পটভূমি
২০১৬-র গনভোটের প্রাক্কালে ‘ব্রেক্সিট’ শব্দটির সূচনা হলেও গত প্রায় পাঁচ দশক ধরে যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাথে দেশটির সম্পর্কের রূপরেখা কি হবে তা নিয়ে বিস্তর মত পার্থক্য এবং বিভেদ চলে এসেছে। যদিও সত্তরের দশকের মাঝামাঝি তৎকালীন ইউরোপীয় কমিউনিটিতে যুক্তরাজ্যের থাকা নিয়ে একটি গনভোট হয়েছিল, বর্তমান বিতর্কের সূত্রপাত ঘটে নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে - ম্যাস্ট্রিক্ট চুক্তিকে কেন্দ্র করে। এই ম্যাস্ট্রিক্ট চুক্তির উপর ভিত্তি করেই অধুনা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কাঠামো নির্মিত হয়েছিল। যুক্তরাজ্যের ম্যাস্ট্রিক্ট চুক্তির স্বাক্ষর নিয়ে সে সময় জন মেজরের সরকার তার কনজারভেটিভ দলের একটি বড় অংশের তীব্র বিরোধিতার সম্মুখীন হয়। হাউস অফ কমন্সে শেষ পর্যন্ত বিরোধী লেবার দলের সমর্থন নিয়ে জন মেজর যুক্তরাজ্যকে এই চুক্তির আওতায় নিয়ে যান আর তার পথ ধরেই যুক্তরাজ্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্যপদ লাভ করে। কনজারভেটিভ বা টোরি দলের সেই অন্তর্দন্দ্ব থেমে যায়নি। বরং বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ইস্যুতে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পক্ষ এবং বিপক্ষকে কেন্দ্র করে কনজারভেটিভ দলের ভেতরে বিরোধ, বিতর্ক এবং মেরুকরন সর্বজনবিদিত। কিন্তু পরবর্তী দেড় দশক টনি ব্লেয়ারের লেবার পার্টি যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে একক আধিপত্য বজায় রেখে টোরিদের ক্ষমতার বাইরে রাখায় সেই বিরোধ অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়ে।
তথাপি, যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে ইউরোস্কেপ্টিসিম তখনও ছিল, যেমনটি এখনও আছে। ১৯৯৭ সালে স্যার জেমস গোল্ডস্মিথ (জেমিমা খান/গোল্ডস্মিথের বাবা) ‘রেফারেন্ডাম পার্টি’ নামে একটি দল গঠন করেন যার মূলমন্ত্র ছিল ই ইউ থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে আসার জন্য গনভোট আয়োজন করা। লেবার পার্টির মধ্যেও একটি অংশ ছিল যারা ই ইউকে একটি সাম্রাজ্যবাদী নিও-লিবারেল সংগঠন হিসাবে গন্য করত। বর্ষিয়ান ট্রেড ইউনিয়ন নেতা প্রয়াত টনি বেন লেবার দলের এই অতি বাম অংশের নেতৃত্বে ছিলেন আর তার একান্ত সহচর ছিলেন বর্তমান লেবার নেতা জেরেমি করবিন।
২০১০ সালে টোরিরা ক্ষমতায় এলেও তাদের লিবারেল ডেমোক্রেটদের সমর্থন নিয়ে জোট সরকার করতে হয়। লিবারেল ডেমোক্রেটরা দলগতভাবে প্রবল ইউরোপপন্থী। তাই ২০১০-এর ডেভিড ক্যামেরনের সরকার যুক্তরাজ্যের ই ইউ সদস্যপদ নিয়ে কোন হঠকারি সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। কিন্তু এরই মধ্যে ২০০৪ এর পর থেকে একের পর এক পূর্ব ইউরোপীয় দেশ ই ইউ সদস্যপদ পেতে শুরু করে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মূল আদর্শিক স্তম্ভের মধ্যে একটি হল এর সদস্য দেশের নাগরিকদের চলাচলের পূর্ণ স্বাধিনতা বা ফ্রিডম অফ ম্যুভমেন্ট। ২০০৪ এর পর থেকে পোল্যান্ড, রুমানিয়া এবং বুলগেরিয়া থেকে অভিবাসীরা যুক্তরাজ্যে আসতে শুরু করে। ২০০৮/৯-এর বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা এবং ইউরোজোনের অর্থনীতির দৈন্য দশার প্রেক্ষিতে অপেক্ষাকৃত কম উন্নত দক্ষিণ ইউরোপিয় দেশ যেমন, ইতালি, স্পেন এবং গ্রীস থেকেও যুক্তরাজ্যে অভিবাসীদের আগমন শুরু হয়– ঠিক সেই সময় যখন অর্থনৈতিক মন্দার আঘাতে স্বয়ং যুক্তরাজ্য জর্জরিত। এমনই একটি সময় যেন চাইছিল উগ্র ডানপন্থী রাজনীতিকরা। যারা দীর্ঘদিন টোরি দলের দক্ষিণপন্থী অংশের সাথে সম্পৃক্ত ছিল তারা আরো হঠকারি উগ্র রাজনীতির দিকে ঝুঁকতে শুরু করল। অভিবাসীবিরোধী বুলি নিয়ে তাদের কেউ কেউ জড়ো হল ইউকিপ (ইউ কে ইন্ডিপেন্ডেন্ট পার্টি) –এর ছায়াতলে। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্পের আগমনের আগেই যুক্তরাজ্য পেয়ে যায় অতি দক্ষিণপন্থী অভিবাসন বিরোধী রাজনীতির উন্মেষ নাইজেল ফারাজের হাত ধরে। ফলতঃ ২০১৪-র স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইউকিপ অভাবনীয় সাফল্য পায় বিশেষ করে দক্ষিণ ইংল্যান্ডের টোরি পার্টির সমর্থক এলাকাগুলোতে। কিন্তু একই সাথে উত্তর ইংল্যান্ডের সান্ডারল্যান্ডের মত অপেক্ষাকৃত অনুন্নত এবং লেবার পার্টির একনিষ্ঠ সমর্থক স্থানেও ইউকিপ দ্বিতীয় স্থানে চলে আসে। একদিকে পুরানো ইউরোস্কেপটিক আদর্শ, অন্যদিকে ভোটের রাজনীতিতে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রচেষ্টাতে কনজারভেটিভ পার্টির তৃণমূল থেকে ডেভিড ক্যামরনের উপর চাপ বাড়তে থাকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে যুক্তরাজ্যের ভবিষ্যৎ অবস্থান নিয়ে একটি গনভোট আয়োজনের জন্য। অনেক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মনে করেন সেই সময় ডেভিড ক্যামরন ২০১৫-র জাতীয় নির্বাচনের ইসতেহারে এই গনভোটের অংগীকার না করলে তার নেতৃত্ব কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে পারত। