বিশ্বাসের ভাইরাস (মুম্বাইয়ের সন্ত্রাস)

অভিজিৎ এর ছবি
লিখেছেন অভিজিৎ (তারিখ: শনি, ২৯/১১/২০০৮ - ৮:৪৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

auto

ভারতের ৯/১১
যখন এ লেখাটা লিখছি তখন মুম্বাইয়ে সন্ত্রাসবাদী হামলায় দেড়শ জনেরও বেশি লোক মারা গেছে। প্রায় ৫০ জন ফিদাইন জঙ্গী সবমিলিয়ে তাজ হোটেল সহ মুম্বাইয়ের ৫ টা বিখ্যাত ল্যান্ডমার্ক আক্রমন করে আখচার গোলাগুলি করে নিমেষ মধ্যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে ফেলল। ডেকান মুজাহিদিন নামের একটি অজানা সন্ত্রাসী গ্রুপ ঘটনার দায়দায়িত্ব স্বীকার করেছে, যদিও আলকায়দা, ভারতীয় মুজাহিদিন এবং সর্বোপরি অন্যান্য পাকিস্তানী টেরর গ্রুপের জড়িত থাকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায় না। নিহত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে পাঁচজন আমেরিকান সহ পনের জন বিদেশীর মৃত্যুর ব্যাপারটা নিশ্চিত করা গেছে। ঘটনার ভয়াবহতা এতই বেশি যে, অনেকেই ঘটনাটিকে ভারতের ৯/১১ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।  সিএন এন সারা দিন ধরে ভারতের ঘটনাবলী সরাসরি সম্প্রচার করে চলেছে এখনো।  

একটা প্রশ্ন আমাকে বরাবরই আমাকে উদ্বিগ্ন করে। কেন  এই সব তরুন যুবকরা কেন আত্মঘাতি পথ বেছে নিচ্ছে? কেন তারা সন্ত্রাসবাদের পথ বেছে নিচ্ছে? ঘটনা তো একটা দুটো নয়, সারা বিশ্ব জুড়েই ঘটে চলেছে শত শত। শুধু মুম্বাইয়েই ২০০৫ সালের পর সন্ত্রাসবাদী ঘটনা ঘটেছে অন্ততঃ দশটি, যেগুলোর সাথে ইসলামী সন্ত্রাসবাদের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ আছে বলে মনে করা হয়। বিশ্বাস নির্ভর সন্ত্রাসবাদ এত ব্যাপক আকারে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পরার পেছনে কোন নৃতাত্ত্বিক, মনস্তাত্ত্বিক কিংবা জীববৈজ্ঞানিক কারণ আছে কিনা তা খূজে দেখাকে আমি আসলেই এখন জরুরী মনে করি।  

বিবর্তনবাদ কি এ  ব্যাপারে আমাদের কোন পথ দেখেতে পারে? অনেক সামাজিক জীববিজ্ঞানীই কিন্তু মনে করেন পারে। আমরা যতই নিজেদের যুক্তিবাদি কিংবা অবিশ্বাসী বলে দাবী করি  না কেন, এটা তো অস্বীকার করার জো নেই - ‘বিশ্বাসের’ একটা প্রভাব সবসময়ই সমাজে বিদ্যমান ছিলো। না হলে এই বিংশ শতাব্দীতে এসেও প্রাচীণ ধর্মগুলো স্রেফ মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে এভাবে টিকে থাকে কিভাবে? এখানেই হয়ত সামাজিক বিবর্তনবাদের তত্ত্বগুলো গুরুত্বপূর্ণ। এটা মনে করা ভুল হবে না যে, 'বিশ্বাস' ব্যাপারটা মানব জাতির বেঁচে থাকার পেছনে হয়তো কোন বাড়তি উপাদান যোগ করেছিল একটা সময়।  মানুষ আদিমকাল থেকে বহু সংঘাত, মারামারি এবং রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে গিয়ে আজ এই পর্যায়ে এসে পৌছেছে। একটা সময় সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করাটা ছিল মানব জাতির টিকে থাকার ক্ষেত্রে অনেক বড় নিয়ামক। যে গোত্রে বিশ্বাস ঢুকিয়ে দিতে পারা গিয়েছিল যে যোদ্ধারা সাহসের সাথে যুদ্ধ করে মারা গেলে পরলোকে গিয়ে পাবে অফুরন্ত সুখ, সাচ্ছ্বন্দ্য, হুর পরী উদ্ভিন্নযৌবনা চিরকুমারী অপ্সরা, (আর বেঁচে থাকলে তো আছেই সাহসী যোদ্ধার বিশাল সম্মান আর পুরস্কার) - তারা হয়ত অনেক সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করেছে এবং নিজেদের এই যুদ্ধাংদেহী জীন পরবর্তী প্রজন্মে বিস্তৃত করতে সহায়তা করেছে।  মুক্তমনার ইবুক ‘বিজ্ঞান ও ধর্ম – সংঘাত নাকি সমন্বয়?’ এ রিচার্ড ডকিন্সের একটি চমৎকার প্রবন্ধ অন্তর্ভুক্ত  হয়েছে 'ধর্মের উপযোগিতা'  নামে। প্রবন্ধটিতে  ডকিন্স এ নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করেছেন।  

ডকিন্সের লেখাটি থেকে একটা গুরুত্বপুর্ণ বিষয় উল্লেখ করি। মানব সভ্যতাকে অনেকে শিশুদের মানসজগতের সাথে তুলনা করেন। শিশুদের বেঁচে থাকার প্রয়োজনেই একটা সময় পর্যন্ত অভিভাবকদের সমস্ত কথা নির্দ্বিধায় মেনে চলতে হয় –এ আমরা জানি। ধরা যাক একটা শিশু চুলায় হাত দিতে গেল, ওমনি তার মা বলে উঠল - চুলায় হাত দেয় না - ওটা গরম! শিশুটা সেটা শুনে আর হাত দিল না, বরং সাথে সাথে হাত সরিয়ে নিলো। মার কথা শুনতে হবে - এই বিশ্বাস পরম্পরায় আমরা বহন করি - নইলে যে আমরা টিকে থাকতে পারবো না, পারতাম না। এখন কথা হচ্ছে - সেই ভাল মা-ই যখন অসংখ্য ভাল উপদেশের পাশাপাশি আবার কিছু মন্দ বা কুসংস্কারাচ্ছন্ন উপদেশও দেয় – ‘শনিবার ছাগল বলি না দিলে অমঙ্গল হবে’, কিংবা ‘রসগোল্লা খেয়ে অংক পরীক্ষা দিতে যেও না – গেলে গোল্লা পাবে’ জাতীয় - তখন শিশুর পক্ষে সম্ভব হয় না সেই মন্দ বিশ্বাসকে অন্য দশটা বিশ্বাস কিংবা ভাল উপদেশ থেকে আলাদা করার। সেই মন্দবিশ্বাসও বংশপরম্পরায় সে বহন করতে থাকে অবলীলায়। সব বিশ্বাস খারাপ নয়, কিন্তু অসংখ্য মন্দ বিশ্বাস হয়ত অনেক সময় জন্ম দেয় 'বিশ্বাসের ভাইরাসের'। এগুলো একটা সময় প্রগতিকে থামাতে চায়, সভ্যতাকে ধ্ব্বংস করে। যেমন, ডাইনী পোড়ানো, সতীদাহ, বিধর্মী এবং কাফেরদের প্রতি ঘৃণা,  মুরতাদদের হত্যা এগুলোর কথা বলা যায়।
 
বিশ্বাসের ভাইরাস
'বিশ্বাসের ভাইরাস' ব্যাপারটা এই সুযোগে আর একটু পরিস্কার করে নেয়া যাক। একটা মজার উদাহরণ দেই ডেনিয়েল ডেনেটের সাম্প্রতিক 'ব্রেকিং দ্য স্পেল' বইটি থেকে। আপনি নিশ্চয়ই ঘাসের ঝোপে কিংবা পাথরের উপরে কোন কোন পিপড়াকে দেখেছেন - সারাদিন ধরে ঘাসের নীচ থেকে ঘাসের গা বেয়ে কিংবা পাতরের গা বেয়ে উপরে উঠে যায়, তারপর আবার ঝুপ করে পড়ে যায় নিচে, তারপর আবারো গা বেয়ে উপরে উঠতে থাকে। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে - এই বেয়াক্কেলে কলুর বলদের মত পন্ডশ্রম করে পিপড়াটি কি এমন বাড়তি উপযোগিতা পাচ্ছে, যে এই অভ্যাসটা টিকে আছে কেন? কোন বাড়িতি উপযোগিতা না পেলে সারাদিন ধরে সে এই অর্থহীন কাজ করে যাচ্ছে কেন?  আসলে সত্যি বলতে কি - এই কাজের মাধ্যমে সে বাড়তি কোন উপযোগিতা তো পাচ্ছেই না, বরং ব্যাপারটি সম্পুর্ণ উলটো। গবেষনায় দেখা গেছে পিপড়ার মগজে  থাকা ল্যাংসেট ফ্লুক নামে এক ধরনের প্যারাসাইট এর জন্য দায়ী। এই প্যারাসাইট বংশবৃদ্ধি করতে পারে শুধুমাত্র তখনই যখন কোন গরু বা ছাগল একে ঘাসের সাথে চিবিয়ে খেয়ে ফেলে। ফলে প্যারাসাইট টা নিরাপদে সেই গরুর পেটে গিয়ে বংশবৃদ্ধি করতে পারে। পুরো ব্যাপারটাই এখন জলের মত পরিস্কার - যাতে পিপড়াটা কোন ভাবে গরুর পেটে ঢুকতে পারে সেই দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য ঘাস বেয়ে তার উঠা নামা। আসলে ঘাস বেয়ে উঠা নামা পিপড়ের জন্য কোন উপকার করছে না বরং ল্যাংসেট ফ্লুক কাজ করছে এক ধরনের ভাইরাস হিসবে - যার ফলশ্রুতিতে পিপড়ে বুঝে হোক, না বুঝে তার দ্বারা অযান্তেই চালিত হচ্ছে। আমাদের দীর্ঘদিনের জমে থাকা প্রথাগত বিশ্বাসের 'ভাইরাসগুলোও' কি আমাদের সময় সময় এভাবে আমাদের অযান্তেই বিপথে চালিত করে না কি? আমরা আমাদের বিশ্বাস রক্ষার জন্য প্রাণ দেই, বিধর্মীদের হত্যা করি, টুইন টাওয়ারের উপর হামলে পড়ি, সতী নারীদের পুড়িয়ে আত্মতৃপ্তি পাই, বেগানা মেয়েদের পাত্থর মারি ...। 


ছবিঃ ল্যাংসেট ফ্লুক  নামের প্যারাসাইটের কারণে পিপড়ের মস্তিস্ক আক্রান্ত হয়ে পড়ে, তখন পিপড়ে কেবল চোখ বন্ধ করে পাথরের গা বেয়ে উঠা নামা করে। ধর্মীয় বিশ্বাসগুলোও কি মানুষের জন্য একেকটি প্যারাসাইট?

ধর্মগ্রন্থের যে অংশগুলোতে জিহাদের কথা আছে (২:২১৬, ২: ১৫৪), উদ্ভিন্নযৌবনা হুরীদের কথা আছে (৫২: ১৭-২০, ৪৪: ৫১-৫৫, ৫৬:২২), ‘মুক্তা সদৃশ’ গেলমান দের কথা আছে (৫২:২৪) সে সমস্ত ‘পবিত্র বাণী’গুলো ছোটবেলা থেকে মাথায় ঢুকিয়ে দিয়ে কিংবা বছরের পর বছর সৌদি পেট্রোডলারে গড়ে ওঠা মাদ্রাসা নামক আগাছার চাষ করে  বিভিন্ন দেশে তরুণ সমাজের কিছু অংশের মধ্যে এক ধরণের ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ তৈরি  করা হয়েছে; ফলে এই ভাইরাস আক্রান্ত জিহাদীরা স্বর্গের ৭২ টা হুর-পরীর আশায় নিজের বুকে বোমা বেঁধে আত্মাহূতি দিতেও আজ দ্বিধাবোধ করে না, ইহুদি, কাফের নাসারাদের হত্যা করে ‘শহীদ’ হতে কার্পন্যবোধ করে না।  ল্যান্সফ্লুক প্যারাসাইটের মত তাদের মনও কেবল একটি বিশ্বাস দিয়ে চালিত –  অমুসলিম কাফেরদের হত্যা করে সারা পৃথিবীতে ইসলাম কায়েম করতে হবে, আর পরকালে পেতে হবে আল্লাহর কাছ থেকে উদ্ভিন্নযৌবণা আয়তলোচনা হুর-পরীর লোভনীয় পুরস্কার। তারা ওই ভাইরাস আক্রান্ত পিপড়ের মত  হামলে পড়ছে  কখনো টুইন টাওয়ারে, কখনো  রমনার বটমূলে কিংবা তাজ হোটেলে।   

কিভাবে বিশ্বাসের ক্ষতিকর ভাইরাসগুলো প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে সঞ্চালিত হয়, তা বৈজ্ঞানিকভাবে বুঝতে হলে আমাদের জানতে হবে আধুনিক মিম তত্ত্বকে। মিম নামের পরিভাষাটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন জীববিজ্ঞানী রিচার্ড ডকিন্স ১৯৭৬ সালে, তার বিখ্যাত বই ‘দ্য সেলফিশ জিন’-এ।  আমরা তো জিন-এর কথা ইদানিং অহরহ শুনি।  জিন হচ্ছে মিউটেশন, পুনর্বিন্যাস ও শরীরবৃত্তিক কাজের জন্য আমাদের ক্রোমোজমের ক্ষুদ্রত্তম অভিবাজ্য একক। সহজ কথায়,  জিন জিনিসটা হচ্ছে শারীরবৃত্তীয় তথ্যের অখন্ড একক যা বংশগতীয় তথ্যকে এক প্রজন্ম থেকেপরবর্তী প্রজন্মে ছড়িয়ে দেয়। জিন যেমন আমাদের শরীরবৃত্তিয় তথ্য বংশ পরম্পরায় বহন করে, ঠিক তেমনি সাংস্কৃতিক তথ্য বংশপরম্পরায় বহন করে নিয়ে যায় ‘মিম’। কাজেই ‘মিম’ হচ্ছে আমাদের ‘সাংষ্কৃতিক তথ্যের একক’, যা ক্রমিক অনুকরণ বা প্রতিলিপির মধ্যমে একজনের মন থেকে মনান্তরে ছড়িয়ে পড়ে, ঠিক যেভাবে শারীরবৃত্তীয় তথ্যের একক জিন ছড়িয়ে পড়ে এক শরীর থেকে অন্য শরীরে। যে ব্যক্তি মিমটি বহন করে তাদের মিমটির ‘হোস্ট’ বা বাহক বলা যায়। ‘মেমেপ্লেক্স’ হল একসাথে বাহকের মনে অবস্থানকারী পারষ্পরিক সম্পর্কযুক্ত একদল ’মিম’, । কোন বিশেষ ধর্মীয় বিশ্বাস,  রীতি-নীতি, কোন দেশীয় সাংষ্কৃতিক বা কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শ –এগুলো সবই মেমেপ্লেক্সের উদাহরণ। সুসান ব্ল্যাকমোর তার ‘মিম মেশিন’ বইয়ে মেমেপ্লেক্সের অনেক আকর্ষনীয় উদাহরণ হাজির করেছেন। সুসান ব্ল্যাকমোর মনে করেন জিন এবং মিমের সুগ্রন্থিত সংশ্লেষই মানুষের আচার ব্যবহার, পরার্থতা, যুদ্ধাংদেহী মনোভাব, রিতী-নীতি কিংবা কুসংস্কারের অস্তিত্বকে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে।  ‘বিজ্ঞান ও ধর্ম – সংঘাত নাকি সমন্বয়?’ ই-বইটিতে দিগন্ত সরকার ধর্মের উৎস সন্ধানে নামের বাংলা প্রবন্ধটিতে মিমবিন্যাসের আলোকে ধর্মের উৎপত্তির ব্যাখ্যা দিয়েছেন, যা মুলতঃ ডকিন্স এবং সুসান ব্ল্যাকমোরের মিম নিয়ে আধুনিক চিন্তাধারারই অনিন্দ্যসুন্দর প্রকাশ।   

