তিনি বৃদ্ধ হলেন

অভিজিৎ এর ছবি
লিখেছেন অভিজিৎ (তারিখ: শনি, ২০/০৬/২০০৯ - ৯:৪৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

auto

প্লেন থেকে নেমে এয়ার্পোরটের গেট দিয়ে বেরিয়েই দেখি বাবা দাঁড়িয়ে আছেন আমাকে রিসিভ করতে। বাবা, আমার চির পরিচিত বাবা।

বাবাকে আলিঙ্গন করতে গিয়ে থেমে গেলাম একটু। চেহারায় বয়সের ছাপ এসেছে। এ ক’বছরেই বুড়িয়ে গেছেন অনেক। তা হবে নাই বা কেন। সত্তর ছাড়িয়েছেন বেশ ক’বছর হল। মাথার কাশবন আরো ফিকে হয়ে এসেছে, কিন্তু চোখ দুটো আগের মতই প্রাণময়।

-‘তোমাকে বললাম এত ঝামেলা করে আসতে হবে না, আমি ট্যাকসি নিয়ে চলে যেতে পারতাম’। কৃত্রিম উষ্মা দেখানোর চেষ্টা করলাম ভারিক্কি ঢং এ।

বাবা হাসলেন, কিছু বললেন না। মনে মনে হয়তো বললেন, ‘তুই বললি আর আমি শুনলাম আর কি! আমার একটা ভাবনা আছে না!’। বাংলাদেশে কখনো পা দিলে বাবা আসবেনই আমাকে এয়ার্পোট থেকে তুলে নিতে। এটাই তার কাছে নিয়ম। ঝড়, ঝঞ্ঝা, বিপদ আপদ, দুর্ভিক্ষ, মহামারী, বন্যা, হরতাল ...ঢাকা শহরে যাই থাকুক না কেন সেসময় তিনি আসবেন। আমার জন্য তার ‘একটা ভাবনা আছে না!’

এটা আমি জানি। কারো কথায় পরোয়া না করে নিজের বিবেক যা বলে তাই তিনি করেন। ছোটবেলা থেকে তাকে এভাবেই জানি। এই রোগটা আমার মধ্যেও আছে কিঞ্চিত। কারো কথায় পছন্দ না হলে এড়িয়ে যাই, কখনো বা মুখের উপরই বলে দেই সেটা। কারো ধার ধারতে ইচ্ছে হয় না। কোন কোন মহলে ‘অসামাজিক’ হিসবেও কুখ্যাতি আছে আমার। কিন্তু যারা আমার সত্যিকারের বন্ধু তারা আমার এই স্বভাবের জন্যই পছন্দ করে। তারা হয়ত আমার জন্য পারলে জানটাও দিয়ে দেবে। আমি অসামাজিক হতে পারি, কিন্তু তারপরও বন্ধুভাগ্য আমার দারুন ভাল – এ কথা বলতেই হবে। বাবারও বোধ হয় তাই।

কিন্তু বাবার এই ‘একগুঁয়ে’ স্বভাবটা আমার মার আবার পছন্দ ছিলো না কখনই। আমার মা খুব সাধাসিধে আটপৌরে জীবন যাপনে অভ্যস্ত। যত ঝুট-ঝামেলা এড়িয়ে সবার সাথে মানিয়ে শুনিয়ে থাকতে পারাতেই তার শান্তি। তার জীবনের উদ্দেশ্য সংসারটাকে ঠিক রাখা আর আমাদের দু-ভাইয়ের মঙ্গলেই সীমাবদ্ধ। ওই যে ছোটবেলায় কিছু প্রবচণ পড়েছিলাম না – ‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’ – আমার মা ছিলেন এই প্রবচণ বাস্তবায়িত করার প্রচেষ্টার সার্থক প্রতিভূ। ছোটবেলা থেকে তাইই দেখে এসেছি। তা না হয়ে উপায়ও ছিল না। আমার বাবাকে ছোটবেলা থেকেই দেখেছি বহির্মুখী স্বভাবের। পেশায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সারা দিন ল্যাব রিসার্চ, ছাত্র-ছাত্রীদের সমস্যা নিয়েই কাটাতেন। কোয়ান্টাম মেকানিক্স আর ইলেক্ট্রম্যাগনেটিজমের সমস্যাগুলো তার ছাত্র-ছাত্রীদের এক নিমেষে বুঝিয়ে দিতে পারলেও সংসারের দৈনন্দিন জীবনের চাল ডালের হিসেবগুলো তার মাথায় কখনোই ঢুকতো না। হয়ত ঢুকানোর চেষ্টাও করতেন না। আমার মা তার নিপুন হাতে আমাদের অগোছালো সংসার গুছিয়ে রাখতেন। আর অন্যদিকে বাবা ছিলেন যাকে বলে গৃহী-বৈরাগী। আমি জানতাম না বাবার এই ‘বৈরাগী’ স্বভাবটা আমিও পেয়েছি পুরোমাত্রায়। ব্যাপারটা ভাল করে বুঝেছি আমেরিকায় এসে বিয়ের পরে। দশ-টা পাঁচটা অফিস করে বাসায় এসেই কম্পিউটারে বসে পড়ি। অন্যদিকে সিঙ্কে স্তুপ হয়ে জমে থাকে দুই দিনের পুরোনো খাবারের থালা বাসন। আমি সেগুলো দেখতেই পাই না। বন্যার ধাতানি খেয়ে সম্বিত ফেরে কখনো সখনো। উইকেন্ডে আধা বেলা পার করে ঘুম থেকে উঠে লিখতে বসে যাই, কিংবা ম্যাট রীডলীর নতুন বই নিয়ে সোফায় বসে পড়ি- আর বাড়ির সামনে লনের ঘাস বড় হয়ে আগাছায় ছেয়ে যায়, দরজার ওপরের ঝুল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়। আমার চোখেও পড়ে না সেগুলো। আমার স্ত্রী অবাক হয়ে ভাবে, এত দিকবিদিকশুন্য মানুষ হয় কিভাবে!

