নক্ষত্রের সন্তান রুবিন

বাহাউদ্দীন এর ছবি
লিখেছেন বাহাউদ্দীন [অতিথি] (তারিখ: শনি, ৩১/১২/২০১৬ - ৭:২৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বেশ বড় খোলা একটা জানালা, উত্তরমুখী। প্রতিরাতে এই জানালা ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে মেয়েটি। বয়স আর কত, এই শ্রাবণেই দশ পুরো হল। কিন্তু রোজকার আগন্তুক নক্ষত্রগুলোকে দেখে দেখে তার মনে হয়- কতযুগ ধরেই না এ নক্ষত্রগুলোকে বুঝি সে চেনে! কি রহস্যময় আর গভীর এদের সাথে তার বহু শতাব্দীর পরিচয় !

মেয়টির নাম ভেরা রুবিন, জন্মেছিলো জুলাই ২৩, ১৯২৮ সালে পেন্সিল্ভেনিয়ার ফিলাডেলফিয়াতে। মাত্র ১৪ বছর বয়সেই দূর আকাশের নক্ষত্র-বন্ধুদেরকে আরেকটু কাছে, আরেকটু আপন করে পাবার জন্য একটা টেলিস্কোপ বানিয়ে বসে সে। বাবা একাজে সাহায্য করলেও ছোট্ট রুবিনের মহাকাশের প্রতি আগ্রহের বিষয়টা শুরুতে অনেকেই ভালোভাবে নেয়নি। হাইস্কুল পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক থেকে শুরু করে কলেজের এডমিশন অফিসার, সবাই রুবিনকে বলেছিলো পড়াশোনার জন্য জ্যোতির্বিজ্ঞানের বদলে আরেকটু 'ভালো' আর 'প্রচলিত' কোন বিষয় বেছে নিতে। কিন্তু যে মানুষ ততদিনে অসীম মহাশূণ্যের গোপন রত্নভান্ডার আর তার বিপুল ঐশ্বর্যের হাতছানিটুকুকে দেখে ফেলেছে, তাকে কি আর মাটির পৃথিবীর ক্ষুদ্রতা দিয়ে আটকে রাখা সম্ভব?

রুবিনকেও আটকানো যায় নি!

দশ বছর কেটে গেছে, মেয়েটি এখন তরুণী। জ্যোতির্বিজ্ঞানে অনার্স শেষ করেছে মাত্র। তার ব্যাচে সেই একমাত্র ছাত্র যে এই বিষয়ে অনার্স করতে পেরেছে। শিক্ষকরা খুব খুশি হয়ে বললেন, আমাদের ভেরা রুবিন বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করবে। সবার অনুপ্রেরণায় রুবিন তাই প্রিন্সটনে আবেদন করল। দিন যায়, মাস যায়, ভেরা অপেক্ষায় থাকে, কবে প্রিন্সটন তাকে পরীক্ষা দিতে আসতে বলবে। কিন্তু বেচারি রুবিন হয়ত জানত না, পৃথিবী তখনও অর্ধেক আঁধারে নিমজ্জিত। প্রিন্সটন রুবিনের আবেদনপত্র খোলার আগেই শুধু নাম দেখে বাতিল করে দিয়েছিল। ১৯৭৫ সালের আগ পর্যন্ত প্রিন্সটনে নারীদের জন্য জ্যোতির্বিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষার কোন সুযোগ ছিল না। আশাহত রুবিন তাই কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স করতে গেল। কর্নেলে তখন রিচার্ড ফাইন্ম্যান, ফিলিপ মরিসন এবং হ্যান্স বেথের মতো মহারথীরা তরুণ শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছেন। মাস্টার্স থিসিসে রুবিন কিছু গ্যালাক্সির গতি নিয়ে কাজ করে দেখল যে তারা খুব সম্ভবত হাবলের সূত্র মেনে চলে না। হাবল সাহেব বলেছিলেন, গ্যালাক্সিগুলোর গতিপথ হিসাব করলে দেখা যাবে যে, তারা সবাই সবার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে এবং যে যত দূরে তার দূরে সরে যাওয়ার গতিও ততো বেশি। হাবল সাহেবের এই সূত্র থেকে মূলত বিগ ব্যাং থিওরি জন্ম নেয়। আমাদের রুবিন বলল, গ্যালাক্সিগুলো হয়ত আসলে সবাই সবার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে না, বরং কোন একটা অজানা কেন্দ্রকে ঘিরে ঘুরছে যেটা দেখলে আমাদের মনে হয় তাঁরা পরস্পর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। কিন্তু একই সময়ে বিগব্যাং থিওরির সপক্ষে এত এত প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছিল যে রুবিনের কাজকে বিজ্ঞানীরা খুবই অপছন্দ করলেন, এমনকি তার কাজ জ্যোতির্বিজ্ঞানের কোন ভালো জার্নালই ছাপতে রাজি হল না। অনেক পরে আমরা জানতে পারি, রুবিনের উপসংহার আসলেই ভুল ছিল, কিন্তু তার পাওয়া পর্যবেক্ষণগুলো ভুল ছিল না, তরুণী রুবিন জানত না তার কাজের অর্থ কী। সে আসলে অনেকগুলো গ্যালাক্সি মিলে যে “লোকাল সুপার-ক্লাস্টার” তৈরি করে তার প্রাথমিক প্রমাণ খুঁজে পেয়েছিল!

এতদিনে আমাদের ছোট্ট রুবিন অনেক বড় হয়ে গেছেন, তিনি জর্জটাউন ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি করতে গেছেন বিখ্যাত বিজ্ঞানী জর্জ গ্যামোর সাথে। কিন্তু তিনি যে গাড়ি চালাতে পারেন না, তাঁর উপর তিনি ততদিনে সন্তানের মা। তাঁর কর্নেলের বন্ধু এবং বর্তমান স্বামী রবার্ট রুবিন এগিয়ে এলেন। চুক্তি হল রুবিন সারাদিন বাচ্চাকাচ্চার দেখাশোনা করবেন, পড়াশোনা সারবেন। রাতে রবার্ট তাকে ক্লাসে নিয়ে যাবেন, ক্লাস করা এবং রাতভর ডিউটি-অ্যাস্ট্রোনমি (রাতে পর্যবেক্ষণের কাজ করা) পর্যন্ত রবার্ট গাড়িতে ডিনার করবেন, ঘুমাবেন। রুবিন সারারাত নক্ষত্র সন্ধান শেষে ভোরে রবার্টের সাথে বাড়ি ফিরবেন। এদিকে বাড়িতে রুবিনের বাবা-মা রাতে নাতি-নাতনীদের দেখভাল করবেন আর দিনের বেলা ঘুমিয়ে নিবেন। এভাবেই জর্জটাউনে রুবিন তাঁর পিএইচডিতে গ্যালাক্সি ক্লাস্টারের ধারণা নিয়ে বিস্তারিত কাজ শুরু করেন এবং ধীরে ধীরে অসাধারণ ফলাফল প্রকাশ করা শুরু করেন, যদিও পরবর্তী পনের-বিশ বছর বিজ্ঞানীরা তাঁর এই সময়ে করা কাজগুলোকে খুব একটা গুরুত্ব দিয়ে নেয়নি। কিন্তু আমরা এখন জানি, রুবিনের দেয়া ব্যাখ্যার মত অনেকগুলো গ্যালাক্সি মিলে আসলেই একটা ক্লাস্টার অব গ্যালাক্সি তৈরি করে, আবার এরকম অনেকগুলো ক্লাস্টার মিলে তৈরি করে লোকাল সুপার-ক্লাস্টার। যেমনঃ মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি যেন আমাদের ‘গ্রাম’, যাতে আছে দশ হাজার থেকে চল্লিশ হাজার কোটি নক্ষত্র, এরকম হাজারখানেক ‘গ্রাম’ নিয়ে আমাদের ‘জেলা’ ভার্গো ক্লাস্টার। আর এরকম তিন থেকে পাঁচশ ক্লাস্টার মিলে মহাবিশ্বে যেন আমাদের একটি ‘দেশ’, যার নাম সুপার-ক্লাস্টার ল্যানিয়াকেয়া। মহাবিশ্বের পোস্টকার্ডে তাই আমাদের ঠিকানাঃ নামঃ মানুষ, গ্রহঃ পৃথিবী, নক্ষত্রঃ সূর্য, গ্যালাক্সিঃ মিল্কিওয়ে, লোকাল ক্লাস্টারঃ ভার্গো, সুপার-ক্লাস্টারঃ ল্যানিয়াকেয়া। এই গল্প শেষ করার আগে আরেকটা জিনিস বলে নেই, ল্যানিয়াকেয়া একটা হাওয়াইয়ান শব্দঃ এর অর্থ হল অপরিসীম স্বর্গ (Immeasurable Heaven)। কি অদ্ভুত সুন্দর, তাই না?

