেষ্টা করে শাহেদ। মেয়েটির সামনে আরেকবার কাঁদতে চায় না ও, "আমার বাবা-মা বেঁচে নেই!"
অদ্ভুত এক নিরবতা নেমে আসে কথাটি বলার সাথে সাথেই।
একটু থেমে নিজে থেকেই বলে শাহেদ, "পাঁচ বছর আগে শেষ যখন দেশে গিয়েছিলাম তখন সেটা তাদের সৎকারে..."
মৃগী রোগীর মত সারা শরীরটা কেঁপে কেঁপে ওঠে শাহেদের। মনে হয় মাথাটা শক্ত সাঁড়াশিতে চেপে ধরেছে কেউ। চেষ্টা করছে বাদামের খোসার মতো করোটি ভেঙে ফেলতে। ফুসফুসে বাতাস ঢুকেই আটকে যাচ্ছে বেরুতে পারছে না। পাক খাচ্ছে গত পাঁচ বছরে চেপে রাখা হীনমন্যতার সাথে। চোখ বন্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে একটা দীর্ঘশ্বাসের সাথে দূষিত সব কষ্টগুলো বের করে দেবার চেষ্টা করে শাহেদ।
"আমার বাবা-মাকে ঘুমের মাঝে গুলি করে মারা হয়েছে। সাইলেন্সার লাগানো পিস্তলের ৯মিমি গুলিতে! প্রথমে বাবাকে... এরপর মা!"
খড়খড়ে গলায় হাঁফানি রোগীর মত শ্বাস টানে শাহেদ, "দেশে গিয়ে দেখি বাবা-মা'র মৃত্যুর বিচারের চেয়ে সম্পত্তি দখলেই বেশি আগ্রহ সবার। আমার রাজাকার সৎ-চাচা আগেই সব দখল করে রেখেছিলো। আর বাকিরা সবাই তার ভাগ পেতে কাড়াকাড়ি করছে। খালা-মামারা একটি কেস করেছিলেন। সেই কেসটিও বাদি-বিবাদী-পুলিশ-শাস্ত্রী সবাইকে টাকা খাইয়ে না হয় ভয় দেখিয়ে কিভাবে যেনো গায়েব করে দিলো চাচা। সাংবাদিকেরা প্রথমে চাচার পেছনে খুব করে লেগেছিলেন। একে তো রাজাকার। তার ওপর মুক্তিযোদ্ধা ছোট ভাইয়ের খুন! একটি রসালো গল্পের খোরাক ছিল। তাও বন্ধ হয়ে গেলো যখন তার কেনা কয়েকজন বাঘা সাংবাদিক প্রমান করে দিলো খুনের সময় সে দেশেই ছিলো না!"
কাষ্ঠ হাসে শাহেদ, "আর পরিবারের সমর্থনও ছিলো চাচার সাথে। দাদার দ্বিতীয় পক্ষ নিয়ে আগে থেকেই পরিবারে রেশারেশী ছিলো..." প্রভা ওর হাত করে ধরে ফেলেছে অনুভব করে শাহেদ। সেই স্পর্শ্বে কাঁপুনি একটু কমে ওর।
সাহস নিয়ে বলে, "যেই রাত্তিরে বাবা-মা মারা গেলেন... ঠিক সেই রাতেই তাদের সাথে কথা হয়েছে আমার। বাবা গভীর রাতে আমাকে কল দিয়েছেন। কানাডাতে তখন দুপুর। বাবার সাথে কথা বলে মা ফোন নিয়েছেন। কথার ফাঁকেই উনি বললেন এইমাত্র তোর বড় চাচা আসলেন! এত রাত্রে ভাইজান... না জানি কি হয়েছে! এখন রাখি, কাল আবার তোকে কল দেবো।"
"পরদিন আমি কল পেলাম ঠিকই... কিন্তু... সেটি.." শান্ত হবার বৃথা চেষ্টা করে শাহেদ, "দেশে গিয়ে আমি কিছুই করতে পারি নি! সব টাকা দিয়ে কিনে রেখেছিলো চাচা। কোন যুদ্ধে কখনও হারেননি আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবা। তার ছেলে হয়ে কেঁচোর মত মেরুদ্বন্ডহীন নিজেকে আয়নায় দেখি প্রতিদিন। মাঝে মাঝে মনে হয় যদি হাতে আগ্নেয়াস্ত্র তুলে নিতে পারতাম... একটা একটা করে বেছে বেছে যদি গুলি করতে পারতাম সবগুলোকে। কাপুরুষ আমি তাও পারিনি!"
