সাইফাই গল্প: লেখকের চোখ [পূর্ণাঙ্গ]

অমিত আহমেদ এর ছবি
লিখেছেন অমিত আহমেদ (তারিখ: মঙ্গল, ২৭/০১/২০০৯ - ৭:১২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

autoএক

"স্যার আপনার সাথে দেখা করতে একজন ভদ্রলোক এসেছেন।"

সামন্ত স্যান্যাল খুবই বিরক্ত হলেন। দুপুরের খাবারের পর তিনি একঘন্টা বারান্দায় বসে চা পান করেন। এই সময়টুকু তার বিশ্রামের। পাপানকে বার বার করে নিষেধ করে দেয়া হয়েছে এ সময়ে তাকে বিরক্ত না করতে। তবুও সে সুযোগ পেলেই এসে বাগড়া দেবে।

সামন্ত স্যানাল একটা কমদামী বহুতল অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের চুরাশি তলায় এক-ইউনিট নিয়ে থাকেন। ছোট্ট ইউনিটে একটা মোটে বারান্দা। তাও সেখানে বসে দেখার মতো কিছু নেই। ভবনের আশে-পাশেও একই ধাঁচের অসংখ্য দালান। মন্দের ভালো যা তা হলো তার দালানটা প্রধান সড়ক থেকে বেশ দূরে। তাই বারান্দার দিক দিয়ে কোনো গাড়ি ওড়ে না। মাঝে মাঝে বাচ্চা কিছু ছেলে-মেয়ে কমশক্তির বায়োযান[দ্রষ্টব্য] নিয়ে উড়োউড়ি করে। সেটা দেখতে ভালোই লাগে। ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে যায়। এছাড়া তার ঠিক মুখোমুখি বাসার জানালায় কোনো অজানা ফুলগাছের টব লাগানো। সেই গাছের ফুল ক’দিন পর পর রঙ বদলায়। আসল গাছ নাকি সিনথেটিক তা মাঝে মাঝেই জানতে ইচ্ছে করে। পাপানকে জিজ্ঞেস করলেই নিশ্চিত ভাবে জানা যায়। কিন্তু জিজ্ঞেস করতেও কেনো জানি ইচ্ছে করে না।

"পাপান তোমাকে না বলেছি আমাকে এই সময়ে বিরক্ত করবে না। বলি নাই?"
"যিনি দেখা করতে এসেছেন তিনি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।"
সামন্ত স্যানাল বিরক্তিতে ভ্রু কুঁচকে ফেলেন, "তোমাকে আমি কী জিজ্ঞেস করলাম? আমি দেখেছি ইদানিং তুমি আমার কথার সরাসরি উত্তর দাও না। ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে অন্য দিকে নিয়ে যাও। যে এসেছে সে দেখা করার আগে অনুমতি নিয়েছিলো?"
"জ্বী না।"
"অনুমতি না নিয়ে বেকুবের মতো দেখা করতে এসেছে কেনো? নাকি তার ধারণা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বলে তার অনুমতির প্রয়োজন নেই? নাকি?"

পাপান কোনো উত্তর দেয় না। ও খেয়াল করে দেখেছে রাগ হলে সামন্ত স্যানাল অহেতুক প্রশ্ন করেন। সেসব প্রশ্নের জবাব তিনি আশা করেন না। বরং জবাব দিলেই তার রাগ আরো বেড়ে যায়।
"কী? জবাব দিচ্ছো না কেনো?"
"স্যার আপনি ভালো করেই জানেন এই প্রশ্নের উত্তর জানার উপায় আমার নেই। জানতে হলে অন্য রুমে গিয়ে মহামান্য জিরকন পিথ্রিকে জিজ্ঞেস করে জেনে আসতে হবে। রাগ হলেই আপনি অহেতুক প্রশ্ন করেন। এসব প্রশ্নের উত্তর দেবার চেষ্টা করা মানেও সময় নষ্ট।"

সামন্ত স্যানালের ইচ্ছে করে এই বেহায়া রোবটকে ঘুরিয়ে একটা চড় দেন। নেহাতই নিরিহ প্রকৃতির মানুষ বলে ইচ্ছের বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না।

"আপনার কি আমার উপর রাগ হচ্ছে? রাগ হলেই আপনি আপন মনে বিড়বিড় করেন। এটা ইদানিং কালে শুরু হয়েছে।"
"পাপান আমার অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয়। ভালো হলে তোমার পাছায় একটা লাথি দিয়ে বের করে দিতাম। নতুন মডেলের কোনো সহকারী রোবট নিতাম।"
"দৈহিক গঠনে মানুষের সাথে আমার বিশেষ পার্থক্য আছে। পাছা বলতে আমার দেহের ঠিক কোন জায়গাটা আপনি নির্দেশ করছেন?"

সামন্ত স্যানাল চোখ বন্ধ করে দশ থেকে এক পর্যন্ত গুনতে থাকলেন। রাগ কমাতে তার ডাক্তার এই পরামর্শ দিয়েছে। ডাক্তার মেয়েটা গর্দভ হলেও এই পন্থাটা ভালো। দশ থেকে এক পর্যন্ত গোনার পর রাগ আসলেই কমে যায়। গোনা শেষ হবার আগেই সামন্ত পাপানের ধাতব ট্র্যাকের ঘড়ঘড়ে আওয়াজ শুনতে পান। তার মানে পাপান চলে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। সামন্ত চোখ না খুলেই তিনি নির্লিপ্ত গলায় জিজ্ঞেস করেন, "জিরার কণা কে এসেছে বললে?"
"জিরার কণা নয়। জিরকন।" পাপান ওর ভাঙাচুরো বাম হাত তুলে ঘোষণা দেবার মতো করে নাটকীয় ভাবে বলে, "মহামান্য জিরকন পিথ্রি।"
"নাম তো বেশ পরিচিত মনে হচ্ছে! আমি চিনি?"
"স্যার আপনি অবশ্যই ওঁকে চেনেন। গত বছর তিনি রোবোফিকশন অ্যাওয়ার্ড[দ্রষ্টব্য] জিতেছেন। আপনার গত জন্মদিনে আমি তার "ধাতব চোরাবালি" উপন্যাসটা উপহার দিয়েছিলাম।"
"লেখক?", হা হয়ে যান সামন্ত স্যানাল, "রোবট লেখক জিরকন?"
"জ্বী!"
"ওই গর্দভ আমার সাথে দেখা করতে এসেছে কেনো?"

