• Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_clear_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_electoral_list_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_results_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_writeins_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).

গল্প: পালিশ

অমিত আহমেদ এর ছবি
লিখেছেন অমিত আহমেদ (তারিখ: শনি, ১৫/০৩/২০০৮ - ৩:৫২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

autoবাসা থেকে বেরিয়ে পাশের গলিটা দিয়ে বড় রাস্তায় নেমে সেটা টপকে ওপারে গেলেই মুচির আখড়াটা। একসারে বারো জন জুতোর কারিগর তাঁদের পসার সাজিয়ে তৈরি হয়ে বসে।

এক নজর দেখে যে খুব শ্রদ্ধা আসবে তা হলফ করে বলা যায় না।

বড় রাস্তার পাশের এঁদো পুকুরটা আড়াল করার জন্য সরকার যে হলুদ দেয়ালটা তৈরি করেছে - সেইটে ভর করেই পুরো আখড়াটা দাঁড়িয়ে। সব কারিগরের আস্তানা কম বেশি একই রকমের কাঠামো। দেয়ালের উপর থেকে টানা তারপুলিন দু’টো বাঁশের সাথে ঠেঁকিয়ে ছাউনি। সেই ছাউনির নিচে দেয়ালে ঠেস দিয়ে রাখা একটা নিঁচু চৌকি। যে চৌকিতে সার করে রাখা সারাইয়ের যত সরঞ্জাম। এক পাশে কালি, ক্রিম, রঙিন পানি, ব্রাশ। আরেক পাশে নানান মাপের সুই, সুতো, পেরেক, অন্য যন্ত্রপাতি। একটা বড় কাঠের বাক্স। যেটাতে ঠাঁসা জুতোর চামড়া আর অন্য সব কাঁচামাল। দেয়ালেরও একটা বুদ্ধিদিপ্ত ব্যবহার আছে। সেখানে ক্রেতাকে লোভ দেখাতে চার ইঞ্চি পেরেক সেঁটে নানান মাপের জুতো ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।

জন্মের পর অবধি ওদেরকে এই রেল স্টেশনের পাশেই দেখে এসেছে বুলেট। ওর বয়সটা মোটে কম নয়। গত মাসে দশে পড়েছে। মা বলেন আগে নাকি সাহেব বাজারেও এমন একটা আখড়া ছিলো। পরে সাহেব বাজারে প্রতিটি কোনা শহরের সাহেবরা দখল করে নেয়ায় সে আখড়াটা উঠে গেছে।

বাবা-মা যতই চোখ গরম করুক আর বন্ধুরা যতই হাসুক, জুতোর কাজ যে একটা শিল্প সেটা বুলেট ঠিক ঠিক বুঝে ফেলেছে।

বেশি দিন আগের কথা নয়। এই তো ক’মাস আগে। গলিতে সবার সাথে ক্রিকেট খেলছিলো বুলেট। ও দাঁড়িয়েছে ব্যাটসম্যানের ঠিক সামনা সামনি। অন্য সব দিকে দেয়াল বলে ওই এক দিকেই বল থামানোর ব্যাপারটা আছে। ব্যাট করছিলো মন্টু। দূর্দান্ত খেলোয়াড়। এমন খেলোয়াড়কে ফুলটস দেয়না কেউ। পিন্টু দিলো। সেই বল বুলেটের মাথার উপর দিয়ে সোজা বড় রাস্তায়। বলের পেছনে ছুটতে ছুটতে মুচির আখড়ায় গিয়ে পড়লো বুলেট। বল নিয়ে পিছু ফিরতে ফিয়েও থমকে যায় ও। বৃদ্ধ এক কারিগর তাঁর চেয়েও বৃদ্ধ এক জোড়া স্যান্ডেল হাতে নিয়ে দেনোমেনো করছে, ‘এইটা লিয়ে এসেছিস? এ কি সারাই হোবে?’

স্যান্ডেলটার তলি বলতে কিচ্ছু নেই। নানান দিক থেকে সুতো খুলে এসেছে। আসল রঙ কি ছিলো অনুমান করা এখন আর কারও সাধ্যে নেই।

স্যান্ডেলের মালিক নিঃসন্দেহে পাশে দাঁড়া করা রিক্সাটার চালক। সে কোনো কথা বলে না। বোকার মতো একটা হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে রাখে।

কোনো উত্তর আসে না দেখে আবার বিড়বিড়িয়ে বলে বুড়ো, ‘এটা আমি কেনে... এ তল্লাটের কেউ সারাই করতে পারবে না!’

এবার বাধ্য হয়েই গলায় একট মিনতি ফুটিয়ে তোলে রিক্সাচালক, ‘সামনের শীতে একটা নতুন লিচ্ছি গো! এখন এইটা একটু দেইখে দেন না?’