প্রভার হাতটা শক্ত মুঠোয় প্রায় ভেঙে ফেলার উপক্রম করেছে বুঝতে পেরে হাতটি ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করে শাহেদ। দেয় না প্রভা। আস্তে করে বলে, "বাবা-মা'র সুশিক্ষা ছিলো বলেই আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারেননি আপনি। এত কিছুর পরেও আপনি নষ্ট হয়ে যাননি কিন্তু! নিজের চেষ্টায় ব্যাচেলর্স করেছেন, মাস্টার্স করছেন... ঠিক না? টাকা আর অস্ত্রের ক্ষমতাই কি সব? একদিন আরো বড় হবেন আপনি। আরো ক্ষমতা বাড়বে আপনার। সেদিন দেশে ফিরে গিয়ে আপনার বাবা-মা'র হত্যার বিচার আপনি ঠিকই আদায় করে আনবেন। আনবেন না?"
প্রভার অশ্রুসজল চোখে চোখ রেখে দৃপ্ত ভাবে মাথা নাড়ায় শাহেদ. বুঁজে আসা গলায় ফিসফিসিয়ে বলে, "আনবো!"
হাতের উলটো পিঠে চোখ মুছে গাড় মমতা নিয়ে প্রভা বলে, "আগে কখনো খিচুড়ি রাঁধিনি বলে বলে হয়তো ভালো হবেনা... কিন্তু তবুও... আসবেন আপনি? প্লীজ?"
পাঁচ
প্রভাকে গাড়িতে বসিয়ে রেখে এক দৌড়ে গিয়ে কেনা ক্ষুর-সিগার সব আস্তাকুড়ে ফেলে দিয়ে আসে শাহেদ।
ছেলেমানুষী যথেষ্ট হয়েছে!
© অমিত আহমেদ
ব্যবহৃত ছবি © Death of Casagemas by Pablo Picasso (Blue Period)
প্রথম প্রকাশ: ইম্যাগাজিন হাজারদুয়ারী, নভেম্বর ২০০৭
পরিমার্জিত তৃতীয় প্রকাশ: গল্পগ্রন্থ, "বৃষ্টিদিন রৌদ্রসময়", শস্যপর্ব ও শুদ্ধস্বর প্রকাশন, বইমেলা ২০০৯
এয়ার সাপ্লাই - গুডবাই |
মন্তব্য
সবসময়ের মতই খুব খুব মন ছোঁয়া।আমার ভাল লেগেছে খুব!
একটা প্রশ্ন খুব মাথায় ঘুরছে বিপজ্জনক ভাবে।
আসলেই কি ধমনী কেটে ফেলা খুব নির্ঝঞ্ঝাট?
::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::
::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::
ঠিকাছে...
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
• বিবাগিনী » আসলে কোনো মৃত্যুই মনে হয় নির্ঝঞ্ঝাট নয়। তবে ধমনী কেটে ফেলাম মধ্যে একটু আর্টিস্টিক ভাব আছে মনে হয়। ভাল লেগেছে জেনে খুব ভাল্লাগলো
• সুমন চৌধুরী » অনেকদিন পরে আমার ব্লগে। খুব ভাল্লাগলো বদ্দা
লেখাটা নিজের ব্লগে রেখেছিলাম। কিন্তু সচলের পাঠক বড় তুখোড়! নিয়েই আসলাম প্রথম পাতায়।
ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
ধমনী কাটতে ইচ্ছা করে :D।ঠিক শাহেদের পদ্ধতিতে।
খুব ঠাণ্ডা আজকে।আর বৃষ্টিও।
আমিও খিচুড়ী ভাল রাঁধতে পারিনা।খুব ইচ্ছা করছে খিচুড়ী রাঁধতে।কিন্তু আজকে আমি সারারাত একা বাসায়।একা একা কিছু খাওয়া খুব বিরক্তিকর।তাই প্ল্যান বাতিল।
::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::
::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::
এসব কি ধরনের কথা তানি?
ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
আপনিও!?
