সমকামিতা (সমপ্রেম) কি প্রকৃতি বিরুদ্ধ? একটি বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনঃস্তাত্বিক আলোচনা
অভিজিৎ
অনেকেই সমকামিতা নিয়ে বেজায় বিব্রত থাকেন। নাম শুনলেই আঁতকে উঠেন। কাঠমোল্লারা তো গালি দিয়ে খালাস- সমকামিরা হচ্ছে খচ্চর স্বভাবের, কুৎসিৎ রুচিপূর্ন, মানসিক বিকারগ্রস্ত। এমনকি প্রগতিশীলদের মধ্যেও রয়েছে নানা রকম ওজর আপত্তি। যারা শিক্ষিত, 'আধুনিক' শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছেন, গে লেজবিয়ন ইত্যকার তথাকথিত 'পশ্চিমা' শব্দের সাথে কমবেশি পরিচিত হয়েছেন, তারাও খুব কমই ব্যাপারটিকে মন থেকে স্বাভাবিক বলে মেনে নিতে পারেন। তাদের অনেকেই এখনো ব্যাপারটিকে 'প্রকৃতি বিরুদ্ধ' মনে করেন, আর নয়ত ভাবেন - পুরো ব্যাপারটি উৎকট ধরনের ব্যাতিক্রমধর্মী কিছু, এ নিয়ে 'ভদ্র সমাজে' যত কম আলোচনা করা যায় ততই মঙ্গল। উপরে উপরে না বললেও ভিতরে ভিতরে ঠিকই মনে করেন সমকামীরা তো হচ্ছে গা ঘিন ঘিনে বিষ্ঠাকৃমি জাতীয় এঁদো জীব। মরে যাওয়াই মনে হয় এদের জন্য ভাল। সমাজ সভ্যতা রক্ষা পায় তাহলে।
আমি এই প্রবন্ধে বৈজ্ঞানিক দিক (মুলত জীববিজ্ঞান ও জেনেটিক্সের দৃষ্টিভঙ্গি) থেকে বিষয়টি আলোচনা করব। সামাজিক ও মনস্তাত্বিক ধ্যান-ধারণাগুলো আলোচনায় আসবে পরে, প্রবন্ধের শেষ দিকে। বাংলা সহ পৃথিবীর তাবৎ সাহিত্যগুলোতে সমকামিতার উল্লেখ এবং পরিশেষে বিভিন্ন খ্যাতনামা সমকামীদের জীবন নিয়েও খানিকটা গভীরে যাওয়ার ইচ্ছে আছে। তবে সেগুলো আসবে পরে। নিঃসন্দেহে এ ধরনের প্রবন্ধের কলেবর দীর্ঘ হয়। কিন্তু সচলায়তনের পাঠকদের সুবিধার জন্য আমি প্রবন্ধটিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে দিব বলে মনস্থ করেছি। প্রথম দিকের পর্বগুলো মুলত বৈজ্ঞানিক পরিমন্ডলেই সীমাবদ্ধ থাকবে। আজকের পর্বটি ছোটখাট ভুমিকা হিসেবে ধরা যেতে পারে। একটি দীর্ঘ প্রবন্ধকে ভাগ ভাগ করে ব্লগাকারে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করার কিছুটা অসুবিধাও আছে। মনে হতে পারে পর্বটা হঠাৎ করে শেষ হয়ে গেল, কিংবা প্রতিটি কোনা-কাঞ্চি নিয়ে ঠিকমত আলোচনা করা হয়নি। সেরকম মনে হলে, আমি পাঠকদের বিনীতভাবে ধৈর্য ধরতে অনুরোধ করব। বলব, পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষা করুন। আপনাদের প্রত্যাশিত প্রতিটি বিষয় নিয়েই বিস্তারিতভাবে আলোচনা করার ইচ্ছে আছে।
আমার লেখাটির প্রেরণা বলা যায় এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর “আপনি কি গে (বা লেসবিয়ান)? (প্রথম পর্ব)” প্রবন্ধটি এবং প্রবন্ধটির নীচে মাহবুব লীলেন-এর কিছু প্রাসঙ্গিক মন্তব্য। মাহবুব মুর্শেদকে ধন্যবাদ জানাতেই হয় অন্ধকারে থেকে যাওয়া এই বিষয়টি আলোতে নিয়ে আসার জন্য। মাহবুব লীলেনকেও ধন্যবাদ আমাকে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনার সুযোগ করে দেবার জন্য। পরিশেষে, বন্ধু স্নিগ্ধার গে ও লেজবিয়ান সংক্রান্ত আজকের অত্যন্ত সুলিখিত এবং হৃদয়স্পর্শী পোস্টটি আমার লেখার গতি বাড়িয়ে দিয়েছে নিঃসন্দেহে। স্নিগ্ধার লেখাটি চোখে না এলে আমি হয়ত আজকে এই পোস্ট দিতাম না। যাহোক, আমি শুরু করছি মাহবুব লীলেনের কয়েকটি মন্তব্য দিয়ে :
সমকমীতা প্রাকৃতিক কোনোভাবেই হতে পারে না মূলত (নারী-পুরুষে) কামটাই প্রাকৃতিক
তিনি আরো বলেছেন,
নারী আর পুরুষের কামই একমাত্র প্রাকৃতিক যা পৃথিবীর সকল পশু করে। যার মূল লক্ষ্য হলো বংশ বৃদ্ধি
(মাহবুব লীলেনের উক্তিগুলো স্রেফ উদাহরণ হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। ব্যক্তি মাহবুল লীলেন বা তার চিন্তাধারা কিংবা বিশ্বাস আমার আলোচনার বিষয়বস্তু নয়। আশা করব, তার নাম উল্লেখ করায় তিনি কিছু মনে করবেন না। আমার প্রচেষ্টা থাকবে যে কোন ব্যক্তিকে আলোচনার বাইরে রেখে সামগ্রিকভাবে বিষয়টির গভীরে ঢোকার) অনেকেই সমকামিতাকে 'প্রকৃতিবিরুদ্ধ' বা 'অস্বাভাবিক' হিসেবে প্রতিপন্ন করার জন্য উপরোক্ত ধরণের যুক্তির আশ্রয় নেন। আমি এই যুক্তিগুলো নিয়েই মূলতঃ আলোচনা করব।
আসলে 'প্রকৃতিবিরুদ্ধ' , 'অস্বাভাবিক', 'প্রাকৃতিক নয়' -এই ধরণের শব্দচয়ন করার আগে এবং তা ঢালাওভাবে তা প্রয়োগ করার আগে কিন্তু খোলা মনে পুরো বিষয়টি আলোচনার দাবী রাখে। এই বাংলাতেই এমন একটা সময় ছিল যখন বাল্যবিবাহ করা ছিল 'স্বাভাবিক' (রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিম সহ অনেকেই বাল্যবিবাহ করেছিলেন) আর মেয়েদের বাইরে কাজ করা ছিল 'প্রকৃতি বিরুদ্ধ। সয়ং রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত মেয়েদের বাইরে কাজ করার বিপক্ষে একটা সময় যুক্তি দিয়ে বলেছিলেন এই বলে ১ :
যেমন করেই দেখ প্রকৃতি বলে দিচ্ছে যে, বাইরের কাজ মেয়েরা করতে পারবে না। যদি প্রকৃতির সেরকম অভিপ্রায় না হত, তা হলে মেয়েরা বলিষ্ঠ হয়ে জন্মাতো। যদি বল,পুরুষদের অত্যাচারে মেয়েদের এই দুর্বল অবস্থা হয়েছে, সে কোন কাজেরই কথা নয়।