বাকিটা শোনার ধৈর্য কিংবা আগ্রহ কোনোটাই হয় না বুলেটের। বল নিয়ে ছুট লাগায় গলির ভেতরে।

খেলোয়াড় কম বলে খেলার নিয়ম বদলে নেয়া হয়েছে। সামনের বড় রাস্তায় গেলে চার। মাটি না ছুঁয়ে দুই পাশের দেয়ালে লাগলে দুই। আর পেছনে বল গেলে এক। দৌড়ে রান নেবার ব্যাপারটা তাই গৌন। দুই দলে ভাগ করে খেলার ব্যাপারটাও নেই। ঠিক হয়েছে ব্যাটসম্যান আউট না হওয়া পর্যন্ত ব্যাট করেই যাবে। সবাই ব্যাট করতে চায় বলে খেলার প্রথমেই লটারি করে ব্যাটিংক্রমটা ঠিক করে নেয়া হয়। সে হিসেবে মন্টুর পরে বুলেটেরই ব্যাট করার কথা। কিন্তু হতভাগাকে আউট-ই করা যাচ্ছে না।

বোলারদের উপর ধৈর্য রাখতে না পেরে এবার নিজেই বল তুলে নেয় বুলেট। মন্টু আগ্রহের অতিশয্যে উইকেট থেকে অনেক সামনে বেরিয়ে এসেছে। এতক্ষন বোলাররা বেশ জোরেই বল করছিলো। এখন ও যদি হাঁটুর কাছে একটা স্লো বল করে তাহলে সেটা মন্টুকে বোকা বানিয়ে স্ট্যাম্পসে গিয়ে লাগবে না? পরীক্ষা করতে গিয়ে উলটে নিজেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় বুলেট। মন্টু আরো সামনে এগিয়ে এসে বল ড্রপ খেতে না খেতেই সেটা তুলে পাঠিয়ে দিয়েছে আবার বড় রাস্তায়।

বল আনতে গিয়ে এবার ইচ্ছে করেই চাচার কাজ কেমন চলছে সেটা দেখতে গিয়ে আরও একবার ভ্যাবাচ্যাকা খায় বুলেট।

স্যান্ডেলটায় ইতিমধ্যে নতুন সেলাই দেয়া হয়েছে। তলাটাও কিভাবে যেন বদলে গেছে রাতারাতি! এখন চলছে পালিশের কাজ। এমন একটা আবর্জনা কি করে নতুনের মত হয়ে গেল সেটা ভাবতে ভাবতে খেলায় ফিরে আসে বুলেট। অন্যমনস্ক বুলেট জুতোর চিন্তা মাথায় নিয়ে একটা ওয়াইড বল করে ফেলে। মন্টুর আত্মবিশ্বাস তখন তুঙ্গে। ডানে সরে গিয়ে সেই ওয়াইড বলটাই মারতে গিয়ে বল ব্যাটের কানায় লেগে সোজা ফিল্ডারের হাতে।
আউট!

সেই থেকেই শুরু। স্কুল শেষে সময় পেলেই আখড়ায় দাঁড়িয়ে কারিগরদের কাজ দেখে বুলেট। বুড়ো যেন একটা যাদুকর। কোনো এক জানুমন্রেস্ যেন সে নর্দমা থেকে তুলে আনা জুতোও ঝকঝকে নতুন বানিয়ে ফেলে! এই রহস্য ওকে জানতেই হবে।

ওর ভদ্রবেশী পোশাক আর চকচকে চেহারা দেখে প্রথম প্রথম খুব একটা উষ্ণ অভ্যর্থনা ও পায়নি। একটা অবিশ্বাস কারিগরদের মনে ছিলো। কি ব্যাপার! এই ভদ্দরলোকের বেটা সারাটাক্ষণ এখানে দাঁড়িয়ে কি করে?

আর সেই বুড়ো চাচার ব্যবহারও খুব একটা ভালো লাগার মত ছিল না। বুলেটকে দেখলেই তার মুখ ব্যাজার হয়ে যেত। সেই সাথে চলতো ওকে তাড়ানোর জন্য নানান বাহানা।

‘বাসা আছে, হ্যাঁ?’
‘আছে তো!’
‘কোথায় গো?’
‘এইতো পাশেই।’
‘তো ইখানে দেঁড়িয়ে আছো যে? বাসায় যেইতে হোবে না?’

