সবই ব্যাদে আছে!

অভিজিৎ এর ছবি
লিখেছেন অভিজিৎ (তারিখ: মঙ্গল, ১৬/০৯/২০০৮ - ৮:৪৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মুক্তমনার সাথে সংযুক্তির কারনে আমাকে প্রায়ই বিভিন্ন বিতর্কে অংশ নিতে হয়। বিভিন্ন জায়গায় 'ইসলামী বিজ্ঞানের' প্রসংগ আসে, চলে আসে সেই পুরোনো মরিস বুকাইলী, কেইথ মুর, জাকির নায়েক এবং হারুন ইয়াহিয়াদের 'ব্যাপক' অবদানের কথা। আমি আমার বিভিন্ন প্রবন্ধে তাদের ওই সমস্ত বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা যে আসলে অপবিজ্ঞান এবং বিজ্ঞানের বিকৃতি - তা উল্লেখ করেছি। আমার মত মুক্তমনার অনেক লেখকই আগে এগুলো নিয়ে লিখেছেন। আমাদের সদ্য প্রকাশিত 'বিজ্ঞান ও ধর্ম : সংঘাত নাকি সমন্বয়?'- ইবুকেও এ সমস্ত তথাকথিত বিজ্ঞানীদের সুডোসায়েন্সকে খন্ডন করা বেশ কিছু প্রবন্ধ সংকলিত হয়েছে। মুক্তমনা ছাড়াও আমি এই সচলায়তনেই 'বিজ্ঞানময় কিতাব' লিখেছি। শিক্ষানবিস কিছুদিন আগে লিখেছে 'ইসলামী বিজ্ঞানের পৌরাণিক কাহিনী'। তারপরও দেখি 'শিক্ষিত ধার্মিকদের' ভাবালুতা কাটে না। এক ভদ্রলোক সেদিন জোর গলায় একটি ফোরামে হেঁকে উঠলেন - 'কোরান ছাড়া আর কোন ধর্মগ্রন্থেই কোন বিজ্ঞান কেহই পায় নাই। ব্যাপারটা যদি এতটাই সহজ হত তাহলে ইহুদী, খ্রিস্টান, ব্রাহ্মণ, বৌদ্ধ, ও শিখরা তাদের ধর্মগ্রন্থের মধ্যে ইতোমধ্যে হাজার হাজার বৈজ্ঞানিক তথ্য আবিষ্কার করে ফেলতেন'।

উক্তিটি ভাববার মত। সত্যই কি কোরান ছাড়া আর কোন ধর্মগ্রন্থেই কোন বিজ্ঞান 'কেহ'ই পায় নাই? সম্ভবতঃ অনেকে শুধুমাত্র বাংলাদেশী ই-ফোরামগুলোতে অংশগ্রহনের কারণে ভেবে থাকেন শুধুমাত্র কোরাণেই বোধ হয় আধুনিক  বিজ্ঞানের তথাকথিত 'ইঙ্গিত' দেওয়া আছে। কারণ এ সমস্ত বাংলাদেশী ই-ফোরামগুলোতে প্রতিদিনই কারো না কারো কাছ থেকে কিছু না কিছু 'কোরানিক সায়েন্স' সংক্রান্ত 'কাট-এন্ড-পেস্ট' পোস্ট আসে। আর সে সমস্ত ই-ফোরামগুলোর মডারেটররাও উচ্ছ্বসিত হয়ে সেগুলো তাদের ফোরামে প্রকাশ করেন।  এ সমস্ত পোস্টের আধিক্য আর মাত্রা দেখে হয়ত অনেকে ভেবে নিতে পারেন - অন্য ধর্মের অনুসারীরা বোধহয় তাদের ধর্মগ্রন্থের স্বপক্ষে এরকম কোন ‘প্রমাণ’ হাজির করতে পারেন নি। কিন্তু আমি এ প্রবন্ধে দেখবো যে, এ ধরণের চিন্তা আসলে স্রেফ অজ্ঞানতাপ্রসুত - অনেকটা কুয়োর ব্যাঙ যেরকম নিজের কুয়োকে সমুদ্র ভেবে 'মুগ্ধ' হয়ে থাকে -অনেকটা সেরকম।
 
আমি কোরাণিক সায়েন্সের বাইরের কিছু উদাহরণ হাজির করছি। হিন্দু ধর্ম দিয়েই শুরু করি ; এ সম্বন্ধে একটি কথা বলা প্রয়োজন।  হিন্দু ধর্মের মধ্যে এত ধরণের আকর্ষণীয় রূপকথা, অতিকথা আর উপকথার ছড়াছড়ি যে সেগুলোকে খুব সহজেই আধুনিক বিজ্ঞান এবং বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর সাথে জুড়ে দেওয়া যায়। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের কথাই ধরুন। সেখানে এত ধরণের রাজকীয় সমস্ত অস্ত্র-সস্ত্রের বর্ণনা আছে যে ওগুলোকে খুব সহজেই আধুনিক যুদ্ধাস্ত্রের সাথে মিলিয়ে দেওয়া যায়। দেবতাদের ইচ্ছে করলেই বানিয়ে দেয়া যায় 'গ্রহান্তরের আগন্তুক', আর দেবতাদের 'পুষ্পক রথ'কে বানিয়ে দেওয়া যায় 'স্পেশসিপ'।  আমি বছর চারেক আগে কলকাতা বইমেলায় গিয়ে এ ধরণের সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া অনেক বই দেখেছিলাম। প্রশান্ত প্রামানিক নামে এক জনপ্রিয় বিজ্ঞান লেখকের বইও কিনেছিলাম, বইটার নাম ছিলো - 'ভারতীয় দর্শনে আধুনিক বিজ্ঞান'। তিনি তার বইয়ে বলেছেন কুরু-পান্ডবদের মধ্যকার কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ আসলে সে-সময়য়কার এটোমিক ওয়ার  ছাড়া কিছু নয়। প্রশান্ত প্রামানিক মনে করেন, দুর্যোধনেরই কোন মিত্র শক্তি পারমাণবিক যুদ্ধে ধ্বংস হয়েছিল মহেঞ্জোদাড়োতে আর সেটাই রূপক আকারে মহাভারতে তুলে ধরা হয়েছে।  শুধু তাই নয়, যে নলজাতক শিশু (test tube baby) আর বিকল্প মা (surrogate mother) কে  আধুনিক বিজ্ঞানের দান মনে করা হয় তা নাকি হিন্দু সভ্যতার কাছে নাকি নতুন কিছু নয়। দ্রোণ-দ্রোনী, কৃপ-কৃপীর জন্মের পৌরাণিক কাহিনীগুলি তারই প্রমাণ। এমনকি উপসাগরীয় যুদ্ধে ব্যবহৃত স্কাড আর প্যাট্রিয়ট মিসাইল নাকি হিন্দু পুরাণে বর্ণিত 'বরুন বাণ' আর 'অগ্নিবাণ' বই কিছু নয়।  ভারতের 'দেশ' এর মত প্রগতিশীল পত্রিকায় ২২ এপ্রিল ১৯৯৫ সংখ্যায় প্রকাশিত 'বিজ্ঞান ও ভগবান' নামের প্রবন্ধে  হৃষীকেশ সেন নামে এক লেখক বেদান্তে বর্ণিত উর্ণনাভ এর সাথে বিশ্বব্রক্ষ্মান্ডের মডেলের সাথে তুলনা করেছেন।  ইংরেজীতেও এ ধরণের প্রচুর বই আছে।  যেমন, আমি রাজা রামমোহন রায়ের একটা বই পড়েছিলাম-  'Vedic Physics' নামে। সেখানে লেখক দেখানোর চেষ্টা করেছেন যে, ঋক বেদ আজ থেকে পাঁচ হাজার বছর আগে লেখা হলেও আধুনিক বিজ্ঞানের সব কিছুই উপস্থিত!  (একটা কথা বলে রাখি, এই রাজা রামমোহন রায় অবশ্য কিন্তু সতীদাহ বিলোপকারী সেই প্রসিদ্ধ ব্যক্তিত্ব রাজা রামমোহন নন।) এরকম 'বেদিক সায়েন্সের' এধরণের আরো বই বাজারে আছে।  কেশভ ভার্মা, ধঞ্জয় দেশপান্ডে, বিদ্যালাথ শাস্ত্রী, অমিত গোস্বামী, দীপক চোপরা  সহ অনেকেই বিভিন্ন বই লিখেছেন হিন্দু ধর্মকে 'বৈজ্ঞানিক' প্রমাণ করে।

ভারতের খ্যাতনামা বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা একবার  মাসিক ভারতবর্ষের 'একটি নতুন জীবন দর্শন' (১৩ নভেম্বর, ১৯৩৮) শিরোনামের একটি প্রবন্ধে এই মানসিকতাকে কটাক্ষ করেছিলেন এই বলে -'সবই ব্যাদে আছ'! এ নিয়ে অনিলবরণ রায় নামের এক হিন্দুবাদী ধার্মিক নরকগুলজার শুরু করলে, এর ব্যাখ্যা মেঘনাদ সাহা দিয়েছিলেন এভাবেঃ

সবই ব্যাদে আছে !