কোন সাংস্কৃতিক উপাদান কিংবা কোন বিশেষ ধর্মীয় বিশ্বাস কিভাবে মিমের মাধ্যমে জণপুঞ্জে  ছড়িয়ে পড়ে? মানুষের মস্তিস্ক এক্ষেত্রে আসলে কাজ করে কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার যেভাবে কাজ করে অনেকটা সেরকমভাবে।  আর মিমগুলো হচ্ছে কম্পিউটারের হার্ডওয়্যারের মধ্যে ইন্সটল্ড সফটওয়্যার যেন। যতক্ষণ পর্যন্ত এই সফটওয়্যার গুলো ভালমত চলতে থাকে ততক্ষণ তা নিয়ে আমাদের কোন চিন্তা থাকে না। কিন্তু কখনো কখনো কোন কোন ডাউনলোড করা ইন্সটল্ড সফটওয়্যারগুলো ভাল মানুষের (নাকি ‘ভাল মিমের’ বলা উচিৎ) ছদ্মবেশ নিয়ে ‘ট্রোজান হর্স’ হয়ে ঢুকে পড়ে। এরাই আসলে বিশ্বাসের ক্ষতিকর ভাইরাসগুলো। এরা সূঁচ হয়ে ঢুকে, আর শেষ পর্যন্ত যেন ফাল হয়ে বেরোয়। যতক্ষণে এই ভাইরাসগুলোকে সনাক্ত করে নির্মূল করার ব্যবস্থা নেয়া হয় – ততক্ষণে আমাদের হার্ডওয়্যারের দফা রফা সাড়া।  এই বিশ্বাসের ভাইরাসের বলি হয়ে প্রাণ হারায় শত সহস্র মানুষ – কখনো নাইন-ইলেভেনে, কখনো বা বাবড়ি মসজিদ ধ্বংসে কখনো বা তাজ হোটেলে গোলাগুলিতে। Viruses of the Mind শীর্ষক একটি গবেষণাধর্মী প্রবন্ধে অধ্যাপক রিচার্ড ডকিন্স দেখিয়েছেন কিভাবে কম্পিউটার ভাইরাসগুলোর মতই আপাতঃ মধুর ধর্মীয় শিক্ষাগুলো কিভাবে সমাজের জন্য ট্রোজান হর্স কিংবা ওয়ার্ম ভাইরাস হিসেবে কাজ করে তিলে তিলে এর কাঠামোকে ধ্বংস করে ফেলতে চায়। আরো বিস্তৃতভাবে জানবার জন্য পাঠকেরা পড়তে পারেন ২০০৪ সালে রিচার্ড ব্রডির লেখা ‘Virus of the Mind: The New Science of the Meme’ নামের বইটি। এ বইটি থেকে বোঝা যায় ভাইরাস আক্রান্ত মস্তিস্ক কি শান্তভাবে রবোটের মত ধর্মের আচার আচরণগুলো নির্দ্বিধায় পালন করে যায় দিনের পর দিন, আর কখনো সখনো বিধর্মী নিধনে উন্মত্ত হয়ে ঊঠে; একসময় দেখা দেয় জিহাদ  কিংবা ক্রুসেডের মহামারী।  

auto
ছবিঃ ভাইরাস অব মাইন্ড - রিচার্ড ব্রডি
 
ভাইরাস আক্রান্ত মনন
ভাইরাস আক্রান্ত মন-মানসিকতার উদাহরণ আমাদের চারপাশেই আছে ঢের।  কিছু উদাহরণ তো দেয়াই যায়।  এই ধরণের ভাইরাস-আক্রান্ত মননের সাথে বিতর্ক করার অভিজ্ঞতা আমার খুবই তিক্ত। তার কিছু কিছু বর্ণনা আমি আমার ‘নৈতিকতা কি কেবল বেহেস্তে যাওয়ার পাসপোর্ট’ সহ আগের বেশ কিছু প্রবন্ধে রেখেছি। আপনি যত ভাল যুক্তি দেন না কেন, পদার্থবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, নৃতত্ত্ব এবং সমাজবিজ্ঞান থেকে যত আধুনিক এবং অথেন্টিক গবেষণারই উল্লেখ করুন না কেন, তারা চির আরাধ্য ধর্মগ্রন্থকে মাথায় করে রাখবেন আর আপনার প্রতি গালি গালাজের বন্যা বইয়ে দেবে। এই ধরণের অভিজ্ঞতা শুধু আমার নয়, বোধ হয় অনেক লেখকদেরই আছে। নন্দিনী হোসেন মুক্তমনার উপরে উল্লিখিত ইবুকটির জন্য একটি চমৎকার লেখা লিখেছেন – ‘পুরুষ রচিত ধর্মে বিকলাংগ নারী’। লেখাটি মুক্তমনায় প্রকাশের পর ইন্টারনেটে গলাবাজি করা এক অতিবিশ্বাসী ‘মডারেট মুসলিম’-এর আঁতে ঘা লেগে গেলো। তিনি একটি ইসলামী সাইটে হর হর করে একটি লেখা লিখে ফেললেন –‘নন্দিনীও একাধিক স্বামী চান’ শিরোনামে। অথচ নন্দিনী কোথাও একাধিক স্বামী চাওয়ার কথা লেখেননি; ধর্মগ্রন্থ থেকে পুরূষ এবং নারীর মধ্যকার অসাম্য এবং বিভেদ সৃষ্টিকারী কিছু আয়াতের উল্লেখ করেছিলেন মাত্র, তাও একেবারেই মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে। এর মধ্যে স্বামীর স্ত্রীকে প্রহারের অধিকার, স্বমীর নির্দ্বিধায় তালাকের অধিকার, দাস-দাসী উপভোগের অধিকার, উত্তরাধিকার আইনে নারীকে বঞ্চিত করা, সাক্ষীর ক্ষেত্রে দুইজন নারী একজন পুরুষের সমান বলা সহ বিভিন্ন বিষয় আছে। ব্যাস ওই ধার্মিক ভদ্রলোক এবং তার পোষ্য ইসলামিক সাইটের মডারেটর বলা শুরু করলেন নন্দিনীও একাধিক স্বামী চান। যুক্তির বলিহারি বটে। শুধু তাই নয়, উদ্ভট রিসার্চ থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন, নন্দিনীর বাবা মা দুই ধর্মের, তাদের মধ্যে পারিবারিক সমস্যা ছিলো – তাই নন্দিনী এগুলো লিখছে! নন্দিনী অবশ্য প্রতিবাদ করেছেন তার সাইটে- বলেছেন এগুলো ডাহা মিথ্যে কথা। বলেছেন, ‘কারো ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে লিখবার আগে ভাল করে জেনে নেওয়া ভাল’। কিন্তু আমার প্রশ্ন তা নয়, আমার প্রশ্ন হল – নন্দিনী তো লেখার মাধ্যমে কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেননি, ধর্মগ্রন্থের কয়েকটি আয়াতকে কেবল সমালোচনার দৃষ্টিতে দেখেছেন মাত্র। অথচ ওই অতি বিশ্বাসী ভদ্রলোক ধর্মের সমালোচনা সইতে না পেরে মাত্রাজ্ঞান হারিয়ে নন্দিনীকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা শুরু করে দিলেন। শুধু নন্দিনীকে আক্রমণ করেই ক্ষান্ত হলেন না, তার বাবা মা চোদ্দগুষ্টি পর্যন্ত চলে গেলেন। এই হচ্ছে ধার্মিকদের তথাকথিত মূল্যবোধ। ভাবখানা যেন, যুক্তি কন্ডন করতে না পেরে ব্যক্তিগত আক্রমণ করলেই তার মত প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে আর কি। ওই ‘ভদ্রলোক’কে কি করে বোঝানো যাবে যে, নন্দিনীর বাবা-মার মধ্যে যদি সমস্যাও থেকে থাকেও, সেটা নন্দিনী ইসলামের যে সমস্যাগুলোর কথা বর্ণনা করেছে তা খন্ডন করার জন্য যথেষ্ট নয়, বরং হাস্যকর রকমের অপ্রসঙ্গিক এবং খেলো। ওই ভদ্রলোক ধর্মের নেশায় এমনই বুঁদ হয়ে গিয়েছিলেন যে, তিনি লেখার জবাব দিতে গিয়ে যে অপ্রাসঙ্গিকভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন, সেই বোধটুকুও তার ছিলো না। বোঝা যায়, ভদ্রলোকের মাথা আসলে পুরোটাই ভাইরাস আক্রান্ত।  

ওই ‘মডারেট’ ভদ্রলোক হয়ত ভাইরাস আক্রান্ত মননের খুব ছোট উদাহরণ। কিন্তু ভাইরাস আক্রান্ত মননের  চরম উদাহরণগুলো হাজির করলে বোঝা যাবে কিভাবে ধরণের মানসিকতাগুলো সমাজকে পঙ্গু করে দেয়, কিংবা কিভাবে সমাজের প্রগতিকে থামিয়ে দেয় ।  এর অজস্র উদাহরণ সাড়া পৃথিবী জুড়ে পাওয়া যাবে। কিছু প্রাচীণ সভ্যতার ইতিহাস থেকে দেখা যায়, যখন কোন নতুন প্রাসাদ কিংবা ইমারত তৈরি করা হত, তার আগে সেই জায়গায় শিশুদের জীবন্ত কবর দেওয়া হত - এই ধারণা থেকে যে, এটি প্রাসদের ভিত্তি মজবুত করবে। অনেক আদিম সমাজেই বন্যা কিংবা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কুমারী উৎসর্গ করার বিধান ছিল; কেউ কেউ সদ্যজন্মলাভ করা শিশুদের হত্যা করত, এমনকি খেয়েও ফেলত। কোন কোন সংস্কৃতিতে কোন বিখ্যাত মানুষ মারা গেলে অন্য মহিলা এবং পুরুষদেরও তার সাথে জীবন্ত কবর দেওয়া হত, যাতে তারা পরকালে গিয়ে পুরুষটির কাজে আসতে পারে। ফিজিতে ‘ভাকাতোকা’ নামে এক ধরনের বিভৎস রীতি প্রচলিত ছিল যেখানে একজনের হাত-পা কেটে ফেলে তাকে দেখিয়ে দেখিয়ে সেই কর্তিত অংগগুলো খাওয়া হত। আফ্রিকার বহু জাতিতে হত্যার রীতি চালু আছে মৃত-পূর্বপুরুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের উদ্দেশ্য। ভারতে সতীদাহের নামে হাজার হাজার মহিলাদের হত্যা করার কথা তো  সবারই জানা। এগুলো সবই মানুষ করেছে ধর্মীয় রীতি-নীতিকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে, অদৃশ্য ঈশ্বরকে তুষ্ট করতে গিয়ে। এধরনের 'ধর্মীয় হত্যা' সম্বন্ধে আরো বিস্তৃতভাবে জানবার জন্য ডেভিড নিগেলের 'Human Sacrifice: In History And Today' বইটি পড়া যেতে পারে।  এগুলো সবই সমাজে ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ নামক আগাছার চাষ ছাড়া আর কিছু নয়।

অন্ধবিশ্বাস নামক ভাইরাসগুলো কিভাবে সন্ত্রাসবাদী তৈরীর কারখানা হিসেবে ব্যবহৃত হয় – তার কিছু উদাহরণ আমি রেখেছি আমার ‘নৈতিকতা কি কেবল বেহেস্তে যাওয়ার পাসপোর্ট’ নামের একটি প্রবন্ধে।  প্রতিটি ধর্মগন্থের মত কোরানেও বেশ কিছু ভাল ভাল কথাবার্তা আছে যেগুলো নিয়ে ইসলামিস্টরা যারপর নাই গর্ববোধ করে।  যেমন, ধর্মে কোন জবরদস্তি নেই (২ : ২৫৬),  তোমার ধর্ম তমার কাছে, আমার ধর্ম আমার (১০৯ : ৬), এমনকি কোরানের নির্দেশ আছে শত্রুর প্রতি ভাল ব্যবহার করার (২ : ৮৩) ইত্যাদি।  কিন্তু সেই কোরানেই আবার আছে - যেখানেই অবিশ্বাসীদের পাওয়া যাক তাদের হত্যা করতে (২:১৯১, ৯:৫), তাদের সাথে সংঘাতে লিপ্ত হতে, কঠোর ব্যবহার করতে (৯:১২৩), আর যুদ্ধ করে যেতে (৮:৬৫)। কোরাণ শেখাচ্ছে বিধর্মীদের অপদস্ত করতে আর তাদের উপর জিজিয়া কর আরোপ করতে (৯:২৯)। কোরাণ ইহুদী এবং নাসারাদের সাথে বন্ধুত্বটুকু করতে পর্যন্ত নিষেধ করছে (৫:৫১), এমনকি নিজের পিতা বা ভাই যদি আবিশ্বাসী হয় তাদের সাথে সম্পর্ক না রাখতে উদ্বুদ্ধ করছে (৯:২৩, ৩:২৮) ইত্যাদি।

কোরানের পরস্পরবিরোধিতার এর চেয়ে ভাল নমুনা আর কি হতে পারে। কোরান কেন প্রতিটি ধর্মগ্রন্থই ত আসলে এরকম। ভালমানুষেরা ভাল ভাল বানীগুলো থেকে ভালমানুষ হবার অনুপ্রেরনা পায়, আবার সন্ত্রাসবাদীরা ভায়োলেন্ট ভার্সগুলো থেকে অনুপ্রেরণা পায় সন্ত্রাসী হবার।  সেজন্যই তো ধর্মগ্রন্থগুলো –একেকটি ট্রোজান হর্স – ছদ্মবেশী ভাইরাস! কি করে হলফ করে বলা যাবে যে ধর্মগ্রন্থ থেকে পাওয়া নীচের ভাইরাসরূপী আয়াতগুলো সত্যই জিহাদী সৈনিকদের সন্ত্রাসবাদে উৎসাহিত করছে না ?