যাই হোক, পিএইচডি শেষ করে ভেরা ‘মন্টগমারি কাউন্টি কমিউনিটি’ কলেজে ইন্সট্রাক্টর হিসেবে কাজ শুরু করেন। এর পরের এগারো বছর তাঁর উত্থান শুরু হয় ছোটখাটো জ্যোতির্বিজ্ঞানের কাজ করে করে। শুধু নারী হওয়ার অজুহাতে বিভিন্ন সময়ে তাঁকে টেকনিশিয়ানের কাজ করতে হয়, অনেক সময় তাঁকে অনেক ইন্সট্রুমেন্ট ধরতেও দেয়া হয়নি কারণ এর আগে ওগুলো কোন নারীবিজ্ঞানীর ব্যবহারের ইতিহাস নেই। এমন প্রতিকূল পরিবেশে তিনি জর্জটাউনে রিসার্চ এসোসিয়েট অ্যাস্ট্রোনমার হিসেবে কাজ করা শুরু করেন। ১৯৫৫ থেকে ১৯৫৯ পর্যন্ত তিনি এই পদে কাজ করে যান। পরের তিন বছর পদোন্নতি পেয়ে লেকচারার হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান। একজন বুদ্ধিমান এবং জ্ঞানী মানুষকে আসলে লিঙ্গের শিকলে বেশিদিন আটকে রাখা যায় না। শেষ পর্যন্ত ১৯৬২ সালে এসে রুবিন তাঁর জর্জটাউন ইউনিভার্সিটিতেই অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ইন অ্যাস্ট্রোনমি হয়ে পূর্ণ মর্যাদার একাডেমিক হয়ে উঠেন। রুবিনের কাজের সবচেয়ে বড় দিকটি ছিল, তিনি খুব বিশাল পরিসরে নিখুঁত এবং নির্ভুল ডাটা নিয়ে কাজ করতেন। তাঁর কাজের সুখ্যাতির জোরে রুবিন ১৯৬৫ সালে বিখ্যাত কার্নেগী ইন্সটিটিউটে কাজ করার সুযোগ পেয়ে যান। তার কিছুদিন পরেই প্রথম নারী-জ্যোতির্বিজ্ঞানী হিসেবে পালোমার অবজারভেটরিতে কাজ করার অনুমতি পান। দুঃখজনক হলেও সত্যি, এর আগে এই অবজারভেটরিগুলোতে কোন নারীর ঢোকার অনুমতি ছিল না। এই পালোমারেই রুবিন তার বন্ধু কেন্ট ফোর্ডের সাথে গ্যালাক্সির গতিপথ নিয়ে কাজ শুরু করেন।

এবার আসি আসল গল্পে। ১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফ্রিটজ জুইকি হঠাৎ দেখতে পান যে, গ্যালাক্সিরা স্বাভাবিক গতির চেয়ে বেশ দ্রুত গতিতে ঘুরে যাচ্ছে। তাঁরা ব্যাপারটাকে ব্যতিক্রম হিসেবে ধরে নেন এবং বলেন যে, আসলে হয়ত আমাদের টেলিস্কোপগুলো সব নক্ষত্রকে এখনও ভালো ভাবে খুঁজে বের করতে সক্ষম না, এজন্য আমাদের প্রাপ্ত ফলাফল পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রগুলোর সাথে পুরোপুরি মিলছে না। এই পর্যবেক্ষণের উৎস ঘাঁটতে গিয়ে ১৯৩৯ সালে হরাস ব্যাবকক নামের এক জ্যোতির্বিজ্ঞানী আরেক অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ্য করেনঃ আমাদের সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশী অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির বাইরের দিকের নক্ষত্রগুলো মহাকর্ষীয় সূত্র অনুসারে যেই গতিবেগে ঘোরার কথা, তার থেকে তারা অনেক বেশি দ্রুত ঘুরছে। সমস্যা হল এত দ্রুত ঘুরলে নক্ষত্রগুলো গ্যালাক্সির সাথে মহাকর্ষীয় সুতোর টানে আটকে থাকতে পারবে না, ছিটকে শূন্যে হারিয়ে যাবে। এ সমস্যার একমাত্র সমাধান হলঃ মহাকর্ষীয় সুতোর টান আরও শক্ত করা। আর মহাকর্ষ শক্ত করার উপায় একটাইঃ আরও বেশি ভর বা পদার্থ জুড়ে দেয়া। যত বেশি ভারী, তত বেশি মহাকর্ষ – নিউটনের সূত্র। কিন্তু ব্যাবকক সাহেব হিসাব কষে দেখলেন, এত পদার্থ তো নেই। গ্যালাক্সিগুলো তৈরি হয় অনেকগুলো নক্ষত্র দিয়ে, আর নক্ষত্ররা আলো দেয়। সুতরাং আলোর পরিমাণ থেকে আমরা হিসাব কষে বের করতে পারি, কতটুকু পদার্থ আছে। ব্যাবকক সাহেব বললেন, আলোর তুলনায় কমপক্ষে ৫০গুণ বেশি পদার্থ থাকতে হবে, যাতে মহাকর্ষীয় সুতো যথেষ্ট শক্তিশালী হয়, যে শক্তি দিয়ে নক্ষত্রগুলোর ঘূর্ণন আমরা ব্যাখ্যা করতে পারব। এত পদার্থ আমরা কোথায় পাবো? ১৯৪০ সালে বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী জর্জ উট আরেকটি গ্যালাক্সি নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে একই ফলাফল খুঁজে পান। এই গবেষণাগুলো পরবর্তীতে রুবিনের হাতে পড়লে তিনি কৌতূহলী হয়ে উঠেন। তিনি তখন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধু কেন্ট ফোর্ডের সাথে স্পাইরাল গ্যালাক্সির ঔজ্জ্বল্য কেন এবং কিভাবে পরিবর্তিত হয় তা বোঝার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু এই ঘূর্ণন সমস্যা রুবিন এবং ফোর্ডের কাজে নতুন মাত্রা দিল। অসাধারণ ধৈর্যশক্তির অধিকারী রুবিন ঠিক করলেন, তিনি আমাদের দূরের-কাছের যতগুলো সম্ভব সব গ্যালাক্সির ঘূর্ণন পরীক্ষা করে দেখবেন। বছরের পর বছর অক্লান্ত পরিশ্রমের পর রুবিন এবং ফোর্ড ২০০ গ্যালাক্সির ঘূর্ণন নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম হন। তাঁর পর্যবেক্ষণলব্ধ ফল থেকে তিনি খুঁজে পান যে, দুইশটির প্রত্যেকটা গ্যালাক্সিই প্রত্যাশার চেয়ে অনেক দ্রুত ঘুরছে এবং ঘূর্ণন গতি এতই বেশি যে, এটাকে নক্ষত্রের সংখ্যা দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। সব ফলাফল এক করে রুবিন দেখলেন, গড়ে গ্যালাক্সিগুলোতে নক্ষত্রগুলো যেই পরিমাণ পদার্থের হিসাব দেয় তার থেকে কমপক্ষে ১০ গুণ বেশি পদার্থ আছে। এটা আমাদের এই উপসংহারে যেতে বাধ্য করে যে, গ্যালাক্সিগুলো বিপুল পরিমাণ অদৃশ্য পদার্থ দিয়ে ভর্তি এবং এই অদৃশ্য পদার্থের পরিমাণটা দৃশ্যমান পদার্থ থেকে অনেক বেশি। আর এই উপসংহারে পৌঁছানোর মানে হল এটা মেনে নেয়া যে, আমাদের মহাবিশ্বের ৯০ ভাগেরও বেশি পদার্থ সম্পর্কে আমরা এখনও কিছুই জানি না।