প্রায় আঠারো বৎসর পূর্বেকার কথা। আমি তখন প্রথম বিলাত হইতে ফিরিয়াছি। বৈজ্ঞানিক জগতে তখন আমার সামান্য কিছু সুনাম হইয়াছে। ঢাকা শহরবাসী লব্ধপ্রতিষ্ঠিত এক উকিল আমি কি বৈজ্ঞানিক কাজ করিয়াছি তাহা জানিবার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। আমি উৎসাহভরে তাহাকে আমার প্রথম জীবনের তদানীন্তন গবেষণা সম্বন্ধে সবিশেষ বর্ণনা দেই। তিনি দু-এক মিনিট পরপরই বলিয়া উঠিতে লাগিলেন, 'এ আর নতুন কি হইল, এ সমস্তই ব্যাদ এ আছে'। আমি দু একবার মৃদু আপত্তি করিবার পর বলিলাম, 'মহাশয় এ সব তত্ত্ব বেদের কোন্ অংশে আছে তাহা অনুগ্রহ পূর্বক দেখাইয়া দিবেন কি?' তিনি বলিলেন, 'আমি তো ব্যাদ পড়ি নাই, কিন্তু আমার বিশ্বাস তোমরা নূতন বিজ্ঞানে যাহা করিয়াছ বলিয়া দাবি কর, তাহা সমস্তই 'ব্যাদে' আছে'।
  
বলা বাহুল্য যে, বিগত কুড়ি বৎসর ধরিয়া বেদ, উপনিষদ, পূরাণ ইত্যাদি সমস্ত হিন্দুশাস্ত্র এবং হিন্ধু জ্যোতিষ ও অপরাপর বিজ্ঞান সম্বন্ধীয় প্রাচীন গ্রন্থাদি তন্ন তন্ন করিয়া খুঁজিয়া আমি কোথাও আবিস্কার করিতে সক্ষম হই নাই যে, এই সমস্ত প্রাচীনগ্রন্থে বর্তমান বিজ্ঞানের মূলতত্ত্ব নিহিত আছে।
অনেকে মনে করেন, ভাস্করাচর্য একাদশ শতাব্দীতে অতিস্পষ্টভবে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির উল্লেখ করিয়া গিয়াছেন, সুতরাং তিনি নিউটনের সমতুল্য। অর্থাৎ নিউটন আর নতুন কি করিয়াছে? কিন্তু এই সমস্ত "অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী" শ্রেণীর তার্কিকগন ভুলিয়া যান যে, ভাস্করাচর্য কোথাও পৃথিবী ও অপরাপর গ্রহ সূর্যের চারিদিকে বৃত্তাভাস (elliptical) পথে ভ্রমণ করিতেছে - একথা বলেন নাই। তিনি কোথাও প্রমাণ করেন নাই যে, মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ও গতিবিদ্যার নিয়ম প্রয়োগ করিলে  পৃথিবীর এবং অপরাপর গ্রহের পরিভ্রমণপথ নিরূপণ করা যায়।  সুতরাং ভাস্করাচর্য বা কোন হিন্দু, গ্রীক বা আরবী পন্ডিত কেপলার, গ্যালিলিও বা নিউটনের বহুপূর্বেই মাধ্যাকর্ষণতত্ত্ব আবিস্কার করিয়াছেন, এইরূপ উক্তি করা পাগলের প্রলাপ বই কিছু নয়।

যারা প্রতিনিয়ত বেদ পুরাণ সহ হিন্দুধর্মের নানা কোনাকাঞ্চিতে আধুনিক বিজ্ঞানের সন্ধান করেন, তাদের আমি ড. মেঘনাদ সাহার হিন্দু ধর্মে-বেদ-বিজ্ঞান সম্পর্কিত চিত্তাকর্ষক বাদানুবাদটি সংগ্রহ করে পড়তে বলি। লেখাটি এখনো আধুনিক। একটি কথা এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, এই আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রথিতযশাঃ এই জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানী কিন্তু ছিলেন পূর্ববাংলার (যে অঞ্চল নিয়ে আজকের বাংলাদেশ) সন্তান - জন্মেছিলেন ঢাকার অদূরে বলিয়াদির শ্যাওরাতলি গ্রামে। ছেলেবেলায় প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি ঐ গ্রামের স্কুলেই। মাধ্যমিক আর উচ্চমাধ্যমিক স্তরে পড়েছেন ঢাকার কলেজিয়েট এবং জুবলী স্কুলে এবং পরে ঢাকা কলেজে। ছাত্র জীবনে বিজ্ঞান চর্চার পাশাপাশি ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনেও সমান সক্রিয়; ছিলেন মুক্তচিন্তা এবং যুক্তিবাদের আমরণ পৃষ্ঠপোষক। জ্যোতির্বিজ্ঞানে মেঘনাদ সাহার 'তাপীয় আয়নন তত্ত্ব' নিউটনের গতিসূত্রের পর পদার্থবিজ্ঞনের সাতটি উল্লেখযোগ্য আবিস্কারের অন্যতম হিসেবে এখনো বিবেচিত।

মৃণাল দাসগুপ্ত নামের এক খ্যাতনামা বিজ্ঞানী আছেন ভারতে। তিনি ভারতের জাতীয় বিজ্ঞান আকাদেমীর বিখ্যাত  বিজ্ঞানী। উনি হচ্ছেন আসলে অনেকটা বাংলাদেশের 'শমসের আলী'- যিনি দাবী করেন, আজ আধুনিক বিজ্ঞান যে সমস্ত নতুন তত্ত্ব ও তথ্য প্রতিদিনই আবিস্কার করছে, তার সবকিছুই নাকি প্রাচীনকালের মুণি ঋষিরা বের করে গেছেন। বেদে নাকি সে সমস্ত আবিস্কার 'খুবই পরিস্কারভাবে'  লিপিবদ্ধ আছে। মিঃ দাসগুপ্তের ভাষায়,  রবার্ট ওপেনহেইমারের মত বিজ্ঞানীও নাকি গীতার বিশ্বরূপ দর্শনে এতই অভিভূত হয়ে গিয়েছিলেন যে  ল্যাবরেটরীতে আণবিক শক্তির তেজ দেখে নাকি গীতা থেকে আবৃত্তি করেছিলেন- 

দিবি সূর্য্যসহস্রস্য ভবেদ যুগপদুত্থিতা।
যদি ভাঃ সদৃশী সা স্যাদ ভাসন্তস মহাত্মনঃ
 

ছোটবেলায় আমার দাদু হিন্দু ধর্মের নানা গল্প করতেন আমাকে পাশে বসিয়ে। তার কাছ থেকে একটা কথা প্রায়ই শুনতাম - 'ব্রক্ষ্মার এক মুহূর্ত নাকি পৃথিবীর সহস্র বছরের সমান'। পরে বড় হয়ে দেখলাম এই কথাটাকে হিন্দুভাববাদীরা আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্বের সাথে জুরে দিয়ে হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থে  'টাইম ডায়েলেশন' থাকার প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করতেন। আমি নিজে দেখেছি, রামকৃষ্ণ মিশন তাদের তাদের মুখপত্র 'উদ্বোধন'- এ এই আপ্তবাক্য উল্লেখ করে বলা শুরু করেছে যে, কৃষ্ণ গহ্বর কিংবা সময়  ধারণা নাকি মোটেই নতুন কিছু নয়।  হিন্দুধর্ম নাকি অনেক আগেই এগুলো জানতে পেরেছিল। হিন্দুধর্মের বিভিন্ন পুরানে সৃষ্টিমুহূর্তে যে 'সুবর্ণময় অন্ডের' উল্লেখ আছে তা নাকি আসলে 'কসমিক এগ'। এদের প্রচেষ্টা অনেকেটা বুকাইলি, মুর কিংবা হারুন ইয়াহিয়াদের মতই।   অনন্ত বিজয় দাশ তার 'ভগবদগীতায় বিজ্ঞান অন্বেষণ এবং অন্যান্য'  প্রবন্ধে  হিন্দু বকধার্মিকদের বিভিন্ন ভন্ডামীর উল্লেখ করেছেন।  প্রবন্ধটি আমাদের সাম্প্রতিক ই-বুক 'বিজ্ঞান ও ধর্ম - সঙ্ঘাত নাকি সমন্বয়'তে সংকলিত হয়েছে।  কাজেই, হিন্দু ধর্মে 'বুকাইলী টাইপ' বিজ্ঞানের সন্ধান নাকি 'কেহ ই' পায় নাই - এ ব্যাপারটা হয় মিথ্যাচার নয়ত অজ্ঞানতা।
 