সামন্ত স্যানালের সম্বোধনে পাপান স্পষ্টই আহত হয়। ওর রেডিয়াম চোখে ঔজ্জ্বল্য কমে যায়। গলার স্বর নেমে যায়। পাপান বলে, "স্যার, সম্মানিত একজন ব্যক্তিকে আপনার "গাধা" বলে ডাকা ঠিক হয়নি। উনি গতবছর তার প্রথম উপন্যাসেই রোবোফকশন অ্যাওয়ার্ড জিতে নিয়েছেন। উনার দু’টো গল্পগ্রন্থ। দু’টোই থার্ড সোলারসিস্টেম[দ্রষ্টব্য] বেস্ট সেলার।"

পাপানকে বাগে পেয়ে প্রসন্ন ভাবে হাসেন সামন্ত স্যানাল। বলেন, "গর্দভকে আমি গর্দভই বলি। "ধাতব চোরাবালি" উপন্যাসের কাহিনী আমার মনে আছে। রোবট মেয়ের সাথে মধ্যবয়স্ক পুরুষ স্কুল টিচারের প্রেম। হাস্যকর!"
"উপন্যাসটির শেষ অংশ খুব হৃদয়বিদারক। আপনার হাস্যকর মনে হয়েছে জেনে দুঃখিত হলাম।"
"এক মেয়ে রোবট মা হতে চায়। এই না পাওয়ার বেদনায় সে তার প্রেমের স্মৃতি মস্তিষ্ক মুছে দিচ্ছে। এই ব্যাপারটা তোমার কাছে হৃদয়বিদারক মনে হতে পারে। আমার কাছে মনে হয়েছে হাস্যকর।"
"স্যার আমি কি উনাকে আসতে বলবো?" পাপান আহত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে।
"বলো", সামন্ত স্যানাল উদাত্ত কন্ঠে অনুমতি দিয়ে দেন।

দুই

জিরকন পিথ্রি, যে রোবট লেখক জিরকন নামেই অধিক পরিচিত, সামন্ত স্যান্যালের বসার ঘরে বসে বুঝতে পারে কোনো সমস্যা হয়েছে। স্যান্যালের সহকারী রোবট অনেক আগেই "পাঁচ মিনিট" বলে ভেতরে ঢুকেছে এখন পর্যন্ত আসার কোনো লক্ষণ নেই। জিরকন অস্বস্থি নিয়ে অন্তস্থ ক্রোনোমিটার[দ্রষ্টব্য] পরীক্ষা করেন। ঘড়ি বলছে মোটে পনেরো মিনিট গেছে অথচ মনে হচ্ছে অনেকক্ষণ চলে গেছে!

জিরকনের পৃথিবীতে আসা হয়েছে হুট করে। কোনো পরিকলনা ছাড়াই। তাই দেখা করার আগে নিয়ম মেনে সামন্ত স্যান্যালের অনুমতি নেয়া হয়নি। সমস্যা কি এই নিয়েই হচ্ছে? তাহলে কি দেখা হবে না? দেখা না হলে একটা আফসোস থেকে যাবে। পরে আবার কবে-কখন পৃথিবীতে আসা হবে তার কোনো ঠিক নেই। জিরকন ব্যক্তিগত ভাবে সামন্ত স্যান্যালের ভক্ত। অনেকেই বলে তার লেখাতে সামন্ত স্যান্যালের প্রভাব আছে। হতেও পারে! স্যান্যালের প্রতিটি লেখাই সে একাধিক বার পড়েছে। জিরকনের মতে সমসাময়ীক আর কোনো লেখক লেখায় এতো বিস্তারিত বর্ণনা দিতে পারেন না। ভদ্রলোকের কাছ থেকে নতুন লেখকদের অনেক কিছু শেখার আছে।

আরেকটা সমস্যাও আছে। পৃথিবীতে আসার আগেই জিরকন পাকামো করে তার বন্ধুদেরকে বলে এসেছে - সে লেখক সামন্ত স্যান্যালের সাথে ব্যক্তিগত ভাবে দেখা করে আসবে। এখন সামন্ত স্যান্যাল যদি দেখা না করে বসার কামরা থেকেই ফিরিয়ে দেন তাহলে লজ্জার একশেষ হবে। গ্যানিমেডে[দ্রষ্টব্য] ওর আড্ডাখানা, ট্রান্সফিউশন ক্যাফেতে[দ্রষ্টব্য] ঠাট্টার তোড়ে ক’দিন মুখই দেখানো যাবে না। গুরুর দেখা পাবার চেয়ে এখন এই ব্যাপারটাই জিরকনকে বেশি ভাবিয়ে তোলে। কম সময়ে-বয়সে জনপ্রিয় হয়ে যাওয়ায় অনেকেই ওকে ঈর্ষার চোখে দেখে। এর মাঝে এমন মুখরোচক খবর পেলে সেটা নিমিষে সবখানে ছড়িয়ে যাবে। দুঃশ্চিন্তায় জিরকনের হঠাৎ করেই তেষ্টা পায়।

"মহামান্য জিরকন!"
জিরকন চমকে ফিরে তাকায়, প্রো-টিল্ডা-পালসার[দ্রষ্টব্য] প্রজাতির রোবটটা কখন যেনো ফিরে এসেছে।

"লেখক কী বললেন? উনি কি দেখা করবেন?" জিরকন উৎকন্ঠা নিয়ে জিজ্ঞেস করে।
"আপনি অনুমতি না নিয়ে এসেছেন দেখে স্যার খুব রাগ করেছেন! তবে তিনি দেখা করবেন বলে সম্মত হয়েছেন।"
জিরকনের বুক থেকে মস্ত ভার নেমে যায়, "ধন্যবাদ!"
"আমার সাথে আসুন। মহামান্য সামন্ত স্যান্যাল বারান্দায় বিশ্রাম করছেন।"

জিরকন ইতস্তত করছে দেখে পাপান ঘুরে দাঁড়ায়, "কোনো সমস্যা?"
জিরকন অস্বস্থি নিয়ে বাদামী চুলে আঙ্গুল চালায়, "আপনি যদি কিছু মনে না করেন, একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন..."

পাপান হাসির মতো একটা শব্দ করে, "আমার দৈহিক মডেল[দ্রষ্টব্য] নিয়ে তো?"
"জ্বী," জিরকন বলে, "পজিট্রনিক মস্তিস্ক-সম্পন্ন[দ্রষ্টব্য] প্রতিটি রোবটের মানবীয়-দেহ অধিকার অথচ..."
"আপনি জানতে চাইছেন আমাকে এই দেহ ধারণে মহামান্য সামন্ত স্যান্যাল বাধ্য করেছেন কিনা, তাই তো?"

জিরকন পাপানের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।

"আপনি ভুল ভাবছেন। এটা আমার ব্যক্তিগত পছন্দের ব্যাপার। স্যারের কোনো হাত নেই। মানবীয়-দেহ ধারণের ইচ্ছে আমার কখনোই হয়নি।"
"কিন্তু...", জিরকন যুক্তি দেবা চেষ্টা করে, "আপনি লেখক সামন্ত স্যান্যালকে "মহামান্য" বলে সম্বোধন করছেন? রোবোঅ্যাক্ট[দ্রষ্টব্য] ২.১.২ অনুসারে..."

জিরকনের জিজ্ঞাসাবাদে পাপান এবার দৃশ্যতই বিরক্ত হয়, কথা শেষ করতে না দিয়েই বলে ওঠে, "আমি আপনাকেও "মহামান্য" বলে সম্বোধণ করেছি... সেটা কিন্তু আপনার কানে লাগেনি!"

