১.
চট্টগ্রাম যাই না আজ প্রায় দু’বছর। মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে করে যেতে। মাঝে মাঝে না, সবসময়ই ইচ্ছে করে। কিন্তু কোথায় যাবো? জীবনের সবচেয়ে সুন্দর বারটা বছর কাটানো শহরটাকে এখন আর চিনতে পারি না। নতুন স্টেশনে নেমে এখন তো আর বাবাকেও দাড়িয়ে থাকতে দেখবো না কিংবা রিকশাওয়ালাকেও বলতে পারবো না “কাতালগন্জ যাবেন”। অথচ চার বছর আগেও পৃথিবীর সবচেয়ে আনন্দের কাজ ছিল ঢাকা ছেড়ে চট্টগ্রাম যাওয়া। চট্টগ্রাম এখন আর আমাকে চেনে না।
২.
চট্টগ্রামের শীতের সময়টা সবচেয়ে অসাধারণ লাগতো। বাসার পাশে অনেক রাত পর্যন্ত এলাকার ছেলেরা ব্যাডমিন্টন খেলতো। গভীর রাতে ওয়াজ ভেসে আসতো অনেক দূর থেকে। অদ্ভূত মায়াবী একটা পরিবেশ। শীতের সময় অনেক ভোরে উঠলে চারদিকটা যেন স্বর্গের মতো লাগতো। শীতের আরেকটা প্রিয় ব্যাপার ছিল বিজয় মেলা। ডিসেম্বর মাসের এই বিজয় মেলার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম পুরোটা বছর। বছরে এই একটা সময়েই কিছু বই কেনার সুযোগ হতো মেলা থেকে।
৩.
বিকেলবেলা হাটার জন্য খুব প্রিয় একটা জায়গা ছিল পাচলাইশ থানার পেছনের আবাসিক এলাকাটা। অসম্ভব চুপচাপ শান্ত একটা রাস্তা। আমরা হাটতাম আর জোরে জোরে গল্প করতাম। অনেক শব্দ করে হাসতাম। রাস্তার দু’পাশের বাড়িগুলো ছিল খুব চুপচাপ। সবসময় মনে হতো আমাদের চিত্কারে বুঝি কারো বিকেলের ঘুম ভেঙ্গে যাবে আর বারান্দা দিয়ে উকি দেবে। কেউ কখনো উকি দেয়নি।
৪.
চট্টগ্রাম ছাড়ি ২০০৩ এ। চট্টগ্রামের ছাড়লেও স্বপ্নে সবসময় আমাদের আগের বাসাটা দেখতে পেতাম। মনে হতো চট্টগ্রামের ওই বাসাটা যেন আমাকে ছাড়েনি। আমার ভেতরের মনটা যেন এখনো আগের সেই পুরোনো বাড়িতেই বাস করে।গত কিছুদিন যাবত স্বপ্নে সেই বাসাটাকে আর দেখতে পাই না। নতুন কোন ভাড়াটিয়া উঠলো কিনা কে জানে।
(ছবিগুলো সব উইকিমিডিয়া হতে নেয়া)
মন্তব্য
হা চট্টগ্রাম। পৃথিবীর আর কোন শহরই আমার কাছে এর চেয়ে সুন্দর না। কিন্তু আমিও তো '৯৭ পর্যন্ত কাতালগঞ্জেই ছিলাম 'সকিনায়'। অয়নকে কি চিনি আমি?