আর খ্রীস্ট ধর্মের বিজ্ঞানীরা যে কতভাবে বাইবেলকে বিজ্ঞান 'প্রমাণ' করার  চেষ্টা করেছেন তার কোন ইয়ত্তা নেই।  যেমন পদার্থ বিজ্ঞানী শ্রোডারের বইগুলো আমেরিকার বার্ন্স এন্ড নোবেলের তাকে সব সময়ই শোভা পায়। তার একটি বই হল - ''Genesis and the Big Bang: The Discovery of Harmony Between Modern Science and the Bible''.  বইটা তিনি সম্ভবতঃ লিখেছিলেন ১৯৯১ সালে। এর পর তিনি আরো বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন একই ভাবধারায়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, ব'The Hidden Face of God: Science Reveals the Ultimate Truth’ এবং ‘ The Science of God: The Convergence of Scientific and Biblical Wisdom'। এ সমস্ত বইয়ে শ্রোডার অংক কষে দেখানোর চেষ্টা করেছেন  বাইবেলে বর্ণিত ৬ দিন আসলে মহাবিশ্বের মোট বয়সের (১৫.৭৫ বিলিয়নের) সমান। এ জন্য অবশ্য তাকে নানা ধরনের গানিতিক ফ্যাক্টর ট্যাক্টর দিনে গুণ করে কিছু ধানাই পানাই করতে হয়েছে- এই আর কি।  খ্রীস্ট ধর্মে দীক্ষিত বিজ্ঞানী হুগ রসও এধরনের বিভিন্ন বই লিখেছেন।  সেই ষাটের দশকে John C. Whitcomb লিখেছিলেন 'Genesis Flood' - নূহের আমলের মহাপ্লাবন কতখানি বৈজ্ঞানিক সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়ে সমর্থিত তা 'প্রমাণ' করে।  বিজ্ঞানী ফ্রাঙ্ক টিপলার - পদার্থবিজ্ঞানে অবদানের জন্য ইদানিং যত না বিখ্যাত, তার চেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছেন খ্রীষ্টধর্মকে 'বিজ্ঞান' বানানোর জন্য। ওমেগা পয়েণ্ট নামে একটি তত্ত্ব দিয়েছেন টিপলার যা মহাসংকোচন (বিগ ক্রাঞ্চ)-এর সময় সিংগুলারিটির গানিতিক মডেলকে তুলে ধরে।  এ পর্যন্ত ঠিক ছিল। কিন্তু টিপলার মনে করেন এই ওমেগা পয়েন্টই হচ্ছে 'গড'। শুধু তাই নয়,  যীশুর অলৌকিক জন্মকে (ভার্জিন বার্থ) তিনি বৈজ্ঞানিক বৈধতা দিতে চান যীশুকে বিরল xx male বানিয়ে, যীশুর পুনুরুত্থানকে ব্যারন এনিহিলেশন প্রক্রিয়ার সাথে তুলনা করেছেন, ইনকারনেশন বা অবতারকে বলেছেন বিপরীতমুখি ডিম্যাটারিলিজেশন পদ্ধতি, ইত্যাদি। এ সমস্ত রং-বেরং এর গালগপ্প নিয়েই নিয়েই তার সাম্প্রতিক বই The Physics of Christianity (2007)! বলা বাহুল্য মাইকেল শারমার,  ভিক্টর স্টেংগর,  লরেন্স ক্রাউস সহ অনেক বিজ্ঞানী এবং দার্শনিকই টিপলারের যুক্তিকে খন্ডন করেছেন সময় সময়। ইন্টারনেটে সার্চ করলেই সেগুলো পাওয়া যায়।  আবার আরেক ‘শমশের আলী’র দল  তাওরাতকে বিজ্ঞানের আলোকে সত্য প্রমাণের চেষ্টা করেছেন, যেমন―'' Thinking About Creation: Eternal Torah and Modern Physics, Andrew Goldfinger''। এ ধরনের আরো বই বাজারে আছে, যেমন, Brave New Judaism: When Science and Scripture Collide  ইত্যাদি। 
 
ফ্রাঙ্ক টিপলারের অনেক আগে ১৯৭৫ সালে ফ্রিজোফ কাপরা একই মানসপটে লিখেছিলেন ‘The Tao of Physics’ -  প্রাচ্যের তাওইজমের সাথে বিজ্ঞানকে জুড়ে দিয়ে। চীনের প্রাচীন দার্শনিকেরা ইন  এবং  য়্যান (yin and yang) নামে পরস্পরবিরোধী কিন্তু একইভূত সত্ত্বার কথা বলেছিলেন – মানুষের মনে ভাল-মন্দ মিলেমিশে থাকার প্রসঙ্গে।  ফ্রিজোফ কাপরা সেই ইন  এবং  য়্যানকে ঠেলে নিয়ে গিয়েছিলেন কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যার জগতে 'পদার্থের দ্বৈত সত্ত্বার' (dual nature of matter) বর্ণনা হাজির করে- পদার্থ যেখানে কখনো কণা হিসেবে বিরাজ করে কখনো বা তরঙ্গ হিসেবে ।  আধুনিক পদার্থবিদ্যার শূন্যতার ধারনাকে মিলিয়ে দিয়েছেন তাওইজমের 'চী' (ch'i  or qi)-এর সাথে।  কাজেই  কেউ যদি ভেবে থাকেন, ইহুদী, খ্রিস্টান, ব্রাহ্মণ, বৌদ্ধ, ও শিখরা তাদের ধর্মগ্রন্থের মধ্যে কোন বৈজ্ঞানিক তথ্য পাননি কেবল পেয়েছেন শমশের আলী আর বুকাইলীর অনুসারীরা – তা হলে এই মিথ্যাচার কিংবা অজ্ঞতা সম্বন্ধে আর বলবার কিছু নেই।
 
কেইথ মুর আর বুকাইলী সম্বন্ধে যত কম বলা যায় ততই মনে হয় ভাল।  মুক্তমনায় এর আগে এ নিয়ে অনেক লেখা হয়েছে। আমিও এগুলো নিয়ে আগে অনেক লিখেছিলাম। লেবু কচলাতে কচলাতে এখন তিতা হয়ে গেছে।  বুকাইলিজম অনুযায়ী, কোরানে যদি এত 'সায়েন্টিফিক ইন্ডিকেশন' থেকেই থাকে তবে মুসলিমরা সারাজীবন ধরে কোরাণ পড়ার পরও সেগুলো আবিস্কার করতে পারেন না কেন, তা এক বিরাট রহস্য।  এ সম্বন্ধে বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানী পারভেজ হুদভয় স্পষ্ট করেই তার 'When Science Teaching Becomes A Subversive Activity' প্রবন্ধে বলেন -
 

The problem with such claims to ownership is that they lack an explanation for why quantum mechanics, molecular genetics, etc., had to await discovery elsewhere. Nor is any kind of testable prediction ever made. No reason is offered as to why antibiotics, aspirin, steam engines, electricity, aircraft, or computers were not first invented by Muslims. But even to ask such questions is considered offensive.

