সমকামিতা (সমপ্রেম) কি প্রকৃতি বিরুদ্ধ? একটি বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনঃস্তাত্বিক আলোচনা (পর্ব -২)

অভিজিৎ এর ছবি
লিখেছেন অভিজিৎ (তারিখ: শুক্র, ৩০/১১/২০০৭ - ৭:০৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সমকামিতা (সমপ্রেম) কি প্রকৃতি বিরুদ্ধ? একটি বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনঃস্তাত্বিক আলোচনা (পর্ব -২)
অভিজিৎ

আগের পর্বের পর :

auto

'সমকামিতা (সমপ্রেম) কি প্রকৃতি বিরুদ্ধ?' প্রবন্ধটির প্রথম পর্ব সচলায়তনে প্রকাশের পর বহু পাঠকের সাড়া পাওয়া গেল। অনেক পাঠক কৌতুহলী হয়েছেন, শুধু সমকামিতা বিষয়ে নয়, আরো কিছু সংশ্লিষ্ট স্পর্শশকাতর বিষয়েও। এর মধ্যে একটি হচ্ছে রূপান্তরকামিতা (transsexuality)। ব্লগার অলৌকিক হাসান এই রূপান্তরকামিতা সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন বিশদভাবে। ভাবছি এ পর্বটিতে রূপান্তরকামিতা নিয়ে কিছু কথা বলব। পরের পর্বে আমরা বার ফিরে যাব সমকামিতার আলোচনায়।

একটা উদাহরণ দিয়ে শুরু করি। আই আইটির এক ভদ্রলোকের কথা জানতাম। খুব মেধাবী এক ছাত্র। কিন্তু পুরুষ হয়ে জন্মালে কি হবে, তিনি নিজেকে সবসময় নারী মনে করতেন। নারীদের সাথে থাকতে বা বন্ধুত্ব করতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ হরতেন তিনি। ভদ্রলোকের নাম নৃসিংহ মন্ডল। দৈনিক আজকাল ১৯৯৯ সালের ১২ই আগাস্ট তাকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছিল এই শিরোনামে- “ছয় বছর ধরে মেয়ে হতে চাইছে আই আইটির কৃতি ছাত্র”। সনাতন চিকিৎসা পদ্ধতিতে মনে করা হয়, এধরনের লোকেরা নিশ্চয় মনোরোগি। ভারতের নামকরা ডাক্তারেরা তাকে পরীক্ষা করলেন, তার শরীরে হরমোনগত কোন তারতম্য চোখে পড়ল না, মানসিক বিকারের চিহ্ন খুঁজে পাওয়া গেল না। ডাক্তারেরা কি করবেন ভেবে পেলেন না। শুধু চিকিৎসা ক্ষেত্রে নয়, প্রশাসনিক ক্ষেত্রে তৈরি হল একধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতির এবং জটিলতার। নৃসিংহ মন্ডলও ছেড়ে দেবার পাত্র নন। তিনি মানবাধিকার কমিশনের মধ্যমে নিজের “নারী হবার অধিকার” অধিকার প্রতিষ্ঠা করার আন্দোলন চালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিলেন। মেডিকেল বোর্ডের সামনে দ্বিধাহীন ভঙ্গিতে বললেন - “ছেলেবেলা থেকেই আমার মনে হত আমি ছেলে নই, মেয়ে। বাবা রেগে যেত। মা কিছু বলতেন না। ছেলেবেলা থেকেই মেয়েদের পোষার্টরতে পছন্দ করতাম। চিরকালই আমার ছেলেবন্ধুর চেয়ে মেয়ে বন্ধু বেশি। তাদের সঙ্গে মেলামেশা করতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি”। চিকিৎসকেরা তাকে বোঝালেন, “একবার ছেলে থেকে মেয়ে হয়ে গেলে ভবিষ্যতে কোন পরিস্থিতিতে চাইলেও আবার ছেলে হওয়া যাবে না”। নৃসিংহের পালটা প্রশ্ন মেডিকেল বোর্ডকে - “সে পরিস্থিতি আসবে কেন? আমার যথেষ্ট বুদ্ধি-বিবেচনা আছে। আমি ভেবেচিন্তেই মেয়ে হতে চাই”। তার প্রতি প্রশ্ন ছিল - “সামাজিক অসুবিধা হতে পারে, চাকরী-বাকরীর অসুবিধা হতে পারে”। তার জবাব ছিল - “এখন স্কলারশিপ পাই। গবেষনার পরে দেশে বিদেশে চাকরী পাবই। আর সামাজিক কোন অসুবিধা আমার হবে না। আর হলেও আমার কিছু যায় আসে না” । আরেকটা উদাহরণ দেই। এ প্রসঙ্গে আমেরিকার পুরুষ রূপান্তরকামী জরগেন্সেনের লেখা “Christine Jorgensen: A Personal Autobiography” বইটির কথা বলা যায়। ক্রিস্টিন জরগেন্সেনের আগের নাম ছিল জর্জ জরগেন্সেন। তিনি সেনাবাহিনীতে কাজ করতেন। তিনি নিজেকে নারী ভাবতেন। তার রূপান্তরকামী মানসিকতার জন্য চাকরী চলে যায়। পরে ১৯৫২ সালে অস্ত্রপ্রচারের মাধ্যমে তিনি নারীতে রূপান্তরিত হন। এ ধরনের অজস্র ঘটনার উদাহরণ হাজির করা যায়। এগুলোর পেছনে সামাজিক ও মনস্তাত্বিক কারণকে অস্বীকার না করেও বলা যায় – এ ধরনের চাহিদা বা অভিপ্রায় প্রকৃতিবিরুদ্ধ নয়। আর সে জন্যই, প্রখ্যাত রূপান্তরকামী বিশেষজ্ঞ হেনরী বেঞ্জামিন বলেন, আপাত পুরুষের মধ্যে নারীর সুপ্ত সত্তা বিরাজমান থাকতে পারে। আবার আপাত নারীর মধ্যে পুরুষের অনেক বৈশিষ্ট্য সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে। তিনি বলেন - “Every Adam contains the element of Eve and every Eve harbors traces of Adam, physically as well as psychologically.” হেনরী বেঞ্জামিন ছাড়াও এ নিয়ে গবেষণা করেছেন রবার্ট স্টোলার, এথেল পারসন, লিওনেল ওভেসে প্রমুখ। এদের গবেষণায় উঠে এসেছে দুই ধরনের রূপান্তররকামীতার কথা। শৈশবের প্রথমাবস্থা থেকে যাদের মধ্যে বিপরীত লিঙ্গের মানুষ হবার সুতীব্র বাসনা থাকে তাদের মুখ্য রূপান্তরকামী বলা হয়। অন্যদিকে যারা দীর্ঘদিন সমকামিতায় অভ্যস্ত হয়েও নানারকম সমস্যায় পড়ে মাঝে মধ্যে নারীসুলভ ভাব অনুকরণ করার চেষ্টা করে তাদের বলে গৌন রূপান্তরকামী। ১৯৬০ সালে মনোচিকিৎসক ওয়ালিন্দার রূপান্তরকামীদের উপরে একটি সমীক্ষা চালান। তার এই সমীক্ষা থেকে জানা যায়, প্রতি ৩৭,০০০ এ একজন পুরুষ রূপান্তরকামীর জন্ম হচ্ছে অন্যদিকে প্রতি ১০৩,০০০-এ একজন স্ত্রী রূপান্তরকামীর জন্ম হচ্ছে। ইংল্যান্ডে এ সমীক্ষাটি চালিয়ে দেখা গেছে যে সেখানে প্রতি ৩৪,০০০ এ একজন পুরুষ রূপান্তরকামী ভূমিষ্ট হচ্ছে আর অন্যদিকে প্রতি ১০৮,০০০ এ একজন জন্ম নিচ্ছে একজন স্ত্রী রূপান্তরকামী। অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডে গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে সেখানে ২৪,০০০ পুরুষের মধ্যে একজন এবং ১৫০,০০০ নারীর মধ্যে একজন রূপান্তরকামীর জন্ম হয়

