হাতুড়ে চিকিৎসা; তবে কার্যকরী। পর্ব – ১ । বিষয়: জল বসন্ত (chicken pox) ।

জুলফিকার কবিরাজ এর ছবি
লিখেছেন জুলফিকার কবিরাজ (তারিখ: সোম, ১৮/০৫/২০০৯ - ৬:৩২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

দেশ থেকে গুটি বসন্ত (small-pox) নির্মূল হয়ে গেছে বললেই চলে। কিন্তু জল বসন্ত প্রতি বছরই হানা দেয় গৃহস্থের ঘরে। এই বসন্ত গৃহস্থের বাড়ির সদস্য থেকে শুরু করে গবাদী পশু-পাখীদেরও আক্রমণ করে। এই রোগ আক্রমণের কোন ঋতু ভেদ নেই, তবে শীতের পর থেকে বসন্ত ও গ্রীষ্মে এর প্রকপ বেশী দেখা যায়।

চিকিৎসা: ভেষজ উদ্ভিদের মধ্যে সচরাচর ব্যাবহৃত হয় কুণ্টাকেরী ও বৃহতী। বসন্তের উদ্ভেদ (গোটা) গায়ে দেখা দেখা দেবার সাথে সাথে কুণ্টাকেরীর শিকড় ১ ইঞ্চি ( আকৃতি মোটা চিকন অনুযায়ী কম বেশি হতে পারে) পরিমাণ নিয়ে রস করে; অথবা চিবায়ে রস সেবন করা যেতে পারে, পর পর তিন দিন যে কোন সময়ে । তবে সকালে বাসি পেটে সেবন করা উত্তম। কুণ্টাকেরীর পাতাও উক্ত নিয়মে একটা করে তিন দিন তিনটি পাতা সেব্য।

বৃহতির পাতাও কুণ্টাকেরীর অনুরুপ সেব্য।

প্রতিষেধক: যখন আসে পাসের এলাকায় বসন্ত দেখা দিবে তখন, অথবা; বসন্ত ঋতুতে কুণ্টাকেরী ও বৃহতী উপরের নিয়মে সেব্য। এছাড়া বসন্ত ঋতুতে সজনে, সজনে শাক, করলা, চিরতা প্রভৃতি মাঝে মাঝে খাওয়া উত্তম।

হোমিও চিকিৎসা:
হোমিও প্যাথী মূলত লক্ষণ ভিত্তিক চিকিৎসা তবুও নিপাতনে সিদ্ধ
বলেও কথা আছে। বসন্ত এবং হামের শুরুতে সাধারণত: জ্বর আসে, গায়ে প্রচণ্ড ব্যাথা হয়; তার পরে গুটি (উদ্ভেদ) বের হয়। বসন্তের গুটি প্রায়ই মাথায় সামান্য জল নিয়ে বের হয় এবং জ্বল জ্বল করে এজন্য এর নাম জল বসন্ত।

অনেকের বদ্ধমূল ধারণা আছে, হোমিও ওষুধ খেলে বসন্ত (ক্ষেত্র বিশেষে সব রোগ) বৃদ্ধি পায়। ধারণাটি অংশত সত্য। এর কারণ এর প্রয়োগ পদ্ধতি, স্থূল ও সূক্ষ মাত্রা, সঠিক শক্তি নির্ণয় সম্পর্কে হ্যানিম্যানকৃত অর্গাননের ষষ্ঠ সংস্করণের জ্ঞান না থাকা। সূক্ষ্ম মাত্রায় ওষুধ প্রয়গ করলে রুগী অল্প কষ্টে আরগ্য লাভ করে।

হোমিও প্যাথিতে তিন পদ্ধতির শক্তিকৃত ওষুধ পাওয়া যায়। যথা:
১.দশমিক পদ্ধতি – 1x, 2x, 3x, 6x ইত্যাদি।
২. শততমিক পদ্ধতি – 6, 30, 200, 1m, 10m ইত্যাদি।
৩. সহস্রতমিক পদ্ধতি – M2, M3, M4 ইত্যাদি।

সহস্রতমিক পদ্ধতি সহজ এবং অধিক কার্যকরী। কিন্তু শততমিক পদ্ধতি বেশি প্রচলিত।

ওষুধ প্রয়গ: জল বসন্ত হবার প্রথম দিন থেকে বা যে কোন দিন থেকেই ওষুধ সেবন করা যায়। Taramycin – 30 অথবা M2 এক ড্রাম (হোমিও সবচেয়ে ছোট শিশিকে ১ ড্রাম শিশি বলে) বড়ি ওষুধ নিয়ে একটা বড়ি অন্য একটি এক ড্রাম পানি ভরা শিশিতে নিতে হবে। পানি ভরা শিশির কর্ক বন্ধ করে শিশিটি ডান হাতের তালুতে রেখে কর্কের ইপর বৃদ্ধাঙ্গুল রেখে আলতো করে মুঠি পাকাতে হবে। এবার মুঠি বদ্ধ হাতের নিচের অংশ বাম হাতের তালুর উপর সজোরে সমান ওজন এবং সমান বিরতীতে ১০ বার আঘাত (stroke) করতে হবে। ১০ বার আঘাত করার পর হোমিও দোকানে কিনতে পাওয়া ড্রপার দিয়ে ৫ ফোটা ওষুধ চায়ের কাপের এক কাপ পানিতে মিশায়ে সেই এক কাপ পানি থেকে আধা ড্রপার পানি খেয়ে কাপের পানি ফেলে দিতে হবে। এই ভাবে দিন তিন বার সেব্য।
উল্লেখ্য প্রত্যেক বার খাবার আগে উক্ত নিয়মে ১০ টা ঝাঁকি দিতে হবে। এখানে ঝাঁকি দেবার উদ্দেশ্য ওষুধ মেশান নয়, শক্তি বৃদ্ধি করা।

