এই প্রথম বাংলাদেশের বাইরে দীর্ঘসময় ধরে বসবাস জার্মানিতে। এর মধ্যে কতবার যে Danke (ধন্যবাদ), Entschuldigung (মাফ করবেন), Tut mir Leid(দুঃখিত) বলা হয়ে গেছে, আর Guten Morgen (সুপ্রভাত), Guten Tag(শুভ দিন), Guten Abend(শুভ সন্ধ্যা) তো আছেই!!! ইংরেজিতে একটি পরিভাষা আছে Routine Formulae, এ ধরনের বাক্য বা বাক্যাংশ Routine Formulae-র আওতায় পড়ে। এর উপযুক্ত বাংলা পরিভাষা খুঁজেও পাচ্ছি না এই মুহূর্তে। বাংলা একাডেমীর অভিধানে Formulae শব্দের অর্থ করা হয়েছে প্রতিনিয়ত ব্যবহৃত শব্দাবলী (Excuse me, Thank you), মামুলি বুলি। যেসব বাক্যে বা বাক্যাংশে শিষ্টতা- ইংরেজিতে যাকে বলে Politeness, প্রকাশ পায়, সেসব বাক্য Routine Formulae - র মধ্যে পড়ে। আপাতত একে শিষ্টবচন হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যাক।
শিষ্টবচনের ব্যবহার কোন জাতির সংস্কৃতিরই একটি অংশ এবং এর প্রকাশভঙ্গি জাতি বিশেষে আলাদা। জার্মানির পথে, দোকানে, যানবাহনে এ ধরনের বচন যেমন শোনা যায়, বাংলাদেশে তেমন শোনা যায় না। এখানে গণমানুষের মুখের ভাষার কথা বলা হচ্ছে। শুধু শিক্ষিত জনের কথা বলছি না। রাস্তা দিয়ে যাচ্ছেন হয়ত কারুর সঙ্গে ধাক্কা লাগল, খুব কমই শোনা যায় “দুঃখিত” বলতে। হয়ত আপনার দিকে ঠোঁটের কোণে একটু হাসি নিয়ে তাকাবে, অথবা ভাই দেখি নি/ খেয়াল করি নি বলে চলে যাবে, কিছু না বলেও চলে যেতে পারে। পরিসংখ্যানটা পাঠকই ভাল বলতে পারবেন। “ধন্যবাদ” শব্দটিকে প্রায় দখল করে রেখেছে Thanks /Thank you. আর ধন্যবাদ বললেও এর উত্তরে “স্বাগতম” শব্দটি কম শোনা যায় বলে হয়ত কানে লাগে, তবে ধন্যবাদের উত্তরে উল্টো “ধন্যবাদ” বলতে শোনা যায়। যেখানে ইংরেজি (Welcome) বা জার্মান (Bitte) ভাষায় এর জন্যে নির্দিষ্ট শব্দ আছে।দিনের তিনভাগে তিন রকমের সম্ভাষণ খাতায়কলমে থাকলেও মুখে এর ব্যবহার খুবই সীমিত। প্রথম দর্শনে আমরা ধর্মীয় সম্ভাষণই ব্যবহার করি, বিদায় নেওয়ার সময়ও তাই। Please তো এখন বাংলাভাষার একটা অংশই হয়ে গেছে। এর ব্যবহার বাংলায়ও আ্ছে- “দয়া করে......”। শিষ্টবচনের আরেকটি দিক আছে, যেখানে Modal Verb-এর ব্যবহার করতে হয় - Could I…, Would you…, May I…? ইংরেজি বা জার্মান শেখার সময় এর ব্যবহার বিশেষভাবে শিখতে হয়। কোথায় কখন কোনটির ব্যবহার করতে হবে ঠিকমত না জানলে লজ্জায় পড়তে হয় বৈকি! জার্মানীতে এসে সেটা ভালভাবেই টের পাচ্ছি। দেশে কিছুদিন জার্মান ভাষা শেখানোর সৌভাগ্য হয়েছিল। সেখানে Modal verb-এর ব্যবহার শেখাতে একটু কষ্টই করতে হত। বাংলায় ঠিক এর জন্যে নিদিষ্ট ক্রিয়াপদ নেই, তবে বাগভঙ্গী অবশ্যই আ্ছে, যেমন- করতে/দেখতে/যেতে পারি?/অনুমতি দিলে..। তবে আমজনতার বাংলাভাষা যদি বলি, সেখানে নির্দিষ্ট পরিবেশে নির্দিষ্ট শব্দ ব্যবহার করা অপেক্ষা ব্যঞ্জনাময় ভঙ্গির ব্যবহার্ই যেন বেশি। ক্রেতা-বিক্রেতা সাধারণত নির্দিষ্ট শিষ্টবচন নয় মিষ্টি হাসি দিয়ে কোন কিছু সরাসরি চেয়ে থাকেন জানিয়ে থাকেন। কাউকে কিছু উপহার দিলে আন্তরিক হাসি সহ “কী দরকার ছিল..” –সচরাচর এমনটা শুনে থাকি।
পশ্চিমা সংস্কৃতি থেকে আমরা শিষ্টবচনের কিছু বিষয় নিয়েছি এটা অস্বীকার করা যাবে না। তবে আমাদের সংস্কৃতিতে এর নিজস্ব যে ভঙ্গি আছে তাতেও কম শিষ্টতা প্রকাশ পায় না। স্বরের বৈচিত্র্য, ব্যঞ্জনাময় ভঙ্গি সব মিলে মিশে শিষ্টবচন যেন আনুষ্ঠানিকতার সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
মন্তব্য
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
জার্মান শব্দগুলোর উচ্চারণ বাংলায় দিলে সুবিধে হতো।
------------------------------------------------------------------
এই জীবনে ভুল না করাই সবচেয়ে বড় ভুল
একদম!