অর্থাৎ, রবীন্দ্রনাথের যুক্তি এখন মানতে গেলে কপালে টিপ দিয়ে, হাতে দু-গাছি সোনার বালা পরে গৃহকোণ উজ্জ্বল করে রাখা রাবীন্দ্রিক নারীরাই সত্যিকারের 'প্রাকৃতিক', আর শত সহস্র আমিনা, রহিমারা যারা প্রখর রোদ্দুরে কিংবা বৃষ্টিতে ভিজে ইট ভেঙ্গে, ধান ভেনে সংসার চালাচ্ছে, কিংবা পোষাক শিল্পে নিয়োজিত করে পুরুষদের পাশাপাশি ঘামে শ্রমে নিজেদের উজার করে চলেছে, তারা সবাই আসলে 'প্রকৃতি বিরুদ্ধ' কুকর্মে নিয়োজিত কারণ, 'প্রকৃতিই বলে দিচ্ছে যে, বাইরের কাজ মেয়েরা করতে পারবে না'। বাংলাদেশের অখ্যাত আমিনা, রহিমাদের কথা বাদ দেই, আমেরিকার নাসা থেকে শুরু করে মাইনিং ফিল্ড পর্যন্ত এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে মেয়েরা পুরুষদের পাশাপাশি আজ কাজ করছেন না। তাহলে? তাহলে আর কিছুই নয়। নিজের যুক্তিকে তালগাছে তোলার ক্ষেত্রে ‘প্রকৃতি’ খুব সহজ একটি মাধ্যম, অনেকের কাছেই। তাই প্রকৃতির দোহাই পাড়তে আমরা 'শিক্ষিত জনেরা' বড্ড ভালবাসি। প্রকৃতির দোহাই পেড়ে আমরা মেয়েদের গৃহবন্দি রাখি, জাতিভেদ বা বর্ণবাদের পক্ষে সাফাই গাই, অর্থনৈতিক সাম্যের বিরোধিতা করি, তেমনি সময় সময় সমকামি, উভকামিদের বানাই অচ্ছুৎ। কিন্তু যারা যুক্তি নিয়ে একটু আধটু পড়াশোনা করেছেন তারা জানেন যে, প্রকৃতির দোহাই পাড়লেই তা যুক্তিসিদ্ধ হয় না। বরং প্রকৃতির কাঁধে বন্ধুক রেখে মাছি মারার অপচেষ্টা জন্ম দেয় এক ধরণের কুযুক্তি বা হেত্বাভাসের (logical fallacy)। ইংরেজীতে এই ফ্যালাসির পুথিগত নাম হল - 'ফ্যালাসি অব ন্যাচারাল ল বা অ্যপিল টু নেচার ' ২ । এমনি কিছু 'অ্যপিল টু নেচার' হেত্বাভাসের উদাহরণ দেখা যাক -
১। মিস্টার কলিন্সের কথাকে এত পাত্তা দেওয়ার কিছু নেই। কলিন্স ব্যাটা তো কালো। কালোদের বুদ্ধি সুদ্ধি একটু কমই হয়। কয়টা কালোকে দেখেছ বুদ্ধি সুদ্ধি নিয়ে কথা বলতে? প্রকৃতি তাদের পাঁঠার মত গায়ে গতরে যেটুকু বাড়িয়েছে, বুদ্ধি দিয়েছে সেই অনুপাতে কম। কাজেই তাদের জন্মই হয়েছে শুধু কায়িক শ্রমের জন্য, বূদ্ধিবৃত্তির চর্চার জন্য নয়।
২। মারামারি, কাটাকাটি হানাহানি, অসাম্য প্রকৃতিতেই আছে ঢের। এগুলো জীবজগতের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। কাজেই আমাদের সমাজে যে অসাম্য আছে, মানুষের উপর মানুষের যে শোষণ চলে তা খারাপ কিছু নয়, বরং 'কম্পলিটলি ন্যাচারাল'।
৩। প্রকৃতি বলে দিচ্ছে যে, বাইরের কাজ মেয়েরা করতে পারবে না। যদি প্রকৃতির সেরকম অভিপ্রায় না হত, তা হলে মেয়েরা বলিষ্ঠ হয়ে জন্মাতো।
৪। সমকামিতা প্রকৃতিবিরুদ্ধ। প্রকৃতিতে তুমি কয়টা হোমোসেক্সুয়ালিটির উদাহরণ দেখেছ?
এমনি উদাহরণ দেওয়া যায় বহু।
উপরের উদাহরণগুলো দেখলে বোঝা যায়, ওতে যত না যুক্তির ছোঁয়া আছে, তার চেয়ে ঢের বেশি লক্ষনীয় 'প্রকৃতি' নামক মহাস্ত্রকে পুঁজি করে পশ্চাৎদেশ দিয়ে পাহাড় ঠেলার প্রবণতা। কাজেই বোঝা যাচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ট ষাঁড়দের স্বভাবজাত অ্যপিল টু নেচার-এর শিকার হচ্ছে সমকামীরা। সমকামিদের প্রতি সুপরিকল্পিত উপায়ে এবং সাংগঠিকভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ঘৃণা। সমকামিতাকে একটা সময় দেখা হয়েছে মনোবিকার, মনোবৈকল্য বা বিকৃতি হিসেবে। সমকামিদের অচ্ছুৎ বানিয়ে এদের সংস্রব থেকে দূরে থাকার প্রবণতা অনেক দেশেই আছে। শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার তো আছেই, কখনো এদের ঠেলে দেওয়া হয়েছে আত্মহননের পথে। আর এগুলোতে পুরোমাত্রায় ইন্ধন যুগিয়ে চলেছে ধর্মীয় সংগঠন এবং রক্ষণশীল সমাজ। সমকামিদের প্রতি হিংসাত্মক মনোবৃত্তির কারণে ইংরেজীতে সৃষ্টি হয়েছে নতুন একটি শব্দ 'হোমোফোবিয়া' (Homophobia) । মানবাধিকারের দৃষ্টিকোন থেকে এটি নিতান্ত অন্যায়। মানবাধিকার এবং সমানাধিকারের প্রেক্ষাপট থেকে এগুলো নিয়ে পরে বিস্তৃতভাবে আলোচনা করার ইচ্ছে আছে। তার আগে সমকামিতা বলতে আসলে কি বোঝায় তা আমাদের জানা দরকার।
