লেখাটি সচলায়তনে প্রকাশিত সাজিয়ার 'জ়েন্ডারের বাংলা কি?' লেখাটির সূত্র ধরে পোস্টানো হল। এ ছাড়া রণদীপম বসুর সাম্প্রতিক 'হিজড়া, প্রকৃতির বিচিত্র খেয়ালের এক দুর্ভাগা শিকার ' দিয়েও দারুনভাবে অনুপ্রাণিত।
পাঠকদের অভিমত কামনা করাছি।
১
মারিয়ার গল্প :
মারিয়া প্যাতিনো
১৯৮৮ সালের অলিম্পকের আয়োজনে যোগদানের প্রস্তুতি চলছে। মারিয়া প্যাতিনো নামের স্পেনের শীর্ষস্থানীয় মহিলা হার্ডলার অলিম্পিকে যোগদানের শেষ প্রস্তুতিটুকু সেরে নিচ্ছেন। মেয়েদের ইভেন্টগুলোতে যোগদানের নিয়ম হিসেবে তাকে একটি ছোট্ট পরীক্ষা সেরে ফেলতে হবে। সেই পরীক্ষায় দেখা হবে মারিয়া সত্য সত্যই মেয়ে কিনা।
সেটা নিয়ে অবশ্য মারিয়ার চিন্তা নেই। তিনি যে মেয়ে তা জন্মের পর থেকেই তিনি জানেন। যে কেউ তাকে দেখলেই মেয়ে বলেই মনে করবে। দেহকাঠামো, কাঁধের আকার, কটিদেশ নিতম্ব সব কিছুই বলে দেয় তিনি নারী। আগে নারী এথলিটদের গায়নোকলজিস্টদের প্যানেলের সামনে দিয়ে নগ্ন হয়ে হেটে যেতে হত। এখন পরিস্থিতি বদলেছে। এই অপমানজনক ব্যাপার স্যাপারের মধ্য দিয়ে তাদের যেতে হয় না। গালের পাশ থেকে সামান্য চামড়া নিয়ে জেনেটিক টেস্ট করে কিছুক্ষণের মধ্যেই ফলাফল জানিয়ে দেয়া যায়।
মারিয়া নির্বিঘ্ন চিত্তেই স্যাম্পল দিয়ে এলেন। কিন্তু ঘন্টাখানেক পরেই ডাক্তারের অফিস থেকে ফোন এল। কিছু একটা ঝামেলা হয়েছে। মারিয়াকে আবারো পরীক্ষা দিতে হবে। মারিয়া আবারো গেলেন। আবারো টেস্ট হল। এবারে আরেকটু ডিটেল পরীক্ষা। ডাক্তারদের মুখ দেখে বোঝার উপায় নেই ঝামেলাটি কি ছিলো।
মারিয়া যখন পরদিন অলিম্পিকের ট্র্যাকে প্রথমবার দৌড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন, ঠিক তখনই খবরটি ফাঁস করা হল। মারিয়া ‘সেক্স টেস্ট’-এ ফেল করেছেন। তিনি মেয়ের মত দেখতে হলেও ক্রোমোজমের গঠন অনুযায়ী তিনি পুরুষ। তার দেহকোষে Y-ক্রোমজোমের অস্তিত্ব রয়েছে। তার দেহের ভিতরে সুপ্ত অবস্থায় পুরুষাঙ্গের উপস্থিতি আছে। উপরন্তু, তার কোন ডিম্বাশয় এবং জরায়ু নেই। ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটির (IOC) ‘সংজ্ঞা’ অনুযায়ী তিনি নারী নন। কাজেই তাকে অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করতে দেয়া হবে না।
হতাশ মারিয়া স্পেনে ফিরে এলেন। স্পেনে আসার পর তার জীবনে আক্ষরিক অর্থেই কেয়ামত নেমে এলো। স্প্যানিশ কর্তৃপক্ষ মারিয়ার আগের সমস্ত টাইটেল এবং পদক কেড়ে নিলো এবং পরবর্তী সকল প্রতিযোগিতায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করলো। তার বয়ফ্রেন্ড তাকে ছেড়ে চলে গেলো। তার স্কলারশিপ বাতিল করা হল এবং হঠাৎ করেই মারিয়া নিজেকে দেখতে পেলেন অন্ধকারের এক অথৈ সমুদ্রে। পরে মারিয়া সেই দুর্বিষহ অবস্থার কথা বর্ণনা করে বলেছিলেন এভাবে - ‘আমাকে মানচিত্র থেকে স্রেফ মুছে ফেলা হল – এমন একটা ভাব যেন আমি কখনো ছিলামই না। অথচ আমি বারো বছর ধরে খেলাধূলার সাথে জড়িত ছিলাম, আর এই ছিলো তার প্রতিদান’ ।
এর পরের ঘটনা আরো নাটকীয়। মারিয়া তার গাঁটের হাজার হাজার ডলার খরচ করে ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হলেন। বহু ডাক্তারের সাথে তার মোলাকাৎ হল। ডাক্তারেরা অবশেষে তার এই অদ্ভুতুরে ‘রোগের’ কারণ খুঁজে পেলেন। তাকে জানানো হল, মেডিকেলের পরিভাষায় এই অবস্থাটিকে বলা হয় - Androgen Insensitivity । যদিও মারিয়া অন্য সব স্বাভাবিক ছেলেদের মত Y-ক্রোমজোম নিয়েই জন্মেছিলেন, এবং অন্য সব পুরুষের মত তার অন্ডকোষ থেকেও প্রচুর পরিমান পুরুষ হরমোন টেস্টোসটেরোন (এন্ড্রোজেন হরমোনের একটি স্টেরয়েড শ্রেনী) নিঃসৃত হয়েছিল, কিন্তু তার কোষগুলো শিশু বয়সে সেই নিঃসৃত হরমোনকে সনাক্ত করতে পারেনি। বিজ্ঞানীরা বলেন পৃথিবীতে বিশ হাজার পুরুষ শিশুর মধ্যে অন্ততঃ একজন এরকম ‘এড্রোজেন গ্রাহক’-জনিত সমস্যা নিয়ে পৃথিবীতে জন্মায় , যাদের কোষ এই নিঃসৃত এন্ড্রোজেন সনাক্ত করতে পারে না। মারিয়ারও তাই হয়েছিলো। এর ফলে মারিয়ার দেহে ‘পুরুষসুলভ’ বৈশিষ্টগুলো অনুপস্থিত ছিলো প্রথম থেকেই, যদিও তার ক্রোমোজমের গঠন ছিলো পুরুষেরই। তারপর বয়ঃসন্ধিকালে এন্ড্রোজেন নিঃসৃত হলেও তার দেহে এন্ড্রোজেনের প্রতি কোন সংবেদনশীলতা না থাকায় তার স্তন বৃদ্ধি পেল, কটিদেশ কমে আসলো, আর নিতম্ব ভারী হয়ে উঠলো, চারপাশের অন্যান্য নারীদের মতই। কাজেই মারিয়া দেখতে শুনতে এবং মন মানসিকতায়ও নারীই হয়ে উঠেছিলেন, তার ক্রোমজমে যাই থাকুক না কেন। নারীত্বের দাবী নিয়ে তার নিজের মনেও কখনোই সন্দেহের সৃষ্টি হয়নি।
মারিয়া আইওসি’র সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিলেন। কারণ, তিনি জানেন তিনি নারী, তিনি বড়ও হয়েছেন নিজেকে নারী হিসবেই দেখে। হঠাৎ করে কেউ এসে বললো –তিনি পুরুষ, আর হলো নাকি! তিনি স্ট্যনফোর্ড ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞানী এলিসন কার্লসনের সাথে মিলে তার নিজস্ব যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকলেন। বিজ্ঞানীরা আজ জানেন নারী কিংবা পুরুষ হবার ব্যাপারটা শুধু ক্রোমোজমের গঠনের উপরই নির্ভরশীল নয়, তার চেয়ে বেশী নির্ভর করে হরমোনের উপর । অথচ অলিম্পিক কমিটির পরীক্ষায় হরমোন সংক্রান্ত ব্যাপার স্যাপারই নেই। মারিয়া দাবী করলেন, তার পেলভিক কাঠামো এবং কাঁধের কাঠামোর গঠন এবং অন্যান্য দেহজ বৈশিষ্টগুলো দেখে যেন সিদ্ধান্ত নেয়া হয় নারীদের ইভেন্টগুলোতে প্রতিযোগিতা করা জন্য তার মধ্যে যথেষ্ট পরিমানে ‘নারীত্ব’ আছে কিনা! প্রায় আড়াই বছর ধরে যুদ্ধ চালানোর পর ইন্টারন্যাশনাল অ্যামেচার এথলেটিক ফেডারেশন (IAAF) মারিয়াকে পুর্বেকার পদে পুনর্বহাল করলো এবং ১৯৯২ সালে মারিয়া আবার স্প্যানিশ অলিম্পিক দলে যোগদান করতে পারলেন। ইতিহাসে এই প্রথম বারের মত কোন নারী আইওসির ‘সেক্স টেস্ট’ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে নিজের পরিচিতি নিয়েই অলিম্পিক দলে যোগদানের যোগ্যতা অর্জন করলেন। তবে আইএএফ মারিয়ার ব্যাপারে উদারতা দেখালেও আইওসি এখনও সেই সনাতন Y ক্রোমোজম দেখে সেক্স টেস্ট-এর রীতিতে বিশ্বাসী।