সব দোষ অমিতের।এত সুন্দর একটা বর্ণনা দিয়েছে সে রগ কাটা বিষয়ে যে প্রলুব্ধ হওয়াই স্বাভাবিক।
::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::
::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::
ফারুকীর একটা নাটক ছিল, নাম ভুলে গিয়েছি। ঘাসফড়িঙের স্বপ্ন হতে পারে। ছেলেটা আত্মহত্যা করতে যায়, মেয়েটাও। ছেলেটা রগ কাটা, ঘুমের অষুধ খাওয়া, গলায় দড়ি, কারেন্টের শক, ছাদ থেকে লাফ দেয়া সব চেষ্টা করে শেষ মেষ যায় রেল লাইনে মরতে। সেখানেই দেখা হয় মেয়েটার সাথে। দু'জনে এক কাপ চা খেতে যায় আত্মহত্যার আগে। তারপরে কারোরই আর আত্মহত্যা করা হয় না। বেশ লেগেছিল। প্রথম থেকে পড়তে গিয়ে সেই নাটকটার কথা মনে হচ্ছিল! দেখেছেন নাকি?
গল্পটা সুন্দর। মরবিড যদিও। ছেলেটা ছেলেমানুষ, মায়া লাগে।
বাংলা নাটক দেখার সৌভাগ্য তেমন হয় না, তবে এই নাটকটা দেখার চেষ্টা করবো। একটা গল্প পড়েছিলাম, কার লেখা মনে নেই। কাহিনীটা ছিল এমন, একজন অনেক ভাবে আত্মহত্যার চেষ্টা করে, কোনো চেষ্টাই সফল হয় না। অবশেষে বাধ্য হয়ে পরিকল্পনাটাই বাদ দিতে হয়।
ধন্যবাদ পিচ্চি ফ্রম ডাউন আন্ডার
ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
দু এক জায়গায় শাহেদ 'শাহীন' হয়ে গেছে ।
মায়াকোভস্কি এরকম পদ্ধতিতে আত্নহত্যা করেছিলেন ।
'গন্দম' এর কি অবস্থা?
-----------------------------------------
'প্রিয়তম পাতাগুলো ঝরে যাবে মনে ও রাখবেনা
আমি কে ছিলাম,কি ছিলাম--কেন আমি
সংসারী না হয়ে খুব রাগ করে হয়েছি সন্ন্যাসী
হয়েছি হিরন দাহ,হয়েছি বিজন ব্যথা,হয়েছি আগুন'
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
গল্পে প্রথমে শাহেদের নাম শাহীন রেখেছিলাম। তাই এ সমস্যা। ঠিক করে নিচ্ছি। আর গন্দমের পরের পর্বটা লেখাই আছে। একটু এডিট করে আজই পোস্টাবো।
ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
আমারো গন্দম পড়তে ইচ্ছা করছে।
::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::
::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::
ঘাসফড়িং এর স্বপ্ন মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখা, ফারুকীর পরিচালনা নয় বোধহয়।
--------
অমিত, শাহেদকে মনে করিয়ে দিবেন, আনসারিং মেশিনের টেপটা যেন বদলে নেয়। নইলে বিশাল কেলেংকারি হয়ে যাবে।
-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
হাসান ভাই, আপনি যে দু'টি পয়েন্টে কথা বললেন সে দু'টি পয়েন্ট নিয়ে গল্প লেখার আগে আমিও ভেবেছি। তাই আপনার কমেন্ট পড়ে চমকিত হলাম!
প্রথমত, আপনার মত আমিও আত্মহত্যার মধ্যে কোনো রোমান্টিকতা খুঁজে পাই না। আমার কাছে এটা মনে হয় কাপুরুষতা - হার মেনে জীবন থেকে বিদায় নেয়া, অনেকটা taking the easy way out। আমি ব্যক্তিগত ভাবে এমন নই। আমি বাঁচবো, এবং বেঁচেই ফাইট দেবো, পরে যা হবার হবে। শাহেদকে মরতে দিলে পাঠক চমকিত হতো ঠিকই কিন্তু লেখক হিসেবে আমি ভুল মেসেজ দিতাম। তাই শেষটা এমন রেখেছি।
শাহেদের হঠাৎ প্রভাকে সব খুলে বলা নিয়ে বলি। আমার নিজের জীবন থেকেই বলি। আমার জীবনে এমন একটা ঘটনা ঘটেছিল যেটা এত কষ্টের আর এত অনাকাঙ্খিত যে আমি পরিচিত কাউকেই বলতে পারিনি। একদিন হঠাৎ এমন একজনকে বলে ফেললাম যাকে আমি ভাল মত চিনিও না! পরে এটা নিয়ে অনেক ভেবে বুঝেছি কথাগুলো আমি বলেছি কেবল নিজে হালকা হওয়ার জন্য। কথাগুলো নিজের মধ্যে চেপে রাখতে রাখতে আমি ছিলাম ক্লান্ত। তাই এমন একজনকে বলেছি যে আমাকে আগে থেকে চেনে না। আমার গল্প শুনে যে আমাকে judge করবে না, আমার কথাকেই ধ্রুব ধরে নেবে। শাহেদের গল্পে আমি সেই অভিজ্ঞতাটাই কাজে লাগিয়েছি।
গন্দম শেষ করেই আপনার কাজে হাত দেব (২০ তারিখের পর)।
ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
ভালো লাগলো। জীবন থেকে নেয়া নাকি?
