আইনস্টাইনঃ প্যাভিয়ার রাস্তায় হেটে বেড়ানো একসময়কার 'ভাবুক' বালক
(এক পেটেন্ট ক্লার্কের অসাধারণ মানস পরীক্ষণের কাহিনী)
১
১৯৩০ সালের অক্টোবর মাসের এক মায়াবী শরৎ-সন্ধ্যা। লন্ডনের বিখ্যাত স্যাভয় হোটেলের বলরুমে চলছে পানাহারের হুল্লোর। ব্যারন রোথস্চাইল্ডের আথিতিয়তায় আয়োজিত এ দাতব্য অনুষ্ঠানে স্পটলাইট মূলতঃ দুই জীবন্ত কিংবদন্তীর উপর। এর একজন হচ্ছেন জর্জ বার্নার্ড শ, ১৯২৫ সালের নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিক - শেক্সপিয়রের পরে যাকে ব্রিটেনে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য নাট্যকার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শ অবশ্য 'সম্মানিত অথিতি'র স্পট লাইট নিজের উপরে নিতে রাজী নন; বললেন, সম্মানিত অথিতি যদি এ সভায় কেউ থেকে থাকেন তো সেটি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী র্যামসে ম্যাক্ডোনাল্ড। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা গেল মন্ত্রী সাহেব সে সভায় উপস্থিত থাকতে পারেন নি। যথারীতি ক্যারিশমা দেখানোর ভারটুকু ঘুরে ফিরে বার্নাড শ'র উপরেই পড়ল। শ অবশ্য হতাশ করেননি। তার জীবনের অন্যতম ছোট্ট কিন্তু আকর্ষণীয় বক্তৃতায় শ সেদিন বললেন,
'টলেমী', শুরু করলেন শ, 'এমন একখানা বিশ্বজগৎ আমাদের জন্য তৈরী করেছিলেন যা দুই হাজার বছর টিকে ছিল। তার পর নিউটন আরেকখানা জগৎ বানালেন যা তিনশ বছর টিকতে পেরেছিলো, আর আইনস্টাইন সম্প্রতি একটি বিশ্বজগৎ বানিয়েছেন, আমার ধারণা আপনারা চাইছেন আমি বলি এটি কখনই ফুরোবে না; কিন্তু আমি সত্যি সত্যিই জানি না কতদিন এ আইনস্টাইনীয় জগৎ টিকবে।'
দর্শকের সারিতে আইনস্টাইনও ছিলেন, আর শ’র কথা শুনে দর্শকদের সাথে সাথে তিনিও হো হো করে হেসে উঠলেন। শ এর বাকচাতুর্য আর রঙ্গরস এমনিতেই জগদ্বিখ্যাত ছিলো। সেদিনকার সভায় যেন ওটি আরো নতুন মাত্রা পেল। পদার্থবিজ্ঞানে আইনস্টাইনের অবদানকে তুলে ধরতে গিয়ে শ আইনস্টাইনের জীবনের নানা মজার মজার কাহিনী টেনে এনে তার বক্তৃতা শেষ করলেন এ বলে যে, 'আইনস্টাইন হচ্ছেন আমাদের সমসাময়িকদের মধ্যে নিঃসন্দেহে শ্রেষ্ঠতম প্রতিভা'।
আইনস্টাইনও তো এ দিক দিয়ে কম যান না। বক্তৃতা দিতে উঠে শ কে মৃদু তিরষ্কার করলেন 'আইনস্টাইন নামের অতীন্দ্রিয় মিথ্টির’ ভুয়ষী প্রশংসা করবার জন্য- যার কারণে নাকি তার জীবন ইতিমধ্যেই ওষ্ঠাগত হয়ে উঠেছে! তার মতে, মানুষ তার সম্পর্কে যা কল্পণা করে আর বাস্তবে উনে নিজে যা - এর মধ্যে নাকি বিস্তর ফারাক!
তবে আইনস্টাইন নিজে তখন যাই বলুন না কেন, এখন কিন্তু প্রমাণিত হয়েই গেছে যে, শ'র কথা মোটেও অত্যুক্তি ছিলো না। আইনস্টাইনের যুগান্তকারী আবিস্কারের প্রায় একশ বছর এর মধ্যে পার হয়ে গেছে - এখনও আমরা সেই আইনস্টাইনীয় বিশ্বেই বাস করছি। ভবিষ্যতের কোন প্রতিভাধর বিজ্ঞানী যে বঙ্গমঞ্চে এসে আইনস্টাইনের এই বিশ্বজগতকে হটিয়ে দিতে পারবেন না, তা দিব্যি দিয়ে বলা যায় না, তবে এটুকু অন্ততঃ বলা যায় যে, আইনস্টাইন স্বীয় প্রতিভায় উদ্ভাসিত হয়ে নিজে এমন একটি জায়গায় পৌঁছে গেছেন, আর সেই সাথে আমাদের জ্ঞানকে নিয়ে গেছেন যে, তাকে পৃথিবীর সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিভা হিসেবে মনে রাখতেই হবে- তা তার তৈরী বিশ্বজগৎ শেষ পর্যন্ত টিকুক আর নাই টিকুক।
২
তবে 'জিনিয়াস' বলতে যা বোঝায় তা কিন্তু ছেলেবেলায় কখনই ছিলেন না তিনি। বরং 'মর্নিং শোজ দ্য ডে'- এ প্রবাদ বাক্যটি আইনস্টাইনের জীবনে নিদারুণভাবে ব্যর্থই বলতে হবে। ক্লাসের সেরা ছাত্র ছিলেন না আইনস্টাইন। বরং স্কুল কলেজের রেকর্ড যদি বিবেচনা করা হয়, নিতান্তই মাঝারি গোছের তার সমস্ত রেকর্ড। আইনস্টাইন এমনিতেই ছিলেন একটু ঢিলেঢালা; এমনকি শৈশবে কথা বলাও শিখেছিলেন একটু দেরী করে। দু বছরের বেশী লেগে গিয়েছিল। সাত বছর পর্যন্ত বাড়ীতেই পড়াশুনা চলে তার। এক সময় স্কুলেও ভর্তি করা হয় তাকে-ক্যাথোলিক স্কুলে। তবে ভর্তি করাই সার হল; স্কুলের পড়াশোনায় মোটেও মনোযোগী ছিলেন না আইনস্টাইন। একা একা ঘুরতেন, আপন মনে কি যেন ভাবতেন। স্বাভাবিকভাবেই রেজাল্ট আহামরি গোছের কিছু হচ্ছিল না। তবে রেজাল্টের চেয়েও গুরুতর কিছু সমস্যা নিয়ে বাবা মা চিন্তিত হয়ে পড়লেন। শিক্ষকেরা অভিযোগ করেছেন আইনস্টাইন অন্য ছেলেদের সাথে একেবারেই মেশে না, পড়া মুখস্ত বলতে পারে না, আর প্রশ্ন করলে অনেক্ষণ লেগে যায় জবাব দিতে। আবার প্রায়ই জবাব দেওয়ার আগে কী যেন বিড়বিড় করে। প্রথম দূটো লক্ষণ না হয় তাও মানা গেল, কিন্তু তৃতীয়টা? ওটির কারণ আর কিছুই নয়- বেতের বাড়ির ভয়। ছোট্ট আইনস্টাইন ভাবলেন, ভুল-ভাল্ উত্তর দিয়ে স্যারের হাতের বেতের বাড়ি খাওয়ার চেয়ে বরং সতর্ক থাকাই তো ভাল! কাজেই ক্লাসে সবার সামনে উত্তর দেওয়ার আগে স্বগতোক্তি করে নিজের কাছেই উত্তরটা পরিস্কার করে নেওয়া- এই আরকি!
ছেলেবেলায় বন্ধুবান্ধবদের সাথে মিশতে না পারলে কি হবে- একটা কিন্তু খুব ভাল গুণ ছিলো তার। ওই যে চিরন্তন একগুয়ে স্বভাব। কোন একটা ব্যাপার মাথায় ঢুকে গেলে সেটার শেষ পর্যন্ত না দেখে তিনি ছাড়তেন না। এর নিদর্শন আমরা পাই আইনস্টাইনের ছোট বোন মাজা উইন্টারের লেখা 'আলবার্ট আইনস্টাইন - আ বায়োগ্রাফিকাল স্কেচ' গ্রন্থে। মাজা আইনস্টাইন সম্পর্কে বলতে গিয়ে লিখেছেন -'কোন কিছুতে একবার আকৃষ্ট হলে যেন রোখ চেপে বসত আইনস্টাইনের মাথায়। একবার বাড়িতে এসেছিলো মাজার কিছু খেলার সঙ্গী। সবাই মিলে মেতে উঠল তাসের ঘর বানানোর খেলায়। চারতলার চেয়ে বেশী আর কেউই বানাতে পারছিলো না। ঠিক এ সময় খেলায় যোগ দেন আইনস্টাইন। প্রথম প্রথম চেষ্টা করতে গিয়ে বেশ কয়েকবারই ভেঙে পড়ে তার তাসের ঘর। ব্যাস রোখ চেপে গেল আইনস্টাইনের। শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে করে যে ঘরটি বানালেন আইনস্টাইন - তা ছিলো চোদ্দ তলার!'
কিন্তু চোদ্দতলার তাসের ঘর বানানো এক কথা, আর পড়াশুনায় ভাল হওয়া আরেক। আইনস্টাইনের রিপোর্টকার্ডের ছিড়ি দেখে বাবা বাধ্য হলেন হেডমাস্টারের সাথে দেখা করতে। বাবা হেডমাস্টারকে জিজ্ঞাসা করলেন, বুঝলাম না হয় আলবার্ট পড়ালেখায় খারাপ করছে, কিন্তু এর মধ্যেও কি কোন পছন্দের বিষয় আছে, যা আলবার্টকে আকর্ষণ করে? মানে কোন বিশেষ সাব্জেক্টে সে কি আগ্রহ টাগ্রহ দেখায়? ভবিষ্যতে তার আগ্রহের বিষয় নিয়ে পড়ালেখা করলে যদি কোন ধরণের উন্নতি হয় - চিন্তাক্লিষ্ট বাবার মাথায় তখন হরেক রকম চিন্তা! হেডমাস্টার মশাই আলবার্টের বাবার এ ধরণের আশাবাদে যার পর নাই বিরক্ত হলেন। সরাসরিই বলে দিলেন, দেখুন বাপু, আপনার ছেলে একটু হাবলু টাইপ। ওকে নিয়ে এত আশাবাদী হয়ে লাভ নেই। মনে হয় না জীবনে কোন কিছুতেই সফল হবে আপনার ছেলে! কালের কি নির্মম পরিহাস- সেই 'হাবলু টাইপ' আইনস্টাইনকেই আজ কিন্তু মানুষ মনে রেখেছে, আর কালস্রোতে হারিয়ে গেছে ওই অর্বাচীন ‘জ্ঞানী’ হেডমাস্টার।
দশ বছর বয়সে আলবার্টকে ভর্তি করা হয় মিউনিখ শহরের লুটপোল্ড জিমনাসিয়াম স্কুলে। এখানেও ক্লাসের গৎবাঁধা পড়াশুনা তার জীবনকে নিরানন্দ করে তুল্লো। বিশেষতঃ গ্রীক ভাষা শেখার ক্লাসটি তো আইনস্টাইনের জন্য এক 'মুর্তিমান বিভীষিকা'। ভাষার ব্যাকারণগুলো কিছুতেই মাথায় ঢুকতে চায় না তার। কাজেই ব্যকবেঞ্চার হয়ে হাসি হাসি মুখ করে শূন্যদৃষ্টিতে স্যারের দিকে তাকিয়ে থাকাই সার হল। মাস্টারমশাই হের যোসেফ ডেগেনহার্ট একই ঘটনা প্রতিদিন দেখতে দেখতে একসময় মহাবিরক্ত বোধ করলেন। সরাসরি বলে দিলেন এর পর থেকে আইনস্টাইন যেন আর ক্লাসে না আসে। কিন্তু এভাবে তো কাউকে ক্লাসে আসতে মানা করা যায় না, বিশেষতঃ আইনস্টাইন যখন ক্লাসে কোন দুষ্টুমী করেননি, কারো সাথে গোলমাল বাধাননি। তা হলে? বিরক্ত মাস্টারমশাই জবাব দিলেন, 'হ্যা তা ঠিক। কিন্ত ওরকম হাবার মত হাসি হাসি মুখ করে ক্লাসে বসে থাকলে শিক্ষকমশাই যে সন্মানটুকু শ্রেণীকক্ষে একটি ছাত্রের কাছ থেকে আশা করেন, তা ক্ষুন্ন হয়।'
বোঝাই যাচ্ছে স্কুল জীবনটা ছিলো আইনস্টাইনের জন্য বিভীষিকাময় পীড়নকেন্দ্রের মত। স্কুলের ওই ভয়ার্ত অভিজ্ঞতার ছাপ আইনস্টাইনের পরবর্তী জীবনে সবসময়ের জন্যই বোধ হয় থেকে গিয়েছিলো। বুড়ো বয়সে এক সাক্ষাৎকারে আইনস্টাইন তাই বলেছিলন, ‘আমার কাছে প্রাথমিক স্কুলের স্যারদের মনে হত যেন মিলিটারী সার্জেন্ট, আর জিমনাসিয়াম স্কুলের শিক্ষকদের মনে হত যেন লেফটেনেন্ট’। এধরনের কথা কিন্তু বলেছিলেন বার্নার্ড শ ও। স্কুল জীবন সম্বন্ধে প্রায় একই ধরণের তিক্ত অভিজ্ঞতা হয় এই ব্রিটিশ সাহিত্যিকের। শ তার একটি লেখায় বলেন - 'স্কুল জেলখানার চেয়েও বেশি নিষ্ঠুর জায়গা। জেলখানায় অন্ততঃ কয়েদীদের বাধ্য করা হয় না ওয়ার্ডেনদের লেখা বই পড়তে, অথবা বেত মারা হয় না শুকনো পাঠ্যবই মুখস্ত না বলতে পারলে'। শৈশবের স্কুল জীবনের বিভীষিকাময় পরিবেশের বাইরে সে সময় আইনস্টাইনের জীবনে সম্ভবতঃ একটিমাত্র আনন্দের বিষয় ছিল, তা হল তার চাচা জ্যাকবের সাহচর্য। তার এই চাচাই শৈশবে আইনস্টাইনকে পরিচয় করিয়ে দেন অংকের প্রধানতম শাখা বীজগনিতের সাথে অনেকটা এভাবে - 'আলবার্ট, বীজগিত হচ্ছে মজার এক বিজ্ঞান, বুঝলে? মনে কর যে পশুটিকে শিকারের জন্য খুঁজছি কিন্তু তখনো ধরতে পারিনি, সেটার নাম নাম আমরা সাময়িকভাবে দেই X, আর যতক্ষণ না ওটাকে ধরতে পারি, আমরা খোঁজ চালিয়ে যেতে থাকি।'
জেকব চাচা ছাড়াও আরো ক’জনের প্রভাব আইনস্টাইনের উপর পড়েছিল। এর মধ্যে একজন হলেন ম্যাক্স ট্যাল্মি নামের এক গরীব মেডিকেলের ছাত্র, যে ছিল আইনস্টাইনদের বাসার ডিনারের 'নিয়মিত অথিতি'। আসলে সে সময় দক্ষিণ জার্মানীর ইহুদীদের মধ্যে এক ধরণের রীতি প্রচলিত ছিল : প্রতি বৃহষ্পতিবার বাসায় কোন গরীব ইহুদীকে দাওয়াত করে খাওয়ানো। সে সূত্রেই ম্যাক্স ট্যাল্মির আইনস্টাইনদের বাসায় আসা। ফলাফল অবশ্য মন্দ হয়নি, এর কাছ থেকেই কিশোর আইনস্টাইন জ্যামিতি আর ক্যালকুলাস শেখার প্রাথমিক অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন।
