১৩ জুলাই, ২০০৬
সময়: সন্ধ্যা ৬:০০-৬:৩০
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, বনানী, ঢাকা
"মহসিন, একটা বেনসন দে!" চায়ের কাপ সামলাতে সামলাতে চিৎকার করে রাজীব। নর্থ সাউথ ক্যাম্পাসের সিগারেট ব্যবসার মনোপলি কায়েম করে রেখেছে মহসিন। ভার্সিটির এমন একটা ধুমপায়ী পাওয়া যাবে না যে মহসীনের খদ্দের নয়।
সাতাশ/আঠাশ বছরের ছেলেটার অসাধারন স্মৃতিশক্তি। ওর খদ্দেররা নিয়মিত হলেও সিগারেটের দাম পরিশোধে কেউই নিয়মিত নয়, সব জমা হতে থাকে। কোন এক সময় মহসিন এসে আস্তে করে জানায়, "এই কয়দিনে দুইশো চাইর টাকা জমা পড়ছে কিন্তু। টেকা দেন।" এই টাকার হিসাব পুরোটাই থাকে তার মাথায়, সে হিসাবে কখনও এক টাকা গড়মিল হয় না!
রাজীব বসে আছে নর্থ সাউথের সামনে শান বাঁধানো পাটাতনে। মহসিন একটু দূরেই দাঁড়িয়ে এক মেয়েকে সিগারেট বিক্রি করছে। সে রাজীবের দিকে ফিরে তাকাবারো প্রয়োজনও বোধ করেনা। মেয়েটা মনে হয় নর্থ সাউথে নতুন, আগে কখনও দেখেনি রাজীব। সিগারেটও মনে হয় নতুন ধরেছে, ধোঁয়া মুখের মধ্যে নিয়েই ছেড়ে দিচ্ছে, এক বিন্দুও ভেতরে ঢুকছে না। মহসিন সিগারেট দিয়েও দাঁড়িয়ে আছে... লুইচ্চা একটা,
"ওই মহসিন, কি কানে কথা যায়না না? বিড়ি চাইলাম না?"
মহসিন নিতান্তই অনিচ্ছা নিয়ে কাছে আসে,
"বেনসন না পলমল?"
"ওই ব্যাটা, পলমল খাই আমি? বেনসন দে!"
নতুন ব্র্যান্ড বলে মহসিনের সবাইকে পলমল গছিয়ে দেবার খুব চেষ্টা, লাভটাও মনে হয় পলমলে একটু বেশিই থাকে।
"মহসিন, মেয়েটা কে রে?"
"নতুন আইছে। ক্যান আপনি চিনেন না? ফয়সাল ভাই চিনে তো!"
"নাম কি?"
"ভাবি কই?"
"বেশি সেয়ানা হইছস না? কি জিগাইলাম আর কি উত্তর দিলি? ভাবি কই মানে? কোন ভাবি?"
"তৃণা ভাবি। ওই যে, ওই দিন নিয়া আইলেন না এইহানে?" সবগুলো দাঁত বের করে হাসে মহসিন।
উত্তরে খেঁকিয়ে ওঠে রাজীব,
"ওই ব্যাটা, তৃণা ভাবী হইলো ক্যামনে শুনি? আমার সাথে মেয়ে দেখস নাই আগে?"
হাসি মোটেই মলিন হয় না মহসিনের, বলে,
"আরে বস কম দেখছি নাকি? কিন্তু এইটা কইলাম অন্যরকম, আমি বুইঝা ফালাইছি!"
"অন্যরকম মানে?" সিরিয়াস হয়ে যায় রাজীব। ওর মনে এখন সন্দেহ দানা বাঁধছে। ব্যাপারটা কি এতটাই দৃশ্যমান যে দেখলেই বোঝা যায়! ওর সিরিয়াস গলা শুনে উল্টো বুঝলো মহসিন, ভাবলো রাজীবের বুঝি মেজাজ গরম হয়েছে,
"মস্করা করতাছিলাম বস!" সুড়ুৎ করে কেটে পড়ে ও।
তৃণাকে কখনও নর্থ সাউথে আনতে চায় না রাজীব। অনেক কারন আছে। এক হলো, রাজীবের সাথে কোন মেয়ে দেখলেই এখন মুখে মুখে নানান গল্প ছড়িয়ে যায়। বন্ধুরা এসে উল্টো-পাল্টো মন্তব্য করে। অন্য মেয়ে হলে এগুলো গায়ে লাগে না ওর, কিন্তু তৃণাকে নিয়ে কেউ কিছু বললে মাথায় রক্ত উঠে যায়। তার উপর তৃণার রেপুটেশনও তেমন কিছু ভাল নয়। ইন্টারনেট কানেশন আছে কিন্তু ওর ছবি গুলো দেখেনি এমন কাউকে মনে হয়না এই ঢাকায় খুঁজে পাওয়া যাবে। ছবিগুলো রাজীবও দেখেছে। এমন ছবি হয়তো বিদেশে পারিবারিক অ্যালবামেও রাখা যায়, কিন্তু আমাদের দেশের প্রক্ষাপটে খুবই-খুবই দৃষ্টিকটু। এমন ছবি তোলার সুযোগ করে দেয়ার জন্য রাজীবের তৃণার উপর একটা চাপা রাগ আছে। কিন্তু সে রাগটা সে কখনই প্রকাশ করেনি। কোন একদিন কথায় কথায় ছবিগুলোর প্রসঙ্গ চলে আসায় তৃণা জানাতে চেয়েছিল কেন ওই শোতে ও সবার সামনে ওর লং স্কার্টটা ছিঁড়ে মিনি বানিয়ে ফেলেছিল, রাজীব শুনতে চায়নি।
