যুক্তরাজ্যের এবারের জাতীয় নির্বাচন অনেক দিক থেকেই তাৎপর্যপূর্ণ। এই নির্বাচন যুক্তরাজ্যের রাজনীতির ধারাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের আভাস দিচ্ছে। যদিও ব্রেক্সিটকে কেন্দ্র করেই প্রাক-নির্বাচন প্রচার এবং মেরুকরন আবর্তিত হয়েছিল, নির্বাচনের ফলাফল থেকে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন দেশটির ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে আমি নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনীতির কিছু ব্যাখ্যা এবং বিশ্লেষণ করছি।
প্রাক নির্বাচনী প্রচার এবং মেরুকরনঃ
১) এই নির্বাচনে কনজারভেটিভ বা টোরি দলের মূলমন্ত্র ছিল ‘ব্রেক্সিট’ – প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তারা সব প্রচারনাতে একটি অতি সরলীকৃত বার্তা দিয়ে গেছে। খুব ছোট দু’টি শব্দসমাহার – ‘ওভেন রেডি ডিল’ এবং ‘গেট ব্রেক্সিট ডান’ – যেন ব্রেক্সিট ডিল ইতিমধ্যেই হয়ে গেছে (শুধুমাত্র withdrawal agreement সম্পন্ন হয়েছে, বানিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করতে অনেক সময় লাগবে) এবং ব্রেক্সিট কিছু দিন/মাসের ব্যাপার মাত্র এবং টোরি দলকে ভোট দিলেই কেবল এই ব্রেক্সিট তরান্বিত হবে। অন্যদিকে, লেবার পার্টি এই নির্বাচনে কিছু বৈপ্লবিক নীতিমালাকে সামনে রেখে প্রচার চালায় – বিনামূল্যে ব্রডব্যান্ড, রাষ্ট্রায়ত্ব রেল, বিনামূল্যে উচ্চশিক্ষা, উন্নততর সামাজিক এবং স্বাস্থ্য সেবার প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে তারা সমাজতন্ত্র এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের প্রতিষ্ঠার উপর জোর আরোপ করে। কিন্তু তাদের ব্রেক্সিট অবস্থানে ছিল ধোঁয়াসা, যদিও তারা দ্বিতীয় ব্রেক্সিট গনভোটের পক্ষে ছিল। অন্যদিকে টোরিরা সামাজিক এবং অর্থনৈতিক নীতিমালার বিষয়কে অনেকটাই এড়িয়ে গেছে গোটা নির্বাচনী প্রচারনাতে। বিগত ৯ বছরে তাদের কৃচ্ছ্রতা (austerity) নীতিমালার কারনে যুক্তরাজ্যের সামাজিক এবং স্বাস্থ্যসেবা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এজন্য তারা এই বিষয়টি থেকে যথা সম্ভব দূরে ছিল নির্বাচনী প্রচারনার সময়। অর্থ্যাৎ, দুই দল দুই ভিন্ন ইস্যুকে কেন্দ্র করে প্রচার চালিয়েছে – যা সাধারনত যুক্তরাজ্যের নির্বাচনে খুব একটা দেখা যায় না।
২) যেসব আসনে গত নির্বাচনে টোরি সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল নির্বাচনের প্রচার শুরু হবার এক সপ্তাহের মধ্যে উগ্র ডানপন্থী ব্রেক্সিট পার্টি একতরফাভাবে সেই আসনগুলো থেকে তাদের প্রার্থী প্রত্যাহার করে নেয়। এর দুটো দিক আছে – ১) এতে করে তাদের কট্টর ব্রেক্সিট সমর্থকরা টোরিদের পক্ষ নেয়। ২) সাধারন মানুষ ভাবতে শুরু করে যে টোরি দল আদতেই ব্রেক্সিটকে সফল করবে। দ্বিতীয় দিকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ – কারন