১৮ অক্টোবর, ২০০৬
সময়: সকাল ১১:১২-১১:২০
সিমেন্স সেন্টার, গুলশান, ঢাকা
নওরীনকে শেষ পর্যন্ত বের করে দেয়া হয়েছে!
তবে ব্যাপাটা শোভন রাখার জন্য ওকে নিয়মতান্ত্রিক ভাবে বরখাস্ত করা হয়নি। সামনে ঈদ। ঈদের বোনাস আর এই মাসের বেতন হাতে তুলে দিয়ে অবিধিবদ্ধ ভাবে বলা হয়েছে, ইস্তফা দাও। নওরীন কোনো তর্কে যায় নি, নত মাথায় মেনে নিয়েছে।
সিদ্ধান্তটা নেয়া হয়েছে গতকাল সন্ধ্যার মিটিংয়ে। সে মিটিংয়ে জুনিয়রদের পক্ষ থেকে রানাকে ডাকা হয়েছিল। সেখানে ওর ভুমিকাটা ছিল অনেকটা সাক্ষীর মত। ভাইয়ারা নিজেরা আলাপ করেছেন, সে আলাপের ফাঁকে ফাঁকে হয়তো ওর দিকে তাকিয়ে কেউ একজন জিজ্ঞেস করেছেন, “রানা কথা কি সত্য?” রানা সৎ ভাবেই সে প্রশ্নের ধনাত্বক, ঋণাত্বক কিংবা নিরপেক্ষ উত্তর দিয়েছে। সিদ্ধান্ত নির্ধারণে কেউ ওর মতামত জানতে চায়নি, ও নিজেও আগ বাড়িয়ে কিছু বলেনি।
আজ সকালে এসে সবাই জেনেছে ঘটনাটা। জুনিয়রা ব্যাপারটাকে রানার নীতিগত বিজয় হিসেবে দেখছে। সবাই একবার করে হলেও রানার টেবিলে এসে হাতমিলিয়ে গেছে। এক বছরের অভিজ্ঞতায় রানা শিখেছে কর্পোরেট জগতে মানবিক ব্যাপার গুলো চেপে রাখতে হয়। প্রকাশ পেয়ে গেলে সেই অনুভূতি-আবেগকে মই বানিয়ে অন্যরা ধাপ টপকে যাবে। রানা তাই নিজের অনুতাপ নিজের মাঝেই চেপে রেখে হাসিমুখে সবার সাথে হাত মিলিয়েছে। রমজানের পবিত্রতার অজুহাত দিয়ে নওরীনকে নিয়ে নোংরা কৌতুকগুলো থামানোর চেষ্টা করেছে। হাঁফ ছাড়ার জন্য রোজা রেখেও চা-সিগারেটের অজুহাতে বারে বারে নিচে নেমে গিয়েছে।
রানার অফিসটাকে কামরা বললে বেশি বলা হয়ে যায়, কিউবিকল বললে কম। আকার-আয়তন-সাজসজ্জায় এটকে একটা কিউবিকলই বলা যায়। কিন্তু সুবিধে হচ্ছে কামরার প্রধান যে উপাত্ত - দরজা - সেটা একটা ওর আছে। কামরার চার পাশে পাতলা দেয়াল, সেটাও গলা সমান। ওর পাশের কামরায় নওরীন সহ একসাথে ছয়জন জুনিয়র বসে। ওরা দরজার ব্যবহার ভুলে সাধারণত সেই দেয়ালের উপর দিয়েই গলা বের করে দেয়। নওরীন ইস্তফা দিয়েছে আজ, তাই নিয়মানুসারে আগামীকাল থেকে সেটা কার্যকর হবার কথা। আজ সারাটা দিন তাই রানা সতর্ক ছিল যেন কোন ভাবেই পাশের কামরার নওরীনের সাথে চোখাচোখি হয়ে না যায়। ও যে কোন দোষ করেছে তা নয় - কিন্তু তবু নিজের মনে কেমন যেন একটা অনুশোচনা দানা বেঁধে আছে। এত করেও শেষ রক্ষা হলো না। দেয়ালের ওপাশ থেকে গলা বের করে অনুমতি চায় নওরীন, “ভাইয়া, ভেতরে আসবো?”
এই ভয়টাই ছিল রানার। ও শুকনো গলায় বললো, “এসো নওরীন... এসো এসো!”
ভেতরে ঢোকে নওরীন, কিন্তু বসে না, দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, ঠান্ডা নির্লিপ্ততায় জিজ্ঞেস করে, “শুনেছি, আমাকে নিয়ে অভিযোগ করার পরিকল্পনাটা আপনার। এটা কি সত্যি?”
রানার জানতো এ প্রশ্নটা আসবেই। সেক্ষেত্রে কি উত্তর দেবে সেটাও ওর মনে মনে ঠিক করা ছিল। কিন্তু প্রশ্ন করার ধরনটা ওর কল্পনায় অন্য রকম ছিল। ও ভেবাছিল নওরীন প্রশ্নটা করবে রাগ কিংবা অনুযোগ নিয়ে। কিন্তু এ দু’টোর একটারও উপস্থিতি না পেয়ে রানা একটু অস্বস্থি বোধ করে, “সত্যি। আমিই প্রথম অভিযোগ পত্রের কথা বলেছিলাম।”
“কেন সেটা জানতে পারি কি?”
“অবশ্যই পারো। চাকুরে হিসেবে তোমার কর্তব্য ছিল সহকর্মীদের সাথে একটা সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা। সেটা করতে তুমি সম্পূর্ণ ভাবে ব্যর্থ হয়েছো। তোমাকে নিয়ে সবাই টেনশনে থাকে, এতে কাজের ক্ষতি হয়।”
“আমাকে নিয়ে টেনশন? কেন? আমি কি করেছি যে আমাকে নিয়ে টেনশনে থাকতে হবে?”