মারিয়ার মত ঘটনাগুলো আমাদের সামাজিক ক্ষেত্রে তৈরী করেছে যেমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতির, তেমনি প্রশ্নবিদ্ধ করেছে ‘সেক্স’ নিয়ে আমাদের সনাতন ধ্যান ধারণাগুলোকে। এ ধরণের বহু ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে চলতে চলতে আমরা অবশেষে বুঝতে ছিখেছি যে, শুধু বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য দেখে এমনকি ক্রোমজোমের গঠন দিয়ে নারী-পুরুষকে সংজ্ঞায়িত করার দিন আর নেই। মানুষের লৈঙ্গিক পরিচিতি তুলে ধরতে হলে বাহ্যিক প্রকৃতির পাশাপাশি গণ্য করতে হবে মানুষের সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক অবস্থাকেও। আর এ জন্যই সেক্স জিনিসটার পাশাপাশি জেন্ডারের ধারণা থাকা, এবং জেন্ডার-সচেতনতা থাকা এই একবিংশ শতাব্দীতে খুবই প্রয়োজনীয়।
সেক্স এবং জেন্ডার সমার্থক নয়। বাংলা ভাষায় শব্দদুটির আলাদা কোন অর্থ নেই, এদের সঠিক প্রতিশব্দও আমাদের ভাষায় অনুপস্থিত। দুটোকেই আমরা লিংগ বলে অভিহিত করি। আসলে সঠিকভাবে বলতে গেলে - সেক্স একটি শরীরবৃত্তিয় ধারণা। আর জেন্ডার মুলতঃ সমাজ-মনস্তাত্বিক অবস্থা। এই প্রসঙ্গে 'এনসাইক্লোপিডিয়া অব সাইকোলজিতে' বলা হয়েছে -
Sex refers to the physiological, hormonal and genetic makeup (XX or XY chromosome) of an individual; Gender is a cultural category that contains roles, behaviors, rights, responsibilities, privileges and personality traits assigned by that specific culture to men and women.
হেনরি বেঞ্জামিন তার 'ট্রান্সেক্সুয়াল ফেনোমেনন' প্রবন্ধে প্রায়শই বলেছেন :
Gender is located above, and sex is bellow the belt.
অর্থাৎ সোজা কথায়, সেক্স সমগ্র বিষয়টিকে 'দেহ কাঠামো' নামক ছোট্ট চৌহদ্দির মধ্যে আটকে ফেলতে চায়, যেখানে জেন্ডার বিষয়টিকে নিয়ে যেতে চায় অবারিত নীলিমায়।
যা হোক - এত কচকচানির মধ্যে না গিয়ে আমরা আরেকটি উদাহরণ দেখি -
২
লেভি সুয়েদাম
১৮৪৩ সাল। সেলসবুরির অধিবাসী ২৩ বছরের লেভি সুয়েদাম নগর নির্বাচকদের কাছে স্থানী নির্বাচনে হুইগের প্রার্থী হিসেবে ভোট দেয়ার অনুমতি প্রার্থনা করলেন। সাথে সাথেই তিনি বিরোধী দল থেকে ঘোরতর সমালোচনার সম্মুখীন হলেন। সমালোচনার কারণটি আজকের যুগে শুনলে হয়তো অনেকেরই অবাক লাগবে। না সমালোচনার পেছনে লেভি সুয়েদামের কোন দুর্নীতি, চারিত্রিক দুর্বলতা কিংবা প্রশাসনিক ক্ষেত্রে অযোগ্যতা বা এই ধরনের কিছু ছিলো না। বিরোধী দলের প্রধান আপত্তি ছিলো – লেভিকে দেখলে যতটা পুরুষসুলভ মনে হয়, তার চেয়ে বেশী নারী সুলভ। আর সে সময় নারীদের কোন ভোটাধিকার ছিলো না। কাজেই লেভি সুয়েদামকে ‘নারী’ প্রমাণ করতে পারলেই হয়তো ‘কম্ম সাবার’। নির্বাচকেরা এই দ্বন্দের সুরাহা করতে একজন ডাক্তারকে ডেকে নিয়ে আসলেন। বিজ্ঞ ডাক্তার উইলিয়াম বেরী সুয়েদামের দেহে লিঙ্গ এবং অন্ডাষয়ের অস্তিত্ব সনাক্ত করে রায় দিলেন লেভি সুয়েদাম পুরুষ। কাজেই লেভি ভোট দেয়ার যোগ্য। লেভি সুয়েদামের ভোটে হুইগ নির্বাচনে জিতলো এক ভোটের ব্যবধানে।
কিন্তু কিছুদিন পরে ডাক্তার উইলিয়াম বেরী লেভি সুয়েদামকে পরীক্ষা করতে এসে হতভম্ব হয়ে দেখেন তার নিয়মিত মাসিক হয়, এবং তার উন্মুক্ত যোনীদ্বার রয়েছে। তার কাঁধ মেয়েদের কাঁধের মতই অপ্রশস্ত, নিতম্ব মেয়েদের মতই ভারী। শুধু তাই নয়, লেভি সব সময়ই একটু রঙ চঙ্গা কাপড় চোপড় পছন্দ করতেন, কায়িক শ্রম অপছন্দ করতেন ইত্যাদি। তার এই ‘মেয়েলী বৈশিষ্ট্যগুলো’ ডাক্তারের চোখে ধরা পড়ে যাবার পরে তিনি আবারো ভোটের অধিকার হারিয়েছিলেন কিনা তা কেউ বলতে পারে না । ফলাফল যাই হোক না কেন লেভি সুয়েদাম কিংবা মারিয়া প্যাতিনোর মত ঘটনাগুলো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে মানুষকে কেবল ‘নারী’ এবং ‘পুরুষ’ এই দুইভাগে বিভক্ত করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা অনেকক্ষেত্রেই খুব সরল । যেখানে বিভক্তি এত স্পষ্ট নয়, সেখানে জোর করে লিঙ্গ আরোপকরণ কোন সমস্যা কমায়নি, বরং আরো জটিল করে তুলেছে।
আসলে মুল সমস্যা হল - আমরা 'নারী', 'পুরুষ' ছাড়া আর কোন তৃতীয় লিঙ্গের স্বকৃতিতে বিশ্বাসী ছিলাম না অনেক দিন ধরেই। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়গুলোতে এই ধারণা অনেকটা পাল্টেছে। পশিমা বিশ্বে তো বটেই, হাওয়া লাগছে আমাদের দেশেও। রণদিপম বসুর সাম্প্রতিক 'হিজড়া, প্রকৃতির বিচিত্র খেয়ালের এক দুর্ভাগা শিকার ' এমনি একটি উদাহরন যেখানে তৃতীয় লিংগ হিসবে হিজড়া বা উভলিংগ মানবদের স্বীকৃতি দাবী করা হয়েছে। পশ্চিমে যে কাজটি অনেক আগেই শুরু হয়েছে। সেখানে লিংগ বলতে কেবল নারী পুরুষ বোঝানো হয় না। গন্য করা হয় সাদা -কালো - এই দুই চরম সীমার মধ্যবর্তী ধূসর এলাকাগুলোকেও। এ প্রসঙ্গে ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানী Anne Fausto-Sterling এর Two Sexes Are Not Enough কিংবা সায়েন্স পত্রিকায় প্রকাশিত The Five Sexes: Why Male and Female Are Not Enough প্রবন্ধ দুটি পড়া যেতে পারে। এ ছাড়া জোয়ান রাফগার্ডেনের Evolution's Rainbow বইটিও এ ব্যাপারে পাঠকদের চিন্তার খোরাক যোগাবে। আর সে কষ্টটাও না করতে চাইলে অন্ততঃ আমার সমকামিতা (সমপ্রেম) কি প্রকৃতি বিরুদ্ধ? সিরিজটার ২য় পর্বে চোখ বোলাতে পারেন।
৩
শিশু বয়সে সেক্স চেঞ্জই কি উভলিংগ সত্ত্বা থেকে মুক্তির এক মাত্র সমাধান?