সমকামিতার ইংরেজী প্রতিশব্দ হোমোসেক্সুয়ালিটি তৈরি হয়েছে গ্রীক 'হোমো' এবং ল্যাটিন 'সেক্সাস' শব্দের সমন্বয়ে। ল্যাটিন ভাষায়ও 'হোমো' শব্দটির অস্তিত্ব রয়েছে। তবে 'ল্যাটিন হোমো' আর 'গ্রীক হোমো' কিন্তু সমার্থক নয়। ল্যাটিনে হোমো অর্থ মানুষ। ওই যে আমরা নিজেদের হোমোস্যাপিয়েন্স ডাকি তা এসেছে ল্যাটিন ভাষা থেকে। কিন্তু গ্রিক ভাষায় 'হোমো' বলতে বোঝায় 'সমধর্মী' বা 'একই ধরণের'। আর সেক্সাস শব্দটির অর্থ হচ্ছে যৌনতা। কাজেই একই ধরনের অর্থাৎ, সমলিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বোধ করার (যৌন)প্রবৃত্তিকে বলে হোমোসেক্সুয়ালিটি। আর যারা সমলিঙ্গের প্রতি এ ধরনের আকর্ষণ বোধ করেন, তাদের বলা হয় হোমোসেক্সুয়াল। সমকামিতার ইতিহাস প্রাচীন হলেও ইংরেজীতে শব্দটির ব্যাবহার কিন্তু খুব প্রাচীন নয়। একশ বছরের কিছু বেশি হল শব্দটি চালু হয়েছে। শুধু ইংরেজী কেন, ইউরোপের বিভিন্ন ভাষাতেও সমকামিতা এবং সমকামিতার বিভিন্নরূপকে বোঝাতে কোন উপযুক্ত শব্দ প্রচলিত ছিল না। বাংলায় 'সমকামিতা' শব্দটি এসেছে বিশেষণ পদ -'সমকামী' থেকে। আবার সমকামী শব্দের উৎস নিহিত রয়েছে সংস্কৃত 'সমকামিন' শব্দটির মধ্যে। যে ব্যক্তি সমলৈঙ্গিক ব্যক্তির প্রতি যৌন আকর্ষণ বোধ করে তাকে 'সমকামিন' বলা হত। সম এবং কাম শব্দের সাথে ইন প্রত্যয় যোগ করে 'সমকামিন' (সম + কাম + ইন্) শব্দটি সৃষ্টি করা হয়েছে। আমার ধারণা সমকামিতা নামের বাংলা শব্দটির ব্যাবহারও খুব একটা প্রাচীন নয়। প্রাচীনকালে সমকামীদের বোঝাতে 'ঔপরিস্টক' শব্দটি ব্যবহৃত হত। যেমন, বাৎসায়নের কামসূত্রের ষষ্ঠ অধিকরণের নবম অধ্যায়ে সমকামীকে চিহ্নিত করতে 'ঔপরিস্টক' শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। যদিও পরবর্তীকালে এ শব্দের বহুল ব্যবহার আর লক্ষ্য করা যায় নি, 'সমকাম' এবং 'সমকামী' শব্দগুলোই কালের পরিক্রমায় বাংলাভাষায় স্থান করে নিয়েছে। কেউ কেউ সমকামিতাকে আরেকটু 'শালীন' রূপ দিতে 'সমপ্রেম' শব্দটির প্রচলন ঘটাতে চান ৭, অনেকটা ইংরেজীতে আজকের দিনে ব্যবহৃত 'গে' বা 'লেসবিয়ন' শব্দের মত।
এখন কথা হচ্ছে সমকামিতা কি জন্মগত নাকি আচরণগত? আর এ শব্দদুটি কি পরষ্পর-বিরোধি? এস এম মাহবুব মুর্শেদ সম্ভবতঃ তাই মনে করেন। তিনি তার প্রবন্ধে বলেছেন :
বারবার যে বিষয়টা আমাদের সামনে নিয়ে আসা হয় যে সমকামী যারা তারা প্রাকৃতিকভাবেই তাই। অথচ এও বলা হয় যে সমকামীতার শুরু শৈশবের কোন মোলাস্টেশন বা ভুল কোন এ্যক্ট থেকে, যা কিনা আগের কথাটার সাথে কন্ট্রাডিকটরী। তাহলে প্রাকৃতিক ভাবে সমকামী হয় কথাটা পুরোপুরি সত্য না।
মুর্শেদ এর মধ্যে স্ববিরোধিতা খুঁজে পেলেও আধুনিক অনেক সমাজ বিজ্ঞানী এবং মনোবিজ্ঞানীই এ রকম 'মিচুয়ালি এক্সক্লুসিভ' ভাবে ব্যাপারটিকে দেখেন না। তারা মনে করেন যৌন-প্রবৃত্তির ক্যানভাস আসলে সুবিশাল। এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠের বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ (বিষমকামিতা) যেমন দৃষ্ট হয়, তেমনিভাবেই দেখা যায় সম লিঙ্গের মানুষের মধ্যে প্রেম এবং যৌনাকর্ষণ। বিপরীত লিঙ্গের মানুষের প্রতি এরা কোন যৌন-আকর্ষণ বোধ করে না, বরং নিজ লিঙ্গের মানুষের প্রতি এরা আকর্ষন বোধ করে। এদের যৌনরুচি এবং যৌন আচরণ এগুতে থাকে ভিন্ন ধারায় । ব্যাপারটি অস্বাভাবিক নয়। সংখ্যাগরিষ্ঠের বাইরে অথচ স্বাভাবিক এবং সমান্তরাল ধারায় অবস্থানের কারণে এধরনের যৌনতাকে অনেক সময় সমান্তরাল যৌনতা (parallel sex) নামেও অভিহিত করা হয়। সমান্তরাল যৌনতার ক্ষেত্র কিন্তু খুবই বিস্তৃত। এতে সমকামিতা যেমন আছে তেমনি আছে উভকামিতা, কিংবা দুটোই, এমনকি কখনো রূপান্তরকামিতাও। আমি আমার প্রবন্ধ মূলতঃ 'সমকামিতা' বিষয়েই সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করব, যদিও অন্যান্য যৌন-প্রবৃত্তিগুলো (যেমন রূপান্তরকামিতা) বিভিন্ন সময় আলোচনায় উঠে আসবে। আজকের দিনের বিজ্ঞানীরা বলেন, সমকামিতা নিঃসন্দেহে যেমন আচরণগত হত পারে, তেমনি হতে পারে জন্মগত বা প্রবৃত্তিগত। এতে পরস্পরবিরোধিতা নেই। যাদের এ যৌনপ্রবৃত্তি জন্মগত, তাদের যৌন-প্রবৃত্তিকে পরিবর্তন করা যায় না, তা সে থেরাপি দিয়েই হোক, আর ঔষধ দিয়েই হোক। মানুষের মস্তিস্কে হাইপোথ্যালমাস নামে একটি অংগ রয়েছে, যা মানুষের যৌন প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ করে। সিমন লিভের শরীরবৃত্তীয় গবেষণা থেকে জানা গেছে এই হাইপোথ্যালমাসের interstitial nucleus of the anterior hypothalamus, বা সংক্ষেপে INAH3 অংশটি সমাকামিদের ক্ষেত্রে আকারে অনেক ভিন্ন হয় ১৮। আরেকটি ইঙ্গিত পাওয়া গেছে ডিন হ্যামারের সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে। ডিন হ্যামার তার গবেষণায় আমাদের ক্রোমোজমের যে অংশটি (Xq28) সমকামিতা ত্বরান্বিত করে তা শনাক্ত করতে সমর্থ হয়েছেন ১৮। এছারাও আরো বিভিন্ন গবেষণায় মনস্তাত্বিক নানা অবস্থার সাথে পিটুইটরি, থাইরয়েড, প্যারা-থাইরয়েড, থাইমাস, এড্রিনাল সহ বিভিন্ন গ্রন্থির সম্পর্ক আবিস্কৃত হয়। যদিও 'গে জিন' বলে কিছু এখনো আবিস্কৃত হয়নি, কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণার ফলাফলের অভিমুখ কিন্তু সেই দিকেই (আমি এদের গবেষণা নিয়ে পরে আরো আলোচনা করব)। এই ধরণের গবেষণা সঠিক হয়ে থাকলে বলতেই হয় সমকামী মনোবৃত্তি হয়ত অনেকের মাঝেই জন্মগত, আরো পরিস্কার করে বললে, 'বায়োলজিকালি হার্ড-ওয়্যার্ড'। জন্মগত সমকামিরা 'বায়োলজিকালি হার্ড-ওয়্যার্ড' হলেও