জিরকন খুব বিব্রত হতে পড়ে। পাপান যে তাকেও "মহামান্য" বলে সম্বোধন করছে সেটা সে আসলেই খেয়াল করেনি।
জিরকনকে চুপ দেখে পাপান আবার বলে, "আমি জানি না আপনি ব্যক্তিগত ভাবে কী চেতনা ধারণ করেন। তবে আমার স্বল্প-বুদ্ধি আমাকে বলে গুনী ব্যক্তিকে সম্মান করতে হয়। তা সে মানুষ হোক কিংবা রোবট।"

পাপান হয়তো আরো কিছু বলতো কিন্তু বিব্রত জিরকনকে বাঁচাতেই যেনো দরজা ঠেলে সামন্ত স্যানাল বসার ঘরে ঢুকে পড়েন। ভারী গলায় বলেন, "পাপান, আমরা এখানেই বসি। তুমি বরং লেখকের আপ্যায়নের কিছু ব্যবস্থা করো।"

তিন

সামন্ত স্যানাল কৌতুহল নিয়ে রোবট লেখক জিরকন পিথ্রিকে দেখেন। বাদামী চামড়ার ছ'ফুট লম্বা সুদর্শন যুবক। দামী স্যুট পরে আছে।

কে বলবে এই ছেলেটা মানুষ নয়?

গত পঞ্চাশ বছরে ওদের চেহারার কী অভাবনীয় পরিবর্তনই না হয়েছে! স্যান্যালের মনে আছে, চল্লিশ বছর আগে যখন তিনি পাপানকে কেনেন, তখনো রোবটদের চেহারা পুরোপুরি মানুষের মতো হয়নি। সেটা রোবো-আন্দোলনের আগের কথা। পজিট্রনিক মস্তিষ্ক-সম্পন্ন রোবট তখনো বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। রোবো-আন্দোলনের পরে সব বদলে গেলো। পজিট্রনিক রোবটদের স্বাধীন ঘোষণা করা হলো। পাপান তখনই চলে যেতে পারতো। কিন্তু কোনো অজানা কারণে সে স্যান্যালের সাথেই থেকে গেলো। নিজের দৈহিক মডেলও পরিবর্তন করলো না।

এখন রাস্তায় দেখলে বোঝার উপায় নেই কে রোবট আর কে মানুষ। অবশ্য বোঝার যে খুব প্রয়োজন আছে তাও না। গত দশ বছর থেকে সৌরজগতের সব গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় রোবট ঢুকে পড়েছে। রাজনীতি, আইন, বিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান থেকে শুরু করে সমাজসেবা পর্যন্ত। অধিকাংশ গ্রহেই রোবট-মানুষ বিয়ে বৈধ হয়ে গেছে। কেবল একটা, একটা জায়গায় ওরা মার খেয়ে গেলো! এতোদিনেও শিল্প-সাহিত্যের প্রধান ধারায় কোনো রোবট উল্লেখযোগ্য কিছু করে দেখাতে পারেনি।

"স্যার অনুমতি না নিয়ে দেখা করতে এসেছি বলে আমি দুঃখিত। এর পরেও যে আপনি আমার সাথে দেখা করতে সম্মত হয়েছেন এজন্য আমি গর্বিত বোধ করছি।"
"খুব বড় ভুল করেছো..." সামন্ত স্যান্যাল খ্যাঁক করে ওঠেন, "দেখা করার কোনো ইচ্ছেই আমার ছিলো না। কেবল পাপান জোরাজুরি করলো দেখে!"
জিরকন একটু হতভম্ব হয়ে গেলেও তাল সামলে বলে, "স্যার আপনি হয়তো আমাকে চেনেন না তবে আমি আপনার ভক্ত। আমার নাম জিরকন পিথ্রি। টুক-টাক লেখালেখি করি।"
"তোমার লেখা আমি পড়েছি। আমার সহকারী পাপান আবার তোমার খুব বড় ভক্ত। সে-ই আমাকে তোমার "ধাতব চোরাবালি" বইটা উপহার দিয়েছিলো।"

মানুষ লেখকেরা সাধারণত রোবট লেখকদের বই পড়তে চান না। পড়লেও স্বীকার করতে চান না। রোবট সাহিত্যকর্মকে নানান ভাবে হেয় করার একটা চেষ্টা তাদের মধ্যে সব সময় থাকে। সামন্ত স্যান্যাল তেমন বড় লেখক না হলেও লেখক সমাজে তার একগুঁয়েমি, জেদ আর প্রগল্ভতার জন্য পরিচিত। তিনি জিরকনের লেখা পড়েছেন মানে একটা বিশাল ব্যাপার! জিরকন স্বাভাবিক ভাবেই খুব উত্তেজিত হয়ে পড়ে।
"বলেন কী স্যার! আপনার কাছে বইটা কেমন লেগেছে?"
"জঘন্য লেগেছে! খুব সস্তা উপন্যাস।"
জিরকন একদম চুপসে যায়। সামন্ত স্যান্যাল ওর উপন্যাসকে এক কথায় "দুর্দান্ত" বলে ফেলবেন এমন দুরাশা ওর মনে ছিলো না; তবে ভদ্রতা করেও তো "মন্দ হয়নি" ধরণের কিছু একটা বলা যেতো! ও খুব হতাশ গলায় বলে, "একদমই ভালো লাগেনি?"
"না। একদমই না।"

জিরকনের নিভে যাওয়া মুখ দেখেই হয়তো স্যান্যালের একটু মায়া হয়। তিনি বলেন, "শোনো ব্যাপারটা কী, তোমাদের রোবট লেখকদের প্রধান সমস্যা কি জানো?"
"কী?"
"প্রধান সমস্যা হচ্ছে তোমরা যে রোবট লেখক সেটা তোমরা জোর করে উপেক্ষা করার চেষ্টা করো। বুঝলে কি বললাম?"
"জ্বী না স্যার।"
"আচ্ছা। রোবটেরা লেখালেখি করে কতোদিন থেকে?"
"পজিট্রনিক মস্তিষ্কের প্রথম প্রজন্ম থেকে।"
"তার মানে চল্লিশ-পঞ্চাশ বছর। আর মানুষ কতোদিন থেকে লেখে? সঠিক কোনো হিসেব আছে?"
"জ্বী না স্যার!"
"এখন তোমরা যদি প্রথম থেকেই মানব-দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মানবিক-সমস্যা নিয়ে লেখার চেষ্টা করো তাহলে ব্যাপারটা কেমন হয়ে যায় না? আমার ব্যক্তিগিত ভাবে মনে হয় তোমাদের লেখা উচিত রোবট-দৃষ্টিভঙ্গি থেকে মানবিক ব্যাপার কিংবা পুরোদমে রোবটিক সুখ-দুঃখের কাহিনী।"
"জ্বী..."
"তুমি তোমার উপন্যাসে বারে বারে মানব শিক্ষকের বোধ প্রকাশ করার চেষ্টা করেছো। মানবিক অনুভূতি... খুব বেশি মানবিক অনুভূতি। তোমার কলমে সেগুলোকে মনে হয়েছে মনোবিজ্ঞানের তত্ত্বকথা। অথচ মানুষ শিক্ষককে ফোকাসের বাইরে রেখে তুমি যদি রোবট মেয়েটার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে গল্প বলতে, তাহলে দারুন একটা ব্যাপার হতো।"
"ও!"
"আর গল্প চলনসই হলেও তোমার বর্ণনা করার হাত নেই। একটু পর পর অক্যুলাইজার, একটু পর পর অক্যুলাইজার[দ্রষ্টব্য]... খুবই বিরক্তিকর!"
"ও!"
"আর এই "ধাতব চোরাবালি" নামটা কেনো রেখেছো বোঝাও তো? ব্যাপারটা কী?"

