একটি অন্যরকম দিন আর একটি ঘটনা

পাগল মন এর ছবি
লিখেছেন পাগল মন [অতিথি] (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৬/০৫/২০১১ - ৯:১৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আজ দিনটি ভালো-মন্দের মিশেলে পার হচ্ছে।
সকালে উঠেই মনটা ভালো হয়ে গিয়েছিল যেটা দুপুর পেরোতে না পেরোতেই খারাপ লাগায় ভরপুর হয়ে উঠেছে। মন খারাপ

আজ ছিল আমার ড্রাইভিং এর রোড টেস্ট, লাইসেন্স পেতে হলে সবাইকেই তা দিতে হয়। তবে কানাডায় এই ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া বিশাল হ্যাপার কাজ। যদি আপনার আগে কোন ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং ড্রাইভিং রেকর্ড না থাকে তাহলেই হয়েছে। আপনাকে পুরো হাইকোর্ট, সুপ্রীম কোর্ট ...

আজ দিনটি ভালো-মন্দের মিশেলে পার হচ্ছে।
সকালে উঠেই মনটা ভালো হয়ে গিয়েছিল যেটা দুপুর পেরোতে না পেরোতেই খারাপ লাগায় ভরপুর হয়ে উঠেছে। মন খারাপ

আজ ছিল আমার ড্রাইভিং এর রোড টেস্ট, লাইসেন্স পেতে হলে সবাইকেই তা দিতে হয়। তবে কানাডায় এই ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া বিশাল হ্যাপার কাজ। যদি আপনার আগে কোন ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং ড্রাইভিং রেকর্ড না থাকে তাহলেই হয়েছে। আপনাকে পুরো হাইকোর্ট, সুপ্রীম কোর্ট যত কিছু আছে সবই দেখতে হবে এই লাইসেন্স পাওয়ার চক্করে। আমি এখন সেটাই দেখছি এখানে। মন খারাপ

দেশে থাকতে অনেক কিছুর মত আমি ড্রাইভিংটাও শিখে উঠতে পারিনি। কত কিছুই না শেখার ইচ্ছা ছিল: সাঁতার, গাড়ি চালনা কত কী। কিন্তু সেসবের কিছুই শেখা হয়নি। যাহোক, এখানে আসার পরে পরেই এক সিনিয়র ভাই আমাদের বলল যে ড্রাইভিং লাইসেন্সটা যত তাড়াতাড়ি পারা যায় নিয়ে নিতে, পরে ইন্স্যুরেন্সে সুবিধা হবে। যেহেতু আমার আগে কোন ড্রাইভিং লাইসেন্স নাই, তাই আমাকে এখানকার বিখ্যাত “গ্রাজুয়েট লাইসেন্সিং প্রোগ্রাম” এ নিজেকে শামিল হতে হবে। কানাডার ঠান্ডার মত এই গ্রাজুয়েট লাইসেন্সিং প্রোগ্রামও আমাকে চরম ধরণের যন্ত্রনা দিয়েছে এবং এখনো দিয়ে যাচ্ছে, আরো কত দিন দিবে কে জানে?!