এতদিন পরেও রাজীব নিশ্চত হতে পারে না তৃণার সাথে ওর সম্পর্কটা আসলে কি রকম। শুরু হয়েছিল একরকম ওর অনিচ্ছাতেই, তৃণার জেদের কাছে হার মেনে। সে সময়টাতে পাগলের মত ওকে ফোন করেছে তৃণা, নাম্বার দেখেই সেই ফোন কেটে দিয়েছে রাজীব। কখনও বিরক্ত হয়ে ধরলেই বাচ্চা মেয়ের মত অভিযোগ করেছে তৃণা, দেখা করতে চেয়েছে। সে সব অভিযোগ-অনুরোধও রাজীব এড়িয়ে গেছে কাজের অজুহাতে। এমন সময় একদিন হঠাৎ তৃণা ওর অফিসে এসে হাজির। নিজের রুমে তৃণাকে দেখে বরফ হয়ে গিয়েছিল ও। কি কান্ড! অফিসের সবাই দেখলো ভুঁইয়া সাহেবের মেয়ে স্যারের ছোট ছেলের রুমে অনুমতির তোয়াক্কা না করেই ঢুকে পড়েছে। ভাইয়ার হাতে ধরা পড়ে যাবার ভয়েই রাজীব তৃণাকে দেখে অফিসে আর এক মূহুর্ত সময় নষ্ট করে না ও। তৃণাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। নিজেই ড্রাইভ করে 'মুভ অ্যান্ড পিক'য়ে আসে। আইসক্রিম খেতে খেতে সরাসরি জিজ্ঞাস করে রাজীব,
"কি চাও তুমি আমার কাছে তৃণা?"
মিটিমিটি হাসে মেয়েটা। বলে, "তা তো জানি না! কিন্তু তোমাকে ভাল লাগে আমার।"
"কেন ভাল লাগে?"
"জানি না।"
কোন ঝুঁকি নিতে চায় না রাজীব, বলে,
"তোমাকে আগেই জানিয়ে দেই তৃণা, বন্ধুত্ব ছাড়া আমার কাছে আর কিছু পাবার আশা থাকলে সেটা এখনই বাদ দিয়ে দাও। আমি কোন ঝানেলায় জড়াতে চাই না।"
খিল খিল করে হেসে উঠে তৃণা,
"আমি জানতাম তুমি ঠিক এ কথাটাই বলবে, রাজীব রহমান! তোমাকে নিয়ে গল্প শুনিনি আমি ভেবেছ? তোমার কাছে বন্ধুত্ব ছাড়া আর কিছু চাইও না আমি।"
কিন্তু এর পরেও সময়ের সাথে সাথে সব কেমন বদলে গেল। সম্পর্ক নিয়ে ওর মতবাদটা ছিল নিপাট-পরিপাটি, "বিয়ের আগে যা ইচ্ছা নিজের পছন্দে, আর বিয়ের সময় বিয়ে বাবা-মার পছন্দে"। সে মতবাদ ভেঙে চুরমার করেছে তৃণা। যতই দিল গেছে দু'জনের বদ্ধুত্ব গাড় হয়েছে। তৃণার মেয়েটার সাথে অনেক কিছুতেই অনেক মিল রাজীবের, আবার অনেক কিছুতেই অনেক অমিল। সব মিলিয়ে দু'জন দু'জনের উপর এতটাই নির্ভরশীল হয়ে ওঠে যে ব্যাপারটা দুই পরিবারেও জানাজানি হয়ে যায়। এমন একটা অবস্থা দাঁড়ায় যে দু'জনকেই দু'জনের পরিবারকে নিশ্চিত করতে হয় যে ওদের সম্পর্কটা বন্ধুত্ব ছাড়া আর কিচ্ছু নয়।
চিন্তার তাল কেটে যায় জুনিয়র কিছু ছেলের উৎপাতে, "রাজীব ভাই, চলেন এক দান হয়ে যাক।"
"নাহ এখন ইচ্ছা করতেছে না।"
"আরে চলেন না। ডাবলস হবে... চ্যালেঞ্জ করলাম যান।"
চট করে ঘড়ি দেখে নেয় রাজীব, সময় আছে। চায়ের কাপ রেখে টেবিল টেনিস খেলতে বেসমেন্টের দিকে রওনা দেয় ও।
সময়: বিকাল ৫:০০-৫:৩০
সিমেন্স সেন্টার, গুলশান, ঢাকা
"বস, নওরীন কি করেছে শুনেছেন?"
নওরীনের কথা শুনেই রাগে পিত্তি জ্বলে গেল রানার। নওরীনকে একদমই সহ্য হয়না ওর। মোটা সোটা ঢাকা আইবিএ থেকে পাশ করা মেয়েটা কাজ না জানলে কি হবে, গুটি চালতে এক নাম্বার। সব সময় এর কথা ওর কাছে লাগাবে, সিনিয়র ভাইয়াদের কাছে কলিগদের নামে নালিশ জানাবে।
এই গত সপ্তাহেই মেয়েটা রানার রুমে এসে আদিখ্যেতার একশেষ করেছে। রানার কাছে বসে নানান অজুহাতে এখানে ওখানে ছুঁয়ে দেয়, আবার বলতে বলতে হঠাৎই গলা নামিয়ে চোখ বুঁজে মুখ কাছে নিয়ে আসে। পরে জানা যায় প্রজেক্ট ফাইল করতে নাকি রানার সাহায্য লাগবে। এমন অবস্থায় আগে আর পড়েনি রানা, ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে কাজটা করে দিয়েছে। পরে বিস্ময় নিয়ে শুনে মেয়েটা নাকি সেকশন ম্যানেজার ভাইয়াকে বলেছে রানা ওকে একটুও কোঅপারেট করেনি।
"কি করেছে?"