ঠিক কতো নাম্বার রাস্তায় সেটা মনে না পড়লেও কাতালগন্জে যে সকিনা নামে একটা বাড়ি ছিল সেটা মনে আছে। আমরা থাকতাম পুরান ওয়াপদা অফিস পাড় হয়ে আরো ভেতরের দিকে।
কাতালগন্জের এক তানভীর ভাইকে চিনতাম, কলেজিয়েট ৯৮ ব্যাচ, কিন্তু উনি তো ইংল্যান্ড থাকেন।
কাতালগঞ্জ তো ছোট এলাকা। পুরনো ওয়াপদা অফিস পার হয়ে...তারমানে মনে হয় মুনশী পুকুর পাড়ের দিকে...ওইদিকে আসলে খুব কম চিনি। সেঙ্গুইনের নাম দেখছিলাম মনে হয়, তখন নতুন হইছিল বিচিত্রা লাইব্রেরীর কাছে। বিচিত্রা লাইব্রেরীতেও আমরা অনেক আড্ডা দিতাম। ৯৮ এর তানভীরকেও চিনি না, হয়ত নতুন আসছিল। কলেজিয়েটের এত পরের অবশ্য আমার চেনারও কথা না। আমিও কলেজিয়েট; তবে ৯২-৯৩ পর্যন্ত আর বেশী হইলে দু'একটা ৯৪ পর্যন্ত পোলাপান চিনি। বুইড়া হয়ে গেছি। তবে কাতালগঞ্জে ক্লাস থ্রি থেকে একদম টানা ৯৭ পর্যন্ত ছিলাম। ওখানকার/পাঁচলাইশের/প্যারেড মাঠের অনেককেই তাই চিনি।
মুনতাসির শুয়োর কোথাকার, এতটা মন খারাপ করাই দিলি?
আহা, বড় মিস করি আমার শহরটারে... সেঙ্গুইনে পড়ানোর দিনগুলো মনে পড়তেসে রে...
তুই আসস কেমন?
আমিও মিস করি
আমি আগের মতোই আছি। গত পাচ বছরে কোন পরিবর্তন হয় নাই।
চট্টগ্রাম গেছি বার ছয়েক। খুবই প্রিয় একটি শহর।
আপনার লেখায় "পাচলাইশ"-এর কথা পড়ে বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো। কেন, কমু না
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
চট্টগ্রামের যেকোন জায়গার নাম শুনলে আমার বুকের মধ্যেও একটা মোচড় দিয়ে ওঠে।
আপনি যেভাবে চোখ মারলেন তাতে মনে হচ্ছে আপনার মোচড়টা একটা বিশেষ কারণে। কারণটা কি বলা যায়?
এই মানুষটা লিখে না কেনো কে জানে!!!!!!!
ছাপার অক্ষরে নিজের নাম দেখতে (মনিটরে কিংবা সাদা কাগজে যেখানেই হোক না কেন) কেমন যেন অস্বস্তি লাগে।
লেখাটা পড়ে ভাল লাগল। বারবার দেশের কথা মনে পড়ে যায় এরকম কিছু পড়লে। যদিও লেখাটা চট্টগ্রাম নিয়ে লেখা এবং আমি চট্টগ্রামের বাসিন্দা কোন দিনই ছিলামনা। তবুও ভাল লেগেছে। লেখার ভংগীর কারণেই হয়তোবা দেশের কথা মনে করাতে লেখাটি সক্ষম।
আজমীর
a_azmir_h@hotmail.com
ধন্যবাদ
আপনার লেখাটা পড়ে বুকের ভেতর কেমন জানি লাগছে।
পৃথিবীতে চট্টগ্রামের চেয়ে মায়াময় শহর আছে - আমি বিশ্বাস করি না
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
আমিও করি না।
অয়ন না লিখার অর্থ হলো সে অপরাধ করছে। আমাদের সাথে এটা তার বিরাট অন্যায় আচরন।
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
তাইতো!! এই মানুষটা লিখে না ক্যান? লাস্টের লাইনটা বুকে ধাক্কা দেয়।
---------------------------------
জানিনা জানবোনা... কোন স্কেলে গাইছে কোকিল
গুনিনা আমি গুনিনা...কার গালে কটা আছে তিল
আয়ন,
খুব সুন্দর ......আমার এমন এক টা hometown নাই।
আহ্, আমার শহরকে নিয়ে আরেকটি অদ্ভুত সুন্দর লেখা খুঁজে পেলাম!!
--------------------------------------------------
"সুন্দরের হাত থেকে ভিক্ষা নিতে বসেছে হৃদয়/
নদীতীরে, বৃক্ষমূলে, হেমন্তের পাতাঝরা ঘাসে..."
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
কী দারুণ একটা লেখা!
নতুন মন্তব্য করুন