আমার বাবারা তিন ভাই ছিলো। বাবা তাদের মধ্যে মেজ। আমার অনেকটা বয়স হবার আগ পর্যন্ত জানিইনি বাবার আরো ভাই আছে। কারণ, তারা ছোটবেলায় ‘ইন্ডিয়া চলে গ্যাছে’। যেদিন এটা জানলাম সেদিন থেকেই আমার মনে প্রশ্ন, বাবা এ দেশে থেকে গেল কেন? একদিন ছোটবেলায় জিজ্ঞাসা করলাম – ‘বাবা তুমি ইন্ডিয়া যাওনি কেন, জ্যেঠু আর কাকুর মত?’ বাবা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘ইন্ডিয়া তো আমার দেশ নয়, ওখানে যাব কেন?’ আমি থতমত খেয়ে গেলাম। এমন উত্তরের জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলাম না। ভেবেছিলাম বাবা বলবে, ‘আরে চেষ্টা করেছিলাম, যাওয়া হল না’। কিংবা বলবে, ‘চাকরি বাকরি নিয়ে এমন জড়িয়ে গেলাম যে যাওয়া হল না’ ইত্যাদি। কিন্তু বাবা সেদিকে একেবারেই গেলেন না। বললেন, ওদেশে কেন যাব?

সত্যিই তো ও দেশে কেন যাবেন! বাবার দেশপ্রেম যে আর দশটা মানুষের চেয়ে অনেক অনেক বেশি তা বুঝতে আমার অনেকটা সময় লেগেছিলো। ছোটবেলায় আমার বন্ধুদের অনেকেই আমাকে জিজ্ঞাসা করত, ‘ইন্ডিয়ায় তোদের জমি আছে কোথায়?’ আমি প্রথম প্রথম খুব অবাক হতাম। ইন্ডিয়ায় জমির প্রশ্ন আসে কেন? পরে বুঝেছিলাম – হিন্দু নামের কাউকে দেখলে অনেকটা স্বতঃসিদ্ধভাবে ধরেই নেওয়া হয় – ব্যাটা এক পা ভারতে দিয়ে বসে আছে। কাজেই ভারতে তো জমি থাকতেই হবে। অথচ কি করে তাদের বোঝাই – ভারতে জমি কেনা আমাদের জন্য অপশনই ছিলো কখনো। আমি কথা বাড়াইনা, মনে মনে কেবল হাসি। কারণ, ততদিনে বুঝে গেছি – বাবাকে জিজ্ঞাসা করলেই নির্ঘাত উত্তর আসবে – ‘ওদেশে জমি কিনবো কেন?’