"গতকাল সুমন ভাইয়াকে বলেছে আমরা নাকি কাজে ফাঁকি দিয়ে সিগারেট খেতে যাই।"
"সিরিয়াস? তাই বলেছে?"
"জ্বী ভাইয়া!"
"সে যে সারাটা সময় ফোনে হা-হা হি-হি করে সেটা কিছু না?" রাগে গা চিড়বিড়িয়ে উঠলো ওর।
"বলেন তো দেখি বস, কেমন লাগে? আপনার কাজ না থাকলে চলেন এইটা নিয়ে আলোচনা আছে। বাকি সবাই ওয়েট করছে বাইরে।"
মনে মনে মেয়েটাকে নিজের জানা সবচেয়ে খারাপ গালিটা দিল রানা, মেয়ে না হলে তোরে বাটি চালান দিতাম মাগী। ঘড়ি দেখল রানা। আজ এর চেয়ে জরুরী কাজ আছে,
"আজ না। কাল বসি সবাই নাকি? আজ জরুরী কাজ আছে একটা।"
"ওকে বস! কিন্তু ওকে টাইট দিতে হবে কিন্তু! ছাড়া যাবে না।"
"ছাড়া মানে? দেখ না তুমি কি করি!"
কম্পিউটারটা বন্ধ করে রুম থেকে বের হয়ে গেল রানা। সাড়ে পাঁচটায় নিপুন, তমাল, ফয়সালের সাথে হাসানের দোকানে জরুরী আলাপ আছে।
সময়: বিকাল ৫:৩০-৬:৪৫
হাসানের টং দোকান, বনানী, ঢাকা
টয়োটা আরএভি'টা হাসানের দোকানের ঠিক পাশে পার্ক করলো নিপুন। গাড়িটা ওর মার জন্য কেনা হলেও মা ব্যবহার করেন কেবল বাজার করার আর খালা-মামাদের বাসায় যাবার সময়। বাকিটা সময় নিপুনই নিজেই নিজের মনে করে চালায়। গাড়ি থেকে বের হয়ে হাসানের ছোট্ট টং দোকানটায় বসল নিপুন। বেঞ্চে একজন রিক্সাওয়ালা বসে চা খাচ্ছিলেন। নিপুন বসতেই বেচারা সংকোচে দূরে সিঁটিয়ে বসলেন, নিপুনের গায়ে যেন তাঁর নোংরা স্পর্ষ না লাগে। মনটা খারাপ হয়ে গেল নিপুনের, হায়রে আমার দেশটা, এত ভেদাভেদ মানুষে?
"ঠিক মত বসেন চাচা, এত দূরে বসেছেন, পড়ে যাবেন তো বেঞ্চ থেকে।"
লাল দাঁত বের করে হাসে কেবল চাচা, কাছে আসার কোন লক্ষণ দেখায় না। এতদিনের বৈষম্য একদিনে যাবার নয়। মন অন্য দিনকে নেয় নিপুন,
"হাসান, বাকিরা আসে নাই কেউ?"
"তমাল ভাই আইছিল। কেউ নাই দেইখা গেছেগা। কইছে আবার আইব পরে। আপনারে চা দিমু?"
"দে!"
"সিগারেট?"
"দে!"
সিগারেট ধরিয়ে চায়ে চুমুক দিতে দিতেই ফয়সাল চলে আসে। রিক্সা থেকে নেমে বলে,
"দোস, ভাংতি আছে? পাঁচটা টাকা দে তো।"
ফয়সাল একটা এনজিও তে কাজ করে এবং কোন বিচিত্র কারনে কোনকালেই ওর কাছে ভাংতি থাকে না।
"নাই। মানিব্যাগ নিয়া বাইর হই নাই আজকে।"
"মানিব্যাগ ছাড়া আবালের মত বাইর হইছস ক্যান? বাসায় থাকলেই পারতি।"
"মানিব্যাগ আনি নাই, কারন মানিব্যাগে পয়সা নাই। তোমাগো মত চাকরি করি নাকি আমি? বেকার! জানোস না?"
কথা না বাড়িয়ে হাসানের কাছ থেকে টাকা নিয়ে রিক্সাওয়ালাকে ভাড়া দিয়ে দেয় ফয়সাল। নিপুনের বাবার এত টাকা আছে যে দশটা নিপুন কাজ না করলেও তাঁদের কিছু যাবে আসবে না। সে সুযোগে বাবা-মার একমাত্র ছেলে ইচ্ছা করেই কোন কাজ করে না, ওর সারা দিনের কাজ হলো গিটার বাজানো, গান শোনা আর ডিভিডি'তে সিনেমা দেখা।
আরেকটা রিক্সায় রানা আর তমালও চলে আসে।
"রানা তমালকে পাইলি কই?" জিজ্ঞাস করে নিপুন।
"কাহিনীরে ব্যাটা, বিশাল কাহিনী। দেখি রাস্তায় দাঁড়িয়ে এক গরম ললনার সাথে আলাপ করতাছে। কসম দোস, আমাকে দেইখা তমাল না চেনার ভান করে!"