এ পর্যায়ে এসে একজন জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে রুবিনের আবিষ্কারটা আরেকটু ব্যাখ্যা করে বলার লোভ সামলাতে পারছি না। প্রথমে শুরু করব ঘূর্ণন গতি নিয়ে, ঘূর্ণন গতি দুই রকমঃ দৃঢ় ঘূর্ণন (Rigid body Rotation) আর ব্যবকলনীয় ঘূর্ণন (Differential Rotation). আমাদের মহাবিশ্বে সৌরজগত, নেবুলা, গ্যালাক্সি, এরা সকলেই ব্যবকলনীয় ঘূর্ণন গতি মেনে চলে, কারণ এখানে কেউ কারো সাথে একবারে কোন দৃঢ় বস্তুর মতো জোড়া দেয়া না, বরং সবাই সবার থেকে ছাড়া-ছাড়া, শুধু মহাকর্ষীয় বলের অদৃশ্য সুতোয় বাঁধা। এখন এই ব্যবকলনীয় গতির বৈশিষ্ট্য হলঃ আপনি ঘূর্ণন কেন্দ্র হতে যত দূরে যাবেন, ঘূর্ণন গতি তত কমতে থাকবে। সুতরাং একটা নক্ষত্র, (যেমনঃ সূর্যের) কাছের গ্রহগুলোর গতিবেগ অনেক বেশি হবে দূরেরগুলোর তুলনায়। এবং বাস্তবেও আমরা তাই পাই, শুক্র বা পৃথিবীর থেকে নেপচুন বা ইউরেনাস অনেক ধীরে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। একই সূত্র যদি আমরা গ্যালাক্সিগুলোর ক্ষেত্রে খাটাই তাহলে আমাদের পাওয়া উচিৎ যে গ্যালাক্সির কেন্দ্র হতে দূরে অবস্থিত নক্ষত্রের চেয়ে কাছাকাছি নক্ষত্র, কোয়াসার, ব্ল্যাকহোলগুলো অনেক দ্রুতবেগে ঘূর্ণনশীল। সুতরাং আমরা যদি একটা দূরত্ব বনাম ঘূর্ণন রেখা (Galactic Rotational Curve) আঁকি, তাহলে দেখব দূরত্বের সাথে সাথে ঘূর্ণন গতি হ্রাস পাচ্ছে। কিন্তু রুবিন দেখালেন, যে ঘটনা সেটা না, বরং একটা দূরত্বের পর থেকে ঘূর্ণন গতি না কমে প্রায় ধ্রুব হয়ে যায় (সামান্য বাড়তে থাকে)। এই ঘটনা আমাদের জানা কোন মহাকর্ষ সূত্র দিয়ে কোনভাবেই ব্যাখ্যা করা যায় না। এজন্য এটাকে বলা হয় পদার্থবিজ্ঞানের অন্যতম অসমাপ্ত সমস্যাঃ ‘দ্যা গ্যালাক্সি রোটেশন প্রব্লেম’।

আগেই বলেছি ক্যাল্টেকের সুইস জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফ্রিটজ জুইকি কোমা ক্লাস্টারের উপর গবেষণা করতে গিয়ে “রোটেশন প্রব্লেম” আঁচ করেন। তারও আগে ডাচ জ্যোতির্বিজ্ঞানী জ্যাকোবাস কাপ্তান নক্ষত্রের গতি নিয়ে কাজ করতে গিয়ে এরকম সমস্যায় পড়েন। ফ্রিটজ জুইকি এ সমস্যা সমাধানের জন্য এক নতুন পদার্থ প্রস্তাব করেন যার নামঃ ডাঙ্কলে ম্যাটারে (জার্মান), ইংরেজিতে বললে “ডার্ক ম্যাটার”। তিনি বলেন, গ্যালাক্সিগুলোতে এমন কিছু পদার্থ আছে যারা আলো তৈরি করে না এবং কোন আলো প্রতিফলিতও করে না। এদেরকে আমরা টেলিস্কোপে দেখতে পাই না, কিন্তু এদের ভর ঠিকই গ্যালাক্সিগুলোর ঘূর্ণনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। ১৯৩৬ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানী সিনক্লেয়ার স্মিথ ভার্গো ক্লাস্টারের উপর কাজ করতে গিয়েও প্রায় একই কথা বলতে বাধ্য হন যে, ওই অঞ্চলে ডার্ক ম্যাটার বা কৃষ্ণপদার্থের পরিমাণ লুমিনাস ম্যাটার বা আলোকোজ্জ্বল পদার্থের থেকে অনেক অনেক বেশি। তবে এসবই ছিল বিচ্ছিন্ন কাজ এবং বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতে চাইতেন না যে, এটা একটা ইউনিভার্সাল ফেনমেনন যার ব্যাখ্যার জন্য নতুন পদার্থবিজ্ঞান প্রয়োজন। ভেরা রুবিনের কাজ ছিল একটি পরিপূর্ণ গবেষণা এবং এটি বিজ্ঞানীদের শেষ পর্যন্ত গ্রহণ করাতে বাধ্য হয় যে, আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের বড় ধরণের পরিবর্তন ছাড়া আমাদের মহাবিশ্বের আচরণ বোঝা কখনো সম্ভব হবে না।

ভেরা রুবিনের গ্যালাক্সি রোটেশন কার্ভ যখন সন্দেহাতীতভাবে কৃষ্ণপদার্থের অস্তিত্ব প্রমাণ করল তখন বিজ্ঞানীরা ধীরে ধীরে আরও অনেক রহস্যের কূল-কিনারা পেতে শুরু করলেন। যেমনঃ বিভিন্ন ক্লাস্টারে গ্যালাক্সিগুলোর গতিপথ, মহাকর্ষীয় লেন্স (মহাকর্ষের প্রভাবে বক্র স্থানকালে আলো বেঁকে যায়, ফলে ভারী বস্তুর আশেপাশে দিয়ে যাওয়া আলো লেন্সের মধ্য দিয়ে যাওয়া আলোর মতো আচরণ করে) এবং নক্ষত্রগুলো কিভাবে এবং কেন গ্যালাক্সিতে বন্টিত থাকে ইত্যাদি। সবচেয়ে জরুরি হল, আমরা এখন মহাবিশ্বের যেই মডেলটা ধরে কাজ করি, এতে প্রায় ২৭ ভাগ কৃষ্ণপদার্থ এবং ৩ ভাগ আমাদের চেনা-জানা পদার্থ। কৃষ্ণপদার্থের অস্তিত্ব ছাড়া তাই আধুনিক মহাবিশ্বের মডেল দাঁড়া করানোই কখনও সম্ভব হত না। তবে সোনার সিন্দুক পাওয়া গেলেও আমরা কিন্তু এখনও তালা ভাঙ্গতে পারিনি। আমরা এখনও জানি না, কৃষ্ণপদার্থ কীঃ সে কি কোন ভারী পারমাণবিক কণা দিয়ে তৈরি, যে আলোর সাথে কোন ইন্টারঅ্যাক্ট করে না, তাই আমরা তাকে কখনও দেখি না? নাকি সে আসলে মহাকর্ষীয় সূত্রের কোন ত্রুটি? বিজ্ঞানী রুবিন মনে করতেন, কৃষ্ণপদার্থের স্বরূপ পাওয়া যাবে মহাকর্ষ সূত্রের সংশোধনের মাধ্যমে। যদিও একবিংশ শতাব্দীতে এসে ভারী পারমাণবিক কণাই বিজ্ঞানীদের পছন্দের পাত্রী, কিন্তু সত্যি বলতে কৃষ্ণপদার্থের ব্যাপারে আমরা এখনও অসীম অন্ধকারেই হাতড়ে বেড়াচ্ছি।

বিজ্ঞানী জীবনের শুরু থেকেই জ্যোতির্বিজ্ঞানী রুবিনকে নানাভাবে লিঙ্গবৈষম্যের স্বীকার হতে হয়েছে। এজন্যই হয়ত একাডেমিয়ায় রুবিন নিজেকে নারীবিজ্ঞানীদের অধিকার রক্ষার শক্তি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। কত আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে রুবিন আয়োজকদের ফোন করে জানতে চেয়েছেন নারী এবং পুরুষ বিজ্ঞানীদের অনুপাতে এত বিশাল পার্থক্য কেন? তাঁদের অনুরোধ করেছেন, আরও বেশি করে নারী বিজ্ঞানীকে আমন্ত্রণ করতে। অন্যদিকে নারীবিজ্ঞানীদের তিনি যোগাযোগ করে উৎসাহিত করেছেন আরও বেশি করে অংশগ্রহণ করতে। সম্মান ও খ্যাতির চূড়ান্তে তিনি যখন অ্যামেরিকার ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সের মেম্বার তখনও পরিশ্রম করেছেন কিভাবে একাডেমির প্যানেলে আরও নারীদের অন্তর্ভুক্ত করা যায়। তাঁর নিরন্তর প্রচেষ্টায় অসংখ্য নারীবিজ্ঞানী একাডেমিয়ায় আসতে উদ্বুদ্ধ হন। এত চেষ্টার পরও তাঁর কন্ঠে আক্ষেপ ছিল, যেটা প্রমাণ করে নারীদের বিজ্ঞান-সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে এখনও লিঙ্গবৈষম্যের অন্ধ ঘুপচি পার হতে হয়। ভেরা রুবিন ছিলেন সেই অন্ধকার পথের মঙ্গল দূত।

