• Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_clear_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_electoral_list_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_results_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_writeins_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).

গন্দম | এক

অমিত আহমেদ এর ছবি
লিখেছেন অমিত আহমেদ (তারিখ: বুধ, ৩১/১০/২০০৭ - ৬:১১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

৬ ফেব্রুয়ারী ২০০৭
সময়: দুপুর ১২:০০- ২:১৫
স্থান: নিউ মার্কেট ও এসপ্লানেড, কোলকাতা

নিউমার্কেটেই ফালতু আর্ধেকটা ঘন্টা নষ্ট হলো! সবটাই দিদির দোষ। কোলকাতার গলি-মহল্লায় ইদানিং লেহেঙ্গার ধুম উঠেছে, সামনে দোল, তার আগেই মহামান্যার নতুন লেহেঙ্গা চাই। নিউমার্কেটে দিদির প্রিয় "সুদর্শণায়" অর্ডার দেয়াই ছিল - দিদির কথা মতে দোকানে স্লিপ দেখালেই দোকানী লেহেঙ্গা বের করে দেবে। মোটে পাঁচ মিনিটের কাজ, সে কাজেই নষ্ট হলো আধাটা ঘন্টা। দোকানী স্লিপ নিয়ে অন্য খদ্দের সামলায়, চায়ের ভাঁড়ে চুমুক দেয়, লেহেঙ্গা আর বের করে না। পরে জানা যায় লেহেঙ্গা রয়েছে তাদের কারিগরের বাসায়, সেটা আনতে লোক গিয়েছে!

আজ দীপকের ঠিক আড়াইটায় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে ঋতুর সাথে দেখা করার কথা, এখন বাজছে দুটো। হাতে আছে মোটে আধা ঘন্টা!

চট্ করে মানিব্যাগ দেখে সামনে পাওয়া প্রথম ট্যাক্সিতেই উঠে পড়লো দীপক। যে পরিমান সময় নষ্ট হয়েছে ট্যাক্সি ছাড়া এখন আর উপায় নেই। "মেমোরিয়াল চালিয়ে..." শীখ ড্রাইভারকে হুকুম দিল দীপক, "যারা জালদী ভাগনা ভাইয়া!"

চরম বিতৃষ্ণা নিয়ে হাতের প্যাকেটের দিকে তাকালো দীপক, ইচ্ছে করছে নষ্টা লেহেঙ্গাটাকে এক ঝটকায় জানালা দিয়ে নর্দমায় ছুড়ে ফেলতে। কম ভোগালো না আজকে! আসলে দিনটাই কুফা! রাফী আহমদ রোড় থেকে রিক্সায় নিউমার্কেট যেতে সময় লাগে মোটে দশ মিনিট, সেই পথ পেরুতে আজ লেগেছে প্রায় আধা ঘন্টা! দীপক সবে রাফী আহমদ জামে মসজিদের ঠিক উলটো পাশের সানিয়া মির্জার সবুজ বিলবোর্ডের দিকে নজর দিয়েছে (এই রাস্তা দিয়ে গেলে এটা দীপকের বাধ্যতামূলক কাজ) ঠিক সে সময়ে রিক্সাওয়ালা নিদ্ধিধায় রিক্সার বাম চাকা ড্রেনে ফেলে দিল। দীপক উপুড় হয়ে পড়লো রিক্সাওয়ালার ঘাড়ে - সে এক বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা! বুড়ো রিক্সাওয়ালার ততোধিক বুড়ো ধুতি আর ময়লা শতচ্ছিন্ন জামাটা দেখে দীপক খেঁকিয়ে উঠতে গিয়েও থমকে যায়। বুড়ো কিছু বলে না, মুখে ব্যগ্র অনুশোচনা নিয়ে হাত থেকে খসে পড়া ঘন্টিটা তুলে নিয়ে ভেজা হাতে রিক্সার হাতল ধরে। গরম পিচের রাস্তায় ফাটল ধরা নগ্ন পা চালায়। কান্ডটা করার অপরাধবোধেই হয়তো, বেচারা রিক্সাটাকে শম্বুক গতিতে নিয়ে আসে। সেই সাথে মিনিট গুনে গুনে ঘন্টির টুংটাং। মার্ফিস ল বলে "Whatever can go wrong, will go wrong." লোকটার বিবেচনার জোর দেখে শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে দীপকের।