বিরক্তি নিয়ে তাকায় তমাল। সবার মধ্যে ওই সবচেয়ে সিরিয়াস। তাই প্রকৃতির নিয়ম মেনে ঠাট্টা-মস্করাও ওর সাথে একটু বেশিই হয়,
"মেয়ে আমাদের কাস্টোমার কেয়ারে কাজ করে। কলিগ টাইপ আরকি। রাস্তায় দেখা হইছে কথা বলব না?"
"তুই কাজ করিস মার্কেটিং সেকশনে। কাস্টোমার কেয়ারের মেয়ে তোর কলিগ হয় কেমনে শুনি?" জিজ্ঞাস করে ফয়সাল।
তমাল বাংলা লিংক'য়ে জয়েন করেছে গত ছ'মাস হলো। সেটা জাহির করতে সে ইদানিং সারাক্ষণ বাংলা লিংক'য়ের একটা টিশার্ট পরে থাকে, সেটা নিয়েও বন্ধু মহলে ভালোই হাসি-ঠাট্টা হয়। তমাল জবাব দেয়ার আগেই কথা কেড়ে নিল রানা,
"সেইটা বড় কথা না। শালা সাথে মাইয়া আছে দেখে আমাকে রিক্সায় দেখেও না চেনার ভান করছে, সেটার বিচার কর!"
"তোরে আমি দেখি নাই। তুই আইছস পেছন থেকে, আমি আগে কেমনে দেখুম শুনি?"
"হ ভাই, রিক্সা চড়ি তো, আমাদের বন্ধু কইতে লজ্জা লাগে না? সেইটা কও?"
তমাল কোন উত্তর দেয় না। আজ সবাই একসাথে ওকে বাগে পেয়েছে, এখন ও যাই বলবে তাই ঘুরিয়ে অন্য দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। এরচে' কিছু না বলাটাই শ্রেয়।
এই নিয়ে খানিকক্ষণ রগড় চলার পর সবাই সিরিয়াস হয়ে যায়। হাতে সময় বেশি নেই, একটু পরেই রাজীবের সাথে দেখা করার কথা। তার আগে এই গোপন বৈঠক সেরে ফেলতে হবে। আলোচনার বিষয়বস্তু 'তৃণা'।
রাজীবের স্বভাবটা ওদের চেয়ে বেশি আর কেউ জানেনা। সেই বাচ্চাকাল থেকেই বন্ধু ওরা। সবাই জানে রাজীব জাত প্লেয়ার। ওর কতজন বান্ধবী এসেছে আর গিয়েছে তার হিসাব ওরাও সঠিক বলতে পারবেনা। কিন্তু তৃণার সাথে ব্যাপারটা রাজীবের ফর্মুলার সাথে ঠিক মিলছেনা।
ওরা জানে রাজীব-তৃণা আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছে যে ওরা কোন সম্পর্কে জড়াবে না। এমনটা হলে এত দুঃশ্চিন্তার কোন কারন ছিলনা। কিন্তু ওরা বুঝতে পরছে রাজীব ধীরে ধীরে তৃণার সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে। এত সিরিয়াস ওরা রাজীবকে আর কখনও দেখেনি।
চায়ে চুমুক দিতে দিতে বলে ফয়সাল, "আমার এই মিটিংটা মোটেই ভালো লাগছে না। রাজু আমাদের দোস্ত, কিছু বলতে হলে ওকেই সরাসরি বলব। পেছনে আলাপ করবো কেন?"
"পেছনে আলাপ কই দেখলি?" বিরক্ত নিয়ে বলে রানা, "যা আলাপ হবে তা তো একটু পরেই রাজীবকে জানাবো। এ বিষয়ে আমাদের আলাপ করাটা জরুরী। রাজীব এখন ওর ভালো মন্দ যাচাই-বাছাই করার মত অবস্থায় নাই। ওর ভালো-মন্দ এখন আমাদেরকেই দেখতে হবে। আমাদের একটা সির্দ্ধান্ত নিয়ে সবাই মিলে ওকে জানাতে হবে। সবার কথা ও ফেলতে পারবেনা।"
"ঠিক!" সায় জানালো নিপুন, "তৃণা মেয়েটার ব্যাপারে একটা ডিসিশন আজ নিতেই হবে।"
"সমস্যা কি?" বলে তমাল, "রাজীবের লাইফ, রাজীব ডিসাইড করবে, আমরা বলার কে? আমি এই আলাপে নাই।"
"দোস্ত, আমাদের কোন বন্ধু একটা যেনতেন নষ্টা মেয়ের সাথে জড়িয়ে পড়ে ওর জীবন নষ্ট করবে, আমাদের সেখানে কিছু বলার নাই? কেন, রাজু দোস্ত না আমাদের?" এত আবেগ নিয়ে কথাটা বলল রানা যে হঠাৎ করে জবাব খুঁজে পেলনা তমাল।
ফয়সাল বলল, "মেয়েটাকে হুট করে নষ্টা বলে দিলি? মেয়াটা নষ্টা হলে আমাদের রাজীবও নষ্ট। নষ্ট-নষ্টায় মিল হলে সমস্যা কি?"
"রাজীব নষ্ট ছিল। সে কথা আমি অস্বীকার করছি না। তবে সে কিন্তু আর আগের মত নেই। আমরা এতদিন চেষ্টা করে যা করতে পারিনি হঠাৎ করে তাই হয়ে গেছে। রাজীবের কিন্তু মেয়েদের প্রতি সেই ছোঁকছোঁক ভাবটা আর নেই!"
"তৃণাও হয়তো বদলে গেছে? হতে পারেনা?"