একখান আপত্তি আছে। আত্মহত্যার ইচ্ছে বা প্রবণতার সঙ্গে ধর্মবিশ্বাস বা নাস্তিকতার কোনও সম্পর্ক আছে বলে আমি বিশ্বাস করি না।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
নাহ, জীবন থেকে নেয়া না। একদিন চিন্তা করছিলাম যদি আত্মহত্যা করতে হয় তাহলে কোন কোন বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে। গুগলে সার্চ দিলাম দেখি হাজার হাজার ওয়েবসাইট, তখনি প্লটটা মাথায় চলে আসলো।
আত্মহত্যার সাথে ধর্মবিশ্বাস/নাস্তিকতার কোনো সম্পর্ক আছে বলে আমিও বিশ্বাস করি না। নাস্তিকতার কথা গল্পে আনা হয়েছে কেবল শাহেদের পারিপার্শ্বিকতা বোঝানোর জন্য।
আপনার মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ সন্ন্যাসী ভাই।
ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
অনেকদিন পরে গল্প পড়লাম। বেশ ভাল লাগল, গল্পের মতই। পড়তে পড়তে ভাবছিলাম পোলাপাইন এত সুন্দর করে কেমনে লেখে! পুরা গল্পের বর্ণনার সাথে মনে হচ্ছিল আমি চাক্ষুস দেখছি ঘটনাগুলো। আমার এরকম মিলনাত্নক গল্পই ভাল্লাগে।
ধন্যবাদরে ভাই। আপনার কমেন্টে মনটা খুব ভাল হয়ে গেল কেন জানি।
ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
- মায়ের রেসিপি নিয়ে আমি ইলিশ মাছ রান্না করলাম জীবনের প্রথম। নাখিচুরি-নাভাত-নাফ্রাইডরাইস সহযোগে সেটা গলাধঃকরণ করলাম।
প্রভার দেখা পেলে হয়তো রান্নার কষ্টটা আমার করতে হতো না!
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
মিয়া! মজা লন না?
এদিকে আমি আছি পাস্তা-ম্যাকরনির উপরে
ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
- আপনে এই (সইত্য) কথাটা কইতে পারলেন মিয়া?
ম্যাকরনির উপরে কোন জিনিষ আছে, কন দেহি? ইলিশ মাছ রাইন্ধা কিচেনের জানালা খুইলা রাখছি। সারা ঘর গন্ধ হইয়া গেছে, আজকা দেহি কালকের পরনের প্যান্টেও ইলিশমাছের গন্ধ!
এখনো পর্যন্ত দরোজার সামনে কোন নোটিশ দেহি নাই। এ যাত্রা মনেহয় বাঁইচা যামু।
পাস্তা-ম্যাকরনি রাঁনলে এই ডরে রাইত কাবার করতে হৈতো?
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
হুম
____________________________
লাল গানে নীল সুর হাসি হাসি গন্ধ......
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
- ভুট্টা ক্ষেতের গণক মিস্তিরি - নামটা জোশতো!
রাগিব ভাই কপিরাইটেড নাকি?
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
প্রথম তিন পর্বে মনে হচ্ছিলো - বিশ্ব নাটকের কাহিনী সংক্ষেপ। বিশ্ব নাটক মানে - বিটিভির বিশ্ব নাটক, শনিবারে রাত সাড়ে দশটায় দেখাতো। নাট্যকার আবু সাঈদ (?) প্রথমে আলোচনা করতেন, তারপর নাটক। 'প্রতিসরণ'-এর প্রথম তিন খন্ড সে ইংগিতই দিচ্ছিলো। আত্মহনন শেষ পর্যন্ত হবে নাকি কোনো এক কঠিন প্রশ্নের সামনে পাঠককে দাঁড় করিয়ে গল্পকার ইতি টানবেন তার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। শেষ দুই খন্ডে এসে দেখলাম জীবনের মজমা কিংবা আকাঙ্খা একেবারে ক্ষুদ্র নয়। এবং সেটা যখন যথাযথ অমিতীয় ঢঙেই বলে - 'ছেলেমানুষী যথেষ্ঠ হয়েছে'। অমিত আহমেদের সাম্প্রতিক গন্দম ও অন্যান্য মন দিয়ে পড়ছি, তাই জানতে ইচ্ছে করছে 'প্রতিসরণ' কতো আগের লেখা?
