মুক্তিযুদ্ধের উপরে আর্কাইভ : যথাসাধ্য সাহায্য করুন

অভিজিৎ এর ছবি
লিখেছেন অভিজিৎ (তারিখ: বুধ, ২১/১১/২০০৭ - ১২:৫৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমাদের মুক্তমনার কো মডারেটর জাহেদ আহমেদ অনেকদিন ধরেই চাইছিল মুক্তিযুদ্ধের উপরে একটা ভাল আর্কাইভ বানাতে। যদিও মুক্তমনা ওয়েব সাইট তৈরির সময় আমরা সচেষ্ট ছিলাম বাঙ্গালীর এই শ্রেষ্ঠ অর্জনকে গুরুত্ব দিতে, এবং সেজন্য আমি আর বন্যা মিলে 'বেঙ্গলি হেরিটেজ' নামে একটা ট্যাবও রেখেছিলাম তাতে, তারপরও একাত্তরের উপর সামগ্রিকভাবে একাত্তরের উপর ভাল আর্কাইভের অভাব অনুভব করছিলাম আমরা সবাই। এ বছরের জুন মাসে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি মুক্তমনাকে মুক্তবুদ্ধির প্রসার এবং সাম্প্রদায়িকতা আর মৌলবাদ প্রতিরোধে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখার প্রেক্ষিতে মুক্তমনাকে জাহানারা ইমাম স্মৃতি পদক প্রদান করে সম্মানিত করার পর আমাদের দায়িত্ববোধ বেড়ে যায় অনেক। তখন থেকেই আমাদের মধ্যে একটা আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের উপর একটা ভাল আর্কাইভ তৈরি করার। কিন্তু তারপর চাকরী বাকরী আর নানান ঝুট-ঝামেলায় আমি নিজেই এমন ব্যস্ত হয়ে যাই যে জাহেদকে সাহায্য তো দূরের কথা মুক্তমনাতেই আমি কোন সময় দিতে পারিনি। বলতে গেলে জাহেদ একা হাতেই এই আর্কাইভটি সম্পূর্ন করার দায়িত্ব নিয়েছে। এখনো অনেক কিছু রয়ে গেছে অগোছালো। কিন্তু যে কারণে জাহেদের উদ্যোগটি গুরুত্বপূর্ন তা হচ্ছে এই 'পাথর সময়'। যে হারে মুজাহিদ আর হান্নান শাহ-রা একযোগে এখন বলতে শুরু করেছে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ বলে কিছু হয়নি, যা হয়েছে 'সিভিল ওয়ার', কিংবা 'দেশে কোন যুদ্ধাপরাধী নেই', তাতে শঙ্কিত হতেই হয়। ও পক্ষ থেকে তো বিভ্রান্তি সৃষ্টির কমতি নেই, ছিলোও না কোন কালে। স্বাধীনতার ঘোষনা নিয়ে বিভ্রান্তি, জাতির পিতা নিয়ে বিভ্রান্তি, ত্রিশ লক্ষ শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে বিভ্রান্তি - এমন কি কোন জায়গা আছে নাকি যেখানে তারা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে না? এখন আবার নতুন মুলো নিয়ে এসেছে - একাত্তরে খোদ মুক্তিযুদ্ধ বলেই কিছু নাকি হয় নি!