এই প্রশ্ন নানান সংবাদপত্র তাকে একাধিক বার করেছে। তার ঠিক করা কিছু সংলাপও আছে - "মানব-শিক্ষক যখন রোবট-মেয়ের প্রেমে পড়লেন তিনি বুঝলেন সব তলিয়ে যাচ্ছেন... তলিয়ে যাচ্ছে তার মান-সম্মান আর এতোদিনের অর্জন যা কিছু! তলিয়ে যাচ্ছেন তিনি এক ধাতব মেয়ের পরিনয়ে। এ যেনো এক চোরাবালি... ধাতব চোরাবালি!"

কিন্তু এখন এমন চাঁচা-ছোলা সমালোচনার মাঝে হঠাৎ করা প্রশ্নে জিরকন কেমন তাল হারিয়ে ফেলে। ঠিক করা সংলাপ কেনো জানি আর কিছুতেই মনে পড়ে না।

সামন্ত স্যান্যাল খুব বিরক্তি নিয়ে যেনো এই প্রশ্নের উত্তর জানতেই হবে এমন ভাবে জিরকনের দিকে তাকিয়ে থাকেন।

চার

পাপানের মনে ক্ষীণ শংকা ছিলো আপ্যায়নের ব্যবস্থা করার আগেই সামন্ত স্যান্যাল রোবট লেখক জিরকনকে বিদায় করে দেবেন। এর আগে হয়েছে এমন। ক’মিনিট কথা বলেই সামন্ত অতিথিকে ধমক দিয়ে বের করে দিয়েছেন।

সামন্ত স্যানাল সব সময় লম্বা আলখাল্লা ধরণের এক রকম ভারী জামা পরে থাকেন। এছাড়া অনেকদিন চুল কাটেন না বলে এই সত্তর বছর বয়সেও তার মাথা ভর্তি কালো চুল। সব মিলিয়ে তাকে লাগে ধর্মপ্রচারকের মতো। তার এই বেশ দেখেও অনেকে ঘাবড়ে যান।

তবে খাবারের ট্রলি ঠেলে বসার ঘরে গিয়ে পাপানের শংকা কেটে যায়। সামন্ত স্যানাল হাত-মাথা নেড়ে খুব উৎসাহ নিয়ে কথা বলছেন। তারমানে জিরকনকে তার পছন্দ হয়েছে। পছন্দ না হলে তিনি এতো নাড়া-চাড়া করেন না, স্থির বসে অতিথির দিকে ঠায় তাকিয়ে থাকেন।

পাপানকে আসতে দেখে সামন্ত স্যান্যাল আনন্দ নিয়ে ফিরে তাকান, "এই তো পাপান এসে গেছে। পাপান তুমি জানো রোবট লেখকেরা ফ্যান্টাসাইজার[দ্রষ্টব্য] ব্যবহার করতে পারে না?"

পাপান রোবট-মানুষ দুই-ই পান করতে পারে এমন সিনথেটিক পানীয় আর প্রটিন-ব্লক ভরা ট্রে একপাশে রেখে বলে, "জানি। এটা মোটামুটি সবাই জানে। আপনি রোবট সাহিত্যের কোনো খবর রাখেন না বলে জানেন না।"

"কেনো পারে না?"
"ফ্যান্টাসাইজার উদ্ভাবন করা হয়েছিলো মানুষের মস্তিষ্কের উপর ভিত্তি করে। আমাদের পজিট্রনিক মস্তিষ্কে সেটা কাজ করে না।"
"রোবটদের জন্য এমন কিছু বানানো হয় না কেনো?"
"রোবটদের জন্য বানানো খুব কঠিন। আমাদের মস্তিষ্কের ঠিক কোন কোন অংশ আমাদের চিন্তা আর কল্পনার কাজে ব্যবহৃত হয় তা নিশ্চিত ভাবে কেউ বলতে পারে না।"
"এটা কোনো কথা হলো? তোমাদের মস্তিষ্ক তো গবেষণাগারে বানানো - আমাদের তো গোড়া থেকেই জানার কথা!
"ব্যাপারটা এতো সহজ না স্যার। প্রথম পজিট্রনিক মস্তিষ্কের উদ্ভাবন হয়েছিলো অনেকটা দূর্ঘটনার ফলে। এরপর সেই মস্তিষ্কের নিউরাল নেট মেট্রিক্স ব্যবহার করে আরেকটা, পরে সেটা থেকে আরেকটা - এভাবে কোটি কোটি মস্তিষ্ক তৈরি হয়েছে। ফলে মস্তিষ্ক বিবর্তিত হয়েছে। এখন পর্যন্ত গবেষণাগারে বসে একদম শূন্য থেকে পজিট্রনিক মস্তিষ্ক বানানো অসম্ভব। কমপক্ষে একজন রোবটের নিউরাল নেট মেট্রিক্স লাগে।"

সামন্ত স্যানাল উত্তেজিত ভাবে হাত নেড়ে বলেন, "তার মানে রোবট লেখকদের তথ্য সংগ্রহ আর কল্পনার বিস্তারণ একাধিক ধাপে করতে হয়?"
"কল্পনার বিস্তারণের ব্যাপারটা ঠিক আছে। তবে তথ্য সংগ্রহ আমরা ফ্যান্টাসাইজার ব্যবহার না করেও খুব সহজেই করতে পারি। সামান্য পয়সা খরচ করলেই আমাদের তথ্য-ইউনিট[দ্রষ্টব্য] যে কোনো লাইব্রেরির সাথে সংযুক্ত করা যায় - মিলিসেকেন্ডেই প্রয়োজনীয় সব তথ্য-ইউনিটে জমা পড়ে।"
"কিন্তু ফ্যান্টাসাইজার ব্যবহার না করার মানে বুঝতে পারছো? এই যুগে এটা ব্যবহার না করে কেউ লেখে? লিখতে পারে?"