 
এ ধরনের প্রশ্ন আমরা মুক্তমনা শুরুর সময় থেকে করে এসেছি।  জাহেদ তো তার অনেক প্রবন্ধেই উল্লেখ করেছে যে,  

সেই ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছি - আমাদের কোরানেই পৃথিবীর সমস্ত জ্ঞান-বিজ্ঞান নিহিত রয়েছে। অথচ কেউ যদি জিজ্ঞাসা করে কাফির নাসারারা এত উন্নতি করছে - অথচ কোরাণ গবেষণা করেও আমরা কিছুই করতে পারছি না কেন? উত্তর আসে- সঠিক আমলের অভাবে। কিন্তু আমাদের কেউ কোনদিন বলে দিলনা - 'সঠিক আমল' জিনিসটি আসলে কি, কিংবা বক্তা নিজেই বা কেন -সঠিক আমলটি অভ্যাস করে কোটি কোটি মুসলমানের দুর্দশা লাঘব করছেন না। ... কোরাণে যদি আধুনিক বিজ্ঞানের এত ইঙ্গিতই থাকে তবে প্রশ্ন আসে পৃথিবীর জনসংখ্যার প্রায় এক-পঞ্চমাংশ মুসলিম হওয়া সত্ত্বেও কেন মুসলিম দেশে বিজ্ঞানীর সংখ্যা এক-পঞ্চমাংশেরও কম? পৃথিবীর সমস্ত মুসলিম দেশে যত বিজ্ঞানী রয়েছে অমুসলিম ইসরায়েলের রয়েছে তার চেয়ে দ্বিগুন সংখ্যক বিজ্ঞানী।

 
আমি আর অপার্থিব অনেকবারই আমাদের বিভিন্ন প্রবন্ধে বলেছি যে, বিজ্ঞানের দায় পড়ে নি ধর্মগ্রন্থ থেকে সবক নিয়ে আলোর সন্ধান লাভ করতে, বরং ধর্মগুলোই জেনে গেছে, বিজ্ঞান ছাড়া তারা টিকে থাকতে পারবে না। কাজেই, নিত্য-নতুন বৈজ্ঞানিক আবিস্কারগুলোকে ধর্মগ্রন্থের সাথে জুরে দেবার জন্য ধর্মবাদীরা এখন মুখিয়ে থাকে। তবে মজার ব্যাপার হল, প্রতিটি ক্ষেত্রেই ধর্মগ্রন্থে 'আধুনিক বিজ্ঞানের' সন্ধান পাওয়া যায়, বৈজ্ঞানিক আবিস্কারগুলো প্রকাশ পাওয়ার পর, তার আগে নয়।  একটি ক্ষেত্রেও এর কোন ব্যতিক্রম পাওয়া যায় না, আর ব্যাপারটা মোটেও কাকতালীয় নয়।
 
যা হোক, আমি একটি মজার তথ্য দিয়ে লেখাটি শেষ করি।  বুকাইলি আর মুরের বইয়ের পেছনে পেট্রোডলারের প্রভাব তো ছিলোই, তার সাথে ছিলো কিছু বাড়তি বোনাস! কেইথ মুর তার 'The Developing Human' গ্রন্থটি রচনা করেছিলেন, তিনি তার বইটির পেছনে কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের আর্থিক এবং অন্যান্য সাহায্যের কথা স্বীকার করেছিলেন তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন ‘ওসামা বিন লাদেন’। ৯/১১ এর পর তিনি তার বইয়ের সংস্করণ থেকে লাদেনের নাম উঠিয়ে দেন। কারণটি সহজেই অনুমেয়।  Freethoughtmecca   নামের একটি সাইটে ওই ১৯৮৩ সালের বইটির স্ক্যান করা ছবিটি সংযুক্ত ছিলো -যেখানে জ্বলজ্বল করছিলো ওসামা বিন লাদেনের নাম।  সম্ভবত টেরোরিস্ট হুমকির কারণে ইদানিং সাইটটা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তবে  ইন্টারনেটে সার্চ দিলে বিভিন্ন লেখায় এখনো এর সন্ধান মিলে। এছাড়া দেখুন ওয়ার্ল্ড স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত ' Western scholars find selves playing role in touting 'science' of the Quran' শিরোনামের লেখাটি।
 
তবুও কি প্রোপাগান্ডার চাকা থেমে থাকে? এ ধরণের নির্লজ্জ 'বিজ্ঞানময়' প্রোপাগান্ডার জবাব ইদানিং আর দিতে ইচ্ছে করে না। একই লেবু আর কাঁহাতক কচলানো যায়! তবুও মাঝে মধ্যেই কলম (থুড়ি কি-বোর্ড) তুলে নিতে হয় দায়িত্ববোধের কারণেই।

পাঠকদের শুভেচ্ছা


টিকাঃ আমার প্রবন্ধের শিরোনামটি ধার করা হয়েছে মেঘনাদ সাহার রচনা সংকলন (শ্রী অনিলবরণ রায়ের সমালোচনার উত্তর) থেকে।


মন্তব্য

শিক্ষানবিস এর ছবি

কুরআনে তো একমাত্র নয়ই বরং বলতে হয়, কুরআনে বিজ্ঞান বের করার কাজ অনেক পরে শুরু হয়েছে। এদিক থেকেও যথারীতি খ্রিস্ট ধর্মের অনুসারীরা অনেক এগিয়ে আছেন। একটা উদাহরণ দেই,
বাংলাদেশের সকল ইসলামী অপবিজ্ঞানীরা বিবর্তনবাদ শুনলে এক কথায় উড়িয়ে দেন। কারণ, তারা এখনও বুঝে উঠতেই পারেননি যে, বিবর্তন বিজ্ঞানে স্বীকৃত হয়ে গেছে। খ্রিস্ট ধর্ম ঐ পর্যায় পার করে এসেছে। আজ থেকে ৫০ বছর আগেই পোপ বলেছিলেন,

একজনের পক্ষে একইসাথে বিবর্তনবাদী ও রোমান ক্যাথলিক হওয়া সম্ভব যদি তিনি বিশ্বাস করেন বিবর্তনের কোন এক পর্যায়ে ঈশ্বর মানব আত্মা ফুঁকে দিয়েছেন।

আজ থেকে ২০-৩০ বছর পর যখন বাংলাদেশেও বিবর্তনের জোয়াড় এসে যাবে তখন দেখবেন এইসব অপবিজ্ঞানীরা পোপের সেই কথার পুনরাবৃত্তি করছে। ভাই যত যাই বলি, শেষে এসে দেখা যায় সব ধর্মই এক। সবার কথা বলার সুর একটাই।

আমি ফ্রাংক টিপলারের কথা শুনছিলাম ধর্মে বিশ্বাসী থাকার সময়। উনাদের "ধর্মতাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান" (থিওফিজিক্স) আমাকে আকৃষ্ট করেছিল। কারণ তখন তো পদার্থবিজ্ঞানই বুঝতাম না। মজার ব্যাপার হল ফিজিক্স না বুঝলে থিওফিজিক্স বুঝা যায়, কিন্তু ফিজিক্স বুঝে গেলে ঐটা জানি কেমুন কেমুন লাগে। যাহোক থিওফিজিক্সের ভূত আমার মাথা থেকে নামছিল কসমিক ভ্যারিয়েন্সে শন ক্যারলের ব্লগ পড়ে।

আপনার এই লেখাটাও যথারীতি ধর্মবাদীদের জন্য উপকারে (বা অপকারে দেঁতো হাসি) আসবে। সবাইকে বুঝিয়ে দেবে যে, সব ধর্মের অনুসারীরা তাদের ধর্ম নিয়ে একই আন্তরিকতা ও বিশ্বাসের সাথে চিন্তা করেন। এবং সবাই সেটা পারেও। তাই সবাই সেই একই ভ্রান্তির পথে যায়।

অভিজিৎ এর ছবি

আমি ফ্রাংক টিপলারের কথা শুনছিলাম ধর্মে বিশ্বাসী থাকার সময়। উনাদের "ধর্মতাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান" (থিওফিজিক্স) আমাকে আকৃষ্ট করেছিল। কারণ তখন তো পদার্থবিজ্ঞানই বুঝতাম না। মজার ব্যাপার হল ফিজিক্স না বুঝলে থিওফিজিক্স বুঝা যায়, কিন্তু ফিজিক্স বুঝে গেলে ঐটা জানি কেমুন কেমুন লাগে। যাহোক থিওফিজিক্সের ভূত আমার মাথা থেকে নামছিল কসমিক ভ্যারিয়েন্সে শন ক্যারলের ব্লগ পড়ে।

অধ্যাপক ভিক্টর স্টেংগরের সাইটে ভাল কিছু রিবিউটাল আছে এ সমস্ত অপবিজ্ঞানের। মাইকেল শারমার, টিম কালাহান, গ্রাহাম অপি এবং লরেন্স ক্রাউস ও ভাল কিছু উত্তর দিয়েছেন এগুলোর। কিছু লিঙ্ক দিলাম-

In the Name of the Omega Point Singularity

More dangerous than nonsense

The Physics of Nonsense

Blinded by Science?