"আমি একটা কথা বলতে চাই..." স্কুল ছাত্রের মত হাত তুলে নিপুন, "গত সপ্তাহে তৃণাকে দেখেছি আমি, ক্যাফে ম্যাংগো'তে। একটা ছেলের সাথে।"
"তো?" প্রশ্ল করে তমাল, "মেয়ে বলে ছেলে বন্ধুর সাথে দেখা করতে মানা?"
"এই জন্যই তোদেরকে ডেকেছি আজ আমি আর রানা। তৃণাকে যা করতে দেখেছি আমি সেটা বন্ধুদের সাথে কোন মেয়ে করে না দোস্ত।"
কথাটা শুনে গুম হয়ে বসে থাকলো খানিকক্ষণ সবাই। ওরা বুঝতে পারছে এভাবে চললে প্রচন্ড একটা কষ্ট পাবে রাজীব, এটা হতে দেয়া যায়না!
সময়: সন্ধ্যা ৭:০০-রাত ১১:০০
এনএসইউ ক্যাম্পাস, বনানী এবং
বারিধারা বসুন্ধরা হাউজিং, ঢাকা
ঘামে ভিজে বেসমেন্ট থেকে উঠে আসলো রাজীব। অনেকদিন খেলা হয়নি তাই শরীরে জড়তা এসে গেছে। একটু খেললেই হাঁফ ধরে যায় এখন। মাত্র তিনটে সেট খেলেই এই অবস্থা!
বেরুতেই নিপুনের গাড়ি দেখলো রাজীব। বাব্বা আজ দেখি একদম টাইমে চলে আসা হয়েছে। গাড়ি থেকে নামলো না নিপুন। জানালা দিয়ে গলা বের করে বলল, "রাজু, ওঠ ওঠ তাড়াতাড়ি গাড়িতে ওঠ।"
দৌড়ে গাড়িতে উঠে ওবাক হয়ে গেল ও, "তোরা সবাই একসাথে? কাহিনী কি?"
"ওয়েট কর। কাহিনী বলা হবে বসুন্ধরায় যাবার পর।" হাত বাড়িয়ে সিডি প্লেয়ারের ভলিউমটা বাড়িয়ে দেয় নিপুন।
বারিধারার বসুন্ধরায় যতই প্লট বরাদ্দ দেয়া হোক, এখনও জায়গাটার প্রায় পুরোটাই ফাঁকা। এখনও এখানে সেখানে মাটি ভরাট চলছে। তবে দক্ষিণের লেকটা এখনও বলতে গেলে প্রায় অস্পর্ষিত। সামান্য কিছু অংশ ভরাট করা হয়েছে কেবল।
বড় বড় ঘাশ আর কাশবনে ঘেরা লেকটা রাজীবদের খুবই প্রিয়। জায়গাটা সুন্দর তো বটেই, তার চেয়ে বড় হলো খুবই নির্জন। মাঝে মাঝে বসুন্ধরার নিজস্ব সিকিউরিটি এসে কি হচ্ছে দেখে যায় এছাড়া আর কোন উৎপাত নেই। তাই প্রায়ই নিপুনের গাড়ি নিয়ে সবাই সুর্য ডোবার ঠিক আগ মুহুর্তে ওখানে চলে যায়। সাথে থাকে বড় দু'টো কোকের বোতল , চিপস কিংবা নান-কাবাব। খাওয়ার সাথে সুর্য ডোবা, চাঁদ দেখা আর আড্ডা সবই হয়। পঁচা শামুকের শহরে এটা ওদের নিজস্ব প্রবাল দ্বীপ।
গাড়ি পার্ক করেই নিপুনের মনে হয় ওর সাথে সিগারেট নেই, "সিগারেট আছে কারও সাথে?"
"আছে।" ছোট্ট করে জবাব দেয় তমাল।
"সাবাশ।"
গাড়ি থেকে নেমে বনেটের উপর উঠে বসে সবাই।
সারাটা রাস্তা কি হয়েছে তার কিছুই বলা হয়নি রাজীবকে। কিন্তু রাজীব ঠিকই অনুমান করেছে কেন হঠাৎ ওকে কোন জানান না দিয়ে এখানে আনা হয়েছে। এমনটা হতে পারে সেটা অবচেতন ভাবেই জানত ও, তাই মানসিক প্রস্তুতিটাও হয়তো কোন এক ভাবে নেয়া ছিল।
একটা সিগারেট ধরিয়ে রাজীবের দিকে তাকায় রানা, "তোকে কেন এ জায়গায় এনেছি জানিস?"
"না বললে জানবো কিভাবে?" বোকা সাজলো রাজীব।
কোন তাফালিং না করে আসল কথা চলে গেল রানা, "তৃণার সাথে তোর রিলেশনটা কি?"
এই ভয়টাই ছিল রাজীবের, "জাস্ট ফ্রেন্ডস!" তোতা পাখির মত বলল রাজীব।
"দেখ দোস্ত, জাস্ট ফ্রেন্ডস যে না সেটা একটা বেকুবও বুঝবে। তোকে আগে দেখি নাই আমরা অন্য মেয়েদের সাথে?"
কোন উত্তর দেয় না রাজীব।
ফয়সাল বলে, "অন্য কোন মেয়ে হলে কিছু বলতাম না তোকে। আমরাও চাই তুই উড়াধুড়া টাংকিবাজী ছেড়ে কারও সাথে থিতু হো, কিন্তু হোয়াই তৃণা?"