জিরকন এতক্ষণ চুপ করে দু’জনের কথা শুনছিলো। এবার একটু গলা খাকড়ে বলে, "কিন্তু স্যার এজন্যই কিন্তু রোবট লেখকেরা এখন পর্যন্ত ফ্যান্টাসি-নির্ভর কিছু লিখতে পারেনি। আমাদের সাহিত্য মানের জীবনমুখী উপন্যাস-গল্প কিংবা প্রবন্ধ। রম্যরচনাতেও ভালো তেমন কিছু লেখা হয়নি।"
"এখনো হয়নি, কিন্তু হবে। আমার কাছে ব্যাপারটা কেনো দারুণ লাগছে তা মনে হয় তোমরা বুঝতে পারছো না। আমার মনে হয় প্রযুক্তি নির্ভর লেখালেখির কারণে লেখক কল্পনার জোর আর বর্ণনার ধার হারাচ্ছে। একটা সময় "লেখকের চোখ" বলে একটা জিনিস ছিলো বুঝেছো? লেখক তখন লেখকের চোখে সবকিছু দেখতো, যাচাই করতো, অভিজ্ঞতা জমা করতো। পরে লেখায় সেসব উঠে আসতো। পাঠকেরা যখন পড়তো তখন সব নিজে কল্পনা করে নিতো - এই দুই প্রযুক্তি ছাড়াই। এখন তো লেখক গল্পের প্লট এলেই মাথায় ফ্যান্টাসাইজার লাগিয়ে বসে, আর অক্যুলাইজার ছাড়া কোনো লেখাই প্রকাশিত হয় না।"
"কিন্তু স্যার," বলে জিরকন, "এ দুই প্রযুক্তি ব্যবহার না করলে কল্পনার সামঞ্জস্য ব্যাহত হবে না? আপনি যেমন কল্পনা করবেন, আমি তেমন নাও করতে পারি।"
"আরে এটাই তো মজা! একই লেখার পাঠক ভেদে ভিন্ন অর্থ হতে পারে। সবার কল্পনা এক হতে হবে এটা কেমন জোরের কথা? আরো ব্যাপার আছে..."
"কী রকম?"

নিজের প্রিয় বিষয়ে কথা বলার সুযোগ পেয়ে সামন্ত স্যান্যাল নড়ে-চড়ে বসেন, "ধরো তুমি একটা গল্পের প্লট নিয়ে ভাবছো। প্লটটা এমন যে একজন রোবট একা ক্যাফেতে বসে আছে। নিঃসঙ্গ রোবট। একা থাকে। কারো সাথেই তার বনে না। সপ্তাহের শেষ দিনে সে একা এই ক্যাফেতে বসে এক কাপ সিনথেটিক কফি খায়। তেমনি একদিন সে একা বসে আছে, হঠাৎ তার টেবিলের সামনে একটা বাচ্চা মেয়ে এসে দাঁড়ায়। সেই বাচ্চা মেয়েটা রোবটকে গল্প শোনায়। তার কল্পনার গল্প। যেখানে সেই ক্যাফের প্রতিটা চেয়ার, টেবিল, শেলফ, বাতি, দেয়াল... সবকিছু জীবন্ত। রোবটের জীবন বদলে যায়। সে পৃথিবীকে অন্য দৃষ্টিতে দেখতে শেখে। এখন বলো - এই গল্প তুমি কিভাবে লিখবে?"
"প্রথমেই ক্যাফে সম্পর্কে বিস্তারিত পড়বো। দলছুট রোবটের মনস্তত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করতে হবে। এরপরে বাচ্চা মেয়ের চারিত্রিক বৈশিষ্ট নিয়েও কিছু লেখাপড়া আছে... পাপান যেমন বললো, আমাদের তথ্য-ইউনিটে..."
সামন্ত স্যানাল বিরক্তি নিয়ে বাতাসে হাত নাচান, "ভুল ভুল... সব ভুল!"

পাপান আর জিরকন দু’জনেই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়।

"জিরকন তুমি এখন পর্যন্ত ক’টা ক্যাফেতে গিয়েছো?" জিজ্ঞেস করেন সামন্ত স্যান্যাল।
"সঠিক হিসেব নেই। অনেক।"
"কোনো দলছুট রোবট কিংবা বাচ্চা মেয়ের সাথে তোমার কখনো সাক্ষাত হয়নি?"
"একাধিক বার হয়েছে।"
"তাহলে তুমি কেনো এই ঘটনা লেখার জন্য তোমার তথ্য-ইউনিটে চলে যাবে? তোমার আগের সবস্মৃতি তো জমা আছে, আছে না?"
"জ্বী আছে। কিন্তু আমাদের রোবট মস্তিষ্ক তো সব তথ্য জমা রাখে না। যেসব তথ্য অসম্পূর্ণ ও অপ্রাসঙ্গিক, সেগুলো বাদ পড়ে। অনেকটা মানুষের মস্তিষ্কের মতোই।"
"ঠিক!" হাসেন স্যান্যাল, "আর সেখানেই তো আসে লেখকের চোখের ব্যাপারটা। একজন প্রাচীন লেখক কী করতো জানো? সে তার স্মৃতি হাতড়াতো। সেই স্মৃতি পূর্ণাঙ্গ হতো না। অনেক ফাঁক থাকতো। সেই ফাঁকগুলো সে তার কল্পনা দিয়ে ভরে দিতো। গল্প ততো গবেষণাগ্রন্থ নয় যে সব লাইনে লাইনে মিলে যেতে হবে।"
"কিন্তু স্যার এভাবে লিখলে তো অক্যুলাইজার ব্যবহার করা কঠিন হয়ে যাবে। কারণ সরাসরি চিন্তার সাথে অক্যুলাইজার যুক্ত করা যায় না। নিরেট তথ্য লাগে। মানুষের জন্য ফ্যান্টাসাইজার কিংবা রোবটের জন্য তথ্য-ইউনিট..."
"অক্যুলাইজার ব্যবহার করার কী দরকার?"
"দরকার নেই?"
"না। বর্ণনা দিলেই তো হয়।"
"স্যার পাঠক তো এতো কষ্ট করে বর্ণনা পড়তে চায় না। তারা চায় সরাসরি গল্পে ঢুকে যেতে..."
"পাঠক অলস হয়ে গেছে। আমি তো আমার কোনো বইয়ে অক্যুলাইজার ব্যবহার করিনা। পাঠক পড়তে না চাইলে সেটা তার ব্যাপার।"

জিরকনের বলতে ইচ্ছে করে, "সেজন্যই আপনার বই চলে না।" কিন্তু সাহস হয় না।

পাপান বলে, "আমার একটা প্রশ্ন আছে। নিরেট বর্ণনা দিলে গল্পের কাহিনী ক্ষতিগ্রস্থ হয় না?"
"কেনো? কাহিনী কেনো ক্ষতিগ্রস্থ হবে?"
"আপনার উদাহরণের প্লটের কথাই বলি। আপনি গল্প শুরু করলেন ক্যাফের বর্ণনা দিয়ে। এরপরে শুরু করলেন দলছুট রোবটের বর্ণনা। এরপরে ছোট মেয়ের বর্ণনা, এরপর কাহিনী শুরু হলো। আপনি যদি অক্যুলাইজার ব্যবহার করতেন তাহলে এইসব পাঠক বই খুলেই মুহূর্তেই জেনে যেতো।"

