একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে সংবাদ শিরোনামা দেখছিলাম , সেখানে "দুরবস্থা" বানানটি লেখা হয়েছে এভাবে - "দুরাবস্থা" । বাংলা বানানের এই দুরবস্থা রাস্তার পাশের বিলবোর্ড থেকে শুরু করে সংবাদপত্র , টেলিভিশন , পাঠ্যপুস্তক , অপাঠ্যপুস্তক সর্বত্রই দেখা যায়। অথচ একটু সচেতন হলে, আন্তরিক হলে এসব ভুল এড়ানো যায় । বিশেষ করে যারা লেখালেখি করেন তাদের এই ব্যাপারে সচেতন হওয়া দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। ১৯৩৬ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বানানের নিয়ম প্রবর্তন করে, এরপর দুই বাংলায়ই বিভিন্ন সময় বাংলা বানান নিয়ে আরো কাজ হয় , বানানকে সরল করার চেষ্টা চলে । বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের জাতীয় প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমী ১৯৯২ সালে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম প্রণয়ন করে -যাকে আমরা আদর্শ হিসেবে ধরতে পারি। আমরা হরহামেশা যেসব বানান ভুল করে থাকি বাংলা একাডেমীর বানানরীতির আলোকে সেগুলো কীভাবে শুদ্ধ করতে পারি তা নিয়ে আলোচনা করব।
বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত শব্দাবলির শতকরা ৭০ ভাগই তৎসম অর্থাৎ সংস্কৃত শব্দ । বাকি সব শব্দ অতৎসম শব্দ । তৎসম ও অতৎসম শব্দের বানানরীতিতে পার্থক্য রয়েছে। তৎসম শব্দের বানান সংস্কৃত ব্যাকরণের অনুসারী, যৎসামান্য পরিবর্তন ছাড়া এখানে হস্তক্ষেপ করা হয় নি। এই তৎসম শব্দের বানান নিয়েই যত সমস্যা তৈরি হয় এবং বাংলা বানান অনেকের কাছেই জটিল ও দুরূহ ঠেকে। এ আলোচনায় তদূর সম্ভব বোধগম্য করে বাংলা বানানরীতি তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
১.ই/ ঈ /উ/ঊ এর ব্যবহার:
তৎসম শব্দের েত্রে বলা হয়েছে , যেসব তৎসম শব্দে ই,ঈ বা উ,ঊ, শুদ্ধ সেসব বানানে শুধু ই ও উ ব্যবহৃত হবে এবং এদের কার চিহ্ন ব্যবহৃত হবে। যেমন- উষা, উনিশ, কিংবদন্তি , ধমনি, ভঙ্গি ,সূচি, পঞ্জি ইত্যদি।
তবে জাতি , ভাষা ও বিশেষণবাচক সংস্কৃত শব্দের বানানে শেষে ঈ-কার হবে । যেমন- উপকারী, জয়ী, আগামী, ও প্রবাসী। এখানে মূল শব্দের শেষে ঈ প্রত্যয় যুক্ত হওয়ায় শেষের ঈ-কার বদলাবে না। কিন্তু অতৎসম শব্দের বানানে এক্ষেত্রে ই - কার হবে। যেমন- ইংরেজি, কেরানি, ফরিয়াদি ইত্যাদি, এই মতে একাডেমী বানানেও ই-কার হওয়ার কথা, যদিও 'বংলা একাডেমী 'বানানে কোন পরিবর্তন করা হয় নি।
ই/ ঈ -কার হওয়ার পেছনে প্রত্যয় বিশেষ ভূমিকা রাখে। যেমন - মূল শব্দের শেষে আলি, আবলি প্রত্যয় যুক্ত হলে শেষে ই-কার হবে । উদা: সোনালি, রূপালি, মিতালি, দৃশ্যাবলি, গ্রন্থাবলি ইত্যাদি। আবার ঈ-কারান্ত শব্দের শেষে তা ও ত্ব প্রত্যয় যুক্ত হলে ঈ-কার ই-কার -এ রূপ নিবে। যেমন-
উপকারী+তা= উপকারিতা
সহযোগী+তা=সহযোগিতা
কৃতী+ত্ব=কৃতিত্ব
দায়ী+ত্ব=দায়িত্ব (অসমাপ্ত)
মন্তব্য
উপকারী পোস্ট।
সঠিক বানান লিখতে যথাসাধ্য চেষ্টা করি।
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
এই সিরিজটিকে ইবুক করে আর্কাইভ করা হোক । অসংখ্য মানুষের কাজে লাগবে ।
একটি খুবই দরকারী সিরিজ শুরু করার জন্য আপনাকে অভিনন্দন ।
পূর্ণ সমর্থন।
শুধু ই-বুক নয়, এই সিরিজটিকে 'সাহায্য' বিভাগে রেখে দিলেও কাজে আসবে।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
