সমকামিতা (সমপ্রেম) কি প্রকৃতি বিরুদ্ধ? একটি বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনঃস্তাত্বিক আলোচনা (পর্ব -৩)

অভিজিৎ এর ছবি
লিখেছেন অভিজিৎ (তারিখ: মঙ্গল, ০৪/১২/২০০৭ - ৬:০৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

auto

আমরা আগের পর্বে রূপান্তরকামিতা নিয়ে নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। বলেছিলাম, সমকামিতা, উভকামিতা, উভকামের সমকামিতা, রূপান্তরকামিতার মত যৌনপ্রবৃত্তিগুলোকে ঢালাওভাবে 'প্রকৃতিবিরুদ্ধ' অভিধায় অভিহিত করার আগে আমাদের আরেকটিবার চোখ মেলে প্রকৃতির দিকে তাকানো উচিৎ। এরপর সামগ্রিকভাবে বোঝা উচিৎ যৌনতার উদ্ভবকে। প্রানীজগতের একেবারে গোড়ার দিকে কিছু পর্ব হল - প্রটোজোয়া, পরিফেরা, সিলেনটেরেটা, প্লাটিহেলমিনথিস, অ্যানিলিডা, মোলাস্কা ও কর্ডাটা। এই সমস্ত প্রাণিদের বেশিরভাগই উভলিংগ বা হার্মাফ্রোডাইট (Hermaphrodite), কারণ এদের শরীরে স্ত্রী ও পুরুষজননাঙ্গের সহবস্থান লক্ষ্য করা যায়। এদের জন্য উভলিঙ্গত্ব কোন শারীরিক ত্রুটি নয়, বরং এটি পুরোপুরি 'প্রাকৃতিক'। এরা এদের উভলিঙ্গত্ব নিয়েই স্বাভাবিক বংশবিস্তারে সক্ষম । অর্থাৎ, যে যৌনতার বিভাজনের জন্য আমরা বোকাচোদারা (যৌনজননধারীরা) আজ গর্ববোধ করি, অবলীলায় অন্যদের 'অ্যাবনরমাল', 'আননেচারাল'-এর তকমা এঁটে দেই- গোড়ার দিকে কিন্তু প্রকৃতিতে যৌনতার সেরকম কোন সুস্পষ্ট বিভেদ ছিল না। ইতিহাস খুঁজলে দেখা যায়, মানব সমাজেও উভলিঙ্গত্ব বিরল নয়। প্রাচীন গ্রীসে সমকামিতা, প্রাচীন রোমে খোজা প্রহরী (eunuch), নেটিভ ইন্ডিয়ানদের মধ্যে 'দ্বৈত সত্তা' (two-spirits), আরব ও পার্সিয়ায় 'বার্দাজ' এবং ভারতবর্ষে 'হিজরা'দের অস্তিত্ব সেই সাক্ষ্যই দেয়। পশ্চিমা বিশ্বে শেরিল চেজ, এরিক শেনিগার, জিম সিনক্লায়ারের মত ইন্টারসেক্স -সেলিব্রিটিরা বহাল তবিয়তে বাস করলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ ষাঁড়েরা এদের অনেককেই 'অস্বাভাবিক' হিসবে চিহ্নিত করবেন। আমরা বরং 'স্বাভাবিক' মানুষদের কথা বলি।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, বিবর্তনের দীর্ঘ পথ-পরিক্রমায় আমরা গর্বিত 'স্বাভাবিক' মানুষেরাও নিজেদের দেহেই উভলিঙ্গত্বের বহু আলামত বহন করে চলেছি - নিজেদের অজান্তেই। যেমন, নারী জননাংগ পুরুষের মত না হলেও, পুরুষের শিশ্নের অনুরূপ একটি ক্ষুদ্র ও অত্যন্ত সংবেদনশীল অঙ্গের অবস্থান লক্ষ্য করা যায়, যাকে ভগাংগুর বা ক্লাইটোরিস বলে। আবার অন্যদিকে পুরুষ শরীরে স্ফীত স্তন না থাকলেও স্তন ও স্তনবৃন্তের সুপ্ত উপস্থিতি সব সময়ই লক্ষ্যনীয়। বলাবাহুল্য, বংশবিস্তারে এসমস্ত অংগের কোন ভূমিকা নেই, তবুও আমরা এসমস্ত 'অ্যাবনরমালিটি' বহন বহন করে চলেছি 'প্রাক্রিতিক ভাবেই' - বিবর্তনের পথ ধরে। আরো কিছু উদাহরণ দেই। পুরুয শরীরের থেকে ব্যাপক পরিমানে অ্যান্ড্রোজেন (androgen) যেমন নিঃসৃত হয়, তেমনি অল্প পরিমানে হলেও এস্ট্রোজেন (estrogen) নিঃসৃত হয়ে থাকে। এই এস্ট্রোজেন ‘স্ত্রী হরমোন’ হিসেবে পরিচিত। ঠিক তেমনি, মেয়েরা স্ত্রী হরমোন নিঃসরণের পাশাপাশি সামান্য পরিমানে হলেও পুরুষ হরমোনও নিঃসরণ করে থাকে। এইভাবে বিপরীত লিঙ্গের অনেককিছুই আমরা প্রাণের উত্পত্তির ঊষালগ্ন হতে ধারণ করে চলেছি - এবং তা প্রাকৃতিকভাবেই। শুধু মানুষ কেন অনেক প্রানীর মধ্যেই এমনটি লক্ষ্যনীয়। আফ্রিকার নিশাচর মাংশাসী স্পটেড হায়নাদের কথা বলা যায়, যাদের নারী সম্প্রদায়কে দেখলে পুরুষ বলেই বিভ্রম হবার কথা। সায়েন্টেফিক আমেরিকানের জানুয়ারী ২০০৪ সংখ্যায় লেখা হয়েছে - “The large erectile clitoris of a female spotted Hyena closely resembles a male’s penis. Much like many male animals, female spotted hyenas use their clitorises in greeting displays and dominance interactions”. এ ধরনের ‘পুরুষাংগ সদৃশ’ দীর্ঘ ভগাংগুর শুধু স্পটেড হায়নাদের মধ্যে নয়, আছে কাঠবিড়ালী সদৃশ নিশাচর প্রাইমেট 'বুশ বেবী' এবং 'স্পাইডার মাঙ্কি' এবং 'উলি মাঙ্কি'র মধ্যেও ২০ । আবার বিপরীতটাও (মেয়েদের মত যৌনাংগ) দুর্লভ নয়। পুরুষ ডলফিন এবং তিমিদের ক্ষেত্রে চোখে পড়ার মত কোন 'বহিস্থ পুরুষাংগ' দেখা যায় না। এই জলজ স্তন্যপায়ীদের (Cetaceans) কোন অণ্ডাশয়ও নেই ২০

চিত্রঃ আফ্রিকার নিশাচর মাংশাসী স্পটেড হায়নাদের নারী সম্প্রদায়ের পুরুষাংগ সদৃশ দীর্ঘ ক্লায়টোরিস দেখে অনেকেই বিভ্রান্ত হয়ে যাবেন