না জমি কেনা বাবার আর হয়নি। না ভারতে, না বাংলাদেশে। গাড়ি, বাড়ি, টাকা পয়সার পেছনে বাবাকে তাড়িত হতে দেখিনি কখনো। তার আশে পাশের অনেকেই যখন বিভিন্ন উপায়ে টাকা পয়সা বানিয়ে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছেন, বাবা তখন সেগুলো বাদ দিয়ে দেশের কথা ভেবেছেন, তার প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীদের কথা ভেবেছেন, পরীক্ষার সিলেবাস কিভাবে আরো গঠনমূলক করা যায় তাই নিয়ে অহর্নিশি চিন্তা করে গেছেন। বাবার এ সমস্ত কোন কাজেই বাসায় বাড়তি অর্থ যোগান দেয়নি। বাবা এ সমস্ত ‘বাইক্যা কাজের’ পেছনে যত সময় দেয়, মার মেজাজ তত তিরিক্ষি হয়ে ওঠে। বলে, ‘দেশ দেশ করেই লোকটা গেল’। মার মুখে শুনি, ষাটের দশকে ইংল্যান্ডের লীডসে পিএইচডি করতে গিয়ে বাবা নাকি পাঁচ বছরের কাজ তিন বছরেই করে ফেলেছিলেন। তার কাজ নাকি এত ভাল হয়েছিলো যে তার সুপারভাইজার সে সময় তাকে ইংল্যান্ডেই থেকে যেতে বলেছিলেন। তার ল্যাবেই চাকরী পাকা করার কথা বলেছিলেন। বাবা থাকেননি। দেশের টানে চলে এসেছেন। দেশ তখন স্বাধীনতার জন্য উত্তাল। বাবা দেশে এসেই উনসত্তুরের অসহযোগ আন্দোলনে জড়ালেন, একাত্তুরে করলেন মুক্তিযুদ্ধ। যুদ্ধের ডামাডোলের মধ্যেই আমার জন্মের খবর পেলেন। বাবা তখন কুমিল্লার বর্ডারে যুদ্ধ করতে করতে ভারতে গিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্ল্যানিং সেলের সদস্য হয়ছেন। সেখান থেকে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির জেনেরাল সেক্রেটারীর কাজগুলোও তাকেই সামলাতে হচ্ছে। আমার জন্মের খবর পেলেও সময় মত আসতে পারলেন না। যখন আসলেন, অভিমানী মা তার সাথে কথা না বলে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে রইলেন। বাবা তার প্রথম সন্তানকে কোলে তুলে নিলেন জন্মের চৌদ্দদিন পরে।

না বাবা আমাকে রাজপ্রাসাদে রেখে বড় করতে পারেননি। পারেননি অঢেল বিত্তবৈভবের মধ্যে আমাদের দু ভাইকে বড় করতে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাও যেরকম ভাবে মধ্যবিত্ত স্বচ্ছলতাটুকু ধরে রাখতে পারতেন সে সময়, আমাদের পরিবার সেটুকুও পারতো না কখনো সখনো। এর কারণ ছিলো। আমার দাদা-দাদী ছিলেন বয়োবৃদ্ধ, থাকতেন দিনাজপুরে। বাবার দু’ভাই ভারতে চলে যাওয়ায় বাবার একা তাদেরকে দেখতে হয়েছে বহুদিন। মাসে মাসে টাকা পাঠাতে হয়েছে। শুধু তাই না। দিনাজপুরের গরীব আত্মীয় স্বজনকে বাবা প্রায়ই লুকিয়ে ছাপিয়ে সাহায্য করতেন। মাকে ভয়ে বলতেন না। কারণ, মা রাগ করবেন। রাগ করারই কথা। এমনিতেই আমাদের বাসায় নুন আনতে পান্তা ফুরানোর দশা – সেখানে আমার বাবা ‘দাতাকর্ণ’ সেজে বসে আছেন। এটা জানলে যে কেউই রাগে ফেটে পড়তে বাধ্য। কতদিন দেখেছি – দিনাজপুরের সুদূর গ্রাম থেকে গাছের একটা কাঁঠাল নিয়ে আমাদের বাসায় চলে এসেছেন দিনাজপুর থেকে আমার কোন এক পিসেমশাই। তার মেয়ের বিয়ে। কিছু টাকা দিতে হবে। বাবার সাথে বৈঠকখানার দরজা বন্ধ করে পথা বলেন। চলে যাবার পরে মা বাবার দিকে কড়া চোখে তাকান-

- কে এসেছিলো?

- এই গোপাল আসলো ...

- কি প্রয়োজন?

- এই বুলির বিয়ে। কিছু টাকা লাগবে ...

- তুমি দিয়ে দিলে?

- না, না । আমার আর টাকা কই? বলেছি টাকা দিতে পারবো না। খুব দুঃখ পেয়ে চলে গেল বুঝলে।

বললেন বটে, তবে কিছুদিন পরেই কিভাবে যেনো বেরিয়ে যেত বাবা দশ-পনেরো হাজার টাকা দিয়ে দিয়েছিলেন। সে সময় দশ হাজার টাকা অনেক টাকা। মা মাথার চুল ছিঁড়েন ... আর আমাদের গাল পাড়েন – তোর বাপের জন্যই সংসারটার আজ এই দশা!