এসব প্রশ্ন সঙ্গত কারণেই এড়িয়ে গেছে বুলেট। মন দিয়েছে বুড়োর হাতের কাজ দেখায়।

পালিশের কাজ আর সারাইয়ের কাজের শুরুটা যে এক ভাবে হয় না সেটা ও ততদিনে জেনে গেছে। জেনে গেছে জুতো আর স্যান্ডেলের কাজের ধরণটা অন্যরকম সেটাও। শিখে নিয়েছে চামড়া আর রেক্সিনের দামের তারতম্য। রাবার সোল, ফোম সোল, বুট সোল আর অন্য সব সোলের পার্থক্য।

বুলেটের এই আনুপাতিক জ্ঞান বৃদ্ধির সাথে সাথে বদলে যেতে থাকে ওর প্রতি সবার ব্যবহারও। খিটখিটে বুড়োটাও শেষ পর্যন্ত মেনে নেয় সময়ে অসময়ে ভদ্দরলোকের ছেলের এই অনাকাঙ্ক্ষিত উপস্থিতি আর বেয়াড়া কৌতুহল মেশানো প্রশ্ন গুলো। এমনকি মাঝে মাঝে ছোকড়ার সাথে পালিশ নিয়ে জ্ঞানগর্ভ আলোচনাতে বুড়োর অনিহা দেখা যায় না।

যদিও এতদিনে দুজনের সম্বোধনটা তুমি আর তুইয়ে নেমে এসেছে তবু বুড়োকে বুলেটের এখনো একটু ভয়ই লাগে। এই যেমন ক’দিন থেকে ও খেয়াল করছে অন্য কারিগরের দেয়ালে যেখানে বিশ/পঁচিশ জোড়া জুতো ঝুলছে সেখানে বুড়োর দেয়ালে ঝুলছে মোটে আট জোড়া। ব্যাপারটা ঠিক ভালো না ঠেকলেও বুড়োকে জিজ্ঞেস করতে ভয় লাগে বুলেটের। বুড়োর যখন-তখন যে কোনো প্রশ্নে খেঁকিয়ে ওঠার একটা বদঅভ্যেস আছে। একটু দেনো-মেনো করে শেষে না পেরে আজ জিজ্ঞেস করেই ফেলে বুলেট, ‘কাকা, সবার এত্ত জুতা আর তোমার যে কেবল আট জোড়া ঝুইলছে?’
‘ওরেব্বাপরে, একে বারে গুইনে রেখেছিস যে?’ ছোকড়ার পর্যবেক্ষণ দেখে ভালোই লাগে বুড়োর। কয়েক দিনের না কামানো দাঁড়ি-গোঁফের ফাঁকে লাল দাঁত বের করে একটু হাসে।
‘গুইনেছি তো সেই কবেই। নতুন জুতা আইনছো না যে?’
‘শীতকাল তো শেষের দিকে। গরমের জুতা, আর শীতের জুতা আলাদা সেইটে জানিস না বুঝি? গরমে মানুষ স্যান্ডেল কিনে বেশি। এখন জুতা এইনে লাভ আছে? ক’দ্দিন পরে স্যান্ডেল আইনবো।’

কোন ফাঁকে পাশে এসে দাঁড়ায় ছাব্বিশ-সাঁতাশ বছরের এক ছেলে। একটু দ্বিধা নিয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘চাচাজী... জুতো পালিশ হবে?’

বুড়োর কাছ থেকে বুলেট শিখে নিয়েছে কিভাবে প্রতিটা খদ্দেরকে যাচাই করতে হয়। সেই সূত্র মেনে প্রথমেই খদ্দেরের জুতোর দিকে তাকায় বুলেট। নিখাঁদ চামড়ার উঁচু মাপের জুতো। এরপর দেখতে হয় ঘড়ি। ছেলেটার ঘড়িটাও বেশ দামীই হবে। এবারে পোশাক আর চেহারা। এ দু’টোতেও ছেলেটা বেশ উৎরে গেল। নিদ্বিধায় বলা যায় খদ্দেরের পয়সা আছে। এমন খদ্দের আগে দরদাম করে না। আগে কাজ করায়। পরে মজুরির কথা ওঠায়।

ওর মত বুড়োও যাচাই করে নেয় খদ্দেরকে। বলে, ‘হোবে তো!’
‘কতক্ষণ লাগবে?’
‘পোনরো মিনিট।’
‘করেন...’ কথা না বাড়িয়ে জুতো খুলে দেয় ছেলেটা।

এমন জুতো আগে দেখেনি বুলেট। পায়ের গোড়ালি থেকেও অনেক উপরে উঠে গেছে চামড়া। কোনো ফিতে নেই। বরং জুতোর একপাশে ধাতব চেইন একদম উপর পর্যন্ত উঠে গেছে।

চৌকির তলা থেকে খদ্দেরদেরকে পড়তে দেবার স্যান্ডেলটা বের করে দেয় বুড়ো। বুড়োর এমন দুই জোড়া স্যান্ডেল আছে। একটা ছেঁড়া-খোঁড়া। আরেকটা মন্দ নয়। আড় চোখে দেখে বুলেট বুড়ো ওর নতুন খদ্দেরকে ভালো স্যান্ডেলটাই বের করে দিলো। সাবলিল ভাবে স্যান্ডেলটা পায়ে গলায় ছেলেটা। বলে, ‘চাচা, আমি পাশের হোটেল থেকে খেয়ে আসি? সমস্যা আছে?’
‘কিসের সমস্যা... আপনি খেইয়ে আসেন!’

