সৌজন্যতা বিনিময় শেষে এক আত্মীয়া প্রশ্ন করলেন আকস্মিক ভাবে,
ক্লাশে তুমি কোথায় বস?
আমি বল্লাম, কেন? বরাবরই পিছে।
যুক্তি ছড়ালাম এই বলে:
পিছে বসার অনেক উপকার আছে;
পিছে বসলে সতীর্থদের ফলো করা যায়, কে কত টুকু অমনোযোগী।
কার চুম্বক ক্ষেত্রের বিস্তৃতি কতটুকু তা এঁচে নেয়া যায় ছাত্র-ছাত্রীর দৃষ্টির ক্রসকানেকশন দেখে।
শিক্ষকতাকে কে ব্রত হিসাবে নিতে পেরেছেন,
দ্বায়িত্বে কে খলিফা ওমর - সে ষ্টাডির সুযোগ পিছন থেকেই মেলে।
শিক্ষকের চামুচে মাপা সিলেবাসী বক্তৃতা
মগজে ঢোকার প্রবেশ পথ না পেয়ে যখন আলস্য ধরায়,
তখন ঝিমুনি যোগে নাতি-দীর্ঘ ঘুমও দেয়া যায়, সেখানে বসে।
‘মাস গেলে টাকা পাই’- এই দর্শনে যারা বিশ্বাসী,
শ্রেণীকক্ষে পাঠদানে যথেষ্ট লালা ব্যায় না করে যারা তা রেখে দেয়
নিজ ডিস্পেন্সারীতে ছাত্রের সার্জারী করার জন্য;
তাদের ক্লাশে দুষ্টুমি প্রতিভার বিকাশ ঘটান যায় পিছে বসেই।
মনটা যখন ক্লাশের গোটাল-আকর্ষণের বৃন্তচ্যুৎ হয়,
বাইরের হাতছানি যখন কিছুতেই পায়ে ঠেলা যায় না,
পিছন দরজার প্রয়জনের ঋণাত্মক ও জায়েজ কারণ খোজা যায় তখন।
তাছাড়া পি –
তিনি থামিয়ে দিয়ে বল্লেন, ঢের হয়েছে
এবার বল তোমার রেজাল্টের খবর কি?
অতবড় ভূমিকার খুব সংক্ষেপে উপসংহার টেনে,
আস্তে বল্লাম:
ও – ওটাও – পিছে।
মন্তব্য
পিছনে বসার অসুবিধাও কম নয়। যে কলেজে পড়তাম সেখানে অমর চাঁদ দাস নামে কেমিস্ট্রির এক অধ্যাপক ছিলেন। আর আমাদের সীট ছিল নির্ধারিত। আমার সীট পড়েছিল শেষ বেঞ্চের আগেরটাতে। তো কেমিস্ট্রি ক্লাসে উনি আবার পেছনের দিকের লোকজনদের বেশি পছন্দ করতেন, মানে পড়া ধরতেন আরকি। তখন ভাবতাম আহা সামনের দিকে সীটটা হলে কতই না ভালো হতো!
আহ ! অমর চাঁদ দাস !
আমাদের শাখার শিক্ষক ছিলেন না বটে, তবে বদলি শিক্ষক হয়ে বার কয়েক এসেছেন।
প্রথম দিন আসা মাত্রই উনার গলা শুনে আমার এক বন্ধু হেসে দিলো।
সারা ক্লাস কান ধরে দাঁড়িয়েছিলো।
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
তা আর বলতে? লিখতে গেলে তো অনেক লিখতে হবে, তাই সংক্ষেপে বলি। আমি আর আমার বন্ধু পরিবারের চাপে নিউমার্কেটের কাছে যে ঢেকে রাখা একটা কলেজ আছে সেখানেও ভর্তিপরীক্ষা দিতে গিয়েছিলাম। দুর্ভাগ্যক্রমে একই দিনে ছিল আমার কলেজের নবীনবরণ। যাহোক, সেটা মিস করায় জানা হয়নি প্রথম ক্লাসের সময় কখন। আটটা দশের দিকে কলেজে উপস্থিত হয়ে দেখি সব শ্রেণীকক্ষের দরজা বন্ধ। নিচে অফিস থেকে এক নম্বর গ্রুপের ঠিকানা নিয়ে তিনতলায় উঠে সেই হলুদ দরজায় কড়া নাড়লাম। কোন এক সহৃদয় দরজা খুলে দিলে আমরা দুজন ঢুকেই অমর চাঁদের মুখোমুখি। ইশারায় ডেকে আনলেন কাছে। তাঁর মাথাটা আমাদের মাথার কাছে এনে কৌতুকের সুরে আদ্যপান্ত জানতে চাইলেন। বন্ধুটি আবার একটু বেশি সোজা টাইপের। সে বলেই ফেলল ঢেকে রাখা মহাবিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার কথা। আর যায় কোথায়, সারা ক্লাশ হো হো করে হেসে উঠেছিল। কলেজের প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা স্মরণীয় হয়ে আছে।