মা যাই বলুক না কেন, সংসারটা কিন্তু অতটা খারাপ ছিল না আমাদের জন্য। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের এক ছোট্ট বাড়ির নোনাধরা দেয়াল আর স্যাঁতস্যাঁতে ছাদের নীচে থেকে আমরা সেটাকেই আমরা দু-ভাই তাজমহল ভেবেছি। ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসেই ছিলো উদয়ন স্কুল। সেখানে পড়তে গেছি পায়ে হেটে। দূরে কোথাও যেতে হলে রিক্সাই ছিলো অবলম্বন। বাড়ীর পাশেই বিরাট মাঠে ফুটবল ক্রিকেট খেলে কাটিয়েছি। বাবার কাছে বায়না ছিলো ভাল একটা ক্রিকেট ব্যাট। আমার মনে আছে, প্রথম যখন একটা ভাল ক্রিকেট ব্যাট বাবা নিউমার্কেট থেকে কিনে দিয়েছিলেন, আনন্দে প্রায় কেঁদে ফেলেছিলাম। পরে শুনেছিলাম বাবাও নাকি ছাত্রজীবনে ক্রিকেট খেলতেন। বাবা আমাকে ‘রাজপুত্রে’র মত বড় করতে পারেননি বটে, কিন্তু বাবাই আমাকে যত রাজ্যের বইয়ের জগতের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। আমাদের শেলফে ছিলো মুক্তধারার কিশোর –বিজ্ঞানের মজার মজার সমস্ত বই। জাফর ইকবালের ‘মহাকাশে মহাত্রাশ’ কিংবা স্বপন কুমার গায়েনের ‘স্বাতীর কীর্তি’ কিংবা ‘বার্ণাডের তারা’ এগুলো তার কল্যানেই পড়া। বাবাই আমাকে হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলেন সুকুমার রায়ের রচনা সমগ্র। হযবরল-এর বিড়াল, পাগলা দাশু আর হেশোরাম হুঁশিয়ারের ডায়রীর কথা জেনেছি তার কাছ থেকেই। বাবাই আমার মনে বপন করেছিলেন মুক্তবুদ্ধি আর সংশয়ের প্রথম বীজ। বাবাই আমাকে আবৃত্তি করতে শিখিয়েছিলেন রবিঠাকুরের প্রশ্ন কবিতা –

‘...আমি যে দেখেছি গোপন হিংসা, কপট রাত্রী ছায়ে
হেনেছে নিঃসহায়ে,
আমি যে দেখেছি প্রতিকারহীন শক্তের অপরাধে
বিচারের বাণী নিরবে নিভৃতে কাঁদে।

কন্ঠ আমার রুদ্ধ আজিকে
বাঁশি সঙ্গিত হারা
অমাবশ্যার কারা
লুপ্ত করেছে আমার ভূবণ
দুঃস্বপনের তলে
তাই তো তোমায় সুধাই অশ্রুজলে।

যাহারা তোমার বিষায়েছে বায়ু
নিভায়েছে তব আলো
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ
তুমি কি বেসেছ ভালো?’

সত্যি বলতে কি - বাবার প্রতি আমার শ্রদ্ধা আর ভালবাসা বৃদ্ধি পেয়ছে আমার দেশ ছাড়ার পর অনেক বেশি। এর কারণ আছে। বাবা বরাবরই ছিলেন অন্তর্মুখী চরিত্রের একজন মানুষ। বাবার কথা মনে হলেই আমার চোখের সামনে ভেসে উঠত সিগারেট হাতে ধরা গম্ভীর প্রকৃতির একজন রাগি রাগি মানুষের ছবি। বাবাকে আসলে আমি ভয় পেতাম। এই রাশভারি মানুষটির সাথে একটা অলিখিত দূরত্ব তৈরি হয়ে গিয়েছিলো কোন কারণ ছাড়াই। এর বেশিকিছু ভাবার অবকাশ আসলে আমি কখনো তেমন করে পাইনি। তার ভেতরের মানুষটাকে বুঝতে আমার সময় লেগেছে। যতদিন দেশে ছিলাম ততদিন বাবাকে আর দশটা বাবার মত সাধারণই ভাবতাম। কিন্তু মানুষ হিসবে বাবা যে আসলে কত বড় তার নমুনা টের পেয়েছি দেশ ছাড়ার পর। একটামাত্র নমুনা দেই। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর পরই দেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার বৃদ্ধি পেয়ছে। দেশের বাইরে ইন্টারনেটে পত্রিকা খুলে নানা ধরণের খবর পাই। আজ বজেন্দ্র দাসের বাড়ি আক্রমণ তো কাল সুহাসের। আজ পুর্ণিমা গণধর্ষনের শিকার, তো কাল মমতা। উদ্বিগ্ন হয়ে প্রতিদিনই বাসায় ফোন করি। জানলাম বাবা বাসায় নেই। বরিশালে চলে গেছেন। সাম্প্রদায়িক আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্থ একটি গ্রামে গিয়ে সাহায্য করেছেন। একটি গ্রুপের সাথে মিলে ভেঙ্গে যাওয়া বাড়িঘর তুলছেন, মানুষকে সংঘবদ্ধ করেছেন। এমন একটি সময় যখন মানুষ ঘর থেকেই বেরুচ্ছে না, বাবা তখন নিজ উদ্যোগে দু হাতে ‘জঞ্জাল সরানোর’ দায়িত্ব নিয়েছেন, দক্ষিণাঞ্চলের গ্রামকে গ্রাম চষে ফিরছেন। বাবার হটকারিতায় উদ্বিগ্ন হই, চিন্তিত হয়ে পড়ি। ভাবি, বাবা যদি আর না ফেরেন? মার সাথে রাগারাগি করি – কেন যেতে দাও এ সমস্ত ছাই পাশে! কিছু যদি হয়? মাও উলটো ঝামটি দেন – তোর বাপ কি শুনে নাকি আমার কোন কথা!