এতে করে টোরি দলের ব্রেক্সিট নীতির একধরনের গ্রহনযোগ্যতা সাধারন ব্রেক্সিট সমর্থকদের মধ্যে বেড়ে যায়। এখানে বলা দরকার যে ব্রেক্সিট দলের প্রধান নাইজেল ফারাজকে অনেকেই ব্রেক্সিটের রূপকার মনে করে – আর টোরিদের প্রতি তার আংশিক সমর্থন নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্ববহ দিক। অন্যদিকে ‘রিমেইন’ বা ব্রেক্সিট বিরোধী শিবির ছিল বহুধাবিভক্ত। লেবার, লিবারেল ডেমোক্রেট, গ্রীন এবং স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি এক হতে পারে নি। যদিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্যাক্টিকাল ভোটিং -এর মধ্য দিয়ে টোরিদের প্রতিহত করার জোর প্রচারনা চালানো হয়, আদতে দলগুলোর সদিচ্ছার অভাবে এটি কখনও সম্ভব হয়ে উঠেনি। একটি ছোট্ট উদাহরন – দক্ষিন ইংল্যান্ডের কেন্টারবুরিতে অল্প কিছু ভোটের ব্যাবধানে ২০১৭-র নির্বাচনে লেবার প্রার্থী জয়লাভ করে। রিমেইন অধ্যুষিত এই এলাকাতে লিবারেল ডেমোক্রেট প্রার্থী নির্বাচন শুরু হবার দুই সপ্তাহ পরে তার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে লেবারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে। কিন্তু লিবারেল ডেমোক্রেটদের কেন্দ্রীয় কমিটি কয়েক ঘন্টার মধ্যেই আরেক প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয় যদিও আঞ্চলিক পর্যায়ে অনেক লিবারেল ডেমোক্রেট কর্মী সমর্থকরা লেবার প্রার্থীকেই সমর্থন দিয়ে যেতে থাকে। মূলতঃ লেবার এবং লিবারেল ডেমোক্রেটের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পারস্পরিক অনাস্থা এবং এক ধরনের গোঁড়া আদর্শিক দ্বন্দের কারনে টোরি বিরোধী শিবিরে ঐক্য গড়ে উঠেনি।
নেতৃত্বঃ
এই নির্বাচনটি ব্রিটেনের রাজনীতির ইতিহাসে নেতৃত্বের দেউলিয়াপনার নিদর্শন হিসাবে গন্য হবে। বরিস জনসনের মিথ্যাচার সর্বজনবিদিত। ব্যাক্তিগত এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে একাধিকবার তার অসত্য ভাষণ, ক্ষমতার অপব্যাবহার এবং ধৃষ্টতার কথা সাধারন মানুষ জানে। লন্ডনের মেয়র হবার সময় তিনি এক ধরনের উদারনৈতিক রাজনীতিবিদের রূপ ধারন করেন – সে সময় রেকর্ডকৃত সাক্ষাৎকারে বরিস জনসন খোলামেলাভাবেই ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের এবং লন্ডনের অর্থনীতিতে ইউরোপীয় অভিবাসীদের অবদানের ভূয়সী প্রসংসা করেন। আবার ব্রেক্সিট ইস্যু সামনে আসতেই ব্রেক্সিট সমর্থক এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের কট্টর বিরোধী বনে যান নিজের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাসকে চরিতার্থ করার জন্য। ঠেরিসা মের ব্রেক্সিট ডিলের বিরূদ্ধে তিনি দুই দফায় ভোটপ্রদান করেন। উত্তর আয়ারল্যান্ডের ডিইউপি পার্টিকে দেয়া প্রতিশ্রুতি এক মাসের মধ্যেই ভেংগে ফেলেন। এমন আরও অনেক ঘটনা থেকে বলা যায় – বরিস জনসন আর ‘আস্থা/বিশ্বাস’ একই পংক্তিতে বসে না। অন্যদিকে লেবার প্রধান জেরেমি করবিনকে সাধারনভাবে মানুষ বিশ্বাস করে। কিন্তু করবিনের নেতৃত্বের গুনাবলীগুলোই অনেক ক্ষেত্রে তার বড় দুর্বলতা। তিনি মেঠো রাজনীতিতে পটু। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ কর্মী – কর্মীদের মধ্যেও তিনি জনপ্রিয়। সর্বোপরি খুব কঠিন এবং সাহসী সমাজতন্ত্রী নীতি গ্রহনে তিনি পিছুপা হন না। কিন্তু অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন করবিন একজন ‘কাল্ট হিরো’ – তিনি সেই ধর্মযাজক যিনি শিষ্যদের মনজয়ে যতটা সফল অন্যদের ধর্মান্তরিত করে দলে ভিড়াতে ততটাই ব্যর্থ। তদুপরি ব্রেক্সিট বিষয়ে তার ‘কুল রাখি না সাম রাখি’ অবস্থা সবাই জানত। বলে রাখা দরকার যে ২০১৬-র নির্বাচনের সবচেয়ে ব্রেক্সিটি (সর্বাধিক ব্রেক্সিট ভোট) এবং সবচেয়ে রিমেইনি (সর্বাধিক ব্রেক্সিট বিরোধী ভোট) আসন – দুটোই লেবারের। ‘ওয়াইন ড্রিংকিং’ নগরাঞ্চলের উদারভাবাপন্ন মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত কসমোপলিটান এবং ‘বিয়ার ড্রিংকিং’ গ্রাম বা উপ শহরের (মূলতঃ মধ্য এবং উত্তর ইংল্যান্ডের) শ্রমজীবি মানুষ – দুটো শ্রেণীই লেবারের ভোটের উৎস। ব্রেক্সিট ইস্যুতে এই দুইয়ের অবস্থান সাঙ্ঘর্ষিক। তদুপরি লেবার দলের চালিকা শক্তি ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের মধ্যেও এ নিয়ে বিরোধ লেবারের দলীয় অবস্থানকে বেশ নাজুক করে দিয়েছে। ব্রেক্সিট বিষয়ে কথা বলতে তাই করবিন অসচ্ছন্দবোধ করেন বলে অনেকের কাছে প্রতীয়মান হয়। আরও একটি বিষয় এই নির্বাচনে করবিনের ব্যাক্তিগত ভাবমূর্তীকে খর্ব করেছে – তা হল লেবার দলের মধ্যে গড়ে উঠা এ্যান্টি সেমিটিজম। এ বিষয়টি অনেকটা জটিল এবং দীর্ঘ – তাই বেশী না বলে খালি এটুকু বলে রাখছি করবিনের নেতৃত্বের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হিসাবে এই বিষয়টি থেকে যাবে আগামী দিনগুলোতে।
নির্বাচনের ফলাফল এবং ভবিষ্যৎ রাজনীতির রূপরেখা
১) এই নির্বাচনে লেবার পার্টি উত্তর ইংল্যান্ড এবং ওয়েলসে ৫০ টির এর চেয়েও বেশী আসন হারিয়েছে। এর মধ্যে আছে রেক্সাম, বলসোভার, ডন ভ্যালির মত এলাকা যেখানে এক সময় কলাগাছও লেবারের মনোনয়ন নিয়ে জিতত। মজার ব্যাপার হল উত্তর ইংল্যান্ডের লিভারপুল, লিডস, ম্যাঞ্চেস্টার, নিউকাসল এবং শেফিল্ড এবং মধ্য ইংল্যান্ডের বার্মিংহাম বা নটিংহামের মত বড় শহরে লেবারের আধিপত্য বজায় রয়েছে। তার মানে হল লেবার ছোট শহর বা গ্রামের শ্রমজীবি মানুষের মধ্যে সমর্থন হারিয়েছ। যেমনটি আগে বলেছি, লেবারের ‘বিয়ার ড্রিংকং’ শ্রমজীবি সমর্থকদের একটি বড় অংশের কাছে ব্রেক্সিট একটি অমার্জনীয় বিষয়। আর তাই তারা লেবারকে নিষ্ঠুরভাবে শাস্তি দিয়েছে। বিভিন্ন গবেষনা থেকে এই সম্ভাবনার কথা আগেই বলা হয়েছিল। ঠেরিসা মে তাই ২০১৭ তে নির্বাচন দিয়েছিলেন লেবারের দুর্গে হানা দেবার জন্য। কিন্তু যেমনটি আগে বলেছি, বরিসের জন্য ব্রেক্সিট পার্টির সমর্থন তাকে অনেক বেশী গ্রহনযোগ্য করেছে ব্রেক্সিট সমর্থকদের কাছে – যা ঠেরিসা মের জন্য ঘটেনি। তাই লেবার পার্টি ২০১৭ র নির্বাচনে তাদের উত্তরের দূর্গ আগলে রেখে লন্ডনভিত্তিক রিমেইন ভোটের উপর ভর করে টোরিদের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল। এ যাত্রায় সেটি সম্ভব হয় নি।