ছেলেটা চলে গেলে জুতো জোড়া আলতো করে তুলে দেখে বুড়ো। একদম নতুন। খুব বেশি দিন আগে কেনা নয় মোটেই। এমন জুতো কেউ পালিশ করাতে নিয়ে আসে না।

জুতো জোড়া দেখে পাশের পালিশওয়ালা উঠে আসে। আস্তে করে বুড়োকে বলে, ‘বিদেশী জুতা!’

কথা না বলে হাত চালায় বুড়ো। প্রথমে শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে নেয় পুরো জুতোটা। দুইবার। এরপর ক্ষয়ে যাওয়া টুথব্রাশ চুবিয়ে নেয় রঙিন পানিতে। উদাত্ত গলায় বুলেটকে শুধায়, ‘বুইঝেছিস রে। এই জুতোর বেশি পানি দেয়া যাইচ্ছে না। বলতো কেনে?’

‘নতুন জুতা যে! পানি বেশি লাগলে আসল পালিশ থাইকবে না।’ উত্তর দিতে দেরি হয় না বুলেটের।

প্রসন্ন হেসে আস্তে আস্তে ব্রাশ ঘষে ধূলো সরায় বুড়ো, ‘এই যে ছেলেটা দাম না কইরেই চইলে গেল। তারমানে কি বুইঝেছিস?’

‘পইসা নিয়ে চিন্তা নাই...’

‘ঠিক! কিন্তু পরে মজুরি নিইয়ে মুখ ক্যালাবে। আমি বইলছি। দেইখে নিস।’

‘তুমি কত চাইবে?’

‘চাইবো তিরিশ টাকা। সেটা কমাইয়ে সে কুড়ি-পনরোতে নামাইবে। আর ভাইববে খুব জিতলাম।’ পান খাওয়া লাল দাঁত বের করে হাসে বুড়ো।

‘দশ টাকা রেট সেটা সে জানে না বইলছো?’

‘ছোকড়া বিদেশি। রেলস্টেশন থেইকে এসেছে। আমাদের রেট জাইনবে কেমনে?’

ভেজা জুতো জোড়া আবার শুকনো কাপড় দিয়ে বুড়ো। এরপর আস্তে আস্তে ক্রিম লাগায়। কাজটা যে সে আলাদা যত্ন নিয়ে করছে সেটা ঠিক বোঝা যায়। যতটা প্রয়োজন তার চেয়ে যেন একটু বেশিই ক্রিম লাগাচ্ছে। কাজও করছে ধীরে। সময় নিয়ে।

বুলেট ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছে বুঝতে পেরে নিজে থেকেই ব্যাখ্যা দেয় বুড়ো, ‘ভালো জুতো হাতে নিলেই মনটা কেমন কইরে উঠে গো! চামড়াটা দেইখেছিস? খাঁজ গুলো? ভেড়ার চামড়া দিয়ে তৈরি। যেখানে-সেখানে ইচ্ছে মত পইরে বেড়াচ্ছে ছেলেটা। এরপরেও দেখবি চার বছরেও এট্টু ফাটেনি!’

সোলের সাথে চামড়ার সংযোগের জায়গাটায় ধূলোর স্তর একদম ভেতর পর্যন্ত চলে গিয়েছিলো। যত্ন নিয়ে সেগুলো সরায় বুড়ো। বলে, ‘এত দাম দিয়ে একখান জুতা কিইনেছে। ত্রিশ টাকা কি তার কাছে কিছু? এরপরেও দেইখবি কেমন কইরছে দাম শুইনে! গরিবের পেটে ভাইরে যে পায় সেই লাত্থি মারে।’

এই কথাটা বুড়ো সব সময় বলে। এই যে এতদিন ধরে বুলেট বুড়োর কাছে কাছে থাকে। এর পরেও সুযোগ পেলে বুড়ো দেখিয়ে দিতে ছাড়ে না যে ভদ্দরলোকের ঘরে জন্মে বুলেট কত বড় একটা পাপ করেছে।