আর ছিলেন আইনস্টাইনের মা। তবে তিনি জ্যামিতি বা ক্যালকুলাস শেখায় কোন সাহায্য করেন নি, করেছিলেন বেহালা শিখায়। এই বেহালা এবং সর্বপোরি সংগীত প্রীতি আইনস্টাইনের শেষ দিন পর্যন্ত বহাল ছিলো। তার জীবনীকার ডেনিস ব্রায়ান 'আইনস্টাইন - আ লাইফ' (১৯৯৬) গ্রন্থে আইনস্টাইনের সঙ্গীতপ্রিয়তার একটি ঘটনা উল্লেখ করেন এভাবে - ‘একবার আইনস্টাইন তার মধ্যবয়সে যথারীতি হেলতে দুলতে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। হাতে ছিলো তার প্রিয় বেহালাখানা। হঠাৎ শুনলেন রাস্তার ওপারের এক বাসা থেকে পিয়ানোর আওয়াজ ভেসে আসছে। আইনস্টাইন দৌড়ে বাসার কাছে চলে আসতে আসতে মহিলাকে বললেন- থেমো না, থেমো না, বাজাতে থাক! বলতে বলতেই বাক্স থেকে নিজের বেহালাটি বের করে ফেললেন, আর মহিলার সাথে তালে তাল মিলিয়ে বাজাতে লাগলেন। আইনস্টাইনের এ ধরণের স্বতঃস্ফুর্ততা ছিলো সত্যই বিস্ময়কর।’ আইনস্টাইনের সঙ্গীতপ্রিয়তার আরেকটি বড় একটি উদাহরণ আমরা পরবর্তীতে পাই রবীন্দ্রনাথের সাথে সাক্ষাৎকারের সময় (১৯৩০)। রবীন্দ্রনাথ জার্মানীতে আইনস্টাইনের বাসায় বেড়াতে এলে তারা দু’জনেই প্রাচ্য আর প্রতীচ্যের সঙ্গীত নিয়ে গভীর আলোচনায় নিমগ্ন হয়েছিলেন। সাক্ষাৎকারটির অনুলিখন যিনিই পড়েছেন, তিনিই বুঝেছেন যে, পদার্থবিজ্ঞানের কাঠখোট্টা জগতের বাইরেও তার ছিলো সঙ্গীতপ্রিয় সরস এক শিল্পী মন।
তবে আসল উপকারটি যিনি করেছিলেন তিনি তার জ্যাকব চাচাও নন, ম্যাক্স ট্যাল্মিও নন, এমনকি তার মা ও হয়ত নন, উপকারটি করেছিলেন তার বাবা - সেই ছোট্টবেলায় আইনস্টাইনকে একটি সামান্য কম্পাস কিনে দিয়ে। আইনস্টাইনের বয়স তখন কতই বা হবে - চার/পাঁচ! কম্পাসের কাঁটা যে সবসময় উত্তর-দক্ষিণে মুখ করে থাকে- এ ব্যাপারটা আইনস্টাইনকে যার পর নাই বিস্মিত করেছিল। ছোট্ট আইনস্টাইন ঘুমানোর সময়ও শুয়ে শুয়ে ভাবতো যে, কম্পাসের কাঁটা কেন শুধু উত্তর-দক্ষিণে মুখ করে থাকবে! নিশ্চয়ই কোন কারণ আছে এর পেছনে। মাঝরাতে বাবা এসে দেখেন আইনস্টাইন তখনো ঘুমায়নি। বাবাকে দেখেই আইনস্টাইনের প্রশ্ন - 'আচ্ছা বাবা, কম্পাসের কাঁটা কেন কেবলই এক দিকে মুখ করে থাকে?' বাবা গম্ভীর গলায় বললেন - 'ম্যাগনেটিজম্'। তারপরই বলতেন 'আলবার্ট, অনেক রাত হয়েছে, এখন ঘুমানোর চেষ্টা কর তো।' ঘুমিয়ে যেতে যেতেই আইনস্টাইন ভাবতেন, হুমম্ ম্যাগনেটিজম - বড় হয়ে ব্যাপারটা আরো ভাল করে বুঝতে হবে।
৩
তা আইনস্টাইন বড় হয়ে ভালই বুঝেছিলেন। বুঝেছিলেন বলেই তিনি 'বড় হয়ে' আপেক্ষিক তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিজম বা তড়িচ্চুম্বকীয় মূল নীতির সংস্কার সাধন করে, যার ভিত্তি গড়ে উঠেছিলো আইনস্টাইন-পূর্ব বিজ্ঞানী- মুলতঃ নিউটন, ফ্যারাডে, কুলম্ব, গ্যালভানি, অ্যাম্পিয়ার, ম্যাক্সয়েল, হেলমোলজের ক্রমিক অবদানে।
সঙ্গতঃ কারণেই ১৯০৫ সালটিকে আইনস্টাইনের জীবনের 'বিস্ময় বছর' বলা হয়, করণ ও বছরটিতেই আইনস্টাইন মৌলিক আবিস্কারগুলো করেছিলেন। তার আগ পর্যন্ত আইনস্টাইনের পরিচিতি ছিল অনেকটা যেন ‘অ্যামেচার পদার্থবিদ’ হিসেবে। জুরিখের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ভর্তি পরীক্ষায় তো এক্কেবারে ফেলই করে বসলেন। পরে অবশ্য তার সাধের এই পলিটেকনিকে একটু অন্যভাবে ভর্তি হতে পেরেছিলেন (ভর্তি পরীক্ষায় আর দ্বিতীয়বার না বসেই)। ভর্তি হলে কি হবে, ফলাফল কিন্তু যেই কি সেই।
ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষায় বসেন চারজন ছাত্র ও একজন ছাত্রী। প্রথম হন লুই কলরস (স্কোর ৬০), দ্বিতীয় মার্সেল গ্রসম্যান (স্কোর ৫৭.৫), জ্যাকব এহরাট (৫৬.৫), এর পর আইনস্টাইন (৫৪), শেষ স্থান মিলেভা মারিকের (৪৪, ফেল্) যিনি পরবর্তীতে আইনস্টাইনের স্ত্রী হন। তার মানে ফেলের হাত থেকে বাঁচলেও পাশ করা ছাত্রদের মধ্যে আইনস্টাইনের স্থান হয় সবার শেষে। রেজাল্ট খারাপই কেবল একমাত্র বিষয় নয়, এর মধ্যে পদার্থবিজ্ঞানের বিভাগীয় প্রধানকেও দিলেন চটিয়ে। প্রফেসর ওয়বার নামের অধ্যাপক মশাইটি চাইতেন ছাত্ররা তাকে সব সময় ‘হের প্রফেসর’ বলে ডাকুক (আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা যেমন সারাদিনই স্যার স্যার করা পছন্দ করেন, অনেকটা ওরকম আরকি!)। আইনস্টাইন ব্যাপারটি বুঝলেও তাকে স‘হের ওয়েবার’ নামে সম্বোধন করে যেতেন। এর ফলে প্রফেসর সাহেব এমনই খ্যাপা খেপেন যে, পরীক্ষার আগে তিনি আইনস্টাইনকে একটি স্টাডি পেপার দু’দুবার লিখতে বাধ্য করেন।
সে যাই হোক, পরীক্ষার লবডংকা ফলাফলের খেসারত ভালই দিলেন আইনস্টাইন। সহপাঠীদের মধ্যে চাকরী হল না কেবল তারই। নানা কলেজে দরখাস্ত করলেন তিনি, কিন্তু কোথা থেকেও কোন উত্তর এলো না। নিজ প্রতিষ্ঠানেও কোন আশার আলো দেখতে পেলেন না আইনস্টাইন।
সেই ওয়েবার মশাই যিনি এমনিতেই আইনস্টাইনের উপর খাপ্পা ছিলেন, তিনি ঘোষনা করে দিলেন যে এবছর তিনি কোন পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র তার অধীনে কাজ করার জন্য নেবেন না, নেবেন একজন পুরোদস্তুর মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়র। বোঝাই যায়, পাছে আইনস্টাইন আবেদন করে বসেন এই ভয়েই তড়িঘড়ি অমন ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। যা হোক, বেকার আইনস্টাইনকে শেষ পর্যন্ত সাহায্য করেছিলেন তার পলিটেকনিকের সহপাঠী গ্রসম্যান।
তার বাবাকে অনুরোধ করে কোন রকমে আইনস্টাইনের জন্য গ্রসম্যান একটা চাকরী জুটিয়ে দিলেন সুইস পেটেন্ট অফিসে। পদ - প্রবেশনারি টেকনিকাল এক্সপার্ট, থার্ড ক্লাস। হ্যা - ওখানেই চাকরী শুরু করলেন আইনস্টাইন, ধীরে ধীরে সহকর্মীদের শ্রদ্ধাভাজনও হতে শুরু করলেন, কিন্তু এর বেশী কিছু আইনস্টাইনকে দেখে তখন বোঝা যায়নি। কিন্তু মাস খানেকের মধ্যেই পরিস্থিতি গেল বদলে। ওই 'অজ্ঞাতকুলশীল' সাধারণ পেটেন্ট ক্লার্কের চিন্তার ঝড়ে আক্ষরিকভাবেই লন্ডভন্ড হয়ে গেল পৃথিবী। এমনই লংকাকান্ড বেধে গেল যে, পদার্থবিদদের এতদিনকার চীরচেনা বিশ্বজগতের ছবিটাই গেল আমূল বদলে। পুরোপদার্থবিজ্ঞানের চীরচেনা জগৎটাকেই ঢেলে সাজাতে হল, পাঠ্যপুস্তকগুলোও লিখতে হল এক্কেবারে নতুন করে! তা পেটেন্ট অফিসে বসে কি করলেন আইনস্টাইন? তাঁর ওই 'বিস্ময় বছরের' প্রথমভাগে প্রকাশ করলেন ব্রাউনীয় গতির উপর একটা পেপার- যেটি আমাদের দিল পরমানুর অস্তিত্বের বাস্তব প্রমাণ, বানালেন আলোর কনিকা বা কোয়ান্টাম তত্ত্ব, আর প্রকাশ করলেন সবচাইতে জনপ্রিয় আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্বটি। তার বিখ্যাত সমীকরণ =E=mc2 বাজারে আসল একটি অতিরিক্ত (সংযোজনী) তিন পৃষ্ঠার পেপার হিসেবে। একটি পেপারের জন্য আবার পরবর্তীতে পেলেন নোবেল। আইনস্টাইন আর ‘আ্যামেচার পদার্থবিদ’ রইলেন না, থাকলেন না পৃথিবীবাসীর কাছে ‘অজ্ঞাত’ হিসেবে। ১৯১৯ সালে আইনস্টাইনের তত্ত্বের ব্যবহারিক প্রমাণ মিলল, তখন আইনস্টাইন রীতিমত তারকা। সে বছর নিউইয়র্ক টাইমস ব্যানার হেডলাইন করে ফিচার করল - 'Einstein Theory Triumphs’। Times of London লিখল, ‘Revolution in Science ... Newtonian Ideas overthrown'। আইনস্টাইনের আসন সে দিন থেকে পদার্থবিজ্ঞানের ইতিহাসে রীতিমত স্থায়ী হয়ে গেল। তার জীবনীকার দেনিস ব্রায়ান Einstein: A Life গ্রন্থে লিখেছেন, 'He was regarded by many as an almost supernatural being, his name symbolizing then - as it does now- the highest reaches of the human mind'। সত্যই তাই। 'আইনস্টাইন' শব্দটি উচ্চারণ করলেই মনে যে হিমালয়-সম তুংগস্পর্শী মানব প্রতিভার অবয়ব চোখের সামনে ভেসে ওঠে তার ভিত্তি রচিত হয়েছিল সে সময়ই। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের রুজ বল প্রফেসর রজার পেনরোজের মতে, 'আমাদের পরম সুবিধা এই যে, এই বিংশ শতাব্দীতে আমরা দু-দুটো বিপ্লবের সাক্ষী হয়েছি। প্রথমটিকে আমরা বলি আপেক্ষিকতা, আর দ্বিতীয়টি চিহি¡ত হয়েছে কোয়ান্টাম তত্ত্ব নামে। অবাক ব্যাপার যে - একজন মাত্র বিজ্ঞানী - আলবার্ট আইনস্টাইন - তার অসাধারণ মনন আর অনুসন্ধিৎসা বলে ১৯০৫ সালে মাত্র এক বছরের ভিতর রচনা করেছিলেন ওই দু-দুটো বিপ্লবেরই।'
৪
আপেক্ষিকতার তত্ত্ব উদ্ভাবনের পেছনে রয়েছে আইনস্টাইনের অসাধারণ কিছু মানস পরীক্ষা (Thought Experiment)* । 'অসাধারণ' শব্দটি লিখলাম বটে, কিন্তু বর্ণনা শুনলে মনে হবে এ তো খুবই সাধারণ। এতোই সাধারণ, যে কারো মাথায়ই হয়ত আসবে না যে, এগুলো কোন চিন্তার বিষয় হতে পারে। আইনস্টাইনের অসাধারণত্ব ওখানেই। সাধারণ আর হাল্কা বিষয় নিয়ে চিন্তা করতে করতে অসাধারণ সমস্ত জটিল সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারতেন। সেই সতের বছর বয়সে হঠাৎ করেই একদিন আইনস্টাইনের মাথায় এসেছিলো একটি অদ্ভুতুরে প্রশ্ন : 'আচ্ছা, আমি যদি একটা আয়না নিয়ে আলোর গতিতে সা সা করে ছুটতে থাকি, তবে কি আয়নায় আমার কোন ছায়া পড়বে?'
আমি যদি একটা আয়না নিয়ে আলোর গতিতে সা সা করে ছুটতে থাকি, তবে কি আয়নায় আমার কোন ছায়া পড়বে?
প্রশ্নটা শুনতে সাধারণ মনে হলেও এর আবেদন কিন্তু সুদূরপ্রসারী। এই প্রশ্নটি সমাধানের মধ্যেই আসলে লুকিয়ে ছিল আপেক্ষিকতার বিশেষতত্ত্ব (Special Theory of Relativity) সমাধানের বীজ। আলোর গতিতে চললে আয়নায় কি ছায়া পড়ার কথা? আমাদের প্রাত্যহিক যে অভিজ্ঞতা, তার নিরিখে বলতে গেলে বলতে হয় পড়বে না। কেন?