“অনেক কিছুই করেছ!” প্রশ্নগুলো যেমন আসতে পারে ভেবেছিল ঠিক তেমনি আসছে দেখে হারানো আত্মবিশ্বাস একটু ফিরে পায় রানা, বলে, “তুমি যার তার কাছে কথা লাগাও! এটা তো কোনো কাজের কথা না।”
ফনা তোলা সাপের মত ফোঁস করে ওঠে নওরীন, “আমি কি কাউকে কখনো মিথ্যে কিছু বলেছি? বানিয়ে বলেছি কিছু? যা সত্যি তাই তো বলেছি? সেটা অস্বীকার করবেন?”
আবার অস্বস্থিতে পড়লো রানা, “অভিযোগ করার কথা আমি তুললেও, করেছে কিন্তু তোমার সহকর্মীরাই। আর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিনিয়রর ভাইয়ারা। আমাকে এসব প্রশ্ন করার কি কারন সেটা আমি বুঝতে পারছি না! তবুও জানতে চাইছো দেখে বলি - সত্যি কথাও সবাইকে সব সময় বলা যায় না, বলতেও হয় না। তুমি এত ছোট নও যে এটা বুঝতে পারবে না। আর উপস্থাপনারও একটা ব্যাপারট আছে, অনেক সাধারণ কথাও বলার ধরনের কারনে অন্যরকম হয়ে যায়। এছাড়া মিথ্যা কথাও তুমি বলেছ।” দৃঢ় গলায় বলে রানা।
“কি মিথ্যে বলেছি?” নওরীনকে দেখে দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া বনবিড়ালের মত মনে হয় রানার।
“কেন? তুমি নওশাদ ভাইকে বলনি আমি তোমার প্রজেক্ট পেপার তৈরী করতে সাহায্য করিনি?” রাগী গলায় জিজ্ঞেস করে রানা।
“বলেছি, কিন্তু সেটা তো আপনার ভালোর জন্যই,” কড়া গলায় বলে মেয়েটা।
“আমার ভালোর জন্য মানে?”
“সে প্রজেক্টে ছিলাম আমি ছিলাম প্রবাল’দা সুপারভিশনে। আমি প্রবাল’দার সাহায্য না নিয়ে আপনার সাহায্য নিয়েছি সেটা জানলে প্রবাল’দা কি আপনাকে চার্জ করতো না?”
কথাটা সত্যি! সহকর্মী প্রবালের সাথে রানার একটা প্রকাশ্য রেশারেশী আছে। ওর প্রজেক্টে নওরীন রানার সাহায্য নিয়েছে জানলে সেটা নিয়ে প্রবাল আসলেই একটা তুলকালাম করতো।
“সেটা জানোই যদি তাহলে আমার কাছে কেন এসেছিলে?”
পলক না ফেলে রানার দিকে ঠায় তাকিয়ে থাকে নওরীন, থেমে থেমে বলে, “বিকজ আই ওয়ান্টেড টু স্পেন্ড টাইম উইথ ইউ!”
কথাটা হঠাৎ মাথায় ঢোকে না রানার, “মানে? তুমি কেন...” হঠাৎ করেই নওরীন কি বলতে চাচ্ছে পরিস্কার হয়ে যায় রানার কাছে। শরীর ঠান্ডা হয়ে যায় ওর! এ কি করে সম্ভব! নওরীন তো সবার সাথেই এরকম। ওর সাথে অন্যরকম তো কখনো মনে হয়নি। কাজ উদ্ধার করার জন্য ও সবার সাথেই মাখামাখি করে, এর কথা ওর কাছে লাগায়। তবে কি এটা চাকরী বাঁচানোর জন্য শেষ চেষ্টা? নওরীনের জন্য যে সহানুভূতি ছিলা রানার নিমিষে উবে গেল সব। চাকরী বাঁচানোর জন্য এমন নীচ হতে পারে কেউ? হঠাৎ করেই রানার খেয়াল হলো কথাটা নওরীন এত জোরে বলেছে যে নিশ্চিত ভাবেই পাশের রুমের জুনিয়ররা সবাই শুনতে পেয়েছে। ছিঃ ছিঃ লজ্জ্বায় মুখ লাল হয়ে যায় রানার। ওদেরকে শোনানোর জন্য একটু জোরেই বলে, “তোমার কথা বিশ্বাস করতে পারছিনা নওরীন। তুমি আমার নামেই কথা লাগিয়েছ বেশি। আমার জন্য তোমার যদি এতই টান তাহলে তুমি সুমন ভাইকে কেন বললে আমি কাজে ফাঁকি দিয়ে নিচে সিগারেট খেতে যাই? জাকির ভাইকেই বা কেন বললে যে আমি পার্টিতে বেলেল্লেপনা করেছি?”
নওরীনের ঠোঁটে একটা নাঁকা হাসি ফুটেই মিলিয়ে যায়, একটা অচেনা স্বরে বিব্রত রানাকে বলে, “পাগল আমি! তাই পাগলামী করেছি। এমন একজনের জন্য... এমন একজন, যার কিচ্ছু বোঝার ক্ষমতা নেই...” একটু থামে নওরীন, “অন্য কারো নামে নয়, আমি শুধু আপনার নামেই কথা লাগিয়েছি!”