এ প্রসংগে অস্ট্রেলিয়ার ক্যাঙ্গারুদের কথাও একটু বলে নেই। মেয়ে ক্যাঙ্গারুরা পেটের বাইরের দিকে লাগানো একটি থলিতে বাচ্চা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে - এ ধরণের ছবি আমরা বই-পত্র, সিনেমায় হর হামেশাই দেখি। পেটের আলগা চামড়া দিয়ে তৈরি থলিটা (ইরেজীতে পাউচ) আসলে ক্যাঙ্গারুদের গর্ভাশয়ের বিকল্প; কারণ মেয়ে ক্যাঙ্গারুদের ওই থলিটা অপরিণত বাচ্চাকে এর মধ্যে রেখে ধীরে ধীরে বড় করে তুলে। অপরিণত বাচ্চাকে মায়েরা নিজেদের ইউটেরাসে যেভাবে বড় করে, ঠিক সেভাবেই ক্যাঙ্গারুরা বাচ্চাকে নিজের থলিতে প্রায় নয় মাস রেখে বড় করে তুলে। কাজেই এটা হয়ত ভেবে নেওয়া অপ্রাসঙ্গিক হবে না যে, শুধু মেয়ে ক্যাঙ্গারুদের পেটে ওইরকম থলি থাকার কথা, ছেলে ক্যাঙ্গারুদের নয়। কিন্তু গোল বাঁধালো ইস্টার্ণ গ্রে ক্যাঙ্গারুরা। এদের মধ্যে পুরুষাঙ্গ এবং থলির সহাবস্থান লক্ষ্য করা যায়। শুধু তাই নয়, ক্রোমোজম বিশ্লেষণ করেও কিন্তু দেখা গেছে এরা স্ত্রী জননকোষ (XX) এবং পুরুষ জননকোষ (XY)-এর সমন্বয়ে আভিনব ধরণের XXY প্যাটার্ণ দিয়ে তৈরি ১৭। এধরনের উভলিংগ সত্তা এবং অদ্ভুতুরে ক্রোমজোম প্যাটার্ন আছে ফ্রিমার্টিন নামে এক ধরণের গরুজাতীয় প্রানীর মধ্যেও। এদের ক্রোমজমের প্যাটার্ণ XXY, XXX, XXYY, XO থেকে শুরু করে নানা ধরণের বিন্যাস এবং সজ্জা থাকতে পারে। একেক ধরণের বিন্যাস জন্ম দিতে পারে পুরুষ-মহিলার সমন্বয়ে একেক ধরণের মিশ্রণের। আবার কিছু কিছু প্রাণি আছে যাদের দেহের অর্ধেকটা পুরুষ আর অর্ধেকটা নারী; আরো স্পষ্ট করে বললে- দেহের ডানদিকটা (সাধারণতঃ) থাকে পুরুষের আর বাম দিকটা থাকে মেয়েদের। কিছু প্রজাপতি, কাকড়া, মাকড়শা, পাখি, ভালুক সহ বেশ কিছু স্তন্যপায়ী প্রানীদের মধ্যে বিজ্ঞানীরা এই “অর্ধনারীশ্বর” প্রতিমূর্তির সন্ধান পেয়েছেন। বিজ্ঞানের ভাষায়, যে সমস্ত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এরকম প্রজাতির জন্ম হতে পারে সেগুলো হল ছিমারিজম (chimerism), মোজাইক (Mosaic) কিংবা গ্যানাড্রোমরফিজম (Gynandromorphism)। এ ব্যাপারটি শুধু পশু-পাখি নয়, বহু মানুষের মধ্যেও লক্ষ্যনীয়। অনেকেই হয়ত লিডিয়া ফেয়ার চাইল্ড এবং ক্যারেন কিগানের কথা মিডিয়ার দৌলতে জেনে ফেলেছেন। নিউসায়েণ্টিস্ট পত্রিকার ২০০৩ সালের একটি রিপোর্ট থেকে জানা যায়, অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন সময়ে এ ধরনের মানুষের জন্ম হতে পারে , এবং এখন পর্যন্ত অন্ততঃ ৩০ -৪০টি এ ধরনের 'ডকুমেন্টেড কেস' আছে।

চিত্রঃ বিজ্ঞানীরা প্রজাপতি, কাঁকড়া সহ বহু প্রজাতিতে উভলিঙ্গ সত্ত্বার (গ্যানাড্রোমরফিজম) হদিস পেয়েছেন।

আবারো আমাদের সেই পুরোন বাকাচোদা এবং আচোদাদের গল্পে ফিরে যাই। বিবর্তনের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখলে বোকাচোদাদের যাবতীয় কাজ-কর্ম যে বিধ্বংসী রকমের অপচয়ী তা আগেই উল্লেখ করেছি। বিখ্যাত জীববিজ্ঞানী প্রফেসর রিচার্ড ডকিন্স এই অপচয়ী প্রক্রিয়ার 'তান্ডব' দেখে এক সময় মন্তব্য করেছিলেন, কোন প্রজাতি যদি একবার কোনভাবে বোকাচোদা থেকে আচোদায় রূপাতরিত হয়ে যায়, তবে সে প্রজাতিতে আর মনে হয়না সেক্স আবার কখনো ফেরৎ আসবে- 'স্ট্যাটিস্টিকালি ইম্প্রোবাবেল'। ফরাসী প্যালিওন্টোলজিস্ট লুইস ডোল্লোর অনুকল্প যদি সঠিক হয়ে থাকে (বিবর্তনের কোন ধারা যদি একবার ভেঙ্গে যায়, তা আর নতুন করে কখনো গজাবে না), তবে অপচয়বপ্রবণ সেক্সের আবার সেই প্রজাতিতে ফেরৎ না আসারই কথা। এখন, বোকাচদাদের যৌনতার ব্যাপারটা যদি এত নিকৃষ্ট এবং অপচয়প্রবনই হয়ে থাকে তবে তারা এত ঢালাওভাবে প্রকৃতিতে টিকে আছে কি করে? বোকাচোদাদের নামে এত গীবৎ গাওয়ার আর আচোদাদের এত গুণগান করার পরও দেখা যাচ্ছে প্রকৃতির উচ্চশ্রেনীর জীবজগতের শতকরা নিরানব্বই ভাগই 'আচোদা' নয়, বরং 'বোকাচোদা'। কেন এমন হল? ব্যাপারটা জীববিজ্ঞানীদের কাছে অনেকটা ধাঁধার মত। ধাঁধার উত্তর বহ গবেষক অনেকভাবে দিতে সচেষ্ট হয়েছেন। কেউ বলেছেন, নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তির ক্ষেত্রে খারাপ দেখালেও হয়ত যৌনতার ব্যাপারটা দলগতভাবে সেরকম খারাপ নয়, বরং টিকে থাকার ক্ষেত্রে এটি কোন বাড়তি সুবিধা দেয়। কেউ বলছেন, সেক্স জিনিসটা জীবজগতে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে জেনেটিক ভ্যারিয়েশন বা ভিন্নতা তৈরি করে, যা বিবর্তনের অন্যতম চালিকাশক্তি। কথাটার মাঝে যে কিছুটা হলেও সত্যতা নেই তা নয়। এটা ঠিক পার্থেনোজেনেসিস নামধারী আচোদাদের প্রাকৃতিতিক ক্লোনিং প্রক্রিয়ায় কোন রকম বংশগত ভিন্নতা বা বৈচিত্র থাকে না, কারণ, এরা কেবলমাত্র মায়ের একই জেনেটিক বৈশিষ্ট নিয়েই জন্মায়। যার ফলে জন্মানো সবাই - ছেলে, নাতি, পুতি, জ্ঞাতিগোষ্ঠি- জেনেটিকভাবে একই হয়। বিজ্ঞানীরা ধারনা করেন, জেনেটিক ভ্যারিয়েশন না থাকায় পরিবর্তিত পরিবেশের সাথে এরা সাধারণত সহজে খাপ খাওয়াতে পারে না। ফলে কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগে যেমন খাদ্যাভাব বা রোগবালাইয়ের আগমনে এরা নিজেদের সহজে রক্ষা করতে নাও পারতে পারে যা হতে পারে প্রজাতির বিলুপ্তির কারণ। আবার, কখনো কোন কারণে এদের বংশধারার মধ্যে একবার কোন ক্ষতিকর মিউটেশনের জন্ম হলে, (জেনেটিক ভ্যারিয়েশন না থাকায়) তারা এই ক্ষতিকর মিউটেশনটি বহন করে যাবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে। কিন্তু তারপরও শুধুমাত্র 'জেনেটিক ভ্যারিয়েশনের' ধুয়া তুলে নিতান্ত অপচয়ী এই মাধ্যমের টিকে থাকার ব্যাপারটাকে ব্যাখ্যা করাকে আনেক গবেষকই মেনে নিতে পারেন নি। সাসেক্স ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক জন মায়নার্ড স্মিথ , সেই ১৯৭৮ সালে একটি বই লিখেছিলেন - 'ইভল্যুশন অব সেক্স' নামে ১৫। সেখানে তিনি সেক্স বা যৌনতার ব্যাপারে জীববিজ্ঞানের চিরায়ত ব্যাখ্যাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন এই বলে যে, শুধু জেনেটিক ভ্যারিয়েশন যৌনতার টিকে থাকার জন্য উপযুক্ত ব্যাখ্যা হতে পারে না। মায়নার্ড স্মিথের মত ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনার বিবর্তনীয় জীববিদ্যার অধ্যাপক রিচার্ড মিকন্ডও মনে করেন, শুধু জেনিটিক ভ্যারিয়েশন দিয়ে সেক্সকে ব্যাখ্যা করার সনাতন প্রচেষ্টা সঠিক নয় ১৬। তাহলে সেক্সের উদ্দেশ্য কি? হোয়াট ইজ দ্য পারপাস অব সেক্স? ব্যাপারটি এখনো এখনো জীববিজ্ঞানীদের কাছে ধাঁধা হয়েই রয়েছে, কিন্তু সেখানে যাবার আগে সেক্স বা যৌনতার অপচয়ী মনোবৃত্তির নমুনাটা আমরা আরেকবার দেখি, এবার একটু অন্যভাবে।

