ইংরেজি অনুবাদ : রবার্ট এলসি
কবিতা
কবিতা,
আমার মাঝে তোমার পথ কীভাবে খুঁজে পেয়েছিলে?
আমার মা আলবেনীয় ভাষা ভালো জানতেন না,
তিনি নির্বিকার চিঠি লিখে যেতেন যতিচিহ্নহীন,
আমার বাবা যৌবনে সমুদ্র ভ্রমণে যেতেন।
কিন্তু তুমি এসেছিলে,
আমার লুপ্ত পাথুরে নগরীর কঙ্কর বিছানো পথ মাড়িয়ে,
আমার ত্রিতল বাড়ির ১৬ নম্বর করে দরজায়,
কম্পমান তুমি কড়া নেড়েছিলে।
এ জীবনে অনেক কিছু ভালোবেসেছি ঘৃণাও করেছি,
আমার অনেক সমস্যার একটি আমি কোনো খোলা নগরীর মতো,
কিন্তু যাই হোক.....
গভীর রাতে পথ বেয়ে বাড়ি ফেরা,
কান্ত, বিধ্বস্ত যুবকের মতো,
এখানে আমি তোমার দিকেই হাঁটছি।
জীবনের প্রমত্ততা শেষে আমি বড় কান্ত।
আর তুমি,
অবিশ্বাসী এই আমাকে দূরে সরিয়ে দাওনি,
মাথায় বুলিয়েছো তোমার আলতো কোমল পরশ,
আমার শেষ গন্তব্য,
কবিতা।
আমার প্রিয় স্মৃতি
আমার প্রিয় স্মৃতি,
মধ্যরাতের ট্রামের মতো,
প্রধান স্টেশনগুলোতে শুধু থামে,
আমি তোমাকে ভুলবো না।
আমার মনে পড়ে,
স্থির সন্ধ্যাগুলো কী সুন্দর, তোমার চোখে বাসা বাঁধতো,
আজ ঝেড়ে ফেলতে না পারা তুষারের মতো,
সেসব জমাট কান্না আমার কাঁধ চেপে আছে।
অবশেষে মৃত্যুসম বিচ্ছেদ এলো,
তুমি আর আমি ছিটকে গেলাম দু’প্রান্তে।
অথচ কোনো ছন্দপতন নেই।
কিন্তু কোনো কোনো রাতে
কারো উন্মত্ত আঙ্গুল তোমার চুলে ঢেউ তোলে,
কেননা আমার দূরবর্তী আঙ্গুল, মাইলপথ দীর্ঘ হয়ে
তোমার অভিমুখে।
জলপ্রপাত
জলপ্রপাতের নেমে আসা জলরাশি
একদল ছুটে চলা সাদা ঘোড়ার মতো,
ফেনায় পূর্ণ তাদের কেশর, যেন বর্ণিল রঙধনু এক।
কিন্তু কখনো যদি এ ছন্দের পতন ঘটে,
তারা সব হুমড়ি খেয়ে পড়ে,
ওহ, তাদের সাদা পাগুলো ভেঙে যায়,
অতঃপর যন্ত্রণাকাতর তারা মরে যায়।
এখন তাদের প্রাণহীন পাথর চোখে
স্তব্ধ আকাশ প্রতিবিম্বিত হচ্ছে।
ট্রেনের সময়সূচি
ছোট্ট রেলস্টেশনের সময়সূচিগুলো আমার ভালো লাগে,
মনে হয়, স্যাঁতস্যাতে প্লাটফরমে যেনবা পথের অসীমতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
বাষ্পচালিত ট্রেনের দূরবর্তী চিৎকার কী কী?
(বাষ্পীয় ইঞ্জিনের অস্পষ্ট ভাষা কেউই উপলব্ধি করতে পারে না।)
তেলের গাড়ি, খনিজ বোঝাই মালগাড়ি,
অন্তহীন যাচ্ছে আসছে।
এমন করেই এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে
কথা, কোলাহল, সংকেত আর স্মৃতির আকড় বোঝাই করে,
কেটে যাচ্ছে তোমার জীবন।
শৈশব
আমার শৈশব
যেন কতগুলো বিবর্ণ আঙ্গুল
প্রতি ভোরে বেজে ওঠা ঘণ্টার মতো
সূর্যাস্তে কণ্ঠ ছেড়ে দেয়া মুয়াজ্জিন কিংবা
অযথা সিগারেটের খালি বাক্স আর ডাকটিকেট জমানো।
দিনমান দু’টি লুক্সেমবার্গের জন্যে করা পরিকল্পনা।
এখন তারা ফেলে আসা পদচিহ্ন শুধু
যে পথে আর যাওয়া হবে না কখনো
আমার শৈশবের দিনগুলো
আজ সেইসব দিনের স্মৃতি হাতড়ে বেড়াই
তারা উপহাসপূর্ণ বলের মতো এদিক সেদিক
ছুটে ছুটে যায়
লাফায়, গড়ায়, ধূলো ছড়ায়
আজ তারা কান্না হয়ে ঝরে।
সেই উপহাসপূর্ণ মায়াবী বলগুলো
ধূসর আলবেনিয়ার স্মৃতি দিয়ে তৈরি।