নির্বাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকে রানা।
“আপনাকে অনেক বলেছি সিগারেট খাবেন না, এটা ভাল না! বলিনি? আপনি কানেই নেননি। তাই ভেবেছিলাম অফিস থেকে মানা করলে হয়তো...” কেমন অদ্ভুদ ভাবে তাকায় নওরীন, “...আর সেদিন পার্টিতে... আমার সহ্য হয়নি।” হাপরের মত হাঁফায় মেয়েটা “আপনি... কিভাবে... আমার সামনেই জুঁইকে... যে জুঁই আমার বান্ধবী... কিভাবে...” টপ করে এক ফোঁটা পানি পড়ে নওরীনের চোখ থেকে, কিন্তু চোয়াল শক্ত করেই সেই কোনঠাসা যোদ্ধার ভঙ্গিতেই দাঁড়িয়ে থাকে মেয়েটা। রানার সন্দেহ হয় মেয়েটা সম্ভবত জানেই না যে ওর চোখে পানি চলে এসেছে!
এমন সম্ভাবনার কথা কল্পনাও করেনি রানা।
জন্মাবধি ও মুখচোরা থেকে গেছে, মেয়েদের সাথে মেলামেশা হয়নি কখনোই। ওদের নিয়ে আড্ডা-গল্পে জল্পনা-কল্পনায় স্বপ্নের জালই কেবল বুনে গেছে সারাটা জীবন। কোন মেয়ের সাথে প্রেম করা দুঃসাহস কখনো মনে জাগেনি। আজ একটা মেয়ের মুখ থেকে এমন নিপাট স্বীকারক্তি শুনে কেমন জানি একটা অস্থিরতা ভর করে ওর মাঝে - এও কি সম্ভব!
“নওরীন আমি তো...” নিজের গলার সমস্ত কাঠিন্য হারানো খশখশে একটা অচেনা কন্ঠ শুনে চমকে থমকে যায় রানা।
একটা আঙ্গুল তুলে হিশিয়ে ওঠে নওরীন, “চুপ! একদম চুপ! একটা কথাও না...”, রক্ত জমে মুখটা লাল হয়ে গেছে মেয়েটার, “আমি যে কতটা নির্বোধ সেটা আমাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন আপনি! থ্যাঙ্ক ইউ। থ্যাঙ্ক ইউ ভেরি মাচ!” দুই হাত জোড় করে ক্ষমা চাওয়ার একটা ভঙ্গী করে নওরীন, অসহায়ের মত বলে, “আপনার সাথে আমার সম্ভবত আর দেখা হবে না। আপনার কাছে যা দোষ ত্রুটি করেছি তা ছোট ভেবে ক্ষমা করে দেবেন।” প্রচন্ড ঠান্ডায় জমে যাওয়া ভঙুর কচ্ছপের মত রানাকে পেছনে ফেলে হুট করেই দরজা ঠেলে বেরিয়ে যায় মেয়েটা!
১৯ অক্টোবর, ২০০৬
সময়: দুপুর ১২:০০-১২:২০
নিপুনের বাসা, গুলশান, ঢাকা
“আব্বা ওঠেন... ওঠেন আব্বা! অনেক বেলা হয়ে গেছে... উঠে কিছু মুখে দেন।”
ঘুমে বুঁজে আসা চোখ অনেক কষ্টে খুলে বুবুর মুখ দেখে নিপুন। ঘুম জড়ানো গলায় বলে, “বুবু, ডিস্টার্ব করবেন না তো! ঘুমাতে দেন!”
“অনেক বেলা হয়ে গেছে আব্বা। বারটা বাজে! এত দেরি করে ঘুমাইলে শরীর খারাপ করবে!”
“কয়টা বাজে বললেন?”
“বারোটা।”
তড়িঘড়ি করে উঠে বসে রানা, “সর্বনাশ! এগারোটার একজনের সাথে দেখা করার কথা ছিল। আমাকে কি কেউ কল করেছিল?”
“বাসায় কেউ করেন নাই। আপনের মোবিল করেকবার বাজছিল সকালে।”
হাত বাড়িয়ে বালিশের কাছ থেকে মোবাইলটা তুলে নেয় নিপুন। পাঁচটা মিসকল জমে আছ। এর মধ্যে তান্নীরই তিনটা। বাকি দু’টো মাশুকের। মাশুক-তান্নী দু’জনই ওর ও-লেভেলস এর বন্ধু। আজ এগারটার সময় এই তান্নীর সাথেই ওর একটা বিষয়ে দেখা করার কথা ছিল। এখন বারোটা বেজে এগারো। অনেক দেরি হয়ে গেছে, ওকে আর কল দিয়ে লাভ নেই।
দু’হাত মুঠো করে চোখ রগড়ায় নিপুন, “বুবু, মা কই?”
“আম্মা ক্লাবে গেছেন একটু আগে।”
আঁতকে উঠলো ও, “গাড়ি নিয়ে গেছে?”
“জ্বিনা। পাপিয়া-মনির আম্মা আসছিলেন। তেনার গাড়িতে গেছেন।”
হাঁফ ছেড়ে বাঁচে নিপুন। মা মাঝে মাঝেই আড্ডা মারতে উত্তরা ক্লাবে যান। সেখানে এক দঙ্গল সমবয়সী মহীলাদের সাথে তাঁর খুব খাতির। ওঁদের সবারই স্বামী-সন্তান ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকেন। কারও কারও আবার সবাই চলে গেছেন পরদেশে। একা বাসার নিঃসঙ্গতা কাটাতে তাঁদের একমাত্র অবলম্বন ক্লাবের এই আড্ডাটা। সমস্যা হচ্ছে ক্লাবে গেলে সাধারণত মা গাড়িটা নিয়ে যান। আজ তেমন হলে সর্বনাশ হয়ে যেত। বিকালে মাশুকদের সাথে প্ল্যান আছে, গাড়িটা দরকার। কম্বলটা উল্টাতেই সিগারেটের প্যাকেটে হাত পড়ে। একটা বের করা ধরায় ও।
নিপুনের মাথায় পরম মমতায় হাত বুলিয়ে দেন বুবু, বলেন “সিগ্রেট খাওয়াটা ছাইড়া দাও আব্বা। আর বেশী রাইত জাইগো না! স্বাস্থ্য কত খারাপ হয়া গেছে, দেখনদি!”