ওষুধ সেবনের ফলে ভেতরে থাকা পক্স তিন চার দিনে সব বের হয়ে জ্বর এবং যন্ত্রণা কমায়ে দেবে এবং সেই সাথে চতুর্থ দিন থেকে শুকাতেও শুরু করবে। এই ভাবে এক সপ্তার মধ্যেই সব গুটি শুকায়ে যাবে। চুলকান এবং যন্ত্রণা লাঘবের জন্য cassia soph - Q এক আউন্স পরিমাণ নিয়ে ৪০ ফোটা ওষুধ ২০ ফোটা পানি মিশায়ে তুলা দিয়ে দিন ৪ বার গুটিগুলি মুছে দিতে হবে।

মান্যি: অনেকে ভুল ধারণা বশত: এ সময় ঘী খেতে দেন এতে করে বসন্তের গোটায় পুঁজ বেশি বেশি জমে এবং যন্ত্রণা বৃদ্ধি পায়। ঘী, মিষ্টি, দুধ, সকল প্রকার দুধের জিনিষ, মাছ-মাংস, বেগুন, ঢেরস, মিষ্টি কুমড়া, পুঁই, কচু, কচুর শাক, মসুর, মুগ কলাই, মাস কলাই প্রভৃতি খাওয়া নিষেধ।

দাগ উঠানর জন্য allium cepa –Q পাঁচ ভাগের চার ভাগ, এক ভাগ ভিনেগারের সাথে মিশায়ে তুলা দিয়ে দিন দু্‌ই তিন বার লাগাতে হবে। এই ভাবে ২০ দিন লাগালে বেশি গর্ত হয়ে যাওয়া দুই একটি বাদে প্রায় সব দাগ মিশে যাবে।

প্রতিষেধক: variolinum-200, pulsatilla-200, rus tox-200, antim crud-200, morbilinum-200 –এর যে কোন একটি ওষুধ নিয়ে প্রতি দিন সকালে একটি করে বড়ি ৫ দিন খাবেন।


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

এসব দিয়েও কাজ হয়নি। শেষে এলোপ্যাথি দিয়েই সারাতে হয়েছিল।

কীর্তিনাশা এর ছবি

হোমিও চিকিৎসার কিছু কার্যকারীতা আমার নিজের চোখে দেখা।

আমার এক ভাগ্নের কপালে বেশ বড় একটা টিউমার ছিল। এলোপ্যাথি ডাক্তার বলেছিল অপারেশন করতে। কিন্তু আমার দুলাভাই কী মনে করে গেলেন এক হোমিও ডাক্তারের কাছে। সেই ডাক্তারের দেয়া ওষুধ খেয়ে আমার সে ভাগ্নের টিউমার এখন পুরোপুরি গায়েব।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

দ্রোহী এর ছবি

আমার কখনো পক্স/ফক্স হয়নি। দেঁতো হাসি

হাসান মোরশেদ এর ছবি

সচলায়তনে কবিরাজ ও আছেন হাসি
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

কীর্তিনাশা এর ছবি

মোরশেদ ভাই, হারবাল চিকিৎসকের নাম কবিরাজ হলো কেন? প্রাচীনকালে কী চিকিৎসকরা কবিতাও লিখতেন? হাসি

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

এই প্রশ্নের একটা ঐতিহাসিক গুরুত্ব আছে অবশ্যই। খালি তো কবি না, কবি-রাজ।
দেখা যাক জুলফিকারজি ইতিহাসের দায় পরিশোধ করেন কিনা?
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

নামটি কী "কুণ্টাকেরী" নাকি "কন্টিকারী"? একটু সন্দেহ হচ্ছে।

allium cepa মানে তো পিঁয়াজ। তাহলে পিঁয়াজের রস ভিনেগারের সাথে মিশিয়ে মাখালে কাজ হবে?

ঝাঁকি দিয়ে শক্তি বাড়ানোর পদ্ধতিটা মজার। একবার একটা হোমিও ম্যাগাজিনে "হোমিওপ্যাথী কী বিজ্ঞান?" নামক এক বৃহৎ প্রবন্ধ পড়েছিলাম। যেখানে এই শক্তি বাড়ানোর উপায়টির কথাও ছিল। আমি অবশ্য আমার পদার্থবিজ্ঞানের জ্ঞান দিয়ে ঝাঁকি দিয়ে পদার্থ থেকে শক্তি বের করার (এবং তা সেখানেই ধরে রাখার) ব্যাপারটা কিছু বুঝিনি। যাকগে বিশ্বাসে মিলায় হরি, তর্কে বহুদূর।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।