"কেন তৃণার সাথেই বা সমস্যা কি?" নিজের গলার ঝাঁঝ দেখে নিজেই অবাক হয়ে গেল রাজীব।
"তাহলে তুই স্বীকার করছিস তৃণার সাথে কিছু আছে তোর?" বলল তমাল।
ভুল বুঝে ডিফেন্সে চলে গেল রাজীব, "তা তো বলি নাই! কিন্তু তোদেরই বা মনে হলো কেন ওর সাথে কিছু আছে?"
"শুনবি?" বলল রানা, "আচ্ছা শোন তাহলে। আগে তুই প্রতিটা সময় মেয়েদের পেছনে ছোঁকছোঁক করতি। ক'দিন পর পরই নতুন কোন মেয়ের গল্প বলতি আমাদেরকে। তৃণার সাথে পরিচয় হবার পরে কোন কোন মেয়েকে ডেট করেছিস তুই?"
"অনেক, কয়টা শুনতে চাস?"
"একটার নামই বল নাহয়!"
অনেক খুঁজেও একটা নাম মনে করতে পরল না রাজীব।
"আচ্ছা বাদ দে। দিনে কয়বার কথা হয় তৃণার সাথে ফোনে?"
"এক-দুই বার... তিন বার এট মোস্ট।"
"মিথ্যা কথা বলবি না দোস্ত!" বলল তমাল।
"মিথ্যা কই বললাম?"
"দে তাহলে তোর মোবাইলা দে, কল হিস্টরি দেখি?"
মোবাইল বের করার কোন গরজ দেখায় না রাজীব।
"দোস্ত, ইউ হ্যাভ চেঞ্জড, অবকোর্স ইন এ গুড ওয়ে! কিন্তু তৃণা কিন্তু বদলায়নি। ও যেমন ছিল তেমনই আছে।"
"সেটা তুই কিভাবে জানিস?"
বন্ধুরা সবাই মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছে দেখে রাগ উঠে রাজীবের, "কি হলো বল! কি হয়েছে?"
"নিপুন, বল ওকে কি দেখেছিস।"
নিপুনের কথা শুনতে শুনতে কানদু'টো লাল হয়ে ওঠে ওর। বুঝতে পারে হৃদকম্পন বেড়ে যাচ্ছে ওর। আর প্রচন্ড রাগ উঠছে তৃণার উপর, নিজেকে মনে হচ্ছে প্রতারিত। কিন্তু এমনটাই তো হবার কথা ছিল। দুজনে ঠিক করেছিল কোন সম্পর্কে জড়াবেনা দু'জনে। যার যা ইচ্ছা করার পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে। কিন্তু তৃণার সাথে সময় কাটানোর সাথে সাথে রাজীবের কি যেন হয়ে গেল। অন্য কোন মেয়ের সাথে আর স্বাচ্ছন্দ বোধ করতো না ও, নিজেকে মনে হতো প্রতারক। শেষ মেষ হাল ছেড়ে দেয় ও। কেন যেন ওর মনে হয়েছিল অন্যপ্রান্তে তৃণাও একই টানাপোড়নে পড়েছে। এখন নিপুনের কথা শুনে মনে হচ্ছে ভুল ছিল সে ভাবনায়। সরাসরি তৃণাকে জিজ্ঞেস করতে গিয়েও করেনি ও, অবচেতম মন বাঁধা দিয়েছে। মনে হয়েছে কি দরকার। চলুক না যেমন চলছে।
"ছোটবেলা থেকে আমরা একে অন্যকে চিনি। আমাদের কাছে কেন লুকাচ্ছিস দোস্ত? তুই জানিস যেকোন সমস্যায় আমরা তোর সাথে আছি, জানিস না?" বলে ফয়সাল।
মানসিক ভাবে ভেঙে পড়া রাজীব বোঝে বন্ধুরা ছাড়া একথা বলার আর কেউ নেই ওর, ধরা গলায় বলে, "তোদেরকে অনেকবার বলতে চেয়েছি দোস্ত। লজ্জ্বায়, ভয়ে বলতে পারিনি!"
"লজ্জা! ভয়! কিসের লজ্জা আর কিসের ভয়?" অবাক হয় সবাই।
"দোস্ত, আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করবে সবাই। তৃণাকে আমি... তৃণাকে আমি..."
রাজীবের কাঁধে মমতা নিয়ে হাত রাখে তমাল।
"তৃণার রেপুটেশন তো জানিস তোরা। এখন সবাই ভাবছে তৃণা আমার অন্য বান্ধবিদের মতই একজন। যখন জানবে ব্যাপারটা তা না, তখনই হাসাহাসি শুরু হবে। সবাই বলবে রাজীব রহমানকে নাচাচ্ছে তৃণা ভুঁইয়া। অন্য সবাই যা ইচ্ছা বলুক, যত খুশী হাসুক আমি কেয়ার করিনা। কিন্তু তোরা কেউ একথা শুনে হাসলে আমি সহ্য করতে পারতাম না দোস্ত। মনে মনে খুব ছোট হয়ে যেতাম।"
"এতদিনে এই চিনলি আমাদেরকে তুই!" ঝাঁঝ নিয়ে বলে নিপুন।
"দোস্ত আমি জানি তোরা করবিনা এমন। কিন্তু যদি করিস! সে ভয়ে..."
"ঠিক আছে, ঠিক আছে। বাদ দে।" আস্তে করে বলে নিপুন, "তৃণাকে ভালবাসিস তুই, না?"