তোমাদের উপর যুদ্ধ ফরয করা হয়েছে... (২: ২২১৬ )।
আল্লাহর জন্য যুদ্ধ করতে থাকুন, আপনি নিজের সত্তা ব্যতীত অন্য কোন বিষয়ের যিম্মাদার নন! আর আপনি মুসলমানদেরকে উৎসাহিত করতে থাকুন (৪ : ৮৪)।
হে মুমিণগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না; তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ্ জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না (৫: ৫১)।
যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিণকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতি গ্রস্ত (৩:৮৫ )।
আর তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক যতক্ষণ না ভ্রান্তি শেষ হয়ে যায়; এবং আল্লাহর সমস্ত হুকুম প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় (৮:৩৯)।
তোমরা যুদ্ধ কর আহলে-কিতাবের ঐ লোকদের সাথে, যারা আল্লাহ্ ও রোজ হাশরে ঈমান রাখে না, আল্লাহ্ ও তাঁর রসূল যা হারাম করে দিয়েছেন তা হারাম করে না এবং গ্রহণ করে না সত্য ধর্ম, যতক্ষণ না করজোড়ে তারা জিযিয়া প্রদান করে (৯:২৯)।
অত:পর যখন তোমরা কাফেরদের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হও, তখন তাদের গর্দার মার, অবশেষে যখন তাদেরকে পূর্ণরূপে পরাভূত কর তখন তাদেরকে শক্ত করে বেধে ফেল। অত:পর হয় তাদের প্রতি অনুগ্রহ কর, না হয় তাদের নিকট হতে মুক্তিপণ লও। ... যারা আল্লাহর পথে শহীদ হয়, আল্লাহ্ কখনই তাদের কর্ম বিনষ্ট করবেন না (৪৭:৪) ।
অতএব, তাদের মধ্যে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহর পথে হিজরত করে চলে আসে। অত:পর যদি তারা বিমুখ হয়, তবে তাদেরকে পাকড়াও কর এবং যেখানে পাও হত্যা কর। তাদের মধ্যে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না এবং সাহায্যকারী বানিও না (৪:৮৯)।
আর তাদেরকে হত্যা কর যেখানে পাও সেখানেই এবং তাদেরকে বের করে দাও সেখান থেকে ... (২:১৯১)
আর তোমরা তাদের সাথে লড়াই কর, যে পর্যন্ত না ফেতনার অবসান হয় এবং আল্লাহ্র দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হয় (২:১৯৩)।
আমি কাফেরদের মনে ভীতির সঞ্চার করে দেব| কাজেই গর্দানের উপর আঘাত হান এবং তাদেরকে কাট জোড়ায় জোড়ায় (৮:১২)।
অত:পর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে মুশরিকদের হত্যা কর যেখানে তাদের পাও, তাদের বন্দী কর এবং অবরোধ কর| আর প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের সন্ধানে ওঁৎ পেতে বসে থাক (৯:৫)।
যদি বের না হও, তবে আল্লাহ্ তোমাদের মর্মন্তুদ আযাব দেবেন এবং অপর জাতিকে তোমাদের স্খলাভিষিক্ত করবেন (৯:৩৯)...ইত্যাদি।

 
ধর্মবিশ্বাসীরা জোর গলায় বলেন,  কোরাণ কখনো সন্ত্রাসবাদে কাউকে উৎসাহিত করে না, কাউকে আত্মঘাতী বোমা হামলায় প্ররোচিত করে না, ইত্যাদি। এটা সত্যি সরাসরি হয়ত কোরানে বুকে পেটে বোমা বেধে কারো উপরে হামলে পড়ার কথা নেই;  কিন্তু এটাও তো ঠিক যে, কোরাণ খুললেই পাওয়া যায় যে - যারা আল্লাহর পথে শহীদ হয়, আল্লাহ্ কখনই তাদের কর্ম বিনষ্ট করবেন না (৪৭:৪), কোরাণে বলা হয়েছে - আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়, তাদেরকে তুমি কখনো মৃত মনে করো না (৩:১৬৯); কিংবা বলা হয়েছে – যদি আল্লাহর পথে কেউ যুদ্ধ করে মারা যায় তবে তার জন্য রয়েছে জান্নাত (৯:১১১) ।

আর আল্লাহর পথে শহীদদের জন্য জান্নাতের পুরস্কার কেমন হবে?  আল্লাহ কিন্তু এ ব্যাপারে খুব পরিস্কার –

তথায় থাকবে আনতনয়ন রমনীগন, কোন জিন ও মানব পূর্বে যাদের ব্যবহার করেনি (৫৫:৫৬)।
তাদের কাছে থাকবে নত, আয়তলোচনা তরুণীগণ, যেন তারা সুরক্ষিত ডিম (৩৭:৪৮-৪৯); সুশুভ্র (wine) যা পানকারীদের জন্যে সুস্বাদু (৩৭: ৪৬)।
আমি তাদেরকে আয়তলোচনা হুরদের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করে দেব (৫২:২...
তাঁবুতে অবস্খানকারিণী হুরগণ (৫৫:৭২); প্রবাল ও পদ্মরাগ সদৃশ রমণীগণ (৫৫:-৫৮)।
উদ্যান, আঙ্গুর, পূর্ণযৌবনা (full-breasted) তরুণী এবং পূর্ণ পানপাত্র (৭৮: ৩৩-৩৪)।
তথায় থাকবে আনতনয়না হুরগণ, আবরণে রক্ষিত মোতির ন্যায়, (৫৬: ২২-২৩)।
আমি জান্নাতী রমণীগণকে বিশেষরূপে সৃষ্টি করেছি, অত:পর তাদেরকে করেছি চিরকুমারী (৫৬:৩৫-৩)।
 
শুধু আয়তলোচনা চিরকুমারীদের লোভ দেখিয়েই আল্লাহ ক্ষান্ত হননি, ব্যবস্থা রেখেছেন গেলমানদেরও ।
সুরক্ষিত মোতিসদৃশ কিশোররা তাদের খেদমতে ঘুরাফেরা করবে (৫২:২৪)।

 
বেহেস্তে সুরা-সাকী-হুর-পরীর এমন অফুরন্ত ভান্ডারের গ্রাফিক বর্ণনা দেখে দেখে আমারই তো শহীদ হতে মন চায়! এ যদি বিশ্বাসের ভাইরাসের সার্থক উদাহরণ না হয়, তবে আর ভাইরাস বলব কাকে, বলুন?

আজকে মুম্বাইয়ে সন্ত্রাসবাদের যে তুঘলকি কান্ড সংগঠিত হয়ে গেল, তা বিশ্বাসের ভাইরাসের রোগ ছড়ানোর জলজ্যান্ত উদাহরণ। তবে একটি জিনিস কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না। কাশ্মিরি জনগনের উপর ভারতীয় সেনাবাহিনীর লাগাতার অত্যাচার, বাবড়ি মসজিদ ধবংস কিংবা গুজরাটে সাম্প্রতিক সময়ে মুসলিমদের উপর যে ধরণের অত্যাচারের স্টিমরোলার চালানো হয়েছে তা ভুলে যাবার মত বিষয় নয়। মুসলিমরা ভারতের জনগনের প্রায় ১৪ শতাংশ। অথচ তারাই ভারতে সবচেয়ে নিপিরীত, অত্যাচারিত এবং আর্থসামাজিক দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়া এক জনগোষ্ঠি। এ বাস্তবতাটুকুও বিশ্লেষনের সময় মাথায় রাখতে হবে।
 
ভাইরাস প্রতিষেধক
তাহলে এই সন্ত্রাসের ভাইরাস প্রতিরোধ করা যায় কি করে? ভাইরাস যে প্রতিরোধ করতেই হবে – এ নিয়ে কারো সন্দেহ নেই।  কারণ এ ভাইরাস প্রতিরোধ না করতে পারলে এ ‘সভ্যতার ক্যান্সারে’ রূপ নিয়ে আমাদের সমস্ত অর্জনকে ধ্বংস করবে। একই কথা ডঃ বিপ্লব পাল বলেছেন একটু অন্যভাবে তার সাম্প্রতিক প্রবন্ধে -

রাষ্ট্র, পরিবার, সমাজ ইত্যাদির ধারনা গুলোর বৈপ্লবিক পরিবর্ত্তন হচ্ছে-তখন মধ্যযুগীয় ধর্মগুলির আত্মিক উন্নতির কিছু বানী ছাড়া আর কিছুই আমাদের দেওয়ার নেই। সেই আত্মিক উন্নতির নিদান ধর্ম ছাড়াও বিজ্ঞান থেকেই পাওয়া যায়-তবুও কেও আত্মিক উন্নতির জন্য ধার্মিক হলে আপত্তি করার কিছু নেই। কিন্তু ধর্মপালন যখন তার হিন্দু বা মুসলমান পরিচয়বোধকে উস্কে দিচ্ছে-সেটা খুব ভয়ঙ্কর। ধর্ম থেকে সেই বিষটাকে আলাদা করতে না পারলে, এগুলো আমাদের সভ্যতার ক্যান্সার হয়ে আমাদের সমস্ত অর্জনকে ধ্বংস করবে।

অর্থাৎ, এ ভাইরাসকে না থামিয়ে বাড়তে দিলে একসময় সারা দেহটাকেই সে অধিকার করে ফেলবে। আমার প্রবন্ধের উপরের দিকে দেয়া ল্যান্সফ্লুক প্যারাসাইট আক্রান্ত পিপড়ের উদাহরণের মত মানবজাতিও একসময় করে তুলবে নিজেদের আত্মঘাতি, মড়ক লেগে যাবে সমাজে।  তাহলে এই সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় কি? এই ভাইরাস সংক্রমণ থেকে বাঁচবার জন্য গড়ে তোলা দরকার এন্টিবডি, সহজ কথায় তৈরি করা দরকার ভাইরাস প্রতিষেধকের।  আর এই সাংস্কৃতিক ভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে পারে আমার–আপনার মত বিবেকসম্পন্ন প্রগতিশীল মানুষেরাই। আমি কিন্তু আসলেই মনে করি - এই এন্টিবডি তৈরি করতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে আমাদের মুক্তমনার মত বিজ্ঞান মনস্ক, যুক্তিবাদী সাইটগুলো; ভুমিকা রাখতে পারে বিশ্বাসের নিগড় থেকে বেরুনো মানবতাবাদী গ্রুপগুলো এবং মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারী ব্যক্তিবর্গ। এই এন্টিবডির কারণেই বিশ্বাসের ভাইরাস থেকে রোগমুক্তি ঘটেছে আমাদের শিক্ষানবিসের, আর রোগমুক্তির সাম্প্রতিক উদাহরণ তো পাবনার রানা ফারুকের মূল্যবান চিঠিটি।  আমরা যে ভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরি করে রোগমুক্তি ঘটাতে কিছুটা হলেও পারছি, এ বিচ্ছিন্ন উদাহরণগুলোই তার প্রমাণ।  কিন্তু তারপরও বলতে হবে সন্ত্রাসবাদের সাংগঠনিক শক্তিকে মোকাবেলা করার জন্য দরকার আরো বৃহৎ কিছুর – দরকার সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার, দরকার খোলস ছেড়ে বেরুনোর মত সৎ সাহসের, দরকার আমার-আপনার সকলের সামগ্রিক সদিচ্ছার। আপনার আমার এবং সকলের আলোকিত প্রচেষ্টাতেই হয়ত আমারা একদিন সক্ষম হব সমস্ত বিশ্বাসনির্ভর ‘প্যারাসাইটিক’ ধ্যান ধারণাগুলোকে তাড়াতে, গড়ে তুলতে সক্ষম হব বিশ্বাসের ভাইরাসমুক্ত নিরোগ সমাজের।

দেখুন – ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ নিয়ে ডেনিয়েল ডেনেটের একটি চমৎকার আলোচনা (ইউটিউবের সৌজন্যে)
 

 


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

বিশ্বাসের ভাইরাস এত অল্পমানুষকে কেন যে আক্রমন করে সেটাই মনে হয় আমার চিন্তার বিষয়।

অভিজিৎ এর ছবি

কারণ পাবলিকের এন্টিবডি বোধ হয় এখনো স্ট্রং হাসি

আরেকটা জিনিস - টেরোরিস্টরা এখনো সেই পুরাতন বন্দুক এবং আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে। কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছেন ভবিষ্যতে যদি মানববিধ্বংসী অস্ত্র নিউক বোমা, জৈবঅস্ত্র ইত্যাদি টেরোরিস্টদের হাতে সহজলভ্য হয়ে ঊঠে তখন কি অবস্থা হবে? বিশ্বাসের ভাইরাস রূপ নিবে এইচআইভির মত মরণ ভাইরাসে!



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

চিন্তা করতেও ভয় পাই।

সৌরভ এর ছবি

সেই ভাল মা-ই যখন অসংখ্য ভাল উপদেশের পাশাপাশি আবার কিছু মন্দ বা কুসংস্কারাচ্ছন্ন উপদেশও দেয় – ‘শনিবার ছাগল বলি না দিলে অমঙ্গল হবে’, কিংবা ‘রসগোল্লা খেয়ে অংক পরীক্ষা দিতে যেও না – গেলে গোল্লা পাবে’ জাতীয় - তখন শিশুর পক্ষে সম্ভব হয় না সেই মন্দ বিশ্বাসকে অন্য দশটা বিশ্বাস কিংবা ভাল উপদেশ থেকে আলাদা করার।

এই ব্যাপারটা কত সহজ। ধর্ম এভাবেই এসেছে। এভাবেই থেকে গেছে। অথচ প্রচন্ড শিক্ষিত মানুষকেও ধর্মের কথা আসলেই এইসব যুক্তি বুঝেও না বোঝার ভান করতে দেখি।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

অভিজিৎ এর ছবি

ঠিক কথা!