মানুষের কথাই ধরা যাক। একটি সুস্থ 'বোকাচোদা' দম্পতি তাদের দীর্ঘ জীবনে গড়ে প্রতি সপ্তাহে একবার করে পঞ্চাশ বছর ধরে সঙ্গম করে থাকে। কিন্তু সে হিসেবে তাদের বাচ্চা কাচ্চার সংখ্যা থাকে নিতান্তই নগন্য - দুইটি কি তিনটি। উন্নত বিশ্বে এখন এমন দম্পতিও আছে যারা বাচ্চা কাচ্চা একেবারেই নেয় না। সে সব দেশে জন্মহার এখন পড়তির দিকে। কাজেই যৌনতার ‘একমাত্র’ উদ্দেশ্য যদি কেবল পরবর্তী প্রজন্মে ‘জিন সঞ্চালন’ হয়ে থাকে, তবে বলতেই হয় এই আনাড়ি পদ্ধতিটি নিসন্দেহে একটি 'অকর্মার ধাড়ি'। শুধু মানুষ নয়, হাতী, গরিলা, শুয়োর, ঘোড়াদের ক্ষেত্রেও লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, তারা যৌন সংসর্গে যে পরিমানে সময় ও শক্তি ব্যয় করে সে তুলনায় ভবিষ্যত প্রজন্ম তৈরি করতে পারে একদমই কম। সারা জীবনের নব্বইভাগ যৌনসংসর্গেই কোন ধরনের অযাচিত প্রেগনেন্সির ভয় থাকে না। আর সমকামিতার উদাহরণ হাজির করলে তো সেক্সের মূল উদ্দেশ্যকেই প্রশ্নবিদ্ধ করতে হয়। সেক্সের একমাত্র উদ্দেশ্য যদি কেবল ভবিষ্যত প্রজন্ম টিকিয়ে রাখার উদ্দেশ্যে 'জিন সঞ্চালন' হয়ে থাকে, তবে সমকামিরা নিঃসন্দেহে “বায়োলজিকাল ডেড এন্ড”-এ। আর অনেক বিবর্তনবাদীরাই সেজন্য খুব যান্ত্রিকভাবে ডারউইনবাদকে সমকামিতার বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন। আর এমন সমস্ত 'যুক্তি' উপস্থাপন করা শুরু করেন যখন মনে হয় তাদের জায়গা ওই ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের সাথে একই বিছানায়! অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ওই 'যান্ত্রিক ডারউইনবাদী'রা সেক্সুয়াল সিলেকশন বা যৌন-নির্বাচনের ধুঁয়া তুলে সমকামিতাকে অস্বীকার করেন, কিংবা বলার চেষ্টা করেন এরা প্রকৃতির এক ধরনের বিচ্যুতি (aberration)। ভাবখানা যেন, ওই দু'চারটা সমকামিদের নিয়ে অতটা চিন্তা আমাদের না করলেও চলবে!

কিন্তু সত্যই কি তাই? তারা সমকামিদের সংখ্যা 'দু-চারটি' বলে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিলেও বাস্তবতা কিন্তু ভিন্ন। ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী আলফ্রেড কিন্সের রপোর্ট অনুযায়ী প্রতি দশ জন ব্যক্তির একজন সমকামী ১২ । অর্থাৎ, জনসংখ্যার শতকরা প্রায় দশভাগই ওই যান্ত্রিক ডারউইনবাদীদের আভিলাসে ছাই দিয়ে অর্থাৎ জীন সঞ্চালনের 'মহৎ' প্রবৃত্তিকে অস্বীকার করে টিকে আছে। কিন্সের গবেষণা ছিল সেই চল্লিশের দশকে। সাম্প্রতিক কালে (১৯৯০) ম্যাকহৃটার এবং স্টেফানি স্যান্ডার্স এবং জুন ম্যাকহোভারের গবেষনা থেকে জানা যায়, পৃথিবীতে শতকরা প্রায় চোদ্দ ভাগের মত সমকামি রয়েছে ১৩। ১৯৯৩ সালে 'জেনাস রিপোর্ট অন সেক্সুয়াল বিহেভিয়ার' থেকে জানা যায়, পুরুষদের মধ্যে প্রায় শতকরা নয় ভাগ এবং মহিলাদের মধ্যে শতকরা ৪ ভাগ সমকামি রয়েছে ১৪। কাজেই সংখ্যা হিসেবে সমকামিদের সংখ্যাটা কিন্তু এ পৃথিবীতে কম নয়। সায়েন্টিফিক আমেরিকান মাইণ্ড-এর ২০০৬ এর একটি ইস্যুতে সমকামীদের সংখ্যা সমগ্র জনসংখ্যার ৩ থেকে ৭ ভাগ উল্লেখ করা হয়েছে ১৯। কিন্তু এ কথা বলতেই হবে, পরিসংখ্যানগুলোর পরিসীমা একে অন্যের খুব কাছাকাছি (মোটামুটি ৫-১৫ ভাগ) হলেও কোনটাই হয়ত প্রকৃত অবস্থা নির্দেশ করছে না। কারণ সামাজিক একটা চাপ সবসময়ই থেকে যায় সমকামিতাকে নিরুৎসাহিত করে বিষমকামিতাকে উৎসাহিত করার। অনগ্রসর সমাজে এই চাপ আরো প্রবল। ফলে অনেক সময়ই দেখা যায় সমাজের চাপে একজন প্রকৃত সমকামি বিষমকামী হয়ে জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। স্বামী কিংবা বঊ বাচ্চা নিয়ে সংসার করছেন। এদের বলা হয় নিভৃত সমকামী (closet gay)। বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত মানবাধিকার কর্মীর কথা জানি যিনি নিভৃত সমকামী হয়ে তার স্ত্রীর সাথে বিবাহিত জীবন যাপন করছেন।

আরেকজন ‘বিবাহিত সমকামীর’ কথা পড়েছিলাম একটি কেস স্টাডিতে। উনি দিল্লিতে বসবাসরত দন্ত চিকিৎসক। নাম রমেশ মন্ডল। নিজে সমকামি। কিন্তু পারিবারিক চাপে পড়ে তাঁকে একসময় বিয়ে করতে হয়। কিন্তু স্ত্রীর সাথে তার সম্পর্ক স্রেফ যান্ত্রিক। তিনি তার যৌনচাহিদা নিরসন করেন গোপনে তার এ সমকামী বধুর সাথে। কখনো-সখনো জব্বলপুর, কোলাপুরে চলে যান। তার স্ত্রী আজো এ ব্যাপারটি জানেন না। সম্পূর্ন মিথ্যার উপরে দাঁড়িয়ে আছে রমেশের দাম্পত্য জীবন। আরেক সমকামি ভদ্রলোক নীতিন দেশাই স্ত্রীকে ফাঁকি দিয়ে প্রায়ই চলে যান মুম্বই-এর চৌপাট্টির সমুদ্র সৈকতে। কারণ সহজেই অনুমেয়।

অনেক পাঠক হয়ত পাকিস্তানী সমকামি কবি ইফতি নাসিমের ব্যক্তিগত জীবনের সমপ্রেমের মর্মন্তুদ কাহিনী জানেন। কবি নাসিম ছোটবেলা থেকেই তার সমবয়সী একটি ছেলের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। তারপর দুই কিশোর কৈশোরকাল অতিক্রম করে বড় হলো। পড়াশুনার পাঠ চুকিয়ে তারা তখন প্রতিষ্ঠিত হবার পথে। তখন স্বাভাবিকভাবেই বাসা থেকে এল বিয়ের চাপ। এমন কি ইফতির বন্ধুটির বাসার লোকজন মেয়ে টেয়ে দেখে তার বিয়ে পর্যন্ত ঠিক করে ফেলল। ইফতির বন্ধু সেদিন তার সমকামী মানসিকতার কথা বাসায় খুলে বলতে পারেন নি। আর তাছারা পাকিস্তানী গোড়া মুসলিম সমাজে বড় হবার কারনে কোরাণের সমাকামিদের প্রতি ঘৃণাউদ্রেককারী আয়াতগুলোর কথাও তার ভালই জানা ছিলো। ফলে যা হবার তাই হল। বেশ ধূম ধাম করে বিয়ে হল ওই বন্ধুর। সে বিয়েতে ইফতিও আমন্ত্রিত হয়েছিলেন এবং হাজিরও ছিলেন। ফুল শয্যার রাতে বন্ধুর বাড়িতে ইফতি ছিলেন। যে মানুষটির সাথে তার এতদিনের প্রেমের সম্পর্ক, সে মানুষটি সমাজের চাপে পড়ে এক অচেনা নারীর বাহুলগ্ন হবেন, এ চিন্তা তাকে ক্ষত বিক্ষত করে ফেলল -'আজকে রাতে তুমি অন্যের হবে, ভাবতেই চোখ জলে ভিজে যায়'! সারা রাত তিনি ঘুমাতে পারলেন না। এ পাশ ও পাশ করে কাটালেন। শেষ রাতে হঠাৎ দরজায় ধাক্কা। হুড়মুড় করে বিছানায় উঠে বসলেন ইফতি। দরজা খুলে ইফতি দেখলেন- অসহায়ভাবে বাইরে তার বন্ধু দাঁড়িয়ে আছে। দু’জনেই নির্বাক।

শুধু বাংলাদেশ, ভারত বা পাকিস্তানে কেন, খোদ আমেরিকাতেও একই অবস্থা। জেমস ম্যাকগ্রিভি তাঁর নিভৃত সমকামের কথা স্বীকার করে নিউজার্সির গভর্নর পদ থেকে পদত্যাগ করেন ২০০৪ সাল । সমাজে ইফিতি নাসিম, ম্যাকগ্রিভির মত লোকদের 'কামিং আউট অব ক্লোসেট' হিসবে বিবেচনা করা হয়।