অটঃ সবাই লিখছেন দেখি!
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
লেখার বিষয়টা নতুন লাগল।
আমার একটু দ্বিমত আছে এ বিষয়ে। কেন সেটা আপনার কাছ থেকে পরের লাইনের ব্যাখা না শুনে বলতে পারছি না।
এ বিষয়ে আপনার মতামত কী? বাংলাদেশে কেন শোনা যায় না?
লেখা ও বিষয় নির্বাচন ভালো লাগলো
দেশের বাইরে Thank you, welcome, have a good day, my pleasure, please, how are you doing? ইত্যাদি বলা দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। পরিচিত অপরিচিত যে কাউকেই একটা হাসি কি সাধারণ ২/১ টা শুভেচ্ছা বানী উপহার দিতে কুন্ঠা হয় না। দেশে বেড়াতে গিয়েও যখন কখনো অভ্যাসবশে দোকানী বা রিকশাওয়ালাকে থ্যাঙ্কিউ বলে ফেলেছি তার নিদারুন বিব্রত হয়েছে নয়ত আপ্লুত হয়েছে। এক সিএনজি ড্রাইভার আমাকে ভাড়ার ১০টাকা ফেরত দিয়েছে স্রেফ ধন্যবাদ শুনে খুশি হয়ে।
আমাদের শিশুদের সালাম দিতে শেখানো হয় কিন্তু ধন্যবাদ দিতে শেখানো হয় না। আমি ধন্যবাদ বলা শিখেছি হলিক্রস স্কুল থেকে। ক্লাস শেষে উঠে দাঁড়িয়ে শিক্ষক/ শিক্ষিকাকে পাঠদানের জন্য ধন্যবাদ দেয়া থেকে শুরু করে সব খানে ধন্যবাদ বলার অভ্যাস করানো হয়েছিল আমাদের।
একটু ভদ্রতা, মিষ্টি ব্যবহার দৈনন্দিন জীবনের বাধ্যতামূলক বোঝাকেও কিছুটা হালকা লাগতে সাহায্য করে।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
একটা ছোট্ট প্রশ্ন:
শিক্ষকরা কী কখনো ফিরতি ধন্যবাদ দিতেন ছাত্রীদেরকে?
আমি নিজে মিশনারী স্কুল-কলেজে পড়েছি। শিক্ষার্থীদেরকে নানা আদব লেহাজ শেখানো হয়, কিন্তু শিক্ষকদের অনেকের মাঝে ন্যূনতম সৌজন্যবোধটাও থাকে না। সালাম-ধন্যবাদ ইত্যাদির এক তরফা বিনিময় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও দেখেছি। আমার দেখা আপনার সাথে মিলে কিনা তাই জানতে চাইছি।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
আমাদের শিক্ষিকারা ( অনেকেই হলিক্রসেরই ছাত্রী ছিলেন) ক্লাস শেষে থ্যাঙ্কিউ গার্লস বলে শেষ করতেন, তখন আমরা উঠে দাঁড়িয়ে পালটা ধন্যবাদ জানাতাম। সুর করে থ্যাঙ্কিউ বলাটা একটা খেলার মত ছিল আমাদের কাছে। শিক্ষকেরাও প্রায় সবাই বেশ মধুর স্বভাবের ছিলেন।
ক্লাসের বাইরে কোথাও শিক্ষকদের মুখোমুখি পড়লে গুড মর্নিং বা গুড আফটারনুন বিনিময়ের রেওয়াজ ছিল। স্কুলের শিক্ষকদের সাথে দেখা হলে সালামের বদলে গুড মর্নিং বেরিয়ে যায় মুখ দিয়ে।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
একেবারেই নতুন বিষয়! ভাল লাগল
আমাকে কেউ গালি দিয়ে গেলেও আমি বলি, "ধন্যবাদ, আবার আসবেন"। তারপর দরজা লাগিয়ে অট্টহাসি
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
নতুন মন্তব্য করুন