কারণটা সোজা। গ্যালিলিও-নিউটনেরা বস্তুর মধ্যকার আপেক্ষিক গতির যে নিয়মকানুন শিখিয়ে দিয়েছিলেন, তা থেকে বুঝতে পারি আলোর সমান সমান বেগে পাল্লা দিয়ে চলতে থাকলে আইনস্টাইনের সাপেক্ষে আলোকে তো এক্কেবারে গতিহীন মনে হবার কথা। ফলে আলোর তো আইনস্টাইনকে ডিঙ্গিয়ে আয়নায় ঠিকরে পড়ে আবার আইনস্টাইনের চোখে পড়বার কথা নয়। তাহলে ওই পরিস্থিতিতে আইনস্টাইন কিন্তু নিজের ছায়া আয়নায় দেখতে পাবেন না। আরো সোজাসুজি বললে বলা যায়, আয়না মুখের সামনে ধরে যদি আলোর বেগের সমান বেগে দৌড়ুতে থাকেন, তবে আইনস্টাইন দেখবেন যে আয়না থেকে আইনস্টানের প্রতিবিম্ব রীতিমত 'ভ্যানিশ' হয়ে গেছে। কিন্তু তাই যদি হয় এই ব্যাপারটা জন্ম দিবে আরেক সমস্যার। এতোদিন ধরে গ্যালিলিও যে 'প্রিন্সিপাল অব রিলেটিভিটি' নামের সার্বজনীন এক নিয়ম আমাদের শিখিয়েছিলেন, সেটা তো আর কাজ করবে না। গ্যালিলিওর এই আপেক্ষিকতার নিয়মটা আগে একটু একটু বোঝার চেষ্টা করা যাক। এই যে আমরা পৃথিবী নামের গ্রহের কাঁধে সওয়ার হয়ে সূর্যের চারিদিকে সেকেন্ডে ১৬ মাইল বেগে অবিরাম ঘুরে চলেছি, তা আমরা কখনো টের পাই না কেন? কারণ আমাদের অবস্থান তো পৃথিবীর বাইরে নয়। পৃথিবী আমাদেরকে সাথে নিয়েই প্রতিনিয়ত লাট্টুর মত ঘুরে চলেছে। কাজেই আমাদের সাপেক্ষে পৃথিবীর আপেক্ষিক গতি তো সবসময়ই স্রেফ শূন্যই থাকে। সেজন্যই আমরা পৃথিবীর গতিকে কখনো উপলব্ধি করি না। ঠিক একই ধরনের অভিজ্ঞতা হয় আমাদের যখন আমরা স্টিমারে, লঞ্চে কিংবা জাহাজে করে নদী কিংবা সমুদ্র পাড়ি দেই। অনেক সময় আমরা ডেকের ভিতরে থেকে বুঝতেই পারি না লঞ্চ বা জাহাজটা চলছে কিনা। কেবল মাত্র বাইরের দিকে তাকিয়ে যখন দেখি তীরের গাছপালা বাড়িঘরগুলো সব পেছনের দিকে চলে যাচ্ছে, তখনই কেবল বুঝি যে আমাদের জাহাজটা আসলে সামনের দিকে এগুচ্ছে। পৃথিবীর ঘূর্ণনের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই। কেবল আকাশের দিকে তাকিয়ে আমরা যখন সূয্যি মামাকে পূব থেকে পশ্চিমে চলে যেতে দেখি, তখনই আমরা কেবল বুঝি যে আমাদের পৃথিবীটা হয়ত আমাদেরকে সাথে নিয়ে পশ্চিম থেকে পূবে পাক খেয়ে চলেছে। এই বিভ্রান্তিটাই কিন্তু গ্যালিলিওর 'প্রিন্সিপাল অব রিলেটিভিটি'র মূলকথা। গ্যালিলিও বলেছিলেন যে, কেউ যদি সমবেগে ভ্রমণ করতে থাকে (ধরুণ জাহাজে করে) তবে তার (জাহাজের ডেকের ভিতরে বসে) কোন ভাবেই বুঝবার বা বলবার উপায় নেই যে সে এগুচ্ছে, পিছাচ্ছে নাকি স্থির হয়ে দাড়িয়ে আছে। কিন্তু তাই যদি হয়, তবে জাহাজটি যদি আলোর বেগে চলে তবে তো এই সার্বজনীন ব্যাপারটি খাটবে না। জাহাজের ডেকে বসে স্রেফ আয়নার দিকে তাকিয়েই কিন্তু জাহাজযাত্রীবুঝে যাবেন যে তার জাহাজটি চলছে, কারণ তিনি তার প্রতিবিম্বকে আয়না থেকে ‘ভ্যানিশ’ হয়ে যেতে দেখবেন।
তাহলে? তাহলে আর কিছুই নয় - আইনস্টাইন বুঝলেন, হয় গ্যালিলিওর প্রিন্সিপাল অব রিলেটিভিটি ভুল, আর নয়ত আইনস্টাইনের মানসপরীক্ষার মধ্যেই কোথাও গলদ রয়ে গেছে। অবশ্যই সতেরো বছর বয়সে এই ধাঁধার কোন সমাধান পাননি আইনস্টাইন, কিন্তু এ নিয়ে অনবরত চিন্তা করেই গেছেন।
সমাধান পেয়েছেন শেষ পর্যন্ত সুইস পেটেন্ট অফিসে চাকরী শুরু করার মাস খানেকের মধ্যে। আইনস্টাইন বুঝলেন যে, গ্যালিলিওর প্রিন্সিপাল অব রিলেটিভিটির মধ্যে কোন ভুল নেই। আয়না থেকে ছায়া ভ্যানিশ হওয়া ঠেকাতে হলে আলোর গতির ব্যাপারটিকে একটু ভিন্নরকম ভাবে ভাবতে হবে; আর দশটা সাধারণ বস্তু কণার বেগের মত করে ভাবলে চলবে না। আইনস্টাইন বললেন, 'আলোর বেগ তার উৎস বা পর্যবেক্ষকের গতির উপর কখনই নির্ভর করে না; এটি সব সময়ই ধ্রুবক।' ব্যাপারটা খুবই অদ্ভুত। মন মানতে চায় না; কারণ এই ব্যাপারটি বস্তুর বেগ সংক্রান্ত আমাদের সাধারণ পর্যবেক্ষণের একেবারেই বিরোধী। যেমন ধরা যাক, আপনি একটি রাস্তায় ৪০ কি.মি বেগে গাড়ী চালাচ্ছেন। আপনার বন্ধু ঠিক বিপরীত দিক থেকে আরেকটি গাড়ী নিয়ে ৪০ কি.মি বেগে আপনার দিকে ধেয়ে এল। আপনার কাছে কিন্তু মনে হবে আপনার বন্ধু আপনার দিকে ছুটে আসছে দ্বিগুন (৪০ + ৪০ = ৮০ কি.মি) বেগে। আলোর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা অন্যরকম। ধরা যাক, একজন পর্যবেক্ষক সেকেন্ডে ১ লক্ষ ৫০ হাজার কিলোমিটার বেগে আলোর উৎসের দিকে ছুটে চলেছে। আর উৎস থেকে আলো ছড়াচ্ছে তার নিজস্ব বেগে - অর্থাৎ সেকেন্ডে প্রায় ৩ লক্ষ কিলোমিটারে। এখন কথা হচ্ছে পর্যবেক্ষকের কাছে আলোর বেগ কত বলে মনে হওয়া উচিৎ? আগের উদাহরণ থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতা বলে - সেকেন্ডে (১ লক্ষ ৫০ হাজার + ৩ লক্ষ =) ৪ লক্ষ ৫০ হাজার কিলোমিটার। আসলে কিন্তু তা হবে না। পর্যবেক্ষক আলোকে সেকেন্ডে ৩ লক্ষ কিলোমিটার বেগেই তার দিকে আসতে দেখবে। ব্যাপারটা ব্যতিক্রমী সন্দেহ নেই, কিন্তু এ ব্যাপারটা না মানলে গ্যালিলিওর 'প্রিন্সিপাল অব রিলেটিভিটি'র কোন অর্থ থাকে না। আইনস্টাইন তার তত্ত্বের সাহায্যে আরো দেখালেন, যদি কোন বস্তু কণার বেগ বাড়তে বাড়তে আলোর গতিবেগের কাছাকাছি চলে আসে, বস্তুটির ভর বেড়ে যাবে (mass increase) নাটকীয় ভাবে, দৈর্ঘ্য সঙ্কুচিত হয়ে যাবে (length contraction) এবং সময় ধীরে চলবে (time dialation)। সময়ের ব্যাপারটা সত্যই অদ্ভুত। বিজ্ঞানী-অবিজ্ঞানী বির্বিশেষে সবাই সময় ব্যাপারটিকে এতদিন একটা 'পরম' (absolute) কোন ধারণা হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন; সময় ব্যাপারটা রাম-শ্যাম-যদু-মধু সবার জন্যই ছিলো সমান, যেন মহাবিশ্বের কোথাও লুকিয়ে থাকা একটি পরম ঘড়ি অবিরাম মহাজাগতিক হৃৎস্পন্দনের তালে তালে স্পন্দিত হয়ে চলছে, টিক্, টিক্, টিক্, টিক্... ... যার সাথে তুলনা করে পার্থিব ঘড়িগুলোর সময় নির্ধারণ করা হয়। কাজেই সময়ের ব্যাপারটা আক্ষরিক আর্থেই ছিল পরম, কোন ব্যক্তিবিশেষের উপর কোনভাবেই নির্ভরশীল নয়। কিন্তু আইনস্টাইন রঙ্গমঞ্চে হাজির হয়ে বললেন, সময় ব্যাপারটা কোন ভাবেই 'পরম' নয়, বরং আপেক্ষিক। আর সময়ের দৈর্ঘ্য মাপার আইনস্টাইনীয় স্কেলটা লোহার নয়, যেন রাবারের - ইচ্ছে করলেই টেনে লম্বা কিংবা খাটো করে ফেলা যায়! রামের কাছে সময়ের যে দৈর্ঘ্য তা রহিমের কাছে সমান মনে নাও হতে পারে। বিশেষতঃ রাম যদি দ্রুতগতিতে চলতে থাকে, রহিমের তুলনায় রামের ঘড়ি কিন্তু আস্তে চলবে! আরেকটা জিনিস বেরিয়ে আসল আইনস্টাইনের তত্ত্ব থেকে। শূন্য পথে আলোর যা গতিবেগ, কোন বস্তুর গতিবেগ যদি তার সমান বা বেশী হয়, তবে সমীকরণগুলো নিরর্থক হয়ে পড়ে। এ থেকে একটা সিদ্ধান্ত করা হয়েছে - কোন পদার্থই আলোর সমান গতিবেগ অর্জন করতে পারবে না। সেই থেকে মহাবিশ্বের গতির সীমা নির্ধারিত হয় আলোর বেগ দিয়ে।
আইনস্টাইন আপেক্ষিকতার এই বিশেষ তত্ত্ব দিয়েই কিন্তু ইতিহাসের পাতায় স্মরণীয় হয়ে থাকতে পারতেন। ১৯০৫ সালে তার গবেষণাপত্রটি জার্নালে প্রকাশের পর থেকেই পদার্থবিজ্ঞানীরা বুঝতে পেরেছিলেন যে, সুইস পেটেন্ট অফিসের এক অখ্যাত কেরানী অচীরেই পদার্থবিজ্ঞানের ইতিহাসে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করতে যাচ্ছেন। কোয়ান্টাম বলবিদ্যার জনক ম্যাক্স প্লাঙ্ক তখনই উচ্চকিত হয়ে উঠেছিলেন এই বলে : 'যদি (আপেক্ষিক তত্ত্ব) সত্য বলে প্রমাণিত হয়, তবে আইনস্টাইন বিংশশতাব্দীর কোপার্নিকাস হিসেবে বিবেচিত হবেন।'
কিন্তু আইনস্টাইন কেবল বিশেষ তত্ত্ব নিয়ে সন্তুষ্ট হয়ে বসে থাকার মানুষ নন। আবিষ্কারের নেশা তখন যেন তাকে পেয়ে বসেছে। তিনি মন দিলেন আরো উচ্চাভিলাসী গবেষণায়। এর ফলাফল হিসেবেই ক’বছরের মধ্যে উঠে আসলো সার্বিক অপেক্ষিক তত্ত্ব (General Theory of Relativity)। এই গবেষণা মানে আর গুণে এমনই অনন্য যে, আইনস্টাইন নিজেই একসময় উপলব্ধি করেছিলেন যে, এই গবেষণার কাছে তার আগের আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব তো স্রেফ 'ছেলে খেলা'। মজার ব্যাপার হচ্ছে আইনস্টাইনের এই সার্বিক অপেক্ষিক তত্ত্বের পেছনেও কিন্তু রয়েছে আরেকটি সার্থক মানস পরীক্ষা। হঠাৎ একদিন আইনস্টাইনের মাথায় আসলো একটা লোক উঁচু একটা বাড়ীর ছাদের উপর থেকে পড়ে গেলে কি হবে? কি আবার হবে! ধপ্পাস করে মাটিতে-তারপর দুম ফট! আমাদের মত ছা-পোষা মানুষেরা তো বটেই, অধিকাংশ বিজ্ঞানীরাই ওভাবে চিন্তা করতেন। কিন্তু আইনস্টাইন ওভাবে ভাবলেন না। সাধারণ একটা ঘটনার মধ্যেও অসাধারণত্বের ছোঁয়া খুঁজে পেলেন। তিনি দুর্ভাগ্যবান মানুষটির মাটিতে ভুপাতিত হবার ঠিক আগের মুহূর্তটির 'সৌভাগ্যের' কথা ভাবলেন, যেটিকে তিনি আখ্যায়িত করেছেন 'হ্যাপিয়েস্ট থট অব মাই লাইফ'।
কি পেলেন আইনস্টাইন ওই পতনশীল মানুষটির মাটিতে আঘাত করার আগ-মুহূর্তের মধ্যে? পেলেন এই যে, ওই পতনশীল মানুষটি নিজের ওজন অনুভব করবে না। আইনস্টানের কাছে এ ব্যাপারটির মানে দাঁড়ালো, মহাকর্ষ ক্ষেত্রের মধ্যে মুক্তপতনশীলতার অভিজ্ঞতা আর মহাকর্ষবিহীন শূন্যাবস্থায় ভেসে থাকার মধ্যে আসলে কোন পার্থক্য নেই। সেখান থেকেই তিনি বের করে আনলেন 'ইকুইভ্যালেন্ট প্রিন্সিপাল'- যা হয়ে দাঁড়ালো সার্বিক আপেক্ষিক তত্ত্বের মূল ভিত্তি।
আইনস্টাইন পরবর্তীতে তার ঐতিহাসিক তত্ত্বের সাহায্যে মহাকর্ষের সাথে আপেক্ষিকতাকে সন্নিবদ্ধ করে দেখালেন যে, মহাকর্ষকে শুধু শুন্যস্থানে দুটি বস্তুর মধ্যে আকর্ষণ বল (নিউটন যেভাবে চিন্তা করেছিলেন) হিসেবে ভাবলে চলবে না, ভাবতে হবে আপাতঃ শক্তি (aparent force)হিসেবে যার উদ্ভব হয় আসলে মহাশূন্যের (space) নিজস্ব বক্রতার কারণে। তার এ তত্ত্ব থেকেই আমরা বুঝতে পেরেছি, কোন আকর্ষণ বল-টল নয় বরং বিশাল ভরের কারণে মহাশুন্যে সৃষ্টি হয় বক্রতা যা কোন বস্তুকণার গতিপথকে - এমনকি আলোর গতিপথকেও বাঁকিয়ে দেয়। আমাদের সৌরজগতের কেন্দ্রে সূর্য থাকার কারণেও কিন্তু সৃষ্টি হয়েছে বক্রতা যার কারণে পৃথিবী সহ অন্যান্য গ্রহগুলোকে একটি বক্রতলে সূর্যের চারদিকে ঘুরতে দেখা যায়। প্রফেসর আর্কিবালড হুইলারের ভাষায় -'পদার্থ স্পেসকে বলছে কিভাবে বাঁকতে হবে, আর স্পেস পদার্থকে বলছে কিভাবে চলতে হবে'! এটাই আসলে নিউটনের মহাকর্ষকে আইনস্টাইনের চোখ দিয়ে দেখা।
৫
কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যা নিয়েও আইনস্টাইন বিভিন্ন ধরনের মানস পরীক্ষা করেছিলেন তার জীবনের শেষ তিন দশকে। অনেকগুলোই তৈরী করেছিলেন কোয়ান্টাম বলবিদ্যা বিষয়ে বিখ্যাত ডেনিস বিজ্ঞানী নীলস্ বোরের সাথে তর্কে লিপ্ত হয়ে। যদিও আইনস্টাইন ১৯০৫ সালে নোবেল পুরস্কারটিই পেয়েছিলেন কোয়ান্টাম বলবিদ্যার উপর- সেই যে 'ফটো-ইলেকট্রিক ইফেক্ট' যার মাধ্যমে তিনি দেখিয়েছিলেন আলো আসলে কতকগুলো শক্তিকণার (কোয়ান্টা) সমষ্টি, কিন্তু এই আইনস্টাইনই আবার পরবর্তীতে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার সম্ভাবতার জগতের সাথে একাত্মতা ঘোষনা করতে পারেন নি। কোয়ান্টাম বলবিদ্যার অনিশ্চয়তাকে খন্ডন করতে গিয়ে তার 'ঈশ্বর পাশা খেলেন না' উক্তিটি তো সর্বজনবিদিত।
কোয়ান্টাম বলবিদ্যাকে অসম্পূর্ণ প্রমাণ করতে তিনি অনেকগুলো মানসপরীক্ষার ক্ষেত্র তৈরী করেন; এর মধ্যে বিখ্যাতটি হল ‘ই.পি.আর’ পরীক্ষণ, যেটি তিনি তৈরী করেন ন্যাথান রোজেন আর বরিস পোডলস্কির সাথে মিলে। ১৯৩৫ সালে তার সেই মানসপরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয় ফিজিকাল রিভিউ জার্ণালে Can Quantum Mechanical Description of Physical Reality Be considered Complete? শিরোনামে।
আইনস্টাইনের সবগুলো মানস পরীক্ষাই ছিলো খুবই সহজ সরল যা পদার্থবিজ্ঞানের একেবারে প্রাথমিক জ্ঞানের উপর প্রতিষ্ঠিত। আইনস্টাইনের কৃতিত্ব এখানেই যে তিনি ওই সব সহজ সরল সাধারণ বিষয়গুলোকে নিয়ে চিন্তা করতে করতে ধীরে ধীরে জটিল তত্ত্বে উপনীত হতেন। আবার অনেক সময় জটিল জিনিসকে নিয়ে আসতেন জনমানুষের সাধারণ বোধগম্যতার স্তরে। একবার বিজ্ঞানের এক 'ক অক্ষর গোমাংস' সাংবাদিক 'আপেক্ষিকতার মূল বিষয়টি কি?' জিজ্ঞাসা করলে, আইনস্টাইন উত্তরে বললেন, 'আপনি চুলার আগুনে আপনার হাতটি এক মিনিটের জন্য ধরে রাখুন, সেই এক মিনিটকে মনে হবে এক ঘন্টা। কিন্তু এক সুন্দরী তরুনীর সাথে এক ঘন্টা ধরে কথা বলুন, সেই একঘন্টাকে মনে হবে এক মিনিট। এটাই আপেক্ষিকতা।'
আইনস্টাইনের আস্থা ছিলো পর্যবেক্ষণ অনপেক্ষ ভৌত বাস্তবতায়। তিনি বিশ্বাস করতেন না মানুষের পর্যবেক্ষণের উপর কখনও ভৌতবাস্তবতার সত্যতা নির্ভরশীল হতে পারে। বোর প্রদত্ত কোয়ান্টাম বলবিদ্যার কোপেনহেগেনীয় ব্যাখ্যার সাথে তার বিরোধ ছিল মূলতঃ এখানেই। বোর বলতেন, 'পদার্থবিজ্ঞানে কাজ প্রকৃতি কেমন তা আবিষ্কার করা নয়, প্রকতি সম্পর্কে আমরা কি বলতে পারি আর কিভাবে বলতে পারি, এটা বের করাই বিজ্ঞানের কাজ।' এই ধরণাকে পাকাপোক্ত করতে গিয়ে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার আরেক দিকপাল হাইজেনবার্গ দেখিয়েছিলেন যে, একটি কণার অবস্থান এবং বেগ যুগপৎ নিশ্চিতভাবে নির্ণয় করা অসম্ভব।
অবস্থান সুচারুভাবে মাপতে গেলে কনাটির বেগের তথ্য হারিয়ে যাবে, আবার বেগ খুব সঠিকভাবে মাপতে গেলে অবস্থান নির্ণয়ে গন্ডগোল দেখা দেবে। নীলস বোরের মতে, যতক্ষণ পর্যন্ত না একটি কণাকে পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা যাচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত কণাটি কোথায় রয়েছে - এটা বলার কোন অর্থ হয় না। কারণ এটি বিরাজ করে সম্ভাবনার এক অস্পষ্ট বলয়ে। অর্থাৎ এই মত অনুযায়ী ভৌতবাস্তবতা মানব-পর্যবেক্ষণ নিরপেক্ষ নয় (১৯৮২ সালে অ্যালেইন অ্যাস্পেক্ট আইনস্টাইনের ই.পি.আর মানস পরীক্ষাকে পূর্ণতা দান করেন একটি ব্যবহারিক পরীক্ষার মাধ্যমে, যা বোরের যুক্তিকেই সমর্থন করে)। বলা বাহুল্য, আইনস্টাইন এ ধরনের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হতে পারেন নি। একবার বোরের যুক্তিতে অনুপ্রাণিত এক বন্ধু তাকে রাস্তায় মানব পর্যবেক্ষণের সাথে কোয়ান্টামীয় ভৌত বাস্তবতার সম্পর্ক বোঝাতে চাইছিলেন। বিরক্ত আইনস্টাইন আকাশের দিকে আঙ্গুল তুলে বলে উঠলেন - 'তুমি বলতে চাইছো, ওই যে চাঁদটা ওখানে আছে, আমরা না দেখলে চাঁদটার অস্তিত্ব থাকবে না?'
