এক
মাশীদ আপু আমার অত্যধিক প্রিয় একজন মানুষ। কারণটা খুব সহজ - উনার সাথে আমার মানসিকতা একদম মিলে যায়। এই মানসিকতা মেলানোর ব্যাপারটা কিন্তু খুব সহজ নয়, বিশেষ করে যখন সেটা আমাদের মতো হয়। আর তাই অবিরত এর-তার সাথে মিলিয়ে-মানিয়ে চলে হঠাৎ নিজের মতো আরেকজন বাঙালি খুঁজে পাওয়ার মধ্যে একটা ক্রিস্টোফার কলোম্বাসীয় আনন্দ আছে। মাশীদ আপুর সাথে পরিচিত হয়ে আমি সেই আনন্দ পাই।
মজার ব্যাপার হলো মাশীদাপুর সাথে পরিচয় না থাকলেও উনাকে আমি আগে প্রায়শই দেখতাম। বুয়েট কলোনীর যেই দালানে মাশীদ আপুরা থাকতেন সেই দালানের সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠলেই বন্ধু রঞ্জনের বাসা। কলেজ থেকে প্রায়ই ওর বাসায় চলে যেতাম। ওর মতো আরো অনেক নটরডেমিয়ানের বাসও ছিলো বুয়েট কলোনীতে। তাই আসা-যাওয়া কিংবা মাঠে বসে আড্ডা-ক্রিকেটের ফাঁকে মাশীদাপুকে অনেকবার দেখেছি। কিন্তু তখনো পরিচয় হয়নি। পরিচয় হলো সচলায়তন। এরপরে কুয়ালা লামপুরের রাস্তায় রাস্তায় দুই কাবিলের টো-টো চক্কর। মাশীদাপুর দেয়া শার্ট পরে আমার ফটোসেশন।
যখনই মন-টন খারাপ হয়েছে কিংবা কেউ কষ্ট দিয়েছে যখনই বিপদে পড়েছি কিংবা বড় কোনো ভুল করে ফেলেছি তখনই অনলাইনে মাশীদাপুকে খুঁজেছি। অনলাইনে পেলে মন অনেকটাই ভালো হয়ে গিয়েছে। কারণ জানি আর যে যাই বলুক না কেনো মাশীদাপু আমাকে বুঝে নেবেন ঠিক ঠিক। এই এটুকু মাত্র নিশ্চয়তার মূল্য যে কতো, সেটা আমি জানি। খুব ভালো করেই জানি।
শুভ জন্মদিন মাশীদ আপু!
দুই
আজ সারাদিন বাসায় বসে কাজ করেছি। স্কুলের কিছু কাজ সাথে করে নিয়ে এসেছি; উপায় নেই; কাজগুলো এগিয়ে রাখতেই হবে। বিকেলে মা'কে নিয়ে গিয়েছিলাম ছোট খালার বাসায়। খালা-খালু-মামা-মামী আর সব খালাতো-মামাতো ভাই-বোন মিলে মোটামুটি একটা পারিবারিক সম্মলেন হয়ে গেলো। এমন সম্মেলন আরো কয়েকটাই পাওনা হয়ে আছে।
তিন
ইদানিং একটা মজার জিনিস লক্ষ্য করি। সেটা হলো যাদের সাথে আড্ডা পেটাই তাদের বেশিরভাগের সাথেই তেমন খাতির ছিলো না ঢাকায় থাকাবস্থায়। অনেককে তো চিনতামই না। ফলে যা হয়, ওদের সাথে নতুন করে চেনা-পরিচয় করতে হয়। কেউবা কোনো পূর্ব ঘটনার প্রেক্ষিতে পুরো আমাকে যাচাই করে নেবার চেষ্টা করে। এই ব্যাপারটা একই সাথে মজার ও বিরক্তিকর। সেদিন যেমন একজন বললো, "তুই কানাডা যাবার আগে আমার সাথে একটা কোর্স নিয়েছিলি না? তুই তো হেভী সিরিয়াস স্টুডেন্ট ছিলি।"
আমি দেঁতো হাসি দেই। আমি প্রথম সেমিস্টারেই প্রবেশনের ঝামেলায় পড়েছিলাম। সিরিয়াস আমি কখনোই ছিলাম না।
চার
ঢাকার একটা জিনিস আমার ভালো লাগছে না, সেটা হলো রাত আটটার পরে পুরো শহর অন্ধকারে ঢেকে যায়। আগেও এমন ছিলো, স্ট্রিট-লাইট ছিলো না, থাকলেও কাজ করতো না। কিন্তু তখন রাস্তার দুই পাশ ঘিরে শপিং মল, ফ্যাশন হাউস, আর রকমারি দোকানপাট ছিলো। সেই আলোতে রাস্তা চলা যেতো। শহরটাকেও ঝকঝকে লাগতো। এখন সব আটটায় বন্ধ হয়ে যায় বলে সাড়ে আটটার দিকেই রাস্তায় মিশকালো হয়ে যায়।
বিদ্যুত সাশ্রয় হচ্ছে, সেটা ঠিক আছে, কিন্তু রাস্তা আলোর ব্যবস্থা তো করতে হবে। এভাবে পুরো শহর অন্ধকারে ঢেকে ফেলা তো কোনো কাজের কথা নয়। কিছু রাস্তায় এরশাদের আনা সোডিয়াম লাইট দেখতে পাই। সেই আলোতে নিজের হাতই ঠিক মতো দেখতে পারি না রাস্তা তো দূরের কথা। তাও যদি হতো আমাদের রাস্তা খানা-খন্দহীন মসৃন মখমলের মতো। আমাদের রাস্তায় একটু পর পর গর্ত, একটু পর পর ডোবার মতো জল জমে আছে, ম্যানহলেরও ঢাকনা নেই।
তার ওপরে আছে ছিনতাই। বন্ধু-বান্ধব যারা আছে তাদের সবারই একাধিকবার ছিনতাই হয়ে গেছে। যা বুঝলাম ছিনতাই এখন রোজকার ঘটনা। স্পটগুলোও মোটামুটি জানা। সেদিন বনানী ১১ থেকে ১৮ যাবো, সামান্যই পথ, তবু বন্ধুরা কিছুতেই একা হেঁটে যেতে দেবে না। ওরা আমাকে বলেও দিলো ঠিক কোথায় কোথায় আমি "ঠ্যাক" খেয়ে যাবো! রাস্তা আলোময় জমজমাট থাকাবস্থায় এই সমস্যাটা এতো প্রকট ছিলো না।
© অমিত আহমেদ
ব্যবহৃত ছবি: কুয়ালা লামপুর টুইন টাওয়ারের সামনে মাশীদ আপু ও আমি।
মন্তব্য
শিরোনাম দেখে ভয় পাইছিলাম। ভাবছিলাম, এইবার ছিনতাইকারীর খপ্পরে পড়ছো ...