রণদীপম বসুর উভলিংগ মানবদের নিয়ে লেখাটার মানবিক দিক নিয়ে পাঠকদের কাছ থেকে অনেক প্রশংসাসূচক বাক্য প্রক্ষিপ্ত হলেও, জেন্ডার সচেতনতাবোধটি তেমনি ভাবে উঠে আসেনি। যেমন একজন এই 'হিজড়া' সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে মত দিয়েছেন -
[এ ধরণের] শিশুকে জন্মের সময়ই প্লাস্টিক সার্জারি করে ছেলে বা মেয়ের দলে ফেলা যায় তাকে তখনই চিকিৎসার ব্যবস্থা করা উচিত।
আসলে আমাদের মত দেশ গুলোতে যেখানে লিংগ বৈষম্য খুব প্রবল, সেখানে এধরনের সমাধানই হয়ত মানবিক মনে হবে। পশ্চিমা বিশ্বেও কিছুদিন আগ পর্যন্ত ঢালাও ভাবে এটা ঠিক বলে মনে করা হত। হাসপাতালে উভলিংগ মানব শিশু (অর্থাৎ, একই দেহে নারী পুরুষের বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন সন্তান) জন্মালে ডাক্তারের একটাই কাজ ছিল– অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের এই ‘বার্থ ডিফেক্ট’ অবহিত করে ‘সেক্স চেঞ্জ’ (চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় ‘সেক্সরিএসাইনমেন্ট’)অপারেশন করে হয় ছেলে নয়ত মেয়ে বানিয়ে ছেড়ে দেয়া। অভিভাবকেরাও যেহেতু উভলিঙ্গ সন্তান নিয়ে সমাজে ঝামেলা পোহাতে চেতেন না, তাদের কাছেও এটা একটা সবসমইয়ই খুবই আকর্ষনীয় একটা সমাধান হিসেবে বিবেচিত হত। কিন্তু আমেরিকায় ডেভিড রেইমার নামে এক রোগীর বিয়োগান্তক পরিনতি সেক্সচেঞ্জ নিয়ে ধ্যান ধারণা চিকিৎসকদের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে অনেকটাই পালটে দিয়েছে।
ডেভিড রেইমারকে নিয়ে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন দুইজন যৌনবিশেষজ্ঞ। এদের একজন হলেন জন মানি, অন্যজন মিল্টন ডায়মন্ড। চিকিৎসাবিদ্যায় এদের বিতর্ক পরিচিত হয়ে আছে ‘মানি –ডায়মন্ড’/ ‘জন –জোয়ান’ বিতর্ক নামে । জন মানি ছিলেন সেসময়কার জগদ্বিখ্যাত যৌন-বিশেষজ্ঞ; অধ্যাপনা করতেন জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে। ষাট এবং সত্তুরের দশকে ‘জেন্ডার আইডেন্টিটি’ নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে তিনিই ছিলেন সেসময়কার শীর্ষস্থানীয় কান্ডারী। তার ধারনা ছিলো, মানুষ এ পৃথিবীতে জন্মায় ‘জেন্ডার নিরপেক্ষ’ হিসেবে। জেন্ডার জিনিসটা যেহেতু পুরোটাই সাংস্কৃতিক, এর সাথে শরীরবৃত্তীয় মনস্তত্বের কোন যোগ নেই। অর্থাৎ জেন্ডার পরিচয় জন্মগত নয়, পুরোপুরি পরিবেশগত। কাজেই জন্মের সময় লৈঙ্গিক জটিলতা সম্পন্ন কোন শিশুকে যদি খুব কম বয়সেই সেক্স চেঞ্জ অপারেশনের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট জেন্ডার প্রদান করা হয়, তাহলে শিশুটির ভবিষ্যত মানসগঠন ওই প্রদত্ত জেন্ডারের সাথে সহজেই খাপ খাইয়ে নিয়ে পারবে, কোন অসুবিধাই হবে বা। তার তত্ত্বের সাপেক্ষে ডঃ মানি ডেভিড রেইমার নামে এক রোগীর দৃষ্টান্ত হাজির করতেন। রেইমারের সত্যিকারের নাম ধাম পরিচয় প্রকাশ না করে ‘জন্’ হিসবে অভিহিত করে তিনি তার গবেষণাপত্র এবং পাঠ্যবইয়ে বলেছিলেন, জন্ নামের শিশুটি জীবনের শুরুতেই একটি দুর্ঘটনায় যৌনাংগের একটা বড় হারিয়ে ফেলে। তার ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সেক্স রিএসাইনমেন্ট সার্জারির মাধ্যমে অবশিষ্ট পুরুষাঙ্গটি ছেদন করে তাকে নারীতে রূপান্তরিত করে ফেলা হয়েছিল। অভিভাবককে পরামর্শ দেয়া হয়েছিল তাকে ‘জোয়ান্’ হিসেবে যেন বড় করা হয়। জোয়ানের অভিভাবকেরা জন মানির কথামত তাই করে যাচ্ছিলেন। জন মানিও তার এই সাফল্য ফলাও করে বৈজ্ঞানিক সাময়িকীগুলোতে প্রচার করে যাচ্ছিলেন। মানি তার পেপার আর বইগুলোতে দেখিয়েছিলেন - জোয়ান হিসবে বড় হতে জনের কোন অসুবিধেই হচ্ছে না। কাজেই ডঃ মানি তর্কাতীত ভাবে সবার সামনে প্রমাণ করেছিলেন – ‘মানুষের জেন্ডার নির্ধারণে প্রকৃতির কোন প্রভাব নেই, প্রভাব পুরোটুকুই পরিবেশ সঞ্জাত’। জন মানি তার তত্ত্বের প্রমাণের জন্য বহু পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছিলেন।
তবে সবাই যে জন মানির কথা চোখ বুজে বিশ্বাস করছিলেন তা নয়। এমনি একজন সংশয়ী ছিলেন মিল্টন ডায়মন্ড। তিনি সে সময় কানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছিলেন। তিনি এবং তার সুপারভাইজার তাদের গবেষণার মাধ্যমে দেখালেন যে মানুষের মধ্যকার যৌনতার পার্থক্য আসলে পরিবেশ দ্বারা সূচিত হয় না, সূচিত হয় ‘হরমোন’ দ্বারা। অর্থাৎ, ডায়মন্ড দাবী করলেন, জন মানি যেভাবে জন্মের সময় ‘জেন্ডার নিরপেক্ষ’ থাকে বলে মনে করছেন, তা মোটেই ঠিক নয়। ছেলে মেয়ের পার্থক্যসূচিত ব্যাপার স্যাপারগুলো অনেক আগেই প্রিনেটাল হরমোনের প্রভাবে নির্ধারিত হয়ে যায়। শুধু ডায়মন্ডই নন, তখন ডঃ বার্নাড জুগার্ড নামে আরেক মনোবিজ্ঞানীও তার ব্যক্তিগত কেস স্টাডি থেকে দেখাচ্ছিলেন যে, ডঃ মানির অনুমান মটেও সত্য নয়।
কিন্তু ডঃ মানি ডায়মন্ড কিংবা জুগার্ডের গবেষণাকে গোনায় না ধরে নিজের প্রচারনাই চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এমনকি ১৯৮২ সালের পেপারেও তিনি জন/জোয়ান কেসের কথা উল্লেখ করে লিখেছিলেন – ‘to support the connection that sex roles and sexual identity are basically learned’। জন মানির এই দৃষ্টিভঙ্গি সেসময় প্রগতিশীল মহলে দারুন সমর্থন পেয়েছিলো, এমনকি নিউইয়র্ক টাইমসের মত পত্রিকা প্রায়ই জন মানিকে উদ্ধৃত করে পাঠকদের বিশ্বাস করাতে চাইতো আমাদের প্রবৃত্তির সবকিছুই পরিবেশগত, জন্মগত কিছু নয়।
