বন্যার বিবর্তন নিয়ে একটি লেখায় জ্বিনের বাদশাহ, হিমু, দিগন্ত আর বন্যার কিছু কমেন্টের পরিপ্রেক্ষিতে আমার মনে হয়েছে ডিজাইন (নকশা) বনাম বিবর্তনের লড়াইটা এত সহজে হয়ত থেমে যাবার নয়। এ বিতর্কে আমিও কিছু উপাদান যোগ করলাম এবারে। এ লেখাটির উদ্দেশ্য হল পাঠকদের দেখানো যে, কোন কিছু 'ডিজাইন্ড' মনে হলেই যে সেটা ডিজাইন্ড নাও হতে পারে। একটু সতর্ক দৃষ্টি দিয়ে দেখলে বরং বোঝা যায় যে, এই প্রকৃতিতে কিংবা মানবদেহের বিভিন্ন অংগ-প্রত্যাংগে (যেগুলোকে আপাতঃ দৃষ্টিতে 'পারফেক্ট ডিজাইনারের' 'পারফেক্ট সৃষ্টি' বলে ভাবা হয়) ভেতরে অনেক গলদ রয়ে গেছে, আর সে গলদগুলোকে যেগুলোকে বিবর্তন তত্ত্ব ছারা কোনভাবেই এ মুহূর্তে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না। ... তারপর-ও হয়ত লড়াই থেমে যাবে না, কারণ আমার কথাগুলোই শেষ কথা নয়। নতুন নতুন যুক্তি উঠে আসবে উভয় মহল থেকেই। যুক্তির ব্যবচ্ছেদে হেগেলীয় দ্বন্দ্বে এগিয়ে যাবে পৃথিবী, আর আমরা আমাদের যুক্তির কষ্টিপাথরে যাচাই করে নেব নতুন সে সব প্রস্তাবনাগুলোকে ক্রমান্বয়ে।
লেখাটা খুব বেশি টেকনিকাল ডিটেলে না গিয়ে হাল্কা ভাবে লেখা হয়েছিল মুক্তমনায় গতবছরের ডারউইন ডে উপলক্ষে। সে সময় লেখাটির নাম দিয়েছিলাম 'ব্যাড ডিজাইন' । পরে মুক্তান্বেষায় জন্য পাঠানোর পর সম্পাদকেরা সেটার শিরোনাম পালটে এর নামকরণ করে দেন - 'নন্দিত নকসা - নাকি অজ্ঞানতা? '।
আমি সেই শিরোনামটিই রাখছি সচলায়তনের জন্য। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।
সিঙ্গাপুরে থাকাকালীন সময়গুলোতে সপ্তাহান্তে একবার হলেও সেরাঙ্গুন যেতাম। সিঙ্গাপুরে বসবাসরত বাঙালীরা সবাই সেরাঙ্গুন জায়গটাকে চেনেন। বাঙালী খাবার দাবার খেতে, কিংবা বাংলা পত্র-পত্রিকা পড়তে চাইলে সেরাঙ্গুন ছাড়া কারো গতি নেই। শুধু খাবারের দোকান বা বাংলা পত্রিকাই বা বলি কেন, সেরাঙ্গুনে কি নেই! বাঙালী লুঙ্গি, গামছা কিংবা 'হালাল মাংস' থেকে শুরু করে মৌসুমীর ছবি সম্বলিত 'ফোন কার্ড', কিংবা বিপাশার ছবিওয়ালা 'লাক্স সাবান', তিব্বতী কদুর তেল সবই পাবেন সেখানে। আমার অবশ্য কদুর তেল কেনার শখ ছিল না কখনও। আমার ক্ষেত্রে যেটা হত আমার বাসার পাশে কেমেন্টির ফুড স্টলে রোজ রোজ চাইনিজ বা মালে খাবার খেতে খেতে একসময় অরুচি ধরে যেত। হঠাৎ করেই তখন একদিন ইচ্ছে হত ধনে পাতা আর টম্যাটো দিয়ে বাঙালী কায়দায় রান্না করা রুইমাছ দিয়ে ভাত খেতে। তখন এম.আর.টি (সিঙ্গাপুরের পাতাল রেলের নাম) চেপে সটান চলে যেতাম সেরাঙ্গুনে।
এমনি একদিন রবিবারের অলস দুপুরে ঘুম ভেঙে বিছানায় একটু গড়িয়ে নিচ্ছি। রোববার ছুটির দিন। ইউনিভার্সিটি যাওয়ার তাড়া নেই। বিছানা ছাড়তে ইচ্ছে করছে না একদমই। এরকম উঠবো-উঠি করে গড়াগড়ি করতে করতেই সকাল পার করে দুপুরে করে ফেললাম। পেটে খিদে মোচর দিতে শুরু করায় গা ঝাড়া দিয়ে উঠতেই হল শেষ পর্যন্ত। ভাবলাম খেতে যখন হবেই সেরাঙ্গুনে গিয়েই খাওয়া যাক। চোখের সামনে ভেসে উঠল রুইমাছের ঝোল, বেগুন ভাজি, আলুভর্তা, ডাল। তড়াক করে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লাম। হাতমুখ ধুয়েই বাইরে বেড়িয়ে পড়লাম, তারপর সোজা এম.আর.টি স্টেশনে। সেরাঙ্গুনে নেমে সেখানকার এক বাঙালী খাবারের দোকানে (মোহাম্মদীয়া রেস্টুরেন্ট) খেয়ে দেয়ে তন্ময়ে একটু ঢু মারার জন্য উঠে পড়লাম। তন্ময় হচ্ছে কাঁচা বাজারের দোকান। বাঙালীদের জন্য মাছ আর 'হালাল' মাংসের আরত। সাথে পুঁই শাক, ডাটা শাক আর কচুশাক, ঝিঙ্গা, বেগুন, লাউ সবই পাবেন। ভাবলাম এসেছি যখন বাজারটা সেরে যাই। কিন্তু ঢুকতে গিয়ে থমকে দাঁড়ালাম। এক 'সুললিত' কণ্ঠের ওয়াজ-মাহফিলের আওয়াজ কোথা থেকে যেন ভেসে আসছে। আমার তো আক্কেল গুরুম। এই ভর দুপুরে এখানে ওয়াজ করছে কে রে বাবা! গলাটা বাড়াতেই হল। দেখলাম তন্ময়ের পাশে নতুন গজিয়ে ওঠা ক্যাসেটের দোকান থেকে আসছে এই আওয়াজ। ক্যাসেটের দোকানে বাজবে গান-মান্না দে, সুমন কিংবা নচিকেতা না বাজুক, অন্ততঃ মমতাজের 'বুকটা ফাইট্যা যায়' তো বাজতে পারে! কিন্তু সব ছেড়ে ছুড়ে হেরে গলায় ওয়াজ কেন। দোকানদারকে জিজ্ঞাসা করে জেনে নিলাম এটা নাকি দেলোয়ার হোসেন-সাঈদীর ওয়াজের ক্যাসেট। ওটা শুনলে নাকি 'বালা মুসিবৎ' দূর হয়! এই ধর্মীয় জিকির তুলে 'বালা মুসিবৎ' দূর করার ব্যাপারটি ইদানিং সব জায়গাতেই বোধহয় ঢুকে গেছে। মনে আছে ছোটবেলায় ঢাকা থেকে দূর পাল্লার বাসে করে যখন চট্টগ্রাম যেতাম, তখন বাসের ড্রাইভার ক্যাসেট প্লেয়ারে চালিয়ে দিত হিন্দি ছবির গান। আর আমরা গানের তালে তালে পা ঠুকতাম - 'হাওয়া মে উড়তে যায়ে, মেরে লাল দোপাট্টা...'। কিন্তু নব্বই দশকের পর সেই বাসগুলোতেই যখন উঠতাম তখন সেখানে হিন্দি গানের বদলে শুনতে পেতাম ক্কারী হাবিবুল্লাহ বেলালীর কোরান তেলোয়াত (এখন বোধ হয় বাজতে থাকে সাঈদীর ওয়াজের ক্যাসেট, কে জানে!)