সময়টা সঠিক মনে নেই। এক বছরের উপরে আর দুই বছরের নিচে এটা নিশ্চিত।
ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
লেখায় একটা ধাঁচ পরিবর্তন চোখে পড়লো, 'গন্দম' শেষ হলে আলাপ করবো।
একটানে পড়ে গেছি। ভাল লেগেছে, কিন্তু প্রথমেই বুঝে গিয়েছিলাম যে এমনটিই হবে।
আমার একজন পরিচিত হাতের রগ কেটে মরতে চেয়েছিল। কিনতু শেষ মরার আগেই তাকে ধরে ফেলা হয়েছিল। হাসপাতালে একটা করুণ হাসি নিয়ে শুয়েছিল।
এখন সে সুখে সংসার করছে।
পাব্লিকের (শাহেদ) বেযায়গায় গফ করনের অভ্যাস আছে অলরেডী। একবার বাদাম মামুরে পাইয়া বকসে পরে ছুকরি পায়ে। তাই মনে হয় ব্যাপারটা অতটা কাকতালীয় নায়। এট্টু ক্যারেক্টারিস্টিক আছে।
এট্টু স্পেলচেক
"মাঝবয়সী এক বাদালওয়ালা। প্রগাড় মমতায় হাত রাখে গুমড়ে গুমড়ে ওঠা শাহেদের"
এইডা বাদাম হইব মনে হয়।
ফরিদ লন্ডনী
এই একটা বিবেচনার কথা কইলেন লন্ডনী ফরিদ ভাই
ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
গল্প পড়ে যারা বিমর্ষ হয়েছেন তাঁদের জন্য একটি গান:
ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
- বিমর্ষ না হইলে গান হুনা যাইবো না বস?
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
অবশ্যি যাবে
ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
লাইফ বিউটিফুল না
::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::
::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::
এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললাম! এত চমৎকার একটা লেখা। নিজেই 'শাহেদ' হয়ে গিয়েছিলাম।
কেন জানি সুন্দর সমাপ্তি আমার সহ্য হয় না। বানানো মনে হয়। মনে হচ্ছিলো প্রভা আসার পরেও হয়তো 'আমি শাহেদ' আত্মহত্যা করে ফেলবো। তারপর সারাক্ষন একটা অতৃপ্ততা নিয়ে ঘুরে বেড়াবো।
তবু লেখক আমাকে গাঢ় মমতা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা'র জন্য কৃতজ্ঞ হয়ে থাকলাম।
- কাঠপেন্সিল।
------------------------------------------------------------------
কেমন করে বলো ঐখানে যাই.....যেখানে তুমি আর তোমরা আছো সবাই।
আজকেই সুজন্দার(সুজন চৌধুরী) লেখার সুত্র ধরে আপনার এই গল্পটার খোঁজ পেয়েছি। সুদা একদমই বাড়িয়ে বলেননি, গল্পটা ১টানে পড়ার মত এবং সেই মোতাবেক পড়ে ফেললামও। গল্প বলার ধরণ, পারিপার্শ্বিক বর্ণনা আর সেই সাথে ম্যাসেজ, সব মিলিয়ে খুবই ভালো লাগলো।
love the life you live. live the life you love.
প্রভারা কেন আসে, আর কেনই বা চলে যায় অন্যের সাথে? আর ওদের নিয়ে পত্রিকায় এতো খবরই বা কেন হয়? কেনই বা এতো নেট সার্চ???
মহাস্থবির
আরে খাইসে!
আত্মহত্যা নিয়ে সার্চ দিয়ে আমিও বেকুব হয়ে গেসিলাম!
-----------------------------------------------------------------------------------
...সময়ের ধাওয়া করা ফেরারীর হাত থিকা যেহেতু রক্ষা পামুনা, তাইলে চলো ধাওয়া কইরা উল্টা তারেই দৌড়ের উপরে রাখি...
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
ধন্যবাদ কাঠপেন্সিল, তারাপ কোয়াস।
দুষ্ট বালিকা, আত্মহত্যা নিয়ে সার্চ করেছিলেন কেনো?
নতুন মন্তব্য করুন