এখন কথা হচ্ছে মানবসমাজে রূপান্তরকামীতার আস্তিত্ব আছে কেন? এ বিষয়টি বুঝতে হলে আমাদের 'সেক্স' এবং 'জেন্ডার' শব্দদুটির অর্থ এবং ব্যাঞ্জনা আলাদা করে বুঝতে হবে। সেক্স এবং জেন্ডার কিন্তু সমার্থক নয়। বাংলা ভাষায় শব্দদুটির আলাদা কোন অর্থ নেই, এদের সঠিক প্রতিশব্দও আমাদের ভাষায় অনুপস্থিত। সেক্স একটি শরীরবৃত্তিয় ধারণা। আর জেন্ডার মুলতঃ সমাজ-মনস্তাত্বিক অবস্থা। এই প্রসঙ্গে 'এনসাইক্লোপিডিয়া অব সাইকোলজিতে' বলা হয়েছে -


Sex refers to the physiological, hormonal and genetic makeup (XX or XY chromosome) of an individual; Gender is a cultural category that contains roles, behaviors, rights, responsibilities, privileges and personality traits assigned by that specific culture to men and women.

হেনরি বেঞ্জামিন তার 'ট্রান্সেক্সুয়াল ফেনোমেনন' প্রবন্ধে প্রায়শই বলেছেন :

Gender is located above, and sex is bellow the belt.