। কেউ সেগুলো বন্ধ করার সাহসটুকু দেখাতে পারত না। খোদ্ সৃষ্টিকর্তার বাণী বলে কথা! শুধু এই দৃষ্টান্ত থেকেই বোঝা যায় বিজ্ঞানমনষ্ক সমাজ নির্মাণে আমরা কতটুকু এগুতে পেরেছি। যাহোক, সেদিন আমিও তন্ময়ের পাশে ওই ক্যাসেটের দোকানে দাঁড়িয়ে নিজের 'বালা মুসিবৎ' দূর করার মানসেই বোধ হয় সাঈদীর ওয়াজের প্রতি মনোযোগী হলাম। ভদ্রলোক বয়ান করেন ভাল। বাংলাদেশের হতদরিদ্র লোকগুলো দূর-দূরান্ত থেকে কিসের আশায় তার বয়ান শুনতে পাগলের মত সাঈদীর ওয়াজে ছুটে যান, তা বোঝা যায়। মানুষের 'আবেগ আর দুর্বলতা' নিয়ে খেলতে পারেন বটে ভদ্রলোক। কখনও তার প্রিয় নবীজীর ওপর কাফেরদের অত্যাচারের ফিরিস্তি দিতে দিতে হাউ মাউ করে কাঁদতে থাকেন, আবার কখনও বা ইহুদি-নাসারাদের ওপর প্রতিশোধ স্পৃহায় অগ্নিশর্মা হন। নামাজ-রোজার ফজিলত থেকে শুরু করে নারীদের বেপর্দা চলাফেরার বিপদ-সবই আছে তার বয়ানে। এ পর্যন্ত সবই ঠিক ঠাক ছিল; বয়ান করতে করতে ভদ্রলোক 'সবজান্তা শমশেরের'-এর মতই দর্শন আর বিজ্ঞানের জগতেও ঢুকে পড়লেন। কাঁপা কাঁপা গলায় ফিরিস্তি দিতে থাকলেন আল্লাহতালার সৃষ্টি কত নিখুঁত, কত ‘পারফেক্ট ডিজাইন’। কোথাও কোন খুঁত নেই! তারপরেও নাস্তিকেরা কন যে আল্লাহয় বিশ্বাস করে না! সাঈদী সাহেব খোদা-তালার সৃষ্টি যে কত নিখুঁত তা প্রমাণ করার জন্য বেছে নিলেন মানবদেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ 'চোখ'কে। আমি তো অবাক। ভাবলাম একবিংশ শতকের 'উইলিয়াম প্যালে'র আবির্ভার হল নাকি! মনোযোগ দিয়ে শুনলাম হুজুর কি বলেন। পাকা দার্শনিকের মত বলে চললেন, এমন নিখুঁত অঙ্গ নাকি কোথাও নেই। খোদাতালার অপূর্ব ডিজাইন। বিজ্ঞানীরা হাজার চেষ্টাতেও অমনতর চোখ কখনও তৈরি করতে পারেনি, পারবেও না ইত্যাদি।
আমি মনে মনে হাসলাম। বুঝলাম আধুনিক বিজ্ঞান কিছুই তার পড়া হয়নি, যদিও আইডি (ID বা Intelligent Design) বা 'বুদ্ধিমত্ত পরিকল্প/নকসা' নামধারী আধুনিক সৃষ্টিবাদীদের ভুল প্রচারণাকে গ্রহণ করেছেন বেশ ভালভাবেই। বিজ্ঞানীরা বলেন সাঈদীর মত লোকেরা চোখকে যতটুকু নিখুঁত ভাবেন, সেরকম মোটেই নয়। প্রাণীদেহে চোখের উদ্ভব একদিনে হয়নি, হয়েছে দীর্ঘকালের বিবর্তনের পথ ধরে। আর বিবর্তন বা প্রাকৃতিক নির্বাচন যেহেতু শুধুমাত্র বিদ্যমান বৈশিষ্ট্যগুলোর ওপর ভিত্তি করে দীর্ঘ সময় ধরে পরিবর্তিত এবং পরিবর্ধিত হয়, তাই খুব যুক্তিসঙ্গত কারণেই প্রাণীদেহে অনেক ত্রটিপূর্ণ অঙ্গপ্রতঙ্গ দেখা যায়। মানুষের চোখও তার ব্যাতিক্রম নয়। মানুষের চোখের অক্ষিপটের ভিতরে একধরনের আলোগ্রাহী কোষ আছে যারা বাইরের আলো গ্রহণ করে এবং তারপর একগুচ্ছ অপটিক নার্ভের মাধ্যমে তাকে মস্তিষ্কে পৌঁছোনোর ব্যবস্থা করে, যার ফলে আমরা দেখতে পাই। মানুষের চোখ যদি কোন বুদ্ধিমান স্রষ্টার 'সর্বাঙ্গ সুন্দর ও নিখুঁত নকসা' (perfect design) হত তা হলে নিশ্চয়ই জালের মত করে ছড়িয়ে থাকা এই স্নায়ুগুলোকে আলোগ্রাহী কোষগুলোর সামনের দিকে বসানো থাকত না! কারণ এ ধরনের নকসায় অপটিক নার্ভের জালিতে বাধা পেয়ে আলোর একটা বড় অংশ ফিরে যায় আর আমরা এমনিতে যতখানি দেখতে পেতাম তার থেকে কম দেখতে পাই এবং এর ফলে আমাদের দৃষ্টির মান অনেক কমে যাবে! কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, বাস্তবেই আমাদের চোখ ওরকম। আমাদের অক্ষিপটের ঠিক সামনে এই স্নায়ুগুলো জালের মত ছড়ানো থাকে, শুধু তাই না, এই স্নায়ুগুলোকে যে রক্তনালীগুলো রক্ত সরবরাহ করে তারাও আমাদের অক্ষিপটের সামনেই বিস্তৃত থাকে, এর ফলে আলো বাধা পায় এবং আমাদের দৃষ্টিশক্তি কিছুটা হলেও কমে যায়। শুধু তাই নয়, স্নায়ুগুলোর এই অসুবিধাজনক অবস্থানের কারণে আমাদের চোখে আরেকটি বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ স্নায়বিক জালটি মস্তিষ্কে পৌঁছোনোর জন্য অক্ষিপটকে ফুটো করে তার ভিতর দিয়ে পথ করে নেয়। এর ফলে একটি অন্ধবিন্দুর (blind spot) সৃষ্টি হয়।
চিত্র : চোখের ভেতর তৈরি হওয়া অন্ধ স্পট
আমাদের প্রত্যেকের চোখেই এক মিলিমিটারের মত জায়গা জুড়ে এই অন্ধবিন্দুটি রয়েছে, আমরা আপাততভাবে বুঝতে না পারলেও ওই স্পটটিতে আসলে আমাদের দৃষ্টি সাদা হয়ে যায়। মানুষের চোখের আরও সমস্যা আছে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে দৃষ্টিশক্তি কমতে শুরু করে। দেখা দেয় দূরদৃষ্টি বা ক্ষীণদৃষ্টিসহ নানা ধরনের সমস্যার। এর কারণ হচ্ছে আমাদের কর্নিয়ার মধ্যে সংরক্ষিত তরল সময়ের সাথে সাথে তার স্বচ্ছতা হারিয়ে ফেলে। চুরন্ধৃ বা আইরিস এবং লেন্সের ফোকাস নিয়ন্ত্রণকারী মাংসপেশীগুলোর গতিশীলতা সময়ের সাথে সাথে অনেক কমে যায়; লেন্স ঝাপসা হয়ে আসে, রঙের ব্যতিচার ঘটে। শুধু তাই নয়, যে রেটিনা আমাদের চারপাশের ছবিগুলোকে আমাদের মস্তিষ্কে স্থানান্তরের জন্য দায়ী - অনেক সময় অতি সহজেই চোখের পেছন থেকে বিযুক্ত বা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, যার ফলে এমনকি অন্ধত্ব পর্যন্ত ঘটতে পারে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন সামান্য 'রি-ইঞ্জিনিয়ারিং' এবং 'রি-ডিজানিং' এই ব্যাড ডিজাইন থেকে মুক্তি দিতে পারে। নিচের ছবিতে প্রকৌশলবিদের দৃষ্টিকোণ থেকে চোখের ডিজাইন জনিত সমস্যার সমাধান দেখানো হয়েছে।
চিত্র : কোন সর্বজ্ঞ স্রষ্টার নিখুঁত সৃষ্টিতে নয়, বরং প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে চোখের উদ্ভব হওয়ায় আমাদের চোখে অনেক ধরনের 'ডিজাইন-জনিত' ত্রুটি রয়ে গেছে, যেগুলোর অনেকগুলোই ইঞ্জিনিয়ারের দৃষ্টিকোণ থেকে সুচারুভাবে 'রি-ডিজাইন' করে সমাধান করা সম্ভব।