মানুষের কথা বাদ দেই, প্রানীজগতেও কিন্তু সমকামিদের সংখ্যা নেহাৎ মন্দ নয়। গবেষকরা অনেকদিন ধরেই এ নিয়ে গবেষণা করছেন। প্রসঙ্গতঃ লু হুজি, কর্ণেল লক, জিউনার, জুরের, হাবাক, উইলিয়ামস, শের জং, জেন গুডোয়ল প্রমুখ বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রমলব্ধ গবেষনার কথা উল্লেখ করা যায় । এদের গবেষণার মধ্য দিয়ে উঠে আসতে থাকে প্রানীজগতের নানা অজানা তথ্য। আবার অন্যদিকে অ্যালেন, প্রেনটিস, অ্যালেন লিস, জেমসন, মারফি প্রমুখ বিজ্ঞানীরা প্রানীজগতের যৌনতা বিষয়ে ব্যাপক গবেষনা চালিয়েছেন। তাদের গবেষনায় প্রানীজগতে সমকামিতার সুস্পষ্ট নিদর্শন ধরা পরে। সে নিদর্শনগুলোর নমুনা জানতে চাইলে পাঠকেরা জীববিজ্ঞানী ব্রুস ব্যাগমিলের লেখা -'বায়োলজিকাল এক্সুবারেন্স : এনিমেল হোমোসেক্সুয়ালিটি এন্ড ন্যাচারাল ডাইভার্সিটি' বইটি পড়ে দেখতে পারেন ১৭। বইটিতে ব্রুস ব্যাগমিল প্রকৃতিতে যে সমস্ত প্রজাতিতে সমকামিতা এবং রূপান্তরকামিতার অস্তিত্ব সনাক্ত করেছেন, সেগুলো নীচে দেওয়া হল :

 
 
Homosexual / Transgender Species

 

  1. Acanthocephalan Worms
  2. Acorn Woodpecker
  3. Adelie Penguin
  4. African Buffalo
  5. African Elephant
  6. Agile Wallaby
  7. Alfalfa Weevil
  8. Amazon Molly
  9. Amazon River Dolphin
  10. American Bison
  11. Anna's Humminbird
  12. Anole sp.
  13. Aoudad
  14. Aperea
  15. Appalachian Woodland Salamander
  16. Asiatic Elephant
  17. Asiatic Mouflon
  18. Atlantic Spotted Dolphin
  19. Australian Parasitic Wasp sp.
  20. Australian Sea Lion
  21. Australian Shelduck
  22. Aztec Parakeet
  23. Bank Swallow
  24. Barasingha
  25. Barbary Sheep
  26. Barn Owl
  27. Bean Weevil sp.
  28. Bedbug and other Bug spp.
  29. Beluga
  30. Bangalese Finch (Domestic)
  31. Bezoar
  32. Bharal
  33. Bicolored Antbird
  34. Bighorn Sheep
  35. Black Bear
  36. Black-billed Magpie
  37. Blackbuck
  38. Black-crowned Night Heron
  39. Black-footed Rock Wallaby
  40. Black-headed Gull
  41. Black-rumped Flameback
  42. Black-spotted Frog
  43. Black Stilt
  44. Blackstripe Topminnow
  45. Black Swan
  46. Black-tailed Deer
  47. Black-winged Stilt
  48. Blister Beetle spp.
  49. Blowfly
  50. Blue-backed Manakin
  51. Blue-bellied Roller
  52. Bluegill Sunfish
  53. Blue Sheep
  54. Blue Tit
  55. Blue-winged Teal
  56. Bonnet Macaque
  57. Bonobo
  58. Boto
  59. Bottlenose Dolphin
  60. Bowhead Whale
  61. Box Crab
  62. Bridled Dolphin
  63. Broad-headed Skink
  64. Broadwinged Damselfly sp.
  65. Brown Bear
  66. Brown Capuchin
  67. Brown-headed Cowbird
  68. Brown Long-eared Bat
  69. Brown Rat
  70. Budgeriger (Domestic)
  71. Buff-breasted Sandpiper
  72. Rush Dog
  73. Cabbage (Small) White
  74. Calfbird
  75. California Gull
  76. Canada Goose
  77. Canary-winged Parakeet
  78. Caribou
  79. Caspian Tern
  80. Cat (Domestic)
  81. Cattle (Domestic)
  82. Cattle Egret
  83. Chaffinch
  84. Char
  85. Checkered Whiptail Lizard
  86. Checkerspot Butterfly
  87. Cheetah
  88. Chicken (Domestic)
  89. Chihuahuan Spotted Whiptail Lizard
  90. Chiloe Wigeon
  91. Cliff Swallow
  92. Clubtail Dragonfly spp.
  93. Cockroach spp.
  94. Collared Peccary
  95. Cammerson's Dolphin
  96. Common Ameiva
  97. Common Brushtail Possum
  98. Common Chimpanzee
  99. Common Dolphin
  100. Common Garter Snake
  101. Common Gull
  102. Common Marmoset
  103. Common Murre
  104. Common Pipistrelle
  105. Common Racoon
  106. Common Shelduck
  107. Common Skimmer Dragonfly spp.
  108. Common Tree Shrew
  109. Cotton-top Tamarin
  110. Crab-eating Macaque
  111. Crane spp.
  112. Creeping Water Bug sp.
  113. Crested Black Macaque
  114. Cuban Green Anole
  115. Cui
  116. Dall's Sheep
  117. Daubenton's Bat
  118. Desert Grassland Whiptail Lizard
  119. Desert Tortoise
  120. Digger Bee
  121. Dog (Domestic)
  122. Doria's Tree Kangaroo
  123. Dragonfly spp.
  124. Dugong
  125. Dusky Moorhen
  126. Dwarf Cavy
  127. Dwarf Mongoose
  128. Eastern Bluebird
  129. Eastern Cottontail Rabbit
  130. Eastern Giant Ichneumon
  131. Eastern Gray Kangaroo
  132. Egyptian Goose
  133. Elegant Parrot
  134. Elk
  135. Emu
  136. Eucalyptus Longhorned Borer
  137. Euro
  138. European Bison
  139. European Bitterling
  140. European Jay
  141. European Shag
  142. Fallow Deer
  143. False Killer Whale
  144. Fat-tailed Dunnart
  145. Fence Lizard
  146. Field Cricket sp.
  147. Fin Whale
  148. Five-lined Skink
  149. Flamingo
  150. Fruit Fly spp.
  151. Galah
  152. Gelada Baboon
  153. Gentoo Penguin
  154. Giraffe
  155. Glasswing Butterfly
  156. Goat (Domestic)
  157. Golden Bishop Bird
  158. Golden Monkey
  159. Golden Plover
  160. Gopher (Pine) Snake

