“দেখতে দেখতে উইন্টার চলে গেলো!” কথাটা বলা মাত্র বুঝতে পারলাম “দেখতে দেখতে” বলায় আশেপাশের মানুষজন যত না ক্ষিপ্ত তারচেয়েও বেশি ক্ষিপ্ত আমি নিজে। কিসের দেখতে দেখতে! এই উইন্টারের শেষ কয়েক সপ্তাহেই যেই পরিমাণ ভোগান্তি গেল গত নয় বছরেও তা হয়নি। মার্চ মাস তো উইন্টারই কিসের আবার স্প্রিং! আজকে তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রীতে নেমে আসায় রীতিমত জেদ করেই রূপসা চপ্পল পায়ে দিয়ে হনহন করে বাসা থেকে বের হয়ে গিয়েছি বলেই হয়তো “দেখতে দেখতে” বলার সাহসটা হয়েছে।আজকে বাইরে এমন ঝকঝকে রোদ দেখে বিশ্বাসই হয়নি যে ৫/৬ দিন আগেও স্নো স্টর্ম-তুমুল বৃষ্টি-দমকা বাতাস মিলে কাদা প্যাঁচপ্যাঁচ অবস্থা গেছে। এইতো সেদিনই উইন্টারলুডে ঘুরে এলাম গায়ে পিনের খোঁচা লাগার মত মেজাজ খারাপ করা ঠান্ডার মধ্যে। এইতো মানে ফেব্রুয়ারী আর কি। সেমিস্টার শেষ হওয়ার সময় যত ঘনিয়ে আসছে, এত এত টার্ম পেপার, ল্যাব রিপোর্ট জমা দেয়ার তারিখ সামনে এগিয়ে আসছে, সময়ের ব্যাপারে ধারনা ততই কমে যাচ্ছে। ইচ্ছা ছিল উইন্টারলুডের কয়েকটা ছবি আপলোড করে পোস্ট করবো কিন্তু যেইনা বিপদ যাচ্ছে একের পর এক, ক্যামেরা থেকেও ছবি ট্র্যান্সফার করা হয়নি। স্কুল-পরীক্ষা-থানা-পুলিশ-উকিল-আদালত আর এক একগাদা জরিমানা এইসব নিয়ে হিশশিম খেয়ে খেতেই অবস্থা কেরোসিন। তবে সে কথা না হয় আরেকদিন আজকে শুধু উইন্টারলুড নাহলে আর হবেই না!
প্রতি বছর ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি সময়ে কানাডার ন্যাশনাল ক্যাপিটাল কমিশন অটোয়া ও গ্যাটিনো জ়ুড়ে উইন্টার ফেস্টিভালের আয়োজন করে যা মূলত উইন্টারলুড নামে পরিচিত। এই ভয়াবহ হতাশ করা শীতের মাঝে এমনিতেই ভয়াবহ হতাশ মানুষগুলোর জীবনে একটু আনন্দ, একটু পরিবর্তন আনতেই এই উদ্যোগ।উইন্টারলুডের বিশেষ আকর্ষণ গুলোর মধ্যে স্কেটিং, কন্সার্ট ও আইস স্কাল্পচার বানানোর প্রতিযোগিতা অন্যতম। রিডো কানাল ও রিড কানালের আশপাশ জুড়েই সাধারনত উইন্টারলুডের আয়োজন করা হয়। সম্ভবত ২০০৭ সালে রিডো কানালকে ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে নিবন্ধন করা হয়েছে।বলে রাখি রিডো কানাল নর্থ আমেরিকার সবচেয়ে পুরনো ‘কন্টিনিউয়াসলি অপারেটেড’ কানাল সিস্টেম এবং উইন্টারে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্কেটিং রিঙ্কে পরিণত হয়। প্রতিবছর এই স্কেটিং রিঙ্কে কম করে হলেও ১০/১২ বার আছড়ে পড়ি তাও লজ্জা হয়না পরেরবার ফেরৎ গিয়ে আবার একই কান্ড… আর ঠিক তখনি পাশ দিয়ে ৫/৬ বছরের ছোট ছোট একদল বাঘের বাচ্চা খিলখিল করে হাসতে হাসতে স্কেটিং করে চলে যায়।
কন্সার্ট, স্কেটিং সবকিছু ছাপিয়ে আমার কাছে উইন্টারলুডের মূল আকর্ষণ বরাবরই আইস স্কাল্পচার (বরফ ভাস্কর্য বললে ভুল হবে কিনা বুঝতে পারছিনা)। প্রতিবছর কম করে হলেও ৪ বার উইন্টারলুডের আইস স্কাল্পচার দেখতে যাওয়া হয়। দিনের আলোয় স্কাল্পচার গুলো দেখতে একরকম সুন্দর রাতের অন্ধকারে লাল নীল বাতির চমকের মধ্যে একেবারেই অন্যরকম সুন্দর। আমার সবসময়ই রাতের আইস স্কাল্পচার বেশি ভালো লাগে। বরফের ওপর খোদাই করে কিভাবে এমন অদ্ভুত সুন্দর সব স্কাল্পচার তৈরী করা সম্ভব ভাবতেই অবাক লাগে। প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন শিল্পীর বানানো আইস স্কাল্পচারের মেলা বসে এখানে আর প্রতিবছরই নতুন করে মুগ্ধ হই। এত বিস্তারিত এত নিখুঁত, হাজার খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলেও দেখা শেষ হয়না।