সচলায়তনের কোনও এক কোনে বানান রীতি নামে এই পুরো (যখন কমপ্লীট হবে)ব্যাপারটি তুলে রাখলে ভালো হবে খুব। আর আয়েশা আক্তারকে অসংখ্য ধন্যবাদ এরকম একটি প্রয়োজনীয় ব্যাপার নিয়ে লেখার জন্য। অনুরোধ, শেষ করবেন।
আমার বানানের ভয়ঙ্কর দূরাবস্থা... পত্রিকায় লিখতাম যখন তখন প্রুফ রিডাররা মাঝে মাঝে বলার চেস্টা করতো... আমি দিতাম উল্টা ধাতানি... 'ঐ মিয়া... আমি যদি সব বানান শুদ্ধ লেখি তাইলে তো আপনের চাকরি নট' কিন্তু এখন বুঝি বানান বিষয়টা নিয়া তখন ফাইজলামি না করলে আখেরে অনেক ফায়দা হইতো।
পুনশ্চ: এই কমেন্ট লেখতে গিয়া ভয়ঙ্কর বিপত্তি বাঁধিলো... প্রতিটি শব্দ নিয়াই কনফিউজড... বানান ঠিক আছে তো?
আমি নিশ্চিত জানি... প্রচুর ভুল...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
হ , আমরাও এরকমই বলতাম । " আমার কাজ লেখা , লিখেছি । তোমাদের কাজ বানান দেখা , দেখো । তোমাদের চাকরি করার জন্য তো আমাকে বেতন দেয় না ।"
খুবই জরুরী পোস্ট। অনেক দিন ধরেই অপেক্ষায় ছিলাম।
ব্লগে বানান অভিধান জাতীয় কিছু করা গেলে ভাল হত।
চমত্ কার উদ্যোগ। চালিয়ে যান। কাজে লাগবে খুব।
----------------------------------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী-
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।
আয়েশা আখতারের কাছে একটি সবিনয় প্রস্তাব। লেখাটিকে খুব একাডেমিক না করে ব্যবহারিক প্রয়োগের বিষয়ে জোর দিলে মনে হয় বেশি ভালো হবে।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
আয়েশা এসেছ দেখে ভাল লাগলো। একসময় আমার প্রচুর বানান ভুল হতো, এখনও হয়। তুমি আসায় কিছুটা রক্ষা।
::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::::
মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
এই ক্লাসে ভর্তি হইলাম। নেক্সট ক্লাস কবে?
সচলায়তনের কাছে আরিফ জেবতিক ভাইয়ের প্রস্তাবে পূর্ণ সমর্থন।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
আমিও ভর্তি হলাম। ঝটপট রোল নম্বর টা দিয়ে দ্যান। হাজিরা দেব নিয়মিত
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
চমৎকার উদ্যোগ। সচলায়তনে এ নিয়ে একটি আর্কাইভ করা হলে আরও ভাল হয়। বাংলা উইকিপিডিয়াতে বানান নিয়ে একটি পৃথক প্রকল্প পাতা আছে। যে কেউ অবদান রাখতে পারেন সেখানেও। লিংকটা দিলাম:
http://bn.wikipedia.org/wiki/উইকিপেডিয়া:বাংলা_বানানের_নিয়ম
— বিদ্যাকল্পদ্রুম
বাংলা বানান নিয়ে এমনিতেই বিভ্রান্তির অন্ত নেই। প্রচুর শব্দের একাধিক বানান শুদ্ধ বলে স্বীকৃত। আবার বানান বিষয়ে অনেক পত্রিকা বা সংস্থার স্বেচ্ছাচারিতার নিদর্শনও আছে অগণ্য। সেই পরিপ্রেক্ষিতে এই সিরিজটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
বানানায়তন নাম দেয়া যায় পোস্টটার, হে হে হে ...।
জুবায়ের ভাইয়ের সাথে একমত।
হাঁটুপানির জলদস্যু
কোন বানান নিয়ে সন্দেহ থাকলে গুগল সার্চ দেই, যেই বানানে রেজাল্ট বেশী আসে সেটা ব্যবহার করি। যেমন:
দুরবস্থা: গুগল সার্চ রেজাল্ট ১৭১
দুরাবস্থা: গুগল সার্চ রেজাল্ট ৫৮
কাজেই পেয়ে গেলাম কোন বানানটা সঠিক।
আবার এই কারণেই কিন্তু অনলাইনে সঠিক বানানে লেখালেখি করাটা জরুরী।
ঠ্রিক্ এই রক্রম্ একট্রা জ্রিন্রিস খ্রুব্রই দ্ররকার।
____________________________
লাল গানে নীল সুর হাসি হাসি গন্ধ......