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন যে, ২০১০ পরবর্তী সময়ে ডেভিড ক্যামরনের অর্থনৈতিক কৃচ্ছতার নীতি ব্যাপক সমালোচিত হয়েছিল এবং অনেক জরিপেই লেবার পার্টি বেশ শক্ত অবস্থানে ছিল। অতএব, ডেভিড ক্যামরন বেছে নিলেন একটি সস্তা জনপ্রিয় পন্থা – গনভোটের অংগীকারকে লিপিবদ্ধ করা হল নির্বাচনী ইসতেহারে। তিনি নির্বাচন জিতলেন একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসাবে। এর মধ্যে স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার জন্য গনভোট হল এবং শেষ মুহুর্তে করা পেনশনসহ কিছু সরকারি চতুর নীতিমালার কারনে গনভোটে স্বাধীনতাপন্থীরা হেরে গেল। সব মিলিয়ে ডেভিড ক্যামেরন হয়ে উঠেন অসম্ভব আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু এই সুযোগটি হাতে নিয়ে নেয় টোরি পার্টির উচ্চাভিলাসী কিছু নেতা – যাদের মধ্যে ছিলেন সাবেক লন্ডন মেয়র বরিস জনসন এবং ডেভিড ক্যামরনের মন্ত্রীসভার সদস্য এবং তার বন্ধু মাইকেল গোভ। এদের পেছনে এসে জড়ো হয় কিছু উগ্রপন্থী ইউরোস্কেপটিক - সাবেক টোরি পার্টির নেতা ইয়ান ডানকান স্মিথ, সিনিয়র নেতা ডেভিড ডেভিস এবং টোরি সংসদীয় দলের পেছন সারির নেতা জ্যাকব রিস মগ। অন্যদিকে ২০১৫ র লেবার পার্টির নির্বাচনী পরাজয়ের পথ ধরে মধ্যমপন্থী নেতৃত্বকে সরিয়ে তৃণমূলের ব্যাপক সমর্থন নিয়ে নেতৃত্বে আসেন জেরেমি করবিন – যার সম্পর্কে আগেই বলা হয়েছে যে তিনি একজন কট্টর ইউরোস্কেপটিক। যদিও তিনি গনভোটে ব্রেক্সিটের বিরূদ্ধে অবস্থান করেছিলেন বলে দাবী করেন, অনেক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকের মতে গনভোটের প্রাক্কালে তার অবস্থান ছিল অনেকটাই নিষ্ক্রিয়। বরং এই ব্রেক্সিট ইস্যু থেকে টোরি পার্টির গৃহদাহ হলে পরবর্তীতে লেবার পার্টি লাভবান হবে বলেই তার প্রত্যাশা ছিল – এই অনুকল্প এখন ক্রমেই বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হচ্ছে।
অবশেষে ব্রেক্সিট জিতে গেল। ৫২% মানুষ ভোট দিল ব্রেক্সিটের পক্ষে যদিও স্কটল্যান্ড এবং উত্তর আয়ারল্যান্ডে ‘রিমেইন’ সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল। ইংল্যান্ডের সব বড় শহর যেমন লন্ডন, ম্যানচেস্টার, নিউকাসল, লিভারপুল, লিডস, নটিংহাম, ব্রিস্টল (বার্মিংহাম ব্যাতিরেকে)ব্যাপক হারে (কোন কোন ক্ষেত্রে ৬৫-৭০%) ব্রেক্সিটের বিপক্ষে মত দিল। অক্সফোর্ড এবং কেম্ব্রিজও গেল ব্রেক্সিটের বিপক্ষে। বার্মিংহামে প্রায় ৫০-৫০। কিন্তু ব্রেক্সিট ভোট পেল ছোট শহর/শহরতলী এবং গ্রামাঞ্চলে। তরুণ ভোটারদের মধ্যে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ব্রেক্সিটের বিরুদ্ধে আর পঞ্চশোর্ধ ভোটারদের ক্ষেত্রে ঘটল ঠিক উলটো। এক চেটিয়া টোরি দলের এলাকাগুলো ব্রেক্সিট জিতল। লেবার পার্টির জন্য হল বড় সমস্যা। সর্বোচ্চ ব্রেক্সিটপন্থী এলাকাও লেবারের আবার সবচেয়ে ব্রেক্সিট বিরোধী এলাকাও তাদের। সব মিলিয়ে যুক্তরাজ্য প্রবেশ করল এক জটিল এবং অপ্রস্তুত সময়ে। ডেভিড ক্যামরন ঘোষণা দিলেন তিনি আর এই তরী বাইতে পারবেন না। বরিস জনসন ছিলেন তার সম্ভাব্য উত্তরসুরী। কিন্তু টোরি দলের অভ্যন্তরীন অন্তর্দন্দ্বে সেটি সম্ভব হল না। হাল ধরলেন ডেভিড ক্যামরনের আমলের সরাষ্ট্রমন্ত্রী ঠেরেসা মে – যিনি নির্মম এবং কুটিল অভিবাসন বিরোধী কাজের জন্য ইতিমধ্যেই সমালোচিত ছিলেন। অনেকেই মনে করতেন মে একজন ঠান্ডা মাথার কিন্তু প্রচন্ড জেদি নেত্রী। ব্রিটেন একি সাথে পেল একজন জেদি এবং কুটচাল বিশেষজ্ঞ প্রধানমন্ত্রী এবং ব্রেক্সিটের প্রতি সহানুভূতিশীল বিরোধী দলীয় নেতা। মে একটি ভুল করলেন ২০১৭ তে মধ্যবর্তী নির্বাচন দিয়ে। তিনি ভেবেছিলেন লেবার দলের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তিনি তার ক্ষমতাকে আরো সংহত করে নিবেন। কিন্তু হিতে বিপরীত হল – টোরি দল হারাল তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা। নিরুপায় মে উত্তর আয়ারল্যান্ডের চরম রক্ষণশীল এবং উগ্র ব্রেক্সিটপন্থী ডি ইউ পির (ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টি) সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসলেন। এরি মাঝে একজন অভিবাসী ব্যবসায়ী জিনা মিলার ডানপন্থী পত্রিকা এবং মিডিয়ার রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আদালতে একটি রিট করলেন যার প্রেক্ষিতে আদালত আদেশ জারি করেন যেকোন ব্রেক্সিট চুক্তি সম্পাদনে সরকারকে সংসদের সম্মতি অর্জন করতে হবে। এতে করে ঠেরেসা মে-র সংখ্যালঘিষ্ঠ সরকারের জন্য ব্রেক্সিট চুক্তি আরো দুরহ হয়ে উঠল।
ব্রেক্সিট প্যারাডক্স – ব্রেক্সিটের অসঙ্গতি
১) ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন একই সাথে একটি রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সংগঠন যারা একে অপরের পরিপূরক। ইউরোপের কিছু দেশ যেমন নরওয়ে এবং সুইজারল্যান্ড ই ইউর রাজনৈতিক অংশের সাথে না থাকলেও তারা ই ইউর অভিন্ন বাজার এবং কাস্টমস ইউনিয়নের সাথে পরিপূর্ণ বা আংশিকভাবে সম্পৃক্ত। এখন ব্রেক্সিট গনভোটের ব্যালটে লেখা ছিল না ব্রেক্সিটের রূপ কেমন হবে। অনেকেই মনে করতে পারেন ই ইউর রাজনৈতিক এবং আমলাতান্ত্রিক আধিপত্যকে তারা প্রত্যাখান করতে চাইছেন – কিন্তু ই ইউর অর্থনৈতিক সুবিধা থেকে তারা বঞ্চিত হতে চাইছেন না। এই বিষয়টি ব্রেক্সিট গনভোটে সুরাহা হয়নি। অনেকে অনেক কারনে ব্রেক্সিটে ভোট দিয়েছেন – কিন্তু ই ইউ তে থাকা আর না থাকার দ্বিমাত্রিক সমাধান এই বিভিন্ন মানসিকতার ব্রেক্সিট ভোটারদের মতামতকে পরিপূর্ণ এবং শুদ্ধরূপে প্রতিফলন করতে ব্যার্থ।
২) ই ইউ-র কিছু মৌলিক নীতি রয়েছে – এর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল ফ্রিডম অফ গুডস/সার্ভিস এবং ফ্রিডম অফ মুভমেন্ট – মানুষ, পণ্য, সেবা এবং বিনিয়োগের অবাধ চলাচল/আদানপ্রদানের সুবিধা। এখানে কিছু মানা এবং কিছু না মানার অবকাশ নেই। অর্থনৈতিক সুবিধার জন্য ই ইউর অভিন্ন বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশের জন্য মানুষের অবাধ চলাচলকেও মানতে হবে – যেমনটি করেছে নরওয়ে। সুইজারল্যান্ড ই ইউর শুল্ক ব্যবস্থার বাইরে। কিন্তু তারা ই ইউর অভিন্ন বাজারের কিছু বিশেষ সুবিধা ভোগ করে থাকে আর সেজন্য তাদেরকে ই ইউর অন্যান্য দেশের সাথে অবাধ চলাচলের বিষয়টিও মেনে নিতে হয়েছে। এখন যুক্তরাজ্যকে এধরনের সুবিধার জন্য মানুষের অবাধ চলাচলকে মেনে নিতে হবে যা অনেক ব্রেক্সিট ভোটারের জন্য পীড়াদায়ক হতে পারে। কারন অনেকের কাছেই ব্রেক্সিট আর অভিবাসন সমস্যার সমাধান সমার্থক।
৩) ১৯৯৭ সালে গুড ফ্রাইডে চুক্তির মাধ্যমে উত্তর আয়ারল্যান্ডের দীর্ঘ দিনের রক্তাক্ত সঙ্ঘাতের অবসান ঘটে। সেই চুক্তি অনুযায়ি যুক্তরাজ্য এবং রিপাব্লিক অফ আয়ারল্যান্ডের সরকার একটি অংগীকার করেছিল যে আয়ারল্যান্ডের দুই অংশের মধ্যে কোন হার্ড বর্ডার থাকবে না। অর্থ্যাৎ, সেখানে সীমানাতে কোন চেকপোস্ট থাকবে না। রিপাব্লিক অফ আয়ারল্যান্ডের সংবিধান আয়ারল্যান্ড দ্বীপে (উত্তর এবং দক্ষিণ) জন্ম নেয়া যেকোন নাগরিককে তাদের (রিপাব্লিক অফ আয়ারল্যান্ড) নাগরিক বলে অনুমোদন করে – এবং বিষয়টি গুড ফ্রাইডে চুক্তিতেও সম্মান করা হয়। কিন্তু ব্রেক্সিটের কারনে যদি যুক্তরাজ্য অভিন্ন বাজার বা শুল্ক সুবিধার মধ্যে না থাকে তাহলে দুই আয়ারল্যান্ডের সীমানাতে চেকপোস্ট বসাতে হবে যাতে করে এই নীতিকে ধরে রাখা কঠিন হবে, এবং গুড ফ্রাইডে চুক্তির লঙ্ঘন এবং অসম্মান করা হবে।
৪) আগেই বলা হয়েছে ব্রেক্সিট ভোটের একটি বড় অংশ এসেছে শহরতলী বা গ্রামাঞ্চল থেকে যেখানে অভিবাসীর সংখ্যা অনেক কম। অন্যান্য ইউরোপীয় দেশ থেকে আসা অভিবাসীরা সাধারনতঃ বড় শহরগুলোতে থাকে, কিন্তু তাদের ভোটাধিকার নেই (যদিও কমনওয়েলথ দেশের নাগরিকরা ব্রিটিশ নাগরিকত্ব না থাকলেও ভোট দিতে পারে)। অর্থ্যাৎ, যারা ইউরোপীয় অভিবাসীদের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারত (যেমন চাকরি এবং আবাসন সংকট) তারা ব্রেক্সিটের বিপক্ষে খুব বেশী সংখ্যায় ভোট দেয় নি। ব্রেক্সিটে বেশি ভোট দিয়েছে গ্রামাঞ্চলের লোক যারা হয়ত অভিবাসীদের কারনে কখনই তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। একই ভাবে ব্রেক্সিট নির্ধারন করবে তরুনদের ভবিষ্যৎ। কিন্তু ব্রেক্সিটের ফলাফল নির্ধারন করেছে প্রৌঢ়রা।
৫) বাংলাদেশীসহ অনেক এশিয় বংশোদ্ভুতরা ব্রেক্সিটের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। তাদের কেউ কেউ মনে করেছেন এতে করে কমনওয়েলথ দেশ থেকে আবার নতুন করে কর্মী আনা হবে। বাংলাদেশের অনেক রেস্টোরেন্ট ব্যাবসায়ী এ ধরনের ধারনা পোষণ করতেন। আবার অনেকের মধ্যে কাজ করেছে একধরনের হতাশা বা কোন কোন ক্ষেত্রে ঈর্ষা। আমাদের জন্য অনেক কঠিন নিয়ম – অথচ ইউরোপিয়দের জন্য অনেক সহজ নিয়ম। কিন্তু এই নিয়ম ই ইউর করা নয় – এটি খোদ ব্রিটিশ সরকারের নিয়ম। তাছাড়া আঞ্চলিক সহযোগিতার মাঝে আছে এমন অনেক দেশেই এধরনের নিয়ম আছে – উত্তর আমেরিকা (যুক্তরাস্ট্র এবং কানাডা), মধ্যপ্রাচ্যের গালফ দেশ এবং অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের জন্য বাড়তি সুবিধার ব্যাবস্থা আছে।
উপরের বিষয়গুলো হয় অধিকাংশ ব্রেক্সিট ভোটার আগে চিন্তা করেন নি, অথবা তাদের চিন্তা বা বিচার যুক্তিযুক্ত ছিল না। আমি এখানে ব্রেক্সিট নির্বাচনকালীন মিথ্যাচার বা ব্রেক্সিটের কারনে কি কি অর্থনৈতিক সমস্যা হতে পারে সেই প্রসংগে কিছু বললাম না – সেটি অনেক বিস্তর এবং বিতর্কিত। কিন্তু উপরের আলোচনা থেকে পরিষ্কার যে ব্রেক্সিট গনভোট এবং এর পরবর্তী রাজনৈতিক অচলাবস্থার পেছনে ব্রেক্সিটপন্থী রাজনীতিবিদ এবং ভোটারদের এক ধরনের অবিমৃষ্যকারিতা কাজ করেছে।
ডিল অর নো ডিল – রাজনৈতিক অচলাবস্থা