  1. Gorilla
  2. Grant's Gazelle
  3. Grape Berry Moth
  4. Grape Borer
  5. Gray-breasted Jay
  6. Gray-capped Social Weaver
  7. Gray-headed Flying Fox
  8. Gray Heron
  9. Grayling
  10. Gray Seal
  11. Gray Squirrel
  12. Gray Whale
  13. Great Cormorant
  14. Greater Bird of Paradise
  15. Greater Rhea
  16. Green Anole
  17. Green Lacewing
  18. Green Sandpiper
  19. Greenshank
  20. Green Swordtail
  21. Greylag Goose
  22. Griffon Vulture
  23. Grizzly Bear
  24. Guiana Leaffish
  25. Guianan Cock-of-the-Rock
  26. Guillemot
  27. Guinea Pig (Domestic)
  28. Hamadryas Baboon
  29. Hammerhead
  30. Hamster (Domestic)
  31. Hanuman Lanur
  32. Harbor Porpoise
  33. Harbor Seal
  34. Harvest Spider sp.
  35. Hawaiin Orb-Weaver
  36. Hen Flea
  37. Herring Gull
  38. Himalayan Tahr
  39. Hoary-headed Grebe
  40. Hoary Marmot
  41. Hooded Warbler
  42. Horse (Domestic)
  43. House Fly
  44. House Sparrow
  45. Houting Whitefish
  46. Humboldt Penguin
  47. Ichneumon Wasp sp.
  48. Incirrate Octopus spp.
  49. Inagua Curlytail Lizard
  50. Indian Fruit Bat
  51. Indian Mantjac
  52. Indian Rhinoceros
  53. Ivory Gull
  54. Jackdaw
  55. Jamaican Giant Anole
  56. Japanese Scarab Beetle
  57. Japanese Macaque
  58. Javelina
  59. Jewel Fish
  60. Jumping Spider sp.
  61. Kangaroo Rat
  62. Kestrel
  63. Killer Whale
  64. King Penquin
  65. Kittiwake
  66. Koala
  67. Kob
  68. Larch Bud Moth
  69. Laredo Striped Whiptail Lizard
  70. Larga Seal
  71. Largehead Anole
  72. Large Milkweed Bug
  73. Large White
  74. Laughing Gull
  75. Laysan Albatross
  76. Least Chipmunk
  77. Least Darter
  78. Lechwe
  79. Lesser Bushbaby
  80. Lesser Flamingo
  81. Lesser Scaup Duck
  82. Lion
  83. Lion-tailed Macaque
  84. Lion Tamarin
  85. Little Blue Heron
  86. Little Brown Bat
  87. Little Egret
  88. Livingstone's Fruit Bat
  89. Long-eared Hedgehog
  90. Long-footed Tree Shrew
  91. Long-legged Fly spp.
  92. Long-tailed Hermit Hummingbird
  93. Mallard Duck
  94. Markhor
  95. Marten
  96. Masked Lovebird
  97. Matschie's Tree Kangaroo
  98. Mazarine Blue
  99. Mealy Amazon Parrot
  100. Mediterranean Fruit Fly
  101. Mew Gull
  102. Mexican Jay
  103. Mexican White
  104. Midge sp.
  105. Migratory Locust
  106. Mite sp.
  107. Moco
  108. Mohol Galago
  109. Monarch Butterfly
  110. Moor Macaque
  111. Moose
  112. Mountain Dusky Salamander
  113. Mountain Goat
  114. Mountain Tree Shrew
  115. Mountain Zebra
  116. Mourning Gecko
  117. Mouse (Domestic)
  118. Mouthbreeding Fish sp.
  119. Mule Deer
  120. Mustached Tamarin
  121. Musk Duck
  122. Musk-ox
  123. Mute Swan
  124. Narrow-winged Damselfly spp.
  125. Natterer's Bat
  126. New Zealand Sea Lion
  127. Nilgiri Langur
  128. Noctule
  129. North American Porcupine
  130. Northern Elephant Seal
  131. Northern Fur Seal
  132. Northern Quoll
  133. Ocellated Antbird
  134. Ocher-bellied Flycatcher
  135. Olympic Marmot
  136. Orange Bishop Bird
  137. Orange-footed Parakeet
  138. Orangutan
  139. Orca
  140. Ornate Lorikeet
  141. Ostrich
  142. Oystercatcher
  143. Pacific Striped Dolphin
  144. Parsnip Leaf Miner
  145. Patas Monkey
  146. Peach-faced Lovebird
  147. Pere David's Deer
  148. Pied Flycatcher
  149. Pied Kingfisher
  150. Pig (Domestic)
  151. Pigeon (Domestic)
  152. Pig-tailed Macaque
  153. Plains Zebra
  154. Plateau Striped Whiptail Lizard
  155. Polar Bear
  156. Pomace Fly
  157. Powerful Owl
  158. Prea
  159. Pretty-faced Wallaby
  160. Proboscis Monkey
  161. Pronghorn

  1. Przewalski's Horse
  2. Pukeko
  3. Puku
  4. Purple Swamphen
  5. Pygmy Chimpanzee
  6. Queen Butterfly
  7. Quokka
  8. Rabbit (Domestic)
  9. Raccoon Dog
  10. Raggiana's Bird of Paradise
  11. Rat (Domestic)
  12. Raven
  13. Razorbill
  14. Red Ant sp.
  15. Red-backed Shrike
  16. Red Bishop Bird
  17. Red Deer
  18. Red Diamond Rattlesnake
  19. Red-faced Lovebird
  20. Red Flour Beetle
  21. Red Fox
  22. Red Kangaroo
  23. Red-necked Wallaby
  24. Redshank
  25. Red-shouldered Widowbird
  26. Red Squirrel
  27. Red-tailed Skink
  28. Reeve's Muntjac
  29. Regent Bowerbird
  30. Reindeer
  31. Reindeer Warble Fly
  32. Rhesus Macaque
  33. Right Whale
  34. Ring-billed Gull
  35. Ring Dove
  36. Rock Cavy
  37. Rock Dove
  38. Rodrigues Fruit Bat
  39. Roe Deer
  40. Roseate Cockatoo
  41. Roseate Tern
  42. Rosechafer
  43. Rose-ringed Parakeet
  44. Rove Beetle spp.
  45. Ruff
  46. Ruffed Grouse
  47. Rufous Bettong
  48. Rufous-naped Tamarin
  49. Rufous Rat Kangaroo
  50. Saddle-back Tamarin
  51. Sage Grouse
  52. Salmon spp.
  53. San Blas Jay
  54. Sand Martin
  55. Satin Bowerbird
  56. Savanna Baboon
  57. Scarab Beetle, Melolonthine
  58. Scarlet Ibis
  59. Scottish Crossbill
  60. Screwworm Fly
  61. Sea Otter
  62. Senegal Parrot
  63. Serotine Bat
  64. Sharp-tailed Sparrow
  65. Sheep (Domestic)
  66. Siamang
  67. Side-blotched Lizard
  68. Sika Deer
  69. Silkworm Moth
  70. Silver Gull
  71. Silvery Grebe
  72. Slender Tree Shrew
  73. Snow Goose
  74. Sociable Weaver
  75. Sooty Mangabey
  76. Southeastern Blueberry Bee
  77. Southern Green Stink Bug
  78. Southern Masked Chafer
  79. Southern One-Year Canegrub
  80. Southern Platyfish
  81. Speckled Rattlesnake
  82. Sperm Whale
  83. Spinifex Hopping Mouse
  84. Spinner Dolphin
  85. Spotted Hyena
  86. Spotted Seal
  87. Spreadwinged Damselfly spp.
  88. Spruce Budworm Moth
  89. Squirrel Monkey
  90. Stable Fly sp.
  91. Stag Beetle spp.
  92. Steller's Sea Eagle
  93. Striped Dolphin
  94. Stuart's Marsupial Mouse
  95. Stumptail Macaque
  96. Superb Lyrebird
  97. Swallow-tailed Manakin
  98. Swamp Deer
  99. Swamp Wallaby
  100. Takhi
  101. Talapoin
  102. Tammar Wallaby
  103. Tasmanian Devil
  104. Tasmanian Native Hen
  105. Tasmanian Rat Kangaroo
  106. Tengger Desert Toad
  107. Ten-spined Stickleback
  108. Thinhorn Sheep
  109. Thomson's Gazelle
  110. Three-spined Stickleback
  111. Tonkean Macaque
  112. Tree Swallow
  113. Trumpeter Swan
  114. Tsetse Fly
  115. Tucuxi
  116. Turkey (Domestic)
  117. Urial
  118. Vampire Bat
  119. Verreaux's Sifaka
  120. Vervet
  121. Victoria's Riflebird
  122. Vicuna
  123. Walrus
  124. Wapiti
  125. Warthog
  126. Water Boatman Bug
  127. Waterbuck
  128. Water Buffalo
  129. Water Moccasin
  130. Water Strider spp.
  131. Wattled Starling
  132. Weeper Capuchin
  133. Western Gray Kangaroo
  134. Western Gull
  135. Western Rattlesnake
  136. West Indian Manatee
  137. Western Banded Gecko
  138. Whiptail Lizard spp.
  139. Whiptail Wallaby
  140. White-faced Capuchin
  141. White-fronted Amazon Parrot
  142. White-fronted Capuchin
  143. White-handed Gibbon
  144. White-lipped Peccary
  145. White Stork
  146. White-tailed Deer
  147. Wild Cavy
  148. Wild Goat
  149. Wisent
  150. Wolf
  151. Wood Duck
  152. Wood Turtle
  153. Yellow-backed (Chattering) Lorikeet
  154. Yello-footed Rock Wallaby
  155. Yellow-rumped Cacique
  156. Yellow-toothed Cavy
  157. Zebra Finch (Domestic)

আমি বইটি থেকে কিছু উদাহরণ হাজির করি :

প্রাইমেট বর্গের মধ্যে সাধারণ শিম্পাঞ্জিদের প্রজননহীন যৌনতা খুবই প্রকট। মানুষের মতই তারা কেবল 'জিন সঞ্চালনের' জন্য সঙ্গম করে না, সম্ভবতঃ করে আনন্দের জন্যও। কাজেই তাদের মধ্যে মুখ-মৈথুন, পায়ু মৈথুন থেকে শুরু করে চুম্বন, দংশন সব কিছুই প্রবলভাবে লক্ষ্যনীয়। তারা খুব সচেতনভাবেই সমকাম, উভকাম এবং বিষমকামে লিপ্ত হয়। শিম্পাঞ্জীদের আরেকটি প্রজাতি বনোবো শিম্পাঞ্জী (প্রচলিত নাম পিগমী শিম্পাঞ্জী)দের মধ্যে সমকামি প্রবণতা এতই বেশি যে, ব্যাগমিল বলেন, এই প্রজাতিটির ক্ষেত্রে 'Homosexual activity is nearly as heterosexual activity ... '। একেকটি দলে এমনকি শতকরা ৩০ ভাগ সদস্য উভকামিতার সাথে যুক্ত থাকে। এরকম সমকামি এবং উভকামি প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে গরিলা, ওরাং-ওটান, গিবন, সিয়ামাং, লঙ্গুর হনুমান, নীলগিরি লঙ্গুর, স্বর্ণ হনুমান, প্রবোসিক্স মাঙ্কি ইত্যাদি প্রাইমেটদের মধ্যেও।

