প্রবাসের আলো-বাতাস খেয়ে কোনো প্রবাসী বাঙালি যখন বলেন বাংলাদেশে ইসলাম কায়েম করতে হবে তখন আমাকে প্রতিবাদ করতেই হয়। যখন কেউ জানান তাদের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হবে সাইদী রাজাকার তখনও আমাকে কথা বলতে হয়। সমবয়সী কেউ যখন কোনো পাকির বাঙালি নিয়ে করা নোংরা কৌতুকে ঠা-ঠা রবে হাসে তখনও আমার চুপ করে থাকাটা অসম্ভব হয়ে পড়ে। যখন দেখি বাংলাদেশে জৌলুসে বাস করা কোনো ব্যক্তি কানাডাতে উদ্বাস্তু মর্যাদা চেয়ে বসে আছেন তখন বাংলাদেশী আমি ক্ষতবিক্ষত হই। সরকারী ভাতা খেয়ে যখন কেউ গর্ব নিয়ে বলেন তখনও আমার তা হজম করতে কষ্ট হয়। আমার সোনালী চুলের মিনিস্কার্ট পড়া প্রিয় বান্ধবীটিকে নিয়ে নোংরা মস্করাতেও আমি প্রতিবাদি হয়ে উঠি। বাংলাদেশ থেকে ফিরে এসে বাংলাদেশের ধূলো-নোংরা-গন্ধ নিয়ে রসালো আলাপে আমি সরব হতে পারি না। ...এবং এক সময় পিছে ফিরে দেখি আমার আর কোনো বাঙালি বন্ধু নেই! ভাগ্যটাই হয়তো খারাপ ছিলো। কিংবা ভুল সময়ে ভুল সঙ্গ পেয়েছি। কিন্তু প্রবাসী বাঙালি নিয়ে একটি নেতিবাচক ধারণা আমার মনে কেমন যেনো গেঁড়ে বসে থাকে।
ঠিক সেই সময় ‘সচলায়তন’। আমি বুঝতে পারি আমি একা নই। আমার মতো হাজার বাঙালি আছেন যাঁরা বুকে মুক্তিযুদ্ধ ধারণ করেন। মুক্তচিন্তার অভ্যাস করেন। দুর্দান্ত বাংলায় অসাধারণ সব লেখা লেখেন। কেউ বয়সে আমার অনেক বড়, কেউবা ছোট। কিন্তু প্রজ্ঞায় কেউ কারও চেয়ে কম নন। আমার বাঙালিত্ব জেগে ওঠে। বাঙালি হয়ে যে গর্ব আমি বুকে ধারণ করি তা ফুলে ফেঁপে একাকার হয়ে ওঠে। আমি বাংলা-উচ্ছাসে মেতে উঠি।
সচলায়তন আমাকে দিয়েছে বন্ধু। সমমনা, সমসংস্কৃতির ধারক... অনেক বন্ধু। তাঁদের অধিকাংশকেই আমি কখনো চোখে দেখিনি। তাঁদের সাথে আমার অন্তর্জালিক মাধ্যম কিংবা ফোনালাপও নেই। কিন্তু তাই বলে তাঁদের বন্ধু বলতে আমার কখনো বাঁধে না। সচলায়তন আমাকে দিয়েছে বাংলা লেখার স্বাধিকার। অদম্য উচ্ছাসে, অসম্ভব উল্লাসে আমি মেতে উঠি সচলায়তনে বাংলা কিবোর্ড নিয়ে। ইচ্ছে মতো লিখি যা-ইচ্ছে-তাই। সচলায়তন আমাকে করেছে আশান্বিত। আমি ফিরে পেয়েছি আমাদের নতুন প্রজন্মে আত্মবিশ্বাস। ফিরে পেয়েছি আমার ফেলে আসা দম্ভ।
সচলায়তনের জন্মদিনে তাই আমি আপ্লুত হই। আমার মনে হয় না কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের কিংবা কোনো একটি সংগঠনের এক বছর পূর্ণ হলো। আমার মনে হয় এ আনন্দ আমাদের সবার। যতটা আমার, ঠিক ততটাই এর পেছনে যারা আছেন তাদের। যতটা সচল লেখকদের, ঠিক ততটাই প্রতিটি পাঠকের।
সচলায়তন নতুন বলেই সচলায়তন নিয়ে ক্ষোভ আছে। বেদনা আছে। অভিযোগ আছে। অভিমান আছে। ভালোবাসা থেকেই তো ক্ষোভ, বেদনা, অভিযোগ কিংবা অভিমান আসে? তাই এসব সাথে নিয়ে আমাদের চলতে হবে। এসব সাথে নিয়েই আমরা চলবো। ভুল থেকে আমাদের শিখতে হবে। ভুল থেকেই আমরা শিখবো। এবং আপনাদের সবাইকে সাথে নিয়েই সদ্যজাত দুর্বল একটি প্রতিষ্ঠান থেকে আমরা আস্তে আস্তে সুঠাম হয়ে উঠবো।
সচলয়াতনের জন্মদিনে সবাইকে শুভেচ্ছা! সচলায়তনকে ভালোবাসুন আর নাই বাসুন, কিন্তু সচলায়তনের সাথেই থাকুন।
© অমিত আহমেদ
মন্তব্য
নতুন ফিকশন লিখছো,অমিত?
