ব্যাকরণ বিশেষ করে বাংলা ব্যাকরণের নাম শুনলে কমবেশি সবার কপালে ভাঁজ পড়বেই। তারপরও বিষয়টি নিয়ে লেখার একরকম তাগিদ বোধ করছিলাম বহুদিন থেকে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার রুগ্ন দশার অনেকগুলো উদাহরণের মধ্যে একটি উদাহরণ এই বাংলা ব্যাকরণ শিক্ষাদানের সেকেলে পদ্ধতি। ব্যাকরণের পাঠ্যপুস্তক থেকে শুরু করে পাঠ্যসূচী প্রণয়ন, পাঠদান পদ্ধতি সবকিছুতেই আধুনিকতার দারুণ অভাব। ২০০১ এ এম এ ক্লাসে স্বল্প পরিসরে স্কুল পর্যায়ে বাংলা ব্যাকরণ শিক্ষার অবস্থা নিয়ে কাজ করি । তখন ব্যাকরণ শিক্ষার ক্ষেত্রে যেসব গলদ দেখেছি এখনও তাদের কোন রকম পরিবর্তন হয়নি। আসলে যেখানে সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থাটাই অন্ত:সারশূন্য সেখানে এই একটি বিষয় সম্পর্কে আলাদা করে কিছু বলার নেই। গত পাঁচ বছর যাবত এই বিষয়টি পড়াতে গিয়ে বার বার এর আধুনিকায়নের অভাব অনুভব করেছি। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচী প্রণয়ন কমিটির রিপোর্টে (৩য় খণ্ড নিম্ন মাধ্যমিক স্তর) বলা হয়েছে যে, ব্যাকরণ শিাকে শুধুমাত্র পাঠে সীমাবদ্ধ না রেখে,ব্যাকরণের নিয়ম ও নীতি অনুসারে শিক্ষার্থীরা যাতে শুদ্ধভাবে মৌলিক রচনা লেখতে পারে এবং ভাষারীতির বিচিত্র সম্পদ সম্পর্কে উৎসাহ লাভ করে সেদিকে লক্ষ রাখেত হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় বাংলা ব্যাকরণ শুধু পাঠদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ভাষারীতির বিচিত্র সম্পদ সম্পর্কে উৎসাহের কোন প্রশ্নই আসে না। এখানে মাধ্যমিক নয় উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা যেসব ভুল করে থাকে , তাদের কিছু নমুনা নিচে তুলে ধরছি-
১. কেউ কেউ আবার না খেয়েও থাকতে হচ্ছে।
২.তাদের পরস্পর আত্মদ্বন্দ্ব ও আত্মদান নিয়ে নাটক মূল রূপে রূপায়িত হয়।
৩.যুদ্ধের প্রেক্ষাপটেই এটা রচিত করা হয়েছে।
৪. তারা মহত্ত্বতায় মানুষের মাঝে নিজেদের বিলিয়ে দেয়।
এই ধরনের ভুলের সম্মুখীন হচ্ছি হরহামেশাই।এখানে খুব সামান্যই দেওয়া হল। বাক্যে বিশেষ্য, বিশেষণ ও ক্রিয়াপদের ব্যবহারের ক্ষেত্রে এই ভুল অনেক শিক্ষিতজনের মধ্যেও দেখা যায়। ভাষা শুদ্ধ করে লেখার জন্যে ব্যাকরণ জানার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু সেই বিষয়ে জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় যাওয়ার দুঃসাহস আমার নেই। তবে এইটুকু আমাদের মানতেই হবে যে, ভাষা নিজস্ব গতিতে এগিয়ে গেলেও এর স্বাতন্ত্র্য ধরে রাখার জন্য ব্যাকরণ গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একটি শিশু ব্যাকরণ শিখে ভাষা শেখে না। সে তার পরিবেশ পরিজনের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নিজের ভাষাকে সমৃদ্ধ করে চলে। তার এই স্বত:স্ফ’র্ত ভাষা শেখার পথে ব্যাকরণের প্রয়োজন ততটুকুই , যতটুকু তাকে ভাষার শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে সাহায্য করবে।শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে যে, ৩য় শ্রেণী থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত আলাদা করে ব্যাকরণ পড়াতে তারা নিষেধ করেন, শুধু কেবল পাঠ্য বাংলা বইয়ে যে ব্যাকরণ অংশ আছে তাই পড়াতে বলেন। ২০০৬ এর আগ পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত বাংলা ব্যাকরণের কোন বই পাঠ্য ছিল না। ২০০৭-এ ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত প্রথমবারের মত কোন ব্যাকরণ বই পাঠ্য করা হয়। যদিও বইয়ের মান সম্পর্কে অনেক পশ্ন উঠেছে। এখানে যে বিষয়টি পীড়া দেয় , তা হল শিার্থীরা ৩য় শ্রেণীতে যেসব বিষয় শেখে, তাদের পুনরাবৃত্তি ঘটে বছরের পর বছর। আর এই পুনরাবৃত্তির জাতাকলে পড়ে তারাও অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। অথচ এই সময়ে ভাষার ক্ষেত্রে তাদের সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটানোর জন্য উদ্যোগ নেওয়া যেত।
আর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিষয় যেটি, তা হল বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত বইয়ের বাইরেও বাজারে আরও অনেক বই প্রচলিত আছে। এগুলোর লেখক যে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের নয় তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এগুলো আবার বোর্ডের অনুমোদনপ্রাপ্ত। বাংলাদেশে যেসব কারণে ভেজাল দ্রব্য বাজারে স্থান পায় , একই কারণে এইসব বইও মান যাচাইয়ের তোয়াক্কা না করে দিব্যি ব্যবসা করছে। এসব বই মুনীর চৌধুরী ও মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর রচিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণ বইটির এক রকম দুর্বল সংস্করণ বলা যায়। যেখানে বর্তমানে বাংলা ভাষার ব্যাকরণ বইটির উপযোগিতা নিয়েই প্রশ্ন ওঠে সেখানে তার দুর্বল সংস্করণ কী হতে পারে বলা বাহুল্য।(অসমাপ্ত)
মন্তব্য
কিন্তু তুমি যেসব উদাহরম দিলা, ওনে ব্যাকরণের সমেস্যা কি? ওনে সেন্সের অভাব দেকলাম। বড় কতা হইতাছে, ব্যাকরমেও আদুনিকতা আছেনি? কী যে কও না খালি আয়াসা আহে।
ব্যাকরণের অভাব আছে। কর্তা অনুযায়ী কোন ক্রিয়াপদ বসবে, এ জ্ঞানতো ব্যাকরণ থেকেই আসে। সেন্স বা বোধের সঠিক নির্মাণে অবশ্যই ব্যাকরণের ভূমিকা আছে।
ব্যাকরণকে সহজ করতে হবে। শিক্ষাদানপদ্ধতি বড়ই জটিল। নিপাতনে সিদ্ধ জিনিসে ভর্তি ব্যাকরণ হজম করতে করতে কখন যে বিরক্ত হয়ে ব্যাকরণ নিয়ে মাথা ঘামানো ছেড়ে দিয়েছি!