____________
অল্পকথা গল্পকথা
আমিও শিমুল ভাইয়ের মত ভয় পাইসিলাম, সেই সাথে এটাও ভাবসিলাম যে ব্লগ যেহেতু লিখতেসেন কাজেই মলম খান নাই
চেনাপরিচিত এমন কোন বন্ধু বাকি নাই যারা গত তিন চার বছরে অন্তত একবার ঠ্যাক খায় নাই ... যা দেখলাম পাবলিক এখন আর ছিনতাই নিয়ে ভয় পায় না, সবার ভয় সবকিছু দিয়ে দেয়ার পরেও না চোখে মলম কিংবা পেটে ছুরি ঢুকায় দিয়ে যায় কিনা ...
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...
কিংকং এইটা একদম সঠিক বলেছো। এখন মানুষ ছুরি-মলম না খাইলেই খুশি।
এখনো ঠ্যাক খাই নাই শিমুল। বন্ধুরা যেভাবে গার্ড দিচ্ছে ক্রেডিটটা ওদেরই। তবে কাছে-পিঠে সময় খেয়ে গেলেও অবাক হবো না।
ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফ্লিকার | ইমেইল
ভাবছিলাম ওয়েলকাম টু দা ফেমিলি বলার সময় হয়েই উঠলো! হয় নাই দেখে খুশি, আর না হলে তো আরো খুশি!
হবু ড. অমিত প্রবেশনে ছিল!!!
!!!
ধুরো, আমি ভাবলাম ঠ্যাক খাইসেন!! মানে, আলহামদুলিল্লাহ অবশ্যই, কিন্তু গল্পটা মিস হয়ে গেলো!
আমিও প্রোবেশন ক্লাবে ছিলাম।
- আমিও শিমুল ভাই আর কিংকু ভাইয়ের মতো ভয় পেয়ে গেছিলাম!
ওহ হো, ইশতি ভাইও দেখি তাই ভাবছিলেন।
ঢাকার রাস্তায় এখনো ঠ্যাক খান নাই বলে অমিত হাসান ভাইয়াকে দিক্কার!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আমি একসময় মোবাইল সেট কেনার আগে ভাবতাম কমদামীই কিনি, ছিনাতাইকারীর জন্য বেশি দাম দিয়া কেনার দরকার কী?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
হুঁম, চলুক.......
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
কয়েকজনকে পরপর ভয় খেতে দেখে আবার ওপরে উঠে শিরোনাম দেখি, আমি ভয় খাই নাই ক্যান?
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
হাহাহাহ, চিমটি শিমুল ঃ)
---------------------------------------------------------
রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা
সূর্য নাহি ফেরে শুধু ব্যর্থ হয় তারা
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
আমি ভাবতাছি ঢাকা গেলে একটা দুই নলা বন্দুক কিনুম, তার পর সেইটা লোড করে রাস্তায় নামুম। যা শুনতেছি এ ছাড়া তো আর কোন উপায় দেখিনা!
- ভালো পেলাসটিকের দেইখা নিয়া যাইয়েন। ছিনতাইকারীগো লাইগা বেশি দাম দিয়া লোহার বন্দুক কিনবেন ক্যান?
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ছিনতাইকারির মার খেয়ে হসপিটালে গেলে খবর দিও
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফ্লিকার | ইমেইল
সবাইকে ভয় খাওয়াতে পেরে (তানবীরা ও শিমুল বাদে) চ্রম আমোদিত হইলাম
ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফ্লিকার | ইমেইল
তোরা সবাই এত্ত ভালু কেনু বল তো?
অপু ভাই আর তোর লেখা এত দিনে পড়ে থম মেরে বসে আছি।
ঠিক্না! এরকম বেকায়দায় ফেলা ঠিক্না!
ভাল থাকিস, অমিত। তোকে অনেক ধন্যবাদ।
ভাল আছি, ভাল থেকো।
ভাল আছি, ভাল থেকো।
আমিও ভাবলাম ঠ্যাক খাইলেন বুঝি!
আমি আজ পর্যন্ত খাইনি, জানি না কতদিন সৌভাগ্যবান থাকতে পারব
নতুন মন্তব্য করুন