Critical Notice: Frank J. Tipler (1995) The Physics of Immortality



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

শিক্ষানবিস এর ছবি

লিংকগুলোর জন্য ধন্যবাদ। টিপলারীয় ধর্মতাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের ত্রুটিগুলো নিয়ে বিস্তারিত জানার ইচ্ছা ছিল। এগুলো খুব কাজে লাগবে।

দেবোত্তম দাশ এর ছবি

বিজ্ঞানের দায় পড়ে নি ধর্মগ্রন্থ থেকে সবক নিয়ে আলোর সন্ধান লাভ করতে, বরং ধর্মগুলোই জেনে গেছে, বিজ্ঞান ছাড়া তারা টিকে থাকতে পারবে না। কাজেই, নিত্য-নতুন বৈজ্ঞানিক আবিস্কারগুলোকে ধর্মগ্রন্থের সাথে জুরে দেবার জন্য ধর্মবাদীরা এখন মুখিয়ে থাকে। তবে মজার ব্যাপার হল, প্রতিটি ক্ষেত্রেই ধর্মগ্রন্থে 'আধুনিক বিজ্ঞানের' সন্ধান পাওয়া যায়, বৈজ্ঞানিক আবিস্কারগুলো প্রকাশ পাওয়ার পর, তার আগে নয়। একটি ক্ষেত্রেও এর কোন ব্যতিক্রম পাওয়া যায় না, আর ব্যাপারটা মোটেও কাকতালীয় নয়।

এর থেকেই স্পষ্ট হয় কোনটা ঠিক হওয়া উচিত । আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এই লেখাটির জন্য।

------------------------------------------------------
স্বপ্নকে জিইয়ে রেখেছি বলেই আজো বেঁচে আছি

------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !

অগ্নি এর ছবি

বিজ্ঞানের দায় পড়ে নি ধর্মগ্রন্থ থেকে সবক নিয়ে আলোর সন্ধান লাভ করতে, বরং ধর্মগুলোই জেনে গেছে, বিজ্ঞান ছাড়া তারা টিকে থাকতে পারবে না।

সত্যিই তাই। আর সেজন্য ধর্মের নানা অসঙ্গতিকে বিজ্ঞানসম্মত করার জন্য ধর্মবাদীদের কতই না প্রচেষ্টা। তারা বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষঙ্গকে বিজ্ঞানসম্মত করার জন্য নানা ধরণের প্রচারণা চালায়। কিন্তু বিজ্ঞান কখনও বলে না যে তাদের অমুক আবিষ্কার ধর্মসম্মত। এখানেই ধর্মের দুর্বলতা, ব্যর্থতা প্রকাশ হয়ে যায়।

যারা ধর্মের এই ফাকিবাজি বুঝতে না পারে, তারা আসলে স্বার্থপর, লোভী। নির্দিষ্ট স্বার্থসিদ্ধির কারণে তারা ধর্মকে একটা পোষাক হিসেবে শরীরে জড়িয়ে রাখে। এর সুবিধাগুলোও তারা হাতেনাতে পায়।

একই লেবু বারবার কচলালে তিতা হয়ে যায় একথা ঠিক। কিন্তু ধর্মবাদীদের যে ওই তিতা লেবু না হলে চলে না। সেক্ষেত্রে....?

লেখাটির জন্য ধন্যবাদ।

অগ্নি
http://agnisetu.blogspot.com

অভিজিৎ এর ছবি

আপনার প্রতিটি কথার সাথে আমি একমত। সেজন্যই তো লেবু তিতা হবার পরো লিখে যাচ্ছি। হাসি



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

পছন্দের পোস্টে যুক্ত হলো।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

অভিজিৎ এর ছবি

ধন্যবাদ । আমার অবশ্য ধারণা ছিল আপনার এ ধরনের লেখা টেখা তেমন পছন্দ নয়, বিশেষ করে যে সমস্ত লেখাতে 'ধর্ম-বিদ্বেষের' গন্ধ আছে। আপনি আগে অনেকের ব্লগেই এই ধরনের কমেন্ট করেছিলেন, এমনকি যদ্দুর মনে পড়ে আমাদের সংকলনগ্রন্থটি নিয়েও আপনার মনোভাব ছিল নেতিবাচক। সে হিসেবে এ পোস্ট আপনার 'পছন্দের তালিকায়' দেখে খুবই অবাক, এবং সে সাথে আনন্দিত হলাম।

আমি জানি আমাদের অনেকের লেখলিখিতে অনেকের বিশ্বাসেই আঘাত লাগে, হয়ত অনেকেরই অপছন্দের তালিকার শীর্ষেই রয়েছি আমি। হয়ত অন্য সবার মত প্রেম ভালোবাসা নিয়ে ইস্টিকুটুম গল্প কবিতা লিখতাম কিংবা ফুল ফল নদী নালা নিয়ে বিমুগ্ধ থাকতাম - তবে এত সবের মধ্য দিয়ে আমাকে যেতে হত না। ফুল পাখি যে আমাকে মুগ্ধ করে না তা নয়, বরং অনেকের চেয়েই বেশি করে বলে আমার ধারণা- কিন্তু কি করব বলুন, মাঝে মধ্যেই সেসব মুগ্ধতা ছাপিয়ে এই ধরনের কুসংস্কার এবং অজ্ঞানতাবিরোধি 'ডার্টি পোস্ট' দিতে এক ধরনের দায়িত্ববোধ করি। যে ভাবে আমাদের সমাজে অজ্ঞানতার চাষ করা হচ্ছে, যেভাবে মিডিয়ায় ফলাও করে অন্ধবিশ্বাসকে প্রমোট করা হয়, যেভাবে আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রকে অপবিজ্ঞান শিখিয়ে তিলে তিলে নষ্ট করে দেয়া হচ্ছে, তার বিপরীতে শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া তো চোখে পড়ে না আমার তেমন।

যাকগে অনেক কথা বলে ফেললাম। আপনার লেখার অবশ্য আমি বরাবরের একজন মুগ্ধ পাঠক। আপনার 'উপন্যাস কিভাবে লিখবেন' থেকে অনেক কিছু জানলাম, শিখলাম। ধন্যবাদ আপনাকে আবারো।



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

খেকশিয়াল এর ছবি

খুবই ভাল লাগলো পড়ে, অনেক ধন্যবাদ লেখাটির জন্য ।

------------------------------
'এই ঘুম চেয়েছিলে বুঝি ?'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

অভিজিৎ এর ছবি

আপনাকেও ধন্যবাদ- পড়বার এবং মন্তব্য করার জন্য। ভাবছি সময় করে মেঘনাদ সাহার লেখাটা থেকে কিছু অংশ কোট করব নীচে। সাহার লেখাটা সবার পড়া প্রয়োজন।



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

ফারুক হাসান এর ছবি

পছন্দের পোষ্টে যোগ করলাম।

সুধীর এর ছবি

আসলে কোনো ধর্মে কতখানি বিজ্ঞান থাকার হাস্যকর দাবি অনেকে করছে, সেটা মূলত একটা তত্ত্বীয় বিষয়; ধর্মের ক্ষতিকর ব্যাখ্যা দিয়ে যা করা হচ্ছে তা অনেক বেশী নিন্দাযোগ্য। হুমায়ুন আজাদের 'পাক সার জমিন সাদ বাদ'-এ পদ্মার এক পাড়ে যেমন এক শ্রেণির লোকের দ্বারা 'মালাউন'দের প্রাণ,মান,সম্পদ হরণের একটা বাস্তব চিত্র পাই, তেমনি ওপাড়ে হিন্দু মেয়েকে বিয়ে করাতে রিজওয়ান প্রাণ দেয়, এবং সুশিক্ষিত বিজ্ঞানী সংক্ষাগরিষ্ঠদের একটা বড় অংশ মনে করে বর্ণাশ্রম একটা ভালো প্রথা, ফুলন দেবীদের ভোগ করা বা পরে খুন করা জায়েজ, নিম্ন বর্নের মানুষকে এগিয়ে দিতে প্রবর্তিত কোটা সিস্টেম অনৈতিক। স্বার্থই আসলে সবচেয়ে জঘন্য ধর্ম।