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
ঠিকাছে।
ণ-ত্ব আর ষ-ত্ব বিধান নিয়ে কিছু বলবেন না ? এটাতো একটা বড় সমস্যা বলেই বোধ হয় আমার কাছে।
----------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
আমার কাছে এই দুইটাই সবচেয়ে সহজ মনে হয়েছে, নিপাতনে সিদ্ধ ব্যাপারটা বোধ হয় এদের ক্ষেত্রে কম।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
বলাইদাদা, ঠিকাছে।
সহজ মানি, ঋ, র এবং ষ এর পর ণ, চাণক্য, মাণিক্য এইসব পইড়াতো দিন পার করসি। কিন্তু লেখার সময় কিন্ত অনেকেই আমরা খেয়াল রাখি না, কোন ন হইতেসে।
বিষয়টারে একটু ব্যবহারিক করার পক্ষে আসিলাম আর কি !
--------------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
বাংলা ২য় পত্রের কথা কৈতেছে মনে হয় ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
ভালো ব্যাকরণ বইয়ের প্রসঙ্গ দূরে থাক, যে বইগুলো বাজারে সহজলভ্য, সেগুলোতে যা লেখা আছে তাই বা ক'জন ছাত্রছাত্রী শেখে? স্কুলে শেখার ব্যাপারটা অন্য অনেককিছুর পাশাপাশি শিক্ষকের সদিচ্ছা, জানাবোঝা ও অনুসৃত পাঠদান পদ্ধতির ওপরও নির্ভর করে। আপনি মাঠপর্যায়ে কাজ করেছেন, কাজেই আপনি নিশ্চয়ই জানেন যে, বাংলা ব্যাকরণ পড়ান এমন শিক্ষকদের অনেকেই ব্যাকরণ সম্পর্কে খুব কম জানেন-বোঝেন। অর্থনৈতিক বিবেচনায় সবচাইতে সস্তা পেশায় অত জানাশোনাওয়ালা লোক চাওয়াটাও কি অত্যাশামাত্র নয়?
..................................................................................
অপরিপক্কতা সবসময় একরোখা হয়, আর পরিপক্কতা হচ্ছে সর্বগ্রাহী
-সেলিম আল দীন
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী
জানাশোনাওয়ালা লোক খুবই কম এটা সত্য। আর অত্যাশা করতে দোষ কি? অন্তত আশাটাও যদি পূরণ হয়।
ধন্যবাদ আয়েশা। বিষয়টা নিরানন্দ, কিন্তু বুঝে বলা বা লেখার আনন্দ আছে। ভাষার খনি ব্যবহারের এইটুকু যা মেহনত। পেরলেই আনন্দ রাশি রাশি।
বিষয়টা নিয়ে নিজেও বুঝি না, কেউ সেরকম করে লেখেও না। তোমার এই লেখাটা শেষ হওয়া দরকার। এখানে খসড়াটা চলুক, শেষ হলে মুদ্রিত করা যায় না?
বিদ্যমান বাংলা ব্যকরণ কি বাংলা ভাষার নিজস্ব আত্মাকে ধারণ করতে পারে? যতদূর জানি ঊনিশ শতকে এটিকে অনেকটা ইংরেজি আর সংস্কৃত ভাষার আদলে সাজানো হয়েছিল। ব্যকরণ সংস্কারের প্রস্তাবটি কি যৌক্তিক?
::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
বহুদিন হলো নিকষ কুঠার ফেলে এসে ভুলে
দাঁড়িয়েছি আজ মেঘের কিনারে এসে
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
খুব ভালো বিষয়, লেখাটা অবশ্যই শেষ হওয়া উচিত্।
অপেক্ষায় রইলাম।
____________________________
লাল গানে নীল সুর হাসি হাসি গন্ধ......
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
জনকল্যাণমূলক পোস্ট।
শুধুই কি ব্যাকরণ? শিক্ষাদান পদ্ধতিতেও দৃষ্টিভঙ্গির অনেক অনগ্রসরতা রয়েছে।
অনেক আগে এর উপরে একটি ব্লগ লিখেছিলাম।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
নতুন মন্তব্য করুন