এই গ্রাজুয়েট প্রোগ্রাম অনুসারে, আপনাকে প্রথমে একটি ছোট্ট (!) লিখিত সাধারণ জ্ঞানের পরীক্ষা দিতে হবে। তবে সেটার জন্য চিন্তার কোনই কারণ নেই, এর জন্য চোথার ব্যবস্থা আছে। দেঁতো হাসি এরপরেই আসল যন্ত্রনার শুরু। লিখিত পরীক্ষায় পাশ করলে আপনি পাবেন লার্নাস লাইসেন্স (ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায়)/জি১ (অন্টারিওতে)। এরপরে আপনি এক বছর সময় পাবেন, রোড টেস্টের প্রিপ্রারেশন নেওয়ার। এই এক বছরে আপনি নিজেকে রোড টেস্টের জন্য প্রস্তুত করবেন। এখানে অনেক ড্রাইভিং স্কুল আছে যারা সরকার অনুমোদিত, তবে সেগুলো কিছুটা এক্সপেন্সিভ। এছাড়াও আরো অনেকে ব্যাক্তিগতভাবে ড্রাইভিং শেখায়। আমি সেটাই প্রেফার করবো কেননা দামে সস্তা, তবে সস্তা হলেও ভালো। চোখ টিপি আমি সেরকমি একজনের কাছ থেকে ড্রাইভিং শিখছি। আপনি যদি একদম নতুন, মানে আমার মত কচি, আনকোরা ড্রাইভার হন তাহলে আপনার একটু বেশি লেসন নিতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি কোন বন্ধুর গাড়ি থাকে তাহলে তাকে বলে দেখতে পারেন তার গাড়িতে প্র্যাক্টিস করার জন্য। এখানে একটি কথা বলে রাখি, আপনি কিন্তু লার্নাস কিংবা জি১ স্টেজে একা একা গাড়ি চালাতে পারবেন না, আপনার সাথে একজন পূর্ণ লাইসেন্সধারী অবশ্যই থাকতে হবে। আর বন্ধুর কথা বলছিলাম, সাধারণত কেউই নিজের গাড়ি একজন আনকোরা ড্রাইভারের হাতে ছাড়তে চায়না। যদি ছাড়ে তাহলে ভাববেন সে আপনাকে বিশাল ফেবার করছে। লিখিত পরীক্ষা পাশের এক বছর পরে আপনি লায়েক হবেন রোড টেস্ট দেয়ার জন্য। যদি ধরে নেই, আপনি এর মধ্যে গাড়ি চালনা শিখে ফেলেছেন তাহলে আপনি রোড টেস্টের তারিখ ঠিক করবেন, পরীক্ষা দিবেন। পরীক্ষার সময় আপনার নিজের গাড়ি (হয় আপনার ইন্সট্রাক্টরের গাড়ি অথবা আপনার কোন বন্ধুর) নিয়ে যেতে হবে, সেখান থেকে কোন গাড়ি দেয়া হয়না, শুধুমাত্র পরীক্ষক সাপ্লাই করে তারা। দেঁতো হাসি যদি কোনমতে আপনি রোড টেস্ট পাশ করে ফেলতে পারেন তাহলেই কেল্লা ফতে। তবে একখান কথা, সাধারণত কচি, আনকোরা ড্রাইভাররা একবারে রোডটেস্ট পাশ করতে পারেনা। ফেল করলে কোনই সমস্যা নেই, দুই সপ্তাহ পরে আপনি আবার রোডটেস্টের বুকিং দিতে পারবেন, যদি অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেয়ে যান তাহলে পরীক্ষাও দিতে পারবেন। এই পরীক্ষা পাশের পরেও শেষ হবে না আপনার যন্ত্রনা। আপনি পাবেন নবিস (ক্লাস সেভেন)(বি.সি)/ জি২ (অন) লাইসেন্স যাতে কিছু রেস্ট্রিকশন আছে, যেমন আপনি নিজের ফ্যামিলি মেম্বার ছাড়া গাড়িতে একজনের বেশি নিয়ে চালাতে পারবেন না (ফ্যামিলি মেম্বার হলে যতখুশি মানে গাড়ির ক্যাপাসিটি পর্যন্ত তুলতে পারবেন) , রাত ১২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত গাড়ি চালাতে পারবেন না। এই অবস্থা থাকবে অন্তত দুই বছর। দুই বছর পরে আপনাকে আবার কাঠগড়ায়, মানে পরীক্ষা দিতে হবে, অবশ্যই রাস্তায় গাড়ি চালিয়ে। যদি সেটা পাশ করে যান তবেই মিলবে সোনার হরিণ, আই মীন পূর্ণ ড্রাইভিং লাইসেন্স (ক্লাস ফাইভ/জি ফুল) এবং সেসাথে আপনি হবেন গ্রাজুয়েট (ড্রাইভিং-এ)। হাসি
যদি আপনি আগে থেকেই ড্রাইভিং জানেন তাহলে আপনার জন্য প্রসেসটি কিছুটা সহজ। অন্টারিওতে অবশ্য আপনাকে গ্রাজুয়েট লাইসেন্সিং প্রোগ্রামে ঢুকতেই হবে। অবশ্য আপনার যদি দুই বছরের ড্রাইভিং অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে আপনাকে লিখিত পরীক্ষার পরে একবছর অপেক্ষা করতে হবেনা, আপনি রোডটেস্ট অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়ামাত্রই দিতে পারবেন, তবে আপনি পাবেন জি২ লাইসেন্স। এর দুইবছর পরে আবার পরীক্ষা দিয়ে পূর্ণ লাইসেন্স নিতে হবে। আর বি.সি.তে আপনি চাইলে রোডটেস্ট নাও দিতে পারেন যতদিন আপনি ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট আছেন। আপনি আপনার দেশের লাইসেন্স (ইন্টারন্যাশনাল লাইসেন্স না, অরিজিনাল বঙ্গদেশীয় লাইসেন্স ইংরেজীতে ট্রান্সলেট করা) দিয়েই এখানে গাড়ি চালাতে পারবেন। আর যদি রোডটেস্ট দিতেই চান (আমি দিতেই বলবো) তাহলে পাশ করলে আপনি পাবেন ক্লাস ফাইভ মানে পূর্ণ লাইসেন্স। আমাদের এই পেইনের কথা আমেরিকা প্রবাসী এক সিনিয়র ভাই শুনে খুব অবাক হয়েছিল কেননা সেখানে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া বেশ সহজ।
(আমি যেহেতু এদুটো প্রভিন্সে ছিলাম বা আছি তাই এদুটোর কথাই লিখলাম)