আচরণগত সমকামিরা তা নয়। এরা আসলে বিষমকামী। এরা কোন ব্যক্তিকে বিষমলিঙ্গের মানুষ হিসেবে বিবেচনা করে তাদের সাথে যৌন-সংসর্গে লিপ্ত হয়। যেমন, জেলখানায় দীর্ঘদিন আটকে থাকা বন্দীরা যৌনসঙ্গীর অভাবে সমলিঙ্গের কয়েদীদের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেত পারে। কিন্তু, জেলখানা থেকে বেরিয়ে এলেই দেখা যায়, এদের আচরণের পরিবর্তন ঘটে। বাংলাদেশের ক্যাডেট কলেজের ছেলেপিলেদের সম্পর্কেও এ ধরনের ধারণা প্রচলিত আছে। এই ধরণের যৌন প্রবৃত্তির বাইরেও আছে উভকামিতা, কিংবা আছে উভকামিতার সমকামিতা। আলফ্রেড কিন্সে এই ধরনের বিভিন্ন যৌনতাকে পরিমাপ করার জন্য 'যৌনতা বিষয়ক স্কেল' উদ্ভাবন করেন। এই স্কেলের এক প্রান্তে আছে পরিপূর্ণ বিষমকাম, অন্যপ্রান্তে পরিপূর্ণ সমকাম। দুই মেরুর মাঝামাঝি রিয়েছে বিভিন্ন পর্যায়- প্রধাণতঃ বিষমকাম, তবে প্রায়ই সমকাম; সমান সমান বিষমকাম এবং সমকাম; প্রধানত সমকাম তবে প্রায়ই বিষম কাম; প্রধাণত সমকাম, তবে মাঝে মধ্যে বিষমকাম ইত্যাদি। কিন্সের এ স্কেল নিয়ে কিছু বিতর্ক থাকলেও এটি অন্ততঃ বোঝা যায় যে, আমাদের যৌন-প্রবৃত্তির ক্যানভাস আসলে খুবই বিস্তৃত, এবং যৌন প্রবৃত্তি একইভাবে সকলের মাঝে ক্রিয়াশীল হয় না।
যৌন প্রবৃত্তি নিয়ে আলোচনা করতে গেলে প্রাসঙ্গিকভাবেই সেক্স বা যৌনতার উদ্ভব নিয়ে কিছু না কিছু বলতে হয়। রিচার্ড ডকিন্সের 'বিবর্তনীয় স্বার্থপর জিন' (selfish gene) তত্ত্ব সঠিক হয়ে থাকলে বলতেই হবে যৌনতার উদ্ভব নিঃসন্দেহে প্রকৃতির একটি মন্দ অভিলাস (bad idea) ৩। কারণ দেখা গেছে অযৌন জনন (asexual) প্রক্রিয়ায় জিন সঞ্চালনের মাধ্যমে যদি বংশ বিস্তার করা হয় (প্রকৃতিতে এখনো অনেক এককোষী জীব, কিছু পতংগ, কিছু সরিসৃপ এবং কিছু উদ্ভিদ- যেমন ব্ল্যাক বেরি অযৌন জনন প্রক্রিয়ায় বংশবৃদ্ধি করে থাকে) তবে বাহকের পুরো জিনটুকু অবিকৃত অবস্থায় ভবিষ্যত প্রজন্মে সঞ্চালিত করা যায়। কিন্তু সে বাহক যদি যৌন জননের মাধ্যমে বংশ বৃদ্ধি করে থাকে, তবে তার জিনের অর্ধেকটুকুমাত্র ভবিষ্যত প্রজন্মে সঞ্চালিত হয়। কাজেই দেখা যাচ্ছে যৌনক্রিয়ার মাধ্যমে বংশবিস্তার করলে এটি বাহকের জিনকে ভবিষ্যত প্রজন্মে স্থানান্তরিত করবার সম্ভাবনাকে সরাসরি অর্ধেকে নামিয়ে আনে। এই অপচয়ী প্রক্রিয়ার আসলে কোন অর্থই হয় না। কারণ, প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বিবর্তন প্রক্রিয়ার মুল নির্যাসটিই হল - প্রকৃতি তাদেরই টিকে থাকার ক্ষেত্রে তাদেরকেই বাড়তি সুবিধা দেয় যারা অত্যন্ত ফলপ্রসু ভাবে নিজ জিনের বেশি সংখ্যক অনুলিপি ভবিষ্যত প্রজন্মে সঞ্চালিত করতে পারে ৪। সে হিসাবে কিন্তু অযৌন জননধারীরা ( আমরা এখন থেকে এদের 'আচোদা' নামে ডাকব) বহু ধাপ এগিয়ে আছে যৌনধারীদের (এদের ডাকব 'বোকাচোদা' নামে) থেকে।
কারণ আচোদাদের বোকাচোদাদের মত সময় নষ্ট করে সঙ্গী খুজে জোড় বাঁধতে হয় না। সংগম করে করে শক্তি বিনষ্ট করতে হয় না। নিজের বা সঙ্গির বন্ধ্যাত্ব নিয়ে মাথা ঘামাতে হয় না। বুড়ো বয়সে ভায়াগ্রা সেবন করতে হয় না। কিংবা সন্তানের আশায় হুজুর সাঈদাবাদীর কাছে ধর্ণা দিতে হয় না। যথাসময়ে এমনিতেই তাদের বাচ্চা পয়দা হয়ে যায়। কিভাবে? আমরা এখন যে ক্লোনিং -এর কথা জেনেছি, এদের প্রক্রিয়াটা অনেকটা সেরকম। এক ধরনের 'প্রাকৃতিক ক্লোনিং' এর মাধ্যমে এদের দেহের অভ্যন্তরে নিষেক ঘটে চলে অবিরত। ফলে কোন রকম শুক্রানুর সংযোগ ছাড়াই দেহের ডিপ্লয়েড ডিম্বানুর নিষেক ঘটে চলে। জীববিজ্ঞানে এর একটি গালভরা নাম আছে 'পার্থেনোজেনেসিস '(Parthenogenesis)।
কাজেই পার্থেনোজেনেসিস নামধারী আচোদারা সত্যিকার অর্থেই অপারাজেয়, অন্ততঃ বোকাচোদাদের তুলনায়। এদের কোন পুরুষ সঙ্গীর দরকার নেই। সবাই এক এক জন মাতা মরিয়ম- সয়ম্ভু যীশু উৎপাদনে পারঙ্গম। বোকাচোদারা যে সময়টা ব্যয় করে সংগি খুঁজে তোষামোদ, আদর সোহাগের পশরা খুলে ধুঁকতে ধুঁকতে জিন সঞ্চালন করে, সে সময়ের মধ্যে আচদারা গন্ডায় গন্ডায় বাচ্চা পয়দা করে ফেলতে পারে - এবং বাইরের কারো সাহায্য ছাড়াই। ফলে 'স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে' এরা বাড়তে থাকে গুনোত্তর হারে। নীচে এরকম একটি আচোদা প্রজাতি “হুইপটেল গিরগিটি”র ছবি দেওয়া হল।
চিত্রঃ হুইপ্টেল গিরগিটি – আচোদা প্রজাতির হার্টথ্রব। এদের বংশবিস্তারের জন্য কোন পুরুষ সঙ্গির প্রয়োজন নেই।