এ সময় বিবিসি থেকে জন-জোয়ান কেসের উপর ফিচার করে একটি ডকুমেন্টরী করার পরিকল্পনা করা হয়। বিবিসির মূল লক্ষ্য আসলে ছিল জন মানির কাজকে তুলে ধরা, এবং সামান্য সময়ের জন্য বিপরীত ধারণা হিসেবে ডায়মন্ডের কথাবার্তা হাল্কা ভাবে দেখানো। কিন্তু ফীচার করতে গিয়ে বিবিসির অনুসন্ধিৎসু দল এক অদ্ভুত জিনিস আবিস্কার করলেন। জন মানি তার তত্ত্বের স্বপক্ষে ডেভিড রেইমারের কেসকে ‘সফল’ হিসবে প্রতিপন্ন করে এসেছেন, সেটা মোটেই সফল নয়। তারা লক্ষ্য করলেন ‘ব্রেন্ডা রেইমার’ নামে বড় হওয়া মেয়েটি হাটে ছেলেদের মত, গলার স্বরও মেয়েলী নয়। অভিভাবকের সাথে কথা বলে জানা গেল, মেয়ে হিসবে বড় হতে গিয়ে তাকে নানা ধরণের অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। কখনই সে মেয়েদের পুতুল পছন্দ করতো না, মেয়েদের ড্রেস দু চোখে দেখতে পারতো না, এমনকি বাথরুমে গিয়ে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করতে চাইতো। একটা সময় ‘মেয়েলী’ সমস্ত কিছু করার প্রতি বিতৃষ্ণ হয়ে পড়লো সে। দু তিন বার আত্মহত্যার প্রচেষ্টাও নিয়েছিল সে। জন মানিকে এ বিষয়ে বিবিসির সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে জন মানি সাংবাদিকদের সাথে এ নিয়ে কোন ধরনের কথা বলা থেকে বিরত থাকলেন।
এর পরের ঘটনা আরো নাটকীয়। একটা সময় পর ব্রেন্ডার অভিভাবকেরা মানসিক অস্থিরতা সহ্য না করতে পেরে তার শিশু বয়সে সেক্স চেঞ্জ সংক্রান্ত অপারেশনের কথা বলে দিলেন। সেটা শুনে ব্রেডা বুঝতে পারলো – কেন তার মেয়ে হিসবে খাপ খাইয়ে নিতে বরাবরই সমস্যা হচ্ছিলো। সে আসলে ছেলেই ছিলো বরাবরই – মানসিকভাবে। বাবা মার কাছ থেকে আসল ঘটনা শোনামাত্র সে তৎক্ষনাৎ তার ব্রেডা নাম পরিত্যাগ করে পুনরায় ডেভিড হয়ে গেল। চুল ছেটে ফেলল প্রথমেই। সার্জিকাল অপারেশন করে স্তনের আকার কমিয়ে আনলো। পরে তার দাবী অনুযায়ী ডাক্তারদের সহাচর্যে নতুন করে পুরুষাঙ্গ গঠন করে পুনঃস্থাপন হল, এমনকি একসময় ডেভিড জেন নামে চমৎকার একটি মেয়ের সাথে পরিনয়সূত্রে পর্যন্ত আবদ্ধ হয়ে পড়ল।
ক) মেয়ে হিসবে বড় হতে থাকা ডেভিড রেইমার
খ) বড় হয়ে পুনরায় ডেভিডে প্রত্যাবর্তন
এদিকে মিল্টন ডায়মন্ড ডেভিডের ঘটনা লোকমুখে জানতে পেরে তার সাথে একসময় দেখা করেন, এবং সব কিছু নিজের চোখে দেখে হতভম্ব হয়ে যান। তিনি ডেভিডকে অনুরোধ করেন ভবিষ্যত রোগীদের কথা ভেবে তিনি যেন তার ঘটনা মিডিয়ায় প্রকাশ করেন। ডেভিড প্রথমদিকে অস্বীকৃতি জানালেও পরবর্তীতে রাজী হন এবং ১৯৯৭ সালে মিল্টন ডায়মন্ড ডেভিড রেইমারের সুপারভাইজিং সাইক্রিয়াট্রিস্ট কেইথ সিগ্মুন্ডসনের সাথে মিলে একটি পেপার প্রকাশের মাধ্যমে ডেভিডের প্রকৃত অবস্থা সবার কাছে তুলে ধরে সমস্ত লুকোচুরি আর জারিজুরি ফাঁস করে দেন। ঠিক একই সময়ে বিজ্ঞান লেখক জন কলাপিন্টো রোলিংস্টোন ম্যাগাজিনে ডেভিড রেইমারকে নিয়ে একটি প্রবন্ধ রচনা করেন এবং পরবর্তীতে আরো বিবর্ধিত করে একটি বই রচনা করেন – ‘As Nature Made Him: The Boy Who Was Raised as a Girl’ শিরোনামে ।
ডেভিডের এই ঘটনা একাডেমিক জগত শুধু নয়, সাধারণ মানুষের যৌনপ্রবৃত্তি নিয়ে চিন্তাভাবনা বদলে দারুনভাবে প্রভাব বিস্তার করে। ডায়মন্ড জন মানির তত্ত্বের মূল ভিত্তি পুরোপুরি ধ্বসিয়ে দেন আর প্রমান করেন যে, কারো মনোযৌনতার ক্যানভাস ‘নিরপেক্ষ’ হয়ে জন্মায় না । শুধু তাই নয়, পুরুষাঙ্গ কিংবা ক্লাইটোরিসের কিংবা আকার, আকৃতি কিংবা ‘বিকৃতি’ দেখে চিকিৎসকদের তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্তে ‘সেক্স চেঞ্জ’ রোগীর পরবর্তী জীবনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হতে পারে। তবে অনেকেই মনে করেন যৌনপ্রবৃত্তি নিয়ে মানি এবং অন্যান্য ‘বিশেষজ্ঞ’দের ভুলের পেছনে প্রধান কারণ ছিলো বিজ্ঞানমনস্ক যৌনসচেতনতার অভাব। তারা সজ্ঞাতভাবে ধরেই নিয়েছিলেন –
১। প্রকৃতিতে শুধুমাত্র দুইটি সেক্স থাকবে – নারী এবং পুরুষ।
২। প্রকৃতিতে শুধুমাত্র ‘হেটারোসেক্সুয়ালিটি’ বা বিষমকামীতাই ‘স্বাভাবিক’।
৩। জন্ম মূহূর্তেই হার্মাফ্রোডাইট বা মিশ্রিত যৌনতা সম্পন্ন শিশুর জেন্ডার বদল করে দিয়ে মানসিক এবং শারীরিকভাবে সুস্থ্য মানুষ তৈরী করা যায়।
(ডেভিড রেইমারের মত একই রকম ঘটনা ঘটেছে Max Beck এর জীবনেও। তার My Life as an Intersexual - রাখা আছে এখানে)
ডেভিড রেইমারের বিয়োগান্তক পরিনতি ডাক্তারদের এই সনাতন মনমানসিকতাগুলো বদলে ভীষণভাবে প্রভাব ফেলেছে। আগে মনে করা হত, মানুষের প্রবৃত্তি কিংবা জেন্ডারর গঠনে জিন কিংবা হরমোনের কোন প্রভাব নেই, পুরোটাই পরিবেশ নির্ভর। কিন্তু রেইমারের ঘটনার পর এই সংক্রান্ত চিন্তাধারা অনেকটাই বদলে গেছে । এর প্রভাব পড়েছে নারীবাদী, সমকামী, উভকামী, রূপান্তরকামীদের আন্দোলনেও। নর্থ আমেরিকান ইন্টারসেক্স সোসাইটি শিশু বয়সে সেক্স চেঞ্জ অপারেশনের তীব্র বিরোধিতা করে মতামত ব্যক্ত করেন যে, ডেভিড রেইমারের দৃষ্টান্ত থেকে সামাজিক জটিলতাগুলো বুঝতে ডাক্তারদের শিক্ষা নেয়া উচিৎ। তারা মনে করেন, একটি শিশু বড় হয়ে যখন নিজের জেন্ডার আইডেন্টিটি সচেতন হয়ে উঠে, তার আগে ‘সেক্স অপারেশন’ করা আসলে শিশু নিপীড়নের সমতুল্য। যৌনতা পরিবর্তনের আগে আরো বেশী দরকার নারী-পুরুষের বাইরেও অন্যান্য লৈঙ্গিক পরিচয় এবং যৌনতাগুলোর সামাজিক স্বীকৃতি। এটাই এখন যূগের দাবী।