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

আলমগীর এর ছবি

লেখাটার বড় একটা দুর্বলতা হলো ধর্মীয় বিশ্বাসের বাইরে যেতে না পারা।
রাজনৈতিক বিশ্বাসও কিন্তু কম মানুষ হত্যার কারণ হয়নি।

অভিজিৎ এর ছবি

আপনি আমার প্রবন্ধটি পুরোটা বোধহয় ঠিকমত পড়েননি। আমি কিন্তু রাজনীতির ব্যাপারটা কখনোই অস্বীকার করিনি। সেজন্যই কিন্তু আমার প্রবন্ধে স্পষ্ট করে বলেছি - "কাশ্মিরি জনগনের উপর ভারতীয় সেনাবাহিনীর লাগাতার অত্যাচার, বাবড়ি মসজিদ ধবংস কিংবা গুজরাটে সাম্প্রতিক সময়ে মুসলিমদের উপর যে ধরণের অত্যাচারের স্টিমরোলার চালানো হয়েছে তা ভুলে যাবার মত বিষয় নয়। মুসলিমরা ভারতের জনগনের প্রায় ১৪ শতাংশ। অথচ তারাই ভারতে সবচেয়ে নিপিরীত, অত্যাচারিত এবং আর্থসামাজিক দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়া এক জনগোষ্ঠি। এ বাস্তবতাটুকুও বিশ্লেষনের সময় মাথায় রাখতে হবে।" রাজনীতির নিয়ামকগুলো ভাইরাসের বৃদ্ধিতে সবসময়ই অনুঘটকের ভূমিকা পালন করেছে। এই অনুঘটকের জন্যই বিশ্বাসীরা সাড়া দুনিয়া জুড়ে একধরনের 'ইউনিভার্সাল ব্রাদারহুড' অনুভব করে। সুদূর প্যালেস্টাইনে কি হল - তাকে পুঁজি করে বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশে জল ঘোলা করা হয়। কিন্তু রাজনৈতিক এই ব্যাপারগুলো মাথায় রেখেও বলছি - ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ই টেররিজমের অন্যতম প্রধান উৎস। এ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তুলে ধরাই ছিলো আমার প্রবন্ধের মূল উদ্দেশ্য।



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

আলমগীর এর ছবি

পড়েই মন্তব্য করেছিলাম।
কাশ্মিরীদের উপর হামলা রাজনৈতিক হবে কেন? পুরোটাই ধর্মীয়।
আমি রাজনৈতিক বিশ্বাস বলতে সেটা বুঝাইনি। ধর্মের পর বড় বিকল্প বিশ্বাস মনে হয় হয় কমিউনিজম। এর প্রতি পৃথিবীর মানুষের ভয় কেন? আবার বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বুশব্লেয়ার দেশ দখল করে মানুষ মেরে বেড়াচ্ছে।

মুম্বাইয়ে যা হলো, তা ইসরায়েল নামক রাষ্ট্রটি বহুবছর ধরে করে আসছে। ভারত তাদের ভাল মিত্র।

শিরোনামটা যদি "ধর্ম বিশ্বাসের ভাইরাস" হতো তাহলে আমার মন্তব্যটা প্রযোজ্য হতো না। আবার যদি অপ্রাতিষ্ঠানিক হত্যা আপনার মূল ভয় হয় তাহলেও প্রযোজ্য না।

অভিজিৎ এর ছবি

ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। আমি আগেই বলেছি রাজনৈতিক ব্যাপারগুলো বিশ্বাসের ভাইরাসকে উস্কে দেয়। আর ভারত ইসরায়েলের ভাল বন্ধু হতে পারে, কিন্তু আমি মনে করি না এটা টেরোরিজমকে জাস্টিফাই করে, বা করা উচিৎ।
পড়বার জন্য এবং মন্তব্য করার জন্য অনেক ধন্যবাদ।



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

আলমগীর এর ছবি

এটা টেরোরিজমকে জাস্টিফাই করে, বা করা উচিৎ।

টেররিজমের সংজ্ঞা নিয়ে বিতর্ক আছে। আমি জাস্টিফিকিশেনের প্রশ্ন তুলিনি। কিন্তু যেটা বলতে চাই, মাওবাদীরা গেল নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার আগে কী করেছে? এখন নেপাল সরকার যদি কোমর বেধে সন্ত্রাস দমনে নেমে যায় তবে ভয় আছে। এখানে ধর্মবিশ্বাসের চেয়ে রাজনৈতিক বিশ্বাস অধিক ক্ষতির কারণ হবে।

মুম্বইয়ের ঘটনার সাথে হুবুহু মিলবে বেসলানের জিম্মি ঘটনা। সেখানে কেউ জীবন্ত বের হতে পারেনি। জিম্মি ঘটনার চেয়ে রাশার উগ্র দমননীতির সমালোচনাই বেশী হয়েছে।

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

ভারত সরকার কাশ্মীরে যা করছে সেটা কি টেরোরিজমের মধ্যে পড়ে না?
অথবা, ভারতের মুসলিমদের প্রতি যে স্টীম রোলার চালানো হয়েছিলো সেটা কি টেরোরিজমের মধ্যে পড়ে না?

ধর্মে কি আছে বা, নেই আমি সেই বিতর্কে যাচ্ছি না...যেতেও চাই না...ভারতে মুসলিমদের প্রতি যখন নিপীড়ণ হয়েছিলো সেটাও কিন্তু মুসলমানদের ধর্ম পরিচয়কে কেন্দ্র করে, তাই নয় কি? সেই নিপীড়িত মুসলমানরা জীঘাংসার পথ বেছে নেবে সেটাই স্বাভাবিক, এক্ষেত্রে ধর্মটা অনুঘটকই মাত্র। আমার সামনাসামনি কিছু কওমী মাদ্রাসার ছেলেদের সাথে কথা হয়েছিলো...; তাদের কাউকেই কিন্তু দেখিনি এই জীঘাংসার পথ সমর্থনের কারণ হিসেবে জান্নাত প্রাপ্তিকে মূল উদ্দেশ্য হিসেবে মনে করতে, বরং এদের উদ্দেশ্য ছিলো একটাই-রিভেন্জ....ধর্মটা জাস্ট একটি সাপোর্টিভ অনুঘটক মাত্র...।
সব ধর্মই প্রতিহিংসামূলক এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। নিপীড়ণই সকল প্রতিহিংসার উৎস......

শিক্ষানবিস এর ছবি

মুম্বাই হামলার প্রেক্ষিতে এমন একটা লেখাই ছিল সময়ের দাবী। বিশ্বাসের ভাইরাস বিষয়ে এই লেখার বিষয়বস্তুর সাথে পুরোপুরি একমত।
কুরআনের এই আয়াতগুলো নিয়ে আমার মধ্যে যখন সংশয় তৈরী হতো তখন কোন ইসলামী পণ্ডিতের কাছেই যেতাম। তিনি এভাবে ব্যাখ্যা করতেন,

আরে এর অধিকাংশ আয়াতই তো যুদ্ধের সময় অবতীর্ণ হয়েছে। যুদ্ধের সময় শত্রুকে কতল করার হুকুম না দিয়ে কি উপায় আছে।

কিন্তু এ ধরণের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তারা একটা বিষয় ভুলে যান। সেটা হচ্ছে, সব যুগে সকল পরিস্থিতিতে কুরআনের গ্রহণযোগ্যতার কথা চিন্তা করে অনেকেই তো এই আয়াতগুলোর বর্তমান অর্থ বের করে নিয়ে আসবেন। যেমন যেখানেই পাও শত্রুকে কতল করো, এই আয়াতের সাম্প্রতিক অর্থ তো কেউ অন্যভাবেও করতে পারে। করতে যে পারে এতে কোন সন্দেহ নেই। একটা বাস্তব উদাহরণ দেই:
আমাদের গ্রামের বাড়ি ভালুকা (ময়মনসিংহ জেলা)। ভালুকার এক প্রত্যন্ত গ্রামে ঘুরতে গিয়েছিলাম। অর্থ-পরিচিত এক বাড়িতে ঢুকে দেখি কি এক মাদ্রাসার ক্যালেন্ডার টানানো। এই ক্যালেন্ডারে কুরআনের এই জঙ্গিবাদী বিকৃত রুচির আয়াতগুলো উল্লেখ করা। একেক পাতায় একেকটি আয়াত আর সাথে ছবি। কিসের ছবি জানেন? আধুনিক অস্ত্র-শস্ত্রের ছবি। যেমন কামান, মেশিনগান ইত্যাদি। খবর নিয়ে জানতে পারলাম; এই মহল্লার সবাই নাকি জানে ঐ মাদ্রাসায় জঙ্গি প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। ঐ মাদ্রাসার প্রধান হুজুর নাকি আফগানিস্তানে তালিবানদের হয়ে যুদ্ধ করেছেন; ১৫০ লোকের কমান্ডারও ছিলেন। ১৫০ লোকের কমান্ডার থাকার এই বিষয়টা নিয়ে গ্রামের সবাই গর্বই করে। দেখলাম গ্রামের সবাই বিষয়টা জানে। কিন্তু আমি মাদ্রাসার খোঁজ পাইনি। সে সময় যথেষ্ট খোঁজ নেয়ার সাহসও হয়নি। উল্লেখ্য, তখনই আমি মুসলিম ছিলাম।

আর কুরআনে যে কি পরিমাণ বিকল্প ব্যাখ্যার সুযোগ রাখা হয়েছে তা তো ইসলাম ও বিজ্ঞান বিষয়ক যেকোন লেখা পড়লেই বোঝা যায়। এ যেন উচ্চমার্গীয় সিনেমার মতো। স্ট্যানলি কুবরিক সিনেমা বানিয়ে বলতেন:

আমি সিনেমার অর্থ সম্পর্কে কিছু বলতে চাই না। সিনেমা নিজেই তার হয়ে কথা বলবে।

স্বভাবতই একই সিনেমার অনেক রকম ব্যাখ্যা বেরিয়ে আসতো। সাহিত্যের বিচারে সবগুলো ব্যাখ্যাই সঠিক। কারণ স্বয়ং নির্মাতা নিরব। মুসলিমদের দৃষ্টিতে কুরআন ও কিন্তু তাই। স্বয়ং আল্লাহ নিরব। তিনি তোমাকে চিঠি পাঠিয়ে বলেছেন বুঝে নিতে। তোমার যথেষ্ট জ্ঞান থাকলে নিজে নিজেই বুঝে নিতে পারো। আর যায় কোথায়। একেক জন একেক রকম ব্যাখ্যা বানালেন আর একই ধর্মের হাজার হাজার বিভাজন সৃষ্টি হলো। কেউই চিন্তা করে দেখলো না, এই কুরআন এক বা একাধিত মানুষের লেখা এক অসম্পূর্ণ ও ত্রুটিপূর্ণ বই। এ কারণেই মডারেট মুসলিমদের উদারনৈতিক কথা শুনে এখন হাসি পায়। আসলে মানুষ এখনও প্রতিষ্ঠিত ধর্মগুলো পালন করে, এটা আমার কাছে সবচেয়ে বড় কমেডি। আমরা এক কমেডিক ওয়ার্ল্ডে বাস করছি। এখানকার সর্বশ্রেষ্ঠ কমেডিয়ান হল উগ্র ধর্মবাদীরা। এরাই "দ্য ডার্ক নাইট" এর "জোকার"। এরাই "ডক্টর স্ট্রেঞ্জলাভ" এর "জেনারেল জ্যাক রিপার"।

অভিজিৎ এর ছবি

এ ধরণের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তারা একটা বিষয় ভুলে যান। সেটা হচ্ছে, সব যুগে সকল পরিস্থিতিতে কুরআনের গ্রহণযোগ্যতার কথা চিন্তা করে অনেকেই তো এই আয়াতগুলোর বর্তমান অর্থ বের করে নিয়ে আসবেন। যেমন যেখানেই পাও শত্রুকে কতল করো, এই আয়াতের সাম্প্রতিক অর্থ তো কেউ অন্যভাবেও করতে পারে। করতে যে পারে এতে কোন সন্দেহ নেই।

খুবই ঠিক কথা। 'যেখানেই পাও শত্রুকে কতল করো' এই ধরণের আয়াতগুলোই আসলে ইন্সলড হওয়া সফটওয়্যারের 'ম্যালাসিয়াস কোড' - লুকিয়ে থাকা ক্ষতিকর ভাইরাস। যাদের এন্টিবডি স্ট্রং কিংবা ভাইরাসের টিকা নেয়া আছে, তাদের হয়ত 'হার্ড ডিস্ক' ক্রাশ করে না, কিন্তু বিপরীত ঘটনাও আছে। আপনার মাদ্রাসার উদাহরণটিই এর বাস্তব প্রমাণ। এধরণের ভাইরাস দিয়ে মাত্র গুটি কয় ইনফেক্টেড ব্রেন নিমেষ মধ্যে কি অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে ফেলতে পারে নাইন ইলেভেন কিংবা মুম্বাইয়ের ঘটনাগুলোই তার প্রমাণ।

আমরা এক কমেডিক ওয়ার্ল্ডে বাস করছি। এখানকার সর্বশ্রেষ্ঠ কমেডিয়ান হল উগ্র ধর্মবাদীরা। এরাই "দ্য ডার্ক নাইট" এর "জোকার"। এরাই "ডক্টর স্ট্রেঞ্জলাভ" এর "জেনারেল জ্যাক রিপার"।

এই মন্তব্যের জবাব নেই! (বিপ্লব)



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

রণদীপম বসু এর ছবি

যে কোনো কিছুর উপর যুক্তিহীন বিশ্বাস একটা মানুষকে মুহূর্তেই উন্মত্ত ষাঁড়ে পরিণত করে দেয়, যার নমূনা ভুরিভুরি।
আমার কেন যেন মনে হয়, যারা এইসব বিশ্বাসের ভাইরাসগুলো সাপ্লাই দেয় এরা কিন্তু খুব ভালোভাবেই জানে যে, এসব ভুয়া। কিন্তু তাদের পশুপ্রবৃত্তি এগুলো অন্যের উপর সুকৌশলে ব্যবহার করে নিজেরা ফায়দা লুটে নেয়। আজ নয়, সেই মধ্যযুগ বা ধর্মের জন্মেতিহাসের সময়কাল থেকেই চলে আসছে তা।
যারা এসব ধ্বংসাত্বক কার্যকলাপে পুতুল হয়ে ব্যবহৃত হচ্ছে, তারা তা করছে না জেনে ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে। আর যারা ভাইরাস ছড়াচ্ছে তারাই আসল কালপ্রিট !
এইসব কালপ্রিটগুলোকে প্রতিরোধ করা না গেলে কেমনে কী হবে বুঝতে পারছি না।

চমৎকার পোস্ট। অভিনন্দন।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

রায়হান আবীর এর ছবি

পোস্টে জাঝা

=============================

আবির আনোয়ার [অতিথি] এর ছবি

ধান ভানতে আপনার এই শিবের গীত গাওয়ার দরকার ছিল না। আপনি যদি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন যে একটি বিষয়ের ভাল দিক আপনি কোন ভাবেই গ্রহন করবেন্ না তাহলে তার সব কিছুই আপনার কাছে নেতিবাচক মনে হতে বাধ্য।

অনিন্দিতা এর ছবি

চমৎকার, বিশ্লেষণমূলক সমোপযোগী পোস্ট।

কুবের [অতিথি] এর ছবি

রণদীপম বসু লিখেছেন:

আমার কেন যেন মনে হয়, যারা এইসব বিশ্বাসের ভাইরাসগুলো সাপ্লাই দেয় এরা কিন্তু খুব ভালোভাবেই জানে যে, এসব ভুয়া। কিন্তু তাদের পশুপ্রবৃত্তি এগুলো অন্যের উপর সুকৌশলে ব্যবহার করে নিজেরা ফায়দা লুটে নেয়। আজ নয়, সেই মধ্যযুগ বা ধর্মের জন্মেতিহাসের সময়কাল থেকেই চলে আসছে তা।

কিন্তু যদি এরা সত্যিই বিশ্বাস করে এইসব "ভাইরাস" গুলো সাপ্লাই করে ? ধর্মের কারনে যখনই এমন কিছু হয়, তখনিই আমরা বলি ("নাকি নিজেকে সান্তনা দেই ?") যে, ধর্ম আসলে এমন কিছু করতে বলে না, স্বার্থান্বেষী মহলরা ফায়দ লোটার জন্য এমন কিছু বলে।

এই ধারনাও খতিয়ে দেখার সময় এসেছে আজ।

জালাল এর ছবি

অভিজিৎ বাবুর সিউডোসায়েন্টিফিক সিলেক্টিভ সেকিউলারিজম মোরে ফিজিক্সের পুরাতন প্রফেসর অজয় রায়ের কথা মনে করাইয়া দেয়।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

ধর্ম মানুষেরই সৃষ্টি যদি হয় এবং ইতিহাসে তা যদি উতপাদন-সমাজ-দর্শনের সঙ্গে জড়াজড়ি করেই আবির্ভূত হয়ে থাকে, তাহলে ধর্মচিন্তাকে ভাইরাস বললে, মানবজাতির ইতিহাস ও বর্তমান অস্তিত্বকেই ভাইরাস আক্রান্ত বলতে হয়। কেবল অল্প কিছু টাইটান মানুষ তা থেকে মুক্ত?