হাসে নিপুন। আজ পর্যন্ত স্বাস্থ্য খারাপ বই ভাল হয়েছে বলে কখনো শোনেনি ও বুবুর কাছ থেকে। অতিরিক্ত স্নেহ বাৎসল্যে তাঁর সবসময়ই মনে হয় নিপুনের স্বাস্থ্য বুঝি অবনতির দিকে। বৃদ্ধা এ মহিলা আসলে ওদের পরিবারের কেউ নন। বাবা’র জন্মের ক’বছর পরেই দাদী মারা গেলেন। তখন তাঁকে দেখে রাখার জন্য বারো বছরের অনাথ মালেহা বানুকে কাজে রাখেন নিপুনের পরলোকগত দাদা। সেই মালেহা বানু এতদিন ওদের সাথে থাকতে থাকতে কখন যেন পরিবারেরই একজন হয়ে গেছেন। জন্মের পর নিপুন নিজের মাকে যতটা না পেয়েছে, তার চেয়ে পেয়েছে এই বুবুকেই। তাই যে কোনো সুখবর সে আগে বুবুকেই দেয়, বিশেষক্ষণে স্বাভাবিক ভাবেই মায়ের সাথে সাথে বুবুরও পা ছোঁয়। একটা মজার ব্যাপার হলো মালেহা বানুকে বাবা-মা ডাকেন বুবু, নিপুনও ডাকে বুবু। বুবুও বাবা আর নিপুন দুজনকেই ডাকেন “আব্বা”! সোমত্ত্ব হবার পরেও বিয়ে না দিয়ে ওদের জমিদার বংশের সব দোষগুনগুলোর স্বার্থক উত্তরাধীকারী দাদাজান কেন তাঁকে আগলে আগলে রেখেছিলেন সেটা নিয়ে ওদের শতভাগ হয়ে যাওয়া প্রকান্ড পরিবারের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখায় বিভিন্ন মুখরোচক গল্প শুনেছে নিপুন। সেসব ওর কাছে কখনোই গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়নি। বাবা, নিপুন আর পরিবারের সবার জন্য যে অপরিসীম মমতা এই মহিলা ধারণ করেন তার কাছে আর সব কিছুই কেমন যেন গুরুত্বহীণ হয়ে পড়ে!
“বুবু, আমাকে জলদি এক কাপ কড়া কফি দেন তো!”
“কফির সাথে আর কি খাইবেন? চিকিন সেনুইচ দিবো?”
“দেন! আর যাওয়ার সময় একটু এ.সি.টা বন্ধ করে দিয়েন।”
বুবু চলে গেলে মিসকল দেখে মোবাইলে মাশুকের নাম্বার টেপে নিপুন, “কল দিয়েছিলি?”
“দিয়েছিলাম, ফোন ওঠাসনি কেন? আজকের বিকালের প্ল্যান চেঞ্জ হয়েছে। ফু-ওয়াংয়য়ে যাচ্ছি না আমরা।” হুড়মুড়িয়ে বলে মাশুক।
“কেন? বাদ কেন? অনেকদিন তো বোওলিং এ যাই না!”
“কেন বাদ দিয়েছি কেন সেটা শুনলে তুই নাচবি! গতকাল বিকালে জয়ন্ত-সীমান্তর বাবা-মা ইন্ডিয়া গেছেন ঈদের শপিং করতে। ওদের বাসা এ-ক-দ-ম খালি! সেখানে আজ রাত্রে পার্টি হবে।”
“কেমন পার্টি?” ভ্রু কুঁচকে যায় নিপুনের।
“দ্য বেস্ট কাইন্ড... ডি.বি.পি.এম!”
এটা ওদের একটা কোড। ডি.বি.পি.এম. এর পুরো অর্থ দাঁড়ায় ডিজে-বুজ-পিলস-মিটস। তার মানে পার্টিতে ডিজে সহ মিউজিক থাকবে, অফুরন্ত পানীয় থাকবে, ‘ইয়াবা’ কিংবা ‘ই’ থাকবে আর থাকবে মেয়েমানুষ।
“রমজানের মাসে?”
“লাইক উই কেয়ার!”
“কে কে থাকবে?”
“আমরা সবাই। জয়ন্ত আরো কিছু পোলাপাইন ইনভাইট করেছে। গেলেই দেখবি। যাচ্ছিস তো? তোর গাড়িটা লাগবে।”
“আমি তোকে পনেরো মিনিট পরে জানাচ্ছি।”
“কাম অন ম্যান! এক্ষুনি বল। আমি তোকে গ্যারান্টি দিচ্ছি, ইটস গনা বি হেল অব অ্যা পার্টি!”