কিন্তু কিছুই হয় না বাবার। বাবা ফেরেন। ‘জঞ্জাল সাফ’ করেই ফেরেন, তার পক্ষে যতদূর সম্ভব। শুধু তাই নয় - ভবিষ্যত জঞ্জালে যেন দেশ ছেয়ে না যায় সেজন্য জড়িত হন সম্প্রীতি মঞ্চ, শিক্ষা আন্দোলন মঞ্চের কাজের সাথে। সংগঠিত করেন মানুষজনকে মানব বন্ধনে আসতে। এ সবই আমি দেখি পত্রপত্রিকার খবরে। পত্রিকার খবর থেকেই পাই বাবা শুধু সংখ্যালঘু হিন্দু নয়, পাহাড়ি জনগনের জন্যও কাজ শুরু করছেন। তাদের সংস্কৃতি আর অধিকার রক্ষায় উদ্যোগ নিচ্ছেন, ব্রহ্মপুত্রের বন্যাবিদ্ধস্ত চরে স্কুল পুননির্মাণ করেছেন, কখনোবা সাংবাদিক মানিক সাহার পরিবারের পাশে এসে দাড়াচ্ছেন। এ সব খবরই পাই পত্র-পত্রিকা থেকে। মনটা উদাস হয়, সেই সাথে বাড়ে বাবার জন্য গর্ব।

এর মধ্যে ২০০৫ সালে আমি একটা বই লিখি – ‘আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’। মুলতঃ মহাবিশ্বের উৎপত্তির সাম্প্রতিক ধ্যান ধারণাগুলো নিয়ে বই। বইটার লেখাগুলো সিরিজ আকারে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন জায়গায় প্রকাশিত হয়েছিলো। অনেকেই লেখাগুলো বই আকারে প্রকাশ করতে আমাকে পরামর্শ দেন। কিন্তু পরামর্শ দিলে কি হবে আমার কোন প্রকাশকের সাথে কোন যোগাযোগ ছিলো না। আমার বই ছাপাবে কে? এক্ষেত্রেও বাবাই হলেন আমার ভরসা। তিনি আমাকে অংকুরের মেসবাহউদ্দিনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। মেসবাহউদ্দিন পান্ডুলিপি পড়ে তা ছাপাতে মনস্থ করলেন। কিন্তু প্রকাশক চাইলে কি হবে? বাবা আমার পান্ডুলিপি নিয়ে বসলেন এবারে। নির্দয়ভাবে কলম আর কাঁচি চালালেন। যেখানে পছন্দ হল না বাদ দিলেন। যেখানে সন্দেহ, সেখানে হাজার জায়গায় রেফেরেন্স চাইলেন। বাবার সাথে তাল মিলাতে গিয়ে আমার অবস্থা আক্ষরিক অর্থেই ত্রাহি ত্রাহি। আমি দিব্য দৃষ্টিতে বুঝে গিয়েছিলাম বাবার ছাত্রদের থিসিস লিখতে গিয়ে কি করুণ দশা হত। বইটা বেরুনোর পর বইটা বহু বিদগ্ধজনের দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হয়েছিল, কেউ কেউ একে বাংলাভাষায় লেখা বিজ্ঞানের অন্যতম ‘ক্লাসিক গ্রন্থ’ হিসবেও অভিহিত করেছিলেন। কিন্তু কেউ হয়তো জানবে না যে, বইটার সাফল্যের পেছনে অনেকখানি কৃতিত্বই বাবার। এ বইটা প্রকাশের পর বাবা আমাদের অনেকগুলো বইয়েরই এডিটর হিসবে কাজ করেছেন। আমাদের বইগুলো ঠিকঠাক করে দেন, কিন্তু নিজের হাজারো লেখাগুলো সংকলিত করে বই ছাপানো আর তার হয়ে ওঠে না। আর আমি তার সু্যোগ্য পুত্র – কখনোই সেকথা মনে করিয়ে দেবার ফুরসতটুকুও পাইনা।