মন্তব্য
অনেকদিন পর অভি ভাইয়ের দূ্র্দান্ত লেখা পেলাম ।পছন্দের পোস্টে যুক্ত করলাম ।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
খুব দুঃখ নিয়ে বলি: সামাজিক স্বীকৃতি বাঙালি সমাজে দূর অস্ত, এদেশেও সতর্ক সহানুভূতি দেখতে পাই। এখানে সমকামী জুটিদের সরকারী সাহায্য দেবার প্রথা গতমাস থেকে চালু হয়েছে, বেকার ভাতা সংস্থায় একটা "a couple is a couple, no matter what" শিরোনামের নীল-গোলাপী বনাম নীল-নীল টুথব্রাশের ছবিও দেয়া হয়েছে, কিন্তু সমকামী বন্ধুদের বয়ানে বোঝা যায় ঈশ্বরবাদীদের, মূলতঃ গোঁড়া ক্যাথলিকদের অত্যাচার ও অরিসুলভ মনোভাবে তদের কোনঠাসা করার বিষয়টি ক্রমবর্ধমান। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস, যেটা আপানার লেখায় দেখতে পাইনি, সেটা হলো, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মী ছিলো যারা শারীরিক ও মানসিক দুই ভাবেই বিষমকামী জীবন যাপন করেছে, উপভোগও করেছে, কিন্তু পরে সমকামী জীবনে প্রবেশ করে ও সঙ্গী বেছে নেয়। আমি যদ্দুর বুঝি, উভকামীদের( অথবা জেনেটিক্যালি সমকামীদের) ক্ষেত্রে এই বদলটি স্বাভাবিক, কিন্তু বিষমকামী থেকে সমকামী হয়ে যাবার ব্যাপারটা "জেন্ডার আইডেন্টিটি"র তো বটেই, "সেক্সুয়াল আইডেন্টিটি"র ততটা নয়, সেটা বোধ হচ্ছে। তাই কি? এটাকে ওরা চয়েস অফ সেক্সুয়ালিটি বলে, কিন্তু আমার মনে হয় আদতে জিন যা নির্ধারন করে তা পরিবেশ দিয়ে এতটা প্রভাবিত হবে কি? আলোকপাত করবেন আশা করি।
আমার আজকের লেখাটা যদিও সমাকামিতা সংক্রান্ত নয়, তবু আপনার কথার সূত্র ধরে আমার সীমিত জ্ঞানে দু-চার কথা বলি। আপনার মনে আছে কিনা জানি না, আমার সমকামিতা নিয়ে সিরিজটিতে কিছুটা আলোকপাত করেছিলাম। সমাজবিজ্ঞানী এবং মনোবিজ্ঞানীরা সমকামিতার দুই ধরইণের প্রবৃত্তি লক্ষ্য করেছেন। এক - জন্মগত সমাকামিতামূলক প্রবৃত্তি, দুই - আচরণ বা পরিবেশগত প্রবৃত্তি। যাদের সমকামী যৌনপ্রবৃত্তি জন্মগত, তাদের যৌন-প্রবৃত্তিকে পরিবর্তন করা যায় না, তা সে থেরাপি দিয়েই হোক, ঔষধ দিয়েই হোক। দেখা যায় কিছু ক্ষেত্রে জোর করে এদের আচরণ পরিবর্তন করলেও পরে আবার তারা সমকামিতায় ফিরে যায়। জন্মগত সমকামিদের ব্যাপারটা জিনগতই বলুন কিংবা ‘বায়োলজিকালি হার্ড-ওয়্যার্ড’ - যাই বলুন, আচরণগত সমকামিরা সে দিক থেকে ভিন্ন। এরা আসলে বিষমকামী। এরা কোন ব্যক্তিকে বিষমলিঙ্গের মানুষ হিসেবে বিবেচনা করে তাদের সাথে যৌন-সংসর্গে লিপ্ত হয়। যেমন, জেলখানায় দীর্ঘদিন আটকে থাকা বন্দীরা যৌনসঙ্গীর অভাবে সমলিঙ্গের কয়েদীদের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেত পারে। কিন্তু, জেলখানা থেকে বেরিয়ে এলেই দেখা যায়, এদের আচরণের পরিবর্তন ঘটে।
আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে, যেহেতু ছোটবেলা থেকেই সমকামী প্রবৃত্তিকে ঘৃণার চোখে দেখা হয়, সেহেতু এর একটা প্রতিক্রিয়া মানস পটে পড়ে। অনেক সমকামীই প্রথম জীবনে 'ক্লোসেট গে' হয়ে কিংবা 'বিষমকামী' হয়ে জীবন কাটান। তারা নিজেদের প্রবোধ দেন এই ভেবে - তারাও বোধ হয় অন্যদের মতই বিষমকামী, 'বিয়ে করলে সব ঠিক হয়ে যাবে'। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই সেটা সমাধান হিসবে না এসে বরং জটিলতাই তৈরী করে। সেজন্য বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় একটা সময় পরে এই 'দ্বিচারীতা' ভেঙ্গে বিষমকামীতার শৃংখল ভেঙ্গে অনেকেই সমকামী জীবনে ফেরত যায়।
এবারে শেষ প্রয়োজনীয় কথাটা সেরে ফেলি। যৌনপ্রবৃত্তিকে কেবল বিষমকামীতা আর সমকামীতা - কেবল এই দুই ভাগে বিভক্ত করার প্রচেষ্টাটাও হয়তো ঠিক নয়। যৌনতার সম্পুর্ণ ক্যানভাসকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে পরিমাপ করার জন্য আলফ্রেড কিন্সে বহু আগেই উদ্ভাবন করেছিলেন তার বিখ্যাত ‘কিন্সে স্কেল’। এ স্কেল সমন্ধে কিন্সে তার বইয়ে বলেন -
‘পুরো জনসমষ্টিকে কেবল হোমোসেক্সুয়াল আর হেটারোসেক্সুয়াল – এ দুই নির্দিষ্ট ভুবনের বাসিন্দা মনে করা ভুল হবে। পৃথিবীটা কেবল – ছাগল আর ভেড়ায় বিভক্ত নয়। প্রকৃতিতে খুব কম ক্ষেত্রেই এ ধরণের চরমসীমার রাজত্ব দেখা যায়, এর চেয়ে বরং এখানে থাকে বিবিধ উপাদানের সুষম বন্টন।’
কিন্সে তার স্কেলের দুই প্রান্তকে ‘০’ এবং ‘৬’ হিসেবে চিহ্নিত করেন। ০ দাগে অবস্থিত ব্যক্তিরা পরিপূর্ণভাবে বিষমকামী, আর ৬ দাগে অবস্থিত ব্যক্তিরা সম্পুর্ণভাবে সমকামী। দুই প্রান্তের মধ্যবর্তী অবস্থা পাঁচটিভাগে বিভক্ত; এবং ওই পাঁচটি অবস্থার মধ্য দিয়ে যৌনতার যে রূপ প্রতিভাত হচ্ছে তাকে উভকামিতা বলাই শ্রেয়, যদিও উভকামিতার রকমফের আছে।
চিত্র : কিন্সে স্কেল থেকে বোঝা যায়, যৌনপ্রবৃত্তিকে কেবল হোমোসেক্সুয়াল আর হেটারোসেক্সুয়াল – এ দুই ভাগে ভাগ করা ভুল হবে ।