অর্থাৎ সোজা কথায়, সেক্স সমগ্র বিষয়টিকে 'দেহ কাঠামো' নামক ছোট্ট চৌহদ্দির মধ্যে আটকে ফেলতে চায়, যেখানে জেন্ডার বিষয়টিকে নিয়ে যেতে চায় অবারিত নীলিমায়।

যৌনতার শরীরবৃত্তিয় বিভাজন মেনে নিয়েও বলা যায়, সামাজিক অবস্থার (চাপের) মধ্য দিয়েই আসলে এখানে একজন নারী 'নারী' হয়ে উঠে, আর পুরুষ হয়ে ওঠে 'পুরুষ'। আমাদের রক্ষণশীল সমাজ নারী আর পুরুষের জন্য জন্মের পর থেকেই দুই ধরনের দাওয়াই বাৎলে দেয়। নানা রকম বিধি-নিষেধ ও অনুশাসন আরোপ করে। পোশাক আষাক থেকে শুরু করে কথা বলার স্টাইল পর্যন্ত সবকিছুই এখানে লৈঙ্গিক বৈষম্যে নির্ধারিত হয়। এর বাইরে পা ফেলা মানেই যেন নিজ লিঙ্গের অমর্যাদা। কোন ছেলে একটু নরমভাবে কথা বললেই তাকে খোঁটা দেওয়া হয় 'মেয়েলী' বলে, আর নারীর উপর হাজারো রকম বিধি-নিষেধ আর নিয়মের পাহাড় তো আছেই। ফলে দুই লিঙ্গকে আশ্রয় করে তৈরি হয় দু'টি ভিন্ন বলয়। কিন্তু সমস্যা হয় রূপান্তরকামি মানুষদের নিয়ে। এরা আরোপিত বলয়কে অতিক্রম করতে চায়। তারা কেবল 'যৌনাঙ্গের গঠন অনুযায়ী' লিংগ নির্ধারনের সনাতনী প্রচলিত ধারনাকে মন থেকে মেনে নিতে পারে না। তারা শারীরিক লিংগকে অস্বীকার করে বিপরীত লিঙ্গের সদস্য হতে চায়। তারা মনে করে দেহ নামক বাহ্যিক কাঠামোটি তাদের জন্য সঠিক লৈঙ্গিক পরিচয় তুলে ধরছে না; মনে করে সেক্স নয়, আসলে জেন্ডার অনুযায়ী তাদের লিংগ নির্ধারিত হওয়া প্রয়োজন। বিংশ শতাব্দীর পর থেকে (বস্তুতঃ বিগত কয়েক দশকে) পশ্চিমা বিশ্বে জেন্ডার সম্পর্কিত ধারণা যত ঋদ্ধ হয়েছে ততই লৈঙ্গিক বৈষম্যের প্রাচীর ভেঙে পড়ছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের অভাবনীয় উন্নতিতে সেক্সচেঞ্জ অস্ত্রোপ্রচারে এসেছে বিপ্লব। কানাডা, হল্যান্ড, ডেনমার্ক, বেলজিয়াম, ব্রাজিল, মেক্সিকো প্রভৃতি দেশে রূপান্তরকামী মানুষের চাহিদাকে মূল্য দিয়ে সেক্সচেঞ্জ ওপারেশনকে আইনসিদ্ধ করা হয়েছে। আমাদের মত সংখ্যাগরিষ্ট ষাঁড়েদের জন্য ব্যাপারটা 'অস্বাভাবিক' কিংবা 'প্রকৃতিবিরুদ্ধ' শোনালেও খোদ প্রকৃতিতেই বহু প্রজাতির মধ্যে সেক্স চেঞ্জ বা রূপান্তরপ্রবণতা একটি স্বাভাবিক ঘটনা। এমনি কিছু উদাহরণ পাঠকদের জন্য হাজির করিঃ

ঊত্তর আমেরিকার সমুদ্রোপুকূলে এক ধরনের ক্ষুদ্র প্রাণি খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এরা আটলাণ্টিক স্লিপার শেল (Atlantic Slipper Shell) নামে পরিচিত। বিজ্ঞানের পরিভাষায় এরা হল ক্রিপিডুলা ফরমিক্যাটা (crepidula formicata)। এই প্রজাতির পুরুষেরা একা একা ঘুরে বেড়ায়। তারপর তারা কোন স্ত্রী সদস্যদের সংস্পর্শে আসে এবং সংগমে লিপ্ত হয়। যৌন সংসর্গের ঠিক পর পরই পুরুষদের পুরুষাংগ খসে পড়ে এবং এরা রাতারাতিও স্ত্রীতে রূপান্তরিত হয়। এই রূপান্তরের পর এরা আর একাকী ঘুরে বেড়ায় না, বরং স্থায়ী হয়ে বসবাস করতে শুরু করে। প্রকৃতিতে পুরুষ থেকে নারীতে পরিনত হবার এ এক বিচিত্র দৃষ্টান্ত। ক্রিপিডুলা নিয়ে গবেষণায় বেড়িয়ে এসেছে আরো নানা ধরনের বিচিত্র তথ্য। বিজ্ঞানীরা এই এই প্রজাতির একটি সদস্যকে খুব ছোট অবস্থায় অন্য সদস্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখেন। এবার পরীক্ষা চালিয়ে দেখা যায়, এর মধ্যে স্ত্রী জননাঙ্গের বিকাশ ঘটতে শুরু করেছে। কিন্তু যদি একে কোন পরিণত ক্রিপিডুলার সাথে রাখা হয়, তবে সে ধীরে ধীরে পুরুষে রূপান্তরিত হরে থাকে।