রুবিনের গল্প শেষ করব দুটি জিনিস দিয়েঃ রুবিনের সহকর্মীরা বলেন, রুবিনের মতে বিজ্ঞানে তাঁর সবচেয়ে বড় অবদান তাঁদের চার সন্তান, দুই জন ভূতত্ত্বে পিএইচডি-ধারী, অন্য দুইজনের মধ্যে একজন কসমোলজি এবং আরেকজন গণিতে পিএইচডি-ধারী! একজন বিজ্ঞানী মা যে সমাজের কত বড় সম্পদ সেটা বোধহয় এরপরে আর আলাদা করে বুঝিয়ে দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। দ্বিতীয় জিনিসটি হল, রুবিনের নোবেল প্রাপ্তি নিয়ে। আমার মতো চুনোপুঁটিসহ অনেক বড় বড় বিজ্ঞানীদের আশা ছিল নোবেল পুরষ্কার রুবিনের হাতে উঠবে। কিন্তু এ বছর ২৫শে ডিসেম্বর আটাশি বছর বয়সে এক নক্ষত্রের রাতে রুবিন পরপারে চলে যান। আমাদের এক প্রফেসর মজা করে বলতেন, নোবেল প্রাইজ পেতে হলে গবেষণার সাথে ভালো খাওয়া এবং ব্যায়াম জরুরি, কেননা অনেকদিন বেঁচে না থাকতে পারলে নোবেল পাওয়া যায় না। কিন্তু ৮৮ বছর মর্ত্যে থেকেও কোন কারণে রুবিনের হাতে নোবেল উঠেনি। কেউ বলেন তাঁর ‘নারী’ পরিচয় হয়ত এখানেও ভূমিকা রেখেছে, কেউ বলেন রুবিনের নির্ঝঞ্ঝাট অনাড়ম্বর জীবন হয়ত নোবেলের চোখে পড়ার মতো যথেষ্ট চাকচিক্যময় ছিল না। আবার তাঁর কাজ কৃষ্ণপদার্থের অস্তিত্ব প্রমাণ করলেও, যেহেতু আমরা এর স্বরূপ জানি না তাই হয়ত নোবেল কমিটি আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে চেয়েছিলো। যে কারণই হউক, রুবিনের কাছের মানুষরা সবাই বলবেন, রুবিন কোন পুরষ্কার বা খ্যাতি নিয়ে কখনও কিছু ভাবেননি। নক্ষত্র যার সাথী, মর্ত্যের খ্যাতি দিয়ে তাঁর কিই বা আসে যায়? রুবিনের ভাষায়, “Fame is fleeting, my numbers mean more to me than my name. If astronomers are still using my data years from now, that’s my greatest compliment.”

রুবিনের গল্পের শেষটা হউক শুরু দিয়েই। ঐ যে শুরুতে বলেছিলাম না? প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি ভেরা রুবিনের অ্যাপ্লিকেশন খুলে দেখার আগেই বাতিল করে দিয়েছিল? ২০০৫ সালে এসে সেই প্রিন্সটন তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টরেট প্রদান করে!

“Don't shoot for the stars, we already know what's there. Shoot for the space in between because that's where the real mystery lies.” – Vera Cooper Rubin (1928–2016).

ভেরা রুবিনের পাওয়া উল্লেখযোগ্য পদকঃ
National Medal of Science (1993)
Gold Medal of the Royal Astronomical Society (1996)
Weizmann Women & Science Award (1996)
Gruber International Cosmology Prize (2002)
Catherine Wolfe Bruce Gold Medal of the Astronomical Society of the Pacific (2003)
James Craig Watson Medal of the National Academy of Sciences (2004)
Dickson Prize for Science

ভেরা রুবিনের অ্যান্ড্রোমিডা নিয়ে করা বিখ্যাত কাজের পিডিএফ লিঙ্কঃ
http://articles.adsabs.harvard.edu/cgi-bin/nph-iarticle_query?1970ApJ...159..379R&data_type=PDF_HIGH&whole_paper=YES&type=PRINTER&filetype=.pdf

পরিশিষ্টঃ
Dark Matter এর বঙ্গানুবাদ হিসেবে 'কৃষ্ণপদার্থ' ব্যবহার করা হয়েছে। এটি আমি ইচ্ছা করেই করেছি, কারণ এটি শুনতে এবং লিখতে আমার কাছে বেশি সহজবোধ্য এবং সাবলীল লেগেছে। আসলে Dark Matter ডার্ক বা অন্ধকারও না। বরং একে বলা উচিৎ Transparent Matter বা স্বচ্ছ পদার্থ, কারণ এরা আলোর সাথে কোন ইন্টারঅ্যাক্ট করে না, আলো এদের ভেতর দিয়ে কোন পরিবর্তন ছাড়াই যাওয়া-আসা করতে পারে।

Differential Rotation এর অর্থও আমি নিজের মতো বানিয়েছি। উচ্চমাধ্যমিকের বই হতে ব্যবকলন নামটি ধার নিয়ে ব্যবকলনীয় ঘূর্ণন লিখেছি, আশা করি এটি মূল অর্থকে পরিবর্তন করে না। অনুবাদের ব্যাপারে আগ্রহী পাঠকের উপদেশ কাম্য।

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ উইকিপেডিয়া https://en.wikipedia.org/wiki/Galaxy_rotation_curve

- বাহাউদ্দীন

ছবি: 
01/06/2007 - 1:46পূর্বাহ্ন

মন্তব্য

মেঘলা মানুষ এর ছবি

জনাব বাহাউদ্দীন,
একবসায় পড়ে ফেললাম! প্রথমে লেখাটায় ক্লিক করে, ভেবেছিলাম কিছু বুঝব না, হয়ত একগাদা খটমটে জিনিস থাকবে ভেতরে। অথচ, আপনি জ্যোতিপদার্থবিজ্ঞানের মত একটা জিনিস খুব স‌হজে তুলে ধরলেন, পরিচয় করিয়ে দিলেন একজন গুণী বিজ্ঞানীর সাথে।
ড. ভেরা রুবিনের জন্য অনেক শ্রদ্ধা শ্রদ্ধা

শুভেচ্ছা হাসি

বাহাউদ্দীন এর ছবি

অনেক অনেক ধন্যবাদ! মন্তব্য পড়ে অনেক ভালো লাগলো। ভালো থাকবেন।

রুবিনের জন্য শ্রদ্ধা শ্রদ্ধা

রাহীমা জান্নাত এর ছবি

অসাধারন লিখা !!
*হ্যাটসঅফ হাসি

বাহাউদ্দীন এর ছবি

আপনারে অসংখ্য আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- ! আশা করি সামনে আরও কিছু ভালো গল্প শুনাতে পারব হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

বছরের প্রথম দিন এমন একটা পোস্ট পড়ে শুরু করতে পারলাম, আশা করি ব্লগ পড়ার ব্যাপারে বছরটা এমনই ভালো যাবে। অসংখ্য ধন্যবাদ। বিষয় আকর্ষনীয়, ভাষা যথারীতি সাবলীল। অনেক দিন পরে লিখলেন। আরেকটু নিয়মিত হবার চেষ্টা করুন, তাতে আমরা উপকৃত হই।

ভেরা কুপারের জন্য বিনীত শ্রদ্ধা।

বাহাউদ্দীন এর ছবি

মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ! এ বছর চেষ্টা থাকবে আরও নিয়মিত লেখার। হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

হাচলাভিনন্দন!