-------------------------------------
বালক জেনেছে কতোটা পথ গেলে ফেরার পথ নেই,
-ছিলো না কোন কালে;
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
কয়েকটা শুরু করছি। এখনো ফাইনাল করতে পারি নাই। আপনে?
ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল
নাহ । নতুন কিছু হবেনা । গতবারের ঐটা এবার করা যায় কিনা-অপেক্ষায় আছি
-------------------------------------
বালক জেনেছে কতোটা পথ গেলে ফেরার পথ নেই,
-ছিলো না কোন কালে;
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
ওইটা এবার পাবোই-পাবো ভেবে বসে আছি আমরা সবাই।
ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল
করতেই হবে।মানুষজন প্রকাশকের সাহস নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
---------------------------------------------------------
আমাকে ডাকে আকাশ, বোঝে মাটি হাওয়া জল
বোঝে না মানুষ আর বিনাশী মুদ্রার ছল
---------------------------------------------------------
ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.
- বেশ স্টাইলিশ লেখা বস। দারুণ
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
উদ্ধৃতি
সচলায়তনকে ভালোবাসুন আর নাই বাসুন, কিন্তু সচলায়তনের সাথেই থাকুন।
অতি উত্তম জাঝা প্রস্তাব! অনুভুতির গভীরে বেদনার পরিমাণ বেশ খানিকটা ব্যাপ্ত!
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
এক্কেবারে আমার মনের কথা। আপনার এই লেখার একটি ছাড়া প্রতিটি শব্দের নীচে স্বাক্ষর করতে প্রস্তুত। শব্দটি হলো "দুর্বল"।
সচলায়তন নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে নিজের সগর্ব অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে। দুর্বল আর সে কোনও হিসেবেই নয়।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
"দুর্বল" শব্দটির সৎকার করা হলো।
ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল
১০০ভাগ একমত, সুন্দর লেখা
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
অনেকাংশেই মনের কথা।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
আর কইতে হইব না
বুঝছি
সচলায়তনের ১০০তম বর্ষপূর্তি নিয়া লেখার বুকিং দিছি আমি
৯৯ নম্বরটার বুকিং আপনি দেন
(এই দুই বর্ষপূর্তি নিয়া লেখার সাহস আর কারো দেখি না সচলায়তনে)
আমার আগে আপনি মরবেন তো। তাই আপনেরে আগেই চান্স দিয়া দিলাম
(একটা ধন্যবাদ দিয়েন)
আচ্ছা যান ঠিকাছে।
দিলাম।
ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল
সচলায়তনের সাথে থাকলে এমনিতেই ভালবাসতে হয়।
সুন্দর লেখা।
৯৯ নম্বরের একটা হার্ডকপি আর একটা সফট কপি সাথে নিয়ে যেয়েন,আমরাও এট্টু দেখবোনি।
---------------------------------------------------------
আমাকে ডাকে আকাশ, বোঝে মাটি হাওয়া জল
বোঝে না মানুষ আর বিনাশী মুদ্রার ছল
---------------------------------------------------------
ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.
খুব ভাল পর্যবেক্ষণ।
অস্ট্রেলিয়াতে এক মুফতি আর "ইসলামিক ফ্রেন্ডশিপ ফেডারেশনের" সভাপতি বহুবিবাহ বৈধ করার দাবী তুলেছে।
সচলায়তনের আয়তন বৃদ্ধি পাক। আরো জমুক লেখালেখির আসর। চমত্কার লেখাটি।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
ধুসর গোধূলি, জুলিয়ান সিদ্দিকী, মুশফিকা মুমু, এস এম মাহবুব মুর্শেদ, কনফুসিয়াস, অনিন্দিতা, আহমেদুর রশীদ, আলমগীর, জাহিদ হোসেন ও অন্যান্য যাঁরা লেখাটি পড়েছেন তাঁদের সবাইকে শুভেচ্ছা... ধন্যবাদ।
ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল
সচলয়াতনের জন্মদিনে সবাইকে শুভেচ্ছা! সচলায়তনকে ভালোবাসুন আর নাই বাসুন, কিন্তু সচলায়তনের সাথেই থাকুন।
...এ যেন আমারই কথা। আর কাম্যও সবসময়।
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
অমিত ভাই ব্যপার কি, আফনে তো ফাটাফাটি লেখেন, নাঃ আর কমেন্ট করা ঠিক হইবো না,
তবে সত্যি কথা বলতে কি আপনার লেখা হ্রদয় ছুয়ে যায় । আপনাকে অনেক ধন্যবাদ
শেখ জলিল: ধন্যবাদ জলিল ভাই।
...
দেবত্তম: ভাইরে আপনার মন্তব্যও আমার হৃদয় ছুঁয়ে গেলো। ধন্যবাদ!
ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল
নতুন মন্তব্য করুন