চিত্র : বনোবো শিম্পাঞ্জীদের মধ্যে সমকামি প্রবণতা খুবই বেশি। বিজ্ঞানীরা এরকম ৪৫০টিরও বেশি প্রজাতিতে সমকামিতার উপস্থিতি লক্ষ্য করেছেন।

প্রাইমেট ছাড়াও সমকামি আচরণ লক্ষ্য করা গেছে বিভিন্ন স্তন্যপায়ী জীবের ক্ষেত্রেও। এদের মধ্যে হাতি, সিংহ, চিতাবাঘ, হায়না, ক্যাঙ্গারু, হরিণ, জিরাফ, পাহাড়ি ভেড়া, আমেরিকা, ইউরোপ ও আফ্রিকার মোষ, জেব্রা উল্লেখযোগ্য। পাখিদের মধ্যে পেঙ্গুইন, ধুসর পাতিহাঁস, কানাডা পাতিহাঁস, কালো রজহাঁস, বরফী পাতিহাঁস, মিউট রাজহাঁস, শকুন সহ অনেক প্রাণীর মধ্যে সমকামিতার সুস্পষ্ট উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। সরীসৃপের মধ্যে সমকামিতার আলামত আছে কমন অ্যামিভা, অ্যানোল, গিরগিটি, স্কিনক, গেকো মাউরিং, কচ্ছপ, রাটেল স্নেক প্রভৃতিতে। সমকামিতার অস্তিত্ব আছে বিভিন্ন প্রজাতির ব্যাঙ, স্যালাম্যান্ডারের মত উভচর এবং বিভিন্ন মাছেও। বইটি থেকে কিছু উদ্ধৃতি সরাসরি হাজির করা যাক ১৭ :

* Homosexual behavior occurs in more than 450 different animal species worldwide, and is found in every major geographical region and every major animal group.

* Homosexual activity is common in Giraffes and in many cases is actually more frequent than heterosexual behavior. In once study area, mounting between males accounted for 95% of all observed sexual activities.

* Homosexual couples constitute a significant proportion of pairs in Greylang Geese: about average of 14 percent of pairs in some populations are same sex, and in some population it can be even higher ….

* Male gorillas court and couple with each other, grizzly bear families have two mothers.

* Male swans form pair-bonds with one another and female long-eared hedgehogs have oral sex.

* In [...] a Central American rain forest, jewel-like male hummingbirds flit through the vegetation, pausing briefly to mate now with a male, now with a female.

* A whale glides through the dark and icy waters of the Arctic [...] her fins and tail caressing another female.

* Drifting off to sleep, two male monkeys lay gently in each other's arms [in] the ancient jungles of Asia.

* In a protected New Zealand inlet, a pair of female gulls – mated for life – tends their chicks together.

* Tiny midges swarm above a bleak of tundra of Northern Europe, a whirlwind of mating activity, as males' couple with each other in midair.

* Circling and prancing around her partner, a female antelope courts another female in an ageless, elegant ritual staged on the African Savanna.

* More than 130 different bird species worldwide are literally queer.

* Many other types of affectionate and contractual behavior occurs between animals of the same sex. Sometimes animals gently bite, nibble, or chew on each others’ ears (female Hoary Marmots), or wings and chests (Gray-headed Flying foxes), or rumps (male Dwarf Cavies), or necks (male savanna baboons).

* A figure of just over 20%: [...] one-fifth of all interactions, on average, are homosexual in mammal and bird species that have [some] form of [sexual same-sex behavior].

এখন তাইলে কথা হচ্ছে, সমকামিরা যদি 'বায়োলজিকাল ডেড এন্ড' কিংবা প্রকৃতিজগতের বিচ্যুতিই হয়ে থাকে, তবে এই হারে সমকামিরা পৃথিবীতে টিকে থাকল কি করে? আমাদের বুঝতে হবে যে, যত স্বল্প সংখ্যকই হোক না কেন, প্রানীজগতে সমকামিতার প্রবৃত্তি একটি বাস্তবতা, শুধু মানুষের ক্ষেত্রে নয়, প্রাণিজগতের সকল প্রজাতির ক্ষেত্রেই। প্রকৃতিতে সবসময়ই খুব ছোট হলেও একটা অংশ ছিল এবং থাকবে যারা যৌনপ্রবৃত্তিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের চেয়ে ভিন্ন। কিন্তু কেন এই ভিন্নতা? এর একটি উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছেন স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তনীয় ইকোলজিস্ট জোয়ান রাফগার্ডেন রোথসব্ররগ তার “Evolution's Rainbow: Diversity, Gender and Sexuality in Nature and People.” বইয়ে ২০। তিনি বলেন, যৌনতার উদ্দেশ্য সনাতনভাবে যে কেবল 'জিন সঞ্চালন করে বংশ টিকিয়ে রাখা' বলে ভাবা হয়, তা ঠিক নয়। যৌনতার উদ্দেশ্য হতে পারে যোগাযোগ এবং সামাজিকিকরন। তিনি বলেন :

যদি আপনি সেক্স বা যৌনতাকে যোগাযোগের একটি কার্যকর মাধ্যম হিসেবে দেখেন, তাহলে আপানার কাছে অনেক কিছুই পরিস্কার হয়ে যাবে, যেমন সমকামিতার মত ব্যাপার স্যাপারগুলো - যা জীব বিজ্ঞানীদের বছরের পর বছর ধরে বিভ্রান্ত করে রেখেছিল। বনোবো শিম্পাঞ্জীদের মধ্যে সমকামী সংশ্রব বিষমকামীদের মতই দেদারসে ঘটতে দেখা যায়। আর বনোবোরা কিন্তু প্রকটভাবেই যৌনাভিলাসী। তাদের কাছে যৌনসংযোগের (Genital contact) ব্যাপারটা আমাদের 'হ্যালো' বলার মতই সাধারণ। এভাবেই তারা পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করে থাকে। এটি শুধু দলগতভাবে তাদের নিরাপত্তাই দেয় না, সেই সাথে বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য আহরণ এবং সন্তানদের লালন পালনও সহজ করে তুলে।

শুধু বনোবো শিম্পাঞ্জীদের কথাই বা বলি কেন, বাংলাদেশেই আমরা যেভাবে বড় হয়েছি সেখানে ছেলেদের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব হলে একজন আরেকজনকে স্পর্শ করে, হাতে হাত ধরে কিংবা ঘারে হাত দিয়ে ঘোরাঘুরি করে। ঝগড়া-ঝাটি হলে বুকে জড়িয়ে ধরে আস্থা পুনর্প্রতিষ্ঠিত করে। মেয়েরাও তাই। এই আচরণ একটু প্যাসিভ তবে এ ধরনের প্রেরণা কিন্তু মনের ভেতর থেকেই আসে। বলা বাহুল্য, এই প্রেরণার মধ্যে কোন জিন সঞ্চালনজনিত কোন উদ্দেশ্য নেই, পুরোটাই যোগাযোগ এবং সামাজিকীকরনের প্রকাশ।

যোগাযোগ আর সামাজিকরণের কথা মাথায় রেখেই জোয়ান রাফগার্ডেন রোথসব্ররগ তার বিবর্তনবিদ্যা সংক্রান্ত 'ইভ্যলুশনস রেইনবো' (পূর্বে উল্লিখিত) বইয়ে 'যৌনতার নির্বাচন' (sexual selection)-এর বদলে 'সামাজিক নির্বাচন’ (social selection) '- এর প্রচলন ঘটানোর প্রস্তাব করেছেন। তিনি বলেন, প্রানীজগতের সাংগঠনিক ভিত্তি দাঁড়িয়ে আছে তাদের খাবার, সঙ্গী প্রভৃতির সঠিক নির্বাচনের উপর। প্রাণিজগতের এই নির্বাচনই কখনো রূপ নেয় সহযোগিতায়, কখনো বা প্রতিযোগিতায়। এবং এটাই শেষ পর্যন্ত সমস্ত পারিবারিক বিবিধ সম্পর্কের ভিত্তি তৈরি করে। কোন কোন বিশেষ পরিস্থিতিতে সেই সম্পর্ক একগামিতা বা মনোগামিতে রূপ নিতে পারে (মানুষ ছাড়াও কিছু রাজহাঁস, খেঁকশিয়াল, কিছু পাখির মধ্যে একগামী সম্পর্ক আছে), কখনো বা রূপ নেয় বহু(স্ত্রী)গামিতা বা পলিগামিতা (সিংহ, বহু প্রজাতির বনের মধ্যে এরকম হারেম তৈরি করে ঘোরার প্রবণতা আছে), কখনোবা বহু(পুরুষ)গামিতা বা পলিঅ্যান্ড্রি (কিছু সিংহ, হরিণ এবং প্রাইমেটদের মধ্যে)তে। এমনকি অনেকসময় দলে একাধিক 'জেন্ডারের' মধ্যেও সম্পর্ক স্থাপিত হয়। যেমন, ব্লু গ্রীন সানফিশ নামের একপ্রজাতির মাছ আছে যেখানে এক একটি ঝাঁকে দুই পুরুষ মাছের মধ্যে সমধর্মীযৌনতার বন্ধন (same-sex courtship) গড়ে উঠে। এখানে মুখ্য পুরুষ মাছটি (এদের 'আলফা মেল' বলা হয়) একটি বৃহৎ সাম্রাজ্য গড়ে তুলে আর তারপর অপর পুরুষ মাছটিকে সাথে নিয়ে তাদের যৌথ সাম্রাজ্যে স্ত্রীমাছগুলোকে ডিম পাড়তে আমন্ত্রণ জানায়। অনেকসময় দ্বিতীয় পুরুষ মাছটি স্ত্রী মাছের অনুকরণ করে স্ত্রী মাছের ঝাকের সাথে মিশে যায় - যা অনেকটা আমাদের সমাজে বিদ্যমান ক্রস-জেন্ডার প্রতিনিধিদের মতই। ড. রোথসব্ররগের মতে, যৌন-প্রকারণ এবং সমধর্মী যৌনতা এভাবে প্রকৃতিতে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক সম্পর্ক তৈরি করে, যা অনেক সময়ই কেবল মোটা দাগে শুক্রানুর স্থানান্তর নয়। সামাজিক নির্বাচন হচ্ছে সেই বিবর্তন যা সামাজিক সম্পর্কগুলোকে টিকিয়ে রাখে। ড. রোথসব্ররগের মত সামাজিক নির্বাচনের ধারণাকে সমর্থন করেন ব্রুস ব্যাগমিল এবং পল ভ্যাসি সহ অনেক বিজ্ঞানীই।