গত এক বছরের বেশি সময় ধরে ঠেরেসা মে সরকার ই ইউ প্রতিনিধিদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন সম্ভাব্য ব্রেক্সিট চুক্তি সম্পাদনের লক্ষ্যে। এক্ষেত্রে মে সরকারের বেঁধে দেয়া ‘লক্ষণ রেখা’ই যেকোন কার্যকরী চুক্তির পক্ষে প্রধান অন্তরায় বলে পরিগনিত হয়। প্রথমতঃ যুক্তরাজ্য ই ইউর কাস্টমস ইউনিয়ন (শুল্ক সমিতি/ব্যবস্থা) থেকে বের হয়ে আসতে চায় – যাতে করে অন্য যেকোন দেশের সাথে বাণিজ্যের জন্য তারা স্বাধীনভাবে শুল্ক নির্ধারন করতে পার। দ্বিতীয়তঃ তারা অভিন্ন বাজারের সুবিধা পেতে চায় পণ্যের জন্য (মূলতঃ ব্রিটিশ শিল্প কারখানাকে লাভবান করার জন্য) – যদিও সেবাখাতের বিষয়ে তারা খুব একটা উতসাহী নয় কারন তাহলে যুক্তরাজ্যকে ফ্রিডম অফ মুভমেন্ট মেনে নিতে হবে। তৃতীয়তঃ কোনভাবেই তারা উত্তর আয়ারল্যান্ডকে কোন বিশেষ শুল্ক ব্যবস্থার মাঝে রাখতে চাইবে না যাতে করে উত্তর আয়ারল্যান্ড এবং যুক্তরাজ্যের মধ্যে এক ধরনের শুল্ক নিরিক্ষার প্রয়োজন হয়।
উপরের প্রথম এবং তৃতীয় বিষয়টি একটি আরেকেটির সাথে সাঙ্ঘর্ষিক। যদি উত্তর এবং দক্ষিণ আয়ারল্যান্ডের মধ্যে কোন কার্যকরী সীমা না থাকে তাহলে হয় পুরো যুক্তরাজ্যকে শুল্ক সমিতির অংশ হতে হবে অথবা উত্তর আয়ারল্যান্ডের জন্য বিশেষ এবং ভিন্ন ব্যবস্থা করতে হবে। ই ইউর বাকি ২৭ টি দেশ আয়ারল্যান্ডের অভিন্নতার বিষয়ে কোন ছাড় দিতে না চাওয়ায় এই বিষয়টি সবচেয়ে জটিল সমস্যার উদ্রেক করে। একই সমস্যা দেখা দেয় জিব্রাল্টারকে নিয়ে। স্পেন চায় জিব্রাল্টার শুল্ক সমিতির অংশ থাকুক যাতে করে স্পেন তাদের জলসীমা ব্যাবহার করতে পারে। জিব্রাল্টারের বিষয়টিতে এক ধরনের ঐকমত্যে পৌঁছানোর পর মে সরকার শেষ পর্যন্ত ই ইউর সাথে আইরিশ সীমানা নিয়ে একটি সমঝোতাতে আসতে সক্ষম হয়। আর তা হল যতদিন পর্যন্ত উত্তর এবং দক্ষিণ আয়ারল্যান্ডের মধ্যে প্রযুক্তি নির্ভর এক ধরনের স্বয়ংক্রিয় শুল্ক চিহ্নিতকরন ব্যবস্থা স্থাপন না হচ্ছে ততদিন উত্তর আয়ারল্যান্ড পূরোপুরি শুল্ক সমিতির অংশ থাকবে – এই বিষয়টিকেই ‘ব্যাকস্টপ’ বলে অভিহিত করা হয়। অর্থ্যাৎ, যদি উত্তর আয়ারল্যান্ড শুল্ক সমিতির অংশ হয় এবং যুক্তরাজ্য এর বাইরে থাকে, তাহলে উত্তর আয়ারল্যান্ড এবং বাকি যুক্তরাষ্ট্র দুইটি ভিন্ন শুল্ব ব্যবস্থার অংশীদার এবং একই দেশের ভেতরে পণ্য যাতায়াতের উপর শুল্ক আরোপ হতে পারে। এই ব্যাকস্টপ ব্যবস্থার পাশাপাশি অভিন্ন বাজারে পণ্যের আদান প্রদান এবং অভিবাসি আইনসহ অনেকগুলো বিষয়কে উল্লেখ করে ঠেরেসা মে সরকার এবং ই ইউর মধ্যে নীতিগতভাবে একটি সমঝোতা হয়। এই সমঝোতার দুইটি অংশ আছে – প্রথমত উইথড্রল এগ্রিমেন্ট (প্রত্যাবর্তন চুক্তি) এবং পলিটিক্যাল ডিক্লারেশন (রাজনৈতিক ঘোষণা)। প্রথমটি প্রায় ৬০০ পৃষ্ঠা এবং দ্বিতীয়টি মাত্র ১২ পৃষ্ঠা। তাই রাজনৈতিক ঘোষণাতে অনেক কিছুই অমিমাংসিত। ভবিষ্যতে যুক্তরাজ্য এবং ই ইউ দেশের মধ্যে নিরাপত্তা, শিক্ষা এবং গবেষণা সহযোগিতা, এবং শিক্ষা/ব্যবসায়িক কারনে যাতায়াতের প্রক্রিয়া কি হবে সেটি পরিষ্কার উল্লেখ নেই পলিটিক্যাল ডিক্লারেশনে। আবার ই ইউর অভিন্ন বিজ্ঞান গবেষণাতে (গ্যালিলিও প্রোজেক্ট নামে খ্যাত) যুক্তরাজ্য থাকতে পারবে কি না - এ বিষয়ে কোন সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা না থাকায় এবং ই ইউ থেকে একধরনের নেতিবাচক ধারনা পাওয়ায় ঠেরেসা মে-র বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী গত মাসে ইস্তফা প্রদান করেন। এ পর্যন্ত প্রায় দশ জন মন্ত্রী ঠেরেসা মের মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন এই কথিত ‘ঠেরেসা মে’স ডিল’ মানতে না পেরে। কেউ কেউ ব্রেক্সিট সমর্থক আবার কেউ ব্রেক্সিট বিরোধী। অর্থ্যাত উভয়পক্ষই মনে করছে এটি একটি অনুপযুক্ত এবং দুর্বল চুক্তি। মে সরকারের সমর্থন দানকারী ডি ইউ পি এবং টোরি দলের কট্টর ব্রেক্সিট সমর্থক ই আর জি (ইউরোপিয়ান রিসার্চ গ্রুপ)এই চুক্তির চরম বিরোধিতাকারী। ই আর জি গত ডিসেম্বর মাসে ঠেরেসা মে-র নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে যা কিনা শেষ পর্যন্ত পরাজিত হয়। যদিও ব্রেক্সিট সমর্থকদের প্রধান আপত্তি ব্যাকস্টপ নিয়ে, তারা এই চুক্তির আরো একাধিক বিষয়ের সাথে অমত পোষণ করছেন। মূলতঃ তাদের অনেকেই ই ইউ থেকে কোনরকম সমঝোতা ছাড়াই বেরিয়ে আসতে চাইছেন।
ব্রিটিশ সংসদে সংখ্যার সমীকরণ জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। গত ডিসেম্বরে মে-র ডিলের উপর সংসদে ভোট হবার কথা থাকলেও তা সরকার কৌশল করে পিছিয়ে দিয়েছে। কারন সরকারি হুইপের ধারনা অনুযায়ি এই ডিল একশর ও বেশী ভোটের ব্যবধানে হারতে পারত। সরকার তাই বড়দিনের বাহানা দিয়ে এবং ই ইউর কাছে থেকে আরো আশ্বাসের প্রত্যাশা দেখিয়ে জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত এই ভোট পিছিয়ে দিয়েছে।