১.

একটা প্রশ্ন আমাকে বরাবরই আমাকে উদ্বিগ্ন করে। কেন এই সব তরুন যুবকরা কেন আত্মঘাতি পথ বেছে নিচ্ছে? কেন তারা সন্ত্রাসবাদের পথ বেছে নিচ্ছে? ঘটনা তো একটা দুটো নয়, সারা বিশ্ব জুড়েই ঘটে চলেছে শত শত। শুধু মুম্বাইয়েই ২০০৫ সালের পর সন্ত্রাসবাদী ঘটনা ঘটেছে অন্ততঃ দশটি, যেগুলোর সাথে ইসলামী সন্ত্রাসবাদের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ আছে বলে মনে করা হয়।

কে মনে করে, কেন মনে করে? কখন করে আর কখন করে না? সেই প্রশ্ন কিন্তু রয়ে গেল। জনাব অভিজিতের বয়ানে ঘটনাটা থ্রিলার কাহিনীর মতো শোনালেও, এর মধ্যে যুক্তিশীল মনের অনুসন্ধান কোথায়? ২০০৫ সালের পর ভারতে আরো অনেক সন্ত্রাস ঘটেছে, যেগুলোর মুসলিম সন্ত্রাস বলে প্রতিষ্ঠিত করা হলেও সাম্প্রতিক সরকারি অনুসন্ধানে ধরা পড়েছে যে, সেগুলো হিন্দু সন্ত্রাস। এত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য কিভাবে আপনার নজর এড়িয়ে গেল?
এর পরেই তিনি চলে যাচ্ছেন মুসলিম জঙ্গিদের আচরণের পেছনে মনের ভাইরাস খুঁজতে। বলছেন,
বিশ্বাস নির্ভর সন্ত্রাসবাদ এত ব্যাপক আকারে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পরার পেছনে কোন নৃতাত্ত্বিক, মনস্তাত্ত্বিক কিংবা জীববৈজ্ঞানিক কারণ আছে কিনা তা খূজে দেখাকে আমি আসলেই এখন জরুরী মনে করি।

জাতীয়তাবাদ, প্রগতি, আধুনিকতাকে আধুনিক ধর্ম বলে অভিহিত করেছিলেন বেনেডিক্ট এন্ডারসনসহ অনেক পণ্ডিত। যুক্তিও বিশ্বাস গড়ে দেয়। যেমন, মুসলিম মাত্রই সন্ত্রাসী সম্ভাবনা রাখে এই বিশ্বাসের ভিত্তিতেই যুক্তরাষ্ট্র ওয়ার অন টেরর ঘোষণা করেছিল এবং প্রণয়ন করেছিল প্যাট্রিয়ট আইন। পুঁজিবাদের চিরস্থায়িত্বের ধারণা, ইওরোপ-শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্বের বোধও বিশ্বাসই হয়ে উঠেছিল। ফলে বিশ্বাস নির্ভর সন্ত্রাসের আলোচনায় আধুনিকতা ও প্রগতির নামের সন্তাসও আসা দরকার ছিল। অবশ্যই ধর্মীয় ফ্যাসিবাদের সঙ্গে আমাদের মোকাবেলা করতে হবে। কিন্তু তার চরিত্র ও উৎস্য না বুঝলে সেই লড়াই আত্মঘাতীয় হতে বাধ্য। অরূন্ধতি রায় তাঁর ইস্তাম্বুল বক্তৃতায় যথার্থই বলেন, ‘‘এটা কোনা কাকতাল নয় যে, ওসমানিয়া সাম্রাজ্যের যে রাজনৈতিক দলটি আর্মেনিয়দের ওপর গণহত্যা চালিয়েছিল তার নামও ছিল ‘কমিটি ফর ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস’। হিটলার এবং মুসোলিনিও ছিলেন প্রগতির ধ্বজাধারী। আমেরিকার ভিয়েতনাম ও ইরাক-আফগানিস্তান-কসোভো সবই তো ভেক ধরা গণতন্ত্র ও প্রগতির রক্তাক্ত পদচিহ্ন। আদভানীর বিজয় রথও প্রগতি ও আধুনিকতার নামেই যাত্রা করেছে।’’ তারা দেখাচ্ছে, মুসলিম ও আদিবাসীরা এই প্রগতির শত্র“। অন্যদিকে ভারত যেহারে ইসরায়েল ও আমেরিকার অক্ষে ঢুকছে, তাতে ঐ দুটি পরাশক্তির জাতবিদ্বেষের সঙ্গে ভারতীয় মুসলিম বিদ্বেষও একাকার হওয়ার মওকা পাচ্ছে। পরাশক্তি ভারত যদি সে পথে যায়, উপমহাদেশে তার বিপদ কল্পনা করাও কঠিন।
মানব জাতির ইতিহাসে আধুনিকতা, প্রগতি, জাতীয়তাবাদ ও উপনিবেশিক সভ্যতা বিস্তারের নামে যত হত্যকাণ্ড ও বীভৎসতা হয়েছে, পৃথিবীকে মানুষ তো বটেই প্রাণহীণ করবার যে বন্দোবস্ত পাকা করা হয়েছে, তার তুলনায় আপনার ভাষায় বিশ্বাসের সন্ত্রাস ছারপোকা মাত্র।

২. খেয়াল করুন, কীভাবে জঙ্গিবাদ=মুসলিম=মনস্তাত্ত্বিক-জীববৈজ্ঞানিক কারণের সমীকরণ দাঁড়াচ্ছে? কথা হচ্ছে এই মনস্তাত্ত্বিক বা জীববৈজ্ঞানিক কারণ কেন ইতিহাসের এই বিশেষ যুগে এসে জঙ্গিবাদ হয়ে উঠলো। তাও আবার সবখানে নয়, বিশেষত নিপীড়নের শিকার মুসলিম দেশগুলোতে! অন্য সময়ে বা অন্য দেশে সেসব কারণ কোথায় থাকে? যে সমাজ-রাষ্ট্র-অর্থনীতির আধারে এগুলো জন্মায় ও বেড়ে ওঠে, তার দিকে দৃষ্টি না দিয়ে নিছক জৈববৃত্তিক কারণ খোঁজাও একধরনের নির্ধারণবাদ ও বৈজ্ঞানিক মৌলবাদ। এর নামে কৌশলে জগতে অশান্তির উতস গুলোকে চিন্তার আড়ালে রাখা যায়।
বিশ্লেষণটির মধ্যে কড়কড়া বর্ণবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা রয়েছে। অন্য ধর্মের, অন্য জাতির সন্ত্রাসের বেলায় তবে কোন ফ্যাক্টর কাজ করে? কোন ফ্যাক্টর কাজ করে হিটলার-মুসোলিনী-জর্জ বুশদের ‘সেক্যুলার’ আগ্রাসন ও গণহত্যার প্রণোদনা হিসেবে? উপনিবেশিক যুগের গণহত্যাগুলোও কি জীনগত কারণে ঘটেছিল? দুঃখের কথা বুঝি পাথরকেই শোনাতে হয়। ইতিহাস বাদ, সমাজতত্ত্ব বাদ, রাষ্ট্র ও অর্থনীতিতে ভেদাভেদ-নির্যাতনের অভিজ্ঞতা বাদ। রইল কেবল মনস্তত্ব??? আর সেটাই ইতিহাসের চালক? তাহলে ইতালিয় দার্শনিক ক্রোচেই সঠিক! তিনি বলেছিলেন জগতের ইতিহাস মনের ইতিহাস। মুসোলিনি তাঁর সমর্থক হয়েছিলেন। যাহোক, সেই মনস্তত্ব কেবল মুসলিমদেরই জঙ্গি করে তোলে! বাকিরা তাহলে কোন অ্যান্টিভাইরাসের গুণে রা পেল?
৩. এরপরে বিবর্তনবাদের প্রসঙ্গও এসেছে। এই লেখকই কিন্তু তাঁর অন্য একটি লেখায় সঠিকভাবেই সমাজে বিবর্তনবাদ অচল বলে যুক্তি করেছিলেন।
৪. বিশদ বলা ধৃষ্ঠতা মনে করছি। তবে এ ধরনের একপেশে তত্ত্বায়নে যতই বৈজ্ঞানিক রেফারেন্স আসুক তা শেষপর্যন্ত বৈজ্ঞানিক মৌলবাদের টোটকার মতো শোনায় না কি?

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

বন্যা এর ছবি

ফারুক ওয়াসিফ, আপনি বলেছেন, "ধর্ম মানুষেরই সৃষ্টি যদি হয় এবং ইতিহাসে তা যদি উতপাদন-সমাজ-দর্শনের সঙ্গে জড়াজড়ি করেই আবির্ভূত হয়ে থাকে, তাহলে ধর্মচিন্তাকে ভাইরাস বললে, মানবজাতির ইতিহাস ও বর্তমান অস্তিত্বকেই ভাইরাস আক্রান্ত বলতে হয়। কেবল অল্প কিছু টাইটান মানুষ তা থেকে মুক্ত?" ... আপনার মন্তব্যটা ঠিক পরিষ্কার নয় আমার কাছে। আপনি নিজে তাহলে ধর্মকে কিভাবে দেখেন সেটা কি বলবেন? তাহলে হয়তো আপনার ব্যাখ্যাটা আরেকটু পরিষ্কার করে বোঝা যেত। যেমন ধরুন, আমি নিজে, ধর্মকে মানব সভ্যতার শ্রেনীবিভক্ত সমাজের রাজনৈতিক-সামাজিক নিপীড়ণের হাতিয়ার হিসেবে দেখি, এবং মনে করি এক সময়, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারনে, মানুষের হাতেই এর উতপত্তি ঘটেছিল। আপনি কিভাবে দেখেন সেটা বুঝিয়ে বললে আপনার মন্তব্যগুলো আরেকটু ভালো করে বুঝতে পারতাম। এই বিশ্ব-জোড়া ধর্মীয় সন্ত্রাসের পিছনে আজকের সাম্রাজ্যবাদ কতখানি ভুমিকা পালন করেছে সেটা নিয়ে বিতর্কের কোন অবকাশই নেই। কিন্তু ধর্মের সামাজিক-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের সাথে সাথে এর টিকে থাকার পিছনে আর কোন বৈজ্ঞানিক কারন আছে কিনা, সেটা খুজে দেখাকে কি আপনি প্রয়োজনীয় মনে করেন নাকি করেন না? মানব ইতিহাসের উতপাদন-সমাজ-দর্শনের সঙ্গে জড়াজড়ি করে তো অনেক কিছুরই উদ্ভাবন ঘটেছে, তাদের অনেক কিছুই আবার কালের পরিক্রমায় ভুল, অপ্রয়োজনীয় বা ক্ষতিকর প্রমানিত হয়েছে, মানব সমাজ তো একটা স্ট্যাটিক কিছু নয়। আবার তার মানে তো এটা হতে পারে না যে, এর ফলে মানব সামাজটাই ভুল প্রমানিত হয়ে গেছে। "ধর্মচিন্তাকে ভাইরাস বললে, মানবজাতির ইতিহাস ও বর্তমান অস্তিত্বকেই ভাইরাস আক্রান্ত বলতে হয়" - আপনার এই মহা-সমীকরণের অর্থটাও কিন্তু ঠিক বোঝা গেল না।

অভিজিৎ এর ছবি

ধর্ম মানুষেরই সৃষ্টি যদি হয় এবং ইতিহাসে তা যদি উতপাদন-সমাজ-দর্শনের সঙ্গে জড়াজড়ি করেই আবির্ভূত হয়ে থাকে, তাহলে ধর্মচিন্তাকে ভাইরাস বললে, মানবজাতির ইতিহাস ও বর্তমান অস্তিত্বকেই ভাইরাস আক্রান্ত বলতে হয়। কেবল অল্প কিছু টাইটান মানুষ তা থেকে মুক্ত?

সংখ্যাগরিষ্টতার উপর কোন বৈজ্ঞানিক সত্যতা নির্ভর করে না, সরি। কতজন মানুষ ধর্মে বিশ্বাস করে আর কতজন করে না সেটা দিয়ে কোন তত্ত্বের সঠিকতা প্রমাণিত হয় না। বরং এটা একধরণের ভ্রান্তির জন্ম দেয় যাকে বলে 'Argumentum ad populum'। একটা সময় পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই মনে করত পৃথিবী সমতল কিংবা সূর্য পৃথিবীর চারিদিকে ঘুরে। কেবল কোপার্নিকাস, ব্রুনো কিংবা গ্যালিলিওর মত মুষ্টিমেয় বিজ্ঞানীরা উলটোরথে চলেছিলেন। তাতে কি হল? মজার ব্যাপার হল - ধর্মবিশ্বাসের ক্ষেত্রে কতজন মানুষ বিশ্বাসী আর কতজন নন, সেটা ফারুক ওয়াসিফের ক্ষেত্রে খুব 'জোড়ালো' যুক্তি মনে হয়। আমি যদি একই প্রশ্ন তার মার্ক্সিজমের ক্ষেত্রে করি?