“আহ হা! বললাম তো পরে জানাচ্ছি!” বিরক্ত হয়ে লাইনটা কেটে দেয় নিপুন।
এক সময় মাশুকদের সাথে প্রচন্ড মাখামাখি ছিল ওর। সেই মাখামাখিটা কমে যায় ওরা সবাই দল বেঁধে আইইউবিতে আর ও একা এনএসইউতে ভর্তি হবার পরে। সেখানেই রাজীব-রানা-তমাল-ফয়সালদের সাথে পরিচয়। রাজীবরা সবাই ছোটবেলা থেকে বন্ধু, একসাথে স্কুল-কলেজে পড়েছে। নিপুনের ব্যাকগ্রাউন্ডটা একদম আলাদা হলেও হিপহপ নিপুন কিভাবে যেন ওদের সাথে একদম মিশে গেল। এসব পার্টি-ফার্টি সেই থেকেই ওর আর তেমন ভালো লাগে না। ইদানিং রাজীবরা সবাই চাকরী-ব্যবসায় ব্যস্ত হয়ে পড়ায় পুরানো সেই বন্ধুদের সাথে ওর আবার ঘনিষ্টতা বেড়েছে। এটা অবশ্য রাজীবরা কেউ জানে না। ওদের পাল্লায় পড়ে ও আবার বাচ্চা ছেলেমেয়েদের সাথে বোতল-পিল নিয়ে রাতবিরাতে পার্টি করছে সেটা জানলে ওরা খামোখাই হইচই করবে, কি দরকার জানানোর!
“হ্যালো দোস্ত, ব্যস্ত নাকি?”
“হুম একটু ব্যস্ত আছি। কেন কি ব্যাপার?” ও প্রান্তে জিজ্ঞেস করে রানা।
“তেমন কিছু না। আজ বিকালে কি তোর কোনো প্ল্যান আছে? ফু-ওয়াং এ যাবি? অনেকদিন বোওলিংয়ে যাইনা।”
“আজ সম্ভব না দোস্ত। প্রচন্ড ব্যস্ত। আর মনটাও ভাল নেই। কাল একটা আশ্চর্য ঘটনা ঘটেছে! আগামীকাল আড্ডায় বলবো তোদেরকে।”
“আজকেই চল না? মন ভাল হয়ে যাবে। শুধু শুধু কালকের জন্য অপেক্ষা করবি কেন?”
“না দোস্ত আজকে সম্ভব না, পারলে আসতাম!”
“আচ্ছা ঠিক আছে। রাখি তাহলে।”
একে একে তমাল, ফয়সাল, রাজীবকেও কল করে নিপুন। সবাই ব্যস্ত! কেন জানি মিছেমিছি রাগ ওঠে নিপুনের। চাকরী ব্যবসায় ঢুকে সবার যেন ভাব বেড়েছে। সবার অফিস শেষ হয়ে যায় সেই চারটা-পাঁচটার মধ্যেই। এর পরে ফু-ওয়াং এ যেতে কি সমস্যা সেটা মাথায় ঢোকে না ওর।
আবার মোবাইলের নাম্বার দাবায় নিপুন। ওপাশে ফোন ওঠায় মাশুক। একটা লম্বা টানে সিগারেটটা শেষ করে নিপুন বলে, “দোস্ত, আই অ্যাম ইন!”
সময়: দুপুর ১১:০০-১২:৩০
জয়ন্ত-সীমান্তর বাসা, ধানমন্ডি, ঢাকা
জয়ন্ত-সীমান্ত জমজ দুই ভাইকে ঢাকার পার্টি বিশারদ বলা যায়। ওদের ডুপ্লেক্স বাড়িটা ধানমন্ডিতে। দরজা দিয়ে ঢুকেই একটা কমন এরিয়া, অনেকটা রিসিপশনের মত। সেখান থেকে নিচ তলায় ঢুকে গেলে ওদের বাবা-মার থাকার জায়গা, আর সিড়ি টপকে উপরের উঠে গেলে ওদের দুই ভাইয়ের।
ওদের দ্বিতীয় তলাটা পার্টির জন্য আদর্শ। একে তো সেখানে কি হচ্ছে তা নিচে থেকে ভাল মত বোঝা যায় না। তার ওপর ওদের ডেকোরেশনটাও পুরোদমে পার্টিবান্ধব। পুরো তলায় একটাও অপ্রয়োজনীয় আসবাব নেই বলে সুবিশাল ফ্লোরটা প্রায় খালিই বলা যায়। মোটে চারটে রুম সেখানে - দুইভাইয়ের দু’টো ব্যলকনি আর অ্যাটাচ বাথ সহ বেডরুম, একটা সাজানো লিভিংরুম আর একটা ডাইনিং। কোনো কিচেন নেই। খাবারদাবারের পাটটা নিচেই হয় বলে ডাইনিংরুমটাকে দুই ভাই পুলটেবিল বসিয়ে স্পোর্টসরুমে রূপান্তরীত করেছে। স্পোর্টসরুমের সাথেও একটা প্রকান্ড ব্যলকনি লাগানো। লিভিং রুম, স্পোর্টসরুম আর ব্যলকনি জুড়ে মোটা ফোমে মোড়া দামী চামড়ার কাউচ বসানো। সবগুলোর সামনেই অসংখ্য ডেকোরেশন পিসে ভরা একটা করে ক্রিস্টালের টেবিল। প্রতিটা রুমের কর্ণারে জিরো পাওয়ারের লাইট লাগানো। পার্টি হলে দুইভাই শুধু সেই লাইটগুলো জ্বালিয়ে রেখে বাকিগুলো নিভিয়ে দেয়। এতে রঙিন আলো-আঁধারিতে একটা রহস্যময় ভাব আসে। লিভিংরুমের প্রকান্ড ফ্ল্যাটস্ক্রিনে সাইলেন্ট করে হিন্দী পপ গানের মিউজিক ভিডিও ছেড়ে দেয়া হয়। সাইলেন্ট। কারন একে সেখানে শোনার চেয়ে দেখার উপাদানই বেশি। আর সীমান্ত নিজেই শখের ডিজে। ছ’শো ওয়াটের কয়েকটা স্পিকার, কম্পিউটারে ডিজে সফটওয়্যার আর আরো কিছু যন্ত্রপাতি দিয়ে চমৎকার সাউন্ড মিক্সিং করে ছেলেটা। তাই পার্টিটা জমে সাধারণত ওদের লিভিংরুম আর স্পোর্টসরুমকে কেন্দ্র করেই। তবে মাঝে মাঝে বেডরুম দুটোরও একটা উত্তেজক ব্যবহার হয়ে যায়।