এই হচ্ছেন আইনস্টাইন। দৈনন্দিন জীবনের সাধারণ কিছু উপমা আর সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনার মাধ্যমে বিশ্বজগতের জটিল রহস্যের সমাধান করতে প্রয়াসী হয়েছিলেন। প্যাভিয়ার রাস্তায় হেটে বেড়ানো একসময়কার 'ভাবুক' বালক বড় হয়ে স্রেফ কতকগুলো মানস পরীক্ষার মাধ্যমে চীরচেনা জগতের ছবিটাই আমূল পাল্টে দিয়েছিলেন, আর জীবনের শেষ বছরগুলো নিস্ফলভাবে কাটিয়েছিলেন কোয়ান্টাম বলবিদ্যার 'আজগুবী' সিদ্ধান্তগুলোকে হটাতে; মানবিকতার সাধনায় আর প্রকৃতির মৌলিক বলগুলোকে একীভূত করবার উচ্চাভিলাসী স্বপ্ন নিয়ে হেঁটে গিয়েছিলেন অনেকদূর - একাকী, নিঃসঙ্গভাবে!
===================
* বিঃ দ্রঃ মানস পরীক্ষাগুলো (Thought Experiment) কোন বাস্তব পরীক্ষা নয়, বরং কল্পিত পরীক্ষা। পরীক্ষাগুলো ঘটে আসলে পদার্থবিদদের মাথার ভিতরে, কোন ল্যাবরেটরীতে নয়। মুলতঃ যন্ত্রপাতির সীমাবদ্ধতা এবং অন্যান্য কারণে এ ধরনের পরীক্ষাকে বাস্তবে রূপ না দেওয়া গেলেও পদার্থবিদদের মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাওয়া এ পরীক্ষাগুলোর গুরুত্ব কিন্তু অপরিসীম।
মন্তব্য
লেখাটা অসাধারণ হয়েছে। জানি, এভাবে গুছিয়ে আনতে অনেক সময় ব্যয় হয়েছে আপনার -তবুও আপনার কাছে এধরনের লেখা আরও চাই, বহুবার চাই।
ভাল থাকুন।
কি মাঝি? ডরাইলা?
লেখাটা আসলে বাংলাদেশের বিজ্ঞান লেখক এবং প্রফেশনাল বিজ্ঞান বক্তা আসিফের অনুরোধে লিখেছিলাম। সে তার কোন এক পত্রিকার জন্য চেয়েছিল। তারপর আর ওই পত্রিকার খবর নাই! ওটাই একটু ঘষা মাজা করে সচলায়তনে দিলাম। ভাল লেগেছে জেনে আমারো ভাল লাগল।
==========================
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
এ ধরনের আরও লেখা থাকলে একটু ঘষা - মাজা করে এখানে পোষ্ট করে দিন, প্লিজ।
কি মাঝি? ডরাইলা?
একটানে পড়লাম, পড়ে মনে হলো... হায় হায়, শেষ!
অসাধারণ।
আচ্ছা আপনি কি দেশের একটা বিজ্ঞান পত্রিকায় লিখতেন। পত্রিকাটা সম্ভবত ষান্মাসিক কিংবা বাৎসরিক ছিল (বানান কি ভুল হলো?)।
ব্লগস্পট | অর্কুট | ফেসবুক | ইমেইল
পড়লাম। বেশ লাগল।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
লেখাটি সুলিখিত নিঃসন্দেহে। তবে এসব গল্পের অধিকাংশ অনেকেরই জানা। খুশি হতাম তিনি তাঁর মেধা ও পরিশ্রম আরো অপরিচিত বিষয়ে লাগালে।
নিউটনের আপেলের গল্পটি যেমন অসত্য, আইন্স্টাইনকে নিয়ে তৈরী অধিকাংশ কাহিনীও তেমনই কাল্পনিক, একটি বিশেষ গোষ্ঠি তাঁকের সুপারম্যান বানাবার জন্য যা রচনা করেছিল, এবং তিনি নিজেও যা উপভোগ করতেন বলেই অস্বীকার করেন নি।
আইনস্টাইন আপেক্ষিকতা নামে যে তত্ত্ব দিয়েছেন বলে দাবী করা হয়, তা ত্রিমাত্রিক জগতে বহু আগে গ্যালিলিওর কীর্তি। আসলে মাইকেলসন-মর্লির পরীক্ষার ওপরে ভিত্তি করে লোরেনৎস দ্রুতগতি বস্তুর সংকোচনের ফর্মুলা আইনস্টাইনের বহু আগে প্রকাশ করেছেন। মিঙ্কৌস্কি প্রথম চতুর্মাত্রিক জগতের জ্যামিতিতে দূরত্বের নতুন ধারনা দিয়ে বিষয়টিকে বোধগম্য করে তোলেন। আর আমরা যাকে আজ আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব বলি, আসলে তা পোয়ানকারের দেয়া ইনভ্যারিয়েন্স ল, যার ভিত্তি ও প্রয়োগের পরিধি আইনস্টাইনের স্বল্প কয়েকটি সূত্রের চাইতে অনেক বড়। পোয়ানকারের কোন পেপারেই আইনস্টাইনের নামেরও উল্লেখ নেই, প্রয়োজন হয় নি বলে।
১৯০৫ সালে আইনস্টাইনের অন্য যে দুটি প্রকাশনাকে সেই গোষ্ঠি যুগান্তকারী বলে চালাতে চান, তাঁরা সুকৌশলে এড়িয়ে যান সেই রুশ বিজ্ঞানীর কথা যিনি আইনস্টাইনের আগেই ব্রাউনিয়ান গতির ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, এবং যে ফোটো-ইলেক্ট্রিক এফেকটের জন্য আইনস্টাইনকে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয় , সেটাও এইচ, এস,সির যে কোন মেধাবী ছাত্র প্ল্যাঙ্কের সূত্র এবং শক্তি ও ভরগতির নিত্যতা সূত্র থেকে নিজেই বার করে নিতে পারে, আইনস্টাইনের তত্ত্ব না জেনেই। তিন চার লাইনের ব্যাপার।
আইনস্টাইন চিরকুখ্যাত হয়ে থাকবেন সেই বিজ্ঞানী হিসাবে যিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্টকে আণবিক বোমা বানাতে চিঠি লিখে অনুরোধ করেছিলেন, এমন কি সেই চিঠিতে খুব নির্লিপ্তভাবে সাধারণ নির্দোষ মানুষের ওপরে এ বোমার আঘাতের মারাত্মক প্রতিক্রিয়ার ভবিষ্যৎবাণীও করেছিলেন।
আমাদের সত্যেন্দ্রনাথ তাঁর কোয়ান্টাম সংখ্যায়ন সম্পর্কিত প্রবন্ধটি আইনস্টাইনের সাহায্যে প্রকাশ করতে পেরেছিলেন, এটি সত্যি কথা, কিন্তু এও সত্য যে তাঁর মানস-গুরুটি সেই আইডিয়া ব্যবহার করে সাত তাড়াতাড়ি আরেকটি প্রবন্ধ লিখে ফেলেন , যার কপিও তিনি বসুর কাছে পাঠান নি। ইতিহাস অবশ্য বিজ্ঞানের এই অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের সাথে এখন বসুর নামই যুক্ত করে, 'বসু' শব্দটি ছোট হওয়াতে আরেকটি অসত্য থেকে আমরা রক্ষা পেয়েছি।
সত্যেন্দ্রনাথ আইনস্টাইনের কাছে গিয়ে কিছুদিন ছিলেন। তাঁর অনেক পরিশ্রমে করা ক্যালকুলেশন আইনস্টাইন 'কিস সু হয় নি ' বলে তাঁর সামনেই ফেলে দিয়েছেন।
মহিলাদের সাথে আইন্স্টাইনের সম্পর্কের ব্যাপারে কিছু নাই বা বললাম। ইন্টারনেটে খুঁজলেই পেয়ে যাবেন।
এই দিকটায় আলোকপাত করায় ধন্যবাদ আপনাকে।
এধরনের কথা বললে তথ্য প্রমান দিলে বিশ্বাসযোগ্য হয় বেশী। মানে কিছু রেফারেন্স আরকি। নইলে কথাটা শোনায় "কোরানে সবকিছু আগেই বলা ছিল, বিজ্ঞানের কোনো কৃতিত্ব নাই" টাইপের। তাছাড়া তার কোন কৃতিত্ব না থাকলে তাকে নিয়ে লোকজন লাফিয়েছে কেন সেটারও একটা ব্যাখা দরকার।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
কোন রুশ বিজ্ঞানী ? আমি তো জানতাম এইটা লুই ব্যাশেলিয়ার কাজ । আইনস্টাইনের ৫ বছর আগে উনি এই কাজ তার পিএইচডি থিসিসে করে দেখিয়েছিলেন । যদিও তখন লুইয়ের ঐ থিসিস পাত্তা পায় নাই । পরে ইকোনোমিস্ট স্যামুয়েলসন ওটা ৫০এর দশকে এক লাইব্রেরীর চিপা থেকে খুজে বের করে জনসমক্ষে আনেন ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
সুন্দর একটি লেখা। নিয়মিত পেলে ভালো লাগবে।
বাহ! খুবই ভালো!!
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
খুব ভাল লাগল। আপনার পরিচিত কেউ কি আছে ঢাকায় যার কাছ থেকে আপেক্ষিক তত্ত্বের সবক নিতে পারি? আমার খুব আগ্রহ ব্যাপারটা নিয়ে, পড়ে ঠিক ভাল বোঝা যায় না।
==============================
আমিও যদি মরে যেতে পারতাম
তাহলে আমাকে প্রতি মুহূর্তে মরে যেতে হত না।
অতিথি বজলুর রহমান তারঁ মন্তব্যে যে বিষয়গুলো আলোকপাত করেছেন,অভিজিৎ নিশ্চয়ই সেগুলো নিয়ে ও আলোচনা করবেন । তর্কে-বিতর্কে জমজমাট হোক ।
আমরা পাঠকরা চোখ রাখি
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
এ ধরনের আরও লেখা দ্যান ভাই, প্লিজ।
~
এ্যাটম বোমা বানানো কারিগরেরা নিপাত যাক ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
ব্যাপারটা কিন্তু এট সোজা ন্য় হাসিব। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আইনস্টাইনের অনেক অবদান আছে। আপনি কি জানেন যে আইনস্টাইন ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট পদ প্রত্যাহার করেছিলেন। আপনি কি জানেন যে, পারমাণবিক বোমা প্রকল্পের কোন কাজেই আইনস্টাইন কখনও অংশ নেন নি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়েই জার্মানি বোমা বানানোর প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছিলো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন জার্মানি পারমাণবিক বোমা তৈরির প্রযুক্তি ও সরঞ্জাম সংগ্রহ করে ফেলেছে খবর পেয়ে আইনস্টাইন বন্ধু লিও শিলার্ডের পরামর্শে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট রুজভেলটকে চিঠি লিখেছিলেন
পারমাণবিক বোমা তৈরির প্রকল্প হাতে নেয়ার জন্য। কিন্তু শুধুমাত্র সে চিঠির ভিত্তিতেই পারমাণবিক বোমা প্রকল্প (ম্যানহাটান প্রজেক্ট) শুরু হয়নি। আইনস্টাইনকে তখনো জার্মানির চর মনে করা হতো। এফবিআই অনবরত নজরদারি করছিলো আইনস্টাইনের ওপর। বোমা প্রকল্পের ধারে কাছেও আসতে দেয়া হয়নি আইনস্টাইনকে। আর পারমাণবিক বোমায় ব্যবহৃত ফর্মুলাও আইনস্টাইনের তৈরি নয়।
আইনস্টাইন ভরকে শক্তিতে রূপান্তরের সূত্র (e= mc2) আবিষ্কার করেছেন। ঐ সূত্রের প্রয়োগ প্রকৃতিতেই আছে সৃষ্টির শুরু থেকে। তার ধ্বংসাত্মক ব্যবহারের জন্য আইনস্টাইনকে কি দায়ী করা যায়?যে লেজার রশ্মি আজ পৃথিবীকেই বদলে দিয়েছে - চিকিৎসা থেকে শুরু করে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই আজ ব্যবহৃত হচ্ছে লেজার - সে লেজার তৈরি হয়েছে আইনস্টাইনের ধারণা থেকে।
তারপরও ভরকে শক্তিতে রূপান্তরের সূত্র এমোনভাবে পারমানবিক অস্ত্র বানাতে ব্যবোহৃত হোক তা আইনস্টাইন চাননি। তিনি যুদ্ধের ভয়াবোহতা দেখে এও বলেছহিলেন, "আমি যদি জানতাম তারা আমার আবিস্কৃত সূত্রকে মানুষ মারার কাজে ব্যবহার করবে, তবে আমি বিজ্ঞানী না হয়ে শু-মেকার হতাম'। যুদ্ধের পরে বার্ট্রান্ড রাসেলকে নিয়ে নিউক্লিয়ার ওয়েপোনের বিরুদ্ধে আন্দোলনও গড়ে তুলেন। Russell-Einstein Manifesto দেখুন।
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
ভাই অভিজিত,
একটা সহজ কথা বলি । আইনস্টাইনের মতো বিজ্ঞানী পৃথিবী আবার দেখবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ আছে আমার । তবে মানবিক অনুভুতিতে তার কিছু ঘাটতি ছিলো বলেই আমার মনে হয় । জার্মানি বোমা বানাচ্ছে অতএব আমাদেরও বানাতে হবে এটা খুব খোড়া অজুহাত । অপরের দুস্কর্ম কখনো নিজের দুস্কর্মের অজুহাত হতে পারে না ।
আর আপনি আপনার মন্তব্যে আইনস্টাইনের একটা উদ্ধৃতি দিয়েছেন । কোট করি আবার -
আইনস্টাইনের এই মন্তব্যটা পুরো একটা মিথ্যা কথা । নিজের অপকর্ম চাপা দিতে উনি এই সাফাই গাইবার চেষ্টা চালিয়েছিলেন ।
উনি খুব ভালো করে জানতেন এটা দিয়ে বোমা বানানো সম্ভব ও সেটা তিনি প্রেসিডেন্টকে লেখা চিঠিতে সেটা উল্লেখও করেছেন । আগ্রহীরা চিঠিগুলো পড়ে দেখতে পারেন ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
ভাই হাসিব,
আইনস্টাইনের ব্যাক্তিপূজা করার জন্য আমার লেখাটি ছিল না। আমার লেখার উদ্দেশ্য ছিল পদার্থবিজ্ঞানে আইনস্টাইনের বিভিন্ন অবদান একটু সহজ ভাষায় পাঠ্কদের জানানো। কিন্ত এখন তর্ক বিতর্ক তার অবদান বাদ দিয়ে খুব সংবেদনশীল জায়গায় পৌছে গেছে। আমার মতে আইনস্টাইন মহাপুরুষ ছিলেন না, কিন্তু তা বলে একেবারে ' নিপাত যাক' অভিধায় আভিষিক্ত হওয়ার মত তিনি ছিলেন না। প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টকে লেখা চিঠি গুলো মিথ্যা নয়। কিন্তু আমি ত আগেই বলেছি, কিন্তু শুধুমাত্র সে চিঠির ভিত্তিতেই পারমাণবিক বোমা প্রকল্প (ম্যানহাটান প্রজেক্ট) শুরু হয়নি। এ শুধু আমার কথা নয়। বায়োগ্রাফার রোনাল্ড ক্লার্ক সহ অনেকেই মনে করেন, আইনস্টাইনের ওই চিঠি ছাড়াই বোমা বানানো যেত (atomic bomb would have been invented without Einstein's letters, (Clark, pg. 682-683). ) আর এটাও ত ঠিক, পারমাণবিক বোমা প্রকল্পের কোন কাজেই আইনস্টাইন কখনও অংশ নেন নি।
কিন্তু তার পরও আইনস্টাইন যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখে পরে সে ছিঠির জন্য অনুতাপ করেন এই বলে - "I made one great mistake in my life... when I signed the letter to President Roosevelt recommending that atom bombs be made; but there was some justification - the danger that the Germans would make them."