ট্যাক্সির মধ্যে গুমোট গরম। চিন্তিতভাবে রাস্তা দেখতে দেখতে একটা গোলডফ্লেক ধরায় দীপক। সময় মত মেমোরিয়ালে পৌঁছানো যাবে নাকি কে জানে। দুশ্চিন্তা কমানোর জন্য অন্য দিকে মন দিল ও। সামনেই বিশ্বকাপ, এবার কাপটা ভারতের হবেই হবে। কাপ না হলেও চলে, কিন্তু সৌরভের রান চাই। যে ভাবে দাদা দলে ঢুকেছে সেটা একটা ইতিহাস হয়ে গেল, এখন ২/১ টা শতক পেলেই ষোল কলা পূর্ণ হয়! তবে যে যাই বলুক, বাঙালীর জোরটা কিন্তু দেখিয়ে দিয়েছে মহারাজা! চ্যাপেলের কথা ভেবে ঠোট মুড়ে হাসি চলে আসে দীপকের। আরে বাবা সেই তো রাজাকে দলে নিতেই হলো - জল খাবিই যখন সেটা ঘোলা করে কেন? বেয়াকুবটা আবার এখন ভারতীয় দল নিয়ে খোদ কলকাতার বুকেই অনুশীলন চালাচ্ছে!

আচমকা ব্রেকে চিন্তার তাল কাটে দীপকের। গাড়ি এসপ্লানেডে থেমেছে। ভ্রু কুচকে সামনে তাকাতেই বুকটা ধক্ করে ওঠে ওর! যদ্দুর দেখা যায় গাড়ির পর গাড়ি, ঠায় দাঁড়িয়ে আছে! জানালা দিয়ে গলা বাড়িয়ে পাশের মারুতির চালককে জিজ্ঞাস করে দীপক, "কি হলো দাদা? এত বড় জ্যাম বাঁধলো কি করে?"
"আর বলুন... নন্দীগ্রামের ঘটনাটা ঘটলো না... তাই তৃণমূল রোড় ব্লক করে দাঁড়িয়ে আছে! কি মানে হয় বলুন দেখি!"
মেজাজটা গরম হয়ে যায় দীপকের, গলায় ঝাঁঝ নিয়ে বলে, "আরে মশায় প্রতিবাদ কি এভাবে হয় নাকি? নিরিহ মানুষের..." দীপকের উত্তপ্ত বাক্য ফুরাবার আগেই মিলিয়ে যায় রাস্তার পাশে দাঁড়ানো তৃণমূলদের বজ্র স্লোগানে! হাভাতে মানুষের সম্মিলিত স্লোগান কোন এক অজানা শক্তিতে কাঁপন ওঠায় দীপকের অনূরণনে, মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে:
"ভুলতে পারি বাবার নাম, ভুলবোনা নন্দীগ্রাম!"

সময়: দুপুর ২:২৫-৩:১২
স্থান: ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, কোলকাতা

দুপুরের দিকে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে প্রেমিক-প্রেমিকারা ছাড়া আর কেউ থাকে না বললেই চলে। দর্শনার্থীদের ভীড় বাড়তে থাকে বিকাল চারটার পর থেকে। তখন চাকরী থেকে ফিরে বাবুরা বিবি-বাচ্চাদেরকে নিয়ে ভিক্টোরিয়ার বাগানে ঘুরতে আসেন, দাদুরা আসেন নাতি-নাতনিদেরকে নিয়ে, বিদেশী পর্যটকদেরও আনাগোনা বাড়ে।