জয়ন্তদের বাসার সামনে বেশ কয়েকটা গাড়ি দেখলো নিপুন। অনেকেই চলে এসেছে মনে হচ্ছে। আরএসভিটা পার্ক করতে করতেই মাশুকের মোবাইল বেজে ওঠে। গাড়িটা ব্যাক গিয়ারে দিয়ে পজিশন ঠিক করতে করতে এ প্রান্তে মাশুকের কথা শুনে নিপুন।
“ইয়াপ, উই আর হেয়ার।”
“উই হ্যাভ ইট।”
“এনাফ ফর অল অব আস।”
“নো... এভরিথিং ওয়েন্ট অ্যাজ উই প্ল্যানড।”
“অ্যাট দ্য পার্কিং।”
“ওকে, সি ইউ ইন অ্যা বিট।”
মাশুককে নিপুন সাড়ে দশটার সময় আইইউবি থেকে তুলে নিয়েছে। ছেলেটা এখনো ছাত্রই রয়ে গেছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে যে বেরুবে তারও কোনো সম্ভাবনা নেই।
এসব পার্টিতে সবাইকে ভাগ করে দায়িত্ব দেয়া হয়। কারও কারও দায়িত্ব থাকে লিকার আনা, কেউ কেউ যারা গাড়ি আনতে পারবে না তাদেরকে রাইড দেয়, কেউ খাবার আনে, কেউ সফট ড্রিংস। আজ ওদের দায়িত্ব ছিলো ইয়াবা সংগ্রহ করা। এটা কঠিন কোনো কাজ না। মাশুক চেনা একটা নাম্বারে কল দিয়ে পরিমান আর কোথায় আসতে হবে সেটা বলেছে। আধা ঘন্টার মধ্যেই সিলভার বি.এম.ডব্লিউতে চড়ে জিনিস চলে এসেছে গুলশান ক্লাবের সামনে।
সিড়িতে পা রেখেই সাউন্ডসিস্টেমের কাঁপুনি টের পেল নিপুন, পার্টি নিঃসন্দেহে জমে গেছে! গত এক ঘন্টার মধ্যে কম করে হলেও সাত/আট বার ওরা কোথায় জানার জন্য কল এসেছে মাশুকের মোবাইলে। দোতলার দরজা ঠেলে ঢুকে একটু দাঁড়িয়ে অন্ধকারটা চোখে সয়ে নেয় নিপুন আর মাশুক। লিভিংরুমের এক প্রান্তে একটা টেবিলে মিক্সিং এর মাল-সামাল সাজিয়ে দূর্দান্ত ডিজেগিরি করছে সীমান্ত। পুরো ফ্লোরে এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ২০/২৫জন ছেলেমেয়ে, প্রায় সবাই টিনএজার। একপ্রান্তে কাউচ সরিয়ে ড্যান্সফ্লোরের মত বানানো হয়েছে। সেখানেও উদ্দামতার অভাব নেই।
ওরা এসেছে লক্ষ্য করে সাউন্ড একদম নামিয়ে দেয় সীমান্ত। নাটুকে গলায় স্পিকারে বলে, “লেডিজ অ্যান্ড জেন্টলম্যান! আই হ্যাভ অ্যান অ্যানাউন্সমেন্ট টু মেক... আওয়ার ম্যাজিক পিলস হ্যাভ জাস্ট অ্যারাইভড!”
ঘোষনা শোনা মাত্র বাসা ভর্তি ছেলেমেয়ে সবাই একসাথে হইহই করে ওঠে।
আর নাচা সম্ভব না, পা ব্যাথা করছে। অল্প অল্প নেশাও ধরেছে মনে হচ্ছে। পকেটে এখনো ওর ভাগের ইয়াবাটা পড়ে আছে। গিলতে ইচ্ছে করছে না। ঢুলু ঢুলু চোখে সবাইকে দেখে ও। সবার মধ্যেই কেমন যেন একটা অসুস্থ উদ্দামতা আর চোখে একটা নিষিদ্ধ নেশার ছায়া খেলা করছে। দেশের বাইরের ক্লাবে যাওয়ার সৌভাগ্য ওর হয়েছে, সেখানে কখনো ওর এমন অনুভূতি হয়নি। নিপুনের ধারনা, বাংলাদেশে প্রকাশ্য ক্লাব-কালচার কিংবা নাইটলাইফ নেই বলেই এসব গোপন পার্টিতে সবাই যতটুকু আনন্দ করা সম্ভব করে নিতে চায়। একটা বেপরোয়া ভাব থাকে সবার মধ্যে। সেই বেপরোয়া ভাব থেকেই আসে নষ্টামি, নষ্টামি থেকে নোংরামী, নোংরামী থেকে ধ্বংসামী আচরণ। নিপুন নিজেই কয়েকটা পার্টিতে মেয়ে নিয়ে গোলাগুলির সাক্ষী। এমন ঘটনা এত ঘটেছে যে কিছু পার্টিতে হোস্ট আগে থেকেই বলে দেয় পার্টিতে আসতে হলে নিজের বান্ধবী নিয়ে আসতে হবে - তা না হলে নয়।
সিগারেটটা ধরাতেই নিপুনের পাশে এসে দাঁড়ায় একটা মেয়ে, “মে আই হ্যাভ এ স্মোক ফ্রম ইউ?”
