আমাদের আর ওদের মাঝে একটি কাঁচের দেয়াল থাকে। আমরা যদি এপাশে থাকি তবে ওরা - যাদেরকে আমরা ক্ষমতা দিয়েছি, বৈভব দিয়েছি, আমাদের রক্ষাকর্তা বানিয়েছি, কিংবা আমরা বানাইনি ওরা নিজেরাই নিজের জোরে হয়ে বসেছে - থাকে ওপাশে। দেয়াল ভেদ করে আমাদের কন্ঠ খুব কমই অন্যপাশে যায়। আর সেই নৈশব্দ ভর করে তেঁড়েফুঁড়ে বাড়তে থাকে ওপাশের ক্ষমতা-বৈভবের ক্ষুধা। অপ্রতিরোধ্য হতে থাকে আবদার-জেদের পূরণেচ্ছা।
অবস্থা যখন ‘খুব’ খারাপ হয় তখন আমরা প্রতিবাদ করি। যখন প্রতিবাদে কাজ হয় না - আমরা চিৎকার করি। যখন চিৎকারেও কাজ হয় না - আমরা দেয়ালে আঘাত করি। ওরা তখন তাকিয়ে দেখে। যাচাই করার চেষ্টা করে দেয়ালের গাঁথুনি। এই দেয়ালে ওদের প্রচন্ড মোহ। একে ভর করেই ওদের যতো প্রগতি আর যতো শীর্ষানুভূতি। এপাশে গাঁথুনি আলগা করার মতো পর্যাপ্ত শক্তি না থাকলে ওপাশ পাত্তা দেবার প্রয়োজন বোধ করে না। বরং নিজেরা টুক-টাক আলাপ করে। চা-বিস্কুট খায়। একে অন্যের অন্যায় আবদার শোনে। বেনোয়েট সামলায়। পিঠ চুলকায়। তেল চাপড়ায়। দাড়ি আঁচড়ায়। ধর্ম বেচে। দেশ লোটে। আর পুরাণো স্মৃতি মনে করে খেক খেক করে হাসে।
আমি শুনেছি একটি সময় ছিলো যখন কিছু ইস্যুতে আমরা সবাই একসাথে ঝাঁপিয়ে পড়তাম। কোনো দ্বিমত হতো না। চোখ রাঁঙানির পরোয়া হতো না। কাঁচের দেয়াল নড়বড়িয়ে উঠতো। ওপাশে হায়-হায় রব উঠতো। আমরা তখন জানতাম কিভাবে দেয়াল নাড়িয়ে দিতে হয়। জানতাম কিভাবে নষ্ট সব চুরমার করে নতুন স্থাপত্য গড়া যায়।
সেই জানায় হয়তো ভুল ছিলো। কিংবা হয়তো সময়টাই অনেক বদলে গেছে। আমি এপাশে ছোট-ছোট অনেক দল দেখি যাদের হুল্লোড় হঠাৎ জেগে উঠেই আবার বাতাসে কর্পূরের মত উবে যায়। আমার নিজেকেও এমন কোনো দলের একজন বলে মনে হয়। যেখানে দাঁড়িয়ে আমিও চিৎকার করি, প্রতিবাদ করি, হামলা করি। কিন্তু তার কোনোটাই ওপাশে বিন্দুমাত্র, আবার বলি, বিন্দুমাত্র স্পন্দন ধরায় না। তার আগেই আমাদের চিৎকার স্তিমিত হয়ে আসে, কিংবা স্তিমিত করে দেয়া হয়।
অনেক দেখেছি। আর দেখেছি বলেই ইদানিং আমার নিজেকে উটপাখি মনে হয়। যেই উটপাখি বালুর বুকে মুখ লুকিয়ে ভাবে কেউ তাকে দেখতে পাচ্ছে না। কিংবা হাস্যকর ভাবে নিক্কো তোশো-গু এর সেই তিন শাখামৃগের মতো। যারা কোনো অশুভ জিনিস না দেখা-শোনা-বলার শপথ নিয়েছে।
আমার নিজেকে মনে হয় স্বনির্মিত একটি দ্বীপে স্বেচ্ছাবন্দি। যেই দ্বীপে কোনো কলুষতা প্রবেশ করে না। যা কিছু অপছন্দের, যা কিছু অসহ্য সে সব কিছু মহাসাগর পাড়ি দিয়ে আমার দ্বীপে এসে পৌঁছতে পারে না। মাঝ পথেই তাপে-শোকে-ক্ষুধায়-তৃষ্ণায় মৃত্যুবরণ করে। আর যদি পৌঁছেও যায় তবে তা এতটাই রুগ্ন যে আমার মনোযোগের অধিকার রাখে না।
তাই কার্টুনিস্ট আরিফ গ্রেফতার হবার সাথে সাথে আমি প্রতিক্রিয়া দিতে পারি না। সম্পাদক মতিউর রহমানের ক্ষমা চাওয়া নিয়েও আমি সরব হই দেরিতে। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক গ্রেফতার-অত্যাচারের ক্ষোভ বুকেই গুমড়ে গুমড়ে মরে যায়। শ'য়ে-হাজারে ছাত্র গ্রেফতার নিয়ে কয়েকবার লিখতে গিয়েও লেখা আর শেষ হয়ে ওঠে না। বায়তুল মুকাররমের মিছিল-মিটিং-হুমকি সরকার মিষ্টিমুখে মেনে নিলেও আমার মুখ তেতো হয়ে যায়। বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আবদার আমাকে শিউরে দেয়। মুক্তিযোদ্ধাকে স্পর্শ করার স্পর্ধা দেখে আমার রক্তে আগুন জ্বলে ওঠে।
আমি আমার দ্বীপের বালুকাবেলায় এসব যন্ত্রনা নিয়েই হেঁটে বেড়াই। ঠান্ডা সাগরের জলে শরীর ভেজাই। স্নিগ্ধ গাছের ছায়ায় বসে শান্ত হবার চেষ্টা করি। যেই দ্বীপে আমার একমাত্র সঙ্গী ‘সচলায়তন'। ‘সচলায়তন' থেকেছে আমার পাশে পাশে। আমি যা কিছু বলতে পারিনি। বলার ভাষা খুঁজে পাইনি। যেসব কিছু সহ্য করে সরব হয়ে উঠতে পারিনি। তার সবই আমার হয়ে বলে সচলেরা। তাঁদের সাথে গলা মিলিয়ে আমার মনে হয়েছে আমারও তো বলা হলো!