মেমোরিয়ালে ঢুকেই চমকে যেতে হয় - খাস কোলকাতার বুকে এমন চটকদার মার্বেলে রেঁনেসা আদলে স্থাপত্য কল্পনা করাটা একটু কঠিনই বটে! বাইরের গেট থেকে প্রধান হলের মাঝে ইউরোপিয়ান ধাঁচের উদ্যান, তার বুক চিঁরে গাড়ি রাস্তা চলে গেছে সোজা প্রধান দ্বারে। উদ্যানের দু'পাশে বর্গাকার বিশাল বিশাল দু'টো শান বাঁধানো চৌবাচ্চা - যদিও সেখানে পানি মোটে ৫/৬ আঙ্গুল, সবাই বলে সরোবর।

ঋতু দীপকের জন্য সব সময় ডান দিকের সরোবোরে ধাঁরে অপেক্ষা করে, এটা এক রকম রুটিন হয়ে গেছে, মেমোরিয়াল বললেই দু'জনে বুঝে নেয় ডান দিকের সরোবরের কাছে দেখা হবে। সরোবর দু'টো ১২-১৫ ফিট পরপর ঝুমকো ঝুমকো সব বুড়ো গাছ দিয়ে ঘেরা। দুপুরে আসলে এই গাছ গুলো খালি পাওয়া প্রায় অসম্ভব, সব জোড়ায় জোড়ায় দখল হয়ে যায়। অনেকে আবার ছাতা নিয়ে আসে - গুটিসুটি মেরে ছাতার আড়ালে উদ্দামতায় মাতার আশায়। এ জিনিসটা একদমই সহ্য করতে পারে না ঋতু। সবার সামনে স্পর্শ্ব, সে যত নির্দোশই হোক না কেন, গা ঘিনঘিনিয়ে ওঠে ওর।

এ একটা কারনেই মেমোরিয়ালে আসতে আপত্তি ওর। কেবল সিনপ্লেক্সে যাবার কথা থাকলেই ও মেমোরিয়ালে পা ফেলে। দীপক আসে রাফী আহমদ রোড থেকে, ও আসে কলেজ স্ট্রিটের প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে - দু'জনেরই মাঝ পথে মেমোরিয়াল পড়ে যায়। তাই এখানে দু'দফা পানিপুরী খেয়ে ট্যাক্সি নিয়ে একসাথে সোজা সিনেমায়।

ঋতু আজ নিশ্চিত ছিল কোন গাছ খালি পাওয়া যাবে না। আশ্চর্য ভাবেই সেটা ভুল প্রমানিত হয়েছে, ওর প্রিয় গাছটাই খালি পাওয়া গেছে। সরোবরের উল্টো দিকের তিন নম্বর গাছটা কারন ছাড়াই ওর পছন্দের! আস্তে বাঁ হাত উঠিয়ে সময় দেখলো ঋতু, পৌনে তিনটা বাজে। দীপক আজও দেরী করছে! এরকম একটা খোলা জায়গায় সুন্দরী একটা মেয়ের একা অপেক্ষা করাটা যে কতটা বিব্রতকর সেটা ছেলেরা কখনই বুঝবে না! সবাই, এমনকি যারা বান্ধবী নিয়ে এসেছে তারাও, হা করে তাকিয়ে থাকে। অনেকে পাশ দিয়ে হেঁটে যাবার সময় নোংরা মন্তব্য করে। যতই বয়স হোক এগুলোতে মেয়েদের কখনই অভ্যস্ত হওয়া হয়ে ওঠে না।

দুই হাঁটু এক করে তাতে মাথা রেখে সরোবরের পানির দিকে তাকিয়ে থাকে ঋতু। বেশ হাওয়া দিচ্ছে আজকে, সরোবরের সবুজ পানি ঢেকে গেছে শুকনো পাতায়। মেমোরিয়ালের সব চকমকে হলেও সরোবরের পানিটা কখনই পাল্টানো হয়না! ঋতুর অবশ্য এমনটাই ভালো লাগে। শ্যাওলায় সবুজ পানি বাগানের ঘাশ আর গাছে মিলে একাকার হয়ে থাকে - টলটলে পরিষ্কার পানিতে এই মিশেল আসবে না।