আমার আর বন্যার বিয়ের পর আমাদের অনেক আত্মীয় স্বজন তো বটেই আমার মা বা বন্যার বাবার জন্যও মেনে নেওয়া কষ্টকর ছিলো। আমরা দুজন কেউই ধর্ম কর্মের ধার না ধারলেও ‘রাফিদা আহমেদ বন্যা’ আর ‘অভিজিৎ রায়’-এর মধ্যকার বিয়ে শুনলেই এর মধ্যকার তাৎপর্যটুকু অনেকে উপলব্ধি করতে পারবেন। বিয়ের পর বুঝেছি বাবা ছিলেন মনে প্রাণে কত আধুনিক একটা মানুষ। বন্যা আর আমার সম্পর্ক কখনো তাকে উদ্বিগ্ন করেনি। চারপাশের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা এড়িয়ে তার সবটুকু নিয়ে সব সময়ই দাঁড়িয়েছেন আমাদের পাশে। বন্যার সাথে তার সম্পর্ক দেখলে আবাক হই। যে মানুষটিকে রাগি রাগি অন্তর্মুখী চরিত্রের ভাবতাম – তার মুখ দিয়ে কথার খই ফোটে। আর আমি মনে মনে ভাবি- এ বাবাকে তো আমি চিনতাম না !

মানুষটার ভিতরের মানবিকতাটুকু যে আসলে আকাশের চেয়েও বিশাল তা আমি বুঝিনি। আমি টের পাইনি - ছোটখাট গড়নের এ মানুষটির উচ্চতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে একদিন আকাশ ছুঁয়েছে। আমি জানতাম না আমার এত মানুষজনের সাথে পরিচিতি থাকার পরও কি করে বাবাই যেন আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধুতে পরিণত হয়ে গিয়েছেন। না সে কথা আমি তাকে কখনো বলিনি। বলা আর হয়ে ওঠেনি। আমি প্রতিদিনই আমার পাশে তার বিশাল অস্তিত্ব টের পাই। তিনি আছেন, পৃথিবীর অর্ধগোলার্ধ দূরে অবস্থান করেও তিনি আমার পাশে থাকেন। বাবাও কি সেরকম করে আমার অস্তিত্ব টের পান? হয়তো বা পান। কারণ শেষবার দেশে গিয়েছিলাম, আমার মামাতো ভাই আমার কানে কানে বলে উঠেছিলো –‘তুমি দেশে আসলেই তোমার বাবার শক্তি আর উদ্যম যেন তিনগুন বেড়ে যায়’। আমি টের পাইনা। বাবাকে আমি আগের মতই একই রকম ভাবে দেখি- শান্ত, সৌম, কোথায় যেন একটু রাগি রাগি, অন্তর্মুখী, নিজের কাজ নিয়ে সদা ব্যস্ত।

দেশ থেকে ফিরে আমিও নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে যাই। বাবাও তার আপন জগৎ নিয়ে দেশে ব্যস্ত সময় কাটান। এত দূরে থেকেও কোথায় যেন কোয়ান্টাম এন্টাংগেলমেন্টের-এর মতো এক অদৃশ্য বন্ধন টের পাই। কোন এক নিঝুম রাতে বাইরে বেরিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ইদানিং আনমনা হয়ে যাই। সুমনের গানটা মনে পড়ে যায় বড্ড বেশি করে –

তিনি বৃদ্ধ হলেন, বৃদ্ধ হলেন, বনস্পতির ছায়া দিলেন সারা জীবন।
এই বুড়ো গাছের পাতায় পাতায়, সবুজ কিন্তু আজো মাতায়, সুঠাম ডালে ...

বাবার সাথে ফোনে কথা বললেই ইদানিং নিজেকে খুব ছোট মনে হয়। নিজেকে ক্ষুদ্র মনে হয়। মাঝে মধ্যে এই ছোট মনে হওয়াটা বোধহয় জরুরী।


মন্তব্য

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

নিজের বাবার কথা মনে পড়ে চোখটা ঝাপসা হয়ে গেল। বাকিটা পড়তে পারলাম না। মন খারাপ

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

অভিজিৎ এর ছবি

আপনার পিতার প্রতিও আমার বিনম্র শ্রদ্ধা রইলো।



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

মূলত পাঠক এর ছবি

কী আর মন্তব্য করি। শ্রদ্ধা জানালাম।

অভিজিৎ এর ছবি

আপনার বাবাকে লিয়ে আপনার লেখাটাও হৃদয়ছোঁয়া। উনার প্রতিও আমার শ্রদ্ধা রইলো।



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

জিজ্ঞাসু এর ছবি

‘ইন্ডিয়া তো আমার দেশ নয়, ওখানে যাব কেন?’
পড়তে পড়তে চোখে পানি এসে গেল। মানুষের নিজের সংসারের বাইরেও অনেক কিছু করার আছে, করার থাকে; সেজন্যই মানুষ মানুষ। সকলে তা পারে না। বাবার জন্য ভালবাসা ও শ্রদ্ধা।

___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে

আহমেদুর রশীদ এর ছবি

শ্রদ্ধা...

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে

---------------------------------------------------------

ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

শ্রদ্ধা।

মামুন হক এর ছবি

শ্রদ্ধা। বাবা দীর্ঘজীবি হোন, আপনিও।

Masud এর ছবি

Dear Abijit

Thanks for your writting. I am very sorry I could not write Bangla in computer and I am very sorry for it. I know your father personaly as I have partcipated different program with him. He is a great man with big heart. His love for his country and humanity is examplory for us. I wish him along life and good health.