কিন্তু সংসদের একটি বিরাট অংশ মনে করছে – জানুয়ারির ১৪ তারিখে যখন আবার ভোট হতে যাবে, তখন এই চুক্তির তেমন কোন মৌলিক পরিবর্তন হবে না। এদিকে ডি ইউ পি সরকারের চুক্তির সমালোচনা করলেও সরকারের পতন চাইছে না। তাদের ভয় সরকার পতন হলে ব্রেক্সিট বন্ধ হয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে আরো মজার বেপার হল টোরি দলের ভেতরে থাকা ডজন খানেক ব্রেক্সিট বিরোধী সাংসদ সরকারের ব্রেক্সিট নীতির কঠোর বিরোধিতা করলেও তারাও সরকারের পতন চাইছে না – দু’টি কারনে – তারা ভয় পাচ্ছে এতে করে টোরি পার্টির নেতৃত্ব তাদের বিরোধী ব্রেক্সিট সমর্থক ই আর জির কাছে চলে যেতে পারে, অথবা সরকার পতন হলে গোঁড়া সমাজতান্ত্রিক জেরেমি করবিন ক্ষমতাতে চলে আসতে পারে। অন্য দিকে জেরেমি করবিন এবং লেবারের প্রথম সারির নেতাদের অনেকটাই ধরি মাছ না ছুঁই পানি অবস্থা। লেবার পার্টির গত বছরের কনফারেন্সে বলা হয় সরকারের চুক্তি দলটির মনমত না হলে তারা প্রথমে সাধারন নির্বাচনের চেষ্টা করবে এবং সেটি সম্ভব না হলে শেষ উপায় হিসাবে আরকটি গনভোটের জন্য দাবী করবে। কিন্তু আরেকটি সংসদ নির্বাচন বা সরকারের পতনের জন্য যে সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন সেটি তাদের নেই। জেরেমি করবিন গত দুই বছর ধরে এক ধরনের অতি বায়বীয় ‘জব ফার্স্ট ব্রেক্সিট’ বলে আসছে যার কোন ভিত্তি নেই। দলটি বলছে তারা অভিন্ন বাজারের সর্বোচ্চ সম্ভব সুবিধা নিবে – কিন্তু দলটির নেতৃত্ব ফ্রিডম অফ মুভমেন্ট সম্পর্কে একেবারেই নীরব। এটি সবাই জানে ই ইউ ফ্রিডম অফ মুভমেন্ট ছাড়া অভিন্ন বাজারে প্রবেশ বা এর কোন সুবিধা দিবে না। বস্তুত লেবার পার্টি চাইছে যেন তেন প্রকারে ব্রেক্সিট ভোটারদের কাছে টানতে – এতে করে দলটির বহুদিনের উদার আন্তর্জাতিক আদর্শকে বিসর্জন দিতেও তাদের উগ্র বাম নেতৃত্ব কার্পন্য করছে না। বরং অনেক লেবার নেতার কথাবার্তা উগ্র ডানপন্থীদের মত একই সুরে অনুরনিত হচ্ছে। উগ্র বামের সাথে ডানের সখ্যতা আমাদের বাংলাদেশেই কেবল হয় না। সোশাল মিডিয়াতে বহুল প্রচলিত ‘বামাতি’ শব্দটি বিলেতেও প্রযোজ্য।
সে যাই হোক, ব্রিটেনের সংসদে এখনো একটি বিষয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা সম্ভব যদি লেবার পার্টির নেতৃত্ব রাজি থাকে আর তা হল অনেকে যাকে বলছেন ‘পিপলস ভোট’ যা প্রকারান্তরে দ্বিতীয় গনভোট। ৯০% লেবার সাংসদ (যদি ছায়া মন্ত্রীসভা সমর্থন করে), স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট, লিবারেল ডেমোক্রেট, ওয়েলসের প্লাইড কাম্রু, নির্দলীয় এবং ডজন খানেক বিদ্রোহী টোরি সাংসদকে নিয়ে ৬৫০ আসনের মধ্যে ৩২০ জনের সমর্থন জোগাড় হয়ে যাবে। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন যে উত্তর আয়ারল্যান্ডের সিন ফেন (সাবেক আই আর এ –র রাজনৈতিক অংশ) সদস্যরা কখনোই সংসদে আসীন হন না কারন তারা রানীর অধীনে শপথ নেয়ার বিরুদ্ধে। তাই সেই আসনগুলো শূন্য থেকে যায়।আর এজন্যই সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার সমীকরণটি একটু ভিন্ন।
যদি এই দ্বিতীয় গনভোট না হয়, তাহলে এখন পর্যন্ত যা দেখা বা বোঝা যাচ্ছে, যুক্তরাজ্য শেষ পর্যন্ত এ বছরের মার্চের ৩১ তারিখে কোন সমঝোতা ছাড়াই ই ইউ থেকে বেরিয়ে যাবে – যাকে বলা হচ্ছে ‘নো ডিল ব্রেক্সিট’ – পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন এটি হবে একটি মারাত্মক বিপর্যয় – কেন এবং কিভাবে সেটি এই লেখাতে বলা সম্ভব না – শুধু এটুকু বলে দেয়া যায় যে সরকার নো ডিল ব্রেক্সিটের ক্ষেত্রে খাদ্য এবং ঔষধের পাইকারি স্থাপনা এবং সরবরাহের জন্য সেনা মোতায়েনের পরিকল্পনা করছে যা একটি উন্নত দেশের জন্য অকল্পনীয়।
ব্রেক্সিট সারসংক্ষেপ
উপরের রাজনৈতিক সমীকরণ এবং কৌশল ব্যতীতও ব্রেক্সিটের অনেকগুলো পরোক্ষ পরিনতি এবং প্রভাব রয়েছে। যেমনঃ
১) “ব্রেক্সিট ইস অফ দ্য রাইট বাই দ্য রাইট এ্যান্ড ফর দ্য রাইট” – ব্রেক্সিট একটি দক্ষিণপন্থী মতাদর্শ। ব্রেক্সিট নির্বাচনে উগ্র দক্ষিণপন্থীরাই নেতৃত্ব দিয়েছে। নাইজেল ফারাজ, জ্যাকব রিস মগ কিংবা বরিস জনসনরা ব্রিটেনের রাজনীতির উগ্র রক্ষণশীল ঘরানার প্রতিনিধি। তারা রাজনীতিতে অভিবাসি বিরোধী, উগ্র জাতীয়তাবাদের ন্যারেটিভকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে ব্রেক্সিটের মাধ্যমে। একি সাথে কিছু কিছু পুঁজিপতিদের কায়েমি স্বার্থ রক্ষা হবে ই ইউ-র পরিবেশবান্ধব এবং ভোক্তাস্বার্থ রক্ষাকারী নিয়মনীতি থেকে যদি যুক্তরাজ্য বেরিয়ে আসতে পারে। অনেক ব্রেক্সিট সমর্থক নেতারা ইতিমধ্যেই বলেছেন যুক্তরাজ্যকে একটি ট্যাক্স হেভেন বা স্বল্প আয়করের ধনতান্ত্রিক দেশে পরিনত করা হবে যাতে করে যুক্তরাজ্যের দীর্ঘ দিনের কল্যান অর্থনীতির অবসান হবে।
২) ব্রেক্সিট যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে বর্ণবাদ এবং উগ্র ডানপন্থীদের স্থানকে শুধু অনুমোদনই করে নি বরং পোক্ত করেছে। জ্যাকব রিস মগ কোনদিন টোরি দলের প্রথম সারিতে আসতে পারত না তার চরম রক্ষনশীল নীতি নিয়ে (তিনি প্রকাশ্যে বলেছেন - এমনকি ধর্ষিতার জন্যও গর্ভপাতের সুযোগ থাকা উচিত না – যা কিনা যুক্তরাজ্যের উদার নীতির সাথে সাঙ্ঘর্ষিক)। টমি রবিন্সন নামে এক বর্ণবাদী ছুটকো নেতা এখন রাজনীতির মূলধারাতে আসতে সক্রিয় – ব্রেক্সিটকে উপলক্ষ করে প্যারিসের ইয়েলো ভেস্ট কায়দায় তার সমর্থকরা লন্ডনের পথে নামতে চাইছে।