বাহাউদ্দীন এর ছবি

দেঁতো হাসি

মৌমাছি এর ছবি

অসাধারণ লেখা, প্রাণভরে পড়লাম। ভবিষ্যতে আপনার কাছে এমন আরও অনেক লেখা পাওয়ার আশায় রইলাম।

বাহাউদ্দীন এর ছবি

মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ! চেষ্টা থাকবে এরকম আরও ভালো কিছু লেখার। হাসি

Md Rashed Hasan এর ছবি

অনেক ভালো লাগলো ভাইয়া।।। সহজবোধ্য ও তথ্যবহুল।।।

বাহাউদ্দীন এর ছবি

থ্যাঙ্ক ইউ রাশেদ সাহেব হাসি

হিমু এর ছবি

সচলায়তনে স্বাগতম, বাহাউদ্দীন। নতুন বছরে এমন আরো চমৎকার সব লেখা উপহার দিন আমাদের।

বাহাউদ্দীন এর ছবি

আপনাদের মতো অসাধারণ এবং অভিজ্ঞ ব্লগারদের মন্তব্য আমাদের মতো নবীনদের লেখালেখি করার সাহস এবং অনুপ্রেরণা যোগায়। মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। হাসি

Afia Mubasshira Momi এর ছবি

অসাধারণ একটি লেখা
নারী বিজ্ঞানীদের পিছিয়ে রাখার এই ট্রেনড টা এখনও রয়ে গেছে আর পরিবারের অসমর্থন তো রয়েছেই। তার উপর বাংলাদেশে কোথাও জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়টাও নেই।তাই অনেকের স্বপ্নের সলিল সমাধি হচ্ছে।বাংলাদেশের মত দেশে যেখানে চাকরির বাজার মন্দা আর দুর্নীতিতে ভরা তারপরও বাবা মা সন্তানকে সেই প্রচলিত বিষয় যা পড়লে চাকরি বা বিসিএস এ ভালো করা যায় সেই বিষয় এ পড়তেই জোড় দিবেন,আর মেয়ে হলে তো কথাই নাই।বিজ্ঞানী হওয়ার ব্যাপারটা এখনও বাবা মা রা ঠিকভাবে নিতে পারেন না,ছেলেদের জন্য যদি বা কন্সিডার করেন মেয়ে!!!! আবার বিজ্ঞানী হতে চায়!!!!!!!! আস্তাগফিরুল্লাহ্‌
হয়ত আপনারা যদি উদ্যোগ নেন বাবা মাদের কে বুঝানোর যাতে তারা মেয়েদের এই গবেষণার ফিল্ড এ আরও বেশি আসতে দেয় এবং সহযোগিতাও করে তাহলে হয়ত ভালো কিছু হতে পারে।

বাহাউদ্দীন এর ছবি

মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ!

ব্যক্তিগতভাবে আমার পরিচিত বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন এবং অনুজদের মধ্যে আমি অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করি বিজ্ঞানী হতে বা বিজ্ঞানের কোন বিষয়ে ক্যারিয়ার গড়তে। আর এটা এখন প্রমাণিত যে, ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে যে কেউ বিজ্ঞানে ভালো করতে পারে, এখানে লিংগ বা জাতি কোন বিষয় নয়। উন্নয়নশীল দেশ বলেই হয়ত আমাদের পরিবারগুলো সন্তানের জন্য একটি সহজ এবং নিশ্চিত ক্যারিয়ার চায়। তার সাথে সামাজিক কাঠামো এবং ধর্মীয় সংস্কৃতি অনেক বড় একটা ভূমিকা পালন করে। তারপরও নতুন প্রজন্মে অনেক পরিবর্তন আসছে। তবে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, বাংলাদেশ থেকে ফার্স্ট জেনারেশন লেডি সায়েন্টিস্ট যারা হবেন, তাঁদের আসলেই অনেক চড়াই-উথড়াই পার হয়ে লক্ষ্যে পৌঁছতে হবে এবং তাঁরাই আসলে পরের জেনারেশনের জন্যও রাস্তা আরেকটু সহজ করে দিতে পারবেন। এভাবেই আস্তে আস্তে একটা মসৃণ এবং সমতল রাস্তা তৈরি হবে। আপনাদের উপর দায়িত্ব তাই অনেক বেশি, শুধু নিজের জন্য না, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও আপনাদের এই পর্বত জয় করতে হবে।
আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্মকে আরেকটু উৎসাহিত করতে নতুন নতুন লেখার প্রচেষ্টা থাকবে। আরেকটা ভালো জিনিস হয়, যদি আপ্নারাও লিখেন, আপনাদের স্বপ্ন এবং সংগ্রাম নিয়ে। সেটাও কিন্তু অন্যদের অনেক অনুপ্রাণিত করবে।

পরিশেষে আবারও ধন্যবাদ। আপনার মন্তব্যের জন্য কিছুটা হলেও লেখার সার্থকতা অনুভব করছি।

জিজ্ঞাসু এর ছবি

খুব ভাল লাগল লেখাটি। বিজ্ঞানের উপর এমন সাবলিল লেখা আরও লিখুন।

___________________
সহজ কথা যায়না বলা সহজে

বাহাউদ্দীন এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ! আশা করি, সামনে আরও কিছু ভালো গল্প শুনাতে পারব হাসি

সত্যপীর এর ছবি

চমৎকার। খুবই চমৎকার। আপনার লেখার হাত ভালো, আগের পোস্টেই বলেছি মনে হয়। নিয়মিত হোন সচলে, লিখে চলুন হাত খুলে।

..................................................................
#Banshibir.

বাহাউদ্দীন এর ছবি

মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ! দেঁতো হাসি হ্যাঁ, আগেও এমন প্রশংসা করেছেন, তাও বারবার শুনতে ভালোই লাগে খাইছে লইজ্জা লাগে

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

ইয়ে, মানে... ইয়ে মানে পাঠকদেরও একটু নিয়মিত হওয়া দরকার।

সত্যপীর এর ছবি

আমারে কন? চিন্তিত

..................................................................
#Banshibir.

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

বাহ! চমৎকার লেখা! চলুক

গৃহবাসী বাউল এর ছবি

দুর্দান্ত লিখেছেন। এক দমে পড়ে ফেললাম।

সচলায়তনে স্বাগতম। হাত খুলে আরো লিখুন এই সব বিষয়ে। আপনার লেখার হাত খুবই ভালো।

হাততালি পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

-----------------------------------------------------------
আঁখি মেলে তোমার আলো, প্রথম আমার চোখ জুড়ালো
ঐ আলোতে নয়ন রেখে মুদবো নয়ন শেষে
-----------------------------------------------------------

বাহাউদ্দীন এর ছবি

অনেক অনেক ধন্যবাদ! অনুপ্রাণিত হলাম হাসি

হিমু এর ছবি

পরিভাষা নিয়ে আপনাকে সাগ্রহে কাজ করতে দেখে একই সাথে আনন্দ আর ভরসা পাচ্ছি। বাংলায় বিজ্ঞান নিয়ে যতো বেশি লেখা হবে, পরিভাষা ততো সমৃদ্ধ হবে। এটা বিজ্ঞানের ছাত্র-শিক্ষক-গবেষকদের সক্রিয়তা ছাড়া সম্ভব নয়।

রিজিড-বডি রোটেশন (যেখানে বস্তুর সমস্ত বিন্দু কোনো অক্ষের সাপেক্ষে একই কৌণিক বেগ নিয়ে ঘোরে?) এর বাংলা "সুষম ঘূর্ণন" আর ডিফারেনশিয়াল রোটেশনের বাংলা "বিষম ঘূর্ণন" হলে কেমন হয়?

ছায়াপথের ক্লাস্টার আর সুপার-ক্লাস্টারের বাংলা কী করা যায়? জ্যোতির্গুঞ্জ আর জ্যোতিঃস্তবক?

বাহাউদ্দীন এর ছবি

সুষম এবং বিষম ঘূর্ণন এর বাংলাটা খুব ভালো হয়েছে। আপনারটাই এখন থেকে ব্যবহার করব।

ক্লাস্টার এর বাংলা মনে হয় পুঞ্জ করলে আরও ভালো হয়ঃ নক্ষত্রপুঞ্জ, গ্যালাক্সিপুঞ্জ ইত্যাদি। সুপার-ক্লাস্টার নিয়ে আরও একটু ভাবতে হবে, মহাপুঞ্জ হয়ত বলা যায় (কিন্তু আমার খুব একটা পছন্দ হচ্ছে না)। ভালো কিছু পেলে অবশ্যই জানাবো।

মন্তব্যের জন্য আবারও ধন্যবাদ। হাসি সামনের লেখাগুলোতে আরও পরিভাষা সংযুক্ত করার প্রয়াস থাকবে।

অতিথি লেখক এর ছবি

রিজিড বডি রোটেশন'কে সুষম ঘুর্ণন হয়তো বলা যায়, কিন্তু ডিফারেন্সিয়াল রোটেশন'কে বিষম ঘুর্ণন বললে সেটা শুনতে ভালো শোনালেও অর্থটা মনে হয় ঠিক হয় না। ডিফারেন্সিয়াল'কে ব্যবকলনিয় বললে এটা ব্যবকলন ঘুর্ণন বলতে হয়। এই শব্দটা ঠিক জুতের হলো না। এটা নিয়ে আরও ভাবতে হবে।