কথা না বলে নিজের প্যাকেটটা বাড়িয়ে দেয় নিপুন।
“আপনিই ইয়াবা এনেছেন?” সিগারেট নিতে নিতে বলে মেয়েটা।
“হুম! আমি আর মাশুক।”
“থ্যাঙ্কস! আপনারা না আসলে পার্টিটা ঠিক জমতো না। আমার নাম দীপা।” হ্যান্ডশেকের জন্য একটা হাত বাড়িয়ে দেয় মেয়েটা।
মেয়েটার হাত ধরে হালকা করে একটু ঝাঁকিয়ে দেয় নিপুন। মেয়েটার হাতটা ঠান্ডা, কথাবার্তাও সংযত, সম্ভবত মেয়েটা এখনো ইয়াবা নেয় নি... কিংবা অল্প আগে নিয়েছে, ভাবে নিপুন।
“আমার নাম নিপুন। আচ্ছা আপনাকে আগে কোথায় দেখেছি বলুন তো?”
চোখে মুখে একটা উপচে পড়া আনন্দ নিয়ে কাউচে নিপুনের ঠিক পাশে বসে পড়ে মেয়েটা। সিগারেট ধরিয়ে বলে, “আমি গান গাই। আমার একটা সোলো অ্যালবাম বেরিয়েছে এই ক’দিন আগে।”
দীপাকে এবার চিলে ফেললো নিপুন। দীপা হক! ওর সোলো অ্যালবামে ঢাকার দেয়াল এখন ছয়লাপ হয়ে আছে। ওর কয়েকটা মিউজিক ভিডিও ও দেখেছে নিপুন নানান চ্যানেলে, ওর মনে হয়েছে হিন্দী মিউজিক ভিডিওর লেইম কপি।
ঘুরে বসে দীপাকে ভালমত দেখে নিপুন। মেয়েটা অসাধারণ সুন্দরী সে বিষয়ে সন্দেহ নেই! চটুল গান গাইলেও মেয়েটার গলাটাও মন্দ নয়, ধ্রুপিদী গানের রেওয়াজ করেছে বললেও নপুন অবিশ্বাস করবে না। মেয়েটা সিগারেটে টান দিচ্ছে ঠিকই, কিন্তু ধোঁয়া মুখে নিয়েই ছেড়ে দিচ্ছে, ভেতরে যাচ্ছে না কিচ্ছু! নতুন ধরেছে।
দীপার ব্যাকগ্রাউন্ড আন্দাজ করার চেষ্টা করলো নিপুন। কথা বলছে শুদ্ধ বাংলায়। যদিও জিনস, উঁচু হিলের বুট আর লম্বা করে কাটা গলার টপ পরেছে তবুও মনে হচ্ছে এসব জামায় ও অভ্যস্থ নয়। কেমন যেন একটা জড়তা আছে, জোর করে পরিবেশের সাথে মিশে যাবার চেষ্টা আছে। দীপা সন্দেহাতীত ভাবেই অনাকাঙ্খিত উপায়ে কাঙ্খিত শো বিজনেসে ঢুকে পড়া মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে।
“আপনার গান আমি শুনেছি টিভিতে। আপনার গলাটা খুব মিষ্টি। সোলো সিডিটা অবশ্য কেনা হয়নি।”
“কিনতে হবে না। আমি ফ্রি দেব আপনাকে।” একগাল হেসে আন্তরিক ভাবেই বললো মেয়েটা।
“আপনি কি নর্থ সাউথে পড়ছেন?”
“না! আমি লালমাটিয়া কলেজে পড়ি। এইচ.এস.সি. দেব এইবার।”
“অনেক ছোটবেলা থেকে গান করেন বুঝি? আমি খেয়াল ক...” হঠাৎ করেই দীপার কাঁধের ওপর দিয়ে পরিচিত একটা মুখ দেখতে পেয়ে কথার খেই হারিয়ে ফেলে নিপুন - তৃণা! ও কি করছে এ পার্টিতে... আসলোই বা কখন! গান নিয়ে এলোমেলো কি যেন বলতে থাকে দীপা সেগুলো কানে যায় না নিপুনের।
তৃণা যে মাতাল সেটা পরিস্কার দেখা যাচ্ছে। সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না। বাচ্চা একটা ছেলের কাঁধে মাথা রেখে দাঁড়িয়ে আছে। সাথে আরো তিনটে ছেলে। কারো বয়সই ১৯/২০ এর বেশি হবে না। ছেলেগুলোর দৃষ্টি ভাল লাগলো না নিপুনের। ওদের সাথে এখানে তৃণা কিভাবে এলো ভেবে পেল না ও। এখন ওর ঠিক কি করা উচিত বুঝতে না পেরে একটা দ্বিধা নিয়েই উঠে দাঁড়িয়ে দীপার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে নিপুন, “এক্সকিউজ মি দীপা!”
এরপর সোজা হেঁটে গিয়ে তৃণার বাম বাহু ধরে ও, “তৃণা, একটু এদিকে এসো... প্লীজ!”
হইহই করে আপত্তি জানায় ছেলেগুলো, “হোয়াট ইজ দিস ম্যান? শী ইজ উইথ আস!”
নিপুনকে দেখে কোনোই বিকার হয় না তৃণার। ঢুলু ঢুলু চোখে তাকিয়ে কেবল বলে, “ইটস ওকে গাইজ! আই উইল বি রাইট ব্যাক!”
আড়ালে নিয়ে গিয়ে শক্ত হাতে দুই কাঁধ ধরে টলমলে তৃণাকে সামলায় নিপুন। চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করে, “তুমি ওদের সাথে এখানে এসেছো রাজু জানে?”