(গ্রিসের সীমান্ত সংলগ্ন আলবেনিয়ার জেরোকাস্তায় ১৯৩৬ সালের ২৮ জানুয়ারি ইসমাইল কাদারের জন্ম। ঔপন্যাসিক হিসেবে পরিচিত হলেও ইসমাইল কাদারে মূলত কবি। মায়াকোভস্কির একনিষ্ঠ ভাবশিষ্য ইসমাইল কাদারে বিগত তিন দশক ধরেই এক আলোচিত নাম। কবি, ঔপন্যাসিক, বিশ্লেষক, বুদ্ধিজীবী ইত্যাদি নানা অভিধায় তিনি চিহ্নিত। পাঁচ বছর বয়সে জেরোকাস্তার একটি মিশন স্কুলে তাঁর লেখাপড়ার হাতেখড়ি। স্কুল শেষে রাশিয়ার তাইরানা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখারকার পাঠ শেষে ভর্তি হন মস্কোর বিখ্যাত গোর্কি ইনস্টিটিউট ফর ওয়ার্ল্ড লিটারেচারে। প্রাতিষ্ঠানিক পড়া শেষে ইসমাইল কাদারে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন সাংবাদিকতা। আর এরই মাধ্যমে সুদীর্ঘ সময় রাশিয়ায় কাটিয়ে ফিরে এলেন মাতৃভূমি আলবেনিয়ায়। হিটলার-স্ট্যালিন-মুসোলিনির ভয়াবহ স্বৈরশাসন এবং শোষণপীড়িত মানুষের যন্ত্রণা নির্মিত তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ড্রিমস’। দেশে ফেরার ৩ বছর আগে মস্কোয় অবস্থানের সময় ১৯৫৭ সালে কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়। কিন্তু আলবেনিয়ায় ফিরে তাঁর মনে হয় গদ্যই রাজনৈতিক অভিব্যক্তি প্রকাশের এবং আপাত নিরেট দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানোর প্রকৃত হাতিয়ার। ১৯৬০ সাল থেকে উপন্যাস লিখতে আরম্ভ করেন। প্রায় ৩ বছর সময় নিয়ে লেখা তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘দ্য জেনারেল অব দি ডেড আর্মি’ প্রকাশিত হয় ১৯৬৩ সালে। প্রকাশিত হওয়ার পরপরই উপন্যাসটি আলবেনিয়াসহ সমগ্র বিশ্বে আলোড়ন তোলে। তাঁর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম হচ্ছে, দ্য ওয়েডিং (১৯৬৪), দ্য ক্যাসেল (১৯৭০), ক্রোনিকল ইন স্টোন (১৯৭১), ব্রোকেন এপ্রিল (১৯৮০) ইত্যাদি। বেশ কয়েকবছর ধরে নোবেল পুরস্কারের জন্য শীর্ষে উচ্চারিত নাম ইসমাইল কাদারে ২০০৫ সালে প্রথম ‘দ্য ম্যান বুকার’ পুরস্কার পেয়েছেন।)
মন্তব্য
ধন্যবাদ...
বাংলা অনুবাদ কি আপনার করা?
কবিতার শিরোনামগুলো বোল্ড করে দিলে পড়তে সুবিধা হতো আরো...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আপনাকে ধন্যবাদ। আসলে বোল্ড করতে ভুলে গিয়েছিলাম। এরপর থেকে সতর্ক থাকবো। হ্যাঁ ভাই অনুবাদগুলো আমারই করা। ভালো থাকুন।
প্রিয় বর্ণদূত, অনুবাদ কর্মের জন্য ধন্যবাদ। কাদারকে ঔপন্যাসিক হিসেবেই জানতাম। তার কবি সত্ত্বার কথা জানতাম না। আপনার পক্ষে সম্ভব হলে কাদারের গদ্যের সাথে বাংলা পাঠকদের পরিচয় করানোর চেষ্টা করবেন। যদিও আমি ব্যক্তিগতভাবে কাদারকে অপছন্দ করি।
তোমার সঞ্চয় দিনান্তে নিশান্তে পথে ফেলে যেতে হয়
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আপানাকে ধন্যবাদ। আমি অবশ্যই চেষ্টা করবো। কিন্তু ইসমাইল কাদারে কে কেন পছন্দ করেন না, সেটা কি জানতে পারি? অবশ্য আপনার যদি জানাতে আপত্তি না থাকে। ভালো থাকুন।
কাদারকে অপছন্দ করি তার নীতিহীনতার জন্য নয়, বরং এই নীতিহীনিতার সপক্ষে কুযুক্তি দেবার প্রবণতার জন্য। সুবিধাবাদী মানুষ সব সমাজেই আছে, তবে তাদের সবাই সুবিধা গ্রহন করে তার যৌক্তিকতা প্রমাণ করার চেষ্টা করে না। কিন্তু কাদার করেন। যাই হোক তার সাথে তার সাহিত্যকে না মেলানোই ভাল।
তোমার সঞ্চয় দিনান্তে নিশান্তে পথে ফেলে যেতে হয়
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
খুব ভালো লেগেছে।
আরো করুন অনুবাদ কবিতা কিংবা গল্প
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। চেষ্টা করবো নিশ্চয়ই। ভালো থাকুন।
নতুন মন্তব্য করুন