সাঈদী সাহেব যাই বলুন না কেন, অনেক প্রাণীর চোখই তথাকথিত 'সৃষ্টির সেরা জীব' মানুষের চোখের চেয়ে উন্নত। কুকুর, বিড়াল কিংবা ঈগলের দৃষ্টিশক্তি যে মানুষের চোখের চেয়ে বেশি তা সবাই জানে। মানুষ তো বলতে গেলে রাতকানা, কিন্তু অনেক প্রাণীই আছে রাতে খুব ভাল দেখতে পায়। আবার অনেক প্রাণীই আছে যাদের চোখে কোন অন্ধবিন্দু নেই। যেমন, স্কুইড বা অক্টোপাসের কথাই ধরা যাক। এদের মানুষের মতই একধরনের লেন্স এবং অক্ষিপটসহ চোখ থাকলেও অপটিক নার্ভগুলো অক্ষিপটের পিছনে অবস্থান করে এবং তার ফলে তাদের চোখে কোন অন্ধবিন্দুর সৃষ্টি হয়নি। আসলে বিবর্তন তত্ত্বের মাধ্যমে আমাদের চোখের এই সীমাবদ্ধতা বা ত্রুটিকে খুব সহজেই ব্যাখ্যা করা যায়। বিবর্তন কাজ করে শুধুমাত্র ইতোমধ্যে তৈরি বা বিদ্যমান গঠনকে পরিবর্তন করার মাধ্যমে, সে নতুন করে কিছু সৃষ্টি বা বদল করতে পারে না। মানুষের মত মেরুদন্ডী প্রাণীর চোখ সৃষ্টি হয়েছে মস্তিষ্কের বাইরের দিকের অংশকে পরিবর্তন করে যা অনেক আগেই সৃষ্টি হয়েছিলো, বহুকাল ধরে বিবর্তন প্রক্রিয়ায় মস্তিষ্কের এই সংবেদনশীল কোষগুলো অক্ষিপটের আকার ধারণ করলেও মস্তিষ্কের পুরোনো মূল গঠনটি তো আর বদলে যেতে পারেনি, তার ফলে এই জালের মত ছড়িয়ে থাকা স্নায়ুগুলোও তাদের আগের অবস্থানেই রয়ে গেছে। কিন্তু অন্যদিকে স্কুইড জাতীয় প্রাণীর চোখ বিবর্তিত হয়েছে তাদের চামড়ার অংশ থেকে, মস্তিষ্কের অংশ থেকে নয়। এক্ষেত্রে ত্বকের স্নায়ুগুলো মস্তিষ্কের মত ঠিক বাইরের স্তরে না থেকে ভিতরের স্তরে সাজানো থাকে, আর এ কারণেই স্নায়ুগুলো মলাষ্কের চোখের অক্ষিপটের সামনে নয় বরং পিছনেই রয়ে গেছে। আমাদের চোখ যদি এভাবে লাখ লাখ বছর ধরে প্রাকৃতিভাবে বিবর্তিত না হয়ে কোন পূর্বপরিকল্পিত ডিজাইন থেকে তৈরি হত তাহলে হয়তো চোখের এত সীমাবদ্ধতা নিয়ে বিজ্ঞানীদের মাথা ঘামাতে হত না।
সাঈদী সাহেব যে বলেছেন বিজ্ঞানীরা কখনো চোখ তৈরি করতে পারবে না, এটিও স্রেফ মিথ্যাচার। মানুষের চোখের চেয়ে শক্তিশালী 'চোখ' অনেক আগেই তৈরি করা হয়েছে। আসলে মানুষের চোখ অপটিক্যাল ইমেজিং ডিভাইস হিসাবে খুবই দুর্বল -কেবল লাল থেকে বেগুণী বর্ণালীর সীমায় সংবেদনশীল। ফলে মানুষ বিকিরণ স্পেক্ট্রামের এক ক্ষুদ্র অংশ (৪০০-৭০০ ন্যানোমিটার*) মাত্র দেখতে পায় (1 nm = 10-9m)। বিজ্ঞানীদের তৈরি অবলোহিত টেলিস্কোপগুলো এর চাইতে অনেক বেশি পরিসরে সংবেদনশীল। ওগুলোর কথা না হয় বাদ দিন, বাজারে পাওয়া যে কোন সস্তা দামের ক্যামেরাও মানুষের চোখের থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী। আর যে বৈজ্ঞানিক ক্যামেরাগুলো জ্যোতির্বিজ্ঞানের জগতে ব্যবহৃত হচ্ছে (বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গ কিংবা বর্ণালী বিশ্লেষণ ও উদ্ঘাটনে), সেগুলো মানুষের চোখের চেয়ে হাজারগুণ শক্তিশালী।
মানবদেহে এ ধরনের 'ত্রুটিপূর্ণ ডিজাইনের' অনেক প্রমাণ হাজির করা যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রমাণ হল মানবদেহে থেকে যাওয়া বিলুপ্ত প্রায় অঙ্গের অস্তিত্ব¡। যেমন, আমাদের পরিপাকতন্ত্রের অ্যাপেন্ডিক্স কিংবা পুরুষের স্তনবৃন্ত। এগুলো তো দেহের কোন কাজে লাগে না, বরং বর্তমানে অ্যাপেন্ডিসাইটিস রোগের বড় উৎসই হল অ্যাপেন্ডিক্স নামের বাড়তি প্রত্যঙ্গটি। তা হলে এগুলো দেহে থাকার পেছনে কি ব্যাখ্যা? একজন সর্বজ্ঞ স্রষ্টা কিংবা বুদ্ধিদীপ্ত পরিকল্পকের (ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনারের) সৃষ্টি এত বুদ্ধিহীন (আনইন্টেলিজেন্ট) হবে কেন যে ত্রুটিগুলো ছা-পোষা সাধারণ মানুষের চোখেও ধরা পড়ে? শুধু তো অ্যাপেন্ডিক্স নয়, আমাদের দেহে রয়ে গিয়েছে চোখের নিক্টিটেটিং ঝিল্লি, কান নাড়াবার কিছু পেশী, ছেদক, পেষক এবং আক্কেল দাঁত, মেরুদন্ডের একদম নিচে থেকে যাওয়া লেজের হাড়, সিকামসহ শতাধিক নিষ্ক্রিয়, অবান্তর এবং বিলুপ্ত অঙ্গাদি। কোন মহান 'সৃষ্টি তত্ত্ব' কিংবা 'ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন' দিয়ে এগুলো ব্যাখ্যা করা যায় না। এ মুহূর্তে এগুলোকে সফলভাবে ব্যাখ্যা করতে পারে কেবল বিবর্তন তত্ত্ব। দেখা গেছে, এপেন্ডিক্স এবং সিকাম মানুষের কাজে না লাগলেও তৃণভোজী প্রাণীদের খাদ্য হজম করার জন্য অত্যাবশ্যকীয় অঙ্গ। প্রাচীন নরবানর যেমন Australopithecus robustus তৃণসহ সেলুলোজ জাতীয় খাদ্য প্রচুর পরিমাণে গ্রহণ করত। এখনো শিম্পাঞ্জীরা মাংশাসী নয়। কিন্তু মানুষ খাদ্যাভাস বদল করে লতা পাতার পাশাপাশি একসময় মাংশাসী হয়ে পড়ায় দেহস্থিত এই অঙ্গটি ধীরে ধীরে একসময় অকেজো এবং নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। তাই এখন অ্যাপেন্ডিক্স এবং সিকাম আমাদের কাজে না লাগলেও রেখে দিয়ে গেছে আমাদের জন্য অতি প্রয়োজনীয় ‘বিবর্তনের সাক্ষ্য’। এ ধরনের মন্দ নকসার দৃষ্টান্তগুলো বিবর্তন ছাড়া আর কোনভাবেই ব্যাখ্যা করা যায় না।
চিত্র: অ্যাপেন্ডিক্স দেহের কোনই কাজে লাগে না, বরং বর্তমানে অ্যাপেন্ডিসাইটিস রোগের বড় উৎসই হল এই অ্যাপেন্ডিক্স।