সূর্যের পরিবারকে সৌরজগত বললে অনুরূপ অন্য নক্ষত্রদের পরিবারকেও সৌর পরিবার বলাটা ঠিক হয়। সেক্ষেত্রে গ্যালাক্সি'র বাংলা হওয়া উচিত সৌরপুঞ্জ অথবা নক্ষত্রপুঞ্জ, যদিও একে কোথাও ছায়াপথ, কোথাও সরাসরি গ্যালাক্সিই বলা হয়। সেভাবে ভাবলে ক্লাস্টার-এর বাংলা জ্যোতির্পুঞ্জ ঠিক হয়। একই হিসাবে সুপার-ক্লাস্টার'কে মহাজ্যোতির্পুঞ্জ, জ্যোতির্গুচ্ছ, বা জ্যোতির্স্তবক বলা যায়।

এগুলো শুধু আমরা বললে হবে না। নিয়মিতভাবে বাংলায় জ্যোতির্বিজ্ঞানবিষয়ক প্রবন্ধ, নিবন্ধ, সংবাদ, পুস্তক, অভিসন্দর্ভ, আলোচনা ইত্যাদিতে এই পরিভাষা ব্যবহার করে করে জনপ্রিয় করে তুলতে হবে। কামাল আতাতুর্ক তার দেশে জ্যামিতিতে আরবী-ফার্সী পরিভাষাকে হঠিয়ে তুর্কী পরিভাষার প্রচলন করেছিল। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানে এমন সহজ, সুন্দর, সঠিক অর্থবোধক পরিভাষা ব্যবহার করলে কোন প্রকার কামালীয় কায়দা ছাড়াই বাংলায় বিজ্ঞানের পরিভাষা চালু হয়ে যাবে।

হিমু এর ছবি

ডিফারেন্সিয়াল রোটেশন'কে বিষম ঘুর্ণন বললে সেটা শুনতে ভালো শোনালেও অর্থটা মনে হয় ঠিক হয় না।

বেঠিক হয় কীভাবে?

অতিথি লেখক এর ছবি

বাংলায় যেটাকে 'বিষম' বলা হয় ইংলিশে সেটাকে বোধকরি incongruous বা inharmonious বলা যায়। অন্যদিকে ডিফারেন্সিয়াল রোটেশনে accretion বলয় (অথবা চাকতি, অথবা গোলক)-এর অন্তর্ভূক্ত বডি'গুলোর (বডি'র বাংলা কী হয়?) মধ্যে ঘুর্ণন বিবেচনায় পরস্পরের মধ্যে হারমনি'র অভাব আছে ঠিকই, কিন্তু তারা প্রত্যেকে আলাদা আলাদা ভাবে সুষম ঘুর্ণনের নিয়ম মেনে চলছে। এই বিবেচনায় আমি এটিকে বিষম ঘুর্ণন বলা ঠিক হয় না বলেছি। তাহলে বিষম ঘুর্ণন কাকে বলবো? আমার বিবেচনায়, পরিবর্তিত অবস্থান বা কালের সাপেক্ষে কোন বডি'র ঘুর্ণন বা কৌনিক গতিবেগ অনিয়মিতভাবে পরিবর্তিত হলে তাকে বিষম ঘুর্ণন বলা যায়।

আমি যা কিছু বলেছি সেগুলো প্রস্তাব মাত্র। সেগুলোর ভিত্তি আমার শিখনচেষ্টাসঞ্জাত বিবেচনা। যেহেতু আমার শিখন সম্পূর্ণ নয়, তাই আমার বিবেচনা অভ্রান্ত নয়। আলোচনার মাধ্যমে আমরা সঠিক সিদ্ধান্তের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারবো।

হিমু এর ছবি

তাহলে বিষম ঘুর্ণন কাকে বলবো? আমার বিবেচনায়, পরিবর্তিত অবস্থান বা কালের সাপেক্ষে কোন বডি'র ঘুর্ণন বা কৌনিক গতিবেগ অনিয়মিতভাবে পরিবর্তিত হলে তাকে বিষম ঘুর্ণন বলা যায়।

এটা বেশ যৌক্তিক। ডিফারেনশিয়াল রোটেশনকে "অসম ঘূর্ণন" বলা যায় তাহলে।

অতিথি লেখক এর ছবি

ডিফারেন্সিয়াল রোটেশনকে 'অসম ঘুর্ণন' বলাটা যৌক্তিক, জুতসই এবং শ্রুতিমধুর। ধন্যবাদ। ঠিকঠাক আলোচনা চালালে আমরাই পরিভাষাসংক্রান্ত অনেক সমস্যার সমাধান করে ফেলতে পারবো।

বাহাউদ্দীন এর ছবি

মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

এটা ঠিক যে 'ডিফারেন্সিয়াল রোটেশন'কে 'বিষম' বা 'অসম' ঘুর্ণন বললে সেটার অর্থ পুরোপুরি ঠিক হয় না, কেননা কোনটাই প্রকৃত অর্থের উপর সুবিচার করে না। তবে পরিভাষার ক্ষেত্রে সবসময় আক্ষরিক অনুবাদ হতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা কিন্তু নেই। উপরে মূল লেখায় যেমন ডার্ক ম্যাটারের কথা বলেছি। 'সুষম' এবং 'বিষম' নাম দুইটা এজন্যই আমার ভালো লেগেছে যে এই নাম থেকে দুইটা ঘূর্ণনের মধ্যে যে মৌলিক পার্থক্য সেটা মোটামুটি বোঝা যায়। যাই হোক, একদম ঠিক ঠিক অর্থ বোঝায় এমন পরিভাষা পাওয়া না গেলে মনে হয় সাবলীল এবং সহজবোধ্যটা নেয়াই উত্তম।

আবার গ্যালাক্সি শব্দটা কিন্তু গ্রীক 'গ্যালাক্সিয়াস কায়ক্লোস' শব্দ থেকে এসেছে, যার আক্ষরিক অর্থ হল 'মিল্কি ওয়ে'। আমরা বাংলায় 'মিল্কি ওয়ে'-কেই অনুবাদ করি 'ছায়া পথ' হিসেবে। সেই হিসেবে, গ্যালাক্সির বাংলা ছায়াপথ হওয়া একরকম ঠিক আছে। আবার বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে, 'মিল্কিওয়ে' কিন্তু অনেকগুলো নক্ষত্রপুঞ্জের মধ্যে একটি। সেই হিসেবে, মিল্কিওয়ে বাদে বাকি সবাইকে গ্যালাক্সি নামে ডাকা উচিৎ না। আসলে মানুষ প্রথমদিকে শিখেছিল এভাবে, (এক) মিল্কিওয়ে বলে একটা নক্ষত্রপুঞ্জ আছে। (দুই) তাকে আমরা গ্যালাক্সি ডাকব। মজার ব্যাপার হল, এরপর থেকে অতি বড় যে কোন জিনিসকে মানুষ গ্যালাক্টিক ডাকা শুরু করে দিয়েছিল। সুতরাং এটা আর একটা নাম(সংজ্ঞা)বাচক বিশেষ্য রইল না, হয়ে গেল বস্তুবাচক বিশেষ্য (তিন) পরবর্তীতে এরকম লক্ষ লক্ষ গ্যালাক্সি সদৃশ বস্তু পাওয়া গেল, তাই তাদেরকেও আমরা ঠিক করলাম গ্যালাক্সি নামেই ডাকব। আর এখন মানুষ আগে শিখে যে, নক্ষত্রপুঞ্জকে গ্যালাক্সি বলে, এরপর শিখে আমাদের গ্যালাক্সির নাম 'মিল্কিওয়ে' গ্যালাক্সি। বিজ্ঞানের ইতিহাস তাই নামকরণের পেছনে বেশ বড় ভূমিকা রাখে, যদিও সেই নামকরণ হয়ত সঠিক বৈজ্ঞানিক অর্থ বহন করে না।

সচল পরিবারকে ধন্যবাদ পরিভাষা নিয়ে সমালোচনার জন্য। এভাবেই আশা করি বিজ্ঞানের জগতে আমাদের ভাষার ভান্ডার আরও একটু সমৃদ্ধ হবে।

হিমু এর ছবি

মিল্কিওয়ের বাংলা সম্ভবত আকাশগঙ্গা।

বাহাউদ্দীন এর ছবি

খুব সম্ভবত নাইন-টেনে থাকতে বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রনমি অ্যাসসিয়েশনের একটা বইয়ে পড়েছিলামঃ আকাশগঙ্গা এবং ছায়াপথ দুইটাই নাকি মিল্কিওয়ে শব্দের সমার্থক। আমার কেন জানি শব্দগঠন শুনে মনে হয় আকাশগঙ্গাটা ঐ পাড়ের বাংলা থেকে এসেছে।