চোখ লাল করে ওর দিকে তাকায় তৃণা। ঝগড়া করার ভঙ্গিতে বলে, “না জানে না! কোথায় যাই না যাই সব ওকে বলে যেতে হবে? আর হু আর ইউ টু আস্ক মি দিস কোশ্চেন?”
“তৃণা, তুমি ড্রাঙ্ক! ছেলেগুলো ভাল না। চলো আমি তোমাকে বাসায় দিয়ে আসি। এ বিষয়ে কিচ্ছু জানবে না রাজু, প্রমিজ। আমি বলবো না।”
“নো ওয়ে! নাইট ইজ স্টিল ইয়াং। আমি এখন যাব না। মাইন্ড ইউর ওন বিজনেস নিপুন! বললে বলো গিয়ে তুমি রাজীবকে। আমি ভয় পাই?”
জীভ দিয়ে শুকনো ঠোট ভেজায় নিপুন, “তৃণা, তোমার কোনো সেন্স নেই তুমি কি বলছো! আমি তোমাকে বাসায় নিয়ে যাচ্ছি!” তৃণার বাহু ধরে টানে নিপুন।
এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করে তৃণা। চিৎকার করে বলে, “ডোন্ট টাচ মি ইউ ফ্রিক! লিভ মি এলোন। গো ফাক ইউরসেলফ!”
হতভম্ভ হয়ে হাতটা ছেড়ে দেয় নিপুন। ওর সামনে দিয়েই টলতে টলতে আবার ছেলে গুলোর দিকে ফিরে যায় তৃণা। ওকে দেখেই নোংরা হাসি ফুটে ওঠে ছেলেগুলোর ঠোঁটে। একজন একটু এগিয়ে এসে কোমড় জড়িয়ে ধরে তৃণার, সেই জড়ানো হাত জিনসের ভেতরে ঢুকিয়ে নগ্ন বাম নিতম্ব খামচে ধরে মুখের কাছে মুখ এনে বলে, “হেয়ার ইজ আওয়ার গার্ল!”
উদভ্রান্ত-বিভ্রান্ত, স্তম্ভিত-অপদস্হ নিপুনের হঠাৎ করেই কেন জানি বমি পায়।
[চলবে...] © অমিত আহমেদ
মন্তব্য
ই-বইয়ে সিরিয়াল উল্টে পাল্টে যাচ্ছে কেন বুঝতে পারছি না। ৮, ৯ এর পরে ৭, এর পরে ১-৬।
প্রিন্টযোগ্য ভার্সনের উদ্দেশ্য ব্যহত হচ্ছে এ কারনে। কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এ বিষয়ে। পোস্টের তারিখ ধরে (এডিটের নয়) অটো সর্ট করলে মনে হয় ভাল।
ভালবাসি, ভালবাসি, ভালবাসি তোমায়!
ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
প্রকাশের তারিখে ঘাপলা হয়েছে। তুমি ৬ থেকে ক্রমে ক্রমে ১ পর্যন্ত এভাবে প্রথমে প্রকাশ করেছে তারপর ৮, ৯ প্রকাশ করেছ।
এটা ঠিক করতে ডেট রিসেট করা লাগবে। ডেট রিসেট করার জন্য প্রথমে যে কোন পোস্টকে নিজ ব্লগে (বা খসড়া হিসেবে) প্রকাশ কর, তারপর প্রথম পাতায় প্রকাশ কর। এতে তারিখ বদলে গিয়ে তখুনি প্রথম প্রকাশিত - এরকমটা হয় যাবে এবং লেখাটা বইয়ের সবচেয়ে উপরে (মোস্ট রিসেন্ট) চলে আসবে। এরপর লেখাটিকে চাইলে আবার নিজ ব্লগে প্রকাশ করে ফেলতে পারো।
রিসেট কিভাবে করতে হয় বোঝার পর লেখাগুলির ক্রম ঠিক করার জন্য প্রথমে ৯, ৮, ৭ এভাবে ক্রমে ক্রমে ১ পর্যন্ত রিসেট কর। এতে ১ হবে মোস্ট রিসেন্ট প্রকাশিত লেখা এবং থাকবে সবার উপরে। আবার ১০ নম্বর খন্ড প্রকাশ করলে পুরো প্রসেসটা করতে হবে।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
অবশ্য প্রিন্টযোগ্য ভার্সনে উল্টোটা করার ব্যবস্থা রাখাটা জরুরী মনে হচ্ছে।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
বুদ্ধিটা কাজে লাগলো না। লেখা নিজ ব্লগে নিয়ে সাইজ করার চেষ্টা করতে গিয়ে বরং আরো গুবলেট পাকিয়ে ফেলেছি। কি আর করা, থাক এমনেই।
ভালবাসি, ভালবাসি, ভালবাসি তোমায়!
ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
দুর্দান্ত হচ্ছে কিন্তু অমিত । পড়তে পড়তে যেনো দেখা হয়ে গেলো ।
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
দুর্দান্ত
হাসান মোরশেদ ও মাহবুব লীলেন ভাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ!
ভালবাসি, ভালবাসি, ভালবাসি তোমায়!
ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
এটা ভালো লেগেছে। তার মানে সমস্যা আগের পর্বে
অমিত তুমি কি জান তুমি কত ভাল লেখো????????
আমি এক নিঃশ্বাসে সবটুকু পড়েছি যতটুকু লিখেছো।চৌম্বক আকর্ষণের সাথে অদ্ভুত সহজাত লেখনীর মিশেল খুব বেশি দুর্লভ।আমি আসলেই বাক্যহারা।
::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::
::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::
নতুন মন্তব্য করুন