অনুতপ্ত না হলে পরে বার্ট্রান্ড রাসেলকে নিয়ে নিউক্লিয়ার ওয়েপোনের বিরুদ্ধে পরে আন্দোলনও গড়ে তুলতেন না। Russell-Einstein Manifesto পড়ে দেখুন :
http://www.pugwash.org/about/manifesto.htm
জাপানের উপর বোমা ফেলাকেও আইনস্টাইন কখনও সমর্থন করেন নি : "I have always condemned the use of the atomic bomb against Japan." (Otto Nathan & Heinz Norden, editors, "Einstein on Peace", pg. 589).
আমার মনে হয়, মহাপুরুষ না, ভাবি কিন্তু ' নিপাত যাক' থেকে আমরা তাকে অব্যহতি দিতে পারি।
========================
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
সচলায়তনে আমরা চিন্তায় থাকি কখন রামছাগলেরা এঁড়ে তক্কে গুঁতোগুঁতি শুরু করবে। এই বিতর্কটা একাধারে উপভোগ্য ও নির্মল। হাসিব ভাই ও অভিজিৎ দাকে
-------------------------------------
রামছাগলের সামনে, খচ্চরের পেছনে আর নির্বোধের ধারেকাছে না থাকাই শ্রেয়!
আমাদের বোধ হয় ব্যক্তি আইনষ্টাইন এবং বিজ্ঞানী আইনষ্টাইন মধ্যে পার্থক্য করতে পারা দরকার। আমরা প্রায়শঃই এই পার্থক্যের দেওয়ালটা কোথায় উঠাতে হবে তা বুঝতে পারি না। হ্যা, মানুষ এমন একটা জীব (অন্য সব জীবের মতই... যদিও সেটা নির্ভর করবে আপনি মানুষকে তথাকথিত 'শ্রেষ্ঠ জীব' মনে করেন নাকি অন্যান্য সব জীবকুলের অংশ মনে করেন, সবকিছুই নির্ভর করবে এখানে যে কথা বলছে তার দৃষ্টিভঙ্গীর উপর !!!) যার মধ্যে মানবীয় ভালো এবং খারাপ দিক থাকতে বাধ্য। এই ধরাধামে কোথায় পাবেন এমন মানুষ যার সবকিছু এক্কেবারে ১০০% পার্ফেক্ট? এখন আইনষ্টাইনের এই খারাপ দিকগুলোকে মেনে নিয়ে তার বৈজ্ঞানীক অবদানগুলোকে স্বীকার করে নেব নাকি তার ব্যক্তিগত দিকগুলো নিয়ে পড়ে থাকবো তা নির্ভর করে লেখক ও পাঠকের রুচী এবং দৃষ্টিভঙ্গীর উপড়। মনে আছে, একবার কমিউনিজম এবং কার্ল মার্ক্সকে নিয়ে বিতর্ক হচ্ছিল, তার মধ্যে একজন মার্ক্স কত ইতর জাতীয় প্রানী ছিলেন তা প্রমান করার জন্য বলে বসলেন যে, মার্ক্সের অবৈধ সন্তান ছিল এবং তিনি তাকে সঠিক মর্যাদা দেননি, সুতরাং তার কোন অবদানকেই স্বীকৃতি দেওয়া যায় না! অনেক জ্ঞানীগুনী ব্যাক্তির প্রসঙ্গেই এধরণের ব্যক্তিগত ত্রুটির কথা উল্লেখ করা যায়। লিবনিজের এবং নিউটনের ব্যক্তিগত সম্পর্কেও এধরণের নোংড়া টানাপোড়েন ছিল। তার জন্য সভ্যতার ইতিহাসে তাদের অবদানকে স্বীকার করবো নাকি তাদের দোষগুলোকেই শুধু তুলে ধরবো তা নিয়ে তো তর্কের অবকাশ থেকেই যায়। যে কোন বড় কাজের মূল্যায়ণেই বেশী 'ব্যক্তি' চলে আসলে তার গ্রহণযোগ্যতার পারদ ক্রমশঃ নীচের দিকে নামতে শুরু করে... এটা অবশ্যই আমার এক্কেবারে ব্যাক্তিগত মতামত।
একমত!
ব্লগস্পট | অর্কুট | ফেসবুক | ইমেইল
এই দাগ টানার বিষয়টা কিন্তু একটু বিতর্ক সাপেক্ষ । আইনস্টাইনের মতোই আরেক জার্মান গুন্টার গ্রাস নাজি সেনাবাহিনীর এসএস গ্রুপে কাজ করতেন । এই তথ্যটা যখন জানা যায় তখন আসলে তার ওপর পুরো বিশ্বাসটার ওপরই চাপ পড়ে । তখন আর নৈর্ব্যক্তিকভাবে তার কাজগুলো আলাদা আলাদা ভাবে মূল্যায়ন কঠিন হয়ে পড়ে ।
আমাদের দেশে অনেক রাজাকার হয়তো আছেন যারা স্বাধীনতার পর মোটামুটি সত জীবনযাপন করেছেন । এখন তাদের সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গেলে তাদের জীবনের সত অংশটুকুই ফোকাস করা হলে সেটা কি ঠিক হবে ? অথবা গুন্টার গ্রাসের মতো আমরা যদি বলি সেটা ছিলো তার যুবক বয়সের অস্থিরমতি কাজ, তাহলেও কি তার অপরাধ একবিন্দু কমবে ?
আপনি আপনার পোস্টে কার্ল মার্ক্স, নিউটন, লাইবনিতসের কথা তুলেছেন । এবং তাদের বিরুদ্ধে করা কিছু অভিযোগের কথা উল্লেক করেছেন যা নিতান্তই মামুলী অভিযোগ । এটার সাথে তৃতীয় ব্যক্তির ক্ষয়ক্ষতির কোন সম্ভাবনা নেই । অতএব এগুলোকে ইগনোর করাটা খুব সহজ । কিন্তু অভিযোগটা যদি এরকম হয় সেইসব ব্যক্তির কোন কাজে লক্ষ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তাহলে সেটা ঐ ব্যক্তিগত চারিত্রিক ত্রুটি থেকে একটা ভিন্ন অর্থ নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হয় ।
ধন্যবাদ ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
হাসিব
সঠিক শব্দটা আসলে নিউক্লিয়ার বোমা হবে তাই না? জানি ইচ্ছে করে লিখেননি - এটাও আসলে সেই ইথারের মতই ব্যাপার। ব্যবহার হতে হতে ভুলটাই গা সয়ে গেছে।
কি মাঝি? ডরাইলা?
বস, আমি ফিজিক্স পড়ি নাই । ম্যাথ ফ্যাকাল্টিতে পড়তে হয় বলে ব্রাউনিয়ান মোশন নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতারে পুজি কৈরা উপরে একটা মন্তব্য করছিলাম । আইনস্টাইন নিয়া কৈতে গেলে ঐটাই আমার দৌড় - এ্যাকাডেমিকালি ।
আর আমি বুঝতে পারছি আপনি কি বলছেন । এ বিষয়ে আগে একটা তর্ক আবছা মনে পড়তেছে । তো, এই বিষয়ে না জানার কারনে আমার নিজের কিছু কনফিউশন আছে । এইসব পপুলার মিসকনসেপশন নিয়া একটা পোস্ট দেন । আমরা যারা ঐসব পড়িনাই তারা ঐ পোস্ট থিকা নিজেদের শুধরায় নিতে পারবো ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
অসাধারণ লেখা। আরো চাই।
ধন্যবাদ সবাইকে যারা যারা মন্তব্য করেছেন।
অতিথি বজলুর রহমানের মন্তব্য নিয়ে ভালমত আলোচনা করা দরকার। জনগুরুত্বপূর্ণ পোস্ট। এ নিয়ে আমার চিন্তা ভাবনাগুলো রাতে পোস্ট করব। অফিস থেকে এত কথা লেখা যাচ্ছে না। এগুলো করলে আর চাকরী থাকবে না।
ততকখন ধৈর্য ধরুন।
==============================
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
ভাল লেখা। এক টানে পড়লাম। চলুক। বিতর্কও দেখার অপেক্ষায় থাকলাম।
খুবই চমৎকার লেখা, এত বড় কিন্তু একটানে পড়ার মত। বজলুর রহমানের তথ্যগুলোও ইন্টারেস্টিং। আরো কথা এগুবে, আরো তথ্য জানা যাবে। সেই ফাঁকে, বসের জন্য একটা স্যালুট জানাই।
--তিথি
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
কাহিনী জমজমাট ।
অভিজিৎ,হাসিব,বজলুর রহমান- তিনজনের জন্যই তিন উল্লাস ।
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
ফিজিক্স কেন পড়লামনা! কষ্টটা আবার চাগাড় দিয়ে উঠল।
যাই হোক, অভিজিতদা, আইনষ্টাইনের তত্ব নিয়ে খুবই গুছিয়ে লিখেছেন, কিন্তু এনিয়ে যতবারই পড়েছি প্রশ্ন কিছু থেকে গেছে
১।। আপনার লেখার চ্যাপ্টার ৪ এ, যেখানে আইনস্টাইনের আয়নাহাতে আলোরবেগে চলা উড়োজাহাজের কথা আছে -- আইনস্টাইন কি এই প্রিজাম্পশন নিয়েছিলেন যে উড়োজাহাজের ভেতর কোন আলোর উৎস নেই? অথবা, আমি যদি আয়নাসামনে ধরে আলোর বেগে ছুটে যাই, তাহলে কি ধরে নিতে হবে আমার আর আয়নার মাঝে কোন আলো নেই? সেক্ষেত্রে তো আমি আয়না হাতে থেমে থাকলেও ছায়া পড়বেনা!
বুঝতেছিনা, আমিই চিন্তা করতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেললাম, নাকি কোনকিছু বাদ পড়েছে।
২।। আমি আলোর বেগে ছুটে যাচ্ছি আর আলো আমার দিকে আলোরবেগে ছুটে আসছে -- এটা থেকে সময় কিভাবে স্লো হয়ে যায় এখনও বুঝতে পারছিনা।
(আগেই বলে নিই, আমি ফিজিক্সের লোক না, বুঝি খুবই কম, সুত্রপড়ে কলেজ-ইউনিতে শুধু কোর্সগুলো সম্পন্ন করেছি)
৩।। সার্বিক আপেক্ষিক তত্ব থেকে আপাতঃশক্তি, হেভিম্যাসের কারণে বক্রতা কিভাবে ডিরাইভড হলো তাও এরকম সুন্দর উদাহরন দিয়ে লিখুন ,,, বোঝার অপেক্ষায় আছি
কোয়ান্টাম বলবিদ্যা নিয়ে আইনস্টাইনের মানসপরীক্ষাগুলো নিয়েও লিখুন আরো
অনেক ধন্যবাদ
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
আজকে ঘুমানোর আগে আপনার প্রথম প্রশ্নটার উত্ত্র দিয়ে যাই। কাল চেষ্টা করব দ্বিতীয়টির জবাব দিতে।
প্রথমে আমাদের জানা দরকার আমরা আয়নায় কখন নিজেদের প্রতিবিম্ব দেখতে পাব? কিংবা কিভাবে দেখতে পাই? ধরুন আপনার ঘরটি ঘুটঘুটে অন্ধকার। আপনার হাতে একটি টর্চ আছে। আলোর অন্য উৎসের কথা আপাতত ভুলে যান। এখন ঘুটঘুটে ঘরে আয়নায় আপনার প্রতিবিম্ব দেখতে হলে কি করতে হবে? টর্চ থেকে আলো কোন না কোনভাবে আয়নায় পড়তে হবে, তারপর তা ঠিকরে এসে (পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় প্রতিফলিত) আপনার চোখে পড়লেই আপনি আপনার প্রতিবিম্ব আয়নায় দেখতে পাবেন, তাই না? এখন মনে করুন এই ঘুটঘুটে ঘরটি একটি উড়োজাহাজ যা আলোর বেগে চলছে (মানে আপনি আলোর বেগে দৌড়াচ্ছেন) । তাহলে আপনার আর আলোর সম্পর্ক টা দাঁড়াবে অনেকটা নীচের ছির মত।
ফলে আপনার টর্চ থেকে ফেলা আলো কখনোই আয়নায় পড়বে না। ফলে আপনিও আয়নায় প্রতিবিম্ব দেখবেন না। আমাদের সাধারন জ্ঞানে তাই মনে হয়। এখন চিন্তা করেন, এইরকম প্রতিবিম্ব না দেখা গেলেই কিন্তু পাব্লিক বুঝে ফেলবে যে সে নিজে (বা স্টিমারে) আলোর বেগে চলছে। আর এখানেই গ্যালিলিওর 'প্রিন্সিপাল অব রিলেটিভিটি' ভেঙ্গে পড়বে। আইনস্টাইন 'প্রিন্সিপাল অব রিলেটিভিটি' অক্ষুন্ন রেখে বরং আলোর গতির স্বভাব ধর্মটাই পালটে দিলেন। বললেন, 'আলোর বেগ তার উৎস বা পর্যবেক্ষকের গতির উপর কখনই নির্ভর করে না; এটি সব সময়ই ধ্রুবক।' এতেই ঘটল যত বিপত্তি। উঠে আসল থিওরী অব রিলেটিভিটি। এই তত্ত্ব পরবর্তীতে নিঁখুত পরীক্ষা নিরিক্ষায় উত্তীর্ণ হয়।
আপনার বাকী প্রশ্নটার জবাব কাল।
===============================
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
বস্, ধন্যবাদ
কিন্তু আমার মাথাতো আসলেই ভালনা ,,,এখনও ঝামেলা কাটেনাই
কথাহলো, উড়োজাহাজ আলোর বেগেই চলুক আর থেমেই থাকুক, তার ভেতরে আমি স্থির আর টর্চ থেকে আলো বের হচ্ছে আলোর বেগে ,,, উড়োজাহাজের বেগ তো এখানে কোন ঝামেলা হবার কথা না ,,,
ব্যাপারটা কি এমন যে উড়োজাহাজের ছাদ খোলা থাকবে আর দূরের কোন একটা স্থির বা অনেক কমগতিসম্পন্ন উৎস থেকে আলো আসছে?
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
এবার আপনার দ্বিতীয় সমস্যায় আসি -
আমি ব্যাপারটাকে যথসাধ্য বোঝানোর চেষ্টা করছি সহজ ভাষায়। কিন্তু তারপরো একটা সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ জুড়ে দেই - এ ব্যাপারটা আমাদের প্রচলিত সজ্ঞা-বিরোধী (কাউন্টার ইন্টিউটিভ)। কাজেই বুঝতে একটু ঝামেলা লাগতে পারে। প্রথমে দেখি গানিতিকভাবে। টাইম ডায়েলেশনের সূত্রটা সোজা। আমি এখানে সুত্রটির প্রমাণ দিব না শুধু ব্যাবহারবিধি দেখাবো, গাণিতিক প্রমাণ ইন্টারনেটে একটু খুজলেই পেয়ে যাবেন।
মনে করুন রহিম এবং করিম দুই বন্ধু। মনে করুন রহিম পৃথিবীতে রয়েছে, আর তার বন্ধু করিম প্রায় আলোর বেগের কাছাকাছি কোন এক বেগে মহাকাশভ্রমণ করছে। আশ্চর্যজনক হলেও সত্যই যে, রহিমের তুলনায় করিমের ঘড়ি কিন্তু আস্তে চলবে। মানে রহিমের বয়স যে হারে বাড়বে করিমের বয়স কিন্তু সে হারে বাড়বে না। কিন্তু কেন? আসুন টাইম ডায়ালেশনের সুত্রটি দেখি –
যেখানে,
T = রহিমের সময় (Time measured in fixed frame of reference)
T0= করিমের সময় (Time measured in moving frame of reference)
v = করিমের মহাশূন্যযানের গতি
c = আলোর বেগ।
এখন যদি, করিমের মহাকাশযানের বেগ (v) আলোর বেগের (c) খুব কাছাকাছি হয়,
যেমন ধরুন, v = 0.9c হয়, তবে, উপরের সমীকরণ থেকে পাওয়া যাবে -
T =2.294 T0
অর্থাৎ, করিমের বয়স ২০ বছর পার হলে, রহিমের পার হবে প্রায় ৪৬ বছর।
আসলে জীবনের বিভিন্ন ঘটনাবলী, যেমন হৃৎস্পন্দন, শ্বাসপ্রশ্বাস –এগুলোও কিন্তু এক ধরনের জৈব ঘড়ি। পদার্থবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোন থেকে জৈব-অজৈব প্রক্রিয়াগুলো একই রকমের। মানুষ নির্মিত ঘড়ি যদি বেগের কারণে ধীরলয়ে চলে, তবে, শরীর অভ্যন্তরের রাসায়নিক প্রক্রিয়াগুলোও (হৃৎস্পন্দন, শ্বাসপ্রশ্বাস) গতি দ্বারা প্রভাবিত হবে।
আমরা প্রাত্যহিক জীবনে এই পরিস্থিতির সম্মুখিন হই না, কারন, আমাদের যানবাহনগুলোর বেগ আলোর বেগের তুলনায় খুবই কম। উপরের সমীকরনে এর মান যদি শুন্যের কাছাকাছি হয়, তবে,
T = T0
অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে, রহিম করিমের ঘড়িতে কোন পার্থক্য থাকবে না। সে জন্যই আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে সময় কিভাবে স্লো হয়ে যাওয়া নিয়ে ডিল করতে হয় না। রহিমের জন্য সময়ের যে মাপ থাকে, করিমের জন্যও কিন্তু তাই-ই থাকে।
কিন্তু বেশি বেগের ক্ষেত্রে টাইম-ডায়ালেশঅন অবশ্যই একটি ফ্যাক্টর। এর প্রমাণ পাওয়া গেছে মিঊয়ন কণার চলাচলে। এটি টাইম ডায়ালেশনের একটি প্র্যাক্টিকাল প্রমাণ। এই মিউয়ন কনা পৃথিবীর ছয় কিলোমিটার বা আরো বশি উপরে বায়ুমন্ডলের পরমানূ নিউক্লিগুলোর সাথে মহাজাগতিক রশ্মির সংঘর্ষের ফলে সৃষ্ট হয়। মহাজাগতিক রশ্মির আগমনে যে মিউয়ন কণা সৃষ্টি হয় তাদের গতিবেগ আলোর গতিবেগের প্রায় সমান (0.998c)। দেখা গেছে এরা এক সেকেন্ডের দশ লাখ ভাগের একভাগ সময়ের (২ মাইক্রোসেকেন্ড) মধ্যেই পৃথিবীতে পৌঁছিয়ে ইলেক্ট্রন এবং পজিট্রনে পরিণত হয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এক সেকেন্ডের দশ লাখ ভাগের একভাগ সময়ের মধ্যে তারা ছয় কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে কিভাবে? কারণ হিসেব করে দেখা গেছে মিউয়ন কণা যদি আলোর গতিবেগেও ছোটে তয়াহলে ওই সময়ে তার ছশ মিটার যাওয়ার কথা। তা হলে ছয় হাজার মিটার বা ৬ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে কিভাবে মিউয়নগুলো ভুপৃষ্ঠে পৌঁছয়? আসলে টাইম ডায়ালেশনের ফলেই এটা সম্ভব হয়। ভুপৃষ্ঠে আমাদের যে সময়ের মাপ, আলোর কাছাকাছি বেগে চলতে পারার কারণে মিউউওনের সময়ের মাপ তার থেকে আলাদা। মিউয়নগুলো আমাদের টাইমস্কেলে চলাচল করে না বলেই, আমাদের মাপা সময়ের আগেই পৃথিবীতে এসে পৌছুতে পারে।
ব্যাপারটা অদ্ভুত, না?