Masud

অভিজিৎ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ মাসুদ্‌ পড়বার জন্য এবং সেই সাথে মন্তব্যের জন্য। জানি বাবার সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা কম বেশি অনেকেরই আছে। সেরকম একজনের মন্তব্য দেখে সত্যই ভাল লাগলো।



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

অসাধারণ...

সাজেদ এর ছবি

অসাধারন!

অনিকেত এর ছবি

অভিজিৎ দা'

খুব ছুঁয়ে যাওয়া লেখা।

শ্রদ্ধা রইল এই দেশের এক প্রথিতযশা পদার্থবিদ,শিক্ষক, সমাজসেবী এবং সর্বোপরি একজন দেবকোটির মানুষ এর প্রতি---

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

শ্রদ্ধা ।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

s-s এর ছবি

আপনি উদয়নের?
পুরনো না 'কি নতুন কোন্ বিল্ডিংটায় ক্লাস করতেন? বাবার স্মৃতিচারণ খুব ছুঁয়ে গেলো।

অভিজিৎ এর ছবি

পুরোনটায় (মুড়ির টিন হাসি )

আপনি?



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

s-s এর ছবি

আমি দু'টোতেই, যে বছর আমরা ম্যাট্রিক দেই, সে বছর নতুন বিল্ডিংয়ে চলে যায় উদয়ন, কিন্তু কেন যেন আপন মনে হতোনা, আমরা শুধু এসএসসির কোচিং করেছিলাম ওখানে তারপর বিদায়।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

শ্রদ্ধা জানাই।

মৃদুল আহমেদ এর ছবি

ভাষা নেই।
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়...

--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'

শিক্ষানবিস এর ছবি

অন্তর ছুঁয়ে গেল। এরকম বাবা কজনার ভাগ্যে জোটে!
অজয় রায়ের সাথে আমার একবারই দেখা হয়েছিল, ডারউইন দিবসের ড়্যালিতে। লেখায় এবং কর্মে বিশাল জায়গা জুড়ে অস্তিত্বশীল একজন মানুষের এত সাদাসিধে চালচলন মুগ্ধ করেছিল।

মাহবুব সাঈদ মামুন এর ছবি

অন্তর পুঁড়ে বাঁধ ভাংগা জোয়ারের মতো হু হু করে বার বার কাঁদলাম। যতবার পড়ি ততবার শুধু চিৎকার করে একা একা ঘরে বসে কেঁদেছি। কারন প্রথমতঃ আমার বাবার (মৃত) কথা মনে পড়ায় দিতীয়তঃ অজয় স্যার কে আমি এত কাছ থেকে চিনি ও জানি যার তুল্য ওনি নিজে একাই এবং যার সাথে কারো তুলনা চলে না।এবার দেশে স্যার এর বাসায় গিয়ে বুঝতে পেরেছি ওনি কত সাদামাটা সারাটা জীবন কাটালেন তা আমি সহ আমার বন্ধুদের চোখে ও মনে এক জলন্ত উদাহরন হয়ে থাকল ।
ওনার সুযোগ্য পুএ অভিজিত "বাবা দিবসের" এমন অন্তর ছোঁয়া লেখা আমাদের অনেক-কে কাঁদাবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।
বাবা দিবসের দিনে সবাই কে শুভেছছা রলো।

মাহবুব সাঈদ মামুন
ষ্টকহোম
২১।০৬।২০০৯

সুধীর (অতিথি) এর ছবি

পিতা সম্পর্কে আপনার এই লেখাটি আপনাদের চমৎকার সম্পর্কের সুন্দর নিদর্শন। আপনাদের দুজনের মধ্যে অনেক মিল আছে, ভালো ও মন্দ। বেশ কিছু তথ্যগত ভুল আছে এই রচনায়। কিন্তু আজ পিতা দিবসে সেগুলো না-ই উল্লেখ করলাম। আপনার পিতার সুস্বাস্থ্য কামনা করি।

অভিজিৎ এর ছবি

সুধীর,

আমি মানুষটা একটু কেয়ারলেস প্রকৃতির। সন তারিখের হিসেবগুলো আমার মাথায় ঠিক ধরে না। ঘটনার পরম্পরাগুলো মাঝে মধ্যে একে অপরের সাথে জড়িয়ে যায়। আপনি "বেশ কিছু তথ্যগত" ভুলের কথা বলেছেন। হতে পারে। বাবার উপর আমার এই লেখাটা পুরোটুকুই আমার ছেলেবেলাকার স্মৃতি থেকে লেখা। আমার চেয়ে বাবার ছাত্র-ছাত্রীরা কিংবা সহকর্মীরা হয়ত আরো কাছ থেকে তাকে দেখেছেন। আমার দেখায় ভুল থাকা বিচিত্র কিছু নয়। তারপরেও আমি ছেলেবেলাকার ছোট্ট চোখে যেভাবে বাবাকে দেখেছি সেটাই আমার কাছে সত্য।