আমার সিরিজটির চতুর্থ পর্বে এ নিয়ে আলোচনা আছে। এখন মানুষের যৌনতার ক্যানভাস যেহেতু সুবিস্তৃত, এখানে সমকামিতা, উভকামিতা, উভকামের সমকামিতা, রূপান্তরকামিতার মত যৌনপ্রবৃত্তিগুলো খুব স্বাভাবিকভাবেই অনেকের মধ্যে থাকতে পারে। আপনার পরিচিত সহকর্মীদের সেই কন্টিনামের ভিতরের কোন একটি ভূবনের বাসিন্দা।
এখন যৌনতার ব্যাপারটা প্রবৃত্তি নাকি চয়েস? এক কথায় বলা মুশকিল। আমরা যদি প্রাত্যহিক জীবনের বিভিন্ন উপকরণের দিকে তাকাই তা হলে দেখব, এর মধ্যে অনেককিছুই জন্মগত – আচরণ দিয়ে আমরা সেগুলো বদলে দিতে পারিনা রাতারাতি। চোখের রঙ, আঙ্গুলের ছাপ, ডান হাতি নাকি বাঁ হাতি – এগুলো সেরকম কিছু উদাহরণ। অনেকেই মনে করেন, যৌনপ্রবৃত্তিও জৈবিকভাবেই অঙ্কুরিত। অধিকাংশ মানুষের মধ্যেই খুব ছোট বয়সেই প্রবৃত্তিগত পছন্দের ব্যাপারটা স্থায়ী আস্ন গেড়ে যায় - অনেকটা আমাদের মাতৃভাষা রপ্ত করার মতই। তবে অনেকের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা হয়ত তেমন 'ফিক্সড' কিছু নয়। তাদের প্রবৃত্তি সময় এবং পরিবেশের সাথে বদলায়।
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
দুর্দান্ত লেখা। জানতে ইচ্ছে হয়, আপনাকে আরো পাই না কেন এখানে?
হাঃ হাঃ আরে আমি আসলে অনেকের মত এত 'প্রলিফিক' রাইটার না। চাকরী, বাকরী, সংসার, বাড়ি ঘর সামলিয়ে লেখার সময় পাওয়াই ইদানিং মুশকিল। আমি বরং খুব অবাক হয়ে ভাবি - অন্যরা এত সাবলীল ভাবে লিখে যায় কিভাব!
এনিওয়ে, মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ...
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
খুব ভালো লাগল। তথ্যবহুল এবং যুক্তি নির্ভর লেখা। একটানে পড়ে ফেললাম।
ধন্যবাদ।
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
অসাধারণ লেখা।
একটা বিষয়ে আরো জানতে চাইছি। সেটা হলো সেক্স চেঞ্জ সংক্রান্ত অপারেশন। যদি হরমোনই মানুষে সেক্স নির্ধারণে বড় ভূমিকা পালন করে তাহলে অপারেশনগুলো কতটা সফল? আমি মনস্তাত্বিক প্রতিক্রিয়ার কথা বলছিনা, শারীরিকভাবে সেই অপারেশন কতটা সফল হয়? যদি কারো দেহে নারী হরমোন থাকে তাহলে সত্যিই কি অপারেশনের মাধ্যমে শারীরিকভাবে শতভাগ পুরুষে রূপান্তরিত হতে পারবে সে?
সেক্স চেঞ্জ আসলে খুব জটিল প্লাস্টিক সার্জারী অপারেশন। একে সেক্স রিএসাইনমেন্ট অপারেশনও বলা হয়। এই অপারেশনে যারা নতুন দিগন্তের সন্ধান দিয়েছেন তাদের মধ্যে আছেন হ্যারি বেঞ্জামিন, স্টিনাক, আব্রাহাম, জন মানি প্রমুখ। রূপান্তরকামী এবং উভলিংগ মানবদের চাহিদাকে মূল্য দিয়ে ডাক্তাররা সার্জারির মাধ্যমে সেক্সচেঞ্জ অপারেশন করে থাকেন। যেহেতু রূপান্তরকামীতাকে কোন অসুখ মনে করা হয় না, তাই ঔষধ প্রয়োগ করে এই মানসিকতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের বদলে ফেলা সম্ভব নয়। একমাত্র সেক্সচেঞ্জ অপারেশনের মধ্য দিয়েই অনেকে মানসিক পরিতৃপ্তি পেয়ে থাকেন। পুরুষ রূপান্তরকামী অর্থাৎ যারা পুরুষ থেকে নারীতে রূপান্তরিত হতে চায়, তাদের জন্য এক ধরনের অপারেশন, আর নারী রূপান্তরকামীদের জন্য ভিন্ন অপারেশন। মুলতঃ শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে চামড়া অ টিস্যু নিয়ে গ্রাফটিং এর মাধ্যমে যোনিপ্রদেশ গঠন করা হয়, হরমোন থেরাপির সাহায্যে স্তন গ্রন্থির হ্রাস/ বৃদ্ধি ঘটানো হয়, সিলিকন টেস্টিকেলের সাহায্যে অন্ডকোষ তৈরি করা হয়, ইত্যাদি।
অনেক ক্ষেত্রেই সেক্স চেঞ্জের পর পরিপূর্ন পুরুষ বা নারী হিসেবে জীবন অতিবাহিত করতে পারেন, এমনকি সন্তানও ধারণ করতে পারেন। তবে অনেক জটিল পরিস্থিতিতে তা সম্ভব নাও হতে পারে।
আমি Christine Jorgensen এর কথা আমার সমকামিতার সিরিজিটির দ্বিতীয় পর্বে লিখেছিলাম। ক্রিস্টিন জরগেন্সেনের আগের নাম ছিল জর্জ জরগেন্সেন। তিনি সেনাবাহিনীতে কাজ করতেন। তিনি নিজেকে নারী ভাবতেন। তার রূপান্তরকামী মানসিকতার জন্য চাকরী চলে যায়। পরে ১৯৫২ সালে অস্ত্রপ্রচারের মাধ্যমে তিনি নারীতে রূপান্তরিত হন। আপনি উইকিতে তার সম্বন্ধে পড়তে পারেন।
পরিনত বয়সে কারো চাহিদাকে মূল্য দিয়ে সেক্সচেঞ্জ অপারেশন পশ্চিমা বিশে গ্রহণযোগ্যতা পেলেও জন্মের পর পরই উভলিংগ কিংবা অজ্ঞাত যৌনতাবিশিষ্ট শিশুকে সেক্সচেঞ্জ করে একটি নির্দিষ্ট জেন্ডারের বলয়ে জোর করে প্রবেশ করার চেষ্টাকে সম্প্রতি নৈতিক দিক দিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। এর পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। শিশুটির বোধ বুদ্ধি কিংবা জেন্ডার সনফক্রান্ত ধারণা জাগ্রত হবার আগেই তাকে জোর করে একটি নির্দিষ্ট জেন্ডারাবদ্ধ করাকে অনেক সামাজিক এবং মানবাধিকার বিষয়ে সোচ্চার সংগঠনগুলো ‘শিশু নিপীড়ন’ বলে অভিহিত করেছেন। বহুক্ষেত্রেই দেখা গেছে শিশু বয়সে জোর করে জেন্ডার বদল করার পরিনতি পরবর্তীতে মোটেই শুভ হয়নি। ডেভিড রেইমারের বিয়োগান্তক পরিনতির পর এবং যৌনতা সংক্রান্ত ধ্যান ধারনা পালটে যাবার পরিপ্রেক্ষিতে বহুচিকিৎসক তাদের সনাতন মনোভাব ত্যাগ করেছেন।
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
অভি ভাই, এই লেখার লিন্ক ফেসবুকে শেয়ার করলাম । আপত্তি নেই তো ?