তবে বেশিরভাগ জীববিজ্ঞানীই এখনই 'যৌনতার নির্বাচনকে' সরিয়ে দিয়ে 'সামাজিক নির্বাচন'কে গ্রহণ করার পক্ষপাতি নন, কারণ প্রকৃতিজগতের বেশিরভাগ ঘটনাকেই 'যৌনতার নির্বাচন' দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্তনবাদী জীববিদ জেরি কয়েন রোথসব্ররগের সমালোচনা করে বলেন২১ : 'She ignores the much larger number of species that do conform to sexual selection theory, focusing entirely on the exceptions. It is as if she denies the generalization that Americans are profligate in their use of petrol by describing my few diehard countrymen who bicycle to work.'। নেচার পত্রিকায় রোথসব্ররগের বইটির ভুয়সী প্রসংশা করার পরও তার 'সামাজিক নির্বাচন' তত্ত্বের সমালোচনা করে নৃতত্ত্ববিদ সারাহ হর্ডি বলেন ২২ -'(তার) এ (উদাহরণ) গুলো যৌনতার নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করার জন্য উপযুক্ত কারণ নয়, বরং এগুলো হতে পারে জীব-বৈচিত্রকে (সামাজিকভাবে) গ্রহণযোগ্য করার অনুপ্রেরণা'। এর কারণ আছে। অনেক বিজ্ঞানীই মনে করেন, যৌনতার নির্বাচনের মাধ্যমেই হোমসেক্সুয়ালিটিকে ব্যাখ্যা করা সম্ভব। সমকামিতার জিন (যদি থেকে থাকে) যোগাযোগ ও সামাজিকতার উন্নয়নের ক্ষেত্রে যে উপযোগি তা বনোবো শিম্পাঞ্জীদের ক্ষেত্রে প্রমাণিত হয়েছে। আবার এমনো হতে পারে মানুষের মধ্যে 'গে জিন'-এর ভূমিকা পুরুষ এবং স্ত্রীতে ভিন্ন হয়। ইতালীর একটি সমীক্ষায় (২০০৪) দেখা গেছে, যে পরিবারে সমকামী পুরুষ আছে সে সমস্ত পরিবারে মেয়েদের উর্বরতা (fertility) বিষমকামী পরিবারের চেয়ে বেশি থাকে ২৩। আন্দ্রিয়া ক্যাম্পেরিও-সিয়ানির ওই গবেষণা থেকে জানা যায়, বিষমকামী পরিবারে যেখানে গড় সন্তান সন্ততির সংখ্যা ২.৩ সেখানে গে সন্তানবিশিষ্ট পরিবারে সন্তানের সংখ্যা ২.৭ । এছাড়া এডয়ার্ড ও উইলসন 'কিন সিলেকশন'-এর মাধ্যমে হোমোসেক্সুয়ালিটিকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছিলেন সেই ১৯৭৮ সালেই ২৪। টক-অরিজিনের এই লিঙ্কটিতেও বিবর্তনের আধুনিক তত্ত্বের মাধ্যমে সমকামিতার সম্ভাব্য ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে ২৫। কাজেই যে কারনেই সমাজে হোমোসেক্সুয়ালিটির অস্তিত্ব থাকুক না কেন, এবং সেগুলোকে উপস্থাপনের সঠিক মডেল নিয়ে বিবর্তনবাদীদের মধ্যে যত বিতর্কই থাকুক না কেন (বিজ্ঞানে এধরনের বিতর্ক খুবই স্বাভাবিক), এটি এখন মোটামুটি সবাই (যান্ত্রিক ডারউইনবাদী আর গুটিকয় ধর্মান্ধ বিজ্ঞানীরা ছারা) স্বীকার করে নিয়েছেন যে, সমকামিতার মত যৌন-প্রবৃত্তিগুলো 'অস্বাভাবিক' বা 'প্রকৃতিবিরুদ্ধ' নয়, বরং বৈজ্ঞানিক উপাত্ত ও তত্ত্বের সাহায্যেই এই ধরনের যৌন-প্রবৃত্তিগুলোকে ব্যাখ্যা করা যায়; জীববিজ্ঞানের আধুনিক গবেষণা কিন্তু সেদিকেই ইঙ্গিত করছে। আজ আমি যখন এ লেখেটি লিখতে বসেছি তখন সারা পৃথিবী জুড়ে চারশ'রও বেশি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে 'গে জিন' নিয়ে গবেষনা হচ্ছে।

আমি আগামী পর্বে তাদের সে সব গবেষণা নিয়ে কিছু লেখার চেষ্টা করব।

৪র্থ পর্ব দেখুন ...


মন্তব্য

দিগন্ত এর ছবি

সামাজিক নির্বাচনের ধারণাটা বেশ ভাল লাগল। এ বিষয়ে আরো জানতে হবে। সেলফিশ জিন-এও এ নিয়ে আলোচনা আছে।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

অভিজিৎ এর ছবি

হ্যা সেলফিশ জিনে 'ব্যাটেল অব সেক্স' নামে চ্যাপ্টারটায় অনেক কথা আছে - তা বেশিরভাগই সেক্সুয়াল সিলেকশন নিয়ে। সামাজিক বিবর্তন সমন্ধে জানার জন্য রাফগার্ডেন রোথসব্ররগের “Evolution's Rainbow: Diversity, Gender and Sexuality in Nature and People.” বইটি পড়তে পারেন।

লেখাটা বোধ হয় বেশি বড় হয়ে গেছে। পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
=============================
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

মাহবুব লীলেন এর ছবি

অনেক ইনফরমেশন
অনেক ধন্যবাদ

আমি বিজ্ঞানের অতকিছু জানি না। সাহিত্য থেকে দুটো উদাহরণ মনে পড়ছে
১. গ্রিক মিথ-এ প্রেমিক প্রেমিকা বেশি আবেগঘন হয়ে গেলে লিঙ্গ পরিবর্তন করে সম্বোধন করে। পুরুষ তার নারী বন্ধুকে পুরুষ উপমায় ডাকে (যেমন ষাঁড়, বাঘ ইত্যাদি) আবার নারী তার পুরুষ বন্ধুকে ডাকে নারী উপমায় (বাঘিনী, সিংহী ইত্যাদি)
এক্ষেত্রে প্রত্যেকেই তার প্রতিপক্ষকে মনে মনে সমলিঙ্গ বানিয়ে ফেলে
(একটা উদাহরণ মনে পড়ছে। ইলিয়াডে প্যারিজ যখন হেলেনের সাথে দ্বীপে প্রথম মিলিত হয় তখনকার দুজনের সম্বোধনগুলো দেখতে পারেন)

২. পারস্য সাহিত্যে অনেক কবি তাদের প্রেমিকাকে পুরুষ নামে ডাকতেন

এগুলো কি কোনো না কোনোভাবে উপরের আলোচনার প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের প্রতিফলন?