ক্রিমের কাজ শেষ করে কালির ডিব্বা খোলে বুড়ো। আঙ্গুলে কালি নিয়ে আস্তে আস্তে মাখে এক পাটি জুতোয়। এরপর ব্রাশ নিয়ে এক হাত জুতোর ভেতরে গলিয়ে, মাথা ঘাড় একটু বাঁকা করে, চলে ব্রাশ নিয়ে তালে তালে জুতোয় ঘষার কাজ। এই জায়গাটাই সব চেয়ে প্রিয় বুলেটের। এই সময় ওর বুড়োকে মনে হয় যেন অন্য জগতের কোনো শিল্পী। এক অজানা ছন্দে অজানা তালে পুরো শরীরের সাথে সাথে ওঠানামা করে বুড়োর হাতের ব্রাশ আর জুতো।

আজ অন্য সময়ের চেয়ে একটু বেশি জোরেই ঘষে যেন বুড়ো ব্রাশটা, ‘এতো জোরে মাইরছো! জুতো ছিইড়ে ফেলবে যে।’

মুচকে হাসে বুড়ো। উত্তর দেয় না। মন দিয়ে কাজ করে। জানা আছে জুতোর আসল পালিশ ক্ষয়ে না গেলে সেটায় যত জোরে ব্রাশ ঘষা হয় সেটা হয় ততই চকচকে। মাঝে মাঝে কাজ থামিয়ে জুতো আলোয় ধরে দেখে কেমন হলো। সন্তুষ্ট না হয়ে আবার কালি মারে। আবার ব্রাশ ঘষে। যতক্ষণ না পর্যন্ত পূর্ণ সন্তুষ্টি আসে মনে। দেখতে দেখতে চেহারা পালটে যায় দু’পাটি জুতোর। কাজ শেষে নিজেই নিজের কাজ মুগ্ধ হয়ে দেখে বুড়ো। সে কি কোনো শিল্পীর চেয়ে কোনো অংশে কম? কতদিন কতজনের জুতোয় সে রেখে গেছে তাঁর শিল্পী মনের মাধুরী। কারো স্বীকৃতির তোয়াক্কা না করেই।

জুতো জোড়া সুন্দর করে এক পাশে সাজিয়ে রাখে বুড়ো।

বুলেট জানে বুড়োর বয়স হয়েছে বলে একটা পালিশের কাজ শেষ করেই হাতে কাঁপুনি আসে ওর। থরথর করে কাঁপতে থাকা সেই হাত সামলে একটা বিড়ি ধরায় বুড়ো। সেটাতে কয়েক টান দিতে না দিতেই উপস্থিত হয় জুতোর মালিক, ‘চাচা, পালিশ শেষ?’
‘এই যে! কইরে রাইখেছি এখানে।’ গর্ব ভরে জুতো জোড়া নিচে নামিয়ে দেয় বুড়ো।
ছেলের যে পালিশ পছন্দ হয়েছে সেটা তার চকচকে চোখ দেখেই বুঝতে পারে বুলেট।
চাচার দেয়া স্যান্ডেলটা খুলে, ঝটপট পায়ে গলিয়ে নেয় জুতো জোড়া। বলে, ‘কত দেবো?’
চৌকি থেকে আত্মবিশ্বাস নিয়ে মাথা তুলে তাকায় বুড়ো। বলে, ‘তিরিশ টাকা!’

কথা না বলে মানিব্যাগ থেকে একটা পঞ্চাশ টাকার নোট তুলে নেয় ছেলেটা। বুড়োর হাতে দিয়ে বলে, ‘খুব ভালো কাজ হয়েছে চাচাজী। আপনি বরং পুরো পঞ্চাশ টাকাই রাখেন।’ এ কথার পরে কোনো উত্তরের আশা করে না ছেলেটা। হতবিহবল বুড়োকে কিছু বুঝতে দেবার আগেই রাস্তা পেরিয়ে অন্য পাশে হারিয়ে যায়।

পঞ্চাশ টাকার নোটটা হাতে নিয়ে সেটার ব্যবহার যেন হঠাৎ করেই বিস্মরণ হয় বুড়োর। বরং বুলেটের দিকে তাকিয়ে ওর চোখে কেমন একটা অজানা দৃষ্টি দেখে কুকড়ে যায় মনে মনে।

বুড়ো জানে একটু আগে মজুরি নিয়ে ও যা বলেছে ছোকড়াকে ঠিক তাই হয়। তাই হয়ে এসেছে বুড়োর জন্মাবধী। এর পরেও তাই-ই হয়ে যাবে।

বুড়ো হাড়ে হাড়ে জেনেছে। শিখেছে, সুযোগ পেলে গরিবকে ঠকাতে পেছপা হয়না কোনো ভদ্দরলোকের সন্তান। এখন, এই মুহূর্তে যা ঘটলো তা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া কিচ্ছু নয়। ভদ্দরলোকের একটা খেয়াল মাত্র। এমন আর ঘটবে না। ঘটার কথাও না। আশা করাও ঠিক না। তবু নিজের বলা কথা গুলো স্মরণ করে নিজেকে খুব নিচু মনের মানুষ বলে মনে হয় বুড়োর।

বুলেটের চোখে চোখ রাখতে না পেরে মাথাটা নামিয়ে নেয় বুড়ো। সব রাগ গিয়ে পড়ে ওই বিদেশী জুতোওয়ালা ছেলেটার উপর। পঞ্চাশ টাকার নোটটা বুক পকেটে রাখতে রাখতে বুড়ো বিড়বিড়িয়ে বলে, ‘রইস্যার বেটা রইস্যা!’