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
স্রুজ্রন দ্রা ক্রম্রেন্ট ক্ররে,
ভ্রানুর ক্রথ্রা ম্রনে প্রড়ে...
বাংলা বানান রীতিকে কিন্তু বাংলা একাডেমির বানান অভিধান একটা চমৎকার ইউনিফর্ম জায়গায় নিয়ে গেছে। কিন্তু এটা বাস্তবায়নে রয়ে গেছে কয়েক লক্ষ সমস্যা
প্রথমত বাংলা একাডেমি কাউকে এই বানান ফলো করার নির্দেশ দিতে পারে না। সেটা পারে সরকার। কিন্তু সরকার কোনো নির্দেশ দেয় না বলে পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কিংবা পত্রিকা কিংবা সরকারি দপ্তরগুলো একেকটা একেক রকমে বানান লিখছে
আবার কোনো কোনো পত্রিকা ফলো করে আনন্দবাজার গোষ্ঠীর বানান রীতি। যা আবার বাংলাদেশের বানান থেকে অনেকটাই আলাদা
০২
বাংলা একাডেমি নিজের তৈরি করা বানান রীতি নিজেদের অন্যান্য ডিকশনারিতেও ফলো করতে পারছে না বাজেটের অভাবে। বানা অভিধান তৈরির আগে যে সকল অভিধান তৈরি হয়েছে সেগুলো সংশোধনের বাজেট তাদরে নেই। ফলে একই একাডেমির বানান অভিধান যে বানানকে বলে ভুল। সেই একাডেমির অন্য অভিধান বলে ঠিক
০৩
দীর্ঘদিন পরে বাংলা একাডেমি বানান অভিধানের নতুন সংষ্করণ বের করেছে এইবার
এটা কিনে নিতে পারেন। এখানে অভিধানের সাথে বানানসূত্রও দেয়া আছে
এবং এই বইটা সত্যিই অনেক ইউজার ফ্রেন্ডলি
কয়েকদিন একটু ফলো করলেই ৯০% বানানে ইউনিফর্মিটি আনা সম্ভব
০৪
সচলায়তন অবশ্যই নিজস্ব একটা স্পেল চেকার যুক্ত করার চিন্তা করতে পারে
চেষ্টা করছি ব্যবহারিক প্রয়োগসহ লেখতে । আমি নিজেও একাডেমিক করতে চাচ্ছি না। ধন্যবাদ পরামর্শের জন্য।
আপনার লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ, আশা করি সামনে আরো ব্যবহারিক বানানরীতি পাব। সচলায়তনের মডারেটরদের উদ্দেশ্যে একটি হালকা অভিযোগঃ এই লেখার ঠিক নিচেই যেখানে ভাষা চয়নের একটা drop-down box আছে, সেখানে ইংরেজি'র বদলে "ইংরেজী" লেখা কেন? আমি যতদূর জানতাম, বাংলা একাডেমীর বানানরীতি অনুসারে এখন "ইংরেজি" হচ্ছে গ্রহনযোগ্য বানান, বিদেশি শব্দে "ী"-কার ব্যবহার করা হয় না।
বানানরীতির প্রতি যত্নবান হওয়ার চেষ্টা সবসময় থাকবে, তবুও আমার এই লেখায় বানান বিভ্রাট থাকলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।
নতুন মন্তব্য করুন