বাহ, আপনিও 'অসম' বলেছেন। আমি না জেনেই 'অসম' নিয়ে ভাবছিলাম। যাই হোক, আমার সামনে পরিভাষা নিয়ে এরকম আরও অনেক পরামর্শ লাগবে। আমাদের মহাবিশ্বের বর্তমান গ্রহণযোগ্য কাঠামো 'ফ্রিডম্যান-রবারটসন-ওয়াকার' মডেল নিয়ে একটা লেখা লেখার ইচ্ছা আছে। সেখানে অনেক ইংরেজি সায়েন্টিফিক টার্ম আছে, যেগুলোর কোন গ্রহণযোগ্য বাংলা পরিভাষা আমি জানি না।

হিমু এর ছবি

বাংলায় বিজ্ঞানের পরিভাষার একটা অংশ "ঐ পাড়ে" বসেই করা হয়েছে, সেগুলো আমরা পাঠ্যবইতে ব‌্যবহারও করেছি ছাত্রাবস্থায়। যেহেতু ভাষাটা দুই পাড়ের মানুষের মুখেই আছে, যুৎসই আর সুন্দর কিছু পেলে পাড়নির্বিচারে ব্যবহার করাই মনে হয় ভালো। কিছু পার্থক্য থাকবেই, সেগুলো বরং বৈচিত্র্য বাড়াবে।

আপনি ফ্রিডম্যান-রবার্টসন-ওয়াকার প্রস্তাবিত ছাঁচ নিয়ে লেখায় যেসব ইংরেজি শব্দের পরিভাষা প্রণয়ন করতে চান, একটা আলাদা পোস্ট দেবেন নাকি সেগুলো নিয়ে? আমি, আপনি আর আমাদের নামকুণ্ঠ অতিথি বন্ধু কাজ শুরু করি, ক্রমশ হয়তো এ কাজে আরো পাকা মানুষ যোগ দেবেন আমাদের সাথে। ভেরা রুবিনের মতো আমিও মনে করি, বাংলায় বিজ্ঞানের পরিভাষায় যে "স্পেস ইন বিটুইন" আছে, উই শুড শুট ফর দ্যাট।

যদিও আমাদের অতিথি বন্ধু একটু নৈরাশ্যবাদী, কিন্তু আমি মনে করি আমাদের দিয়েই হবে, এভাবেই হবে। পাঠ্যবইতে দেখলাম ছাগল গাছে উঠে আম খাচ্ছে, সো, মাইলস টু গো বিফোর উই স্লিপ (ডাবল ই বা আই যা খুশি বসানো যাবে এখানে)।

বাহাউদ্দীন এর ছবি

পাড় নিয়ে আমার কোন পক্ষপাত নেই, ঐ পাড়ের বাংলা আমার বেশ পছন্দ। সত্যি বলতে আমার বাবার দিকের পরিবারের অর্ধেক এখনও ঐ পাড়েই থাকে। আমার দাদার পরিবার খুলনার বাসিন্দা ছিলেন আর দাদীর পরিবার পশ্চিমবঙ্গের। এজন্য দাদী, একমাত্র ফুপু এবং এক কাকা এখনও পশ্চিমবঙ্গের বারাসাতের বাসিন্দা রয়ে গেছেন। ছোটবেলায় দেখতাম আমার মা-খালারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খাস আঞ্চলিক ভাষায় কথা বললে দাদী আঁচলে মুখ লুকাতেন খাইছে

এটা ভালো বলেছেন, ইংরেজি শব্দের পরিভাষা নিয়ে একটা আলাদা পোস্ট দিয়ে সবার সাহায্য চাওয়া যেতে পারে। কিছুদিন আগে স্কেলার আর ভেক্টর ফিল্ড এর বাংলা কি লিখব ভাবতে ভাবতেই দুইদিন চলে গিয়েছিল। এখন আপাতত পড়াশুনা করছি, করা শেষ হলে আমি সব একসাথে করে একটা পোস্ট দিবনে।

মাইলস টু গো বিফোর উই স্লিপ হাসি

সত্যপীর এর ছবি

কিছুদিন আগে স্কেলার আর ভেক্টর ফিল্ড এর বাংলা কি লিখব ভাবতে ভাবতেই দুইদিন চলে গিয়েছিল।

বুকে আসেন ভাই। গত সপ্তায় দুইদিন পার করছি ধনুকের নক, রিকার্ভ, ডিকার্ভ, রিফ্লেক্স ডিফ্লেক্স এইসব হাবিজাবি জিনিসের তর্জমা কি হইতে পারে সেইটা ভাবতে ভাবতে মন খারাপ

অন টপিক, হিমু ভাইর কথা সত্য। রাইটার্স ডাইজেস্টের ফোরামে লেখক লেখক মিল্লা ভাষা গল্প এইসব আলাপ চালায় দেখি। আমরাও সচলে করি চলেন। হোয়াই নট অর্থাৎ কিনা কেন নয়।

..................................................................
#Banshibir.

হিমু এর ছবি

ধনুকের অ্যানাটমি নিয়ে পোস্ট দেবেন নাকি?

সত্যপীর এর ছবি

উঁহু, ধনুকের অ্যানাটমি নিয়া পোস্ট দিবনা। কিন্তু কবুতর ফারুক নিয়ে পোস্ট দিব একসময়। কবুতর ফারুক ব্যাপক তিরন্দাজ, বুজুর্গ হামিদ খাঁর কাছে সোনার আংটা পাওয়া লোক। ধনুকের খুটিনাটি সে গুলে খাইছে বলেই ধারণা করি।

..................................................................
#Banshibir.

বাহাউদ্দীন এর ছবি

এ জাতির জ্ঞান সীমিত! কবুতর ফারুক সম্পর্কে জাতি তাই বিস্তারিত জানতে চায়। লেখা পড়ার অপেক্ষায় রইলাম দেঁতো হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

যেসব শব্দের বাংলা করতে পারবেন না সেগুলো ইংলিশে লিখে পোস্ট শেষ করে ঠ্যাঙনোটে পাঠকদের সাহায্য চান। দেখবেন ঐ পোস্টের আলোচনায়ই সমাধান হয়ে যেতে পারে।

হিমু এর ছবি

স্কেলার ফিল্ডকে "অদিক ক্ষেত্র" আর ভেক্টর ফিল্ডকে "সদিক ক্ষেত্র" বললে কেমন হয়?

অতিথি লেখক এর ছবি

স্কেলার = সদিক এবং ভেক্টর = অদিক/নির্দিক অনেকদিন ধরে বাংলা ভাষায় লেখা কিছু পাঠ্যপুস্তকে প্রচলিত আছে। সুতরাং আপনার প্রস্তাবিত 'অদিক ক্ষেত্র' ও 'সদিক ক্ষেত্র'র ব্যাপারে দ্বিমত করার কিছু নেই।

হিমু এর ছবি

উল্টো বললেন তো।

অতিথি লেখক এর ছবি

এহ্‌হে! ভেম হইয়া গেছে!! স্কেলার = অদিক/নির্দিক, ভেক্টর = সদিক।

বাহাউদ্দীন এর ছবি

সদিক রাশি এবং অদিক রাশি তো অনেকদিন ধরেই অনেকে ব্যবহার করে আসছেন। এটাই হয়ত শেষ পর্যন্ত ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু কিছু জায়গায় আমরা স্কেলার শব্দটা ভ্যারিয়েবল হিসেবে ব্যবহার করি। যেমন, 'a' is a scalar proportional to cosmological constant. এরকম ক্ষেত্রে 'অদিক' শব্দটা ঠিক যায় না। আবার ফার্মিয়ন কণারা কিন্তু ভেক্টর ক্ষেত্র তৈরি করে, সেখানে আসলে ঠিক দিক বলতে কিছু নাই, এটা কমুটেশন (বিনিময়) সম্পর্কের সাথে জড়িত। আর সত্যি বলতে, ভেক্টর বা স্কেলার বুঝানোর একটা রূপ বা উদাহরণ হচ্ছে 'দিক'। আসলে 'দিক' ছাড়াও ভেক্টর বা স্কেলার হয়। এখন আবার এই ক্যাচাল নিয়ে লিখতে ইচ্ছা করছে। খাইছে ইয়েলের এক ভারতীয় গণিতবিদের সাথে এই জিনিস নিয়ে এক দুপুরে বিস্তর আলোচনা হয়েছিল, তখন এই বিষয়ে ব্যাপক আলোকিত হয়েছিলাম!