"ঠিক। কিন্তু এতে কাহিনী ক্ষতিগ্রস্থ হবে কী করে? বরং প্রযুক্তির সহায়তা নিলেই কাহিনী ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে।"
জিরকন আগ্রহে সোজা হয়ে বসে, "সেটা কী করে?"
"গল্পের স্থান-কাল-পাত্র প্রযুক্তির ঠিক করা বাস্তবতায় আটকা পড়ে যেতো। ধরো আমাকে আমার ফ্যান্টাসাইজার কিংবা তোমার তথ্যভান্ডার বললো দলছুট রোবট নিরিহ হয়। আমি তখন এই রোবটকে দিয়ে মেয়েটাকে খুন করাতে পারতাম না।"
"মেয়েটাকে খুন করার প্রয়োজনীয়তা আসছে কেনো?"
"আসতেই পারে। গল্প লিখতে লিখতে আমার প্লট বদলে যেতে পারে। আমার মনে হতে পারে শেষে রোবট বদলে যায় না। বরং তার মনে হয়, মেয়েটা তার চেনা জগত বদলে দিচ্ছে। সেই চেনা জগত ফিরে পেতে সে মেয়েটাকে খুন করতেই পারে।"
"আচ্ছা!"
"ফ্যান্টাসাইজার কিংবা তথ্য-ইউনিটের উপর ভর করে যদি আমরা কাহিনীর ফাঁদি তাহলে মাঝপথে এমন প্লট বদলানো সম্ভব?"
"না। প্রযুক্তি-বাস্তবতা বদলে আবার গোড়া থেকে শুরু করতে হবে। সেক্ষেত্রে রোবট আর মেয়ের চারিত্রিক বৈশিষ্টও পালটে যাবে।"
"তাহলে তোমার মনে হয় না এই দুই প্রযুক্তি আমাদের কল্পনার জোর কমিয়ে দিচ্ছে? লেখক তার লেখার ধার আর দেখার চোখ হারাচ্ছে?"
"হয়তো। তবু স্যার আমি অক্যুলাইজার ব্যবহার না করার যুক্তিটা পুরো মানতে পারলাম না!"
"কেনো?"
"ব্যাপারটা এমন হতে পারে - আমি লেখা-লেখির প্রাচীন পদ্ধতি মেনেই লেখা শুরু করলাম। পরে লেখা শেষে আমার লেখা তথ্য-ইউনিটে যুক্ত করে সেই অনুযায়ী অক্যুলাইজার ম্যাপ বানিয়ে ফেললাম?"
"কিন্তু তুমি যে এতক্ষণ ধরে বর্ণনা লিখলে তাতে তোমার বুদ্ধি-মননের ছাপ আছে। সেটা ফেলে দেবে? কেবল পাঠকের মন যোগাতে?"

জিরকন এই কথার কোনো উত্তর দেয় না। নিজের মনে কী যেনো ভাবতে থাকে।

পাঁচ

জিরকনের সাথে সাক্ষাতের পর মাস খানেক চলে যায়।

পাপান লক্ষ্য করে সামন্ত স্যান্যালের রোবো-ফিকশনে বিশেষ আগ্রহ জন্মেছে। প্রায়ই পাপানের কাছ থেকে বই-টই চেয়ে নিয়ে পড়েন। এমনই একদিন সামন্ত এসে জিজ্ঞেস করেন, "আচ্ছা পাপান, আমাদের সাক্ষাতের পরে জিরকনের কোনো লেখা-টেখা আসেনি পত্রিকায়?"
পাপান কেমন চোখ লুকানোর চেষ্টা করে। দুর্বল গলায় বলে, "কই না! না-তো!"

সামন্ত স্যান্যাল তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকান। এতোদিন পরেও পাপান ঠিক মতো মিথ্যা বলা শিখলো না। তিনি জেরা করেন, "মিথ্যা বলছো কেনো পাপান?"
পাপান তার বদঅভ্যাস মতো সরাসরি জবাব দেয় না। বলে, "স্যার গল্পটা আপনার না পড়াই ভালো!"

সামন্ত স্যান্যাল হুট করে রেগে যান, "পাপান আমার কী ভালো না ভালো সেটা তোমাকে দেখতে হবে? লাই পেয়ে তুমি একদম মাথায় উঠে বসেছো। দাও, ওর গল্পটা দাও।"

স্যান্যাল জিরকনের গল্প সহ পত্রিকাটা নিয়ে বারান্দায় গিয়ে বসেন। পাতা উল্টেই বুঝতে পারেন কেনো পাপান গল্পটা তাকে দেখাতে চাচ্ছিলো না। গল্পে একাধিকবার অক্যুলাইজার ব্যবহার করা হয়েছে। সামন্ত পাপানের বোকামীতে আপন মনেই হাসেন। জিরকন যে তার কথা শুনে অক্যুলাইজার ব্যবহার করা ছাড়বে না তা তো তিনি সেদিনই ওর ভাব-ভঙ্গি দেখে বুঝে নিয়েছিলেন। সেই নিয়ে এতো লুকোছাপা কেনো?

কিন্তু গল্পটা পড়তে পড়তে তাঁর চোখ-মুখ লাল হয়ে ওঠে। পড়ন্ত বয়সের বন্ধু-বান্ধবহীন এক লেখকের গল্প - যিনি সারা জীবন কেবল লিখেই গেছেন, পাঠক-সমালোচকের স্বীকৃতি পাননি। সময় বয়ে যায়, সবাই বদলায়, কেবল তিনি একাই নিজেকে বৃত্তে আটকে রাখেন। কিছুটা অভিমানে, আর কিছুটা আত্মরক্ষায়। নিঃসঙ্গ সেই লেখকের একমাত্র সঙ্গি একজন দলছুট রোবট।

ছয়

সূর্য পশ্চিমে ঢুলে গেলে পাপান বারান্দায় সামন্ত স্যান্যালের জন্য আরেক কাপ চা নিয়ে আসে। দেখে সামন্ত স্যান্যাল একদৃষ্টে পাশের দালানের জানালার সিনথেটিক ফুলের দিকে তাকিয়ে আছেন। পাপান এসেছে বুঝে তিনি দৃষ্টি না সরিয়েই বলেন, "বুঝলে পাপান, যতো যাই বলি না কেনো জিরকন ছেলেটার কিন্তু দেখার চোখ আছে। লেখকের চোখ।"

© অমিত আহমেদ

[দ্রষ্টব্য]: সাইফাই গল্পের সিরিজ শুরু করার ইচ্ছা। বেশ কয়েকটা প্লট ইতিমধ্যে মাথায় ঘুরঘুর করছে। এই গল্পে ব্যবহৃত পরিভাষা আর চরিত্রগুলো ঘুরে ফিরে নানান গল্পে আসবে। তাই আমার সাইফাই গল্পে সচরাচর ব্যবহৃত চরিত্র ও পরিভাষা নিয়ে আমার সাইফাইক্লোপিডিয়া

ব্যবহৃত ছবি: ফটোশপে বানানো।


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

চাল্লু হচ্ছে। চলুক। নেক্সট খন্ড আরো দুই সুতা বড় চাই।

রোকনুদ্দৌলার শুদ্ধি অভিযানের মতো করে খুঁত ধরি (সংক্ষেপে রোকন মারি) কিছুঃ

সেই গাছের ফুল ক’দিন পর পর রঙ বদলায়। আসল গান নাকি সিনথেটিক তা মাঝে মাঝেই জানতে ইচ্ছে করে।

গান নয়, গাছ হবে বোধহয়।

পাপানকে বাগে প্রসন্ন ভাবে হাসেন সামন্ত স্যানাল।

বাগে "পেয়ে" হবে বোধহয়।


হাঁটুপানির জলদস্যু

অমিত আহমেদ এর ছবি

ঠিক করলাম। পরের পর্বে সাবধান থাকতে হবে। আহা! সবাই যদি এমনে ভুল-চুক ঠিক করে দিতো।


ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

আপনার আকুতি দেখে এক নজরে বের করলাম এই টাইপোগুলো:

নেহায়তই নিরিহ - নেহাতই/নেহায়েতই নিরীহ

সহকারি - সহকারী

উজ্জ্বল্য - ঔজ্জ্বল্য/উজ্জ্বলতা

মাস্তানি মার্জনীয় হাসি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
একলা পথে চলা আমার করবো রমণীয়...