© অমিত আহমেদ

দ্বিতীয় প্রকাশ: সংকলন, "পূর্ণমুঠি: সচলায়তন গল্প সংকলন", সচলায়তন ও শুদ্ধস্বর প্রকাশন, ২০০৮
তৃতীয় প্রকাশ: গল্পগ্রন্থ, "বৃষ্টিদিন রৌদ্রসময়", শস্যপর্ব ও শুদ্ধস্বর প্রকাশন, বইমেলা ২০০৯


মন্তব্য

দ্রোহী এর ছবি

চমৎকার গল্প — একেবারে নতুন পালিশ করা জুতোর মতোই ঝকঝকে, চকচকে!


কি মাঝি? ডরাইলা?

অয়ন এর ছবি

দারুণ

হিমু এর ছবি

দারুণ হয়েছে! একটানে পড়ে গেলাম।


হাঁটুপানির জলদস্যু

নিঘাত তিথি এর ছবি

চমৎকার। একটানা পড়লাম।
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

পর্যবেক্ষণ ভালো ছিলো । (Y)

অতিথি লেখক এর ছবি

খুবই ভালো লেখা, অন্তনির্হিত বিষয়গুলোও খবুই সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। মনে হচ্ছিল বুলেট যেন আপনিই :)

কল্পনা আক্তার

.......................................................................
সব মানুষ নিজের জন্য বাঁচেনা

উদাস এর ছবি

আসাধারন! এক নিশ্বাসে পড়ে শেষ করলাম। এর আগে চুপি চুপি আপনার গন্দম ফল পুরোটাই শেষ করেছি। দেশে থাকলে অবশ্যই কিনে ফেলতাম!

অমিত আহমেদ এর ছবি

• দ্রোহী - অনেক ধন্যবাদ ভাই।
• অয়ন - ধন্যবাদ ব্রাদার।
• হিমু - যাক অনেকদিন পর হিমু ভাইয়ের মন্তব্য পাওয়া গেল! আপনার ধনাত্মক মন্তব্যে সব সময়ই একটা আলাদা বল পাই মনে। ধন্যবাদ।
• নিঘাত তিথি - ধন্যবাদ তিথি।
• আনোয়ার সাদাত শিমুল - শুক্রিয়া মেহেরবান।
• কল্পনা আক্তার - অতিথিদের মন্তব্য আমাকে সব চেয়ে বেশি ছুঁয়ে যায়। কারণ আমি নিজে কখনো এতো বাক্স পূরণ করে মন্তব্য করার হ্যাঁপায় যেতাম না। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো লেগেছে জেনে কৃতার্থ হয়েছি।
• উদাস - আপনার জন্যও একই কৃতজ্ঞতা উদাস। খুব খুশি হয়েছি। গন্দম যতটুকু পড়েছিলেন ভালো লেগেছিল তো? আপনি কোন দেশে আছেন? অনলাইনে গন্দম পাওয়া যায় জানেন তো? আপনাকে ধন্যবাদ।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

মেহেরবান নিয়া একটা গান

অমিত আহমেদ এর ছবি

কই কিছু আসে না তো...

উদাস এর ছবি

আমি ডালাস্ এ থাকি। দয়া করে জানাবেন কোথা থেকে গন্দম পাওয়া যাবে। যতদুর পড়েছি, বেশ ভালো লেগেছে। অনেক বড় লেখকের লেখাও পড়তে কষ্ট হয় গতির কারনে। হুমায়ুন আহমেদ বা শীর্ষেন্দুর লেখা পড়ে যতটা আরাম হয়, অনেক বড় লেখকের লেখা পড়ে ততো আরাম হয়না গল্প বলার ধরনের কারনে। আপনার মাঝে সেই গতিময় গল্প বলার ক্ষমতাটা আছে। বাংলাদেশে সবসময় উপন্যাসের চাহিদা বেশী কিন্তু আমি সবসময় বিশ্বাস করি গদ্যের আসল রস ছোটগল্পে। আপনার গন্দম ভালো লেগেছে, তবে এই ছোটগল্পটি আরো অনেক ভালো লেগেছে। অনেক ধন্যবাদ।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি
অমিত আহমেদ এর ছবি

গানটাতো বেশ!