আরেকবার ঘড়ি দেখলো ও, চারটা পঞ্চাশ! এখনও খবর নেই! অথচ গতকাল পইপই করে বলা হয়েছে দেরি যেন না হয়। পাশ দিয়ে একটা জোড়া বাঁকা চোখে তাকিয়ে যায়। ওদের দৃষ্টির সামনে বিব্রত ঋতুর গলাটা শুকিয়ে আসে। ওদের কি দোষ! ইট-শুরকীর কোলকাতায় প্রেমের জায়গার বড্ড অভাব, সেখানে ও একা একটা জায়গা বহুক্ষণ হলো দখল করে আছে। ওদের জায়গায় ঋতু হলেও বিরক্ত বোধ করতো।
প্লীজ, প্লীজ, প্লীজ দীপক তাড়াতাড়ি এসো!

ওড়নাটা আরেকটু জড়িয়ে আকাশের দিকে তাকায় ঋতু। আকাশে সাদা-কালো মেঘের ঘনঘটা, বাতাসটাও ভারী - জল করবে নাকি! আঙ্গুল গুনে বাংলা মাসের হিসাব করলো ও - মাঘ মাস! মাঘ মাসে বৃষ্টি কেন কোলকাতায়! আপন মনেই হেসে ফেললো ঋতু, বাবার নামকরন স্বার্থক বোঝা যাচ্ছে, প্রেমিকের অপেক্ষায় ঋতুর চিন্তা হচ্ছে ঋতু নিয়ে! ৩টা। এবারতো দীপকের উপর রাগ হওয়া উচিত, বর্বরের মত আধাটা ঘন্টা অপেক্ষায় রেখেছে!

আজ তৃণমূলের অবরোধ, তাতেই কি রাস্তায় আটকা পড়লো? এখন উল্টে নিজের উপরেই রাগ উঠলো ওর। খেয়াল করে দেখেছে দীপকের উপর কখনও রাগ টিকে না ওর। মন নিজের অজান্তেই দীপকের পখে যুক্তি দাঁড়া করিয়ে ফেলে। কেন এমন হবে। ও তো অবরোধের কথ চিন্তা করে আজ আগে আগেই বেরিয়ে পড়েছে!

"এই যে দিদি, একা নাকি?" চমকে বাঁয়ে তাকালো ঋতু, ১৮/১৯ বছরের বাচ্চা একটা ছেলে দাঁড়ানো। পরনে কটকটে গোলাপী হাফ হাতা শার্ট, পায়ের সাথে লেপ্টে থাকা সস্তা জিনস্‌। পেছনে একই রকম আরও তিন জন, সবার হাতেই জ্বলন্ত চারমিনার। ওদের দেখেই যা বোঝার বুঝে নিল ঋতু, অসহায় ভাবে তাকালো চারপাশে। সবাই যে যার গাছতলা থেকে জুলজুল চোখে তাকিয়ে আছে।
"কত? কিমত কত?" জীহ্‌বা বের করে শুকনো ঠোঁট ভেজায় ছেলেটা।
"কিমতের কথা কি বলজেন গুরু, এমন মজাক দোব মাগী আরও করজোরে প্রসাদ চাইবে!" পেছন থেকে কৌতুক নিয়ে বলল কেউ।
লাফিয়ে উঠে দাঁড়ালো ঋতু, দলটাকে পাশ কাটিয়ে যাবার সময় সাবলিল ভাবে ঋতুর বুকটা ছুঁয়ে দিল ছেলেটা। মাথা নিচু করে পেছনের খিকখিক হাসি ফেলে অন্ধের মত ছুটলো ও। গলার কান্না আটকে রেখেছে অনেক কষ্টে। হে ভগবান কৃপা হও, দীপককে পাঠিয়ে দাও এক্ষুনি - এক্ষুনি!