কে মনে করে, কেন মনে করে? কখন করে আর কখন করে না? সেই প্রশ্ন কিন্তু রয়ে গেল। জনাব অভিজিতের বয়ানে ঘটনাটা থ্রিলার কাহিনীর মতো শোনালেও, এর মধ্যে যুক্তিশীল মনের অনুসন্ধান কোথায়? ২০০৫ সালের পর ভারতে আরো অনেক সন্ত্রাস ঘটেছে, যেগুলোর মুসলিম সন্ত্রাস বলে প্রতিষ্ঠিত করা হলেও সাম্প্রতিক সরকারি অনুসন্ধানে ধরা পড়েছে যে, সেগুলো হিন্দু সন্ত্রাস। এত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য কিভাবে আপনার নজর এড়িয়ে গেল?

তাই নাকি? আমি ইয়াহুনিউজ-এর সাম্প্রতিক খবর থেকে লিস্টগুলো হাজির করি 'A look at major attacks in India since '1993

খবরটিতে ১৩ টি ঘটনার তালিকা করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে - Some major attacks in India since 1993, most blamed on Islamic militants। এমনকি মুম্বাইয়ের সাম্প্রতিক ঘটনায়ও ১০ জন সন্ত্রাসীর এই দলটি পাকিস্তান থেকে এসেছিল সমুদ্রপথে। এদের এক জন এখনো জীবিত - আর সে এখন পুলিশের জিম্মায় - এ কথা কি ফারুক ওয়াসিফ জানেন না? ফারুক ওয়াসিফ-এর রিসার্চ অনুযায়ী- 'সাম্প্রতিক সরকারি অনুসন্ধানে ধরা পড়েছে যে, সেগুলো হিন্দু সন্ত্রাস'। ফারুক ওয়াসিফ সাহেব তাহলে ইয়াহুনিউজ অন্যান্য নিউজ মিডিয়াকে তার রিসার্চটি জানিয়ে দিতে পারেন।

মজার ব্যাপার হচ্ছে হিন্দু সন্ত্রাস কিন্তু আমার নজর এড়িয়ে যায় নি। যেটা হিন্দু সন্ত্রাস তাকে হিন্দু সন্ত্রাস হিসেবেই আখ্যায়িত করেছি। যেমন আমার প্রবন্ধে পরিস্কারভাবে উল্লেখ করেছি কাশ্মিরি জনগনের উপর ভারতীয় সেনাবাহিনীর লাগাতার অত্যাচারের কথা, বাবড়ি মসজিদ ধবংসের কথা কিংবা গুজরাটে সাম্প্রতিক সময়ে মুসলিমদের উপর যে ধরণের অত্যাচারের কথা। এটা ফারুক সাহেবের দৃষ্টি এড়ালো কেন?

আল কায়দা আর শিবসেনার মধ্যে আমি কোন পার্থক্য দেখিনা, একথা আমি বহুবার বলেছি। পার্থক্য দেখিনা মুসলিম সন্ত্রাস আর হিন্দু সন্ত্রাসেও। আমি মনে করিনা বিশ্বাসের ভাইরাস কোন বিশেষ ধর্মের জন্য বিশেষভাবে ক্রিয়া করে।

মুসলিম মাত্রই সন্ত্রাসী সম্ভাবনা রাখে এই বিশ্বাসের ভিত্তিতেই যুক্তরাষ্ট্র ওয়ার অন টেরর ঘোষণা করেছিল এবং প্রণয়ন করেছিল প্যাট্রিয়ট আইন।

আমার লেখার সাথে প্যাট্রিয়ট আইনের কি সম্পর্ক বুঝলাম না। আমি কখনোই মনে করি না মুসলিম মানেই সন্ত্রাসী। আবেগময় এবং আবান্তর উপমা বোধ হয় না দেয়াই ভাল।

অরূন্ধতি রায় তাঁর ইস্তাম্বুল বক্তৃতায় যথার্থই বলেন, ‘‘এটা কোনা কাকতাল নয় যে, ওসমানিয়া সাম্রাজ্যের যে রাজনৈতিক দলটি আর্মেনিয়দের ওপর গণহত্যা চালিয়েছিল তার নামও ছিল ‘কমিটি ফর ইউনিয়ন এন্ড প্রগ্রেস’।

অরুন্ধুতি রায় আমারও একজন প্রিয় লেখক। আমি তার অনেক বইই পড়েছি। আমি জানি অরুন্ধুতি রায় আপনাদেরো একজন প্রিয় লেখক। কিন্তু একটা জিনিস আমার দৃষ্টি এড়িয়ে যায় না। অরুন্ধুতি রায়রা যখন হিন্দু মৌলবাদের বিরুদ্ধে কিংবা আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লেখেন তা কোট করতে আপনার খুবই উৎসাহ বোধ করেন। কিন্তু একইভাবে সালমান রুশদী, ইবনে ওয়ারাক, তারিক ফাতাহ, আয়ান হারসি আলীরা যখন ইসলামী মৌলবাদের বিরুদ্ধে লেখেন তখন তা হয়ে যায় ''জাতিবিদ্বেষ', নয়ত খেলো । এ থেকেই আসলে ব্যক্তিবিশেষের কট্টর মন মানসিকতা বেরিয়ে আসে।

খেয়াল করুন, কীভাবে জঙ্গিবাদ=মুসলিম=মনস্তাত্ত্বিক-জীববৈজ্ঞানিক কারণের সমীকরণ দাঁড়াচ্ছে?

এই সমীকরণ কে দিল? আমি নই অন্তত তা বলতে পারি। আমি আমার প্রবন্ধ লিখেছি 'বিশ্বাসের ভাইরাস' নিয়ে, কোন নির্দিষ্টি ধর্ম নিয়ে নয়। ইসলামের কথা যেটুকু এসেছে তা মুম্বাইয়ে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই। কেউ যদি এতে আক্রান্ত বোধ করেন, তাতে আমার করার কিছু নেই।

কথা হচ্ছে এই মনস্তাত্ত্বিক বা জীববৈজ্ঞানিক কারণ কেন ইতিহাসের এই বিশেষ যুগে এসে জঙ্গিবাদ হয়ে উঠলো। তাও আবার সবখানে নয়, বিশেষত নিপীড়নের শিকার মুসলিম দেশগুলোতে!

নিজেকে ভিক্টিমাইজড করা বোধ হয় আপনা কারো কারো চিরন্তণ স্বভাব। মুম্বাইতে এত বড় একটা সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটল, কোথায় তার কঠোর প্রতিবাদ করবেন, তা না নিজেকে ভিক্টিমাইজড করে ফেললেন। ৯/১১ এর ঘটনার পর ফরহাদ মজহারের মত লোকজন বলেছিলেন ওটা নাকি বিপ্লব। এ সমস্ত তাত্ত্বিকেরা প্রকারান্তরে আসলে ইনিয়ে বিনিয়ে মৌলবাদের হাতই শক্ত করে তোলেন।

বিশ্লেষণটির মধ্যে কড়কড়া বর্ণবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা রয়েছে। অন্য ধর্মের, অন্য জাতির সন্ত্রাসের বেলায় তবে কোন ফ্যাক্টর কাজ করে?

আমি তো মনে করি বর্ণবাদ রয়েছে আপনার একপেশে মন্তব্যের মধ্যে। আমি তো পরিস্কার করেই বলছি অন্য জাতির সন্ত্রাসের বেলায়ও 'একই ভাইরাস' ,একই ফ্যাক্টর কাজ করে যা ইসলামী সন্ত্রাসবাদের ক্ষেত্রে কাজ করছে। ইতিহাস জুড়ে ডাইনী পোড়ানো, সতীদাহ, জাতিভেদ, বর্ণবাদ এগুলো কি সাক্ষ্য দেয়? আপিনি আমার লেখার এ অংশটি দেখেন নি যেখানে আমি বলেছিলাম - অনেক আদিম সমাজেই বন্যা কিংবা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কুমারী উৎসর্গ করার বিধান ছিল; কেউ কেউ সদ্যজন্মলাভ করা শিশুদের হত্যা করত, এমনকি খেয়েও ফেলত। কোন কোন সংস্কৃতিতে কোন বিখ্যাত মানুষ মারা গেলে অন্য মহিলা এবং পুরুষদেরও তার সাথে জীবন্ত কবর দেওয়া হত, যাতে তারা পরকালে গিয়ে পুরুষটির কাজে আসতে পারে। ফিজিতে ‘ভাকাতোকা’ নামে এক ধরনের বিভৎস রীতি প্রচলিত ছিল যেখানে একজনের হাত-পা কেটে ফেলে তাকে দেখিয়ে দেখিয়ে সেই কর্তিত অংগগুলো খাওয়া হত। আফ্রিকার বহু জাতিতে হত্যার রীতি চালু আছে মৃত-পূর্বপুরুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের উদ্দেশ্য। ভারতে সতীদাহের নামে হাজার হাজার মহিলাদের হত্যা করার কথা তো সবারই জানা। এগুলো সবই মানুষ করেছে ধর্মীয় রীতি-নীতিকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে, অদৃশ্য ঈশ্বরকে তুষ্ট করতে গিয়ে। এগুলো কি মুসলিম সন্ত্রাসের উদাহরণ ছিলো? ছিলো না । অযথাই আপনি আক্রান্ত বোধ করছেন কিন্তু।

দয়া করে 'মনস্তত্ব কেবল মুসলিমদেরই জঙ্গি করে তোলে' জাতীয় কথাবার্তা এনে নিজেকে খেলো করে তুলবেন না। আমাকে যতই আপনি 'মুসলিম বিদ্বেষী' প্রমাণ করার চেষ্টা করুন না কেন এতে লাভ হবে না মোটেই। আমার লেখা 'সবই ব্যাদে আছে' প্রবন্ধটি পড়লেই বূঝবেন আমি হিন্দু দর্শনের উপরও একইরকম সোচ্চার। আমি রিচার্ড ডকিন্স, ডেনিয়েল ডেনেট, সুসান ব্ল্যামোর, রিচার্ড ব্রডি প্রমুখের আধুনিক গবেষণা উদ্ধৃত করেই আমার প্রবন্ধ লিখেছি। আপনি আমার বক্তব্যের সাথে দ্বিমত করুন ঠিক আছে কিন্তু আলোচনা দয়াকরে অন্যদিকে নিয়ে যাবেন না। আমাকে নিয়ে না পড়ে বরং নাইন-ইলেভেন বা মুম্বাইয়ের মত সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটলে আপনাদের মত মডারেট মুসলিমেরা সেটার কড়া প্রতিবাদ না করে কেন নিজেদের ভিক্টিমাইজড করে আত্মপ্রসাদ খুঁজতে থাকেন, তা বুঝলেই 'বিশ্বাসের ভাইরাসের' ব্যাপারটি পরিস্কার হবে।



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

দেখুন অভিজিত, আমি কেবল আপনার দৃষ্টিভঙ্গি ও যুক্তিকাঠামোর মধ্যে কোথায় আমার আপত্তি তা নিয়ে কথা বলেছি। কিন্তু আপনি মূল প্রসঙ্গ না থেকে আশেপাশে বালিশ পেটা করলেন, আমি কট্টর, কমিউনিস্ট হেন-তেন মেলা কিছু। এটা আপনি আপনার সঙ্গে যারাই দ্বিমত করে, তাদের বেলাতেই করেন। বিষয়কে বাদ দিয়ে ব্যক্তি নিয়ে নামেন। ফলে আলোচনা এগয় না।

ধন্যবাদ।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

অভিজিৎ এর ছবি

আবার নিজেকে 'ভিক্টিমাইজড' করে ফেললেন। আমি তো আপনার লেখার পয়েন্ট বাই পয়েন্ট উত্তর দিয়েছি। আর আপনি বলছেন - 'মূল প্রসঙ্গ না থেকে আশেপাশে বালিশ পেটা করলেন'। এটা কি একটা উত্তর হল। ভাই আপনি আমাকে 'জাতিবিদ্বেষী' বললেন, আমার লেখায় নাকি বর্ণবাদের গন্ধ আছে বলে অভিযুক্ত করলেন - আর আমাকে বলছেন আমি নাকি ব্যক্তি আক্রমণ করেছি। বেশ! আলোচনা বোধ হয় না এগুনোই ভাল তা হলে।



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

সবজান্তা এর ছবি

মুম্বাইয়ের সহিংসতা নিয়ে গত দু দিনের ব্লগীয় বিতর্কে সারাদিনই নজর রাখছি। তবে এ পর্যায়ে এসে আমি নিজেও কিছুটা হতাশ হলাম, কারণ অভিজিৎদা'র মন্তব্য যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক এবং টু দ্য পয়েন্ট ছিলো। সেখানে ফারুক ভাই কেন সেগুলোকে খন্ডন না করে এমন মন্তব্য করলেন, বুঝতে পারলাম না।


অলমিতি বিস্তারেণ

আলমগীর এর ছবি

মুম্বাইতে এত বড় একটা সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটল, কোথায় তার কঠোর প্রতিবাদ করবেন,

সেদিন বিএসফের গুলিতে নারী-শিশু হত্যা নিয়ে হিমুর পোস্টে আপনার কোন মন্তব্য দেখিনি। এরপরেও নিশ্চয়ই আরো অনেক ঘটনা ঘটবে, আপনার প্রতিবাদের খোঁজ রাখব।

৯/১১ এর ঘটনার পর ফরহাদ মজহারের মত লোকজন বলেছিলেন ওটা নাকি বিপ্লব।

দক্ষিণ আমেরিকার কিছু দেশেও কিন্তু উল্লাস হয়েছে।

এ সমস্ত তাত্ত্বিকেরা প্রকারান্তরে আসলে ইনিয়ে বিনিয়ে মৌলবাদের হাতই শক্ত করে তোলেন।

ভারত আর ইসরাইলের নিরেট মিত্রতা কার হাতকে শক্তিশালী করে বলে আপনার ধারণা?

অভিজিৎ এর ছবি

সেদিন বিএসফের গুলিতে নারী-শিশু হত্যা নিয়ে হিমুর পোস্টে আপনার কোন মন্তব্য দেখিনি। এরপরেও নিশ্চয়ই আরো অনেক ঘটনা ঘটবে, আপনার প্রতিবাদের খোঁজ রাখব।

ভাই, এখানে অনেকের মত আমার পক্ষে চব্বিশ ঘন্টা সচলায়তনে লগ ইন করে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। অনেক পোস্টই আমার দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। অনেকের ব্লগে গিয়েই কমেন্ট করা হয় না। হিমুর গুরুত্বপূর্ণ লেখাটি আসলেই আমার দৃষ্টি এড়িয়ে গিয়েছিলো। দেখলাম এখন। প্রতিবাদও জানিয়ে এসেছি - দেখেছেন নিশ্চয়। এবার খুশি?