অভিজিৎ এর ছবি

হ্যা, প্রতিটি ধর্মেরই দুটো দিক আছে, তাত্ত্বিক দিক এবং প্রায়োগিক দিক। তাত্ত্বিক দিকটা হয়ত সরাসরি ধর্মগ্রন্থ থেকে আসে, আর প্রায়োগিক দিকটা হয়ত শুধু ধর্মগ্রন্থ নয় সেই সাথে বহুদিনের গড়ে ওঠা সাংস্কৃতিক বিন্যাস থেকে আসে। সতীদাহের কথা বলা যায় - বেদে হয়ত সতীদাহ করার সরাসরি নির্দেশ নেই, যেমনি কোরাণে কোথাও নেই মুরতাদদের হত্যা করার আদেশ। কিন্তু দুটোই হিন্দু এবং মুসলিম সংস্কৃতিতে কিভাবে মিশে গিয়ে বহু মানুষের প্রাণনাশের কারণ হয়েছে অতীতে। ইতিহাস এবং সামাজবিশ্লেষণে এর পক্ষে অজস্র প্রমাণ হাজির করা যায়। এর পাশাপাশি 'স্বার্থ ধর্ম' তো আছেই। ধর্মের যে নিয়ম কানুন,প্রথা, রীতি নীতি গুলো স্বার্থ সিদ্ধিতে ইন্ধন যোগায় সেটুকুতে আমরা মানুষকে সচেতন করতেই পারি।



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

জিফরান খালেদ এর ছবি

অভিজিতদা,

ফিলসফিক্যালি, ধর্ম এবং এইরূপ আইডিওলজিক্যাল যে টেনেটসমূহ যেইখানে রিলিজিওসিটি একটা মূল প্যারামিটার, সেইগুলা সবগুলাকে কি আপনার কখনও নাথিংনেসের এগেইন্সটে মানুষের একটা সামষ্টিক আশ্রয় বা কন্সোলিং রিসোর্ট বলে মনে হয়সে?

শুধুমাত্র এই জায়গাটাতে আপনার ভাবনা জানতে পারলে ভাল লাগতো।

আপনার লিখার নিয়মিত পাঠক আমি। বেশ লাগে। ধন্যবাদ।

বন্যা এর ছবি

জিফরান, যদিও অভিকে প্রশ্নটা করেছেন, তারপরও আমি হান্দায় গেলামঃ)...এই বিষয়টা আমার খুবই প্রিয় একটা বিষয় বলে। অনেকদিন ধরেই ভাবছি ধর্মের ইতিহাস এবং বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নিয়ে লিখব , কিন্তু অলসতা করে লেখা হচ্ছে না। আজকে ধর্মীয় বইগুলোর ডাইসেকশান যেমন দরকার আছে, আমার কাছে মনে হয় তার সাথে সাথে আজ পর্যন্ত টিকে থাকা ধর্মগুলোর উৎপত্তি এবং তাদের এখনও টিকে থাকার পিছনের দার্শনিক এবং বৈজ্ঞানিক ভিত্তিগুলো বোঝাটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাড়িয়েছে। ধর্মকে যদি ঐতিহাসিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ফেলে দেখা হয় এবং তার সাথে গত কয়েক শতাব্দীর বিজ্ঞানকে জুড়ে দেওয়া যায়, তাহলে ধর্মকে আপনি অন্য চোখে দেখতে বাধ্য হবেন। আপনি যে 'নাথিংনেসের এগেইন্সটে মানুষের একটা সামষ্টিক আশ্রয় বা কন্সোলিং রিসোর্ট' এর কথা উল্লেখ করেছেন তা তো অবশ্যই একটা বিশাল ফ্যক্টর। এটা তো ধর্মের অন্যতম ভিত্তি। তবে আজকের সমাজে এই ফ্যাক্টরটার কতখানি গুরুত্ব বা অর্থ আছে, নাথিংনেসটা কে কোথা থেকে দেখছে, কোন সামাজিক পরিস্থিতি থেকে দেখছে, কারা দেখাচ্ছে, কি কি সমাধান রয়েছে সামনে, এগুলোও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর বলে মনে করি আমি। ধর্মের ইতিহাস নিয়ে লেখার ইচ্ছে আছে সামনে, তবে এ প্রসংগে বৈজ্ঞানীক দৃষ্টিভঙ্গী থেকে লেখা ডঃ রিচার্ড ডকিন্সের একটা প্রবন্ধ অনুবাদ করেছিলাম ( আরেক বন্ধুর সাথে মিলে) অনেকদিন আগে, ভালো লাগলে পড়ে দেখতে পারেন...

অভিজিৎ এর ছবি

জিফরান এবং বন্যাকে চমতকার একটা আলোচনার সূত্রপাত ঘটানোর জন্য ধন্যবাদ। 'কন্সোলিং রিসোর্ট' এর ব্যাপারটা অস্বীকার করার উপায় নেই। মার্ক্স এ সম্বন্ধে যে উক্তি করেছিলেন তা তো এখনো প্রাসঙ্গিকঃ Religion is the sigh of the oppressed creature, the heart of a heartless world, just as it is the spirit of a spiritless situation. It is the opium of the people

তবে আমি ব্যাপারটাকে একটু অন্যরকমভাবে দেখি। 'কন্সোলিং রিসোর্ট' এর ব্যাপারটা সত্য, কিন্তু তারপরেও ধর্মকে কেবলমাত্র 'হার্ট অব দ্য হার্টলেস ওয়ার্ল্ড' কিংবা 'অপিয়াম অব দ্য ম্যাসেস' কিংবা 'শোষক শ্রেনীর হাতিয়ার' বা এ ধরণের শ্লোগানের বিপরীতে ধর্মের এতদিন ধরে টিকে থাকার পেছনে কোন নৃতাত্ত্বিক কিংবা জীববৈজ্ঞানিক কারণ আছে কিনা তা খূজে দেখাকে আমি বেশি জরুরী মনে করি। বিবর্তনবাদ এ ব্যাপারে আমাদের অনেকটাই সাহায্য করতে পারে। এমন হতেই পারে 'বিশ্বাস' ব্যাপারটা মানব জাতির বেঁচে থাকার পেছনে হয়তো কোন বাড়তি উপাদান যোগ করেছিল একটা সময়। মানুষ তো আদিমকাল থেকে বহু সংঘাত, মারামারি এবং রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে গিয়ে আজ এই পর্যায়ে এসে পৌছেছে। একটা সময় সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করাটা ছিল মানব জাতির টিকে থাকার ক্ষেত্রে অনেক বড় ফ্যাক্টর। যে গোত্রে বিশ্বাস ঢুকিয়ে দিতে পারা গিয়েছিল যে যোদ্ধারা সাহসের সাথে যুদ্ধ করে মারা গেলে পরলোকে গিয়ে পাবে অফুরন্ত সুখ, সাচ্ছ্বন্দ্য, হুর পরী উদ্ভিন্নযৌবনা চিরকুমারী অপ্সরা, (আর বেঁচে থাকলে তো আছেই সাহসী যোদ্ধার বিশাল সম্মান আর পুরস্কার) - তারা হয়ত অনেক সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করেছে এবং নিজেদের এই যুদ্ধাংদেহী জীন পরবর্তী প্রজন্মে বিস্তৃত করতে সহায়তা করেছে। নিয়ে রিচার্ড ডকিন্সের 'ধর্মের উপযোগিতা' প্রবন্ধটিতে (বন্যার দেয়া লিঙ্ক দেখুন) এ নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা আছে।