পথরোধ করে দাঁড়ায় লম্বা, পাতলা, ফর্সা এক যুবক... বিনয় নিয়ে বলল, "কিছু মনে করবেন না, একটা কথা জা..."
এত দিনের নারী জীবনে কোন গলায় কি আছে সেটা অন্তত্য বুঝতে কষ্ট হয়না ঋতুর, বুঝে গেল যেই হোকনা কেন ওর কাছে ভয় নেই। ছেলেটার কথা শেষ হবার আগেই খপ করে ওর হাত ধরে হিঁচড়ে সাথে নিয়ে চলল ঋতু, কেন ও নিজেই জানে না। হয়তো ওর পেলব নারী মনের কাঠিন্যের বাসনা যা পারার কথা দীপকের কাছ থেকে তার খোঁজ অবচেতন মন খুঁজে নিয়েছে অচেনা যুবকের কন্ঠ থেকে। তবে সেটা গল্পের বিবেচ্য নয়, কারন আমরা জানি মাঝে মাঝে যুক্তি-হিসাবকে ফেলে মনের মালিকানা নিয়ে নেয় নিপাট প্রবৃতি!

সময়: দুপুর ২:৪০-৩:১২
স্থান: ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, কোলকাতা

ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের কথা গল্প-উপন্যাসে অনেক পড়েছে রাজীব, ইচ্ছা ছিল কলকাতায় আসলে আর যাই হোক মেমোরিয়ালটা দেখে যেতে হবে। কলকাতায় এসে বুঝেছে মেমোরিয়ালটা আসলে অনেকটা ঢাকার সংসদ ভবনের মত। বিদেশীদের কাছে দর্শনীয় আর স্থানীয়দের কাছে আড্ডা-প্রেমের জায়গা।

টিকেট কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে একটা টিকেট চাইলো ও। ভারতে আসার পর অবধি দেখছে এখানে সব জায়গাতেই বিদেশীদের জন্য আলাদা টিকেট-মূল্য। মেমোরিয়ালের টিকেট বিক্রেতা অবশ্য কিছু জিজ্ঞাস না করেই রাজীবের বিশ রুপীর নোটটা নিয়ে আঠারো রুপি আর টিকেট ফেরত দিল। মুচকি হাসলো রাজীব, বিক্রেতা ও বিদেশী কিনা সেটা জিজ্ঞাস করারই প্রয়োজন বোধ করেনি - স্থানীয়দের মূল্য রেখেছে! দু' রুপী কখনই বিদেশীদের মূল্য হবেনা, কম করে হলেও পনেরো রুপী।

এটা মোটেই মানতে পারেনা রাজীব। মেমোরিয়াল সহ ভারতের প্রায় সব দর্শনীয় স্থানই তৈরী হয়েছে ঐ সময়টায় যখন বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান এক রাস্ট্র 'ভারতবর্ষ' হিসেবে পরিচিত ছিল। সবই তৈরী হয়েছে তৎকালীন ভারতবর্ষের নাগরীকেদের দেয়া কর দিয়ে। সে হিসেবে উপমহাদেশের সব নাগরীকদেরই কি স্থানীয় মূল্য পাবার কথা নয়? বুঝলাম এসব দর্শনীয় স্থান তদারকীতে তাদের অনেক পয়সা খরচ হয়, কিন্তু সেটা কি টিকেটের টাকা থেকে উঠে আসে না? রাজীব জানে ভারতীয়রা নিজেদের স্বার্থটা ভালোই বোঝে, যতই যুক্তি দেখানো হোক ওরা তা কখনই মেনে নেবে না।

ছোট্ট গেটটার দিকে হাঁটতে হাঁটতে চারদিকে চোখ বুলালো ও - একটা লেমন সোডার ভ্যান, একটা পানিপুরীর ঝাঁকা আর ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের ইতিহাস পুস্তিকা হাতে কয়েকজন হকার। সংসদ ভবনের মত হকারের মেলা নেই কেন? পুলিশের তদারকী?

টিকেট চেকারকে টিকেট দেখিয়ে ভেতরে ঢুকে গেল রাজীব। ভেতরে ঢুকেই মনটা ভালো হয়ে গেল ওর - এক কথায় চমৎকার! জিনস্‌ জ্যাকেটের জিপার খুলে কলকাতার বাতাস নিল ও - একই মানুষ, একই ভাষা, একই আবেগ, একই ঐতিহ্য - তবুও আমরা ঠিক করে নিয়েছি, এটা বিদেশী বাতাস!