আপনার অমর চাঁদ দাস নামে কেমিস্ট্রির যে অধ্যাপক ছিলেন তার বদৌলতে পিছে বসেও হয়তো আপনি কেমিস্ট্রিতে ভাল ছিলেন ; কেমিস্ট্রিতে আমার অবস্হান ছিল আপনার বিপ্রতীপ, অর্থাৎ বরাবরই খারাপ। তবে পিছে বসার মজাই আলাদা।
- বস, আপনে বরাবর দেখেন কোথায়? মানে ধরেন রাস্তা দিয়ে আল্লার অপার লীলা মহিমা হেঁটে গেলেও কি পিছেই?...![চোখ টিপি চোখ টিপি](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/3.gif)
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ইউনিভার্সিটিতে ফার্স্ট ইয়ারে নতুন ভর্তি হয়ে বলদের মত কিছু না বুঝেই প্রথম সারিতে বসতে শুরু করেছিলাম। মাস কয়েক যেতেই যখন প্রফেশনাল ভঙ্গীতে বিড়ি ধরাতে শিখে গেলাম তখন থেকেই আমি পেছনের সারিতে।
উদ্ধৃতি
'মাস কয়েক যেতেই যখন প্রফেশনাল ভঙ্গীতে বিড়ি ধরাতে শিখে গেলাম তখন থেকেই আমি পেছনের সারিতে।'
এই তো দ্রোহী দেখছি আমার লাইনের লোক। যারা ভাল ছাত্র সাজতে গিয়ে সামনের সারিতে বসেছে
তারা দারুন মিস করেছেন। দ্রোহী ভাইয়ার মত আরো কেও থাকলে আওয়াজ দেন। ব্যাকবেঞ্চার সচলদের
সুমারী হয়ে যাক।
একেবারে পেছনের বেঞ্চটা রিস্কি ছিল আমাদের স্কুলে। সাইজে সবচেয়ে বড় গাবদাগোবদা ছেলেগুলো বসতো ওখানে এবং ওরা বেঞ্চের উপর দাঁড়ানো থাকতো স্যার ক্লাস ছেড়ে না যাওয়া পর্যন্ত। অত বুঝতাম না তখন, ভাবতাম ওটাই বুঝি নিয়ম।
ওই লাইনের একটা ছেলে একবার অংকে দুটো শূন্য পাওয়াতে স্যার বলেছিল ওগুলো হাসের ডিম এবং বাসায় গিয়ে ভেজে খেতে। পেছনের ছেলেকে ডিম ভেজে খেতে দেয়ার মত এতটা খাতির দেখে আমার রাগই লেগেছিল।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
জীবন ভর পিছেই আছি, ওইটা কেউ নিতে পারবে না। কপিরাইট কইরা রাখছি।
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
ওরে! একেবারে কপিরাইট?
স্কুলে নিতান্ত বাধ্য হয়ে সামনের দিকে বসতে হতো। তবে কলেজে আর ভার্সিটিতে আমার তো বরাবরই পিছনে বসতেই ভালো লাগত।![হাসি হাসি](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/1.gif)
নাহ্, বুড়া হয়া যাইতেছি, আজকাল কিছুই মনে থাকে না। আপনার লেখা পড়ে একটা কবিতা মনে করার অনেক চেষ্টা করলাম। হেলাল হাফিজের... শুধু একটা লাইন মনে করতে পারলাম...
আমি পারবো না, আমি লাস্ট বেঞ্চি...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
উদ্ধৃতি
আমি পারবো না, আমি লাস্ট বেঞ্চি...
কিন্তু সচলদের মাঝে নজু ভাইতো ফাষ্ট বেঞ্চি....
সাইজের কারনে সবসময়ই পিছে বসতাম স্কুলে। আর কলেজের সীট নির্ধারিত ছিল প্রথম বেঞ্চি; তাই খোমাদেখানোর পরপরই স্যার পিছে পাঠায় দিতেন![হাসি হাসি](http://www.sachalayatan.com/files/smileys/1.gif)
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
নতুন মন্তব্য করুন