সাযেন্টিফিক আমেরিকানের ২০০১ সালের মার্চ সাংখ্যায় এস জে ওলশ্যাঙ্কি, ব্রুস কেয়ার্নস এবং রবার্ট এন বাটলার লিখিত 'If Humans were build to last' শিরোনামে একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। সে প্রবন্ধে লেখকত্রয় মানবদেহের বিভিন্ন 'ব্যাড ডিজাইন' নিয়ে বিস্তৃতভাবে আলোচনা করেন। শুধু তাই নয়, একজন দক্ষ প্রকৌশলবিদের দৃষ্টিকোণ থেকে তারা সে সমস্ত ডিজাইনজনিত ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলোর সমাধান দিয়ে বলেছেন, 'এভাবে ত্রুটিগুলো সারিয়ে নিতে পারলে সবারই একশ বছরের বেশি দীর্ঘজীবন লাভ সম্ভব।' প্রবন্ধটি থেকে কিছু উদাহরণ হাজির করার লোভ সামলাতে পারছি না। দেখা গেছে আমাদের দেহে ত্রিশ বছর গড়াতে না গড়াতেই হাড়ের ক্ষয় শুরু হয়ে যায়, যার ফলে হাড়ের ভঙ্গুরতা বৃদ্ধি পায়, একটা সময় অস্টিওপরোসিসের মত রোগের উদ্ভব হয়। আমাদের বক্ষপিঞ্জরের যে আকার তা দেহের সমস্ত অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো রক্ষা করার জন্য যথেষ্ট নয়। শুধু হাড় নয়, আমাদের দেহের মাংসপেশীও যথেষ্ট ক্ষয়প্রবণ। বয়সের সাথে সাথে আমাদের পায়ের রগগুলোর বিস্তৃতি ঘটে যার ফলে প্রায়শই পায়ের শিরা ফুলে ওঠে। সন্ধিস্থল বা জয়েন্টগুলোতে থাকা লুব্রিকেন্ট পাতলা হয়ে সন্ধিস্থলের ক্ষয় ত্বরান্বিত করে। পুরুষের প্রোস্টেট গ্ল্যান্ড সময়ের সাথে সাথে বৃদ্ধি পেয়ে প্রস্রাবের ব্যাঘাত ঘটায়।
চিত্র: সায়েন্টিফিক আমেরিকানের ২০০১ সালের মার্চ সংখ্যায় মানবদেহের বিভিন্ন 'দুর্বল ডিজাইন' নিয়ে আলোচনা করা হয়।
ওলশ্যাঙ্কি, কেয়ার্নস এবং বাটলার প্রবন্ধটিতে দেখিয়েছেন ত্রুটি বিচ্যুতিগুলো দূর করার পর 'পারফেক্ট ডিজাইনের' অধিকারী মানবদেহের চেহারা ঠিক কিরকম হতে পারে। এ ধরনের দেহে থাকবে বিরাট কান, তারসংযুক্ত চোখ, বাঁকানো কাঁধ, সামনের দিকে ঈষৎ ঝুঁকে পড়া কবন্ধ, ক্ষুদ্রকায় বাহু এবং কাঠামো, সন্ধিস্থলের চারিদিকে অতিরিক্ত আস্তরণ বা প্যাডিং, অতিরিক্ত মাংসপেশী, পুরু স্পাইনাল ডিস্ক, রিভার্সড হাঁটুর জয়েন্ট ইত্যাদি। তিনি হয়ত আমাদের বর্তমান তথাকথিত 'সৌন্দর্যের স্ট্যন্ডার্ড' অনুযায়ী ভুবনমোহিনী প্রিয়দর্শিনী হিসেবে বিবেচিত হবেন না, কিন্তু শতায়ু হবার জন্য সঠিক কাঠামোর অধিকারী হিসেবে গ্রহণযোগ্য হতেই পারেন।
চিত্র: মানবদেহের বিভিন্ন 'দুর্বল ডিজাইন' দূর করে শতায়ুর অধিকারী কাঠামো বানানো সম্ভব (সায়েন্টিফিক আমেরিকান, ২০০১ সালের মার্চ সংখ্যার সৌজন্যে)।
মন্দ ও ত্রুটিপূর্ণ নকসার উদাহরণ আরো অনেক আছে। মহিলাদের জননতন্ত্র প্রাকৃতিকভাবে এমনভাবে বিবর্তিত হয়েছে যে অনেকসময়ই নিষিক্ত স্পার্ম ইউটেরাসের বদলে অবাঞ্ছিতভাবে ফ্যালোপিয়ান টিউব, সার্ভিক্স বা ওভারিতে গর্ভসঞ্চার ঘটায়। এ ব্যাপারটিকে বলে 'একটোপিক প্রেগন্যান্সি'। ওভারী এবং ফ্যালোপিয়ান টিউবের মধ্যে অতিরিক্ত একটি গহবর থাকার ফলে এই ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এটি মানবদেহে ‘ব্যাড ডিজাইনের’ চমৎকার একটি উদাহরণ। আগেকার দিনে এ ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হলে শিশুসহ মায়ের জীবন সংশয় দেখা দিত । এখন চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে আগে থেকেই গর্ভাপাত ঘটিয়ে মায়েদের জীবনহানীর আশঙ্কা অনেকটাই কাটিয়ে তোলা গেছে।
চিত্র: 'একটোপিক প্রেগন্যান্সি': মানবদেহের মন্দ নকসার আরেকটি উদাহরণ।
মানুষের ডি এন এ তে 'জাঙ্ক ডিএনএ' নামের একটি অপ্রয়োজনীয় অংশ আছে যা আমাদের আসলে কোন কাজেই লাগে না। ডিস্ট্রফিন জিনগুলো শুধু অপ্রয়োজনীয়ই নয়, সময় সময় মানবদেহে ক্ষতিকর মিউটেশন ঘটায়। ডি এন এ -এর বিশৃক্সক্ষলা 'হান্টিংটন ডিজিজের' এর মত বংশগত রোগের সৃষ্টি করে। আমাদের গলায় মুখ গহব্ব বা ফ্যারিংস এমনভাবে তৈরি যে একটু অসাবধান হলেই শ্বাস নালীতে খাবার আটকে আমরা 'চোক্' করি। এগুলো সবই প্রকৃতির মন্দ নকসার বা 'ব্যাড ডিজাইনের' উদাহরণ।
ব্যাড ডিজাইনের উদাহরণ শুধু জীববিজ্ঞানে নয়, জ্যোতির্বিদ্যাতেও দৃশ্যমান। বিশ্বাসীরা যদিও সব কিছুর পেছনেই 'মানব সৃষ্টির' সুমহান উদ্দেশ্য খোঁজার চেষ্টা করেন, তবে তাদের যুক্তি কোনভাবেই ধোপে টেকে না। প্রাণ সৃষ্টির উদ্দেশ্যই যদি মুখ্য হয়, তবে মহাবিস্ফোরণের পর ঈশ্বর কেন ৭০০ কোটি বছর লাগিয়েছিলেন এই পৃথিবী তৈরি করতে, আর তারপর আরো ৬০০ কোটি বছর লাগিয়েছিলেন 'মানুষের উন্মেষ' ঘটাতে তার কোন যৌক্তিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। এটি নিঃসন্দেহেই মন্দ নকসায়নের বা ব্যাড ডিজাইনের উদাহরণ। পৃথিবী সৃষ্টির ইতিহাসের পরিক্রমায় আমরা আজ জানি, মানুষ তো পুরো সময়ের একশ ভাগের এক ভাগেরও কম সময় ধরে পৃথিবীতে রাজত্ব করছে। তারপরও মানুষকে এত বড় করে তুলে ধরে মহাবিশ্বকে ব্যাখ্যা করার কি প্রয়োজন? অথচ তথাকথিত মনুষ্যকেন্দ্রিক যুক্তির দাবিদারেরা তা করতেই আজ সচেষ্ট। আর তা ছাড়া প্রাণ কিংবা পরিশেষে মানব সৃষ্টির উদ্দেশ্যই যদি মুখ্য হয়, তবে বলতেই হয় মহান সৃষ্টিকর্তা তাঁর সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় সৃষ্টির চেয়ে অপচয়ই করেছেন বেশি। বিগ ব্যাং ঘটানোর কোটি কোটি বছর পর পৃথিবী নামক একটি সাধারণ গ্রহে প্রাণ সঞ্চার করতে গিয়ে অযথাই সারা মহাবিশ্ব জুড়ে তৈরি করেছেন হাজার হাজার, কোটি কোটি