আরিফ জেবতিক অফলাইন ( যাচাই করে প্রমানিত ) এর ছবি

দূর্দান্ত একটা গল্প ! একশ তে একশ ।

শেখ জলিল এর ছবি

সতেজ, ঝরঝরে গদ্য।

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

অতিথি লেখক এর ছবি

দেড়বছর আগে শেষবার যখন ঢাকায় গেলাম তখন বাসার কাছের নিউমার্কেটে গিয়েছিলাম পালিশের জন্য- ঐযে বলাকার উল্টো দিকের গেইটার কোণাটায়- অনেকদিন পর তিন সপ্তাহের জন্য ঢাকা গেলে যা হয় আরকি- সবকিছুই ভাল লাগে- দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পালিশ করাটা দেখেছিলাম চাচামিয়ার-লেখাটা পড়ে যেন সেই ঘটনাটা অবিকল আবার দেখলাম। ভাল লিখেছেন।

--
কৈলাশ

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

সময়ের অভাবে একটু দেরি করে পড়লাম। ভাল লাগলো।

কনফুসিয়াস এর ছবি

ভালো লাগলো পড়ে। আপনার সেই চেনা জানা টানটান বর্ণনা। ডিটেইলিং চমৎকার লেগেছে। ক্রিকেট খেলার দৃশ্য অথবা জুতা পলিশের জায়গাটা অসাধারণ।
শেষটা অন্যরকম হয়েছে, ঠিক এরকমটা আশা করি নি। আমি কেন যেন আরও একটু গল্প খুঁজছিলাম শেষে এসে।
তবে একদম শেষ লাইনটা, আবারও, চমৎকার!
------------------------- ----------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

অমিত আহমেদ এর ছবি

• উদাস - এখান থেকে পাবেন। কিন্তু শিপিং চার্জটা এত বেশি যে কাউকে অনলাইনে কিনতে বলতে নিজের কাছেই খারাপ লাগে। সব চেয়ে ভাল পন্থা হচ্ছে দেশের কাউকে কিনে পাঠিয়ে দিতে বলা। কিংবা যখন দেশে যাবেন তখন কিনে নেবেন। আর আমার লেখা নিয়ে যা বলেছেন তা পড়ে আপ্লুত হয়ে পড়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না।
• আরিফ জেবতিক - ধন্যবাদ আরিফ ভাই। আপনার মন্তব্য টনিকের মত কাজ করবে।
• শেখ জলিল - ধন্যবাদ জলিল ভাই।
• কৈলাশ - যে আখড়াটার কথা বলেছি সেখানে অনেকক্ষণ বসেছিলাম। জুতাও কালি করিয়েছিলাম। মানুষ পর্যবেক্ষণ আর তাদের স্বভার-অভ্যেস-মানসিকতার মাপ করাটা আমার একটা খেলা। আপনারও মনে হয় পর্যবেক্ষণের অভ্যেসটা আছে। ভালো লেগেছে জেনে প্রীত হলাম।
• ইশতিয়াক রউফ - ধন্যবাদ ব্রাদার।

নজমুল আলবাব এর ছবি

চমৎকার। অসাধারণ বর্ণনা

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

অমিত আহমেদ এর ছবি

• কনফুসিয়াস - ছোটগল্পে আপনার মন্তব্য কি আসলো সেটা দেখার জন্য আমার একটা কৌতুহল থাকে। শেষটা নিয়ে একটু অস্বস্থি থাকতে পারে এটা একদম যে মাথায় আসেনি তা না। সৎ মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ পাওনা আপনার। (আপনার মন্তব্য পড়ে আমার নিজেরই আবার ক্রিকেটের অংশটা পড়ে দেখতে ইচ্ছে হলো :) )
• নজমুল আলবাব - ধন্যবাদ অপু ভাই।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- গন্দম বই আকারে পড়বো, এখনো পড়া হয়নি তাই!
পালিশ'র ক্ষেত্রে এতোটা ধৈর্য্যের পরীক্ষায় যাওয়া পোষাবে না। আগেভাগেই পড়ে ফেলা উত্তম মনে করলাম। :)
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

অমিত আহমেদ এর ছবি

• অলৌকিক হাসান - ধন্যবাদ :)
• ধুসর গোধূলি - কেমন লাগলো সেটা তো ঠিক ঠিক এড়িয়ে গেলেন :(



এ ধরণের প্লটে প্রথম কোনো গল্প লিখলাম। যেখানে গল্পীয় চমকের চেয়ে আমাদের চালশা পড়া চোখে দেখা কোনো পেশাজীবির দৈনন্দিন জীবনের একটা অংশই প্রাধান্য পেয়েছে। গল্পটা প্রকাশ করা/না করা নিয়ে একটা দ্বিধায় ছিলাম। পাঠকদের ভালো লেগেছে জেনে প্রচন্ড ভাবে উৎসাহিত হয়েছি... এমন আরো একটি গল্প লেখার আগ্রহ জাগছে।