আপনার ব্যতিক্রমী মন্তব্য দেখে ভাল লাগল। আসলে 'ভাল মন্দ' সবার মধ্যেই আছে। আমার মধ্যেও, আপনার মধ্যেও। আমি লেখায় কাউকে অযথা দেবতা বানানোর চেষ্টা করিনি। আসলে কেউই আমার কাছে দেবতা নয়। ছোটখাট মন্দ দিক উঠে আসাই আসলে উচিত। না হলে আর মানুষ কেন। আমি লক্ষ্য করেছি, আমার লেখায় আপনার বেশিরভাগ মন্তব্যেই সমালোচনার তীর থাকে, বেশি কিংবা কম। এ মন্তব্যটিও সে দিক থেকে ব্যতিক্রম নয়। যদিও ভুলের উল্লেখ করেছেন, কিন্তু সেগুলো বিস্তৃত করেননি। এরকম সমালোচনা আসলে ভুল উত্তরোণে খুব বেশী সহায়ক নয়। তবুও আপনার মন্তব্য আমার ভাল লেগেছে, এ কারণে - আমি সত্যই মনে করি অর্থহীন প্রসংশাবাক্যের চেয়ে সমালোচনা উত্তম হাসি । আপনারো সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।



পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)


পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

আপনার বাবাকে অনেক শ্রদ্ধা।

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

পিতা-পূত্রকে লাল সালাম।
আপনার লেখা সচলে অনেক পরে পড়েছি। আগে পড়েছি অন্যান্য বাংলা সাইটে।

মানুষের চোখ খুলে দেবার কাজটি করে যাবেন এটাই আমার প্রত্যাশা। নিজের অনেক দূর্ণাম করেছেন; কিন্তু বাবার সুযোগ্য সন্তান যে হয়ে উঠেছেন সেটা কিন্তু পরিস্কার বোঝা গেলো!

ভালো থাকুন।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

অসাধারণ লাগল লেখাটা। আপনার বাবাকে শ্রদ্ধা জানাই। এমন মানুষ সত্যিই সচরাচর চোখে পড়ে না।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

আশ্চর্য যে এই লেখাটা চোখ এড়িয়ে গিয়েছিলো...।
শ্রদ্ধা...

---------------------------------------------------------------------------

মধ্যরাতের কী-বোর্ড চালক

রাজিব মোস্তাফিজ এর ছবি

আমি সচলায়তনে(এবং অন্য কোন ব্লগেও)অতটা নিয়মিত নই বলে সম্ভবত এই অসাধারণ লেখাটি চোখ এড়িয়ে গিয়েছিলো। সত্যিই অসম্ভব সুন্দর একটি লেখা। শুধু সুধীর এর মন্তব্যে এসে তালটা একটু কেটে গেল।
অনেক ধন্যবাদ অভিজিত্ এমন একটা লেখা উপহার দেয়ার জন্য। লেখাটি পড়ে মনে হলো-- এমন একজন মানুষই তো হতে চাই।

রাজিব মোস্তাফিজ

চরম উদাস এর ছবি

ও অভিজিৎদা, বাবার আগে আপনিই বৃদ্ধ হয়ে গেলেন ...

তিথীডোর এর ছবি

গুরু গুরু

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

অতিথি লেখক এর ছবি

...........

রাসিক রেজা নাহিয়েন

অতিথি লেখক এর ছবি

চোখে পানি চলে আসলো। আমরা যে কি হারিয়েছি সেটা বুঝতে হয়ত আরও কিছু সময় লাগবে। বিজ্ঞানের প্রতি ভালোবাসা জন্মেছে জাফর ইকবাল আর অভিজিৎ রায়ের লেখা পড়ে। আফসোস, আপনাদেরকে আমরা মূল্যায়ন করতে পারলাম না।

ফাহমিদুল হান্নান রূপক

স্বপ্নের ফেরিওয়ালা  এর ছবি

একজন অভিজিৎকে পাওয়া যে কি পরিমাণ সৌভাগ্যের তা এই মরার দেশ বুঝলনা।এই আফসোস শেষ হবার নয় মন খারাপ

অতিথি লেখক এর ছবি

এ লিখার বাবাকে এবং ছেলেকে কিছু বলার যোগ্যতা আমার নেই। লিখাটি ফেসবুকে শেয়ার করায় যার কারণে পড়ার সৌভাগ্য হলো- শুধু তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।

সার্থক  এর ছবি

এই দুঃখ যে আমায় ছাড়ছে না। আমি কি করি?

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

মন খারাপ

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

তিনি বিদায় নিলেন…

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।