৩) ব্রেক্সিট উদার এবং বাম ঘরানাতে এক ধরনের বিভেদ এবং সংশয় সৃষ্টি করেছে। জেরেমি করবিনরা একদিকে নির্বোধ টিয়া পাখির মত লেক্সিট (লেফটিস্ট ব্রেক্সিট) আওড়িয়ে যাচ্ছেন অন্যদিকে টনি ব্লেয়ার ব্রেক্সিট বিরোধী বক্তব্য দিয়ে ব্রিটেনের উদার বাম এবং মধ্যমপন্থীদের কাছে তার হারিয়ে যাওয়া আস্থা এবং শ্রদ্ধা ফিরে পেতে চাইছেন। এর কোনটিই একটি প্রগতিশীল কার্যকরি বামপন্থী আন্দোলনের জন্য বা ভবিষ্যৎ ক্ষমতা আরোহনের জন্য সহায়ক নয়।
৪) ব্রেক্সিট ব্রিটেনের সমাজে ‘ব্রাউন সাহেব’ তথা অনেক ব্রিটিশ দক্ষিণ এশিয়দের রাজনৈতিক জ্ঞানের স্থুলতা, ঔপনিবেশিক জড়তা এবং চিন্তার দেউলিয়াপনা প্রকাশ করেছে।এদের অনেকেই ব্রিটেনের মূলধারার রাজনীতির খবর রাখেন না, ব্রিটেনের সংস্কৃতির সাথে একাত্ম হন না – তারা রেড রাইডিং হুডের সেই বৃদ্ধা দাদিমার মত দুর্বল, জড় এবং অজ্ঞ – হিংস্র নেকড়েকে সঠিক চিনতে পারেন না এবং সহজেই তার শিকারে পরিনত হন।
৫) সর্বোপরি, শ্রমজীবি মানুষরা চিরকালই উপরতলার নেতাদের ঘুঁটি হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। ব্রেক্সিট ব্যতিক্রম নয়। ব্রিটেনের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বেসরকারি স্কুল ইটন কলেজ থেকে পাস করা বরিস জনসন এবং জ্যাকব রিস মগ এবং সমাজের ওপর তলার সাংবাদিকরা (যেমনঃ বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত টেলিগ্রাফ পত্রিকার সাংবাদিক দিয়া চক্রবর্তী – সুলতানা কামালের মেয়ে, সুফিয়া কামালের নাতনিও আছেন এই দলে) বলে বেড়াচ্ছেন ই ইউ এবং তাদের সমর্থনকারী শহুরে বাবু সাহেবরা এক ধরনের বনেদী শ্রেনীর – তাই তাদের রুখতে হবে ব্রেক্সিট দিয়ে। অনেক সাধারন শ্রমজীবি মানুষ সেই বুলিতেই বিপ্লবী জোশ খুঁজে পাচ্ছেন, অথচ এরাই ব্রেক্সিটের জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। অর্থনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে যেকোন প্রকারের ব্রেক্সিট (ডিল অথবা নো ডিল) সবচেয়ে বেশি আঘাত করবে ব্রিটিশ সমাজের শ্রমজীবি মানুষদের যাদের অনেকেই এখনো ব্রেক্সিট আফিমে আবিষ্ট – ইংরেজিতে তাই বলে – ঠু মেনি টারকিস লাইক ক্রিসমাস (Too many turkeys like Christmas) – (বড়দিনে যুক্তরাজ্যে টারকি খাওয়া হয়) এক কথায় তাই ব্রেক্সিট হল তিতির পাখির বড়দিন উদযাপন।
লেখকঃ বিদিত লাল দে, যুক্তরাজ্য প্রবাসী শিক্ষক এবং গবেষক
মন্তব্য
জোশ - চমৎকার ধরেছেন। ৫ তারা।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
ধন্যবাদ
ব্রেক্সিট বিভিন্ন দিক নিয়ে চমৎকার একটা লিখা পড়লাম।
ব্রেক্সিটে স্কটল্যান্ড এবং উত্তর আয়ারল্যান্ড ‘রিমেইন’ সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল এটা জানতাম না।
উত্তর আয়ারল্যান্ডের ‘বিশেষ শুল্ক ব্যবস্থা’ সংক্লিষ্ট ব্যাপারগুলি পুরাপুরি বুঝতে পারিনি, প্রেক্ষাপট পড়ে বুঝতে চেষ্টা করব। উত্তর আয়ারল্যান্ডের ‘শুল্ক-ব্যবস্থা’ কি যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় সরকারের অধিনে নয়?
কিছুটা অফ-টপিক, যুক্তরাজ্যে মনে হয় ‘বেসরকারি স্কুলের’ ছাত্রদের ‘বিশেষ স্থান’ আছে। বেশ কিছুদিন একটা স্কটিশ কোম্পানিতে চাকরী করেছি, কিন্তু কোম্পানির সর্বোচ্চ পদধারী চারজনই ‘প্যাম্পারিং পাব্লিক স্কুল ইংলিশ বয়েজ’ ছিল (দুজন আবার ইটনের)। উইক-এন্ডে ‘চার-পাঁচ-প্যাগ’ পরার পর যুক্তরাজ্যের এই শ্রেণি-বিভেদের দ্গদগে চিহ্নটা সুপারভাইজারের মুখ থেকে সাবলিল ভাবে বের হয়ে আসত। (যদিও একপক্ষকে শোনে জাজমেন্টাল হলাম)
ধন্যবাদ - উত্তর আয়ারল্যান্ড এবং যুক্তরাজ্য একই শুল্ক ব্যবস্থার অংশ। কিন্তু ব্যাকস্টপ হলে উত্তর আয়ারল্যান্ড অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য ই ইউ-র শুল্ক ব্যবস্থার সাথে সম্পৃক্ত হবে যখন যুক্তরাজ্যের বাকি অংশ এর বাইরে থাকবে - সে ক্ষেত্রে একই দেশে দুইটি ভিন্ন শুল্ক ব্যবস্থা হবার সম্ভাবনা আছে।
বিদিতদা, নতুন বছরে সচলায়তনে গরমাগরম নিবন্ধন করে ফেলুন।
এই পোস্টের লেজ ধরে এখন অন্তত আরো দুটো পোস্টের জন্যে আবদার জানাই। এক, নো ডিল ব্রেক্সিট হলে পরিস্থিতিটা কেমন দাঁড়াবে, বাংলাদেশের ওপর তার অভিঘাতটাই বা কেমন হবে। দুই, একদিন-বাঙ্গালি-ছিলো ব্রেক্সিটপন্থীদের বাক্য-চিন্তা-কর্ম নিয়ে একটা ব্যবচ্ছেদমূলক পোস্ট। ব্রেক্সিটোত্তর সময়ে এখন পর্যন্ত আপনার মতো গুছিয়ে বাংলায় আর কাউকে ব্রেক্সিটের ওপর লিখতে দেখিনি, আমার মনে হয় এ নিয়ে আপনি লিখে গেলেই বাংলাভাষী পাঠকরা উপকৃত হবেন।
সম্প্রতি বাংলা পরিভাষা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে ব্রেক্সিট আর টার্কি, দুটোরই বেশ মজার বাংলা বিকল্প চোখে পড়েছে, এ সুযোগে এখানে জানিয়ে যাই (তিতির হচ্ছে Partridge, টার্কি না)। ব্রেক্সিটের বাংলা ব্রিট্টান, আর টার্কির বাংলা টুরগি (পুংলিঙ্গে টোরগ) ।
ধন্যবাদ হিমু। আগামী ৭ থেকে ১০ দিনে অনেক জল ঘোলা হবে, আর অনেকেই মাছ ধরতে নেমে যাবে। তাই একটু বুঝে তারপর আরেকটা লেখা দিব। এখনও আমার বিশ্বাস নো ডিল হবে না। তবে কিছুই দৃঢ়ভাবে বলা যাচ্ছে না। টোরগ আর টোরগি - মজার শব্দ - জানানোর জন্য আরেকবার ধন্যবাদ।
একটা ভবিষ্যৎবাণী করি, দেখি লাগে কিনা --
১। নো ডিল ব্রেক্সিট হবে না!