মন্তব্যের জন্য সবাইকে অনেক ধন্যবাদ। অধম লেখকের জন্য এর বিশেষ দরকার ছিল।

আহমেদুর রশীদ এর ছবি

কমিটমেন্ট আছে। কিন্তু ওইটা ভদ্দরনোকের পোলার পকেটে ঢুকে গেছে। গরীব মুচির জন্য ১ কেজি চালের ব্যবস্থাও হয় নাই। কাজের বিনিময়ে করুণার অবকাস থাকা ঠিক নয়।
চমৎকার নির্মেদ গল্পের জন্য অমিতকে ধন্যবাদ।

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

অমিত আহমেদ এর ছবি

ফোকাসটা কিন্তু আসলে মজুরির উপরে ছিলো না। করুনার তো অবকাশই নেই। ফোকাসটা ছিল বরং বুলেটের দৃষ্টিতে বুড়োর ক্ষণিকের জন্য ছোট হয়ে যাওয়ার বিব্রত ক্ষণটাতে।

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ টুটুল ভাই।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

ভালো পালিশ হয়েছে। অভিনন্দন।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

শামীম হক এর ছবি

শক্তিশালী পর্যবেক্ষণ আর গতিময় বর্ণনা। একটানে পড়ে শেষ করলাম। চমৎকার লাগলো!

আহমেদুর রশীদ এর ছবি

গল্পের ডিমান্ড ছিলো -ফোকাসটা মজুরির উপর ফেলা।

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

মাহবুবুল হক এর ছবি

আ.র. : হয়তো । একই প্লটে সেটি আরেক গল্প হতে
পারে ।

ফোকাসটা ছিল বরং বুলেটের দৃষ্টিতে বুড়োর ক্ষণিকের জন্য ছোট হয়ে যাওয়ার বিব্রত ক্ষণটাতে।
এইখানে আমার দুইখান কথা আছে- একজন বয়োবৃদ্ধ মুচি নিশ্চয় জীবনে প্রথম এমন ঘটনার মুখোমুখি হয় নি। তার অনুমান ব্যর্থ হলো বলেই বুলেটের কাছে সে ছোটো হয়ে গেল ?এখানেই আহমেদুর রশিদের ডিমান্ড তত্ত্ব খাড়া হয়ে যায়। তারপরও গল্পটিতে লেখকের
সিরিয়াসনেস ফুটে উঠেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মুচির মনস্তত্ব এবং দৃষ্টিকোণ থেকে বর্ণনা অসাধারণ। ধন্যবাদ অমিতকে।

--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।

অমিত আহমেদ এর ছবি

মুহম্মদ জুবায়ের - শ্রদ্ধেয় জুবায়ের ভাই, আমার কোনো গল্পে এটা আপনার প্রথম মন্তব্য। খুব ভালো লাগছে... অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
শামীম হক - আপনার মন্তব্যে উৎসাহিত হলাম।
মাহবুবুল হক - অনুমান ব্যর্থ হওয়া অথবা ন্যায্য মজুরির বেশি পাওয়াতে বুড়ো বিব্রত হয়নি। ব্যাপারটা আমি এই লাইনটিতে বলতে চেয়েছিলাম - ...বরং বুলেটের দিকে তাকিয়ে ওর চোখে কেমন একটা অজানা দৃষ্টি দেখে কুকড়ে যায় মনে মনে। এখানে শিশুমনের ব্যাপারটা মাথায় রাখার চেষ্টা ছিলো। শিশুরা যখন কাউকে নায়কের আসনে বসায় তখন তাঁদের সামান্য ভুলও বুকে বড় বেশি বাজে... স্বপ্নভঙ্গ হয়। সেই স্বপ্নভঙ্গের ব্যাপারটাই বুড়ো দেখে ফেলেছিলো বুলেটের চোখে। আর তাই ক্ষণিকের জন্য নিজেকে ছোট মনে হওয়া। "মজুরির উপরে ফোকাস ফেলা"-এর ব্যাপারে আপনার সাথে আমি একমত। আমি আমার অ্যাঙ্গেল থেকে গল্প বলেছি। অন্য কেউ, সেই একই গল্প, অন্য অ্যাঙ্গেল থেকে অবশ্যই দেখতে পারেন। সব শেষে বলি, আপনার বিশ্লেষণধর্মী মন্তব্যে খুব তৃপ্তি পেয়েছি। এমন মন্তব্য পেলে ভাবনার দুয়ার আপনা খুলে যায়। নিজের লেখাকে নানান দৃষ্টিভঙ্গিতে নেড়ে-চেড়ে দেখা যায়। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।


ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।