একটা জিনিস আমাকে কিন্তু আসলেই অবাক করছে। মুম্বই এর এত বড় ঘটনা ঘটল, আর সেটা নিয়ে লেখার মধ্যে আপনি হঠাৎ বিএসফ নিয়ে আসলেন কেন? আর আমাকেই বা সেটা নিয়ে ধরলেন কেন? আমার 'হিন্দু' পদবী দেখে নাকি? য়ার তা ছাড়া আমি তো ওই পোস্টে ফারুক ওয়াসিফ সাহেবেরও প্রতিবাদ দেখলাম না। উনাকে যে কিছু বললেন না? প্রতিবাদ না থাকা মানেই কি ধরে নেবো যে ফারুক ওয়াসিফ বিএসফ-এর নৃশংসতা সমর্থন করেন? আসলে পদবী দেখে আপনি ধরেই নিয়েছেন - অভিজিৎ সাহেব তো বিএসফের অত্যাচার সমর্থন করবেন, তাই না? ভাইরে - এই সমস্ত হিন্দুত্ব আর জাত্যাভিমান আমি বিসর্জন দিয়েছি অনেক আগে। মানুষের এই ক্ষুদ্রতা আমাকে হতাশ করে।

এরপরেও নিশ্চয়ই আরো অনেক ঘটনা ঘটবে, আমার প্রতিবাদের খোঁজ রাখবেন। বেশ তো- রাখুন না। আমার কোন দোষ ত্রুটি হলে অবশ্যই জানাবেন। আমিও আপনাদের খোঁজ রাখব। মুম্বাই এর ঘটনার পর কে সেটার পেছনে 'হিন্দু জঙ্গী'দের চক্রান্ত খুঁজতে তৎপর হন - আর কে সে লেখায় পঞ্চতারা দেয় - সেটাও আমার দৃষ্টি এড়ায় না। এরপরেও নিশ্চয়ই আরো এধরণের অনেক ঘটনা ঘটবে। সেটাও দেখব।

ভারত আর ইসরাইলের নিরেট মিত্রতা কার হাতকে শক্তিশালী করে বলে আপনার ধারণা?

এটাও মৌলবাদের। ইস্রায়েল বাই ডিফল্ট একটি ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র। আমি প্যালেস্টাইনদের অধিকার নিয়ে অনেক প্রবন্ধ লিখেছি। একসময় পিটিশনও করেছিলাম এ নিয়ে। দেখতে পারেন



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

আলমগীর এর ছবি

অভিজিৎ
আমি আপনার লেখার বিষয়েই সীমাবদ্ধ মন্তব্য করেছি, ব্যক্তিবিশ্বাস নিয়ে কিছু বলিনি। আমার নামও আপনার মতোই মুখোশের আড়ালে না। পড়াশোনা হয়ত আপনার ধারেকাছেও না। কিন্তু আপনার ভাল একটা দীর্ঘ লেখার মধ্যে যে শ্রেফ নিছক কিছু থাকতে পারে না তাও না। লেখায় রাজনৈতিক ব্যাখ্যা নেই, জঙ্গিবাদের উৎস অনুসন্ধান নেই এসব কথাই বলেছি।

আপনি পৃথিবীর সমস্যা যেভাবে দেখেন, আমি পুরো সেভাবে না। ফারুক ওয়াসিফেরও আলাদা চোখ আছে। যে যার দেখাকে ব্যাখ্যা করব, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এতে করে যদি মনে হয়, নামের কারণেই আমি টার্গেট করছি তাহলে কষ্ট পাই। ফারুক ওয়াসিফের অনেক লেখায় সবচেয়ে কঠোর কমেন্ট আমিই করেছি। উনি যুক্তির পাশাপাশি কমেন্টদাতাকে একসময় অসম্মানজনক টিপ্পনি ছুঁড়ে দিতেন। আমি তার সে কৌশলের সমালোচনা করেছি। প্রথম আলোতে মুসার লেখার প্রতিবাদ ছাপা হয়েছে, উনি এ খবর দিচ্ছেন, আমি বলেছি প্রতিবাদলিপির কোন কথাটা প্রথম আলো গিলে ফেলেছে। উনি সাম্প্রতিক লেখায় ইসলাম নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা করে জাতীয় কিছু বলেছেন (ভিন্ন ব্লগে) আমি তার সমালোচনা করেছি। আপনার কথা মানছি হিমুর লেখায় তার কমেন্টের অনুপস্থিতি নিয়েও কথা হওয়া দরকার ছিল। যদিও আমি কিন্তু পুরো প্রথম আলোর অবস্থান নিয়েই প্রশ্ন করেছিলাম। আমাদের দুজনেরই নাম আরবি বলে আপনি দয়া করে এক বাক্সে ফেলবেন না।

চোখে পড়ুক না পড়ুক আপনার আগের অনেক লেখার প্রশসংসাই আমি করেছি (যদ্দুর মনে পড়ে), পাঁচ তারাও দিয়েছি। এ লেখার দুর্বল অংশ বাদে বাকী লেখার প্রসংশা করি। (শিরোনামটা কী হতে পারত ভিন্ন কমেন্টে তাও বলেছি) জনৈক ব্লগার যখন আপনাকে গালাগালি করে মার্কসবাদ বিজ্ঞান কিনা তা নিয়ে প্রতিক্রিয়া পোস্ট দিয়েছিল তখনও বলেছি। (হ্যাকিং নিয়ে তার অনেক কথার প্রতিউত্তর আমিই দিয়েছিলাম)।

সেন্টিমেন্টাল লেখার কিছু ভাল এবং বাজে দিক আছে। এর মধ্যে নিজেদের মৌলিক অবস্থান পরিস্কার হয়, আবার হঠাৎ করে বিষেশ কিছু অতিথি মন্তব্যও আসে। আমরা যার যার মতো পোলারাইজ হই, আক্রান্ত বোধ করি, আহতও হই।

আমি নিজেকে পুরা অসাম্প্রদায়িক বলে মনে করি। নিজের অবস্থানে থেকে কখনও ধর্ম বিচারে কোন ভিন্নতা করি না। ব্যক্তিগত সম্পর্কের বেলাতেও কাউকে হীন করি না । আমার 'নিজের ধর্ম' অনেক বছর হয় পালন করি না। কিন্তু ঘোষণা দিয়ে আবার বলতেও পারি না, আমি নাস্তিক। বিশ্বাস পাল্টায় কিনা।

ভাল থাকবেন।

অভিজিৎ এর ছবি

খুব ভাল লাগল আপনার মন্তব্য পড়ে। বিষয়টা যে ভালয় ভালয় শেষ হল, সেটা বেশ লাগল। তবে আপনার সাথে আলোচনা করে আমাবো অনেক কিছু পরিস্কার হল, হয়ত আপনারো। এই বুঝতে পারার বিষয়টি কিন্তু কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।

হ্যা আপনার আগের পোস্ট এবং মন্তব্য আমি দেখেছি। হয়ত সব ক্ষেত্রে ধন্যবাদটুকুও দিতে পারিনি, সেজন্য ক্ষমাপ্রার্থী। আপনার কম্পিউটারে জ্ঞান, বিশেষতঃ বাংলা সফটওয়্যার এবং বাংলা ফন্ট বিষয়ে আপনার কাজের কথাও সচলায়তনের মাধ্যমে জেনেছি। এগুলো যে কারো জন্যই গর্বের বিষয়। আর আমার পড়াশোনা বা জ্ঞান বুদ্ধি তেমন বেশি কিছু নয় (আপনি দরকার হলে আমার স্ত্রী বন্যাকে জিজ্ঞাসা করে দেখতে পারেন, তার মতে আমি হচ্ছি পৃথিবীর সবচাইতে বোকা একটি প্রানী হাসি )। যাকগে আমিও হয়ত আপনার মতই বলব - একটু ভিন্ন ভাবে পৃথিবীকে দেখি। আমি মনে করি আমরা আস্তিক নাস্তিক যাই হই না কেন - আসলে নিজের বিবেকের কাছে পরিস্কার এবং দায়বদ্ধ থাকা উচিৎ। আপাততঃ এইটুকুই।

আপনিও ভাল থাকবেন।



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

অমিত এর ছবি

মুম্বাইয়ের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ২০০। প্রতি বছর বাংলাদেশ ভারত বর্ডারে বিএসএফ এর হামলায় মারা যায় কতজন ? ১ ? ২? ৫০ ? অথবা ২০০ !! মাথাগুনে কি টেররিজম টার্মটা ঠিক করা হয় ? তা যদি না করা হয় তাহলে কোনটা টেররিজম ? ধর্মের জন্য মারামারি করাটাকেই কি খালি টেররিজম বলব ? না কি যেকোন বিশ্বাসের জন্যই সেটা প্রযোজ্য ? যেমন স্বাধীনতার জন্য ১৯৭১ সালে যে ৩০ লাখ লোক মারা গেল তারা কি টেররিস্ট ? ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ২০০ বছরে নিহতের সবাই কি টেররিস্ট ?

কোন ধর্মের চোদনামিই আমার সহ্য হয় না, না সহ্য হয় রাজনৈতিক মতবাদের খবরদারি। কিন্তু কিছু করার নেই। দুইটা মত থাকলে তার সংঘর্ষ হবেই।মোল্লা ছাগুর ব্যা ব্যা যেমন থাকবে, অতি এন্টি মোল্লারও গলাবাজি প্রাকৃতিক নিয়মেই হয়ত থাকে।সত্যের সন্ধান করতে গেলে খালি অন্যায়ই দেখি সবখানে।

দুনিয়াজুড়া পচুর গিয়ানজাম

সুহাস এর ছবি

ফারুক ওয়াসিফের মন্তব্য পড়ে মনে হল উনার মাথাও বিশ্বাসের ভাইরাস দিয়ে আক্রান্ত পুরোমাত্রায়। মুসলিমরা নাকি নিপীড়িত। আরে আপনারা মুসলিমরা নিপীড়িত হলে আমরা হিন্দুরা বাংলাদেশে কি? বাংলাদেশে একসময় শতকরা ৩৫ ভাগের মত হিন্দু ছিলো। তা আজ কমতে কমতে শতকরা ৫ ভাগে এসে ঠেকেছে। পাশের দেশে একটা মসজিদ ভেঙ্গে ফেললেই এ দেশে হিন্দুদের কচুকাটা করা হয়, ধর্ষিতা হতে হয় পুর্ণিমাকে। শত্রু সম্পত্তি আইন এখনো বলবত আছে। আমরা তো দেশের নাগরিক কাছে শত্রু ছাড়া আর কিছু নই। আর মুসলিমরা নাকি নিপীড়িত! আর নিপিড়ীত হলেই সন্ত্রাস করা ঠিক হয়ে যায় নাকি? চিন্তা করুন তো, কয়েকটা হিন্দু মিলে তাজ হোটেলের মত কিংবা নাইন ইলেভেনের মত ঘটনা বাংলাদেশে ঘটালে তাদের কি দশা করে ছাড়ত সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমরা? সমস্ত ভাস্কর্য এখন ভাংগতে লেগেছে মোল্লারা। আপনারা কোথাও সন্ত্রাস করে মানুষ মেরে আবার তাকে ডিফেন্ড করতে নিপীড়নের তত্ত্ব নিয়ে আসবেন। বাহ! সবাই সাড়া দুনিয়া জুড়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে কন্সপিরেসি করছে, তাই না?

আলমগীর এর ছবি

শত্রু সম্পত্তি আইন এখনো বলবত আছে। আমরা তো দেশের নাগরিক কাছে শত্রু ছাড়া আর কিছু নই।

শত্রু সম্পত্তি আইন বলে আদৌ কি কিছু আছে? নাকি আপনি অর্পিত সম্পত্তি আইনের কথা বলছেন? হিন্দু জমিদাররা সেসব জমি কী সূত্রে পেয়েছিলেন বলে আপনার ধারণা? ব্রিটিশদের কী অধিকার ছিল বাংলা মাটির বন্দোবস্ত দেয়ার? বিষয়টা যতটা না হিন্দু-মুসলিম তারচে বেশী নিন্ম-উচ্চবর্ণ।

আপনার বাকী বক্তব্যের সাথে একমত।

দিগন্ত এর ছবি

এটা জমিদারী প্রথা বিলোপ আইন।

আর এটা অর্পিত সম্পত্তি আইন। উইকিতে : http://en.wikipedia.org/wiki/Vested_Property_Act_(Bangladesh)

বাংলাদেশে জমিদারী প্রবর্তিত হয় তোডরমলের সেটলমেন্ট আইনের সাথে, পরে মুর্শিদকুলি খাঁ আর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী সেই একই আইনের সংশোধিত আইন ব্যবহার করে।

আর অর্পিত সম্পত্তি আইনের সাথে জমিদাররা সম্পর্কিত নয় কারণ ৫৬ হাজার বর্গমাইলের দেশে খুব কম শতাংশ হিন্দুই জমিদার ছিল, অধিকাংশই আমার পূর্বপুরুষদের মত সাধারণ কৃষক ছিল। জমি কৃষকের প্রধান অ্যাসেট - আর এই আইন সেই জমিকেই টার্গেট করে। তবে সবথেকে হাস্যকর হল স্বাধীন বাংলাদেশে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের জমি অর্পিত সম্পত্তি আইনের আওতায় আনা। এরকম আরো অনেক উদাহরণ আছে ...