নো ডিল ব্রেক্সিট না হলে হাতে মাত্র দুইটা অপশন বাকি থাকে -
(ক) অনেক চিল্লাপাল্লার পর টেরেসা মে'র ডিলটাই পার্লামেন্ট শেষ পর্যন্ত হজম করে নিবে,
(খ) ব্রেক্সিটের উপর একটা ২য় রেফারেন্ডাম হবে।
আমার ধারণা, টেরেসা মে'র ডিল পাশ হবে না, কিন্তু নো ডিল ব্রেক্সিটের কথিত ও সম্ভাব্য বিপর্যয়কর পরিণতির দায়দায়িত্বও রাজনীতিবিদরা নিতে চাইবে না (যদিও তারাই এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে)। ফলে তারা টেরেসা মে নাকি নো ডিল, ব্রেক্সিট নাকি ব্রিটার্ন - এই ধরণের কোনো একটা প্রশ্নে আবার একটা রেফারেন্ডামের উদযোগ নিবে এবং সার্বভৌম আম পাব্লিকের হাতেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার মহান দায়িত্ব দেয়ার নামে যে কোনো ধরণের সম্ভাব্য বিপর্যয়কর/নেগেটিভ পরিণতির সব দায়-দায়িত্ব তাদের ঘাড়েই পাচার করে দিয়ে নিজেরা সাধু সাজার চেষ্টা করবে!! হা হা হা....
................................
ব্রেক্সিটের বিপরীতার্থক (antonym) কোনো শব্দ কি চালু হয়েছে এখনো পর্যন্ত? না হয়ে থাকলে আমি এটা প্রস্তাব করলাম - "ব্রিটার্ন" বা "Breturn"।
****************************************
যদি অপশন-(ক) সত্যি হয়, তাহলে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাশ করা ডিল কি ইইউ বিনা বাক্য ব্যয়ে মেনে নেবে?
যদি অপশন-(খ) সত্যি হয় তাহলে গণভোটে দুটো পরিস্থিতির যে কোন একটি তৈরি হবে - (১) ব্রেক্সিট (২) ব্রিটার্ন। আবারও ব্রেক্সিট জিতলে আরও ২/৩ বছর এটা নিয়ে ঝোলাঝুলি চলবে। এর মধ্যে কিছু নেতা আর কিছু পলিটিক্যাল গ্রুপ ফর্দাফাই হয়ে যাবে। আর যদি ব্রিটার্ন জিতে তাহলেও কিছু নেতা আর কিছু পলিটিক্যাল গ্রুপ ফর্দাফাই হয়ে যাবে।
ব্রেক্সিট হোক আর ব্রিটার্ন হোক ইউকে গমনেচ্ছু বাঙালী, বৈধ/অবৈধভাবে ইউকে'তে বসবাসরত বাঙালী, ইউকে'র সাথে ব্যবসা করতে আগ্রহী বাঙালী কারও জন্য কোন সুসংবাদ আছে বলে আশা করতে পারছি না।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
১। অপশন-(ক) সত্যি হওয়া মানে হচ্ছে টেরেসা মে-র ডিল মেনে নেয়া। আর টেরেসা মে-র ডিলটা ইইউ-রই ডিল! টেরেসা মে ইইউর-র চূড়ান্ত অফারটা গ্রহণ করে ফাইনাল সমঝোতা করে দেশে ফিরেছেন। এখন ইইউ আর মে-র মধ্যে সম্পাদিত এই ডিল বা চূড়ান্ত সমঝোতাটা বৃটিশ পার্লামেন্টে অনুমোদিত হলে তবেই তা আইনে পরিণত হবে, কার্যকরী হবে। এটা ইইউ-র না মানার কিছু নাই, তারা তো এটাতে এগ্রি করেই আছে। কিন্তু এই সমঝোতার মধ্যে "ব্যাকস্টপ" এবং এইরকম কিছু বিষয়ের কারনে বৃটেনের সরকারি ও বিরোধী দলের অনেকে এটা মানতে চাইছেন না, আবার ইইউ-ও বলে দিয়েছে এটা তাদের ফাইনাল অফার এবং এটা তারা বদলাবে না আর। তো ইইউ-অনুমোদিত এই ফাইনাল অফার-সম্পন্ন সমঝোতাটাই বৃটিশ পার্লামেন্টে অনুমোদনের জন্য যাবে। তাই এতে বৃটিশ পার্লামেন্ট অনুমোদন দিলে ইইউ খুশি হয়ে কোনো বাক্য ব্যয় করলেও করতে পারে, কিন্তু তাদের না মেনে নেয়ার কিছু নাই।
২। অপশন-(খ), অর্থাৎ ২য় রেফারেন্ডামে শুধু ব্রেক্সিট কোনো অপশন না। ঐ আলোচনা তো শেষ। আমি যেটুকু বুঝেছি, অপশন আসলে দুইটা (গণভোট পার্লামেন্টের ভোটের পরে হলে, যদি সেটা হতে পারে)। তবে রাজনীতিবিদরা এটা কিভাবে ফ্রেইম করবেন জানি না।
(ক) পার্লামেন্টের মে-ডিল প্রত্যাখ্যান সাপেক্ষে ঐ প্রত্যাখ্যান গ্রহণ করে নো-ডিল-ব্রেক্সিট তার সমস্ত পরিণতিসহ (পুরোপুরি জেনেবুঝে হোক, না বুঝে হোক) মেনে নেয়া, নয়তো
(খ) ব্রিটার্নের পক্ষে রায় দেয়া। অর্থাৎ, পুরো ব্রেক্সিট প্রক্রিয়াই বাতিলকরণ এবং পূর্বাবস্থায় প্রত্যাবর্তনের ইচ্ছা প্রকাস করা।
খোদ মে-ডিলটাই গণভোটে তোলা যায় কিনা জানি না, তবে সেটা হলে আরও একটা ইন্টারেস্টিং অপশন যোগ হতো।
****************************************
এবার 'দ্য ডিল'-এর ব্যাপারটা পরিষ্কার হলো। আসলে ব্রেক্সিট নিয়ে নির্বাচনের পর ব্যাপারটা নিয়ে কচলাকচলি এমন পর্যায়ে উঠলো যে আমি এক পর্যায়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেললাম। তাই 'দ্য ডিল' যে গাঙের ঐপাড় থেকে এসেছে সেটা জানতে পারিনি।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