ছোট বড় নানা গ্রহ, উপগ্রহ, গ্রহাণুপুঞ্জ - যারা আক্ষরিক অর্থেই আমাদের সাহারা মরুভূমির চেয়েও বন্ধ্যা, ঊষর আর প্রাণহীন। শুধু কোটি কোটি প্রাণহীন নিস্তব্ধ গ্রহ-উপগ্রহ তৈরি করেই ঈশ্বর ক্ষান্ত হননি, তৈরি করেছেন অবারিত শূন্যতা, গুপ্ত পদার্থ (Dark matter) এবং গুপ্ত শক্তি (Dark energy)-যেগুলো নিষ্প্রাণ তো বটেই, এমনকি প্রাণ সৃষ্টির মহান উদ্দেশ্যের প্রেক্ষাপটে নিতান্তই বেমানান। আসলে এ ব্যাপারগুলোকেও বিবর্তনবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার না করলে কোন সমাধানে পৌঁছুনো যাবে না। আমরা যতই নিজেদের সৃষ্টির কেন্দ্রস্থলে বসিয়ে সান্তনা খোঁজার চেষ্টা করি না কেন, এই মহাবিশ্ব এবং এই পৃথিবীতে প্রাণের উদ্ভবের পেছনে আসলে কোন ডিজাইন নেই, পরিকল্পনা নেই, নেই কোন বুদ্ধিদীপ্ত সত্তার সুমহান উদ্দেশ্য। প্রখ্যাত জীববিজ্ঞানী এবং অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির 'বিজ্ঞানের জন-ধীশক্তি বিষয়ক' বিভাগের অধ্যাপক ড. রিচার্ড ডকিন্স সেটিকেই স্পষ্ট করেছেন নিচের ক’টি অসাধারণ পঙক্তিমালায় (সায়েন্টিফিক আমেরিকান, নভেম্বর, ১৯৯৫:৮৫):
'আমাদের চারপাশের বিশ্বজগতে বিদ্যমান বৈশিষ্ট্যগুলো দেখলেই বোঝা যায় এর মধ্যে কোন পরিকল্পনা নেই, উদ্দেশ্য নেই, নেই কোন শুভাশুভের অস্তিত্ব; আসলে অন্ধ, করুণাহীন উদাসীনতা ছাড়া এখানে আর কিছুই চোখে পড়ে না'।
মন্তব্য
শেষের বক্তব্যটা সবথকে ভাল লাগল। আমার মনে হয় কার্ল সাগানেরও একইরকম একটা কমেন্ট পড়েছিলাম।
যাহোক গুড ডিজাইন বলে বিজ্ঞানীরা যেটা দাবী করেছেন, সেটাও বর্তমান 'ডিজাইনের' কিছুটা উন্নতরূপ ছাড়া আর কিছুই নয়।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
আসলে 'ডিজাইন' শব্দটাতেই আমার আপত্তি আছে, যেমনি আপত্তি আছে 'সৃষ্টি' শব্দটিতে। জীববিজ্ঞানের পয়েন্ট অব ভিউ থেকে কোন কিছুই আসলে সৃষ্টি হয়নি, বরং 'উৎপন্ন' হয়েছে, বিবর্তিত হয়েছে।
আরেকটি ব্যাপার হল, ডিজাইনের কথা বললেই ডিজাইনারের প্রসংগ এসে পড়ে, যেমনিভাবে সৃষ্টির কথা বললেই 'সৃষ্টিকর্তা'র প্রসংগ এসে যায়। বিতর্ক তখন ঢুকে পড়ে বিজ্ঞান ছেড়ে দর্শনে। বিবর্তন কোন ধরনের সৃষ্টিকর্তা সম্বন্ধে নিরাবেগ থেকে ফোকাস করে পদ্ধতির উপরে ......
============================
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
ছেলেবেলাতে ফাদার টিম নটরডাম কলেজে বায়োলজী পড়াতেন। সামারে ছোট একটা ননক্রেডিট কোর্সও দিতেন ধর্ম-নিরপেক্ষ মরাল সায়েন্সে; এখানে উপস্তিতি বাধ্যতামূলক ছিল। ভাবতাম তিনি এই ক্যাথলিক প্রতিষ্ঠানে কি করে বিবর্তনের বিষয়টা আলোচনা করবেন। কিন্তু সিলেবাসে সেটা তখন না থাকাতে আর জানতে পারিনি এ বিষয়ে তাঁর মত। তিনি বিতর্ক ক্লাবেরও মডারেটর ছিলেন। একবার বন্ধুদের বললাম, পরের সপ্তাহে চল আমরা বিষয় ঠিক করি ঃ "বিধাতা কি আছেন?" আমার বন্ধুরা কেউ রাজী হয় নি।
কিন্তু স্তন্যপায়ী প্রাণীদের চোখের গঠন দেখে তখনি আমার চোখ ছানাবড়া। ব্যাপারটা কি ? বিধাতারই কাজ হোক, বা প্রকৃতির র্যান্ডম সিলেকশন, আলোক সংবেদনশীল রড আর কোন-এর সামনে আলোর গতিপথে কেন এত সেলের জটলা? তাহলে আলো তো সেখানেই আটকে যাবে। এটা ভালো ডিজাইন না; না বিধাতার বুদ্ধির, না 'সারভাইবাল অব দি ফিটেস্ট' ফর্মুলার অনুকুলে। অন্য দিকে এটাও মনে হচ্ছিল ঃ এটাই বা কম কি, শুধু বহু শতকে এক একটা র্যান্ডম মিউটেশনে এত জটিল একটা অঙ্গ কি তৈরি হতে পারে ? হয়তো প্রচলিত ধর্মের কাহিণীর মত একবারে নয়, মানুষের সৃষ্টির পেছনে হয়তো সত্যি সেই মিস্তিরি আছে, যে 'চাবি মাইরা দিল ছাইড়া', এবং বিগ ব্যাং- এর পরে আস্তে আস্তে সব কিছু একটা পরিকল্পনা অনুসারেই এগিয়েছে। বিবর্তন সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়ক হয়েছে মাত্র এবং সব জায়গাতে হয়ত সম্ভাবনা সূত্রের দীর্ঘসূত্রিতার জন্য অপেক্ষা করে নি। থার্মডায়নামিক্সের দ্বিতীয় সূত্র বলে- বিশ্বের বিশৃঙ্খলা তো ক্রমশঃ বাড়বে, কিন্তু প্রানীরা তো সেলফ-অরগানাইজড কমপ্লেক্স সিস্টেম, যাতে এন্ট্রপি বা বিশৃঙ্খলা অংশকের সমষ্টির চাইতে কম মনে হয়।
অভিজিৎবাবুকে ধন্যবাদ আজ এত বছর পরে আবার বিষয়টাতে আমার মন ফিরিয়ে নিলেন। ডকিন্স এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে শোরগোল করেছেন শুনেছি; তাঁর কোন বই কখনো পড়ি নি, সময় পাই নি বলে। এবার ঈদের ছুটিতে তাই একটু অন্তর্জালী যাত্রা, বিষয়টা নিজের কাছেই পরিষ্কার করতে।
চোখের ব্যাপারটাই আমাকে বেশি ভাবিয়েছে এতদিন।কিন্তু উইকিতে গিয়ে দেখলামঃ
Although the eye remains a common and popular example of complexity in arguments against evolution, some intelligent design and creationism advocates have abandoned the eye as an example of "irreducible complexity". As the detail and history of eye evolution have become better understood, its role in these circles has declined and been replaced by molecular and microscopic structures such as the flagellum. However, much as with the eye, research into these smaller-scale structures has also uncovered details of their evolution].