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
আরে আপত্তি আবার কিসের, যেখানে ইচ্ছা দেন। এইগুলা সব ছাই-পাশ লেখা ...
আর আমারে 'ভাই' বইলা ডাকা শুরু করলেন কবে থেইকা? শুধু 'অভি'ই তো ভাল ছিল ...
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
"যৌনতা পরিবর্তনের আগে আরো বেশী দরকার নারী-পুরুষের বাইরেও অন্যান্য লৈঙ্গিক পরিচয় এবং যৌনতাগুলোর সামাজিক স্বীকৃতি। এটাই এখন যূগের দাবী।"
এই দাবির সাথে একমত হয়ে প্রচারনা শুরু করছি ।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
অজানা অনেক কিছু্ই জানলাম।
ভয়ে ভয়ে প্রশ্ন রইলো, হিজড়া বা ট্রান্সসেক্সুয়াল ব্যাপারটা কি মূলতঃ জন্মকালীন সময়ের কোনো সমস্যার কারনে হয়?
আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। হিজড়া শব্দটা প্রায়ই তুচ্ছার্থে ব্যবহৃত হয় বলে আমি উভলিংগ মানব লিখব বলে ঠিক করেছি। উভলিঙ্গত্বকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয় - প্রকৃত উভলিঙ্গত্ব (true-hermaphrodite) এবং অপ্রকৃত উভলিঙ্গত্ব (pseudo-hermaphrodite)। প্রকৃত উভলিঙ্গ হচ্ছে যখন একই শরীরে স্ত্রী এবং পুরুষ যৌনাঙ্গের সহাবস্থান থাকে। তবে প্রকৃতিতে প্রকৃত উভলিঙ্গত্বের সংখ্যা খুবই কম। বেশী দেখা যায় অপ্রকৃত উভলিঙ্গত্ব। সাধারণতঃ ছয় ধরণের অপ্রকৃত উভলিঙ্গত্ব দৃশ্যমান – কনজেনিটাল এড্রেনাল হাইপারপ্লাসিয়া (CAH), এন্ড্রোজেন ইন্সেন্সিটিভিটি সিন্ড্রোম (AIS), গোনাডাল ডিসজেনেসিস, হাইপোস্পাডিয়াস, টার্নার সিন্ড্রোম (XO) এবং ক্লাইনেফেল্টার সিন্ড্রোম (XXY) । বিভিন্নটা বিভিন্ন কারণে হয়। যেমন মারিয়ার ক্ষেত্রে হয়েছে এন্ড্রোজেন ইন্সেন্সিটিভিটি সিন্ড্রোম - অর্থাৎ, শিশু বয়সে তার দেহকোষ এন্ড্রোজেন সনাক্ত করতে পারে নি। এ ছাড়া ক্রোমজমের বৈসাদৃশ্যতার কারণেও উভ্লিঙ্গত্ব প্রকাশ পেতে পারে। যেমন ক্লেইনফ্লেয়ার সিন্ড্রোমের ক্কেত্রে পুরুষ শিশু একটি বাড়তি ক্রোমজম নিয়ে জন্মায় ( অর্থাত, XY এর বদলে XXY))। টার্নার সিন্ড্রোমে আবার মেয়ে শিশুর একটি এক্স ক্রোমজম কম থাকে। এ গুলো ছাড়াও বিশেষ কিছু হরমোনের অভাবে উভলিঙ্গত্ব প্রকাশ পেতে পারে।
আপনি 'সমস্যার' কথা জানতে চেয়েছেন। উভলিঙ্গত্বকে অস্বাভাবিক/ সমস্যা বলে মনে করা হলেও আমাদের মনে রাখতে হবে যে, প্রানীজগতের একেবারে গোড়ার দিকে কিছু পর্ব হল - প্রটোজোয়া, পরিফেরা, সিলেনটেরেটা, প্লাটিহেলমিনথিস, অ্যানিলিডা, মোলাস্কা ও কর্ডাটা। এই সমস্ত প্রাণিদের বেশিরভাগই উভলিংগ বা হার্মাফ্রোডাইট (Hermaphrodite), কারণ এদের শরীরে স্ত্রী ও পুরুষজননাঙ্গের সহবস্থান লক্ষ্য করা যায়। এদের জন্য উভলিঙ্গত্ব কোন শারীরিক ত্রুটি নয়, বরং এটি পুরোপুরি ‘প্রাকৃতিক’। প্রকৃতিতে এখনো পালমোনেট, স্নেইল এবং স্লাগেদের অধিকাংশই হার্মাফ্রোডাইট। তবে মানুষের সমাজে যেহেতু জেন্ডার ইস্যু খুব প্রবল সেহেতু উভলিংগ মানবদের নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। তারপরেও ধ্যান ধারণা সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা পাল্টেছে। পশ্চিমা বিশ্বের বহু জায়গায় ইতোমধ্যেই কেবল নারী-পুরুষ – এই দ্বিলিঙ্গভিত্তিক সমাজ ঘুচিয়ে দিয়ে বহুলিঙ্গভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াস নেয়া হচ্ছে।
মুশকিল হল, বাংলায় এগুলো নিয়ে ভাল কোন বই নেই। আহমেদুর রশীদের তাগাদায় বড় কিছু লেখালিখির কাজে হাত দিয়েছি। দেখি কিছু একটা দাঁড় করানো যায় কিনা।
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
আহমেদুর রশীদ টুটুল ভাইয়ের কথা আর বইলেন না ! আমারে ইয়োগা ধরাইয়া দিয়া কী যে একখান বিপদে ফালাইছে !
তবে আপনাকে তাগাদা দেয়া যথাযথ। এক্ষেত্রে টুটুল ভাইকে ধন্যবাদ জানাতেই পারি।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
অনেক টার্মের ব্যাপারেই পূর্বজ্ঞান না থাকার দরূন বুঝতে পারলাম না। একদম প্রাথমিক পর্যায়ের ধারণার জন্য কোন জার্নাল সাজেস্ট করবেন কী?
আপনি ঠিক কোন বিষয়টা কিংবা কোন বিষয়গুলো সম্বন্ধে ডিটেল জানতে চাচ্ছেন তা জানালে ভাল হয়। একেবারে বেসিক আইডিয়ার জন্য উইকিপেডিয়া দিয়ে শুরু করতে পারেন। এই লিঙ্কগুলো দেখুন -
Hermaphrodite
Intersexuality
Transgender
Gender identity
Sex assignment
আরো স্পেসিফিক কিছুর জন্য -
Two Sexes Are Not Enough
The Five Sexes: Why Male and Female Are Not Enough
এবং, The Five Sex Revisited
এছাড়া, Intersex Society of North America (ISNA) এর ওয়েব সাইটটি (http://www.isna.org/) দেখতে পারেন। ওখানে বেশ কিছু ভাল ভিডিও এবং আলোচনা আছে।
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
আপনি এই বইটা পড়েছেন?
সাজিয়া
shazia[dot]shahnaz[at]gmail[dot]com
না, এ বইটা আমার পড়া হয়নি, সাজিয়া।
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
এটা নিয়ে কোন এক টিভি চ্যানেলে দারুন একটা ডকুমেন্টারি দেখিয়েছিল।
আমি স্কিম করেছি শেষ দিক, পরে পারলে পুরোটা পড়বো। আপনি বেশি করে লেখেন!
খুবই চমৎকার ও পরিপূর্ন একটি লেখা। ভাল লাগলো।
ছিন্ন পাতার সাজাই তরণী, একা একা করি খেলা ...