মূলতঃ সব কিছুই নির্ভর করছে সংসদীয় পাটিগণিতের উপর। হিসাব মতে টোরি দলের ২০ থেকে ২২ জন কড়া রিমেইনার আর ১০০জন কড়া ব্রেক্সিটিয়ার এবং ডিইউপি-র সদস্যদের রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নের সম্মুখীন হবে যদি তারা মে-র ডিল সমর্থন করে। অন্তত সেই ভোট যদি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে হয় তবে তা অসম্ভব। এদিকে ৫ টি দলের (টোরি, লেবার, লিব ডেম, গ্রীন, প্লাইড কাম্রু এবং স্কটিশ ন্যাশনাল) ২১২ জন সাংসদ একটি আন্তঃদলীয় প্রস্তাব এনে সরকারের জন্য নো ডিলকে দুরহ করতে চাইছে। প্রস্তাবের উপর আলোচনা এবং ভোট সম্ভবত মে ডিলের উপর ভোটের আগেই হবে। লেবার নেতৃত্ব এতে সমর্থন জানিয়েছে। লেবারের ভেতরের ইউরোস্কেপটিক - যেমন ক্যারোলাইন ফ্লিন্ট এবং ডেভিড স্কিনাররাও এতে সহমত আছেন বলে জানা গেছে। এখন যদি নো ডিল এবং মে ডিল কোনটাই না হয় তখন আর্টিকেল ৫০ -কে রদ বা তারিখ পিছিয়ে দেয়া ছাড়া আর কোন পথ থাকবে না। দ্বিতীয় গনভোট বা নরওয়ে কায়দার ব্যবস্থা সবই তখন আরো সম্ভব হবে।
এক, ব্রেক্সিট নিয়ে বাংলা ভাষায় লেখা এবং আমার পড়া সবচে' প্রাঞ্জল ও বিস্তারিত ফিচার। ধন্যবাদ বিদিত।
দুই, উপরে হিমুর বলা দুটি পোস্টের দাবির সাথে সহমত জানালাম।
তিন, আমার ধারণায় ব্রেক্সিট হচ্ছে উন্নাসিক, জাত্যাভিমানী ইংলিশদের (বৃটিশ নয়) কালবিবেচনাহীন ঘাড় ত্যাড়ামির ফসল। এদের হাজারো মত, ব্যাখ্যা, দাবি দেখলে মনে হয় এরা নিজেরাও জানে এরা আসলে কী চায়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
অনেক ধন্যবাদ - আপনাদের উতসাহ আমাকে এনিয়ে আরো লিখতে আগ্রহী এবং অনুপ্রানিত করছে
আপনার ৩ নম্বর মন্তব্যের সাথে আমি অনেকটাই একমত।
ঠিক বলেছেন - এটা নিয়ে আরো বিস্তারিত লেখা যেত - এখানে অল্প করে বলি। ব্রেক্সিটিয়ারদের কাছে ব্যাকস্টপ হল সার্বভোমত্ব বিক্রি করে দেয়া। উত্তর আয়ারল্যান্ড এবং বাকি যুক্তরাজ্যের মধ্যে শুল্ক নিরিক্ষার ব্যবস্থাকে তারা কোনমতেই মেনে নিবে না। এই বিষয়ে লেবারের প্রথম সারির নেতৃত্বও একই মত পোষন করে - তার বলেছে যদি শুল্ক ব্যবস্থাতে থাকতেই হয় তবে গোটা যুক্তরাজ্য-ই তাতে থাকবে। আজ পর্যন্ত মে এবং জেরেমি করবিনের ব্রেক্সিট নীতির মধ্যে এই একটি বড় দৃশ্যণীয় পার্থক্য। জেরেমি করবিন বাকি যা বলছে সবই ধোঁয়াশা আর এজন্যই ঠেরসা মে দশ জন নিয়ে বিরোধী ১১ জনের বিরুদ্ধে খেলেও এখনো ম্যাচে ভালভাবে আছে।
১। "ব্যাকস্টপ" এবং বিশেষ করে এর বিরোধীদের এতে কি আপত্তি সেটা আপনি ভালোভাবে ব্যাখ্যা করেননি মনে হলো। বিষয়টি আরও বিস্তারিত বলা যাবে?
২। ঠিকভাবে প্যারাগ্রাফ বিভাজন না করায় এবং প্যারাগ্রাফের মধ্যে স্পেসের অভাবে পড়তে কষ্ট হচ্ছিল।
****************************************
বিদিত, তোমার লেখাটা আগেই পড়েছি। কালকের ভোটে এমন পরাজয়ের পর ব্রেক্সিট এখন কোথায় আছে?
---মোখলেস হোসেন
টেরেসা মে-র সরকারের উপর একটা আস্থাভোট হয়েছে এবং সরকার টিকে গেছে আপাতত। মে-র দলের যারা ডিলের বিপক্ষে ভোট দিয়েছিলেন, তারাও মনে হয় সরকার টিকিয়ে রাখার পক্ষেই ভোট দিয়েছেন। এখন মে বিরোধী দলের সাথে আলাপ-আলোচনার একটা ডাক দিয়েছেন, বিররোধীরা কি চায় এখন তা জানার জন্য। তবে মূল বিষয় হলো, ডিলটা র্রি-নেগোশিয়েট করার জন্য - বিশেষ করে "ব্যাকস্টপ প্রটোকল"-এর আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক সময়সীমাবিহীণ যে চরিত্রটাকে বৃটিশ রাজনীতিবিদরা উত্তর আয়ার্ল্যান্ডের ক্ষেত্রে স্থায়ীভাবে সার্বভৌমত্ব খোয়ানোর একটা ফাঁদ বলে গণ্য করছেন এবং যেটা মে-ডিল প্রত্যাখ্যানের একটা প্রধাণ কারন - ডিলের সেই অংশটা নিয়ে মে ইউতে নতুন করে দেন-দরবার করতে যাবেন। তবে ইইউ বলেই দিয়েছে এখন আর এই বিষয়ে কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন করবে না। ফলে মে-র লক্ষ্য থাকবে মিষ্টি-মিষ্টি কথার ভুজুং-ভাজুং দিয়ে ব্যাকস্টপকে রি-প্যাকেজ করতে ইইউকে রাজি করানো। তারপর সেটা আবার পার্লামেন্টে আনা এবং বৃটিশ সাংসদদের সেটা গেলানোর চেষ্টা করা। কতদূর কি হয় এখন সেটাই দেখার বিষয়!
****************************************
"ব্যাকস্টপ চুক্তি"।
****************************************
আরেকটা পর্ব এখন সময়ের দাবী। লিখে ফেলো বিদিত।
---মোখলেস হোসেন
মে-ডিলটা পার্লামেন্টে প্রথমবার আস্থাভোটে হারার পরে আমি উপরে আমার সর্বশেষ মন্তব্যে যা ঘটবে বলে লিখেছিলাম, ঠিক তাই ঘটেছে --
এটা মে করেছেন ইতিমধ্যে। কিন্তু তারপর --
এটাও হয়েছে এবং দেখা গেল যে ১২ই মার্চের ভোটে বৃটিশ সাংসদরা বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় মে-র পুরনো মদ ইইউ-কর্তৃক ইষৎ রি-প্যাকেজকৃত নতুন বোতল থেকেও গিলতে অস্বীকার করলেন। অর্থাৎ প্রত্যাখ্যান করলেন।
তো, এরপর কি হবে? এর পরের সম্ভাব্য ঘটিতব্য বিষয়গুলি, অর্থাৎ রোডম্যাপটা বিবিসি একটা চমৎকার ফ্লো-চার্টের মাধ্যমে অত্যন্ত সংক্ষেপে অথচ প্রাঞ্জলভাবে উপস্থাপণ করেছে --
****************************************
বিবিসির রিপোর্টটা পড়েছি। একেই বলে মাইনকা চিপা।
---মোখলেস হোসেন
সকলকে অনেক ধন্যবাদ। আমি এই সপ্তাহের শেষে আরেকটি লেখা সম্পন্ন করার আশা রাখছি।
নতুন মন্তব্য করুন