দু'চোখ ভরে সাদা মার্বেল আর প্রকৃতির অবিশ্বাস্য সামঞ্জস্য ‌দেখতে দেখতে গাড়ি রাস্তা পেরিয়ে গেল ও। প্রধান ভবনে পৌছেঁ ভালো লাগাটা আরও বাড়লো। ক্যামেরা বের করে কয়েকটা ছবি তুলে নিল রাজীব, ভাইয়াকে ইমেইল করে পাঠাতে হবে।

সিড়ি বেয়ে প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকতে গিয়েই বাঁধা। খাঁকী পোশাকে দারোয়ান বলল, "টিকেট দেখান।"
পকেট থেকে টিকেট বের করে দিল রাজীব। এক নজর দেখেই মাথা নাড়লো দারোয়ান, "এতে হোবে না! এটা বাগানের টিকেট। ভেতরে ঢুকতে হলে আলাদ টিকেট লিতে হোবে।"
"কোথা থেকে নেব?"
"বাইরের কাউন্টার থেকে।"
"মানে? বাইরে গেলে তো এ টিকেটটা নষ্ট হবে। ভেতরে কোন কাউন্টার নেই?"
এবার রাজীবের টোন ধরতে পারলো ঋজু দারোয়ান, এক গাল হেসে বলল, "বাইরে যেতে হোবে! আর আপনি তো বিদেশী, টিকেটের দাম বেশী লিবে। তোবে যদি কিছু বোলে বোলবেন দিল্লি থেকে এয়েচেন।"
হেসে নিচে নেমে গেল ও। কলকাতার অনেক মানুষই বাংলাদেশের মানুষের জন্য একটা দূর্বোধ্য ভালোবাসা পোষণ করে, আমরাও কি করি ওদের জন্য?

নিচে নেমে একটা বেনসন ধরালো রাজীব। ঢাকা থেকে এক কার্টুন এনেছে। অন্য সিগারেট ওর পোষায় না। এখন এত দূর হেঁটে বাইরে গিয়ে আরেকটা টিকেট কিনতে ইচ্ছে করছে না। এর চেয়ে সামনে যে চৌবাচ্চা টাইপ জিনিস দেখা যাচ্ছে সেখানে গিয়ে বসাটাই বেশী লোভনীয় মনে হচ্ছে। আর ভবনের ভেতরে কি আছে কে জানে! তেমন কিছু না থাকলে ঢোকার কোন মানে নেই। কাউকে জিজ্ঞাস করে দেখতে হবে।

ডান দিক থেকে মিষ্টি-শ্যামলা একটা মেয়েকে মাথা নিচু করে ওর দিকেই আসতে দেখলো রাজীব। ওকেই না হয় জিগাস করা যাক। মেয়েটার দিকে হেঁটে গিয়ে জিগেস করলো রাজীব, "কিছু মনে করবেন না, একটা কথা জা..."

এর পর যা ঘটলো তার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিল না ও। মেয়েটা শক্ত হাতে ওর হাতটা পাকড়াও করে অন্ধের মত ছুটে চলল। ঘটনাটা এতই আকস্মিক যে বিব্রত-বিস্মিত রাজীবেরও ওর সাথে ছোটা ছাড়া আর কোন উপায়ই রইলো না!

[চলবে...] © অমিত আহমেদ


মন্তব্য

আরিফ জেবতিক এর ছবি

তাড়াতাড়ি শেষ করো।এতো দিন ঝুলিয়ে রাখা ঠিক না।

-----------------------------------
কিস্তিমাতের যুদ্ধ শেষে,সাদাকালো ঘুটিগুলো এক বাক্সেই ফেরত যাবে...

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

নতুনভাবে পড়বো।
তবে আরিফ ভাই যেটা বললেন, বেশী দিন ঝুলিয়ে রাইখেন না। সপ্তাহে ৩/৪ খন্ড করে দেন।

কনফুসিয়াস এর ছবি

পড়া শুরু করলাম।
টাইমিং-এ গোলমাল আছে ওপরে।
-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।