আমি কাল আপনার প্রথম সমস্যাটা নিয়ে আরো কিছু লিখবার চেষ্টা করব, আর সেই সাথে চেষ্টা করব বজলুর রহমানের পয়েন্টগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবার। ইটস এ লং ওভারডিউ।
=============================
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
অভিজিতদা,
আপনি এগুলো একটা আলাদা ব্লগে লিখলে পরে খুঁজে পাওয়া সহজ হত। কমেন্টের মধ্যে থেকে গেলে পরে বুকমার্ক থেকে পাওয়া ঝামেলা। আপনি একটা আলাদা পোস্ট দিন না এই লেখাগুলো নিয়ে ... আপেক্ষিকতা বাদ নিয়ে।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
আপনে তো বইলা খালাস। ঐদিকে মডারেটর কইছে, পোস্ট রিলেটেড কিছু হইলে কমেন্টএর ঘরে লিখতে, আলাদা পোস্ট দেওয়া বারণ। জায়গার নাকি অভাব। কয়েক্দইন আগে 'মুন হোক্স' কন্সপিরাসি থিওরির বিপরীতে আলাদা একখান পোস্ট দিছিলাম, তখন কইছে, আলাদা পোস্ট দিয়া আমি সংবিধান লংঘন করছি। তাই ভাবতাছি রিলেটিভিটি লইয়া যা কওনের এখানেই কই
=============================
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
ব্যাপারটা বোঝা গেল না, লেখা কমেন্টেই থাক আর পোস্টেই, জায়গা তো একি নেবার কথা !!! আপনি লেখার বিরুদ্ধে লিখলে সেটা আলাদা ব্যাপার কিন্তু এখানে আপেক্ষিকতাবাদ নিয়ে লিখছেন - আলাদা প্রসঙ্গ, আলাদা পোস্ট হওয়া উচিত।
আর জায়গার অভাব হলে ৩-৪ মাসের পুরোনো লেখা আর্কাইভ করে রেখে দিলেই হয়। অত পুরোনো লেখা সাধারণত কেউ পড়ে না।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
ধন্যবাদ অভিজিতদা,
কিন্তু আমি এখনও ব্যাপারটা ধরতে পারছিনা। মিউয়ন কণা যে বললেন ২ মাইক্রোসেকেন্ডে ১০ কিলোমিটার আসে, সেটা কি পৃতিবীতে বসে পর্যবেক্ষণ করে দেখা হয়েছে যে ২ মাইক্রোসেকেন্ডে একটা কণা ৬ কিলোমিটার উপর থেকে পৃথিবীতে এসেছে?
তাহলে ফোটনের বেলায়ও কি তাই হয়? মানে সুর্য্য থেকে একটা ফোটন এমিটেড হবার ৫০০ সেকেন্ড পর তা পৃথিবীতে আসে, সেটা কি ভুল? নাহলে, কেন মিউয়ন আর ফোটনের বেলা ব্যাপারগুলো ভিন্ন সেটা জানতে চাচ্ছি।
আর টাইমডাইলেশন থিওরীর ফিজিকাল কোন ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছি আসলে ,,,সূত্রটাইতো মানতে ইচ্ছা করেনা ,,,হে হে হে ,,,
আচ্ছা, একটা প্রশ্ন, 'টাইমে'র সংজ্ঞা কি?
আরেকটা প্রশ্ন, (হাস্যকর মনে হতে পারে) ,,, এই যে বলা হয় ঘড়ি আস্তে চলবে --এটার মানে কি হাতে পরা ঘড়িই আস্তে ঘুরবে নাকি আমার পারসেপশনে সময় বলতে যা বুঝি সেটা আস্তে হয়ে যাবে?
বস্, প্রথম প্রশ্নটার জবাবের পরও কিছু প্রশ্ন রয়ে গেছে, একটু উপরে তাকালে পাবেন ,,,,
হে হে হে ,,,,আপনাকে অনেক জালাচ্ছি ,,, কি করব?জ্বিনভুতদেরও কিছুকিছু জিনিস জানতে ইচ্ছা করে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
জ্বিনের বাদশাহ (এ কিরকম নামরে বাবা)
একটু সময় লাগবে। তবে শিগগীরি ব্যাখ্যা করে জবাব দিতে চেষ্টা করব।
==========
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
প্রথমে হাসিবকে ধন্যবাদ । আমার ফরাসী জ্ঞান এত খারাপ, যে নামও মনে রাখতে পারি না, এবং সেই চেষ্টাতে আনমনা হয়েই ফরাসী লুই ব্যাশেলিয়ারের জায়গাতে রুশ বিজ্ঞানী লিখে ফেলেছিলাম।আসলে ব্রাউনীয় গতির তত্ত্বে আরো আগে নাম করতে হয় মাক্সওয়েল ও বোলৎসমানের, যাঁরা ঊনবিংশ শতকের শেষেই এই গতির মূল ধারনার ভিত্তি তৈরী করে গেছেন। তত্ত্বের গাণিতিক প্রকাশ সম্পূর্ণতা পায় পোলিশ বিজ্ঞানী স্মোলোচউস্কির কাজে, যা আইন্সটাইনের রচনার এক বছর পরে প্রকাশিত হয়েছিল (১)। সুতরাং আইস্টাইনের এখানে ভূমিকা অনেকটা মধ্যবর্তী অনুঘটকের।
যে ফটো-ইলেকট্রিক এফেক্টের জন্য নোবেল পুরস্কার, আইনস্টাইন নিজেই অনেক চিঠিতে স্বীকার করেছেন যে তার সহ -আবিষ্কারক ছিলেন তাঁর প্রথম স্ত্রী (২), যিনি আসলে এই বিষয়ে তাঁর চাইতে বেশি ওয়াকেবহাল ছিলেন। তালাকের পরে নোবেলের পুরো টাকাটাই দিতে হয়েছে সেই মহিলাকে। এর পরে বিয়ে করেন কাজিনকে, ইহুদীদের মধ্যে যা নিষিদ্ধ নয়।
আপেক্ষিকতার সাধারণ সূত্রের মূল আবিষ্কারক হিসাবেও অধিকাংশ বিজ্ঞানী এখন সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গণিতবিদ হিলবার্ট এবং আইনস্টাইনের লাজুক প্রতিভাবান গণিতবিদ বন্ধু গ্রসমানকেই চিহ্নিত করেন (৩)।
আইনস্টাইনই ইস্রাইল রাষ্ট্রের প্রকৃত পিতা, তাঁর অনুরোধেই তখনকার সুপার-পাওয়াররা জাতি-সংঘে আরবদেরকে (যাদের একটা বিরাট অংশ সম্ভবত ইহুদী থেকেই খৃস্টান বা মুসলমান হয়েছিল) উৎখাত করে এই দখলিভুমির সৃষ্টি করে, সেই ভয়াবহ বোমা বানিয়ে দেওয়ার পুরস্কার হিসাবে। তবে পরে হয়ত তিনি কিছুটা দ্বিধায় পড়ে গেছিলেন, তাই প্রেসিডেন্ট হতে রাজী হন নি।
এই দ্বিধা শেষেরদিকে তাঁকে আসলেই ক্রমশ শান্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছিল , বোমা তৈরীর ম্যানহাটান প্রজেক্টের নেতা ওপেনহাইমার যখন নিজের ভুল বুঝে অনুতপ্ত হন, তিনিই তাঁকে রক্ষা করেছিলেন যুদ্ধবাজ ম্যাকার্থিপন্থীদের হাত থেকে। ফ্রয়েডের সঙ্গে তাঁর বিখ্যাত পত্রালাপেও এই নতুন দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় আছে।
জার্মানীর কোন বোমা পরিকল্পনা ছিলনা, সেটা এখন সবাই স্বীকার করে। অনেকটা ইরাকের অস্তিত্বহীণ মারণাস্ত্রের মত ব্যাপারটা।
1. http://th-www.if.uj.edu.pl/acta/vol38/pdf/v38p1623.pdf
CENTENARY OF MARIAN SMOLUCHOWSKI’S
THEORY OF BROWNIAN MOTION (2006)
http://www.emsb.qc.ca/laurenhill/science/brownianmotion.html
2. http://query.nytimes.com/gst/fullpage.html?res=9C0CE0DF1130F934A15750C0A966958260
Evan Harris Walker, a research physicist at the United States Army Ballistic Research Laboratory at the Aberdeen Proving Grounds in Maryland cites as primary evidence key phrases culled from correspondence between Einstein and Miss Maric in the years before he published three ground-breaking papers in 1905, including the one for which he won the 1921 Nobel Prize in Physics. It concerned light and energy, an area in which Miss Maric had some background.
For example, in a letter to Miss Maric in 1901, Einstein wrote, ''How happy and proud I will be when the two of us together will have brought our work on the relative motion to a victorious conclusion!''
There are more than 10 other instances in the approximately 40 letters from Einstein to Miss Maric before 1903, referring to ''our work'' or to their collaboration, said Dr. Walker, who presented his ideas at a meeting of the American Association for the Advancement of Science this month in New Orleans.
Dr. Walker also cites the agreement between Einstein and his wife upon their divorce that she would receive the proceeds of any Nobel Prize he might win. True to his word, Einstein gave her the proceeds from his 1921 prize.
3. www.amazon.com/Albert-Einstein-Incorrigible-Christopher-Bjerknes/dp/0971962987
"Albert Einstein - the Incorrigible Plagiarist"
এইখানে আইনস্টাইন বোমা বানিয়ে দিয়েছিলেন কথাটার সাথে আমি দ্বিমত পোষণ করি । বোমাটা ম্যানহাটান প্রজেক্টের ফসল । সেখানে আইনস্টাইন কাজ করেননি । তার ভূমিকা মূলত: ঐ চিঠিগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
আমারতো বন্যাদির কমেন্টটাই ভাল বলে মনে হল এ প্রসঙ্গে। ব্যক্তিগত জীবন আর বিজ্ঞানে অবদান এক বস্তু নয়, আলাদা ... মিশিয়ে ফেলাটাই ভুল।
আর অভিজিতদা আপেক্ষিকতাবাদ নিয়ে আলাদা একটা পোস্ট দিলে ভাল হয়। কমেন্টের মধ্যে গিয়ে গিয়ে পড়তে বোর হয়ে যাচ্ছি ...