আপনি যদি মনে করেন যে, এই বিভ্রান্তি থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সচেতন করা প্রয়োজন, তবে আপনাকে এখনই কিছু কিছু কাজ শুরু করতে হবে। ইতিহাস-সচেতন হতে হবে। শুধু সচেতন হওয়া নয়, সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণ করতে হবে। আর সেখানেই জাহেদের গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকাটির কথা চলে আসে। আর্কাইভটির নীচে সে বলেছে - "যদি দেখেন তালিকায় আপনার জানা মুক্তিযুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ কোন দলিল,বই বা ডকুমেন্টারির উল্লেখ না থাকলে দয়া করে এই ঠিকানায় ই-মেইলের মাধ্যমে আমাদের তা জানাবেন। আমরা যথাশীঘ্র সম্ভব তা তালিকায় উল্লেখ করার চেষ্টা করব। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখা এবং নতুন প্রজন্মদের সে সম্পর্কে অবহিত করা আমাদের সকলের সম্মিলিত দায়িত্ব। " আপনি যদি জাহেদের কথার সাথে একমত হয়ে থাকেন, তবে আর্কাইভটি দেখুন আর জাহেদকে যথাসম্ভব সাহায্য করুন। আর্থিক সাহায্য নয়, জাহেদ চাইছে তথ্য আর উপাত্ত দিয়ে সাহায্য । আপনার সামান্য সাহায্যই হয়ত মুক্তমনার দুর্লভ আরর্কাইভটি সম্পূর্ণ করতে সাহায্য করবে আর ধীরে ধীরে গড়ে তুলবে ইতিহাস সচেতন এক গর্বিত প্রজন্ম।

বাংলা আর্কাইভের লিঙ্ক
ইংরেজী আর্কাইভের লিঙ্ক

আজকে প্রথম আলোতে এই আর্কাইভের একটি রিভিউ বেরিয়েছে। আপনাদের জন্য তুলে দিলাম।
===========================

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একটি ইন্টারনেট উদ্যোগ

কাজী ফাহিম আহমেদ

মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণ ও চর্চার জন্য ইন্টারনেটে চালু হয়েছে একটি সংগ্রহশালা বা আর্কাইভগড়ে তোলা হয়েছে। এটি তৈরি করা হয়েছে মুক্তমনা ওয়েবসাইটে (www.mukto-mona.com)। এই সংগ্রহশালা বাংলা ও ইংরেজি−দুই ভাষাতেই করা হয়েছে। ইংরেজি অংশে রয়েছে বেশ কিছু চলমানচিত্র (ভিডিও), মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যাবিষয়ক বেশ কিছু ওয়েবসাইটের সংযুক্তি, গণহত্যার তথ্য ও ছবি, প্রবন্ধ, বিশেষ সাক্ষাৎকার, একাত্তরে জামায়াতে ইসলামীর ভুমিকা, চলচ্চিত্র, প্রামাণ্যচিত্র, বিদেশি চলচ্চিত্র ইত্যাদি বিষয়।

বাংলা অংশে এগুলো ছাড়াও রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের কবিতা, প্রবন্ধ ও স্নৃতিচারণ, গল্প ও উপন্যাস, চলচ্চিত্র, প্রামাণ্যচিত্র, বিদেশি চলচ্চিত্র ইত্যাদি। সাইটটি গ্রন্থনা ও সম্পাদনা করেছেন মুক্তমনার অন্যতম সঞ্চালক ও সম্পাদক জাহেদ আহমেদ।

যা যা রয়েছে

চলমান চিত্র রয়েছে বেশ কিছু। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যার বাংলা অনলাইন আর্কাইভ, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাস [১৯৪৭-১৯৭১], বাংলাদেশের রাজাকার, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ ইত্যাদি শিরোনামের ভিডিওগুলো দেখা যাবে ইন্টারনেটে ইউ টিউব-এর মাধ্যমে। এ ছাড়া রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে বিভিন্ন বাংলা ওয়েবসাইটের সংযুক্তি। যেমন: মুক্তিযুদ্ধের অনলাইন লাইব্রেরি-১ ও ২, এটির সংগ্রাহক এম এম রহমান জালাল; একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির ওয়েবসাইট ‘সেক্যুলার ভয়েস অব বাংলাদেশ’।