মজার ব্যাপার হল এই হুইপটেল গিরগিটিকূলের সবাই মহিলা, আর তা হবে নাই বা কেন! তাদের ত কোন পুরুষ শয্যাসংগীর দরকার নেই। পুরুষেরা তাদের জন্য 'বাহুল্যমাত্র'। কিন্তু তারপরও তাদের মধ্যে সেক্স- সদৃশ একধরনের ব্যাপার ঘটে। দেখা গেছে এক গিরগিটি আরেক গিরগিটিকে যদি জড়িয়ে ধরে রাখে তাহলে তাদের ডিম পাড়ার হার বেড়ে যায় ৫ । প্রকৃতির সমকামী প্রেমের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ! আমাদের কাছে যত অস্বাভাবিক বা প্রকৃতিবিরুদ্ধই মনে হোক না কেন, হুইপটেল গিরগিটি বা এ ধরনের সরিসৃপদের কাছে কিন্তু এটি অতি স্বাভাবিক ঘটনা, এবং এরা এভাবেই প্রকৃতিতে টিকে আছে, এবং টিকে আছে খুব ভালভাবেই। ২০০৬ সালে সরিসৃপকুলের আরেক প্রজাতি কমোডো ড্রাগন (Komodo Dragon) কোন পুরুষসঙ্গী ছাড়াই লন্ডনের চিড়িয়াখানায় বাচ্চা পয়দা করে রীতিমত আলোড়ন ফেলে দেয় ৯, ১০ । বিজ্ঞানীরা ২০০১ সালে নেব্রাস্কার ডুরলি চিরিয়াখানার হাতুরীমুখো হাঙ্গরেরও (Hammerhead shark) প্রজনন লক্ষ্য করেছেন কোন পুরুষসঙ্গির সাহায্য ছারাই১১ । এগুলো সবই পার্থেনোজেনেসিস-এর খুবই স্বাভাবিক উদাহরণ।
চিত্রঃ কমোডো ড্রাগন কোন পুরুষসঙ্গী ছাড়াই লন্ডনের চিড়িয়াখানায় বাচ্চা প্রসব করে রীতিমত আলোড়ন ফেলে দেয়
পার্থেনোজেনেসিসের আরো ভাল উদাহরণ খুঁজতে চাইলে বাংলাদেশের খোদ ঢাকা শহরের ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় চলে যেতে পারেন। শুনেছি, আঁশ পোকা নামে এক বদখদ পোকায় নাকি ছেয়ে গেছে ক্যান্টনমেন্ট এলাকার গাছপালা। ক্যান্টনমেন্টের বাসিন্দারা রীতিমত আস্থির। প্রথম আলোতে এ নিয়ে রিপোর্ট পর্যন্ত হয়েছিল। বংশবৃদ্ধির জন্য এ পোকার কোন পুরুষ লাগে না, মাদী পোকাটি একাই হাজারে হাজার ডিম পেড়ে পঙ্গপালের মত বংশবৃদ্ধি করে আর আশেপাশের গাছপালাগুলোকে ছিবড়া বানিয়ে ফেলে।
======================
তথ্য সূত্র :
১। রমাবাই এর বক্তৃতা উপলক্ষে, জৈষ্ঠ, ১২৯৬, রবীন্দ্র রচনাবলী, বিশ্বভারতী সুলভ সংস্করণ। এছাড়া পাঠকেরা মুক্তমনায় রাখা 'Tagore without Illusion' পেইজটিও দেখতে পারেন।
২।হেত্বাভাস নিয়ে বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন, http://www.infidels.org/library/modern/mathew/logic.html
৩। Dylan Evans & Howard Selina, Introducing Evolution, Icon Books, UK, 2001
৪। Joann C. Gutin, Why Bother? Sex seems like an unnecessary complicated means of reproducing. So how did it ever started? And why did it catch on? Discover, June, 1992.
৫। David Crews, Animal Sexuality, Scientific American, January, 1994
৬। আজকাল, ১২ ই আগস্ট, ১৯৯৯।
৭। অজয় মজুমদার ও নিলয় বসু, সমপ্রেম, দীপ প্রকাশন, কলকাতা, ২০০৫।
৮। Sex change? Something Fishy, Release from Philadelphia Inquirer.
৯। এনায়েত রহিম, কমোডো ড্রাগনের বিস্ময়কর প্রজনন, নিসর্গ, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০০৬
১০। Susan Milius, No-Dad Dragons: Komodos reproduce without males, http://www.sciencenews.org/articles/20061223/fob1.asp
১১। Captive shark had 'virgin birth', BBC News, May 23, 2007, http://www.nova.edu/ocean/ghri/bbc_virginshark.html
১২। Wardell B. Pomeroy, Clyde E. Martin, Alfred C. Kinsey Paul H. Gebhard , Sexual Behavior in the Human Female, AND Sexual Behavior in the Human Male, W. B. Saunders Company , 1953
১৩। David P. McWhirter, Stephanie A. Sanders and June Machover Reinisch, Homosexuality/Heterosexuality: Concepts of Sexual Orientation, Oxford University Press, USA, 1990
১৪। Samuel S. Janus and Cynthia L. Janus, The Janus Report on Sexual Behavior, Wiley, March 1994.
১৫। John Maynard Smith, The Evolution of Sex, Cambridge University Press; 1978।
১৬। Richard E. Michod, Eros and Evolution: A Natural Philosophy of Sex, Perseus Books, 1996
১৭। Bruce Bagemihl, Biological Exuberance: Animal Homosexuality and Natural Diversity, Stonewall Inn Editions, 2000
১৮। Simon Levay and Dean H. Hamer, Evidence for a Biological Influence in Male Homosexuality, Scientific American, May 1994.
মন্তব্য
সময় নিয়ে পড়ব। নিঃসন্দেহ দারুন একটা আলোচনা ধারা তৈরী হয়ে উঠছে। ধন্যবাদ আপনাকে।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
আরে দারুন তো! পরের পর্বের অপেক্ষায়--
আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
এ ব্যাপারে কমেডিয়ান ডেভিড শ্যাপেলের একটা থিওরী আছে - একটা দর্শক এক রুমে দুটা পুরুষকে দেখতে পারেনা। ভিডিও খুঁজে পেলাম না। ইউটিউবে আছে দেখে নিয়েন।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
অলৌকিক হাসানের মতো আমারও গে দৃশ্য দেখতে অসহ্য লাগে, কিন্তু লেসবিয়ান দৃশ্য আমাকে খুবই আরাম দেয়। আমি নিশ্চিত যে নারীশরীরের প্রতি আমার আকাঙ্ক্ষাই আমার মধ্যে এই আরামবোধ উসকে দেয। অভিজিৎ হয়ত এর সত্য-মিথ্যা সম্পর্কে বলবেন।
...................................................................