হয়তো হতে পারে। কারো জানা থাকলে একটু আলোচনা করবেন

অভিজিৎ এর ছবি

লীলেন,

ধৈর্য ধরে লেখাটি পড়বার এবং মন্তব্য দেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আমি সাহত্যের ছাত্র নই। তার উপর বিষমকামী হিসেবে সমকামীদের জীবন ও সমস্যার সবটুকু বোঝা আসলেই কষ্টকর। আর তাছাড়া যৌন প্রবৃত্তি হল সৃষ্টিশীলতা, চিন্তন ও মননের এক অন্যভূবন। এখানে নানা স্রোতের খেলা প্রতিনিয়তই চলে। চলে নানা টানাপোড়েন। অনেক সময়ই প্রবৃত্তিকে ঘিরে বিভিন্ন সমাজে গড়ে উঠে নানা সংস্কার। সবগুলোই হয়ত বৈজ্ঞানিক নয়, কিংবা এর পেছনে যুক্তিনিষ্ঠ কারণ পাওয়া যায় না।

প্রাচীন গ্রীসের গ্রিক মিথ নিয়ে আপনি যা বলেছেন তা আমার জানা নেই। তবে গ্রীসের ধর্মশাস্ত্র ও পুরাণ কথায় সমকাম স্পৃহার কথা জানা যায়। ধর্মীয়ভাবে সমপ্রেম এখানে স্বীকৃত ছিল। 'ভেনাস' ছিলেন তাদের কামনার দেবী। এই দেবীই আবার সমকামীদের উপাস্য ছিলেন। এছাড়া 'প্রিয়াপ্রাস' নামেও আরেক দেবীকেও সমকামীরা আরাধনা করত বলে শুনেছি। তাহাতির বিভিন্ন জায়গায় সমকামে আসক্ত ব্যক্তিদের আরাধ্য দেবতার মূর্তির সন্ধান পাওয়া গেছে। আনাতেলিয়া, গ্রীস এবং রোমার বিভিন্ন মন্দিরে 'সিবিলি' এবং 'ডাইওনীসস' এর পুজো ব্যাপকভাবে শুরু হয়েছিল। সিবিলির পুরোহিতেরা গাল্লি নামে পরিচিত ছিলেন। এরা নারীবেশ ধারণ করতেন। মাথায় নারীর মত দীর্ঘ কেশ রাখতে পছন্দ করতেন। এরা সমকামী ছিলেন বলেও অনুমিত হয়। আসলে পরে এশিয়া মাইনর থেকে সিবিলি পুজো পারস্য দেশেও ছড়িয়ে পড়ে। পারস্য সাম্রাজ্য বিস্তারের ফলে এ সমস্ত প্রথা প্ররথিবীর বিভিন্ন দিকে প্রসারিত হয়। আপনার উদাহরণ গুলো হয়ত তারই সম্প্রসারিত রূপ।

পারস্য সাহিত্যে অনেক কবি তাদের প্রেমিকাকে পুরুষ নামে ডাকতেন - এটাও হয়ত অঞ্চল ভিত্তিক কোন প্রথা। যেমন , আরব সমাজে বয়ষ্ক পুরুষ এবং বালকের মধ্যে যৌন সম্পর্ক গ্রহনযোগ্য তো বটেই মধ্যযুগে (ইসলামের বিস্তৃতির সময়) বহুল প্রচলিতও ছিল। এমনকি কোরানের একটি আয়াতে (Qur’an 52:24; 56:17; 76:19) বেহেস্তে ধার্মিকদের জন্য উদ্ভিন্নযৌবনা হুরীর পাশাপাশি কিশোর বালকের লোভ দেখানো হয়েছে। আসলে সভ্যতার উষালগ্ন থেকেই সমকামিতা সবসময়ই মানব সমাজে ছিল। গ্রীক, রোমান, চৈনিক, পাপুয়া নিউ গিনি অথবা উত্তর আমেরিকার প্রাচীন সভ্যতায় সমকামীতার ভুরি ভুরি উদাহরন আছে। সমকামিতা ছিল অ্যাস্টেক ও মায়া সভ্যতায়। হিন্দু পুরানেও এরকম বেশ উল্লেখ পাওয়া যায়, যেমন পুরুষীনি অথবা তৃতীয় প্রকৃতি। বর্তমানে গুজরাটের সঙ্খলপুরে বহুচোরা মাতার যে মূর্তি আছে তা অনেকটা 'সিবিলির' আদলে রচিত। ভারতবর্ষে বৈষ্ণব ধর্মের একটি বিশেষ শাখা আছ। এরা একসাথে রাধা-কৃষ্ণ-এর ভজনা করে থাকে। এদের অনেকে স্ত্রীবেশ ধারন করে। এই সম্প্রদায়ের অন্যতম সাধক গদাধর গোস্বামী নাম নিয়েছিলেন রাধিকা। আবার গোবিন্দঘোষ রঙ্গদেবী হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন। আসলে ব্যাপারটা হচ্ছে, সমকামিতা, রূপান্তরকামিতা ইত্যাদি আধুনিক পশ্চিমাদের আবিষ্কার নয়, বরং এটি প্রাচীন সভ্যতা থেকে আমাদের সংস্কৃতির মধ্যেই আছে, পত্র-পত্রিকা, ইলেকট্রনিক মিডিয়া ইন্টারনেটের কারণে জিনিসটা সামনে চলে এসেছে ।

================================

পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

অতিথি লেখক এর ছবি

খুবই প্রয়োজনীয় একটি লেখা।

ছোটবেলায় বাসের চাপাচাপির মধ্যে বা রাস্তার জনস্রোতের ভীড়ে এদের স্বীকার হয়েছে এমন অনেক বন্ধু আছে আমার। আমার নিজের অভিজ্ঞতাও নগন্য নয়।

সুতরাং লেখাটির সত্যতা আমার কাছে গবেষণার প্রয়োজন রাখে না। তারপরেও সুন্দর লেখাটির জন্য ধন্যবাদ।

-আরেফীন

অতিথি লেখক এর ছবি

"ছোটবেলায় বাসের চাপাচাপির মধ্যে বা রাস্তার জনস্রোতের ভীড়ে এদের স্বীকার হয়েছে এমন অনেক বন্ধু আছে আমার। আমার নিজের অভিজ্ঞতাও নগন্য নয়।"

আরেফীন, এখানে এই 'এরা'টা কারা সেটা একটু অস্পষ্ট, এরা মানে কি সমকামিরা ? তা যদি হয়ে থাকে তাহলে দুঃখের সাথে জানাচ্ছি ভিড়ের সুযোগে বিষমকামী ছেলেদের শিকার হয়েছে কতো মেয়ে তার তালিকা দিতে গেলে কমপিউটার ক্র্যাশ করতে পারে, অর্থাৎ বিকৃ্ত মানুষ রা নিজেরাই একটা আলাদা দল - যেখানে সমকামি, বিষমকামী, উভকামি কি অন্য কিছু - সবই থাকতে পারে।

স্নিগ্ধা

তসলিমা নাসরীণ এর ছবি

পুরুষ ও নারীর মধ্যে মৈথুন-ই সবচেযে সুখকর ও স্বাস্থ্যপ্রদ. অস্বাভাবিক-এই বিশেষণ প্রয়োগ না করেও বলতে হয়, সমকামিতা যথাসম্ভব বর্জন করা উচিত, প্রয়োজনে চিকিত্সকের সাহায়তা নিয়ে.

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আপনি নিশ্চয়ই "দ্যা তসলিমা নাসরীন" নন!

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

ss এর ছবি

একমত নই। সমকামিতা অসুখ নয় যে চিকিৎসা করতে হবে। হেটেরোসেক্সুয়ালের হেজিমোনিই এর মূল, আমার পাঠ সেটি।

Onamika [অতিথি] এর ছবি

অভিজিৎ লিখেছেন:
লীলেন,

"এমনকি কোরানের একটি আয়াতে (Qur’an 52:24; 56:17; 76:19) বেহেস্তে ধার্মিকদের জন্য উদ্ভিন্নযৌবনা হুরীর পাশাপাশি কিশোর বালকের লোভ দেখানো হয়েছে।"

The "kishore baloks" mentioned in the Quran were not mentioned as sexual rewards, but as servers (only the houris were mentioned as mates). Neither any traditional Quaranic exegesis said these boys were mentioned sexually.

It is true that homosexuality existed in Muslim societies, despite strict prohibition on it.

(By the way, you mentioned three ayats as one.)

সুমন চৌধুরী এর ছবি

প্রিয় অতিথি,

ইংরেজী বা বাংলিশ মন্তব্য প্রকাশের ক্ষেত্রে সচলায়তনের সহ্যসীমা সম্প্রতি শুণ্যে অবস্থান করছে। সচলের প্রথম পাতার শুরুতে যে পোস্টটি কয়েকদিন ধরে ঝুলছে, আজ মন্তব্য করার আগে সেটা একবার পড়ে নিলে কৃতার্থ হতাম।

আপনার মন্তব্যটি ছাড়া হলো সম্ভবত সর্বশেষ রোমান হরফে লিখিত মন্তব্য হিসেবে।

ধন্যবাদ।



অজ্ঞাতবাস

অনামিকা এর ছবি

পড়লাম। ধন্যাবাদ ।

ফোনেটিকসে কিছু টিপস পেলে খুশি হবো । এখনো পুরোপুরি পারছি না।

‌অ কিভাবে লিখবো? (উপরে কাট এনড পেসট করেছি)

হসনত?

যুকতাখখর?

ইত্যাদি--

অনামিকা

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।