ধন্যবাদ লেখাটি পড়বার জন্য।
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
খুবই গুরুত্বপূর্ণ লেখা।
---------------------------------------------------------
ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
---------------------------------------------------------
ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.
সব কিছুই তো আপনার কল্যানে
আমার লেখালিখির অগ্রগতির প্রমাণ কিছুটা পাইলেন
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
খুব প্রয়োজনীয় লেখা। আমার মতে, মানবাধিকারের প্রতিটি দিক সম্পর্কে সচেতন না হয়ে পূর্ণাঙ্গ মানুষ হওয়া সম্ভব না। মানুষকে সত্যিকার অর্থেই মানুষ করে তোলার পেছনে এরকম লেখাগুলো খুব সাহায্য করবে। আমাকে যেমন অনেক সাহায্য করলো।
ট্রান্সসেক্সুয়ালিটি নিয়ে খুব বেশি জানতাম না। ট্রান্সঅ্যামেরিকা মুভি দেখেই প্রথমবারের মত জানার ইচ্ছা হয়েছিল। এছাড়া মাইক নিকোলসের মুভিতে এদিকটা চমৎকারভাবে প্রকাশিত হতে দেখেছি।
আমরা অবশ্যই এমন একটি সমাজ চাই যে সমাজের কোন সদস্য ব্যতিক্রম বা অদ্ভুত কোনকিছুকে ভয় করবে না বা দূরে ঠেলে দেবে না।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
লেখাটির যথাযথ প্রশংসা করার জন্য যোগ্য কোন শব্দ পাচ্ছি না ! যেভাবে সেক্স বা জেন্ডার-কে বাংলা পরিভাষায় আলাদা আলাদা বুঝানোর জন্যেও এযাবৎ কোন শব্দ সম্ভবত এখনও তৈরি হয় নি।
আচ্ছা, আমরা সেক্সকে যদি লিঙ্গ নামে অভিহিত করি, জেন্ডারকে কি লৈঙ্গিক অবস্থা বলবো ?
তৃতীয় লিঙ্গের দাবি যে খুবই যৌক্তিক, দিল্লী হাইকোর্টের যুগান্তকারী রায়ের পর তার সর্বশেষ স্বীকৃতি মনে হয় গত ১২ আগস্ট সমকামী অধিকার আন্দোলনের নেতা প্রয়াত হার্ভে মিল্ক-কে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা 'প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম' পদকে মরনোত্তর ভূষিত করা।
আমরা নিজেদেরকে যারা সচেতন ধারার অগ্রবর্তী অংশ বলে মনে করি, তারা যদি এ ব্যাপারে প্রতিনিয়ত সোচ্চার থাকি তাহলে একদিন এদেশেও সে অধিকার কায়েম হবে অবশ্যই। সে পর্যন্ত না হয় বুড়িগঙ্গায় আরো কিছু বিষাক্ত পানি গড়াবে, এই আর কি।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
বাংলায় বোধ হয় প্রচেষ্টা নেয়া হচ্ছে - সেক্সকে (জৈবিক) লিঙ্গ বলার, আর জেন্ডারকে সাংস্কৃতিক বা সামাজিক লিঙ্গ বলার। আমার বইয়ে (যদি কখনও বেরোয়) জেন্ডারকে সাংস্কৃতিক লিংগ হিসেবেই চিহ্নিত করব।
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
বাংলায় একসময় জেন্ডারকে লিঙ্গ বলা হলেও এখন আর বলা হয় না। একটা দেশীয় জার্নালে শিক্ষাবিষয়ক এক প্রবন্ধে 'লিঙ্গবৈষম্য' লিখে নারীবাদীদের ঝাড়ি খেয়েছিলাম। পরে জানতে পারলাম যে, বাংলাদেশে জেন্ডারকে অধিকাংশ অ্যাকাডেমিক ও নারীবাদী আন্দোলনের সাথে যুক্ত মানুষেরা জেন্ডারই বলে থাকেন, তবে তাদের কেউ কেউ একে সামাজিক লিঙ্গ বলেন। তবে সাংস্কৃতিক লিঙ্গ বলতে কাউকে শুনি নি।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
::: http://www.bdeduarticle.com
::: http://www.facebook.com/profile.php?id=614262553/
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
সেক্স ব্যাপারটা বায়োলজিকাল - কাজেই এটার প্রতিশব্দ হিসবে জৈবলিংঙ্গ ঠিকাছে। কিন্তু জেন্ডার ব্যাপারটা যেহেতু 'কালচারাল' - সেহেতু 'সাংস্কৃতিক' লিঙ্গ বলতে আমি বাধা দেখি না।
দ্বিতীয়তঃ, সেক্স ব্যাপারটা সব প্রানিজগতেরই জৈব-বৈশিষ্ট, কিন্তু জেন্ডার একান্তভাবেই মানবীয়। আরো ভাল করে বললে -
any species has sexes, but only people have genders.
এখানেও জেন্ডারকে পরিচিত করতে সমাজের এরচেয়ে সংস্কৃতিই বেশী উপযোগী। জীবজগতেও সমাজ আছে - পিঁপড়েদের সমাজ, মৌমাছিদের সমাজের কথা বিজ্ঞানের বইগুলোতেও পাওয়া যায় - কিন্তু সংস্কৃতি ব্যাপারটা বোধহয় মানুষ-স্পেসিফিক।
বাংলাভাষায় এ সংক্রান্ত শব্দচয়ন যেহেতু নতুন, অনেক কিছুই পূর্বে শোনা না গেলেও পরে হয়ত শোনা যাবে, আশা করা যায় । আমি অজয় মজুমদার ও নিলয় বসুর একটি বইয়ে জেন্ডারের প্রতিশব্দ হিসবে 'সাংস্কৃতিক লিঙ্গের' উল্লেখ পেয়েছি।
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
আর বাই দ্য ওয়ে, হার্ভে মিল্ক-কে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা দেয়ার ব্যাপারটি যুক্তিযুক্ত। মিল্ক ছবিটা দেখেছেন নিশ্চয়। অসাধারণ ছবি। সন পেন একাডেমী এওয়ার্ড পেলেন মিল্কের চরিত্রে রূপদান করে।
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
মিল্কে শন পেন অসাধারণ অভিনয় করেছেন। খুব ভাল লেগেছে সিনেমাটা।
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
অনেক কিছু জানতে পারলাম লেখাটা পরে।লেখককে ধন্যবাদ।
সদস্যনাম: বর্ণ
মেইলঃ
১৫ | রণদীপম বসু | বিষ্যুদ, ২০০৯-০৮-২০ ২০:১১
লেখাটির যথাযথ প্রশংসা করার জন্য যোগ্য কোন শব্দ পাচ্ছি না ! যেভাবে সেক্স বা জেন্ডার-কে বাংলা পরিভাষায় আলাদা আলাদা বুঝানোর জন্যেও এযাবৎ কোন শব্দ সম্ভবত এখনও তৈরি হয় নি।
আচ্ছা, আমরা সেক্সকে যদি লিঙ্গ নামে অভিহিত করি, জেন্ডারকে কি লৈঙ্গিক অবস্থা বলবো ?
তৃতীয় লিঙ্গের দাবি যে খুবই যৌক্তিক, দিল্লী হাইকোর্টের যুগান্তকারী রায়ের পর তার সর্বশেষ স্বীকৃতি মনে হয় গত ১২ আগস্ট সমকামী অধিকার আন্দোলনের নেতা প্রয়াত হার্ভে মিল্ক-কে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা 'প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম' পদকে মরনোত্তর ভূষিত করা।
আমরা নিজেদেরকে যারা সচেতন ধারার অগ্রবর্তী অংশ বলে মনে করি, তারা যদি এ ব্যাপারে প্রতিনিয়ত সোচ্চার থাকি তাহলে একদিন এদেশেও সে অধিকার কায়েম হবে অবশ্যই। সে পর্যন্ত না হয় বুড়িগঙ্গায় আরো কিছু বিষাক্ত পানি গড়াবে, এই আর কি।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
নতুন মন্তব্য করুন