http://en.wikipedia.org/wiki/Evolution_of_the_eye
যাক, নিশ্চিন্ত হওয়া গেল। কিন্তু সেই মুর্গী আগে না ডিম আগে; প্রোটীনের কোডবাহী নিউক্লিয়াইক এসিড (ডি, এন, এ/আর,এন,এ), নাকি নিউক্লিয়াইক এসিড তৈরীর জন্য অবশ্য প্রয়োজনীয় প্রোটীন এঞ্জাইম, কে আগে এলো, কি ভাবে? এ প্রশ্নেরও হয়ত একটা উত্তর মিলেছে, উভয়ের মাঝামাঝি কোন অণুর সন্ধান মিলেছে। এখনো দেখি নি।
মনে হয় সাঈদী আর শামসের সাহেবের জন্য দুঃসংবাদ অপেক্ষা করছে। তাদের জন্যও যারা নিজেদের নির্বাচিত গোষ্ঠি মনে করে, বলে বেড়ায় বিধাতার সঙ্গে তাদের চুক্তি আছে, প্যালেস্টাইন শুধু তাদের, সব মানুষের সঙ্গে একসাথে বসবাসের জন্য নয়।
আর হ্যাঁ, একশ বছর কোন পাগল বাঁচতে চায়। ডি,এন, এর প্রান্তে আছে টেলোমেয়ার, যা প্রতিবার রেপ্লিকেশনে একটু, একটু করে ক্ষয়ে যায়, শেষ ফল সেলের মৃত্যু বা ক্যান্সার। প্রকৃতি কোন একক প্রাণীর ফুর্তির জন্য বিবর্তনে এগুচ্ছে না, এটা শুধু বংশ পরম্পরায় গোষ্ঠির স্বার্থে। অর্থাৎ বাচ্চাকে বড় করা পর্যন্তই আপনার দাম। একশ বছর বাঁচতে হলে নিজেকেই ব্যবস্থা করতে হবে।
চোখ আর এগুবার দরকার কি ? এখন টেকনোলজী দিয়ে মানুষ তার সব ইন্দ্রীয় সম্প্রসারিত করে নিয়েছে, নিচ্ছে। আর সামনে রড-কনের সামনে এতসব লকর-ঝক্কর থাকার পক্ষেও যুক্তি আছে।
http://www.detectingdesign.com/humaneye.html
ধন্যবাদ আপনাকে যথারীতি সুচিন্তিত মতামত প্রদানের জন্য। আমি সব সময়ি আপনার কমেন্ট অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে পড়ি। এবারো ব্যটিক্রম হল না। তবে উপরোক্ত মন্তব্যের একটি বিষয়ে আমি একটু আলোকপাত করতে চাইছি। এটি কোন বিতর্ক বা দ্বন্দ্ব নয়, বরং আপনার চিন্তাভাবনারই বর্ধিত ব্যাখ্যা। আপনি বলেছেনঃ
আসলে এ ব্যাপারটিকে তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সুত্রের লঙ্ঘন না ভেবে সেলফ-অরজানাইজেশনের উদাহরন হিসেবে দেখা উচিত (আপনি নিজেই তা বলেছেন)। প্রকৃতিতে অনেক সেলফ অরগানাইজেশনের উদাহরণ আছে। যেমন লবনের মধ্যে কেলাস তৈরি, গ্যালাক্সি ফরমেশন, কিংবা স্পন্টেনিয়াস ম্যাগ্নেটিজম। এগুলোর প্রত্যেকটিতেই আপাতঃভাবে এন্ট্রপি কমছে বলে মনে হলেও সার্বিকভাবে কমছে না, অর্থাৎ থার্মোডায়নামিক্সের দ্বিতীয় সূত্র লংঘিত হচ্ছে না। উঈকি পেইজেও সেলফ অর্গানাইজেশন সম্বন্ধে ভাল ধারণা পাওয়া যাবে ঃ
http://en.wikipedia.org/wiki/Self-organization
প্রানীজগতে কোষের বৃদ্ধি, কিংবা প্রানীজগতে বিবর্তন এক ধরনের সেলফ অর্গানাইজেশন ছাড়া কিছু নয়। এটা যে থার্মোডায়নামিক্সের কোন নীতিকে লঙ্ঘন করছে না, তা খুব সুন্দর ভাবে বন্যা তার 'বিবর্তনের পথ ধরে' বইয়ে পরিস্কার করেছে। আমি তার বইয়ের পরিশিষ্ট ঃ বিবর্তন সম্পর্কে প্রচলিত ভুল ধারণাগুলো অধ্যায় থেকে প্রয়োজনীয় অংশটা তুলে দিলাম ঃ
৬) বিবর্তন তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্রকে লংঘন করেঃ
এটি যারা বলেন তাদের তাপগতিবিদ্যা (Thermodynamics) এবং এর সূত্রগুলো সম্বন্ধে কোন বাস্তব ধারণা নেই। তাপগতিবিদ্যার তিনটি সুত্র আছে। এর মধ্যে দ্বিতীয় সূত্রটি বলছে : 'তাপ কখনও নিজে থেকে শীতল বস্তু হতে গরম বস্তুতে যেতে পারে না।' সূত্রটিকে অনেক সময় এভাবেও বলা হয় : 'একটি বদ্ধ সিস্টেমে এনট্রপি কখনও কমতে পারে না।'
এনট্রপি ব্যাপারটিকে অনেকসময় সাদামাটাভাবে বিশৃঙ্খলা বা disorder হিসেবে দেখানো হয়। এনট্রপি কমার অর্থ হচ্ছে সাদামাটা ভাবে বিশৃংখলা কমা। তাপগতিবিদ্যার ২য় সূত্র বলছে বদ্ধ সিস্টেমে এনট্রপি কমতে পারবে না, বাড়তে হবে।
বোঝা যাচ্ছে যে, তাপগতিবিদ্যার ২য় সূত্রটি যে ভাবে বলা হচ্ছে তা শুধু বদ্ধ সিস্টেমের জন্যই প্রযোজ্য। আমাদের বাসার রেফ্রিজেটরের উদাহরণটি হাজির করি। আমরা সবাই জানি যে, রেফ্রিজেটরে তাপকে 'উল্টো দিকে' চালিত করা হয়, অর্থাৎ, শীতল অবস্থা থেকে গরম অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়, ফলে সেখানে পানি জমে বরফ হতে পারে। বৈজ্ঞানিকভাবে এর অর্থ হচ্ছে রেফ্রিজেটরের ভিতরে এনট্রপি কমেছে। কিন্তু তাপকে এই 'উল্টো দিকে' চালিত করার জন্য রেফ্রিজেটরকে বাড়তি কিছু কাজ করতে হয়। কাজ করবার শক্তিটুকু রেফ্রিজেটরটি কোথা হতে পায়? রেফ্রিজেরটের পেছনে লাগানো মোটর আর কিছু জ্বালানী এই শক্তিটুকু সরবরাহ করে। কিন্তু এই শক্তিটুকু সরবরাহ করতে গিয়ে তারা ঘরের এনট্রপিকে বাড়িয়ে তোলে। এবারে খাতা কলম নিয়ে হিসেব কষলে দেখা যাবে পানিকে বরফ করে রেফ্রিজেটর তার ভেতরে এনট্রপি যত না কমিয়েছে, তার চেয়ে ঢের বেশী বাড়িয়ে তুলেছে ঘরের এনট্রপি। কাজেই যোগ-বিয়োগ শেষ হলে দেখা যাবে এনট্রপির নেট বৃদ্ধি ঘটেছে। কোন অনভিজ্ঞ ব্যক্তি শুধুমাত্র রেফ্রিজেটরের ভিতরটার দিকে তাকিয়ে ভাবতে পারে, এনট্রপি তো কমে গেছে, কিন্তু সামগ্রিকভাবে পুরো সিসটেম (ওপেন সিস্টেম) গোনায় ধরলে দেখবে যে, এনট্রপি আসলে কমেনি, বরং বেড়েছে।
বিবর্তনের ব্যাপারটাও তেমনি। সূর্য আমাদের এ পৃথিবীতে প্রতি নিয়ত শক্তির যোগান দিয়ে চলেছে। সেই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে জীবদেহে কোষের বৃদ্ধি ঘটে, এবং কালের পরিক্রমায় বিবর্তনও ঘটে। শুধুমাত্র জীবদেহের দিকে তাকিয়ে থাকলে মনে হবে যে এনট্রপি কমেছে। কিন্তু ঠিকমত হিসেব-নিকেশ করলে তবেই বোঝা যবে যে, এই 'আপাতঃ এনট্রপি' কমাতে গিয়ে শক্তির যোগানটা পড়ছে অনেক বেশী। কাজেই এনট্রপির আসলে নীট বৃদ্ধিই ঘটছে।