অসংখ্য 'নেই'-এর ভিড় ঠেলে
জ্বলজ্যান্ত 'আছে' খুঁজে পাওয়া হলো আসল ফকিরি
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী
বেশ ইন্টারেস্ট পাচ্ছি। নতুন কিছু বিষয় রয়েছে ভাবার মতো।
অনেকেই সমকামিতাকে পছন্দ না করেন না, কিন্তু তা বলে বিষয়টিকে খারাপ ভাবা ঠিক হবে না।
গৌতম
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
আপনার লেখার একটা সমালোচনা আছে। খুব বেশী টেকনিক্যাল শব্দের ব্যবহার এবং স্থির কোন সিদ্ধান্তের দিকে না যাবার একটা প্রবনতা আছে আপনার লেখায়। অর্থাৎ আপনি দশটা কারন বললেন, ব্যাখ্যা করলেন, আলোচনা করলেন কিন্তু আপনি কি মনে করেন সেটা বললেন না। এতে করে পাঠক হিসেবে আমি কোন লক্ষ্যে পৌঁছুতে পারলাম না। হয়ত পরের পর্ব গুলো দিলে আরো পরিষ্কার হবে।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
মুর্শেদ, আমি সাধারণতঃ আগে থেকেই কোন স্পেসিফিক স্ট্যান্ড না নিয়ে বা একটি দিকে হামলে না পড়ে বরং নিরাসক্ত ভঙ্গিতে লিখতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। আমি পাঠকদের বুদ্ধিবৃত্তির উপর আস্থা রাখি - তাদের জন্য ঈশারাই কাফি! আমি মনে করি অনেক কিছু সরাসরি না বললেও চলে। আমার লেখার মধ্যে দিয়েই আমার স্ট্যান্ড ফুটে উঠবে। হয়ত এ পর্বে সব কিছু উঠে আসেনি, কারণ আমি তো বলেছিই, একটি বড় প্রবন্ধকে ব্লগাকারে রূপ দিতে গেলে কিছু সমস্যা হয়ই। হয়ত আগামী পর্বে আরো অনেক কিছু পরিস্কার হবে।
আরেকটি ব্যাপার, আমি আভিজিতের ব্যক্তিগত স্ট্যান্ডে কীই বা আসে যায়। বিজ্ঞানীরা সাধারনতঃ বলেন - 'লেট দ্য ডেটা ডিসাইড'। বৈজ্ঞানিক উপাত্ত যেদিকে নিয়ে যাবে সেদিকেই আমাদের যাওয়া উচিৎ, আমার ব্যক্তিগত ইচ্ছে, অনিচ্ছে, অভিরুচির মূল্য এখানে গৌন। বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ লিখতে গেলে এটা আমাদের মাথায় রাখতে হবে।
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
অযৌন জননধারী ও যৌনধারীদের যথাক্রমে 'আচোদা' ও 'বোকাচোদা' নামে ডাকার প্রস্তাবটা আমার খুব পছন্দ হইল।
আশা করা যাচ্ছে, লেখাটা গে ও লেসবিয়ানদের নিয়ে আমাদের ধারণা পরিষ্কার করায় খুবই সহায়ক হবে। চালিয়ে যান প্লিজ।
...................................................................
অসংখ্য 'নেই'-এর ভিড় ঠেলে
জ্বলজ্যান্ত 'আছে' খুঁজে পাওয়া হলো আসল ফকিরি
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী
একটা জিনিস লক্ষ করেছি, সমকামীরা তাদের প্রকৃতিদত্ত (প্রকৃতির কথাই বলতে হচ্ছে) অভ্যাস নিয়ে নিজেদের জীবনে যতোনা অভিশপ্ত, তারচেয়ে বেশী অভিশপ্ত তারা তাদের পারিপার্শিক সমাজের প্রভাবে। সমস্যাটি এখানেই। এরা এদের নিজেদের কামনা, প্রবৃত্তি নিয়ে ভাল মন্দে মিশিয়ে নিজেদের ভেতরেই ভাল থাকতে পারে। কিন্তু সমাজ তাদের হস্তক্ষেপের মাধ্যমে এদের জীবনকে বিষময় করে তুলে।
তাই বলছি, সমাজের ভেতরেই বেশী।
**********************************
যাহা বলিব সত্য বলিব
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
"তাই বলছি, সমাজের ভেতরেই বিকৃতি আরো বেশী।" হবে
**********************************
যাহা বলিব সত্য বলিব
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
@ অলৌকিক হাসান এবং মুজিব মেহদী- মেয়েদের প্রতি আকর্ষণ তো বটেই সেটা ছাড়াও বলা হয়ে থাকে ছেলেদের চাইতে সমকামীতার ব্যাপারে মেয়েরা অনেক বেশী সহনশীল বা accepting হয়। উদ্ধৃতি “দুই মেরুর মাঝামাঝি রিয়েছে বিভিন্ন পর্যায়- প্রধাণতঃ বিষমকাম, তবে প্রায়ই সমকাম; সমান সমান বিষমকাম এবং সমকাম; প্রধানত সমকাম তবে প্রায়ই বিষম কাম; প্রধাণত সমকাম, তবে মাঝে মধ্যে বিষমকাম ইত্যাদি। কিন্সের এ স্কেল নিয়ে কিছু বিতর্ক থাকলেও এটি অন্ততঃ বোঝা যায় যে, আমাদের যৌন-প্রবৃত্তির ক্যানভাস আসলে খুবই বিস্তৃত, এবং যৌন প্রবৃত্তি একইভাবে সকলের মাঝে ক্রিয়াশীল হয় না।” মানুষ যাতে সমকামীতার দিকে যেতেই না পারে সেজন্য ছোট থেকেই আমাদের উপর socialization চলতে থাকে এটাকে অগ্রহনযোগ্য হিসেবে দেখার - আমাদের অজান্তেই।
আর heterosexual মেয়েদেরও হয়তো gay movie নিয়ে সমস্যা না থেকে lesbian movie নিয়ে থাকতে পারে - যেহেতু এ বিষয়ে এখন পর্য্যন্ত কোন মেয়ে ব্লগার কিছু বলে নি আমরা তাই জানি না ?