উত্তর আমেরিকার ওই একই অঞ্চলের 'ক্লিনার ফিশ' নামে পরিচিত এক ধরনের মাছের মধ্যে গবেষণা চালিয়ে রূপান্তরকামীতার পরিস্কার প্রমাণ পেয়েছেন। এ মাছগুলোর বৈজ্ঞানিক নাম ল্যাবারিডেস ডিমিডিয়াটাস (Laborides dimidiatus)। এ প্রজাতির পুরুষেরা সাধারণতঃ পাঁচ থেকে দশজন স্ত্রী নিয়ে ঘর বাঁধে (নাকি 'হারেম বাঁধে' বলা উচিৎ?)। কোন কারণে পুরুষ মাছটি মারা পড়লে স্ত্রীদের মধ্যে যে কোন একজন (সম্ভবতঃ সবচেয়ে বলশালী জন) সংসার পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। খুবই আশ্চর্যের ব্যাপার হল, এই দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকেই ওই স্ত্রীমাছটির মধ্যে দৈহিক পরিবর্তন শুরু হয়ে যায়। দু সপ্তাহের মধ্যে সে পরিপূর্ণ পুরুষে রূপান্তরিত হয়ে যায় (তার গর্ভাশয় ডিম্বানু উৎপাদন বন্ধ করে দেয়, এবং নতুন করে পুরুষাংগ গজাতে শুরু করে) এবং এবং অন্যান্য স্ত্রী মাছদের সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়। প্রাকৃতিক নিয়মে স্ত্রী থেকে পুরুষে রূপান্তরের এও একটি মজার দৃষ্টান্ত। রূপান্তরকামীতার উদাহরণ আছে এনিমোন (anemone) বা 'ক্লাউন মাছ'দের (Clown Fish) মধ্যেও। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন সামুদ্রিক প্রবাল প্রাচীরের কাছাকাছি বেড়ে ওঠা মাছদের মধ্যে পরিবেশ এবং পরিস্থিতি অনু্যায়ী যৌনতার পরিবর্তন অতি স্বাভাবিক ঘটনা৮।


চিত্রঃ এনিমোন বা ক্লাউন মাছদের মধ্যে সেক্স চেঞ্জ অতি সাধারণ একটি ঘটনা। প্রাকৃতিক ট্রান্সেক্সুয়ালিটির বাস্তব উদাহরণ।

ইউরোপিয়ান ফ্লে অয়েস্টার (European Flay Oyster) ও অস্ট্রা এডুলিস (Ostrea edulis) প্রজাতির ঝিনুকেরা যৌনক্রিয়ার সময় পর্যায়ক্রমে স্ত্রী ও পুরুষের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। বস্তুতঃ এদের একই শরীরে স্ত্রী ও পুরুষ জনন অংগের অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে। বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান থেকে জানা গেছে, এই প্রজাতির ঝিনুকেরা পুরুষ হিসেবে যৌনজীবন শুরু করার পর ধীরে ধীরে স্ত্রীর ভূমিকায় রূপান্তরিত হয়। ইংল্যান্ডের সমুদ্র উপকূলে এই ধরনের ঝিনুক প্রচুর পরিমাণে দেখতে পাওয়া যায় যেগুলো প্রতিবছর একবার করে তাদের যৌনতার পরিবর্তন ঘটায়। কিন্তু ভূমধ্যসাগরীয় উষ্ণ অঞ্চলে ওই একই ঝিনুকের দল প্রতি ঋতুতেই তদের যৌন রূপের পরিবর্তন ঘটিয়ে থাকে। নারী থেকে পুরুষ কিংবা পুরুষ থেকে নারীতে রূপান্তরের আকছার প্রমাণ পাওয়া গেছে ইউনো মার্জিনালিস (Uno marginalis) নামের আরো একটি প্রজাতির ঝিনুকের মধ্যেও। সামুদ্রিক পোকা বলিনিয়ার মধ্যেও এ ধরণের রূপান্তর ঘটে থাকে। যৌনতার পরিবর্তন হরহামেশাই ঘটে চলেছে কিছু মাছি, কেঁচো, মাকড়শা এবং জলজ ফ্লি ডাফনিয়াদের মধ্যেও, এমনকি এদের অনেকেই পরিবেশ ও পরিস্থিতির সু্যোগ নিয়ে যৌনজননধারী (বোকাচোদা) থেকে অযৌনজননধারী (আচোদা)তেও রূপান্তরিত হয়