তাই যখন ‘সচলায়তন' আক্রান্ত হয়েছে বলে সন্দেহ হয় তখন সেই আঘাত আমার শরীরেই লাগে। ওদের ওপর রাগ হয়, প্রচন্ড রাগ! সারাদিন নিষ্ফল কাটে। সারারাত কাটে নির্ঘুম। ফোন, ইমেইল, মেসেঞ্জারে অনেকের সাথে আমিও সরব হয়ে উঠি। সত্যি/মিথ্যে যাচাই না করেই আমি কৃতজ্ঞ হই। কারণ কেবল আক্রান্ত হবার সম্ভাবনাই আমাকে দেখিয়ে দিয়েছে দ্বীপ-নির্বাসন এইসবের কোনো মানে নেই! কোনো অস্তিত্ব নেই। কেবলই মোহ।
আমরা বাঙালিরা যখন একসাথে ছিলাম তখন তো শোক-তাপ-দুঃখ-কষ্ট মিলিয়ে ভালোই ছিলাম! কোনো পরাশক্তি আমাদের সামনে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। আমরাই দাঁড়াতে দেইনি। নিজেদের অধিকার, নিজেদের স্বাধীনতা তো আমরা নিজেরাই আদায় করে নিয়েছিলাম। তবে কেন আজ এই বিচ্ছিন্নতা? কেনো আমরা শপথ নিতে পারি না - মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সম্বল করে আমরা আবার একসাথে পথ চলবো! কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমৃত্যু একসাথেই বাংলাদেশের জন্য লড়বো?
বাংলাদেশকে, আমাদের প্রিয়তম বাংলাদেশকে সোনার বাংলা করেই ছাড়বো!
© অমিত আহমেদ
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ প্রতিজ্ঞা মেনে বাসায় এসে লেখাটি পরিবর্ধন ও পরিমার্জন করা হলো।
মন্তব্য
এখন বলে এ্যাকসেস পাওয়া যাচ্ছে ঢাকা থেকে ?
তাই নাকি? কখন থেকে?
একটু আগেও যে শুনলাম পাওয়া যাচ্ছে না?
ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
আমারব্লগে তো দেখলাম ভাস্কর ভাই পোস্ট দিল স্কৃনশট সহ !!
আমিও এই মাত্র দেখলাম ভাস্কর'দার পোস্ট। আর কেউ কনফার্ম করতে পারলে নিশ্চিত হওয়া যেতো। সমস্যা হচ্ছে দেশে এখন রাত্তির সাড়ে চারটা।
ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
আবার নিচের পোস্টে একজন মন্তব্য করল যে ভিস্যাটের ব্যাকআপে চলার কারণে সচল এখন এ্যাকসেস পাচ্ছে
লিংক
ঠিক তাই। বিটিটিবির সার্ভার ডাউন। সাবমেরিন ক্যবল নাকি কাটা পড়েছে। আমার ডট বিডি ডোমেইন সবগুলা ডাউন যা কনফার্ম করে বিটিটিবির নেমসার্ভার ডাউন। তাউ ভিস্যাটের জন্য সচলে যাওয়া যাচ্ছে। সাবমেরিন ক্যবল ঠিক হলে আবারো বন্ধ হয়ে যাবে সচল।
- দ্যান, উগরে দ্যান সব ক্ষোভ!
তাতেই যদি রামের সুমতি হয়!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আহ ঈশ্বর, আমাদের ক্ষোভ কি তোমাকে স্পর্শ করে?
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
কবে যে নিশ্চিত উত্তরটা জানা যাবে!
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
হ, অস্ট্রিচ অ্যালগরিদমই বেস্ট।
কিছু হয় নাই, সব বানোয়াট। নিজের পিঠে যতক্ষণ কিল এসে না পড়ে, ততোক্ষণ কিছুই হয় নাই।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
এই লেখার মেইন পয়েন্ট।
ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
আমি আমার ব্যক্তিগত কিছু মতামত এখানে জানাতে চাই। আমি সোজা বাংলায় যা বলতে চাই তা হলো - ব্লগ পরিমন্ডলের বিভাজন আমার ভাল্লাগছে না। এ বিষয়ে আমি আরেকটি পোস্ট দিয়েছি।
এভাবে নিজেরা দোষারোপ করে চল্লে কিচ্ছু হবে না। সচলায়তনের সবার উচিত হবে অন্য যে কোনো ব্লগের যে কেউ যা বলেন, বলতে চান, বা করতে চান - তাতে মনোযোগ দেয়া। গুরুত্ব দেয়া। আমরা ওদের কথা শুনবো না বলবো ওরা ওই করে। ওরা আমাদের কথা শুনবে না বলবে আমরা এই করি - এ তো কোনো সমাধান নয়।
আমি অনুরোধ করবো প্লীজ আপনারা সবার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকুন। অন্যকে শ্রদ্ধা করলে নিজের দামই বাড়ে, কমে না একবিন্দু।
ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
...
নতুন মন্তব্য করুন