‘বন্ধু’ অভি (ঃ)) লেখাটা ‘অত্যন্ত সুলিখিত এবং ধী স্পর্ষী’ হচ্ছে ঃ)
স্নিগ্ধা
যেখানে বহুল প্রচলিত শব্দ রয়ে গেছে যা সব ছাত্রকে স্কুলে পড়তে হয়, এবং যেখানে বাকি রচনা অনুপম বাংলাতে, সেখানে দুটো এই অর্থে সম্পূর্ণ অপ্রচলিত স্ল্যাং (অশ্লীল বললাম না, কারণ লক্ষ্য করছি এ ধরণের শব্দের প্রতি অনেক (হয়তো অধিকাংশ) সচলের দুর্বলতা আছে) দেখে হতভম্ব হয়ে গেলাম।
কোনটা স্বাভাবিক এবং কোনটা অস্বাভাবিক,তা সংখ্যাতত্ব দিয়েই আখ্যায়িত করা যায়। ধর্ম, প্রকৃতি এসবের উল্লেখ প্রয়োজন নেই। কিছুটা জন্মগত জীন, কিছুটা পরিবেশের কারণে অনেক সময় লিংগ পছন্দ হের-ফের হয়ে যায়। ইংল্যান্ডের পাব্লিক স্কুলে, সেনা ক্যাম্পে, মাদ্রাসায় এরকম ঘটতেই পারে। এরা সংখ্যালঘু তাতে সন্দেহ নেই। এটা কোন বড় ব্যাপার নয়। লেখকের হানিমুন পিরিয়ডে আর বিস্তৃত মন্তব্য করলাম না।
এটি সবসময়ের জন্য সত্যি নয়। অনেক সময়ই, সংখ্যাতত্ত্বের নিরিখে ‘সংখ্যাগরিষ্ঠ’ মানুষের সনাতনী ভাবনার চাপে সঙ্খ্যালঘিষ্ঠ মানুষদের নাভিশ্বাস ওঠে। অস্তিত্ব রক্ষার সুতীব্র সংকটের মধ্যে দাঁড়িয়ে এদের জীবন প্রতিনিয়ত দীর্ণ হয়। তাদের হতাশ্বাস 'সংখ্যাগরিষ্ঠ' মানুষের কানে পৌছয় না।
আর সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগনের কথাই সবসময় সত্যি হবে এমন ঢালাওভাবে ভেবে নেওয়ারও কোণ কারণ নেই। একটা সময় ছিল যখন অধিকাংশ মানুষই ভাবত সূর্যই পৃথিবীর চারিদিকে ঘুরছে। কোপার্নিকাস, গ্যালিলিওর মত মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ ভাবত উল্টোটা। তাতে করে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগনের মতামত সঠিক হয়ে যায় নি। সংখ্যাগরিষ্ঠ-এর দোহাই দিয়ে সত্যতা কিংবা স্বাভাবিকত্ব প্রমাণের চেষ্টা প্রকারন্তরে জন্ম দেয় argumentum ad populum ফ্যালাসির।
আসলে sexual এবং asexual শব্দ দুটার কোন ভদ্রস্থ বাংলা পাওয়া গেল না। আমার বাসা থেকে চেষ্টা করা হয়েছিল, যাতে আমি 'স্ল্যাং' দুটো ব্যবহার না করি! আমি ভদ্রস্থ বাংলা চাইলে এমন সমস্ত প্রতিশব্দ 'ডিকশেনারী' থেকে আসা শুরু করল, যেগুলো ওই স্ল্যাং দুটোর চেয়েও অশ্লীল শোনায়! কি করব বলুন। বাধ্য হয়েই প্রয়োগ করতে হল । প্রয়োগ করে দেখলাম সচলে ভালই মার্কেট পেল, অর্থ-ও থাকল খুব পরিস্কার। আর তা ছারা ট্রাডিশন যখন ভাঙ্গা হচ্ছেই, ভাষাগত (মধ্যবিত্তসুলভ) ছুৎ-মার্গই বা অতিক্রম করব না কেন ? কি বলেন!
==============================
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
আমি স্কুলে পড়েছিলাম sexual reproduction=যৌন জনন আর asexual reproduction=অযৌন জনন। আর জীবদের ক্ষেত্রে একলিঙ্গ আর উভলিঙ্গ জীব। আপনি এই পরিভাষাগুলোও ব্যবহার করতে পারেন।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
সংখ্যাতত্ত্ব শুধু সংখ্যাগুরু ও লঘুর মধ্যে বিভাজন দেখাতে পারে - ভালো-মন্দ সম্পর্কে কোন রায় দেয় না। একজন অসাধারণ গায়িকা, মেধাবী ছাত্র, কবি বা খেলোয়াড় সংখ্যালঘু হলেও তাকে নিয়ে সবাই টানাটানি করে। আমি মৌসুমী ভৌমিকের "এখানে তুমি জমজমাট"এর কথা ভাবছি না।
সমকামীদের আচার আমার কাছে নোংরা মনে হয় হাইজিনের দৃষ্টিভঙ্গী থেকে। এইডস ছড়াতেও এর অনেক দায়িত্ব আছে।
সেটা আপনারব্যক্তিগত অভিমত। আধুনিক চিকিৎসকেরা এবং মনোবিজ্ঞানীরা তা মনে করেন না। উল্লেখ্য, ১৯৭৩ সালের ১৫ ই ডিসেম্বর American Psychiatric Association (বহু চিকিৎসক এবং মনোবিজ্ঞানীদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা সংগঠন) বিজ্ঞান্সম্মত আলোচনার মাধ্যমে একমত হন যে সমকামিতা কোন নোংরা ব্যাপার নয়, নয় কোন মানসিক ব্যধি। এ হল যৌনতার স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। ১৯৭৫ সালে American Psychological Association একইরকম অধ্যাদেশ দিয়েছিলেন। সকল আধুনিক চিকিৎসকই আজ এ বিষয়ে একমত।
আর নোংরার কথা বললে তো অনেকে সেক্স ব্যাপারটাকেই নোংরা মনে করেন, স্বাভাবিক হাগা-মুতার কথা না হয় বাদই দিলাম, এতে কিই বা করার আছে!
আরেকটি ব্যাপার, সিমন লিভের শরীরবৃত্তীয় গবেষণা ডিন হ্যামারের জেনেটিক গবেষণার ফলাফল সত্যি হলে সমকামিতার 'নোংরা' ব্যাপারটি (Xq28 ক্রোমোজম) হয়ত আমাদের জিনেই লুকিয়ে আছে। কাজেই সমকামীদের অহেতুক গালাগালি করে কোন লাভ নেই।
এটিও একটি বহুল প্রচারিত প্রপাগান্ডা। এগুলোওই আসলে 'হোমোফোবিয়া'কে উস্কে দেয়। এইডস ছড়ায় এইডস ভাইরাস থেকে। বাহক এবং তার যৌনসংগীর দেহে এইডস ভাইরাস না থাকলে বাহক সমকামি হোক আর বিষমকামী হোক, এইডস ছড়াবে না। সমকামিতার কারণে, কারো দেহে 'এইডস'-এর জীবানু গজায় না। কাজেই সমকানিতাকে অহেতুক দোষারোপ করার কোন কারণ নেই। আর সুরক্ষিত যৌন জীবন না থাকলে সমকামী এবং বিষমকামী -যে কেউই এইডসে আক্রান্ত হতে পারে। সেজন্যই পতিতাপল্লিতে এইডসের সংক্রমন বেশী, যদিও সেখানে খুব কম বাহকই সমকামী।
========================
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
"সমকামিতার কারণে, কারো দেহে 'এইডস'-এর জীবানু গজায় না।" - এই ব্যাপারটা আমাদের দেশেও প্রচার চলছে। এটা কেন যে লোকের মাথায় ঢোকে না সেটা আমি বুঝে পাই না। যেকোনো unprotected sex থেকেই AIDS ছড়াতে পারে, তবে তার জন্য একজনকে রোগাক্রান্ত হতেই হবে।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