ডকিন্সের লেখাটি থেকে কিছু গুরুত্বপুর্ণ পয়েন্ট উল্লেখ করি। মানব সভ্যতাকে অনেকে শিশুদের মানসজগতের সাথে তুলনা করেন। শিশুদের বেঁচে থাকার প্রয়োজনেই একটা সময় পর্যন্ত অভিভাবকদের সমস্ত কথা নির্দ্বিধায় মেনে চলতে হয়। ধরা যাক একটা শিশু চুলায় হাত দিতে গেল, ওমনি তার মা বলে উঠল - চুলায় হাত দেয় না - ওটা গরম! শিশুটা সেটা শুনে আর হাত দিল না, বরং সাথে সাথে হাত সরিয়ে নিলো। মার কথা শুনতে হবে - এই বিশ্বাস পরম্পরায় আমরা বহন করি - নইলে যে আমরা টিকে থাকতে পারবো না, পারতাম না। এখন কথা হচ্ছে - সেই ভাল মাই যখন অসংখ্য ভাল উপদেশের পাশাপাশি আবার কিছু মন্দ বা কুসংস্কারাচ্ছন্ন উপদেশও দেয় - শনিবার ছাগল বলি না দিলে অমঙ্গল হবে, কিংবা রসগোল্লা খেয়ে অংক পরীক্ষা দিতে যেও না – গেলে গোল্লা পাবে জাতীয় - তখন শিশুর পক্ষে সম্ভব হয় না সেই মন্দ বিশ্বাসকে অন্য দশটা বিশ্বাস কিংবা উপদেশ থেকে আলাদা করার। সেই মন্দবিশ্বাসও বংশপরম্পরায় সে বহন করতে থাকে অবলীলায়। সব বিশ্বাস খারাপ নয়, কিন্তু অসংখ্য মন্দ বিশ্বাস হয়ত অনেক সময় জন্ম দেয় 'বিশ্বাসের ভাইরাসের'। এগুলো একটা সময় প্রগতিকে থামাতে চায়, সভ্যতাকে ধ্ব্বংস করে। যেমন, ডাইনী পোড়ানো, সতীদাহ, মুরতাদদের হত্যা এগুলোর কথা বলা যায়। রিচার্ড ডকিন্স, ডেনিয়েল ডেনেট প্রমুখেরা পশ্চিমে এ নিয়ে অনেক গবেষণামূলক প্রবন্ধ এবং গ্রন্থ লিখছেন।

'বিশ্বাসের ভাইরাস' ব্যাপারটা এই সুযোগে আর একটু পরিস্কার করি। একটা মজার উদাহরণ দেই ডেনিয়েল ডেনেটের 'ব্রেকিং দ্য স্পেল' বইটি থেকে। আপনি নিশ্চয়ই দেখেছেন ঘাসের ঝোপে কোন কোন পিপড়াকে দেখেছেন - সারাদিন ধরে ঘাসের নীচ থেকে ঘাসের গা বেয়ে উপরে উঠে যায়, তারপর আবার ঝুপ করে পড়ে যায় নিচে, তারপর আবারো গা বেয়ে উপরে উঠে। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে - এই বেয়াক্কেলে কলুর বলদের মত পন্ডশ্রম করে পিপড়াটি কি বিবরর্তনের দৃষ্টি থেকে কোন বাড়তি উপযোগিতা পাচ্ছে? নইলে সারাদিন ধরে সে এই অর্থহীন কাজ করে যাচ্ছে কেন? আসলে সত্যি বলতে কি - এই কাজের মাধ্যমে সে বাড়তি কোন উপযোগিতা তো পাচ্ছেই না, বরং ব্যাপারটি সম্পুর্ণ উলটো। গবেষনায় দেখা গেছে পিপড়ার ব্রেনে থাকা ল্যাংসেট ফ্লুক নামে এক ধরনের প্যারাসাইট এর জন্য দায়ী। এই প্যারাসাইট বংশবৃদ্ধি করতে পারে শুধুমাত্র তখনই যখন কোন গরু বা ছাগল একে ঘাসের সাথে চিবিয়ে খেয়ে ফেলে। ফলে প্যারাসাইট টা নিরাপদে সেই গরুর পেটে গিয়ে বংশবৃদ্ধি করে। পুরো ব্যাপারটাই এখন জলের মত পরিস্কার - যাতে পিপড়াটা কোন ভাবে গরুর পেটে ঢুকতে পারে সেই দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য ঘাস বেয়ে তার উঠা নামা। আসলে ঘাস বেয়ে উঠা নামা পিপড়ের জন্য কোন উপকার করছে না বরং ল্যাংসেট ফ্লুক কাজ করছে এক ধরনের ভাইরাস হিসবে - যার ফলশ্রুতিতে পিপড়ে বুঝে না বুঝে তার দ্বারা অযান্তেই চালিত হচ্ছে। আমাদের দীর্ঘদিনের জমে থাকা প্রথাগত বিশ্বাসের 'ভাইরাসগুলোও' কি আমাদের সময় সময় এভাবে আমাদের অযান্তেই বিপথে চালিত করে না কি? আমরা আমাদের বিশ্বাস রক্ষার জন্য প্রাণ দেই, বিধর্মীদের হত্যা করি, টুইন টাওয়ারের উপর হামলে পড়ি, সতী নারীদের পুড়িয়ে আত্মতৃপ্তি পাই, বেগানা মেয়েদের পাত্থর মারি ...।

অন্যান্য গবেষকদের মধ্যে আমেরিকান বিবর্তনবাদী বিজ্ঞানী জ্যারেড ডায়মন্ড আদিম সমাজে ধর্মকে একধরনের ডিলিনিয়েটর হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। তার মতে, ধর্ম আদিম সমাজে সম্ভবত এক ধরণের কৌশল যা যোগাযোগ রক্ষা কিংবা পরিচয়ের সূত্র খোঁজার জন্য একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হতো। ক্রমে এর সাথে যুক্ত হয়েছে পৌরহিত্য, পরলৌকিকতা এবং আরাধ্য দেবতার সন্তুষ্টি কামনার উদ্দেশ্যে নানা আয়োজন, যা এখনও বিশ্বজুড়ে প্রচলিত ধর্মগুলোর মধ্যে টিকে আছে। হিমু একটি পোস্টে সেটি ব্যাখ্যা করেছিলেন মনে আছে।



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

বিপ্লব পাল এর ছবি

মুম্বাই এর যে জীবিত সন্ত্রাসবাদি ছিল তার জবানী পাওয়া গেছে। এটা সেই গরীবের শ্রেনীদন্দকে ধর্মের সাহায্যে হাপিস করার ঘটনা-গরিব ছেলেগুলোকে জিহাদি করার চিরচারিত গল্প। এতে ধর্মের ভাইরাসের তত্ত্ব ই প্রতিষ্ঠিত হয়-কারন সন্ত্রাসবাদি টি বলেছে, সে ছিল সাধারন ডাকাত। জিহাদি কাম্পে ঢুকে সে আত্মঘাতি হওয়ার অনুপ্রেরণা পায়।

তার সম্মন্ধে যা জানা গেছেঃ
Iman’s story shows it preys on the most vulnerable poor

MUMBAI: It is improbable that Mohammad Ajmal Amir Iman’s family has seen the photograph that has made his face known across the world.

Hours before he began firing at commuters waiting at Mumbai’s Chhatrapati Shivaji Terminus (CST) last week, Iman, one of ten Lashkar-e-Taiba terrorists, was caught on closed-circuit camera.

After he and his partner, Mohammad Ismail, had killed 55 commuters at CST and three senior police officers, including Maharashtra Anti-Terrorism Chief Hemant Karkare, Iman was injured and captured — and the story he has since been telling Mumbai police investigators casts new light on how the feared terror group preys on the most vulnerable in Pakistani society to further its agenda of hate.

The man in the photo was born on July 13, 1987 at Faridkot village in Dipalpur tehsil of Okara district in Pakistan’s Punjab province. His family belongs to the underprivileged Qasai caste. His father, Mohammad Amir Iman, runs a dahi-puri snack cart. His mother, Noori Tai, is a homemaker.

Iman is the third of the family’s five children. His 25-year-old brother, Afzal, lives near the Yadgar Minar in Lahore. His sister, Rukaiyya Husain, 22, is married locally. Iman’s younger siblings, 14-year-old Suraiyya and 11-year-old Munir, live at home.

Iman’s desperately poor family could not afford to keep their second son, an indifferent student, at the Government Primary School in Faridkot past the fourth grade. He was pulled out of school in 2000, at the age of 13, and went to live with his older brother in Lahore. Afzal, who lives in a tenement near the Yadgar Minar in Lahore, eked out a living on a labourer’s wages, and could barely afford to look after his brother. For the next several years, Iman shuttled between the homes of his brother and parents.

Adrift

After a row with his parents in 2005, Iman left home, determined never to return. No longer welcome in Afzal’s home, he stayed at the shrine of the saint Syed Ali Hajveri until he could pick up some work. He began working as a labourer and by 2007 his work brought in Rs. 200 a day. Iman, however, found the work degrading. He soon began spending time with small-time criminals in Lahore. Along with a friend, a one-time Attock resident named Muzaffar Lal Khan, Iman decided to launch a new career in armed robbery.

On Bakr Eid day in 2007, Iman has told the Mumbai Police, the two men made their way to the Raja bazaar in Rawalpindi, hoping to purchase weapons. In the market, they saw activists for the Jamaat-ud-Dawa — the parent political organisation of the Lashkar-e-Taiba — handing out pamphlets and posters about the organisation and its activities. After a discussion lasting a few minutes, Iman claims, both men decided to join — not because of their Islamist convictions but in the hope that the jihad training they would receive would further their future life in crime.