সরল অবস্থা থেকে জটিল অবস্থার উত্তরণকে যারা 'এনট্রপি কমার' অজুহাত তুলে তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্রের লংঘন ভাবেন তারাও ভুল করেন। প্রকৃতিতে সরল অবস্থা থেকে জটিল অবস্থায় উত্তরণের উদাহরণের অভাব নেই। এমনকি জড়জগতেও এধরনের 'আপাতঃ এনট্রপি' কমার উদাহরণ রয়েছে বিস্তর। ঠান্ডায় জলীয়-বাষ্প জমে তুষার কণিকায় পরিণত হওয়া, লবনের মধ্যে কেলাস তৈরী, কিংবা পাথুরে জায়গায় পানির ঝাপটায় তৈরী হওয়া জটিল নকসার ক্যাথেড্রালের অস্তিত্ব এ পৃথিবীতে বিরল নয়। কোনটির ক্ষেত্রেই তাপগতির সূত্র ব্যহত হয়নি। কাজেই কালের পরিক্রমায় সরল জীব থেকে বিবর্তিত হয়ে জটিল জীবের অভ্যুদয় কোন অসম্ভব ঘটনা নয়, নয় তাপগতিবিদ্যার লংঘন।
বন্যা বিবর্তনের উপরে আরো অনেকগুলো কমন ভুল ধারনা নিয়ে পরিশিষ্টে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেছে, পড়ে দেখতে পারেন ঃ
http://www.mukto-mona.com/Articles/bonna/book/biborton_app.pdf
============================
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
হ্যাঁ, আমার বক্তব্য সত্যি অসম্পূর্ন ছিল। কৈশোরের অপরিপক্ব বুদ্ধি, আর জ্ঞানের বিবৃতি থেকে লাফিয়ে চলে গেছি বর্তমান চিন্তায়, কোন যোগসূত্র না রেখেই (ঈদে খাবারটা বেশি হয়ে গেছিল বোধ হয়)। সেটা আপনি করে দিলেন, ধন্যবাদ। মন্তব্যে বলেছি 'অংশকের' কথা অর্থাৎ পুরো সিস্টেম নয় এটা জোর দিতে, এবং 'মনে হয়' হলো তখনকার মনে হওয়া।
প্রতিটি জৈবিক ক্রিয়া-বিক্রিয়া অণুঘটকের সাহায্যে হচ্ছে। কিন্তু প্রতিটিতেই বিশ্বের বিশৃঙ্খলা বেড়ে যাচ্ছে, তাপ বিনিময় আর তাপমাত্রার অনুপাতের যোগ-বিয়োগে ধনাত্মক অংশটাই বড় হওয়াতে। অথচ মানুষের মনে হয়ঃ আমরা প্রকৃতিকে বশ করে আমাদের আয়ত্বে নিয়ে আসছি, শৃঙ্খলা বাড়াচ্ছি বিশ্বের - এটা একটা মায়া। আমরা সাধারণ ভাবে একথা জোর দিয়ে বলতে পারলেও এন্ট্রপির কোথায় কোন মানবিক কাজে কতটুকু বাড়াচ্ছি, বা কমাচ্ছি তার গাণিতিক হিসাব কঠিন, বোধ হয় সম্ভব না এমন জটিল সিস্টেমে, রেফ্রিজারেটরের মতো সরল যন্ত্রে যদিও তা তিন লাইনের অংক।
তাপ-গতিবিদ্যার বিশৃঙ্খলা বাড়ার এই সূত্র অবশ্য পরীক্ষণলব্ধ জ্ঞান, প্রমাণযোগ্য নয় এখনো। আশা করি সেই কারণে আবার কেউ চ্যালেঞ্জ করে বসবেন না।
এন্ট্রপির নতুন মজার সংজ্ঞাও তৈরি হচ্ছে আজকাল, যেগুলো বোলৎস্মানের বা শ্যাননের সনাতন সংজ্ঞা থেকে আলাদা। ৎসালিস, রেনাই এবং আরো অনেকে এমনভাবে এন্ট্রপি সংজ্ঞায়িত করেছেন যা বিভিন্ন অংশকের মধ্যে মিথষ্ক্রিয়ার প্রতিফলন ঘটায়, এবং ফ্র্যাক্টাল সম্ভাবনা দেয় বিভিন্ন অবস্থায় সিস্টেমকে পাওয়ার। নতুন দিগন্ত।
মানুষের ডিজাইনে ভুল আছে এটা আমার চাইতে কে বেশী অনুভব করতে পারে।
সারাদিন বসে থেকে থেকে আমার পাছা ব্যথা হয়ে যায়। যদি আমাকে ডিজাইন করতে দিত তাহলে আমি আমার পাছাটা টাইটানিয়াম দিয়ে বানিয়ে নিতাম।
কি মাঝি? ডরাইলা?
হুমম, আর হৃদয়টা প্লাস্টিক দিয়ে। তাইলে ছ্যাকা খাওনের ডর থাকত না
=========================
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
নাহ্ প্লাস্টিক দিয়ে বানালে সমস্যা ছিল। ছ্যাকা খাইতে খাইতে গলে গলে চিমসে যেত। দেখা যেত, ১২/১৩ টা ছ্যাকা খেয়ে হৃদয়টা এইটুকুন হয়ে গেছে।
তাছাড়া, ছ্যাকার ভালো দিকও আছে। মাঝে মাঝে স্মৃতি রোমন্থন করে সময় কাটানো যায়।
----
অভিজিৎ ভাই:
হার্ট হচ্ছে একটা মাসল। রক্ত পাম্প করাই এর কাজ। তাহলে হুদাই পাবলিকে এইটাকে এইসব নিউরণঘটিত ব্যাপারের সাথে জড়ালো কিভাবে? এব্যাপারে পড়াশোনা আছে আপনার? ব্যাপারটার শুরুটা কিভাবে হল? এ ব্যাপারে একটা গবেষণামুলক পোষ্ট দিয়ে ফ্যালেন।
কি মাঝি? ডরাইলা?
আমার মনে হয় হার্টের বিবর্তন বোঝার সহজতম উপায় হল মানুষ থেকে আরম্ভ করে পাখি, সরীসৃপ, মাছ থেকে বাকি অমেরুদণ্ডীদের এই পাম্পিং সিস্টেম নিয়ে পড়া। আমি খুব নিশ্চিত, আপনি ১-২ ঘণ্টায় পুরোটা বুঝে ফেলবেন।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
সবাইকে অনুরোধ করছি বন্যাদির লেখাটা পড়ে দেখতে।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
পোস্টের শুরুতেই নিজের নামটা দেখে মনে হলো একটা ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে@অভিজিৎদা
এটা মনে হচ্ছে একটা বেসিক সমস্যা ,,,বিবর্তন নিয়ে কোন প্রশ্ন করলেই সেটাকে অটোমেটিকালি 'বিবর্তন আর সৃষ্টিতত্ব' দ্বন্দ হিসেবে নিয়ে নেয়ার একটা প্রবনতা আমাদের আছে ,,, বিবর্তন নিয়ে কি কোন প্রশ্ন করা যাবেনা? তাহলেই কি সেটা সাঈদীর ওয়াজের মতো শোনাবে?আসলে বিবর্তনবাদের ফলে সৃষ্ট যে এথেইস্ট এনথুসিয়াজমটা আমরা ইদানিং দেখতে পাই, যা কিনা বিবর্তনবাদের চেয়ে স্রষ্টার অনস্তিত্ব নিয়েই বেশী আগ্রহী, সেটা বিবর্তনবাদের এগিয়ে যাওয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে ,,, প্রশ্ন তো আসতে দিতেই হবে ,,,
সত্য কথা বলতে কি বিজ্ঞান নিয়ে কিছু পড়তে গেলে তো প্রশ্ন আসবেই ,,,আর সহজবোধ্য হলে তো কথাই নেই ,,, নাইন-টেনে S=ut+0.5ft^2সূত্র দেখে অনেকেরই খটকা লাগার কথা ,,,0.5টা আসল কোথা থেকে!