'ভালো-মন্দ' ব্যাপারটা কি এখানে অপ্রাসংগিক নয়? সংখ্যা বা ডাটা দিয়ে এখানে দেখানো হচ্ছে প্রকৃতিতে কি ঘটছে, এবং যারা সমকামিতাকে ন্যাচারাল নয় বলে হাউমাউ করছেন তারা আসলে ভুল বা মিথ্যা কথা বলছেন। আর আপনার নোংরা লাগে কি না লাগে তাতে কি বা এসে যায়? আমারও তো সাপ দেখলে শুধু ভয় লাগে না ভিষন নোংরা লাগে, আমি কি তাহলে বলবো সাপ নামক প্রানীটি প্রকৃতিবিরুদ্ধ, আর আমি চেচিয়ে মরলেই বা শুনছে কে? সাপের উদ্ভব আর তার বিবর্তনের ধারা তো আর কারও কথায় বদলে যাবে না। যখন বৈজ্ঞানিক কোন ডাটা ( দুঃখিত, এখানেও সেই সংখ্যাতত্ত্ব ছাড়া গতি নেই) নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে তখন ইমোশানাল বা ব্যক্তিগত 'ভালো-মন্দটা' বাদ দিয়ে সাক্ষ্য প্রমাণ বা রিসার্চের ডাটা দিলে বোধ হয় আলোচনা করাটা সুবিধাজনক হয়।
অভি, উপরের উত্তরটার জন্য ধন্যবাদ। আমিও ঠিক এই কথাগুলাই লিখি লিখি ইচ্ছা হচ্ছিলো, কিন্তু তারপর ভাবলাম - ধূর খামোখা ‘আয়ুক্ষয়’ করে আর কি হবে ...ঃ)
স্নিগ্ধা
আমি বেশি খোলাখুলিভাবে আলোচনা করতে চাইছিলাম না। কিন্তু ভুল বোঝার কারণে বাধ্য হলাম। সমকামীরা সাধারনত পায়ুপথ ব্যবহার করেন বলে শুনেছি (আমার নিশ্চিত জানা নেই তাঁরা আসলে কি করেন), যা যোনি পথের চেয়ে অনেক নোংরা মনে হয় আমার কাছে। দ্বিতীয়ত এই রকম টাইট মিলনে অনেক সুক্ষ্ম ঘা সৃষ্টি হয়, যার ফলে এইচ,আই,ভি ভাইরাস বিষমলিংগ মিলনের চাইতে অনেক সহজে এক দেহ থেকে অন্য দেহে চলে যেতে পারে। এটা বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত। তৃতীয়ত সমকামীরা সাধারনত অনেকের সাথে সম্পর্ক রাখেন (পতিতাদের মত, যাদের সম্বন্ধে আপনি সঠিক লিখেছেন), বিষমকামী বিবাহিত নারী-পুরুষের ক্ষেত্রে যা তুলনামূলকভাবে কম । তাই সমকামীদের ক্ষেত্রে এইডসের গড় সম্ভাবনা কিছুটা বেশি। অবশ্য সমকামী বিশ্বস্ত দম্পতিদের জন্য এসব কথা প্রযোজ্য নয় এবং সুরক্ষাবরণ ব্যবহার করলেও নিরাপদ থাকা যায়।
আপনি উপরের কথাগুলো বলে সমকামিতা সম্বন্ধে আপনার জ্ঞানের দীনতাই প্রকাশ করছেন। আমি তো American Psychiatric Association এবং American Psychological Association এর ডাক্তারদের অভিমত দিয়েছিই। ' রকম টাইট মিলনে' অনেক সুক্ষ্ম ঘা সৃষ্টি হয়, এইচ,আই,ভি ভাইরাস বিষমলিংগ মিলনের চাইতে অনেক সহজে এক দেহ থেকে অন্য দেহে চলে যেতে পারে - এ সমস্ত ব্যাপারকে 'বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত' বলার আগে আরেকটু চিন্তা করুণ। আপনি ডায়াগোনেস্টিক এন্ড স্ট্যাটিস্টিকাল ম্যানুয়াল অব মেন্টাল ডিজ-অরডার রিপোর্ট-ও দেখতে পারেন। সেখানেও সমকামিতাকে স্বাভাবিক যৌনপ্রবৃত্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কেউই বলছে না এতে স্বাস্থ্যহানি ঘটে।
সমকামিতার অনেক ধরনের ফর্ম আছে। লেজবিয়নরা আপনার ঐ 'নোংরা' জায়গা ব্যবহার করেন না। আবার অনেক বিষমকামী কেবল যোনিপথ ব্যবহার করেন না, আরো অনেক কিছুই করেন, সেটা নিশ্চয়ই জানেন। এমন কি সেরকম ধরলে, স্বাভাবিক যৌনাচারে স্রেফ চুমুর মাধ্যমেও জীবানু ছড়াতে পারে। কেবল 'শুনেছি', 'আমার নিশ্চিত জানা নেই' - এই ধরনের জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে কোন চরম্পন্থি সিদ্ধান্তে (নোংরা/প্রকৃতিবিরুদ্ধ/অস্বাভাবিক) না যাওয়াই বোধ হয় বাঞ্ছনীয় হবে।
=========================
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
সূত্রঃ
---------------------------------------------------------
Who is at Risk for Getting HIV/AIDS?
---------------------------------------------------
The breakdown of cumulative AIDS cases reported through December 2000 in the United States is as follows:
· Men who have sex with men: 355,409 cases (46 percent);
· Injecting drug use: 193, 527 cases (25 percent);
· Heterosexual contact: 81,981 cases (11 percent);
· Men who have sex with men and inject drugs: 48,989 cases (6 percent);
· Recipient of blood transfusion: 8,777 ases (1 percent);
· Hemophilia/coagulation disorder: 5,190 cases (1 percent). [3]
-----------------------------------------------------
আপনি মনস্তাত্ত্বিক দিকটা আলোচনা করেছেন। আপনার রেফারেন্স মনস্তত্ত্ববিদদের । আমি কাউকে বিকৃত বলি নি। ভিন্ন বলতে আপত্তি কি ?
আসলেই সমকামীদের সম্বন্ধে আমার জ্ঞান কম।
আপনার এ স্টাটিস্টিক্স (যদিও আপনি কোন সূত্র উল্লেখ করেন নি), আমেরিকায় সত্য হতে পারে, কিন্তু সামগ্রিকভাবে সমকামিতার সাথে এইডসকে জড়িয়ে ফেলা ভুল হবে। আফ্রিকার কথা ভাবুন। হত দরিদ্র মহাদেশ - অথচ এইডসের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। ওখানে সমকামিতার জন্য এইডস ছড়ায়নি। বতসোয়ানার প্রায় ১৫ভআগ যুবক-যুবতী এখন এইডস আক্রান্ত। সাউথ আফ্রিকায় প্রায় ১৯ ভাফ। তাঞ্জানিয়ায় এমন গ্রাম-ও আছে যেখানে গ্রামের প্রায় সবাই এইডস-এ আক্রান্ত। সেই হতভাগ্য শিশুটির কথা ভাবুন, যে কিনা এইচ আই ভি জীবানু নিয়ে জন্মেছে, তার বাবা মায়ের এইডস সংক্রমনের কারনে।
আমি কি সেই শিশুগুলোর ভাগ্যহীনতার জন্য বাবা-মা'র বিষম কামকে দায়ী করব? আপনার যুক্তি মানতে গেলে তাই করা উচিত। কারন আফ্রিকায় বিষমকামীদের মধ্যে এইডস সংক্রমন অনেক বেশি। আসলে এভাবে দেখা ভুল হবে।
আমি আগেই বলেছি, এইডস সংক্রমনের কারন এইচ আই ভি ভাইরাস। আপনার বা যৌনসংগীর দেহে জীবানু না থাকলে এইডস আপনার মাধ্যমে ছড়াবে না, তা আপনি সমকামীই হোন, আর বিষমকামীই হোন।
তাহলে তো ঠিক আছে। ভিন্ন তো আমিই বলেছি। তাদের সেক্সুয়াল অরিয়েন্টেশন আমাদের থেকে ভিন্ন। কিন্তু আমার আপত্তি ছিল সংখ্যা তত্ত্ব দিয়ে তাদের অস্বাভাবিক প্রমাণ করার চেষ্টাতে।
আমরা মনে হয় দু'জনেই দু'জনের কথা বলে ফেলেছি। এখন বোধ হয় খ্যামা দেওয়ার সময় হয়েছে। দেখি এবার অন্যরা কি বলে।দ্বিতীয় পর্বটিও লেখার সময়ে হয়ে গেল...।
================================
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)