তাহলে এখন প্রশ্ন হল, এই সমস্ত উদাহরণ এখানে দেওয়ার উদ্দেশ্য কি? উদ্দেশ্য হল, প্রকৃতির বৈচিত্রময় জীবজগতের সাথে পাঠকদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া। সেই সাথে এটাও মনে করিয়ে দেওয়া যে ব্যাপারগুলো এত সোজাসাপ্টা নয়, যে আমরা হলফ করে বলে দিতে পারব শুধু আমরা (বোকাচোদারাই) প্রাকৃতিক, আর বাকীরা সব 'বানের জলে ভাইস্যা আইছে' । এরকম ভাবার আগে আমাদের বোঝা উচিৎ যে, সাদা-কালো এরকম চরম সীমার মাঝে সবসময়ই কিছু ধুসর এলাকা থাকে। আর সেই ধুসর এলাকায় নির্বিঘ্নে বাস করে সমকামিতা, উভকামিতা, উভকামের সমকামিতা, রূপান্তরকামিতার মত যৌনপ্রবৃত্তিগুলো।

৩য় পর্ব দেখুন ...


মন্তব্য

দিগন্ত এর ছবি

আমার ধারণা পুরোটা এখনও জানা নেই। আর যা জানা আছে তা আলোচনা করতে গেলে বিষয়টি সাবজেক্টের পরিধির মধ্যে আবর্তিত হবে। তবে অভিজিতদা আরো কিছু লিখতে পারলে আমিও খুশী হব।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

অভিজিৎ এর ছবি

আসলে এত অল্প পরিসরে এতকিছু বলা সত্যই কঠিন। হিজরেদের নিয়ে লেখা একটা বই 'ভারতের হিজরে সমাজ' (১৯৯৭) দেখতে পারেন। সামাজিক মূলস্রোত থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন এই 'হিজরে' জীবনের ব্যক্তি বেদনার অন্তর্লীন কথা এ বইয়ে প্রকাশিত হয়েছে। তবে আমার লেখার উদ্দেশ্য আসলে বিবর্তনের পটভুমিকায় বিভিন্ন যৌনপ্রবৃত্তিগুলোকে ব্যাখ্যা করা। তাই প্রাসঙ্গিকভাবে সমকাম, বিষমকাম, উভকামের পাশাপাশি রূপান্তরকামিতাও এসেছে।

উলিংগত্বের বিভিন্ন ব্যাপার আসবে পরের পর্বে। উভ লিংগত্বের ধারনা আসলে খুবই প্রাচীন। আফ্রোডিটস নামে গ্রীসে এক প্রাচীন দেবতা ছিলেন। গ্রীক পুরাণ থেকে জানা যায় তিনি ছিলেন এক শশ্রুগুম্ফধারী সুপুরুষ। কিন্তু তিনি নারীবেশ ধারণ করতেন। হার্মাফ্রোডিটসও ছিলেন প্রাচীন গ্রীসের একজন দেবতা। তার বাবার নাম ছিল হার্মেস, আর মা ছিল আফ্রোডাইট। একদিন প্রস্রবণে স্নানের পর তিনি উভলিংগ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। হার্মাফ্রোডিটস থেকেই ইংরেজীতে হার্মাফ্রোডাইট (hermaphrodite) শব্দটি এসেছে যা নেতিবাচক হিসেবে চলতি কথায় 'হিজড়ে' হিসেবে পরিচিত। রূপান্তরকামী আর 'হিজড়ে' এক নয়। যদিও, সমাজে রূপান্তরকামীদের কোন স্বীকৃতি না থাকায় অনেকেই শেষ পর্যন্ত হিজড়েতে পরিণত হতে বাধ্য হন।

সেক্স চেঞ্জ আসলে খুব জটিল প্লাস্টিক সার্জারী অপারেশন। এই অপারেশনে যারা নতুন দিগন্তের সন্ধান দিয়েছেন তাদের মধ্যে আছেন হ্যারি বেঞ্জামিন, স্টিনাক এবং আব্রাহাম। যেহেতু রূপান্তরকামীতা কোন অসুখ নয়, তাই ঔষধ প্রয়োগ করে এই মানসিকতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের বদলে ফেলা সম্ভব নয়। এক্মাত্র সেক্সচেঞ্জ অপারেশনের মধ্য দিয়েই অনেকে মানসিক পরিতৃপ্তি পেয়ে থাকেন। পুরুষ রূপান্তরকামী অর্থাৎ যারা পুরুষ থেকে নারীতে রূপান্তরিত হতে চায়, তাদের জন্য এক ধরনের অপারেশন, আর নারী রূপান্তরকামীদের জন্য আলাদা অপারেশন। মুলতঃ শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে চামড়া অ টিস্যু নিয়ে গ্রাফটিং এর মাধ্যমে যোনিপ্রদেশ গঠন করা হয়, হরমোন থেরাপির সাহায্যে স্তন গ্রন্থির হ্রাস/ বৃদ্ধি ঘটানো হয়, সিলিকন টেস্টিকেলের সাহায্যে অন্ডকোষ তৈরি করা হয়, ইত্যাদি।