"আমি বুঝিনা দোস্ত। মে বি ইটস লাভ, মে বি ইটস নট! তবে এটা জানি আমার মাথায় সব সময় তৃণা, সব সময় তৃণা! একটা শার্ট কিনলেও আমার মাথায় ঘোরে মেয়েটা পছন্দ করবে তো! এত নির্ভরশীল হয়ে গেছি। মেয়েটা অনেক ছোট খাট অনেক কিছু নিয়ে শাষন করে আমাকে। আমার সিগারেট খাওয়া নিয়ে অভিযোগ জানায়। আমার কবে কোন মিটিং, কবে কোন খাবারটা ভাল লেগেছিল সেটা সবসময় মনে রাখে। অন্য কোন মেয়ের সাথে এমন হয়নি কখনো!"
"ঠিক আছে। বুঝেছি। শোন রাজু, আমরা কি ঠিক করেছি সেটা শোন।" বলে নিপুন, "আমরা জানি এখন আমরা যদি বলি ওকে ভুলে যা সেটা পারবিনা তুই। তাই তৃণার সাথে আলাপ কর। ওকে বল হাউ ইউ ফিল। বল তুই এখন সিরিয়াস হতে চাচ্ছিস। এটা না করলে পরে প্রচন্ড কষ্ট পাবি দোস। এটা আমরা সহ্য করতে পারবো না।"
ফয়সাল বলে, "তুই তৃণাকে ফর্মালি আস্ক আউট কর। ও যা করে বেড়াচ্ছে সেটা যে তোর সাথে থাকলে ও করতে পারবে না সেটা বুঝিয়ে বল। তুই যে সম্মানটা ওকে দেখাচ্ছিস সেটা ওর কাছ থেকেও তোর প্রাপ্য। এই বন্ধু-বন্ধু হিপোক্রেসিটা শেষ কর।"
কোন জবাব মুখে আসে না রাজীবের।
"চুপ করে থাকিস না রাজু। বল, আস্ক আউট করবি?" রানা জিজ্ঞেস করে।
"কবে করতে হবে?"
"কবে মানে? পারলে আজই। নাহ, আজ না। কাল শুক্রবার, তুই না হয় কাল সামনা সামনি দেখা করে জিজ্ঞেস করিস। ঠিক আছে?"
"আচ্ছা।"
এত সহজে রাজীব রাজী হয়ে যাবে সেটা কেউ ভাবেনি বলেই বিস্ময়টা একটু বেশীই বোধ হয় সবার, রানা জিজ্ঞেস করে,
"আচ্ছা মানে? করবি?"
"করবো!"
"ঠিক আছে!" আর কিছু বলার থাকে না কারো।
বিশাল চাঁদের নিচে (কোন বিচিত্র কারনে ওখান থেকে চাঁদটা একটু বড়ই দেখায়) বাকি সময়টা নিপাট আড্ডাতেই কেটে যায়। ঘরোয়া থেকে কাবাব আনা হয়েছিল, সে কাবাবেরও সদ্যবহার হয়।
রাজীবকে যেটা জানানো হয় না তা হলো ওরা সবাই নিঃশ্চিত ভাবেই ধরে নিয়েছে তৃণা রাজীবকে 'না' বলবে। কারও বিশ্বাস হয়না তৃণা 'হ্যাঁ' বলে এক দিনেই বদলে যাবে।
কিন্তু পরদিন জুম্মা শেষে সবাই একসাথে একটা বিস্ময়কর টেক্সট মেসেজ পায় রাজীবের কাছ থেকে। ছোট্ট মেসেজটায় কেবল একটা কথাই লেখা, "শী সেইড ইয়েস!"
[চলবে...] © অমিত আহমেদ
মন্তব্য
যাক, রিকনস্ট্রাকশন শেষ হল। এবার বাপধন মাল ছাড়ার পালা। আর অপেক্ষা করালে কঠিন মাইর দেয়া হবে।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
পরের পর্ব লিখতেছি।
কাল পরশু পোস্ট দিবো।
ড্রাফট এডিট করলে পাবলিশ হয়ে যায় সেই সমস্যার সমাধান কি হয়েছে? জানেন কিছু?
তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে
না। সুমনরে জিগান। আজকেতো অনেক কিছুই সমাধান করার কথা।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
টয়োটা আরএভি লন্ডনে বেশ সস্তায় পাওয়া যাচ্ছে। পরিবেশ দূষণ হয় সেজন্য এর বাজার পড়তি। সেইসাথে লন্ডন শহরে ঢুকতে গেলে বাড়তি কনজেশন চার্জ লাগে।
পড়লাম। চলুক।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
ভাইয়া গল্প তো ভালোই হচ্ছে কিন্তু আইবিএ-এর মেয়েটা কাজ জানেনা, আর এনএসইউ এর ভদ্রলোক খুব কাজ করে উদ্ধার করে দিচ্ছেন, এইটা হজম করতে একটু কষ্ট হইলো। এনএসইউতে এমন অনেকে আছেন যারা এতোই অসাধারণ প্রতিভাবান যে ওরকম পুরো দেশেই খুব কম পাওয়া যায়। কিন্তু আইবিএ-এর পরিবেশটাই এমন যে কাজ না জানলে আইবিএ থেকে পাশ করাটাই অসম্ভব ব্যাপার, পাশ করে কিছু করে খাওয়া তো অনেক দূরের ব্যাপার।
আমি শুধু আমার যা মনে হয় তা শেয়ার করলাম, যদি এ কথা বলা আমার ধৃষ্টতা হয়ে থাকে তাহলে প্লিজ ক্ষমা করে দিয়েন।
বিনীত,
অন্দ্রিলা
বিবিএ ১২
আইবিএ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
একটুও ধৃষ্টতা হয়নি আন্দ্রিলা। আপনার মন্তব্যের জনাব দিচ্ছি:
প্রথমত, নওরীনকে নিয়ে এ ভাবনাটা রানার একান্ত নিজের।
দ্বিতীয়ত, কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই ১০০ ভাগ কর্মক্ষম শিক্ষার্থী বের করতে পারে না, এটা সম্ভব না, কেননা সবখানেই একটা "ওয়ে এরাউন্ড" থাকে। আপনি কি হলফ করে বলতে পারেন আই.বি.এ. থেকে আজ পর্যন্ত কোন অক্ষম ছাত্র/ছাত্রী বের হয়নি?