সেরকম মনে করেই খুব নির্বোধ একটা প্রশ্ন জেগেছিল ,,,বন্যাদির লেখা পড়ে মনে হলো উনি হয়ত ব্যাখ্যা করতে পারবেন, তাই করেছি ,,,এরকম প্রশ্ন তো আর কনফারেন্সে করে লোক হাসাতে পারিনা ,,,হয়ত খুবই সিলি প্রশ্ন ,,,সেটার সন্তোষজনক জবাব আসলেই মনে হয় যথেষ্ট
প্রশ্নটাকে ন্যারোডাউন করতে করতে মনে হয় এভাবে বলা যায়, কোনভাবে একটা ই,এম সংবেদনশীল কোষ তৈরী হয়েছিল কোনকালে, যেটা থেকে চোখ বিবর্তিত হয়েছে। কথা হলো সেই কোষটা যে ব্যান্ডউইডথের স্পেক্ট্রাম সংবেদনশীল, তা ইএমওয়েভের মোট ব্যান্ডউইডথের লাখকোটিভাগের একভাগের মতো। এখন ই,এম ওয়েভ সংবেদনশীল একটা কোষের উৎপন্ন হবার সম্ভাবনা আর সেটার এরকম লাখকোটিভাগের একভাগ স্পেক্ট্রাম-সংবেদনশীল হবার সম্ভাবনা কতটুকু? সেদুটোর গুনফল হবে একটা প্রিমিটিভ চোখের উৎপন্ন হবার সম্ভাবনা।
এইতো !!!
আমি কিন্তু মোটেও আই,ডি'র ওকালতি করতে আসিনি।
কোন আই,ডি-বিশ্বাসী যদি এটা মনে করে যে 'ডিজাইনার মানুষকে নিঁখুতভাবে তৈরী করেছে' তাহলে উপরের উদাহরনগুলোই তাকে চুপ করিয়ে দিতে যথেষ্ট।
ধন্যবাদ। লেখা বরাবরের মতোই সুখপাঠ্য ও সহজবোধ্য হয়েছে।
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
এবার আমার লজ্জিত হবার পালা, জ্বিনের বাদশাহ। আমি কিন্তু মোটেই আপনাকে টার্গেট করে লেখাটা লিখিনি (সে রকম বোধ হলে আমি সত্যই অনুতপ্ত)। বরং বন্যার লেখার উত্তরে প্রত্যুত্তরে আপনার, হিমুর, বন্যার, দিগন্তের কমেন্টগুলো খুব প্রাসঙ্গিক মনে হওয়ায় আমি আমার একটা পুরোন লেখা চালিয়ে দিতে চেয়েছি। লেখাটা সত্যই পুরোন। সেই ফেব্রুয়ারী মাসে লেখা। আমি লেখাতায় একটা বর্ণও নতুন করে যোগ করিনি। দেখুন আপনি মিলিয়ে ঃ
http://www.mukto-mona.com/Special_Event_/Darwin_day/2007/avi_bad_design.pdf
আপানার কথা ঠিক আছে। প্রশ্ন করাকে নিরুৎসাহিত করা কোন ভাবেই উচিত নয়। আমি তা করছিও না। সত্যি বলতে কি বিবর্তনের উপরে আপনার কমেন্ট পেয়ে আমার বরং ভালই লেগেছে, সেই সাথে ভাল লেগেছে হিমুর ব্যাখ্যাও। সব কিছু হয়ত ক্ষুদ্রপরিসীমায় কভার করা যায়নি, কিন্তু তথ্যের আদান-প্রাদান আমাদের জ্ঞানের ভিত্তিকে মজবুত করেছে নিঃসন্দেহে। এই প্রক্রিয়াটা চল্মান রাখতে চাই। আপনিও রাখুন। হয়ত ভবিষ্যতে আরো মতান্তর হবে, আরো দ্বন্দ্ব বাধবে, কিন্তু সেগুলো আমরা পজিটিভলি গ্রহণ করব, এই প্রত্যাশা টুকু রাখি।
চোখ সম্বন্ধে আপনার কৌতুহল অত্যন্ত প্রশংসনীয়। শ্রবণ ন্সংবেদনশীল কানের উদ্ভব, উড্ডয়ন সংবেদনশীল পাখার উদ্ভব, কিংবা ব্যাকটেরিয়ায় মোট্র সদৃশ ফ্ল্যাজেলার উদ্ভব হয়ত সাদা চোখে খুব স্বল্প সম্ভাবনাময় এবং প্রায় অসম্ভব ব্যাপার মনে হলেও ঘটেছে। আলোক সংবেদনশীল কোষ থেকে চোখের উদ্ভবও তেমনি। হ্যা, আলোর প্রতি সংবেদনশীল একধরনের স্নায়বিক কোষ থেকে প্রথম চোখের বিকাশ শুরু হয়। তারপর হাজার হাজার বছর ধরে বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত এবং পরিবর্ধিত হতে হতে আজকে তারা এই রূপ গ্রহন করেছে। কতগুলো সংবেদনশীল কোষকে কাপের মত অবতলে যদি ঠিকমতভাবে সাজানো যায় তাহলে যে নতুন একটি আদি-চোখের উদ্ভব হয় তার পক্ষে আলোর দিক নির্ণয় করা সম্ভব হয়ে উঠে। আমরা এখনও আমাদের চারপাশে বিবর্তন প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত বিভিন্ন ধাপের চোখের অস্তিত্ব দেখতে পাই, অনেক আদিম প্রাণীর মধ্যে এখনও বিভিন্ন রকমের এবং স্তরের আদি-চোখের অস্তিত্ব দেখা যায়। কিছু এককোষী জীবে একটা আলোক-সংবেদনশীল জায়গা আছে যা দিয়ে সে আলোর দিক সম্পর্কে খুব সামান্যই ধারণা করতে পারে, আবার কিছু কৃমির মধ্যে এই আলোক-সংবেদনশীল কোষগুলি একটি ছোট অবতল কাপের মধ্যে বসানো থাকে যা দিয়ে সে আরেকটু ভালোভাবে দিক নির্ণয় করতে সক্ষম হয়। সমতলের উপর বসানো নামমাত্র আলোক সংবেদনশীলতা থেকে শুরু করে পিনহোল ক্যামেরার মত মেরুদন্ডী প্রাণীদের অত্যন্ত উন্নত চোখ পর্যন্ত সব ধাপের চোখই দেখা যায় আমাদের চারপাশে (অন্ধ গুহা মাছ মেক্সিকান টেট্রা থেকে শুরু করে সালামানদরে, নটিলাস, প্লানারিয়াম, অ্যান্টার্কটিক ক্রিল, মৌমাছি, মানুষের চোখ ইত্যাদি), এবং তা দিয়েই বিবর্তন প্রক্রিয়ার বিভিন্ন স্তর ব্যাখ্যা করা সম্ভব।
আর একটি ব্যাপার, আমি কিন্তু মনে করি না চোখের উদ্ভবের পুরো প্রক্রিয়াটাই রান্ডম। স্পেশিফিক মিউটেশন গুলো রান্ডম হতে পারে, কিন্তু তার পর বৈশিষ্ট্যগুলো ন্যাচারাল সিলেকশনের মাধ্যমে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে পড়ার ব্যাপারটি কিন্তু রান্ডম নয়, বরং ডিটারমিনিস্টিক। আদি অবস্থার কথা চিন্তা করুন। কানাদের রাজ্যে একচোখা পাইরেটই কিন্তু রাজা আর সে টিকে থাকার ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা পাবে। এভাবে অন্ধযুগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধাপে ধাপে পরিমিত ভিন্নতার মধ্য দিয়ে চোখ বিবর্তিত হতে পারে। যখনই এ ধরনের কোন পরিবর্তন - যা কিছুটা হলেও বাড়তি সুবিধা প্রদান করে, তা ধীরে ধীরে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে জনপুঞ্জে ছড়িয়ে পড়ে।
================================
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
পান্ডুলিপি পোড়ে না। -- বুলগাকভ (মাস্টার এন্ড মার্গেরিটা)
স্যরি বস্ ,,,এটা যে আপনার আগের লেখা তা জানতামনা ,,,তাই কষ্ট পাইছিলাম আমাদের আলোচনার প্রসঙ্গে সাঈদীকে আসতে দেখে ,,, নেভার মাইন্ড প্লিজ
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
ভয়ঙ্কর পোস্ট। পড়ে ভালো লাগল।
অভিজিৎ কি এখনো সচলে লিখেন?
ইউক্লিড
নতুন মন্তব্য করুন