হিমু এর ছবি

পোস্ট হোক তবে!

অতিথি লেখক এর ছবি

ভ্যারিয়েবল = চলক, কনস্ট্যান্ট = ধ্রুবক/ধ্রুব। যাকগে, আলোচনাটা নতুন পোস্টে করতে চাই। আগে পোস্টান বাহে!

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি হিমুর প্রস্তাবের সাথে একমত। বিজ্ঞান বিষয়ক কোন পোস্ট (যেমন এটা), পরিভাষাসংক্রান্ত কোন পোস্ট, অথবা ভাষা বিষয়ক সাহায্য পোস্টে আমরা সবাই এই বিষয়ে আলোচনা করে অনেক যৌক্তিক ও সুন্দর শব্দ বের করতে পারবো। ঘুমিয়ে পড়ার আগে অথবা পা হড়কানোর আগে অবশ্যই আরও অনেকটা পথ যেতে হবে; নয়তো গাছে চড়ে আম খাওয়া ছাগল আমাদের ঘাড়ে চেপে মগজ চাটতে থাকবে।

অগ্নির এর ছবি

খুব ভালো লাগলো । বিজ্ঞান বিষয়ক সহজপাঠ্য লেখার জন্য আমি ব্যাকুল হয়ে বসে থাকি । আপনার লেখা খুবই সুখপাঠ্য । এরকম আরও লেখা চাই বেশী বেশী । বিশেষ করে নারীবিজ্ঞানীদের নিয়ে যদি বাংলায় আরও লেখা পেতাম ! যারা এরকম কথা বলে যে মেয়েরা বিজ্ঞানী হতে পারেনা তাদের মুখের ওপরে লিংক ধরিয়ে দেয়া যেত !

বাহাউদ্দীন এর ছবি

মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ! আশা করি সামনে নারীবিজ্ঞানীদের নিয়ে আরও গল্প শুনাতে পারব। হাসি

আমাদের এখানে একজন তিন-চার বছর আগে পিএইচডি করে গেছেন। বর্তমানে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি নিয়ে নাসায় কাজ করছেন। তাঁর কাজ হচ্ছে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেক অনেক উপরে বরফের মাঝে কি পরিমাণ গ্রিন হাউজ গ্যাস জমা আছে তা সংগ্রহ এবং অ্যানালাইসিস করা। এ থেকে বায়ুমন্ডলের উপরের দিকে কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে সে ব্যাপারে ধারণা পাওয়া যাবে। মজার ব্যাপার হল এই কাজের জন্য তাঁকে বছরে ৬-৮টা পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে হয়। সারা বছরই তাঁর কাটে হয় সুউচ্চ পর্বতারোহণে না হয় স্কাইডাইভ করে, বাকি সময় কাটে গবেষণাগারে। ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে খুব কম মানুষই মনে হয় এত বিপদসংকুল এবং অ্যাডভেঞ্চারাস সায়েন্টিফিক এক্সপেডিশনে কাজ করতে পারে। সুতরাং এই যুগেও যে বা যারা বিজ্ঞানী হওয়ার ক্ষেত্রে নারী বা পুরুষের মধ্যে বৈষম্য করেন, তাঁদের আসলেই মানসিক সমস্যা আছে।

এক লহমা এর ছবি

সুন্দর লেখা, ভাল লেগেছে খুব।
আচ্ছা, লেখার প্রথম দিকে যখন কিশোরী বা তরুণী অবিবাহিত ভেরাকে নিয়ে গল্প চলছে তখন তাঁকে ভেরা বা ভেরা কুপার বলে উল্লেখ করলে কেমন হয়?
হাচলাভিনন্দন!

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

বাহাউদ্দীন এর ছবি

মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

খুব ভালো বলেছেন। এখনও আসলে পুরোপুরি হাচল হইনি, আমার লেখাগুলো আমার আইডিতে আসেনি। আসলে পরে বদলে দিচ্ছি।

ডঃ ভেরা কুপার রুবিনকে আমরা ডঃ রুবিন নামে চিনতাম, আরও ছোট করে রুবিন ডাকতাম। এজন্য আমার কাছে রুবিন নামটাই স্বাভাবিক লাগছিলো। কিন্তু রুবিন তো আসলে তাঁর স্বামীর নাম থেকে প্রাপ্ত। সেই হিসেবে আমারও এটা গল্পের শুরুতে ব্যবহার করতে একটু অস্বস্তি লাগছিলো। কিন্তু এর বদলে কোন নাম নিয়ে লিখব বুঝতে পারছিলাম না, আপনার প্রস্তাবটা পছন্দ হয়েছে। এডিট করার সুযোগ আসার সাথে সাথে ঠিক করে দিবনে।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

চমৎকার! হাচলাভিনন্দন বাহাউদ্দীন।

বিজ্ঞান লেখন এবং বিজ্ঞান পরিভাষা প্রচেষ্টা, দুটোর জন্যই ভালবাসা জানবেন! হাসি

ভেরা কুপার রুবিনের জন্য শ্রদ্ধা! শ্রদ্ধা

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

বাহাউদ্দীন এর ছবি

প্রিয় সাক্ষী,

কষ্ট করে পড়ার জন্য আপনাকেও ভালোবাসা হাসি

ভেরা কুপার রুবিনের জন্য শ্রদ্ধা! শ্রদ্ধা

সোহেল ইমাম এর ছবি

অফিসের কাজের মধ্যে সময়ই পাচ্ছিলামনা। শিরোনাম টুকু দেখে ভেবেছিলাম সায়েন্সফিকশন। তারপর মন্তব্যের সংখ্যা দেখে ভাবলাম খুলে দেখতেই হয়। খুব ভালো লাগলো লেখাটা, তারপর যখন নিচে দেখলাম বাহাউদ্দীন তখন মনে পড়লো এর আগেও আপনার লেখা পড়েছি এবং পড়ে মুগ্ধ হয়েছি। হাচল হবার অভিনন্দন টুকুও রইলো। আরো লিখুন। চলুক

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

বাহাউদ্দীন এর ছবি

মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করি, সামনে আরও কিছু ভালো গল্প শুনাতে পারব হাসি

ঈয়াসীন এর ছবি

চলুক

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

বাহাউদ্দীন এর ছবি

দেঁতো হাসি

মেঘলা মানুষ এর ছবি

মাঝখানে কেমন যেন একটা ঝিমুনি চলেছিল কিছুদিন। এত্ত এত্তগুলা মন্তব্য দেখে ভালো লাগলো। কেমন সতেজ একটা ভাব! আলোচনা, চিন্তার বিনিময় চলছে! সচলায়তন এমন সচল দেখতে ভালো লাগে। এমনটা চলুক!

বাহাউদদীন ভাই, এরকম লেখা ব্লগে দেবার পাশাপাশি বাংলা খবরের কাগজেও পাঠাতে পারেন। আমি সচল থেকে লেখক/লেখা ভাগিয়ে নেবার জন্য বলছি না। ব্লগে না আসলে আমি নিজেই পড়তে পারতাম না। তবে, এমনটা ভাবতে ভালো লাগে যে আপনার এরকম একটা লেখা পড়ে আজ নবম-দশম শ্রেণীতে পড়া কোন ছাত্রছাত্রী হয়ত আপনার পথে হাঁটবে, তাদের মধ্য থেকেও রুবিনের মত চিন্তাশীল, ধীমান কেউ বেরিয়ে আসবে।

শুভেচ্ছা হাসি

বাহাউদ্দীন এর ছবি

মূল ধারার খবরের কাগজগুলো কোন একটা কারণে ভালো লাগে না, বিশেষ করে তাঁদের হলুদ সাংবাদিকতা এবং সত্য-মিথ্যার মাঝামাঝি বসে বিশেষ মহলের স্বার্থ হাসিল করা দেখে। তবুও লিখলে হয়ত স্কুলে পড়ুয়া নবীনদের জন্যই লিখব। হাসি

ফুড ফর থটঃ একজন নারী বিজ্ঞানীকে নিয়ে লেখা এই গল্পটি প্রথম আলোতে ছাপলে কমেন্ট সেকশনে অনুভূতিপ্রবণ জনগণের মন্তব্য কি হত বলে আপনার মনে হয়? চোখ টিপি

শাব্দিক এর ছবি

বিজ্ঞান জগতের এমন অসাধারণ এক নক্ষত্রের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। হাসি

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

বাহাউদ্দীন এর ছবি

মন্তব্যের জন্য আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ। হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

এক কথায় অপূর্ব ! হান্টার হান্টার

দীপক এর ছবি

ধন্যবাদ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।