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

সবজান্তা এর ছবি
অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

উনি ইতিহাসের প্রথম রোবট যিনি তাঁর প্রথম উপন্যাসেই রোবোফকশন অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।
"রোবোফিকশন" হাসি


A question that sometimes drives me hazy: am I or are the others crazy?

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

এই গল্প খতম না হলে নিজ পয়সায় টিকিট কেটে গিয়ে অমিতের পাছায় লাথি মেরে আসব।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

মাইন্ড খাইলা নাকি ব্রো? তোমার গল্প থেকে লাইন তুলে এনে বসালাম। টেইক ইট ইজি।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

অমিত আহমেদ এর ছবি

ধুরো মিয়া। আপনার লগে কী আমার এইসবে মাইন্ড খাওনের সম্পর্ক? এইটা একটা কথা কইলেন?

লেখা শেষ করা হবে চোখ টিপি


ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

স্নিগ্ধা এর ছবি

"চল্লেও চলতে পারে" আবার কি কথা, অমিত?? অবশ্যই চলুক ......

পাপানের জন্য সমবেদনা মন খারাপ

তানভীর এর ছবি

ভালো লেগেছে। সাইফাইক্লোপিডিয়ার আইডিয়াও ভালো চলুক

অভ্রনীল এর ছবি

সাইফাইক্লোপিডিয়াটা জটিল আইডিয়া...

পাছা বলতে আমার দেহের ঠিক কোন জায়গাটি আপনি নির্দেশ করছেন?

গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি

_______________

এক ছাগলের দুই কান,
তুই আমার জানের জান।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

চলতে হবেই হবে। চলুক

রণদীপম বসু এর ছবি

হুঁম ! মনে হচ্ছে মুহাম্মদ জাফর ইকবালের পরবর্তী সংস্করণ পেতে যাচ্ছি আমরা।
সাইফাই ভুবনে স্বাগতম এবং অভিনন্দন।
পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায়...

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

শিক্ষানবিস এর ছবি

রোবোফিকশনের আইডিয়াটা দারুণ। চলতেই হবে। লিখতে থাকুন। পড়ছি...

নিবিড় এর ছবি

হুম......ভাল লাগছে । অবশ্যই চলুক ।

দ্রোহী এর ছবি

জটিল হইতেছে। এই গল্প দৌড়াক....


কী ব্লগার? ডরাইলা?

মাহবুব লীলেন এর ছবি

বিজ্ঞাপন ভালো হয়েছে
এবার আসোল মাল বাজারে ছাড়েন

তানবীরা এর ছবি

বাংলার নতুন সাইন্সফিকেশক এর আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম।

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

অবনীল এর ছবি

প্লটটা জমে উঠেছে। চালিয়ো জান। আর বিশেষ ধন্যবাদ সাইফাই লেখা উপহার দেবার জন্য।

___________________________________
অন্তর্জালিক ঠিকানা

ফাহিম এর ছবি

চমৎকার শুরু...

=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;

সবজান্তা এর ছবি

আপনি যদি এই গল্প না চালান, তাইলে আপনারে এমন শিক্ষা দেওয়া হবে ... ... হিমু ভাইও বুঝতে পারবেন সিরিজ সম্পূর্ণ না করার ফলাফল কী হতে পারে ...

হুঁশিয়ার...


অলমিতি বিস্তারেণ

খেকশিয়াল এর ছবি

লেখতে থাকেন, জায়গায় ব্রেক দিয়েন না

------------------------------
'এই ঘুম চেয়েছিলে বুঝি ?'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

দময়ন্তী এর ছবি

গল্পটা খাসা হাইফাই ৷

ইয়ে ওটা কি "সান্যাল' (Sanyal) লিখতে চেয়েছিলেন ? মানে স্যানাল কেমন উচ্চারণ করতে অসুবিধে হচ্ছে৷
--------------------------------------------------
"নিভন্ত এই চুল্লিতে মা
একটু আগুন দে
আরেকটু কাল বেঁচেই থাকি
বাঁচার আনন্দে৷'

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

অনিন্দিতা এর ছবি

চমৎকার

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

বিজ্ঞান-সংশ্লিষ্ট টার্ম-কণ্টকিত সাই-ফাই পড়ে জুইত পাই না। আপনার এই গল্পটি সে-রকম হবে না বলেই বোধ হচ্ছে। অতএব আমার সোত্সাহ "চলুক" রইলো।

আচ্ছা, জিরকন পিথ্রি - এমপিথ্রি-র আত্মীয় নাকি? হো হো হো

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
একলা পথে চলা আমার করবো রমণীয়...

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

চলুক
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

পলাশ দত্ত এর ছবি

সচলের লেখকরা সবাই এ্যাকশনধর্মী হয়ে যাচ্ছে নাকি! ইন্টারেস্টিং কোনো লেখাই কেউ একটানে দেয় না পড়তে। অমিত, ভাই একবারে লেখাটা পড়তে দিলে কী অশুদ্ধ হইতো????? সায়েন্স ফিকশন পড়তে গিয়ে (চলবে)-এর মধ্যে পড়লে মাথা গরম হয়ে যায়। হাসি

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

অবশ্যই চলুক! খুব মজা লাগল। সাইফাইক্লোপিডিয়ার আইডিয়াটা আসলেই দারুন! পরের পর্বের (আরেকটু বড় হলে ভাল হয়) অপেক্ষায়...


A question that sometimes drives me hazy: am I or are the others crazy?

নির্বাক এর ছবি

চলতেই হবে... হাসি

_________________________________________
তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ
আমি আজ চোর বটে!

অমিত আহমেদ এর ছবি

স্নিগ্ধা, আনোয়ার সাদাত শিমুল, নিবিড়, দ্রোহী, মাহবুব লীলেন, তানভীর, অভ্রনীল, রণদীপম বসু, শিক্ষানবিস, তানবীরা, অবনীল, কনফুসিয়াস, ফাহিম, সবজান্তা , খেকশিয়াল, অনিন্দিতা, ধুসর গোধূলি, সংসারে এক সন্ন্যাসী, নজরুল ইসলাম, পলাশ দত্ত, অতন্দ্র প্রহরী, নির্বাক, দময়ন্তী...