======================
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

বিপ্লব রহমান এর ছবি

এরকম ভাবার আগে আমাদের বোঝা উচিৎ যে, সাদা-কালো এরকম চরম সীমার মাঝে সবসময়ই কিছু ধুসর এলাকা থাকে।

আমার প্রশ্ন একটু শিশুতোষ মনে হতে পারে। তবু প্রশ্ন হচ্ছে-
এই ধুসর এলাকা কী আপনা - আপনি সৃষ্টি হয়? নাকি এতে পরিবেশের প্রভাব ছাড়াও জীনের কোনো প্রভাব আছে? আসলে এর উৎস কোথায়?


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

অভিজিৎ এর ছবি

বিপ্লব, কোন প্রশ্নই শিশুতোষ নয় ( এটি আমাদের স্কুলের মাস্টারমশাইরা শিখাতেন, যদিও বেশি প্রশ্ন করলে অনেকেই ক্ষেইপ্যা উঠতেন চোখ টিপি)। যাকগে, সব যৌনপ্রবৃত্তি নিয়ে সমান গবেষণা হয়নি, সমকামিতা নিয়েই সবচেয়ে বেশি হয়েছে। তার নিরিখে আমি কিছু বলতে পারি। হোমোসেক্সুয়ালিটি পরিবেশগত কারণে হয় তাতো জানা কথাই। জিনগত কিনা এটি নিয়েও গবেষনা হচ্ছে। অনেক আধুনিক গবেষকই ( লিভে, ডিন হ্যামার প্রমুখ) মনে করেন হোমোসেক্সুয়ালিটি আসলে জিনগত। তারা হোমোসেক্সুয়ালিটিকে ত্বরান্বিত করে -ক্রোমোজমের একটি অংশ (Xq28) সনাক্ত করেছেন। তবে এ নিয়ে আরো গবেষনা পয়োজন। সিভেন বক্ল্যান্ডট , কাজি রহমান সহ অনেকেই গবেষনা করছেন। যেটুকু আমরা জানি তা হচ্ছে প্রকৃতিজগতে হোমোসেক্সুয়ালিটির অস্তিত্ব আছে। প্রানিজগতে ৪৫০টির-ও বেশি প্রজাতিতে সমাকামিতার অস্তিত্বকে সনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। আপনি এ নিয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে আগামী পর্বের জন্য অপেক্ষা করুন। এছাড়া Bruce Bagemihl এর একটা ভাল বই আছে - "Biological Exuberance: Animal Homosexuality and Natural Diversity" এটি খুঁজে নিয়ে পড়তে পারেন।

আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, সমাজে সবসময়ই একটা চাপ থাকে সমকামিতাকে নিরুৎসাহিত করে বিষমকামিতাকে উৎসাহিত করার। সেই সামাজিক চাপ সহ্য করে যারা শেষ পর্যন্ত 'গে' হিসেবে টিকে থাকতে পারেন, তাদের বড় অংশই হয়ত 'জিন' দ্বারা তাড়িত, সম্ভবতঃ তাদের প্রবৃত্তি 'বায়োলজিকালি হার্ড ওয়্যার্ড', অন্ততঃ অনেকের ক্ষেত্রেই।

=============================

পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

হাসান মোরশেদ এর ছবি

আমি নিরব পাঠকমাত্র । প্রথম থেকে পড়ছি । পড়ছি এবং জানছি । অভিজিৎ এর কাছে অনুরোধ-একটু ও কিপ্টেমী করবেননা কিন্তু হাসি
-----------------------------------------
মৃত্যুতে ও থামেনা উৎসব
জীবন এমনই প্রকান্ড প্রচুর ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

অভিজিৎ এর ছবি

কিপ্টেমি, আমি? হে হে... মাঝে মধ্যে মনে হয় উল্টাটা - মানে বেশি বক বক করতেছি।

যাকগে, সংগে থাকনের জন্য ধন্যবাদ। তয়, মাঝে মধ্যে নিরবতা ভেঙে আপনার মতামতটাও জানাবেন।

===========================

পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

আপনার লেখার, বিশেষ করে আপনার স্বচ্ছ ও স্পষ্ট যুক্তির, ভক্ত আমি অনেক আগে থেকেই। কিন্তু জটিল বিজ্ঞানবিষয়ক আলোচনায় অংশ নেয়ার যোগ্যতা নেই (বিনয় নয়) বলে মন্তব্য না করে শুধু পড়ে যাই, জ্ঞান আহরণ করি। আপনি লিখতে থাকুন। আপনার পরবর্তী বক বক শোনার অপেক্ষায় রইলাম।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

অভিজিৎ এর ছবি

প্রশংসাবাক্য কার না ভালা লাগে । দেঁতো হাসি

কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আপ্নের লেখারো একজন গুণমুগ্ধ ভক্ত, সন্যাসী সাব।
==========================
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