A life in Lashkar

But at the Lashkar’s base camp, Markaz Taiba, Iman’s world view began to change. Films on India’s purported atrocities in Kashmir, and fiery lectures by preachers, including Lashkar chief Hafiz Mohammad Saeed, led him to believe that the Lashkar’s cause — the greater glory of Islam, as the organisation presented it — was worth giving his life to. It is possible, an official involved in the interrogation suggested, that the atmosphere of the camp gave him the sense of family he had lacked for much of his life.

When he returned home for a two-month break after his indoctrination at the Lashkar base camp, he found a respectability within his community and family that had eluded him most of his life. Where Iman had earlier been seen as a burden, he was now self-sufficient — and bore the halo of religious piety.

Later that year, Iman was chosen for the Lashkar’s basic combat course, the Daura Aam. He performed well and was among a small group of 32 men selected to undergo advanced training at a camp near Manshera, a course the organisation calls the Daura Khaas. Finally, he was among an even smaller group selected for specialised marine commando and navigation training given to the fidayeen unit selected to target Mumbai.

According to Iman, Lashkar military commander Zaki-ur-Rahman Lakhvi promised that his family would be rewarded with Rs. 1.5 lakh for his sacrifice.

শিক্ষানবিস এর ছবি

ধর্মের নৃবিজ্ঞান নিয়ে আমি খুবই আগ্রহী। আসলে ধর্ম নিয়ে লেখা শুরুই করেছিলাম নৃবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে। অভিজিৎ জ্যারেড ডায়মন্ড সম্বন্ধে হিমুর যে আলোচনার কথা বললেন তা আমার সেই পোস্টেই হয়েছিল। লিংকটা দিচ্ছি:
http://www.sachalayatan.com/muhammad/16217

ধর্ম ও অতিপ্রাকৃতের নৃবিজ্ঞান নিয়ে একটা প্রবন্ধ সংকলন হাতে পেয়েছি। এ বইয়ের কথা উপরের লেখাতেই বলেছিলাম। বইয়ের নাম: Magic, Witchcraft and Religion: An Anthropological Study of the Supernatural
বর্তমানে এ বই থেকে ক্লিফোর্ড গার্টস এর "Religion" প্রবন্ধের অনুবাদ করছি। অনুবাদ শেষ হলে পোস্ট করব।

অভিজিৎ এর ছবি

আমি মেঘনাদ সাহা রচনা সমগ্র থেকে আরেকটু কোট করি। সময় হলে মাঝে মধ্যেই এরকম আপডেট করব -

বিজ্ঞানের নামে অজ্ঞানের প্রচার

একথা না বলিলেও চলে যে, আধুনিক জগতে নানা কারণে বিজ্ঞানের বেশখানিকটা মর্যাদা বা প্রেস্টিজ বাড়িয়াছে। ইউরোপ, আমেরিকা ও জাপানে বিজ্ঞানের দৌলতে গত পঞ্চাশ বছরে মানবের জীবন-প্রণালী অনেক পরিমাণে উন্নত হইয়াছে, এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান, প্রাকৃতবিজ্ঞান, রসায়ন, প্রাণি ও উদ্ভিদতত্ত্ব, চিকিৎসাশাস্ত্র, যন্ত্রবিদ্যা প্রভৃতি বিষয়ে মানবের জ্ঞানের পরিধি অপরিসীম বাড়াইয়া দিয়াছে। সুতরাং ইহা কি আশ্চর্যের বিষয় নয় যে, অনেক অবৈজ্ঞানিক লোক (অর্থাৎ, যাহারা বিজ্ঞানের ধারাবাহিক শিক্ষার - discipline of Science- এর মধ্য দিয়া যান নাই, অতএব যাহাদের বর্তমান বিজ্ঞান সম্বন্ধে জ্ঞান নাই বলিলেও চলে), নানা প্রকারে বিজ্ঞানের বাস্তব কৃতিত্বকে খর্ব করিতে প্রয়াস পাইবেন।

এই প্রচেষ্টা প্রকাশ পাইতেছে নানা রূপ ধরিয়া। এক শ্রেনীর লোক বলেন যে, বিজ্ঞান আর নতুন কি করিয়াছে? বিজ্ঞান বর্তমানে যাহা করিয়াছে - তাহা কোন প্রাচীন ঋষি, বেদ বা পুরাণ বা অন্যত্র কোথাও না কোথাও বীজাকারে বলিয়া গিয়াছেন। অপর এক শ্রেনীর লোক বলেন যে, বিজ্ঞান মানব সমাজের ইষ্ট অপেক্ষা অনিষ্টই করিয়াছে, যথা - বিজ্ঞানের প্রসারে মানব সমাজে যুদ্ধ-বিগ্রহ বাড়িয়াছে, বিষাক্ত গ্যাস, বিস্ফোরক প্রভৃতি নানারূপ মানুষ মারা জিনিস সৃষ্টি হইয়াছে। অপর এক শ্রেনীর লোক বলেন যে, বিজ্ঞান মানুষের ভোগলিপ্সা বরর্ধিত করিয়া তাহাকে আধ্যাত্মিকতা হইতে ভিন্নপথে লইয়া যাইতেছে। সমালোচক শ্রীঅনিলবরণ রায়ের রচনার মধ্যে এই 'ত্রিবিধ' মনোবৃত্তির পরিচয় পাওয়া যায়।

সমালোচক অনিলবরণরায় বর্তমানে বিজ্ঞানের যে সমুদয় তথ্য, যেমন 'ক্রমবিবর্তনবাদ', 'জ্যোতিস্ক আবিস্কার' ইত্যাদি -প্রাচীন শাস্ত্রে কোথাও না কোথাও বীজাকারে না পূর্ণভাবে লিপিবদ্ধ আছে বলিয়া প্রমাণ করিতে চেষ্টা করিয়াছেন, তাহা সমস্তই যে 'অলীক এবং ভ্রান্ত' তাহা প্রতিপন্ন করিয়াছি। এক্ষণে বক্তব্য, সমালোচক যদি বাস্তবিকই 'পাশ্চাত্য বিজ্ঞানের' সহিত প্রাচীন ভারতীয় বিজ্ঞানের তুলনামুলক আলোচনা কার্যে ব্রতী হইতে চান, তবে তিনি ভাল করিয়া 'পাশ্চাত্য বিজ্ঞানের' সাধনা করুন, নতুবা 'অজ্ঞান'কে 'বিজ্ঞান' বলিয়া প্রচারের অপচেষ্টা করা নিরর্থক, এবং আমার মতে তাহার কোন অধিকার নাই। পাশ্চাত্য বিজ্ঞান অতি বিরাট জিনিস- প্রত্যক্ষের বিষয়ীভুত শাস্ত্র; ধ্যানে বসিয়া অথবা দুই-একখানা সুলভ পপুলার বই পড়িয়া তাহাতে অধিকারী হওয়া বিরম্বনা মাত্র। ঐ বিজ্ঞানের সাধনা করিতে হয় হাতে কলমে- প্রণিধান করিতে হয় আজীবন স্বাধীন চিন্তায়, 'গুরু' বিজ্ঞানে 'পথপ্রদর্শক' মাত্র, কিন্তু কোন বৈজ্ঞানিক গুরু যদি 'পূর্ণ ও চিরন্তন সত্য' আবিস্কার করিয়াছেন বলিয়া দাবী করেন, তাহা হইলে তাহাকে উপহাস্যাস্পদ হইতে হইবে। এক্ষেত্রে 'গুরুভক্ত'দের চেয়ে 'গুরুমারা' শিষ্যেরই আদর এবং প্রয়োজনীয়তা বেশী। বিজ্ঞান কখনো চিরন্তন সত্য আবিস্কার করিয়াছে বলিয়া দাবী করে না, কিন্তু সাধকের অনুসন্ধিৎসাবৃত্তিকে সজাগ রাখিয়া তথ্য সন্ধানের পন্থা বাৎলাইয়া দেয়।



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

শিক্ষানবিস এর ছবি

পড়ে খুব ভাল লাগল। চলুক।

নাজমুল এর ছবি

খুব ভালো লিখেছেন অভিজিৎদা।

এক লহমা এর ছবি

চলুক
এই সব লেখা বার বার পড়া দরকার। ধন্যবাদ লেখক-কে। ধন্যবাদ সচলায়তন-কে।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।