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
বজলুর রহমানের পয়েন্টগুলো নিয়ে আলোচনা করব ভেবেছিলাম। এর মধ্যে অনেকটা সময় গড়িয়ে গেল। দিচ্ছি, দিব করেও আর হয়ে উঠল না। আজ ভাবছি আলসেমি বাদ দিয়ে লেখাটা শুরু করি। অতিথি ব্লগার বজলুর রহমান (মডারেটরের কাছে অনুরোধ তাকে যেন সচল করে নেয়া হয় শিগ্রই, বেশিদিন অথিতি থাকতে কারই বা ভাল লাগে বলুন) আইনস্টাইনকে নিয়ে বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ করেছেন। আমি ধীরে ধীরে তার সমস্ত পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করব, তবে যথাসম্ভব ব্যক্তিগত ক্যাচাকেচি এড়িয়ে । আজ শুরু করছি বজলুর রহমানের নীচের উক্তিটি দিয়ে -
এর উত্তরে বলতে হয় যারা গবেষণা করেন,সবাই এটি জানেন যে একটি গবেষনালব্ধ আবিস্কারের পেছনে বহুজনের সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকে। আমি নিজে পিএইচডি করতে গিয়ে রিসার্চ পেপারগুলোতে দেখেছি কিভাবে কন্সোলিডেশন থিওরী যা এক সময় সয়েল মেকানিক্সে ব্যবহৃত হত, তা অবলীলায় বায়োইঞ্জিনিয়ারিং এ টিউমার মডেলিং এ ব্যবহৃত হয়। কিভাবে ফ্লুইড মেকানিক্সের সুত্রগুলো সামান্য রদ বদল করে রক্তবাহী নালির মধ্য দিয়ে রক্তসঞ্চালনের মডেলিং-এ ব্যবহ্রত হয়। এটাই স্বাভাবিক। পূর্বসূরীদের অবদান ছাড়া হুট করে যুগান্তকারী আবিস্কার বিজ্ঞানের ইতিহাসে শুধু বিরল নয়, অনেক ক্ষেত্রে প্রায় অসম্ভব ব্যাপারও বটে। নিউটনের কথাই ধরি না কেন! নিউটনের বহু আগেই কেপলার জানতেন গ্রহগতির নিয়মকানুনের কথা। কিন্তু নিউটনই মহাকর্ষের মাধ্যমে কেপলারের নিয়োমগুলকে একসূতায় গেথেছিলেন। কিন্তু সে জন্য নিউটনের অবদান একটুও কমেনি। কেউ বলবে না যে,মহাকর্ষ আবিস্কারের মূল কৃতিতৃ কেপলারের। কেপলার কেপলারের জায়গায় আছেন, নিউটন নিউটনের জায়গায়। কেপলার যে কোন ভাল পূর্বসূরী বিজ্ঞানীর মতই নিউটনের কাজ এগিয়ে দিয়েছিলেন অনেক, কিন্তু তারপরও মহাকর্ষের ব্যাপারে মূল কৃতিতৃ কাউকে দিতে হলে নিউটনকেই দিতে হবে।
ঠিক একই ব্যাপার আইনস্টাইনের ক্ষেত্রেও খাটে। এটা ঠিক রিলেটিভিটি নিয়ে আইনস্টাইনের আগে অনেকেই কাজ করেছিলেন, কিন্তু আইনস্টাইনের মত বস্তুনিষ্ঠ জায়্গায় কেউই পৌঁছুতে পারেন নি। বিজ্ঞানী গ্যালিলিওর Galilean transformation -কে আইনস্টাইনের রিলেটিভিটির সমকক্ষ ভাবলে বোকামিই হবে বোধ হয়। গ্যালিলিয়ান ট্রানসফরমেশন দাঁড়িয়ে আছে পুরোটাই সেই চিরায়ত (নিউটওনিয়) বলবিদ্যার কাঁধে সওয়ার হ্য়ে। আসলে ওটা বেগের ভেকটর যোগ-বিয়োগ ছারা খুব বেশি কিছু নয়। আর আইনস্টাইনের রিলেটিভিটি থেকে যে যুগান্তকারী সিদ্ধান্তগুলি উঠে এসেছে যেমন, বেগ বৃদ্ধির সাথে সাথে বস্তুর ভর বৃদ্ধি(mass increase), দৈর্ঘ্য সঙ্কোচন (length contraction) এবং সময়ের ধীরে চলা (time dilation)- এগুলো কিন্তু গ্যালিলিওর মাথাতে কখনই আসেনি।
লোরেঞ্জ ট্রান্সফরমেশন (লোরেঞ্জ-ফিটজেরাল্ড ট্রান্সফরমেসন নামেও পরিচিত) সম্বন্ধে বলতে গেলে বলতে হয়, লোরেঞ্জের ট্রান্সফরমেশনের কৃতিত্ব লোরেঞ্জেরেই। সেজন্যই একে আমরা এখনও “লোরেঞ্জ ট্রান্সফরমেশন” হিসেবে জানি। আইনস্টাইন চাইলেও এ কৃতিত্ব দাবী করতে পারবেন না। কিন্তু লোরেঞ্জের ট্রান্সফরমেশন এর সাথে আইনস্টাইনের তত্ত্বের পার্থক্য এইখানে যে, লোরেঞ্জের ট্রান্সফরমেশন তখনও ইথারের মধ্যে দিয়ে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভের সঞ্চালন নিয়ে কাজ করছিল, অন্যদিকে আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব ইথারকে ‘বাহুল্য’ হিসবে কার্যত বাতিল করে দি্যেছিল।
কাজেই লোরেঞ্জ-ফিটজেরাল্ড ট্রান্সফরমেসন কখনই আপেক্ষিকতত্ত্ব নয়। বরং একে তার পরিনতি বলা যেতে পারে। তারা কাজ করছিলেন ইথার নামক একটি ভ্রান্ত অনুমানের উপর ভর করে। আইনস্টাইন তার নতুন তত্ত্বের মাধ্যমে মুলত দুটি আগ্রগতি অর্জন করেছিলেন -
১) আইনস্টাইন প্রমান করলেন, ইথার একটি বাহুল্য (superfluous)।
২) তিনি মুল নীতি বা ফার্স্ট প্রিন্সিপাল থেকে সকল ট্রান্সফরমেশনগুলিকে আহরন (derive) করলেন, এবং এক নতুন পদার্থবিদ্যার জন্ম দিলেন যার ভিত্তি ছিল আপেক্ষিকতা।
লোরেঞ্জ ট্রান্সফরমেশন উপরের কোনটিরি সঠিক দিক নির্দেশনা দেয় নি। ঈথারের অস্তিত্ব সংক্রান্ত সমস্যাটি ১৯০৫ সালের আগ পর্যন্ত পদার্থবিদ্যার জগৎকে ধোঁয়াশাচ্ছন্ন করে রেখেছিল। এমনকি স্বয়ং ম্যাক্সওয়েলএর মত বিজ্ঞানীও ছিলেন দ্বিধাগ্রস্ত- তাঁর সমীকরণ চতুষ্টয়ে (ক্ষেত্র সমীকরন) ঈথারের স্থান না থাকলেও, মহাশূন্যে তাড়িতচৌম্বক তরঙ্গের সঞ্চারণের প্রয়োজনে ঈথারের অস্তি¡ত্বকে তিনি মেনে নিয়েছিলেন। তিনি যদিও দেখিয়েছিলেন যে তাড়িত চৌম্বক তরঙ্গ মহাশূন্যে প্রতি সেকেন্ডে এক লক্ষ ছিয়াশি হাজার মাইল বেগে চলে, এবং আলোর পরিমাপিত বেগও একই। এ থেকে প্রমাণিত হল আলোক শক্তিও তাড়িত চৌম্বক বিকিরণ, আর এটি ম্যাক্সওয়েল তত্ত্বের চরম সাফল্য। কিন্তু সে সময় প্রশ্ন ছিল আলোর এই প্রতি সেকেন্ডে এক লক্ষ ছিয়াশি হাজার মাইল দ্রুতি কার সাপেক্ষে? শব্দ বা জলতরঙ্গের সাদৃশ্যে ঈথার বিশ্বাসীরা মেনে নিয়েছিলেন যে অলোক রশ্মি এই ঈথারের ভেতর দিয়েই সঞ্চারিত হয়, আলোর এই বেগ স্থির ঈথারের সাপেক্ষে। আর তাহলে স্থির ঈথারই তো হতে পারে পরম বা সেই নির্বাচিত প্রসঙ্গ কাঠামা। ঈথারের অস্তিত্ব প্রমাণের সে কালে সম্পাদিত পরীক্ষণসমূহ এতই স্থুল প্রকৃতির ছিল যে ম্যাক্সওয়েল সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন যে ঈথারের অস্তিত্ব প্রমাণের জন্য অতি সূক্ষ্ম ও সংবেদনশীল পরীক্ষণ ডিজাইন ও সম্পাদন করা আদৌ সম্ভব কিনা ! এ প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য ছিল
If it were possible to determine the velocity of light by observing the time it takes to travel between one station and another on the Earth’s surface, we might, by comparing the observed velocities in opposite directions, determine the velocity of ether with respect to the terrestrial stations.
আর তাঁর ধারণায় এ ধরণের চেষ্টা হবে ‘quite insensible’।
কিন্তু তাড়িতচৌম্বক তত্ত্বের প্রকাশের মাত্র তিন বছরের মধ্যে মাইকেলসন-মোর্লি সম্পাদন করলেন সেই বিখ্যাত পরীক্ষা যা ম্যাক্সওয়েলের কাছে অসম্ভব প্রতীয়মান হয়েছিল। তাঁরা ম্যাক্সওয়েল কথিত 'আলোর উড্ডয়ন কাল' পরিমাপ করলেন ম্যাক্সওয়েল উদ্ভাবিত ইন্টারফেরোমিটারের সাহায্যে ব্যতিচার কৃৎকৌশল প্রয়োগ করে। আর শেষ মেষ মুলতঃ আইনস্টাইনের তত্ত্বই ঈথারের অস্তিত্বকে তাত্ত্বিকভাবে নস্যাৎ করে ছেড়েছিল।
উনার বাকী পয়েন্টগুলো নিয়ে খুব তাড়াতাড়ি আলোচনায় ফিরবার আশা রাখি।
===============================
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
এই ব্লগটির সচিত্র সমন্তব্য আকার বড় দীর্ঘ হয়ে গেছে, আমার ডায়ালাপ মডেমে আর কুলোচ্ছে না।
অভিজিৎ বাবুর সঙ্গে আমি একমত ঃ বিজ্ঞানের প্রায় কোন অবদানই একক কীর্তি নয়। নিউটন বলেছিলেন - আমি অন্যদের ঘাড়ে চড়ে এখানে পৌঁছেছি। নেভিল মট নোবেল পাওয়ার পরে বলেছিলেনঃ আমার চাইতে অনেক প্রতিভাবান হাজার হাজার পদার্থবিদ আছেন যাঁদের অধিকাংশ এ গৌরব পাবেন না, আমি ভাগ্যবান মাত্র।
তিনটি কারণে আমি মন্তব্য করতে প্ররোচিত হয়েছিলামঃ (১) হেগেলীয় দ্বন্দ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো শ্রেয়, আমার বিশ্বাস; তাই একটু এন্টিথিসিস দিয়েছিলাম, যাতে পাঠকরা নিজেদের সিন্থেসিস তৈরি করে নিতে পারেন এবং ইন্টারনেট ঘাঁটাঘাঁটি করার একটা মোটিভেশন পান। (২) আমি মনে করি আইনস্টাইনের ইমেজে মিডিয়ার বাড়াবাড়ি রয়েছে। এমন এক প্রতিষ্ঠান থেকে পি, এইচ,ডি করেছি, যেখানে পাঁচ জন হবু নোবেল বিজেতা একই বিভাগে আমাদের মত ছাত্রদের সাথে ধাক্কাধাক্কি করে লাইব্রেরি বা সেমিনার ঘরে ঢুকতেন, কারো মধ্যে কোন শ্লাঘা দেখি নি, কেউ নিজেকে অতিরিক্ত কিছু মনে করেন নি। এমন কি পদার্থবিদ্যার সব চেয়ে সুন্দর ও মৌলিক সমীকরণের একক রচয়িতা ডিরাকও চুপচাপ থাকতেন। কিন্তু আইনস্টাইন নিজের মস্তিষ্ক গবেষণার জন্য দান করে গিয়েছিলেন! বলা বাহুল্য তাঁর ব্রেন সেল অসুস্থ ছিল না, এই ফলাফলই শুধু পাওয়া গেছে। (৩) আমাদের এবং পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে এখনো পদার্থবিদ্যার এই অংশটি আইনস্টাইনের সনাতন চিন্তাধারা অনুসারে পড়ানো হয় (যেখানে আলোর গতি একটি নিত্য পরিমাপ এতা স্বীকার্য ধরা হয়, কিন্তু আসলে এটা চতুর্মাত্রিক বিশ্বের জ্যামিতির একটা ফলাফল)। সঠিক পদ্ধতি হওয়া উচিত প্রতিসাম্যের ধারণা, অর্থাৎ গ্রুপ ইনভ্যারিয়েন্স ব্যবহার করে, যার সূত্রপাত হয়ে ছিল পোয়াঙ্কারের কাজ থেকে। অথচ পদার্থবিজ্ঞানের বাইরের জগতে শুধু আইনস্টাইনেরই নাম।
আমি যাযাবর, স্থির প্রাতিষ্ঠানিক সদস্যপদে আগ্রহহীণ। ক্রিয়ার চাইতে প্রতিক্রিয়াতে বেশি উৎসাহী। তবু মাঝে মাঝে দেখা পাবেন মন্তব্যের অংশে। অভিজিৎ বাবুকে তথাপি ধন্যবাদ।
বজলুর ভাই,
একটা অনুরোধ। উপরে কিছু প্রশ্ন করেছি ,,, এ জিনিসগুলো বুঝতে গিয়ে সবসময় মাথায় গোল পাকিয়ে গেছে ,,, অনেক প্রশ্ন ,,,আপনার মন্তব্য বা ব্যাখ্যা আশা করছি ,,,ধন্যবাদ
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
আপনার প্রশ্নগুলোর উত্তর সচলায়তনের স্বল্পপরিসরে যতটুকু দেওয়া সম্ভব, অভিজিৎ তা খুব ভালভাবেই দিয়েছেন। তবু যদি আরো জানতে চান, উইকি দেখতে পারেনঃ
en.wikipedia.org/wiki/Special_relativity
আরো সহজ ভাষাতেঃ
en.wikipedia.org/wiki/Introduction_to_special_relativity
নিজের স্বচ্ছন্দ গতিতে অবসরে শেখার জন্যঃ
http://www.upscale.utoronto.ca/GeneralInterest/Harrison/SpecRel/SpecRel.html
আমি আসলে মোটেই ভাল জনপ্রিয় বিজ্ঞান লেখক নই। তাছাড়া সেই জায়গাও এখানে নেই।
(১) অভিজিৎ ভালো করেই ব্যাখ্যা করেছেন যে সমস্যাটা হলো স্থানকালের পরম ধারনার অনুপস্থিতি। গ্যালিলিও যেমন বলেছিলেন শুধু স্থান সম্পর্কে, সেটাই চতুর্মাত্রায় কাল সংযুক্ত হয়ে আরো জটিল রূপ নেয়।যদি ইথার থাকত, তাহলে পরমস্থান চিহ্নিত করা যেত ইথারের সাপেক্ষে।
আমার টর্চ থেকে বেরুনো আলো অবশ্যই আলোর ধ্রুব গতিতে আমার সামনের আয়নাতে যাবে।আমি বাইরের সাপেক্ষে যে গতিতেই যাই না কেন। মজার ব্যাপার হলো বাইরের দর্শক দেখবে আমার ও আয়নার মধ্যে দূরত্ব শূন্য হয়ে গেছে, লোরেন্তস সংকোচনের ফলে। কিন্তু আমার এবং আলোর উভয়ের গতিবেগ এক-ই হওয়াতে আপেক্ষিক গতিবেগ শূন্য এবং সেই কারণে সময়= দূরত্ব/বেগ= ০/০ =কিছু একটা বাস্তব সংখ্যা।
কিন্তু যদি এভাবে কেউ আগের মত ভাবত যে আলো তো ইথারে ঢেউ, এবং সেই ইথারের সাপেক্ষে আমার গতি আলোর সমান, তাহলে দ্রুতগামী লঞ্চের সামনের ঢেউ যেমন তার আরেকটু সামনে পানিকে ছোঁয়া কাঠিকে কখনো স্পর্শ করতে পারেনা, তেমনি আমার আলো সামনের আয়নাতেও পৌঁছবে না। সুতরাং সনাতনী চিন্তা ভুল।
(২) আলো কোনো উৎস থেকে আমার দিকে 'গ' বেগে এলে , এবং আমিও আলোর উৎসের দিকে'গ' গতিতে গেলে ওপরের মত দেখব যে, আলোর ঢেউগুলোর সারি সংকুচিত হয়ে শূন্য হয়ে যাওয়াতে উৎসতেই থেকে যাচ্ছে, সুতরাং আমাকেই 'গ' গতিতে আলোর মুখোমুখি হতে হবে, এক্ষেত্রে দুটো ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষের মত বেগ যোগ হয়ে ২ গ হবে না। এ সবই আসে মিঙ্কৌস্কি চতুর্মাত্রিক জ্যামিতিতে দূরত্বের প্রকাশে স্থান ও কালের জন্য প্লাস মাইনাস আলাদা চিহ্ন হওয়াতে। শুধু স্থানের জন্য পীথাগোরাসের উপপাদ্য আছে, এক্ষেত্রে তা অচল।
(৩) সার্বিক তত্ত্বের ব্যাখ্যা - অর্থাৎ ভরের সাথে স্থানের বক্রতার সম্পর্ক, টেন্সর এ্যানালিসিস ছাড়া কঠিন। উইকি দেখুন।
(১)টা বুঝতে পারছিনা ...
পুরা সিনারিওটা বলি
ধরুন আমি একটা স্পেসক্রাফটে বসে আছি যেটার ভেতর থে বাইরে দেখা যায়না, কিন্তু বাহির থেকে ভেতরে দেখা যায়। আর স্পেসক্রাফটের ভেতর টর্চের আলো জলছে। তাহলে, সেখানে স্থির হয়ে বসে থাকা আমি সামনে একটা আয়না ধরলে আয়নায় নিজেকে দেখতে পাব। এখন স্পেসক্রাফট আলোর গতিতে ছোটা শুরু করল। তখনও আমি আয়নায় নিজেকে দেখতে পাব, কারণ স্পেসক্রাফটের ভেতরের সিস্টেমে আমার, আয়নার আর টর্চের আলোর আপেক্ষিক বেগের কোন পরিবর্তন হয়নি, রাইট? সেখানেই আমার প্রশ্ন, তাহলে গ্যালিলিওর সনাতনী ফিজিক্সের ব্যাখ্যা দিয়েও তো বোঝা যায় যে ক্রাফটের ভেতর বসে থাকা আমি বুঝতে পারবনা যে ক্রাফট আলোর বেগে চলছে -- এটুকুর মধ্যে ভুল কোথায়? তাহলে আইনস্টাইনের মানসপরীক্ষায় খটকা লাগল কেন?
এখন যেহেতু বাহির থেকে স্পেসক্রাফটের ভেতরে দেখা যায়, কাজেই বাহিরের একজন দর্শক দেখবেন যে ক্রাফটের ভেতর স্থির বসে থাকা আমি আলোর বেগে ছুটে যাচ্ছি। কিন্তু ক্রাফটের ভেতর আলোর বেগে চলা টর্চের আলোকেও তিনি আলোর বেগেই যেতে দেখবেন, রাইট? আলোর বেগের দ্বিগুন বেগে যেতে দেখবেননা, ঠিকাছে? তারমানে কি? ক্রাফটের ভেতরের বিন্দুগুলোর ভেতর তিনি কোন দূরত্ব দেখতে পাবেননা, কেমন?
আমার তো মনে হচ্ছে, বস্তুর বেগকে 'বস্তু থেকে প্রতিফলিত হয়ে আসা আলোর কণার গতি'র মাধ্যমে ব্যাখ্যা করলেই ঝামেলা চুকে যায়।
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
১)তাহলে গ্যালিলিওর সনাতনী ফিজিক্সের ব্যাখ্যা দিয়েও তো বোঝা যায় যে ক্রাফটের ভেতর বসে থাকা আমি বুঝতে পারবনা যে ক্রাফট আলোর বেগে চলছে -- এটুকুর মধ্যে ভুল কোথায়?
---------------------------------------------------
ভুল নেই। তিনমাত্রার স্থানের জগৎ চার মাত্রার স্থান-কালের জগতের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং গ্যালিলীয়ান ইনভ্যারিয়েন্স পোয়াঙ্কারে ইনভ্যারিয়েন্সের সাবসেট। পোয়াঙ্কারের তত্ত্ব থেকে আপনি নতুন যে তথ্য পাবেন তা হলো বাইরের লোক আপনার মুখ থেকে আয়নাতে আলো যেতে যে সময়, আর আপনার নিজের ঘড়িতে যা পাবেন তার তুলনার প্রকাশ । গ্যালিলিওর জগতে সময় সব ঘড়িতেই এক।
----------------------------------------------------------
তাহলে আইনস্টাইনের মানসপরীক্ষায় খটকা লাগল কেন?