অতিথি লেখক এর ছবি

রূপান্তরকামীতা নিয়ে আসলেই খুব বেশী গবেষণা এখনও হয় নি যতোটা এই ধরনের অন্যান্য বিষয় গুলো নিয়ে হয়েছে। যেকারণে Gender studies এর একটা বড়ো অংশ এখন এই দিকটাতে নজর দিতে শুরু করেছে। আর sexuality নিয়ে মিশেল ফুকোর যুগান্তকারী ব্যখ্যা এই পুরো বিষয়টাকে সমাজে নতুনভাবে দেখতে বাধ্য করেছে। ফুকোর মতে আমাদের sexuality ব্যাপারটা সামাজিক ভাবে ‘তৈ্রী’ করা হয়। রাষ্ট্র এবং সমাজ social control এর উপায় হিসেবে সমাজে কতোগুলো নিয়ম বা গ্রহণযোগ্য ব্যাপার ঠিক করে দেয় যার বাইরে গেলে সমাজের ‘শাস্তি’ দেয়ার ক্ষমতা টা justified হয়। যেমন ধরুন, আমরা যে যে কাজগুলোকে স্বাভাবিক বলে গ্রহন করেছি তার বাইরের কাজগুলো যারা করে তারা “পাগল’, রাষ্ট্র যে নিয়মগুলোকে আইনগত ভাবে ৈব্ধ বলে তার বাইরে গেলে মানুষ ‘অপরাধী’, ঠিক সেইরকম নারী বা পুরুষের যে যে রকম আচরণ করা উচিত বলে নির্দিষ্ট করা থাকে তার বাইরে যেতে চাওয়া মানে ‘অস্বাভাবিক’। এতে পুরো systemটাকে ধাক্কা দেঅয়া হয় এবং সমাজ (অর্থাৎ আমরা) সেটা খুব ভালো ভাবে নিতে পারি না।

অভি আমিও পরের পর্বটার অপেক্ষায় আছি।

এই বিষয়ে দুটা খুব ভাল movie আছে - কারো ইচ্ছে হলে দেখতে পারেন। একটা হলো HBO এর প্রডাকশন নাম Normal (জেসিকা ল্যাং এবং টম উইল্কিন্সনেরএর অনবদ্য অভিনয়) আর একটা Transamerica ( ডেস্পারেট হাউস ওয়াইফের ফেলিসিটি হাফম্যান) ।

স্নিগ্ধা

অভিজিৎ এর ছবি

ঠিক সেইরকম নারী বা পুরুষের যে যে রকম আচরণ করা উচিত বলে নির্দিষ্ট করা থাকে তার বাইরে যেতে চাওয়া মানে ‘অস্বাভাবিক’। এতে পুরো systemটাকে ধাক্কা দেঅয়া হয় এবং সমাজ (অর্থাৎ আমরা) সেটা খুব ভালো ভাবে নিতে পারি না।

সমস্যাটা এখানেই। আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠরা অনেক সময়ই নিজেদের মত, নিজেদের অভিপ্রায়, এমনকি নিজেদের সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশনকেই 'সাভাবিক'/'প্রকৃতিক' ইত্যাদি অভিধায় অভিহিত করি আর আমাগো লগে যাগো মিলেনা তাগো ঢালাওভাবে কইয়া দেই -'আন ন্যাচারাল' । গত কয়েক দশকে ওয়েস্ট অ্যাট লিস্ট হোমোসেক্সুয়াল, ট্রান্সজেন্ডারদের প্রতি বেশ লিবারেল হইছে। পশ্চিমে বিংশ শতাব্দির পর যৌনতার বিপ্লবের ধারায় সেক্স এবং জেন্ডারের যে পার্থক্য নির্দেশিত হইছে তার ঢেউ এখনো বাংলাদেশে আসে নাই। হোমোসেক্সুয়াল, ট্রান্সজেন্ডারদের রাইট তো বহুত দূর, হিন্দু, বৌদ্ধ - হেগো মাইনোরিটি রাইট-ই যেমনে পদে পদে ভায়োলেটেড হয়... অইগুলান এখন চিন্তা করণও পাপ!