আমি কানাডায় আসার ৫ মাসের মাথায়ই লিখিত পরীক্ষাটি দিয়ে দিয়েছিলাম সেই সিনিয়র ভাইয়ের কথা শুনে। তারপরে গতবছর নভেম্বর মাস থেকে ড্রাইভিং লেসন নেয়া শুরু করি। মাঝে অনেকদিন বন্ধ ছিল, পরীক্ষা, ক্রিসমাসের ছুটি, নতুন টার্মের শুরুর ব্যস্ততা ইত্যাদির কারণে। এপ্রিলে আবার শুরু করি লেসন নেয়া। যখন মনে হলো যথেষ্ট শেখা হয়েছে, দিলাম পরীক্ষা কিন্তু ফেল করলাম ট্রেন্ড বজায় রেখে। খাইছে তারপরে আবার লেসন নেয়া শুরু করলাম, এর মধ্যে এক বিদেশি বন্ধু আমাকে তার গাড়িতে করে প্র্যাক্টিস করার সুযোগ দেয়। আর আজ ছিল দ্বিতীয়বারের মত রোডটেস্ট। রেজাল্ট: আবারো ফেল মারছি। মন খারাপ হওয়ার জন্য আর কী লাগে, বলুন?

আজ অবশ্য সকালেই একটি ঝামেলা পাকিয়েছিলাম। রোডটেস্টের আগে পাসপোর্ট দেখাতে হয় (প্রাইমারী আইডেন্টিফিকেশন), আমি সেটা ভুলে নিয়ে যাইনি। তো বাসা থেকে একবার বের হয়ে অনেকদূর গিয়ে আবার তাড়াহুড়ো করে বাসায় এসে পাসপোর্ট নিয়ে যাই, একটুর জন্য দেরি হয়নি পৌছাতে। এই ঘটনায় আমার অনেক আগেকার একটি ঘটনার কথা মনে পড়ে গেল।

২০০০ সাল, আমার এস.এস.সি. পরীক্ষার সময়, প্রথম পরীক্ষা- ইংরেজী প্রথম পত্র। আমি আম্মুর সাথে গিয়েছি পরীক্ষাকেন্দ্রে। পরীক্ষাকেন্দ্র আমার বাসা থেকে আধঘন্টার পথ। আমি হলে ঢুকেছি। কিছুক্ষন পরে আমার সামনে বসা আমার এক বন্ধু আমার প্রবেশপত্র দেখে বলল,

“কিরে তুই, এটার ফটোকপি নিয়ে এসেছিস কেন? ফটোকপিতো অ্যালাউড না।”