সাইটে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক কবিতা। এর মধ্যে শামসুর রাহমান, নির্মলেন্দু গুণ, ফারুক আযম, রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর কবিতা রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে প্রবন্ধ ও স্নৃতিচারণ। এর মধ্যে কয়েকটি হলো জাহানারা ইমামের একাত্তরের দিনগুলি (বইটি ইন্টারনেটে বিনামূল্যে পড়া যাবে); সিমিন হোসেন রিমির মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হারিয়ে যাবে না, মুক্তিযোদ্ধা মো. রহমতুল্লাহর ১৯৭১-এর প্রথম ইফতার ও একজন মুক্তিযোদ্ধার কিছু কথা, ফরিদ আহমেদের এ চোখে ঘুম আসে না, অজয় রায়ের মুক্তিযুদ্ধে রৌমারী, মুহম্মদ জাফর ইকবালের কিশোরী মুক্তিযোদ্ধা, মো. আবদুল খালেকের ২৬ মার্চ: ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, স্বাধীনতার ঘোষণা প্রসঙ্গে প্রবন্ধ ফ্যাক্টস অ্যান্ড ডকুমেন্টস, জাহেদ আহমেদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা: আজকের বাংলাদেশ, মোহাম্মদ জানে আলমের ২৬-এ মার্চের ঐতিহাসিক পটভুমি, এম এম মাহবুব হাসানের ফিরে দেখুন ’৭১, ঘুরে দাঁড়াক বাংলাদেশ, শ্যামলী নাসরিন চৌধুরীর স্নৃতিময় ’৭১, মুহাম্মদ জাফর ইকবালের ঘৃণা থেকে মুক্তি চাই, কর্নেল (অব.) মো. গোলাম মোস্তফা ও মনজুরে মওলার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, আবদুর রউফ চৌধুরীর একটি জাতিকে হত্যা, ইশা মোহাম্মদের বুদ্ধিজীবী হত্যার পোস্টমর্টেম, নুরুজ্জামান মানিকের শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবস প্রসঙ্গে, চিররঞ্জন সরকারের জামায়াত কি এবারও পার পেয়ে যাবে, মোহাম্মদ আলী বোখারীর একাত্তরের গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ, এ জেড এম আবদুল আলীর এক মুক্তিযোদ্ধার পরিচয়, আহসান মোহাম্মদের মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের ডাটাবেইস প্রসঙ্গে, রিপন কুমার বিশ্বাসের রাজনৈতিক ব্যর্থতার ফল, সোনা কান্তি বড়ুয়ার যুদ্ধাপরাধীদের হত্যাযজ্ঞের বিচার চাই প্রভৃতি।

মুক্তিযুদ্ধের গল্প ও ছোটগল্পের মধ্যে রয়েছে পাকমন পেয়ার (গল্প): আনোয়ার সাদাত শিমুল, জলিল সাহেবের পিটিশন (গল্প): হুমায়ুন আহমেদ, জিয়াফত (গল্প): সাদ কামালী। উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে আনিসুল হকের মা (উপন্যাসটি ইন্টারনেটে বিনামূল্যে পড়া যাবে) এবং হুমায়ুন আহমেদের জোসনা ও জননীর গল্প। নতুন প্রজন্নকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানানোর জন্য ইন্টারনেটে এ ধরনের উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়।

১৯৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধ ও গণহত্যা সম্পর্কিত অনলাইন আর্কাইভ


মন্তব্য

কনফুসিয়াস এর ছবি

এরকম উদ্যোগগুলো আলাদা আলাদা হয় বলে কাজ কঠিন হয়ে যায়। আপনি জন্মযুদ্ধ সাইটটা দেখতে পারেন। ওটাও এরকম আর্কাইভিং-এর উদ্দেশ্য নিয়েই শুরু হয়েছিলো।
www.jonmojuddho.org
-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

হাসান মোরশেদ এর ছবি

কথা তো সেটাই ।
-----------------------------------------
ভালো নেই,ভালো থাকার কিছু নেই

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

s-s এর ছবি

প্রশ্ন:
আপনারও কিছু কাজ দেখছি অভিজি, গণহত্যা নিয়ে। আমাকে কি বলতে পারেন, ৭১ এ বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃত সংখ্যাটি কত? কোথায় পেতে পারি? রেফারেন্স? বা এর আরো ডিটেইল?

জীবন জীবন্ত হোক, তুচ্ছ অমরতা

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।