(বাই দ্য ওয়ে, মডারেটররা স্নিগ্ধারে এখনো সচল না কইরা 'অতিথি' বানায় রাখছে ক্যান কে জানে! )

==========================

পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

হিমু এর ছবি

যতদূর জানি বাংলাদেশের আইনে সমকামিতা অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়।


হাঁটুপানির জলদস্যু

বন্যা এর ছবি

আমাদের দেশের অবস্থা খুবই খারাপ তা তে সন্দেহ নেই, তবে আমেরিকা তে এত হইচই এর পরও যে অবস্থা খুব ভালো তা বলা যাবে না। এখনও এখানে গে দেরকে পিটিয়ে মারা হয়, গে ম্যারেজ বন্ধ করার জন্য ভোট নেওয়া হয়, মিলিটারীতে কেউ গে জানাজানি হয়ে গেলে কখনও কখনও তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থাও নেওয়া হয়। ওয়েস্ট বা পাশ্চাত্য বলতে আমরা আমেরিকা এবং ইউরোপ দুটোই বুঝি, কিন্তু ইউরোপের তুলনায় আমেরিকার ডেভেলপমেন্টটা যে কত রক্ষণশীল তা এরকম অনেক ব্যাপার দেখলেই বোঝা যায়। এ প্রসঙ্গে আরেকটা ঘটনা পড়লো, একবার কাজে আমার এক কলিগ কে কথাপ্রসঙ্গে বলেছিলাম যে আমি কোন ধর্মে বিশ্বাস করি না, বেচারা তো পারলে কেঁদেই ফেলে আমার দুঃখে। পরের দিন দেখলাম সেই লোক আমার জন্য একটা বাইবেল নিয়ে এসেছে। অনেক অনুনয় বিনয় করে বললো, সে আমার ভালো চায়, আমার এরকম বিপথে যাওয়া সে ঠিকভাবে নিতে পারছে না, বাইবেলটা যেন আমি একটু পড়ে দেখি, জিসাস হয়তো আমাকে সঠিক পথে ফিরে আসতে সাহায্য করবে!

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

একবার কাজে আমার এক কলিগ কে কথাপ্রসঙ্গে বলেছিলাম যে আমি কোন ধর্মে বিশ্বাস করি না, বেচারা তো পারলে কেঁদেই ফেলে আমার দুঃখে

দেঁতো হাসি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

দিগন্ত এর ছবি

"জিসাস হয়তো আমাকে সঠিক পথে ফিরে আসতে সাহায্য করবে!"
- আমেরিকার অবস্থা সত্যি খারাপ। কদিন আগেও একটা সার্ভেতে দেখলাম অর্ধেক লোকও ডারুইনের বিবর্তনবাদে বিশ্বাসী নয়।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

মেঘ এর ছবি

মেঘ
অনেকদিন পর সচলে এসে ভালো লিখা পড়লাম। ভালো লাগলো।
আবার আসবো।

মেঘ

মুশফিকা মুমু এর ছবি

wow ... প্রথম পর্বে আর দ্বিতীয় পর্বে অনেক কিছু জানলাম। Thanks

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

eru এর ছবি

"সেক্স এবং জেন্ডার কিন্তু সমার্থক নয়। বাংলা ভাষায় শব্দদুটির আলাদা কোন অর্থ নেই, এদের সঠিক প্রতিশব্দও আমাদের ভাষায় অনুপস্থিত। সেক্স একটি শরীরবৃত্তিয় ধারণা। আর জেন্ডার মুলতঃ সমাজ-মনস্তাত্বিক অবস্থা।"
"ক্রিস্টিন জরগেন্সেনের আগের নাম ছিল জর্জ জরগেন্সেন। তিনি সেনাবাহিনীতে কাজ করতেন। তিনি নিজেকে নারী ভাবতেন। তার রূপান্তরকামী মানসিকতার জন্য চাকরী চলে যায়। পরে ১৯৫২ সালে অস্ত্রপ্রচারের মাধ্যমে তিনি নারীতে রূপান্তরিত হন। "

স্বাভাবিক নিয়মে মানুষের আকর্ষন থাকে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি।সুতরাং রূপান্তরকামি মানুষেরও আকর্ষন থাকবে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি,প্রকারান্তরে যা দাড়াচ্ছে সমলিঙ্গের প্রতি। তার মানে দাড়াচ্ছে ,সমকামিতার অন্যতম(নাকি প্রধান!) কারন রূপান্তরকামিতা?ব্যাপারটা তাই কি?

শিক্ষানবিস এর ছবি

আজকে সায়েন্স ডেইলিতে সমকামিতা বিষয়ক নতুন খবর দেখলাম। ইউনিভার্সিটি অফ মিনেসোটার বিজ্ঞানীরা গবেষণার ফলাফলে বলছেন, অনেক সমকামীর মধ্যে মানসিক ও যৌন স্বাস্থ্যের যে দুর্বল অবস্থা দেখা যায় তা তার সমকামী হওয়ার কারণে নয়, বরং সমকামিতা সম্পর্কে তার নেতিবাচক মনোভাব থাকার কারণে। লিংকটা দিলাম:
Homosexuals' Negative Feelings About Sexuality Predict Poor Mental And Sexual Health

অচল এর ছবি

পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম আপনে তো ভাই অনেক সুন্দর করে লেখেন। নিজের দৃষ্টিভঙ্গির উপর stick না থেকে সুন্দর করে সবগুলা পয়েন্ট বলেন। পছন্দ হয়ছে আপনার স্টাইল। পড়ার সময় মনে হয়তাছিল IEEE এর কোন বাংলা Review Paper পড়তাছি ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।