মজার কথা এই একই আইন ভারতেও আছে কিন্তু তা নিয়ে কেউ উচ্চবাচ্য করে না, কারণ ভারতীয়রা পাকিস্তানে যায় না। আর বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরে বাংলাদেশ আইনের আওতা থেকে বেরিয়ে গেছে।


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

আলমগীর এর ছবি

কারণ ৫৬ হাজার বর্গমাইলের দেশে খুব কম শতাংশ হিন্দুই জমিদার ছিল

সঠিক পরিসংখ্যান দিতে পারব না, তবে আমার জেলা শহরে, বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে প্রচুর জমিদার ছিল। দুইআনি, তিনআনি, নয়আনি এভাবে তাদের নাম হতো। তাদের প্রাসাদ, এখনও ভংগুর অবস্থায় আছে। অনেক জায়গায় (অর্পিত/শত্রু সম্পত্তি ধরে নিয়ে) সেগুলো সরকারি অফিস। এক সময় সিলেট ছিলাম, সেখানেও একই।

আইনের অপব্যবহার হয়েছে, ঠিক, আলীগ প্রত্যাবর্তন আইন করে কিছু ফেরত দেয়ার চেষ্টাও করেছিল। কতটা কী হয়েছে বিস্তারিত বলতে পারব না।

দিগন্ত এর ছবি

আমার ধারণা সেগুলো জমিদারী প্রথা বিলোপের সাথে সম্পর্কিত, শত্রু/অর্পিত সম্পত্তি আইনের সাথে নয়। শত্রু সম্পত্তি আইন ১৯৬৫ সালের - ততদিনে বাংলাদেশ ছেড়ে অধিকাংশ জমিদারই চলে গেছেন।

পশ্চিমবঙ্গে জমিদারী তোলা ও পরবর্তী ল্যান্ড-রিফর্মের কারণে জমিদারদের উচ্ছেদ করা গেছে। জমিদারদের তোলার জন্য ভাল ল্যান্ড-রিফর্ম আইনই যথেষ্ট ছিল, শত্রু সম্পত্তি আইনের দরকার পড়ে না। পশ্চিমবঙ্গেও মফঃস্বলের অধিকাংশ সরকারি অফিস পুরোনো জমিদার বাড়িতেই ছিল। এখন সরকারের হাতে পয়সা আছে বলে নতুন বিল্ডিং হচ্ছে কিছু কিছু।


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

আলমগীর এর ছবি

লিংকগুলোর জন্য ধন্যবাদ।
নতুন করে কিছু বিষয় জানলাম।

ইমরুল কায়েস এর ছবি

ছোটমুখে বড় কথা আর নাই বলি । সবার কান্ডকীর্তি দেখলাম আর কেবল অমিত সাহেবের মত বলতে ইচ্ছে হচ্ছে

দুনিয়াজুড়া পচুর গিয়ানজাম

......................................................
উত্তর বাংলার অনাহারী যুবক

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

আপনার ক্রোধটা আমি বুঝি। কারণ আপনাদের কাছে আমি সংখ্যাগরিষ্ঠ ধর্ম পরিচয়ের লোক বলে চিহ্নিত। জাতীয়ভাবে আপনাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনাও করে নিতে পারি। কিন্তু ভাই, ক্রোধে যুক্তি হারাবেন না এই দুষ্কালে। নইলে আপনিও পরিণত হবেন সাম্প্রদায়িকে। আমি আমার যুক্তিগুলো সেক্যুলার প্যারাডাইম থেকে এনেছি। সেরকম একটা জায়গা থেকেই কিন্তু আমরা সহমর্মিতার সংলাপ ও ঐক্য তৈরি করতে পারি।
বাংলাদেশে একসময় শতকরা ৩৫ ভাগের মত হিন্দু ছিলো। তা আজ কমতে কমতে শতকরা ৫ ভাগে এসে ঠেকেছে। এই সত্যটাও বলা দরকার। এ বিষয়ে এডওয়ার্ড কেনেডির কাজ আছে। আছে এক মার্কিন ভদ্রলোকের গবেষণা। সেটা নিয়ে লেখা দেন না কেন?

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

সবজান্তা এর ছবি

অভিজিৎদা'র লেখার কথাগুলির কোনটিই মিথ্যে নয়। তবে আমার সামান্য আপত্তি আছে লেখার নামকরণ নিয়ে। লেখার নাম যদি হত শুধু মাত্র "বিশ্বাসের ভাইরাস" এবং সেখানে শুধুমাত্র একটা উদাহরণ হিসেবে মুম্বাইয়ের ঘটনা আসতো, তবে এ লেখার ডাইমেনশন ভিন্ন হত। কিন্তু লেখার শিরোনাম অনুযায়ী ব্যাখ্যা করলে দাঁড়ায়, মুম্বাইয়ের সন্ত্রাসের পেছনের কারণ বিশ্বাসের ভাইরাস।

বিশ্বাসের ভাইরাস শুধু মুম্বাই কেন, 'দুনিয়াজুড়া' ঘটে যাওয়া আরো অনেক সন্ত্রাসের অন্তর্নিহিত কারণ, এটা অস্বীকার করা যাবে না। তবে মুম্বাইয়ের ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক পটভূমিকেও অস্বীকার করা সম্ভব নয়।

অভিজিৎদা যখন লিখেন,

তবে একটি জিনিস কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না। কাশ্মিরি জনগনের উপর ভারতীয় সেনাবাহিনীর লাগাতার অত্যাচার, বাবড়ি মসজিদ ধবংস কিংবা গুজরাটে সাম্প্রতিক সময়ে মুসলিমদের উপর যে ধরণের অত্যাচারের স্টিমরোলার চালানো হয়েছে তা ভুলে যাবার মত বিষয় নয়। মুসলিমরা ভারতের জনগনের প্রায় ১৪ শতাংশ। অথচ তারাই ভারতে সবচেয়ে নিপিরীত, অত্যাচারিত এবং আর্থসামাজিক দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়া এক জনগোষ্ঠি। এ বাস্তবতাটুকুও বিশ্লেষনের সময় মাথায় রাখতে হবে।

তখন সেটা তাঁর লেখার যৌক্তিক অবস্থানকে শক্ত করে ঠিকই কিন্তু 'পারফেক্ট' করে না। এ সন্ত্রাসের পেছনে আর্থ-সামাজিক এই পটভূমি অনেক বেশি মনযোগের দাবি করে। লেখার শেষাংশের এই অংশটুকু আরো অনেক বেশি সম্প্রসারণ এবং আলোচনার দাবি রাখে। আমার পড়ালেখার গন্ডী খুব বড় নয়, তবু সীমিত জ্ঞান আর অভিজ্ঞতায় ভর করে বলতে পারি, বিশ্বাসের ভাইরাস মানুষকে দিয়ে অনেক ধ্বংসকাণ্ড করিয়ে নিয়েছে ঠিকই, কিন্তু এর সাম্প্রতিক ফ্রিকুয়েন্সী খুব সম্ভবত পূর্বের যে কোন সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। আর এর পেছনের কারণ নিঃসন্দেহে মানুষের আর্থ-সামাজিক পশ্চাদপদতা। মানুষের দারিদ্র্য, বঞ্চনা ইত্যাদি ধর্মব্যবসায়ীদের সাহায্য করে ভাইরাসের সংক্রমন বাড়াতে। তাই শুধু মাত্র বিশ্বাসের ভাইরাস এর আলোচনাই বিশদভাবে না করে, এর সাথে ভারতের মুসলিমদের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট, বঞ্চনা ইত্যাদিকে রিলেট করে বিশদ আলচনা লেখাটিকে পূর্ণতা দিতো বলে আমার বিশ্বাস।

তবে এটুকু পর্যন্ত আমার দুঃখ নেই। কারণ তর্ক-বিতর্ক চলবেই। থেমে যাওয়াই প্রাণহীনতার লক্ষণ। কিন্তু দুঃখ পেয়েছি কারো কারো মন্তব্যে যখন অনুভব করি অভিজিৎদা'কে তার নামের কারণে ভারত প্রীতির প্রচ্ছন্ন খোঁচা হজম করতে হয়। পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত আমার নিজের ধর্ম এবং অভিজিৎদার 'প্রাক্তন' ধর্ম এক বলেই হয়ত, খোঁচাটা বড্ড বেশী গায়ে লাগে। এদেশে, যেখানে আমি মূলত একজন দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক, সেখানে সবাই ধরে নেয় আমি ভারতেরই পক্ষে। সচলায়তনে এসেও যদি দেখি কেউ এ ধরণের সিম্পলিফিকেশন করছেন, কষ্ট পাই।

সবার প্রতি একটা বিনীত অনুরোধই থাকবে, যতোই তর্ক করি না কেন, এ ধরণের মনোভাব যেন কেউ পোষণ না করি।

সবাইকে ধন্যবাদ।


অলমিতি বিস্তারেণ

অভিজিৎ এর ছবি

তখন সেটা তাঁর লেখার যৌক্তিক অবস্থানকে শক্ত করে ঠিকই কিন্তু 'পারফেক্ট' করে না। এ সন্ত্রাসের পেছনে আর্থ-সামাজিক এই পটভূমি অনেক বেশি মনযোগের দাবি করে।

আপনার কথার সাথে আমি পুরোপুরি একমত। এধরনের বস্তুনিষ্ঠ সমালোচনা আরো করুন, আমার উপকার হবে, আমার লেখারো। আসলে ঠিকি বলেছেন - কাস্মীর নিয়ে হয়ত আলাদা করে লেখা দরকার ছিলো, কিংবা আরো ইলাবোরেট করা উচিৎ ছিলো। আসলে সচলায়তনে লেখা শুরু করার আগেও আমি অনেক লিখেছি - কাশ্মিরী জনগনের অধিকার নিয়ে। এমনকি ভারতীয়দের সাথে বিতর্কও করেছিলাম এনিয়ে। আমার বিতর্ক দেখুন এখানে এবং এখানে। এমনকি কাশ্মীর থেকে বাস্তুচ্যুত একজন কাশ্মিরী মুসলিমকে দিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ লেখাও লিখিয়ে নিয়েছিলাম, তা পাবেন এখানে - My Lost Country - Kashmir

যখন অনুভব করি অভিজিৎদা'কে তার নামের কারণে ভারত প্রীতির প্রচ্ছন্ন খোঁচা হজম করতে হয়। পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত আমার নিজের ধর্ম এবং অভিজিৎদার 'প্রাক্তন' ধর্ম এক বলেই হয়ত, খোঁচাটা বড্ড বেশী গায়ে লাগে।

আমি কিন্তু আর কষ্ট পাইনা, বরং নিছক আমোদ অনুভব করি এধরণের সিম্পলিফিকেশনে। তবে মাঝে মধ্যে মনে হত 'সবজান্তা' টাইপের একটা নিক নেম নিয়ে লেখা শুরু করলেই বোধ হয় ভাল হত হাসি পরে মনে হয় - কি আর হবে, যা লিখি নিজের নামেই লিখি!

যা হোক আপনার মন্তব্যের জন্য এবং সঙ্গে থাকার জন্য অনেক ধন্যবাদ।



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

স্নিগ্ধা এর ছবি

এ সন্ত্রাসের পেছনে আর্থ-সামাজিক এই পটভূমি অনেক বেশি মনযোগের দাবি করে। লেখার শেষাংশের এই অংশটুকু আরো অনেক বেশি সম্প্রসারণ এবং আলোচনার দাবি রাখে।

ধন্যবাদ সবজান্তা, আমার পরিশ্রম কমিয়ে দেয়ার জন্য হাসি আমিও মনে করি এখনকার পরিপ্রেক্ষিতে মুম্বাই ঘটনার বিশ্লেষণ করতে গেলে রাজনৈতিক-সামাজিক পটভূমির আলোচনা আরো অনেকখানি মনোযোগ দাবী করে!

ধর্ম খুব শক্তিশালী, খুব বিস্ফোরক, খুব উম্মাদনাময় মতবাদ/নির্ণায়ক/ক্যাটালিস্ট অবশ্যই, কিন্তু এখন ধর্ম - রাজনীতি - অর্থনীতি এতো ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গ্যাছে যে বিশ্বাসের ভাইরাস নিয়ে লিখতে গেলেও অন্যগুলো নিয়ে কথা না বললে বিশ্লেষণটা অসম্পূর্ণ থেকে যায় হাসি

বিপ্লব পাল এর ছবি

রাষ্ট থাকলে সন্ত্রাস থাকবেই-সন্ত্রাসবাদি ও থাকবে।

ভারতীর রাষ্ট্রের সন্ত্রাসের জন্য মাওবাদিরা আছে-তারাই প্রকৃত শ্রেনী দ্বন্দে লিপ্ত। মুম্বাই এর এই কুকীর্তির পেছনে লস্কর ই তৈবার হাত প্রমানিত। এরা ত পাকিস্তানের শাসক শ্রেণীর কুকুর মাত্র। এবার যারা ভারতকেই দোষারোপ করছেন-তার এই উত্তর গুলি দিন।
(১) তিব্বতের বৌদ্ধদের ওপর অত্যাচার হয় নি? তারা কেন সন্ত্রাসবাদি হয় নি? বাংলাদেশী হিন্দুরা কেন সন্ত্রাসবাদি হলো না! এগুলোর উত্তর কে দেবে?
(২) কত ডলার দিলে এই ফোরামে যারা ধর্মকে দোষী নয় বলছে -তারা আত্মহত্যা করবে?
(৩) এল ইটি-এর পেছনে এখন প্রশ্নাতীত ভাবে প্রমানিত। পাকিস্থানে অন্যায় অত্যাচার নেই? সেসব ছেরে ভারতে মুসলিমদের ওপর অত্যাচারের প্রতিশোধ নেওয়া কেন? ২০০৮ সালের মে মাস থেকে মুম্বাই পর্যন্ত ১০ টা সন্ত্রাসবাদের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে কজন কাশ্মিরী বা গুজরাটি মুসলমান জড়িত? একজন ও নয়।
(৪) কাশ্মীরে এবার সাফল্যে সাথে ভোট হয়েছে। নতুন কাশ্মিরী প্রজন্ম ভালো চাকরি চাই-ভাল ভবিষ্যত চাই-এই সব আদর্শবাদের আফিং তারা খাচ্ছে না। এটা বিবিসির রিপোর্ট। ফলে জঙ্গী সং গ ঠন গুলোও গণতন্ত্রে আসতে চাইছে। তারা কি চাইছে এত দূর থেকে বোঝা যায়? কাশ্মীরে ভোটে বিপুল সারাই প্রমান করছে-কাশ্মীর ভালো খেয়ে পড়ে বাঁচতে চাইছে। এবং তাদের কেও এই সন্ত্রাসবাদের সাথে জড়িত নেই। অথচ তাদের দুঃখে (!) পাকিস্থানের মুসলমারা ভারতে এসে বোমা মারছেন? মনে রাখবেন ভারতীয় মুসলমানরা
এদের কবর দিতেও অস্বীকার করেছে!
(৫) অর্থাৎ -ব্যাপারটা কি? সন্ত্রাসবাদের পেছনে আসল আদর্শবাদ "মুসলমান-ভাতৃত্ব"-যা দুনিয়াটাকে মুসলীম-অমুসলীমে ভাঙে। সেটা কি ধর্মের ভাইরাস না? একজন হিন্দু বাবার সাথে একজন মুসলমান বাবার পার্থক্য কি? মায়ের কি জাত? হিন্দু না মুসলমান?
(৬) যেকোন সন্ত্রাসবাদের পেছনে ৩টে কারন থাকে।
আদর্শবাদ-এক্ষেত্রে এটা মুসলিম ব্রাদারহুড
রাজনীতি-পাকিস্থানের এলিটরা, যারা ক্ষমতাই থাকতে চাই-তাদের এই সব সন্ত্রাসবাদি পুতুল লাগে। নইলে আমেরিকা তাদের টাকা দেবে কেন? বাংলাদেশে ৩০ লাখ লোককে মারার পেছনে যারা ছিল, এই সন্ত্রাসবাদের পেছনেও তারা-পাকিস্থানের এলিট-মিলিটারী নেক্সাস। যারা ইসলামের আফিং খাইয়ে, পাকিস্থানের গরীব জনসাধারনকে শুইয়ে রেখেছে।
টাকা-এটাও এখন প্রমানিত সত্য। দাউডের টাকা-আফিং ট্রেডের টাকা এর পেছনে খেটেছে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।