আমিতো ভয় পেয়ে গেলাম। ততক্ষনে স্যাররা চলে এসেছে হলে, খাতা দিয়ে দিয়েছে। আমি খাতা রেখে দিলাম দৌড়, এক দৌড়ে কেন্দ্রের গেটের বাইরে। বাইরে গিয়ে মা’কে খুঁজলাম, পেলাম না। আমি তাড়াতাড়ি করে রিকশা নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলাম। কিছুদূর যাওয়ার পরেই দেখলাম প্রচন্ড যানজট। আমি রিকশাকে আমার এক স্যারের বাসার সামনে থামালাম, আমার কাছে রিকশা ভাড়া ছিলনা স্যারের বাসা থেকে রিকশাভাড়া নিব এজন্য। স্যারতো তখন বাসায় নেই, স্যারের ওয়াইফের কাছ থেকে টাকা নিয়ে রিকশাভাড়া দিয়েই আবার দৌড় বাসার উদ্দেশ্যে। দৌড়েই বাসায় পৌছালাম কিন্তু প্রবেশপত্র ছিল কাঁচের আলমিরার ভেতরে। আমি সেই কাঁচ ভেঙে প্রবেশপত্র নিয়ে আবার রিকশা করে কেন্দ্রে ফিরলাম, এবার যানজট ছিলনা কোন (ভাগ্যিস)। সব মিলিয়ে আধঘন্টার মত দেরী হয়েছিল। এসে পরীক্ষা দিতে বসলাম, প্রশ্ন হাতে নিয়ে দেখি সব কমন। আহ! কী শান্তি। ধুমায়ে লিখলাম, সময়ের আগেই সব উত্তর লিখে শেষ করেছিলাম এটা মনে আছে। পরীক্ষা শেষেতো সবাই জিজ্ঞাসা করলো, কী হয়েছিল? আমি বলতেই আমাকে বলল ওরা যে ফটোকপি দিয়েও পরীক্ষা দেয়া যায়, তেমন একটা সমস্যা হয়না। আমি তখন শুনে কী আর করবো? আফসুস, তবে আমি সব উত্তর লিখতে পেরেছি এতেই খুশি ছিলাম। বাইরে অপেক্ষারত গার্জিয়ানরা অনেকেই আমাকে বের হতে দেখেছিল। তারাও কী হয়েছিল জিজ্ঞাসা করল, বললাম। আম্মু অনেক টেনশন করছিল, আমাকে হাসিমুখে বের হতে দেখে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিল সেদিন।

এখনো আমার সেদিনের ঘটনা মনে পড়লে হাসি পায় আবার ভয়ও হয়, যদি সব কমন না পড়তো তাহলে কী হতো সেদিন সেটা চিন্তা করলে। আর হাসি পায় নিজের গাধামির জন্য। আমি সেদিন স্যারের বাসায় গিয়েছিলাম রিকশাভাড়ার জন্য, স্যারের ওয়াইফের সাথে এর আগে কখনো কথা বলিনি অথচ সেদিন কী অবলীলায় আমি টাকা চেয়েছিলাম ভাবতেই অবাক লাগে এখনো।

আর আজ কেন খুশি হয়েছিলাম সকালে, সেটা আর বললাম না। হাসি

ডিসেম্বর ৯, ২০১০


মন্তব্য

রু (অতিথি)  এর ছবি

নীড়পাতায় দুইটা লেখা। তাও আবার পরপর!! কৌস্তুভ এসে ধরবে কিন্তু।
লেখা ভালো লেগেছে।

পাগল মন এর ছবি

এটা আসলে অনেক আগের লেখা, তারিখ-ই তো বলে দিচ্ছে সব। আমি গতকাল এটা এডিট করেছিলাম। তারপরেই আজ দেখি এটা নীড়পাতায়। এখন সরিয়ে দিয়েছি।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

------------------------------------------
হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস
তবুও তো ভাই কারোরই নাই, একটুখানি হুঁশ।

পাগল মন এর ছবি

লেখাটা নীড়পাতায় আসলো ক্যামনে? অ্যাঁ
@মডু, কীভাবে এটা সরাতে পারবো একটু বলবেন? অথবা সরিয়ে আমার ব্লগে দিয়ে দিন প্লীজ।

------------------------------------------
হায়রে মানুষ, রঙিন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস
তবুও তো ভাই কারোরই নাই, একটুখানি হুঁশ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।