তৃতীয়ত, একাডেমিক লাইফে কাজ শেখা আর প্র্যাকটিকাল লাইফে কাজ করার মধ্যে তফাত আছে। হয়তো দেখা যাবে নওরীন স্টুডেন্টলাইফে তুখোড় ছাত্রী ছিল, কিন্তু কর্পোরেট লাইফে এসে তাল মেলাতে পারছে না। আরও খেয়াল রাখতে হবে নওরীন কোম্পানীতে সবে জয়েন করেছে।
এবার অন্য কথা বলি।
আপনি গন্দমের বাকি পর্ব গুলো পড়লে দেখতেন নওরীন আর ওর গ্রুপের বাকি পাঁচ জনই আই.বি.এ-র (সম্ভবত পর্ব সাত)। সদ্য পাশ করে সিমেন্সে ঢুকেছে। তার মানে দাঁড়াচ্ছে:
১) ওরা মেয়েটার সহপাঠী ছিল, এবং তাদেরও মেয়েটাকে নিয়ে একই ধারণা।
২) ওদের গ্রুপের বাকি পাঁচ জনকে নিয়ে রানার কোন অভিযোগ নেই।
৩) সদ্য বের হয়ে সবাই ধুমধাম জব পেয়ে গেল, তার মানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটার একটু হলেও এলেম আছে।
আর রানাকে রানা, আর নওরীনকে নওরীন না দেখে আপনি দেখেছেন এন.এস.ইউ. আর আই.বি.এ. - এটাও আমার কাছে মজা লেগেছে।
ভাল থাকবেন।
ভালবাসি, ভালবাসি, ভালবাসি তোমায়!
ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
এতো ত্বরিত উত্তর দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ অমিত ভাই। তবে আইইউবি আর আইবিএ নিয়ে এইবার বিভ্রান্ত হয়ে গেলাম। আমি তো আইইউবি এর কথা বলি নাই একবারও, আইবিএ-এর কথা বলছিলাম।
আইবিএতে আমাদের ব্যাচে আমরা ভর্তি হয়েছিলাম ৬৩ জন, আর এখন এই শেষ বর্ষে এসে বাকি আছি ৪৮ জন, অনেকে বাইরে চলে গেছে, কয়েকজন ড্রপআউটও আছে। আইবিএ থেকে সাধারণত কখনোই ১০০% শিক্ষার্থী পাস করে বের হতে পারেনা। তারা ১০০% শিক্ষার্থীকে না, বরং যারা কর্মক্ষম, তাদেরকেই নিজের সার্টিফিকেট দিয়ে নিজের সুনাম বজায় রাখবার চেষ্টা করে। হয়তো আমিও পাস করে নাও বের হতে পারি :fingers crossed:
তবে হ্যাঁ, আলোচনা যে রানা এবং নওরীনের থেকে সরে এনএসইউ আর আইবিএ এর দিকে চলে গেছে, সেজন্য কিন্তু আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী! আপনাদের মজার পাত্রী হয়ে আমি রীতিমতো লজ্জাই পাচ্ছি।
গন্দম পড়তে এখন পর্যন্ত ভালো লাগছে, আপনার মতো যদি লিখতে পারতাম!
দুঃখিত অন্দ্রিলা, লেখার সময় আইবিএ এর জায়গায় ভুলে আইইউবি লিখে ফেলেছি (মন্তব্যটা এখন এডিট করছি)।
আপনি "মজা পাওয়া" ব্যাপারটা সিরিয়াসলি নিয়েছেন। আমি কথাটা ঠাট্টাচ্ছলেই বলেছিলাম!
সত্যি কথা বলতে কি, আপনার মন্তব্যে আপনি "নওরীন-রানার" ব্যাপারটা যে পাঠক "আইবিএ-এনএসইউ" এর তুলনা হিসেবে ইন্টারপ্রেট করতে পারে সেটা আমার নজরে এনেছেন। আমি এটা আগে এভাবে লক্ষ্য করিনি। কাজেই আপনার ক্ষমা চাইবার কিচ্ছু নেই, বরং আমার কাছ থেকে একটা ধন্যবাদ পাবেন আপনি।
গন্দম ভাল লাগছে জেনে খুব খুশি হলাম।
ভালবাসি, ভালবাসি, ভালবাসি তোমায়!
ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল
হু। আমিও প্রতিটি পর্বে এনএসইউ-এর নাম দেখছি। তবে ব্যাপারটা কি জানেন পাঠকসুধীর মনতো আর বদলানো সহজ নয়। যখন আপনি এনএসইউ-এর নাম নিবেন বা আইবিএ-র নাম নিবেন স্বাভাবিক ভাবেই কিন্তু লোকজন খুব স্টিরিওটাইপ চিন্তা করবে। এজন্যই হয়ত ভাগশেষ আপনার সাথে একমত হতে পারেনি। আর এনএসইউ-র লোকজনও রা বিশেষ করেনি।
পড়ে যাচ্ছি।
সাথে বইটি কেনার উৎসাহ পাচ্ছি।
নতুন মন্তব্য করুন