২) আমরা এই নির্বাচনের ফলাফলের মধ্য দিয়ে একটি নতুন অধ্যায়ের দিকে যাচ্ছি বলে অনেকে মনে করেন। লেবার পার্টি এক সময় পুরো স্কটল্যান্ডে একক আধিপত্য করত। কিন্তু এখন তারা সেখানে প্রায় বিলীন। স্কটল্যান্ডের অনেক আসনেই তারা তৃতীয়। লেবার পার্টি যদি উত্তর ইংল্যান্ডে তাদের আধিপত্য ধরে না রাখে, তবে তাদের জন্য অদুর ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসা অসম্ভব। আরেকটি বিষয় হল টনি ব্লেয়ার একমাত্র লেবার নেতা যিনি গত তিন দশকে এই দলটিকে ক্ষমতায় নিতে পেরেছেন। তিনি মধ্য ইংল্যান্ডের অধিকাংশ আসনে লেবারকে জিতিয়েছেন, এই এলাকাগুলোতে গত চারটি নির্বাচনে লেবারের সাফল্য যতসামান্য। এই অঞ্চলগুলোতে মধ্যবিত্ত এবং বিত্তহীন দুই সম্প্রদায়ের মধ্যেই লেবার জনপ্রিয়তা হারিয়েছে।
৩)লেবার শব্দটির এবং দলটির উৎস বলে দেয় যে এতি শ্রমজীবির দল। কিন্তু পৃথীবির অনেক দেশের মতই যুক্তরাজ্যেও শ্রমজীবিরা অর্থনৈতিক সমাজতন্ত্রকে সমর্থন করলেও সামাজিকভাবে তারা অনেক রক্ষণশীল। তাদের অনেকেই আধুনিক উদার সমাজের প্রগতিশীল মূল্যবোধকে (যেমন সমকামিতা, গর্ভপাত, অভিবাসন)পুরোপুরি ধারন করে না। তাই ডানপন্থী রাজনীতি তাদেরকে সহজেই আকর্ষণ করতে পারে। হয়ত আগামী জাতীয় নির্বাচনে ব্রেক্সিট থাকবে না। কিন্তু তখন টোরি বা রক্ষনশীলরা এমন আরেকটি বিষয়কে সামনে নিয়ে এসে লেবারকে আবার আঘাত করতে পারে। যতদিন না পর্যন্ত লেবারের মত দলগুলো সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক নীতিমালার সাথে সাথে সামাজিক প্রগতিশীলতাকে শ্রমজীবি মানুষের কাছে নিয়ে না যাবে, ততদিন পর্যন্ত তাদের ব্যর্থতার দীর্ঘ রাত্রি সমাপ্ত হবে না, সাফল্য আসলেও তা হবে ক্ষণস্থায়ী।
বিদিত লাল দে
যুক্তরাজ্যে বসবাসরত শিক্ষক, গবেষক
মন্তব্য
লেবার পার্টি যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো, সেগুলো টোরি বাস্তবায়ন করবে না সেটা বোঝা যায়। সেদিন কোথায় যেন পড়লাম ডাকুস্তানের জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা (NHS) নাকি রদ করে অনেক কিছু মার্কিন ঔষধ ও স্বাস্থ্যব্যবসায়ী গোষ্ঠীগুলোকে ডাকুস্তানি বাজারে ঢোকার সুযোগ করে দেওয়া নিয়ে গোপনে আলাপ হচ্ছে, এমন কিছু দলিল করবিন লোকসভায় (হাউস অফ কমন্স) উপস্থাপন করেছেন। এই আশঙ্কাগুলো টোরি ভোটারদের প্রভাবিত করে না কেন? তারা কি এতই সচ্ছল যে লেবারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হলেও তাদের চলতে-ফিরতে সমস্যা হয় না?
খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। স্বাস্থ্য সেবা অনেকটা খারাপ হয়েছে গত ৯ বছরে। কিন্তু ব্রেক্সিটপন্থীরা সব সময় বলে এসেছে যে অভিবাসনের জন্য স্বাস্থ্য এবং আবাসন সমস্যা প্রকট হয়েছে। তাই ব্রেক্সিট হলে এর সমাধান হয়ে যাবে। এখানেই লেবার নেতৃত্বের সমস্যা। তারা গত তিন বছরে ব্রেক্সিটকে এড়িয়ে গেছে অথবা ব্রেক্সিট বিষয়ে স্পষ্ট এবং কঠোর অবস্থান থেকে দূরে থেকেছে।সাধারন মানুষকে তাই কেউ বোঝায়নি যে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য এবং সামাজিক সেবা খাত দাঁড়িয়ে আছে অভিবাসীদের উপর। ইউরোপীয় নার্স এবং দক্ষিণ এশিয়ার ডাক্তার ছাড়া NHS অচল। ট্রাম্পের সাথে NHS কে নিয়ে অনেক কথা হয়েছে প্রাক নির্বাচনী প্রচারনাতে। কিন্তু সাধারন মানুষ মনে করে থাকতে পারে এটি নেহায়েত নির্বাচনী প্রচারনা। করবিন ব্যক্তিগতভাবে এই নির্বাচনে অনেকটা নিঃস্পৃহ ছিল গত নির্বাচনের তুলনাতে – তার বক্তব্যের ধার অনেকটা কম ছিল গতবারের তুলনাতে। আর এই বিষয়টি অন্য মধ্যপন্থী দল (লিবারেল ডেমোক্রাট বা গ্রীন) সমানভাবে তুলে ধরেনি। যে কারনে অনেকেই ভাবতে পারে পুরো বিষয়টি এক ধরনের বামপন্থী নির্বাচনী বুলি।
কোথায় যেন পড়েছিলাম বা দেখেছিলাম, অভিবাসী হয় মোটামুটি যুবক লোকজন, যারা শিক্ষা আর স্বাস্থ্য খাতের ওপর তেমন চাপ ফেলে না, কিন্তু তাদের দেওয়া করে এই দুই খাত পুষ্ট হয়। সেবক-চিকিৎসক যদি খাঁটি বিলাতিও হতো, এনএইচএসের জন্য বরাদ্দ অর্থের উৎসেও তো অভিবাসীদের বড় অংশীদারি আছে।
আমি স্বল্পজ্ঞানে যতটুকু বুঝি, ইয়োরোপীয় ইউনিয়নে থাকলে ডাকুস্তানি গান্ধা বড়লোকদের জন্য ক্যারিবীয় করস্বর্গগুলোয় টাকা পাচার কঠিন হয়ে উঠবে। সারা দুনিয়ার কালো টাকা ধোলাইয়ের পথে ডাকুস্তানি অর্থ ব্যবস্থাপনার কাঠামোকে একটা বড় উপকেন্দ্র হিসেবে টিকিয়ে রাখার তাগিদ আছে, ব্রেক্সিট সেটারই নিশ্চায়ক। লেবার পার্টিরও এতে দৃশ্যমান আপত্তি নাই যখন, তার মানে তারাও এই জুয়া-ফাটকায় নির্ভরশীল অর্থনীতিতে নিমরাজি।
টোরি ভোটারদের প্রভাবিত করবে কি, এবার অনেক দীর্ঘকালের পুরনো লেবার ভোটাররাও টোরিদের ভোট দিয়েছে! বুঝেন ঠ্যালা!!!
****************************************
এই বেভোটু লেবার ভাইদের "মিঞা কি টোরি" ডাকা যায়।
আবারও ভালো একটি লেখা দিয়েছো বিদিত। পৃথিবী জুড়েই ট্রাম্প, মোদী, কিংবা বরিস টাইপের মানুষেরা নির্বাচনে সাফল্য পাচ্ছেন আজকাল। এদেরকে যারা জেতাচ্ছেন তাঁদের বিবেচনা বোধ, সংস্কার এবং বুদ্ধিমত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কেউ কেউ। আবার এই প্রশ্ন তোলার পেছনে যে কৌলিন্য লুকিয়ে থাকে, কেউ কেউ সেদিকেও আঙুল তোলেন, বলেন নির্বাচনে প্রতিফলিত জনমতটা এই কৌলীন্যের প্রতি একটা চপেটাঘাতও বটে। আমি কুলীন নই, সাবওয়ের কামরায় আমার পাশে বশে থাকা মানুষটা অন্ততপক্ষে আমার সমান বুদ্ধিমান বলেই আমি মনে করি। কিন্তু যখন দেখি আমার তোমার চোখে খলনায়ক মানুষগুলো তাদের সকল মিথ্যাচার এবং সংকীর্ণতা নিয়ে বিজয়ী হয়ে যাচ্ছে, হয়ে দাঁড়াচ্ছে আমাদের এবং উত্তর প্রজন্মের ভাগ্য নিয়ন্তা, তখন আজন্মলালিত মূল্যবোধে একটা ধাক্কা লাগে। সমস্যা কি তবে আমারই? আমাদের?
---মোখলেস হোসেন
পেন্ডুলাম এখন দক্ষিণমুখী এবং প্রান্তবিন্দু প্রাপ্ত হতে দেরী আছে।
লেখা ভালো লেগেছে।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
নতুন মন্তব্য করুন