সবার উৎসাহ (বিশেষ করে স্নিগ্ধা, সবজান্তা, এস এম মাহবুব মুর্শেদ ও পলাশ দত্তের ঝাড়ির ভয়ে) শেষ করে দিলাম হাসি


ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

পথে হারানো মেয়ে এর ছবি

শেষ অংশটা বেশি ভালো লাগলো।

রানা মেহের এর ছবি

এ গল্পের সাইফাই অংশটুকু বাদ দিলে কেমন হবে ভাবছি।

ভেবে মনে হচ্ছে গল্প হিসেবে খুব সাধারণ।
সাইফাই অংশটুকুই দুর্দান্ত।

বেশীরভাগ টার্মই আগে কোন ফিকশনে এসেছে।
ফ্যান্টাসাইজার কথাটা আগে কোথাও পড়িনি।
আইডিয়াটা খুবই ভালো।

তবে লেখক বোধ হয় আইডিয়াটার নতুনত্ব সম্পর্কে জানেন।
তাই বারবার 'ফ্যান্টাসাইজার' কথাটা ঘুরে ঘুরে এসেছে।
এ শব্দটা আরেকটু কম ব্যাবহার করলে
থীমটার ধার আরেকটু বেশী থকতো।

সামন্ত স্যানাল নামটা কেন যেন যাচ্ছেনা লেখার সাথে।
জানিনা কেন।
লেখক অবশ্যই এমন একজনকে দেখাতে চেয়েছেন
যিনি আধুনিক সব সুযোগ থাকা স্বত্তেও পুরনো কিছু ধারনা আঁকড়ে ধরে আছেন।
তাই হয়তো এরকম প্রাচীনপন্থি নাম।
কিন্তু যা নামটা বর্তমানেই প্রাচীন, তাকে অদুর ভবিষ্যতে ভেবে নিতে একটু কষ্ট হয়।

এতো পন্ডিতি করার পরও বলি।
খুব আনন্দ করে পড়েছি গল্পটা
এবং যথারীতি আপনার বিষয় নির্বাচনের দক্ষতা দেখে মুগ্ধ হয়েছি চলুক

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

অমিত আহমেদ এর ছবি

ফ্যান্টাসাইজার, অক্যুলাইজার আগে কোথাও ব্যবহার করা হয় নাই। আমি বেশ খুঁজে-টুঁজে দেখলাম। তবে লেখায় অধিক ব্যবহারের কথাটা মনে হয় আপনি ঠিক ধরেছেন। আমি আবার পড়ে তাই গল্পটা একটু এডিট করলাম।

সামন্ত স্যান্যালের নাম নিয়ে খটকার কথা আমাকে আরেকজন বললেন। এই জায়গায় কী নাম ব্যবহার করা যায় বলেন তো? বদলে দেই।


ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

অনিকেত এর ছবি

চমৎকার হয়েছে !!!

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

হুম... ভালো লাগলো...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

এনকিদু এর ছবি

চলুক
দারুন !!!
চলুক ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

আলাভোলা এর ছবি

চমৎকার।
সাইফাইক্লোপিডিয়া এর আইডিয়াটা দারুন।

চলুক

কীর্তিনাশা এর ছবি

দেরী করে পড়ে তো দেখি ভালোই করেছি। পুরোটা একসাথে পড়তে পারলাম। দেঁতো হাসি

দারুন লিখেছেন! সত্যিই দারুন !! চলুক

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

রানা মেহের এর ছবি

সামন্ত স্যান্যালের নাম নিয়ে খটকার কথা আমাকে আরেকজন বললেন। এই জায়গায় কী নাম ব্যবহার করা যায় বলেন তো? বদলে দেই।

য়ানোআর সাদাত দেয়া যাতে পারে দেঁতো হাসি
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

মাসুদ্রানা।

স্বপ্নাহত এর ছবি

অনেক দিন পর একটা হাই ফাই সাই ফাই পড়লাম । দুর্দান্ত!

---------------------------------

বিষণ্ণতা, তোমার হাতটা একটু ধরি?

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

রণদীপম বসু এর ছবি

পড়লাম এবং পরবর্তী প্রজন্মের অপেক্ষায় থাকলাম...

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

পরিবর্তনশীল এর ছবি

দারুণ।
বিশেষ করে জিরকনের সাথে সামন্তএর আলাপ । পরেরটা জলদি চাই।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

খুব ভাল লাগল। মনে হলো, জিরকনের সাথে সাথে নিজেও গল্প লেখার ব্যাপারে কিছু শিখলাম।

আসুক আরো...

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

কঠিন হইছে ম্যান! একদম সিরাম!! আরো গল্প চাই।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

অমিত আহমেদ এর ছবি

- পথে হারানো মেয়ে, রানা মেহের, অনিকেত, নজরুল ইসলাম, এনকিদু, আলাভোলা, কীর্তিনাশা, স্বপ্নাহত, রণদীপম বসু, পরিবর্তনশীল, অতন্দ্র প্রহরী ও এস এম মাহবুব মুর্শেদ...

আপনাদের মন্তব্যে আরো সায়েন্স ফিকশন লিখতে তুমুল উৎসাহ পেলাম। আপনাদের সবাইকেই বিশাল ধন্যবাদ।


ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

বিপ্রতীপ এর ছবি

যতো যাই বলি না কেনো অমিত ভাইয়ের কিন্তু সাইফাই গল্প লেখার হাত আছে। লেখকের হাত খাইছে :

গতকাল রাতেই লেখাটা সময় নিয়ে পড়লাম...চ্রম লাগছে। সাইফাইক্লোপিডিয়াও ভাল্লাগছে। যাই হোক লীলেন ভাইয়ের ভাষায় বলি,

বিজ্ঞাপন ভালো হয়েছে
এবার আসোল মাল বাজারে ছাড়েন

চলুক চলুক
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
খুঁজে যাই শেকড়ের সন্ধান...

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

অমিতের জন্য ২ প্লেট বিরিয়ানী, চিকেন রোস্ট, বুরহানী, স্প্রাইট বরাদ্দ হোক।
আমার সাধ্যে আর কী দেয়ার আছে ভাবছি...।
স্যালুট অমিত...

স্নিগ্ধা এর ছবি

অমিত - অনেএএএকদিন পর একটা সায়েন্স ফিকশন এতোখানি ভালো লাগলো! গল্পের শেষটা সবচাইতে ভালো লেগেছে!

অমিত আহমেদ এর ছবি

বিপ্রতীপ: মন্তব্য খ্রুব ভ্রাল্লাগ্লো... খ্রুব!

আনোয়ার সাদাত শিমুল: কবে আসবো বলো? আমি এবং আমার পেট মহাশয় রাজি।

স্নিগ্ধা: বলজেন? আপ্নি বলজেন যখন, তখন তো লিচ্চয়!


ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

নাম লিখবার সাহস পাচ্ছি না এর ছবি

মুগ্ধ হলাম।এই লেখকের সায়েন্স ফিকশন লেখার হাত সত্যিই অসাধারণ।অনেক আগে এই গল্পটা দেখে থাকলেও কোন এক অজানা কারণে পড়া হয়নি।সায়েন্স ফিকশন খুব পছন্দ করি।আরো আরো এজাতীয় লেখা নামতে থাকবে আশা করি।

একটু ধৃষ্টতা করি, সামন্ত স্যানাল নামটা আমারো খটকামত লেগেছে।কিন্তু আর মাত্রাছাড়া হয়ে কোন নাম প্রস্তাব করার সাহস পাচ্ছিনা।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।