-----------------------------------------------------------
কারণ আলো যদি ইথারে তরংগ হয় এবং সে ইথার যদি আপনার রকেটের সাপেক্ষে আলোর 'গ' গতিতে পেছনে চলে যায়, তাহলে আলো সামনের আয়নাতে পৌঁছবে কেমন করে ? এটা শুধু রকেটে বসে থাকা আপনার মুখ আর আয়নার ব্যাপার না, বাইরর ইথারেরো। যদি ইথার থাকত, তাহলে তার সাপেক্ষে একটা পরম স্থান কল্পনা করা যেত। নেই।
----------------------------------------------------------------
আমার তো মনে হচ্ছে, বস্তুর বেগকে 'বস্তু থেকে প্রতিফলিত হয়ে আসা আলোর কণার গতি'র মাধ্যমে ব্যাখ্যা করলেই ঝামেলা চুকে যায়।
-----------------------------------------------------------------
এই বিশেষ ক্ষেত্রে, যেখান রকেটের গতি আলোর গতির সমান, এটা সত্যি। কিন্তু এটা একটা বাজে মানস-পরীক্ষণ। ওপরের ০/০ রাশি দেখেই আঁচ করেছেন নিশ্চয়ই। গ১, গ২ এই দুটি বেগের যোগফল ত্রিমাত্রিক জ্যামিতিতে গ১+গ২, কিন্তু চতুর্মাত্রিক জ্যামিতিতে
(গ১+গ২)/ ( ১ + গ১ গ২)
এখানে বেগগুলো আমি আলো বেগের ভগ্নাংশ হিসাবে লিখলাম, সহজ রাখার জন্য । লক্ষ করুন গ১ বা গ২, যে কোন একটা ১ হলে অর্থাৎ আলোর বেগ হলে, ফলাফল ১। তাহলেই প্রমাণ হয় আলোর গতির ওপরে যাওয়া যাবেনা। যদি ক-এর সাপেক্ষে খ ১ (আলোর) গতিতে চলে , খ-এর সাপেক্ষে গ ১ গতিতে চলে , তাহলেও ক-এর সাপেক্ষে গ ১ (আলোর) গতিতে চলে। মজার ! কিন্তু আমি বলছিলাম বাজে পরীক্ষণ - কারণ শুধু ভরহীন কণাই আলোর গতিতে চলতে পারে। শুধুই ফোটন বা আলো , এবং নিউট্রিনো। আপনি যত খরচই করুন আপনার রকেট ১ এর চাইতে কম গতিতে চলবে। সুতরাং "বস্তুর বেগকে 'বস্তু থেকে প্রতিফলিত হয়ে আসা আলোর কণার গতি'র মাধ্যমে ব্যাখ্যা করলেই ঝামেলা চুকে যায়" এটা বাস্তবে কখনো হবে না, ওপরের নিয়মে গতি যোগ-বিয়োগ করতে হবে। আর আপনার রকেট যদি আলোর গতির চাইতে একটু কম গতিতে যায়, আপনার বাইরের বন্ধু আপনাকে আর আপনার আয়নাকে সব চিড়ে চেপটা হয়ে একই সমতলে দেখবে না, যদিও বেশ কিছুটা চেপ্টা দেখবে যদি গতি ১ এর কাছাকাছি চলে যায়। আলো আয়নাতে পৌঁছবার সময়টাও ০/০ এর মতো অনিশ্চিত হবে না। যদিও তা আপনার ঘড়িতে মাপা সময় হবে না।
ধন্যবাদ, বজলুর ভাই ,,,, প্রায় ক্লিয়ার হয়ে গেছে ,,,একটা প্রশ্ন আছে ,,,
-----------------------------------------------------
আমার আগের প্রশ্ন:
...... তাহলে আইনস্টাইনের মানসপরীক্ষায় খটকা লাগল কেন?
-----------------------------------------------------------
আপনার জবাব:
কারণ আলো যদি ইথারে তরংগ হয় এবং সে ইথার যদি আপনার রকেটের সাপেক্ষে আলোর 'গ' গতিতে পেছনে চলে যায়, তাহলে আলো সামনের আয়নাতে পৌঁছবে কেমন করে ? এটা শুধু রকেটে বসে থাকা আপনার মুখ আর আয়নার ব্যাপার না, বাইরর ইথারেরো। যদি ইথার থাকত, তাহলে তার সাপেক্ষে একটা পরম স্থান কল্পনা করা যেত। নেই।
-----------------------------------------------------------
নতুন প্রশ্ন:
আমি যা বুঝেছি, আইনস্টাইনের এই মানসপরীক্ষায় একটা পূর্বশর্ত হলো ক্রাফটের ভেতরে আলো আছে; কারণ বাহির থেকে কোন রিফারেন্স আসবেনা।
এখন প্রশ্নটা হলো, এই যে ইথারের কথা বললেন, সেটা কি ক্রাফটের ভেতরেও থাকবেনা?ক্রাফটের ইথার কি ক্রাফটের সাথে সাথে ক্রাফটের বেগে সামনে এগুবেনা, এরকমভাবে ডিফাইনড? তানাহলেতো ক্রাফটের ভেতরের আলো ক্রাফটের ইথারের সাপেক্ষে cবেগে, মানে ক্রাফটের ভেতরে থাকা আমার ও আয়নার সাপেক্ষেও cবেগে সামনে যাবে।
যদি ইথারের সংজ্ঞাটা এমন হয় যে, ক্রাফটের ভেতর আর বাহিরের ইথার একই বেগে চলে সবসময় তাহলে ঠিক আছে, খটকা কাটল।
আপনার চতুর্মাত্রিক ডেফিনিশনে অনেকটা ক্লিয়ার হলাম।
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
আরেকটু অন্যভাবে বললে, আইনস্টাইনের তত্বের আগে দুইটা আলাদা ইনার্শিয়া সিস্টেমে ইথারকে কি আলাদা মাধ্যম হিসেবে ধরা হতো? নাকি এ্যাবসল্যুট ধরা হতো?
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
আপনার অংশগ্রহন নিঃসন্দেহে এ আলোচনাকে অনেক প্রাণবন্ত করে তুলেছে। আপনার সিন্থেসিস 'এন্টিথিসিসএর ব্যাপারটা নিঃসন্দেহে উপভোগ্য, তবে অনেকসময় 'শুধুমাত্র' ইন্টারনেট ঘাঁটাঘাঁটির দিকে ঠেলে দিলে পাঠকেরা কিন্তু বিভ্রান্তই হবেন। ইন্টারনেট এমন একটা জায়গা যেখানে একটু কেয়ারফুল না থাকলে অনেক সময় প্রোপাগান্ডায় ভেসে যাবার একটা ভাল চান্স থাকে। ওই 'মুন হোক্স'টার কথাই ধরুণ না। সার্চ দিলেই হাজার হাজার সাইট বেরিয়ে আসবে। ক'টা সাইট পাবেন যেখানে ওই হোক্সটাকে রিফিউট করা হয়েছে?
হ্যা, আইনস্টাইনের ইমেজে মিডিয়ার বাড়াবাড়ি রয়েছে। তা অনেক প্রতিভাবানদের নিয়েই হয়। এখন কি হকিং কে নিয়ে হচ্ছে না? তা বলে মিডিয়ার বিপরীতে অসুস্থ প্রোপাগান্ডা কোন অস্ত্র হতে পারে না। কিছু কিছু ব্যাপার আছে আবার দৃষ্টিভঙ্গির উপর নির্ভরশীল। আইনস্টাইন নোবেল প্রাইজ পাওয়ার পর তার অর্থ প্রাক্তন স্ত্রী মিলেভাকে স্বেচ্ছায় দিয়ে গিয়েছিলেন। এটি কেউ পজিটিভলি নিতে পারেন, আবার কেউ ভাবতে পারেন 'আগে চোথা মারার প্রতিদান' দিচ্ছেন আইনস্টাইন। আপনি দ্বিতীয় পথে হেঁটেছেন, (বলেছহেন “তালাকের পরে নোবেলের পুরো টাকাটাই দিতে হয়েছে সেই মহিলাকে।” আসলে দিতে হয় নি। না দিলেও তিনি পারতেন )। আমি হয়ত প্রথম পথটা নিতে চাইব আগে।
ও হ্যা, আরেকটা ব্যাপার - 'স্ট্যান্ডিং শোল্ডার অন দ্য জায়েন্ট ' বলতে নিউটন সম্ভবতঃ 'আমি অন্যদের ঘাড়ে চড়ে এখানে পৌঁছেছি' বোঝান নি। অনেকেই মনে করেন 'I stood on the shoulders of giants!' এই উক্তির মাধ্যমে আসলে নিউটনের পূর্বসূরি বিজ্ঞানীদের প্রতি তাঁর কোন কৃতজ্ঞতা বা বিনয় প্রকাশ পায়নি, বরং প্রকাশ পেয়েছে রবার্ট হুকের প্রতি নিউটনের স্বভাবজাত তাচ্ছিল্য। নিউটন প্রতিভাবান ছিলেন ঠিকই কিন্তু মনমানসিকতায় ছিলেন জেদী, একরোখা আর কখনো বা প্রতিহিংসাপরায়ণ। তাঁর জীবনের একটা বড় অংশই তিনি ঝগড়া-বিবাদ, লড়াই ফ্যাসাদ করে কাটিয়েছেন। ক্যালকুলাসের আবিষ্কারক কে - এই লড়াইয়ে লীবনিৎসকে নিউটন ষড়যন্ত্র করে তার প্রাপ্য সম্মান থেকে বঞ্চিতই শুধু করেননি, জনসম্মুখে প্রবঞ্চক হিসেবে হেয় প্রতিপন্ন করেন।
আমিও একটা এন্টিথিসিস দিলাম , আপনার কি মত?
=============================
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
এ ফাঁদে পা দিয়ে আমি আরেক সাল্মান রুশদী হতে চাই না। আমরা ছেলেবেলা থেকে বাবা-মার কাছ থেকে একেকজন রোল মডেলের সন্ধান পাই - এবং তাঁকে নিয়ে অনেক মগজ ধোলাই চলে; সেই সঙ্গে প্রেরণা, তোকেও একজন আইনস্টাইন হতে হবে, বা একজন পেলে, রবীন্দ্রনাথ, ধর্মপ্রচারক। ছেলের ক্ষমতা আর পরিবারের পটভূমি ঠিক করে, কে হবে এই আদর্শ ব্যক্তি। সে-রকম সফল হতে না পারলেও, পরে তার সম্বন্ধে মন্দ কথা সহ্য করা কঠিন হয়, আমি বুঝি। লাইবনিৎস আর নিউটন আমার প্রায় সমান প্রিয়, যদি মনোমালিন্য থেকেও থাকে, এ প্রসঙ্গে আমি অন্য দিকে তাকিয়ে থাকব। তবে নিউটন এত বদরাগী বা ক্ষুদ্রমন ছিলেন, আমি জানতাম না। দুজনের ক্ষেত্রের একটিই ওভারল্যাপ - ক্যালকুলাস। লাইবনিৎসের ফর্মুলা দেদার ব্যবহার করছি ডিফারেনশিয়েট করতে, নিউটনের ফর্মুলা দিয়ে সমীকরণের মূল বের করছি। তেমন দ্বন্দ নেই। আসলে নিউটন ছিলেন পদার্থবিদ, লাইবনিৎস গণিতজ্ঞ। নিউটনের ক্ষেত্র অনেক বিস্তৃত, এমন কি স্পেক্ট্রাম নিয়ে পরীক্ষণেও। অথচ বিশ্বাস করতেন আলো হলো কণার সমষ্টি (কোয়ান্টাম তত্ত্ব এখন তাই বলে বটে)। জ্যোতিষ শাস্ত্রেও বিশ্বাস করতেন কোনো অজ্ঞাত কারণে। ঝগড়াটে ছিলেন বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় এই কারণে যে, তিনি ছিলেন ইংল্যান্ডের মাস্টার অব মিন্ট, বোধ হয় অর্থ মন্ত্রীর তুল্য। দুবার পার্লামেন্টে নির্বাচিত হয়েও একবারও মুখ খোলেন নি। তাই তৃতীয়বার দাঁড়িয়ে আর ভোট পান নি। বুড়ো বয়সেও বিশ্রামহীণ নীরব কর্মী চন্দ্রশেখর জীবনের শেষ কীর্তি হিসাবে নিউটনের প্রিন্সিপিয়ার টিকা সুদ্ধ অনুবাদ করে গেছেন, যা সমালোচকদের অনেক প্রশংসা পেয়েছে।
হা : হা: "এ প্রসঙ্গে আমি অন্য দিকে তাকিয়ে থাকব।" ভাল বোলেছেন। তবে তাদের মনোমালিন্যটা সামান্য ছিল না। স্টিফেন হকিং তার বই-এ রসালো বর্ণনা দিয়েছেন কিভাবে নিউটন তার রয়েল সোসাইটির বন্ধুদের নিয়ে লিবনিজকে চোর বানিয়েছিলেন। সে এক ইতিহাস!
যাকগে, আমি 'শোলডার অন দ্য জায়েনটের' একটা রেফারেনস দেই নিউটন আসলে কি করেছিলেন -
Between 1670 and 1672, Newton used these lectures to develop his ideas on light into the form which later became the first part of his epic treatise Opticks. But this was not published until 1704, as a result of one of the most protracted personality clashes of even Newton's tempestuous career. The problems began when Newton started to communicate his new ideas through the Royal Society, an organization which had been founded only in 1660, but which was already established as the leading channel of scientific communication in Britain. The row, with Robert Hooke, also led to the most famous remark made by Newton -- and one which, recent research suggests, has been misinterpreted for three hundred years.
The Royal Society first learned of Newton as a result of his interest in light -- not his new theory of how colours are formed, but his practical skill in inventing the first telescope to use a mirror, instead of a lens system, to focus light. The design is still widely in use and known to this day as a Newtonian reflector. The learned gentlemen of the Society liked the telescope so much, when they saw it in 1671, that in 1672 Newton was elected a Fellow of the Society. Pleased in his turn by this recognition, in that same year Newton presented a paper on light and colours to the Society. Robert Hooke, who was the first "curator of experiments" at the Royal Society, and is remembered today for Hooke's Law of elasticity, was regarded at the time (especially by himself) as the Society's (if not the world's) expert on optics, and he responded to Newton's paper with a critique couched in condescending terms that would surely have annoyed any young researcher. But Newton had never been able, and never learned, to cope with criticism of any kind, and was driven to rage by Hooke's comments. Within a year of becoming as Fellow of the Royal Society and first attempting to offer his ideas through the normal channels of communication, he had retreated back into the safety of his Cambridge base, keeping his thoughts to himself and avoiding the usual scientific toing and froing of the time.
But early in 1675, during a visit to London, Newton heard Hooke, as he thought, saying that he now accepted Newton's theory of colours. Newton was sufficiently encouraged by this to offer the Society a second paper on light, which included a description of the way coloured rings of light (now known as Newton's rings) are produced when a lens is separated from a flat sheet of glass by a thin film of air. Hooke immediately complained, both privately and publicly, that most of the ideas presented to the Society by Newton in 1675 were not original at all, but had simply been stolen from his (Hooke's) work. In ensuing correspondence with the secretary of the Society, Newton denied this, and made the counter claim that, in any case, Hooke's work was essentially derived from that of Ren Descartes.
Things were brewing up for an epic row when, seemingly under pressure from the Society, Hooke wrote a letter to Newton couched in terms which could be interpreted as conciliatory (if the reader were charitable) but in which he still managed to repeat all his allegations and to imply that, at best, Newton had merely tidied up some loose ends. It was this letter that provoked Newton's famous remark to the effect that if he had seen further than other men, it is because he stood on the shoulders of giants.
This remark has traditionally been interpreted as indicating Newton's modesty, and his recognition that earlier scientists such as Johannes Kepler, Galileo and Descartes had laid the foundations for his laws of motion and his great work on gravity -- which is odd, because in 1675 Newton hadn't made his ideas about gravity and motion public. The charge of modesty does not, in any case, seem one which would stick to such a prickly, even arrogant, character as Newton, although it is easy to see how the story might appeal to later generations. So where did the remark come from?
http://www.lifesci.sussex.ac.uk/home/John_Gribbin/misc.htm#Giants
============================
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
As part of the celebrations marking the tercentenary of the publication of the Principia, in 1987 Cambridge University organised a week-long meeting at which eminent scientists from around the world brought the story of gravity up to date. At that meeting, John Faulkner, a British Researcher now based at the Lick Observatory in California, presented his persuasive new interpretation of what Newton meant by that remark, based on Faulkner's probing into the documents related to the feud with Hooke. Newton was certainly not being modest, but arrogant when he made that statement, said Faulkner; and he was certainly not referring to Kepler and Galileo, or his work on gravity, but, indeed, to his work on light.
=================================
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
সবমিলিয়ে এই পোষ্ট খুব মুল্যবান হয়ে উঠেছে । অভিজিৎ ও বজলুর রহমান দুজনকেই অনেক ধন্যবাদ ।
বজলুর রহমানকে অনুরোধ করবো শুধু মন্তব্য নয়,আমাদেরকে আপনার লেখা পাঠের ও সুযোগ দিন ।
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
লেখা ভাল লেগেছে। মন্তব্যের এত হাই থটের কথা ভাই আমি কিছুই বুঝি নাই। (
নতুন মন্তব্য করুন