এবছর আইস স্কাল্পচার প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছে জাপানের হিরোয়াকি কিমুরা ও মাসাকি তাকাহাসি’র বানানো “কিমোনো”
দ্বিতীয় হয়েছে ফ্র্যান্সের স্যামুয়্যেল গিরওল্ট ও পোল্যান্ডের মিশাল মিজুলা’র তৈরী “হিউম্যান ইলিউশান”, অন্যান্য ভাস্কর্য গুলোর তুলনায় এটা আমার পছন্দ হয়নি। এর চেয়েও অনেক অনেক সুন্দর স্কাল্পচার ছিলো।
তৃতীয় হয়েছে কানাডার আরমান্ডো বেইসাস ও রস বেইসাসের “শিমেরা।
আমেরিকা’র স্ট্যানলি কলোনকো ও কৃস উ্যহারা’র “জিও-ফ্লেমস”
আমেরিকা’র গ্রেগরি ব্যুটওস্কি’র “দ্যা ক্যাচ”
কানাডা’র কেনি হেইডেন ও মাইকেল মুলি’র “নেপচুন”
কানাডা’র সুগুরু কানাবায়াশি ও কেভিন অ্যাশে’র “আই বাইট”
জাপানের জুনিচি নাকামুরা’র “প্রিন্সেস কোরাল”
ফ্র্যান্সের সেবেসচিয়ান স্যাঞ্চেসে’র “রিসারেকশান”
পছন্দের আরো কয়টা জুড়ে দিচ্ছি…
দিনে আবার একদম অন্যরকম সুন্দর…
রজার্স কৃস্টাল গার্ডেন নামে একটা আলাদা অংশ করেছে এবার। বিজ্ঞাপনের অভিনব কায়দা, কাজও হয়েছে। চারিদিকে এত এত ব্ল্যাকবেরী আর জটিল সব ফোন দেখলে মাথা তো খারাপ হবারই কথা! সাথে আছে বরফের তৈরী টিক-ট্যাক-টো!
প্রথমত প্রচন্ড শীতে চোখ খুলে তাকিয়ে থাকতেই অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছিলো, দ্বিতীয়ত ৩ মাস আগে নতুন ক্যামেরাটা কিনলেও মূলত আলস্য আর কাজের চাপে ধরে দেখারও সুযোগ পাইনি। সবার জন্য আসলে সবকিছু না এই যেমন ভালো ক্যামেরা আমার জন্য না।যেদিন উইন্টারলুডে গেলাম সেদিন নানারকম কায়দা করে “আবিষ্কার” করেছি কিভাবে ফ্ল্যাশ ছাড়া ছবি তোলা যাবে। একজন জিজ্ঞেস করলো “আইএসও” কততে রাখা আছে, কোন মোড… আমতা আমতা করে বাস ধরার নাম করে কোনরকমে পালিয়ে বাঁচলাম। এই এত কথার মানে হলো ছবি গুলো কিভাবে তুলেছি আমার জানা নেই। এর চেয়ে আমার সাইবার শটই ভালো এত কায়দা করতে হয়না। যা বলছিলাম আর কি আমি ভালো কিছুর মূল্য দিতে জানিনা। যাক তাও যে ফ্ল্যাশ ছাড়া তুলতে পেরেছি আমি ওতেই খুশি। চালাক চতুর ফিউচার শপের ১৪ দিনের মাঝে এক্সচেঞ্জ/রিটার্ন পলিসিটা না থাকলে কবে ফেরৎ দিয়ে আসতাম। মনে হচ্ছে এত্ত গুলো টাকা অকারনে জলে গেলো!
মন্তব্য
মোটেও জলে যায় নাই!!!! আরও ছবি চাই... সাথে আরো লেখা!
__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...
__________________________
ঈশ্বর সরে দাঁড়াও।
উপাসনার অতিক্রান্ত লগ্নে
তোমার লাল স্বর্গের মেঘেরা
আজ শুকনো নীল...
আগে আপনি নিজে লেখা দ্যান! নাহ আসলেও পুরাপরি জলে গেলো...
দারুণ দারুণ সব ছবি! ঈর্ষায় পঞ্চমুখ!
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
শিক্ষাবিষয়ক সাইট ::: ফেসবুক
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে
কি ক্যামেরা আপনার? ছবি তো ভাল এসেছে! আমিও ভাবছি DSLR কিনব, আগে ট্যাকে টাকা থাকতে হবে। দেখা যাক। চলুক ছবি তোলা আর প্রকৃতিকে মনের ঝাড়ি। আমিও ক'দিন আগে ঝাড়লাম।
আর হ্যাঁ, আপনার মতো আমারো অভ্যাস আছে স্লিপার পড়ে রওয়ানা হওয়া। ভাগ্যিস, পা জমে যায় না, নইলে খবর হয়ে যেত!
- শরতশিশির -
আমারটা Canon Rebel T1i
মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ
উফ্... ছবিগুলো কি সুন্দররররর!!!!
--------------------------------------------------
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
ধন্যবাদ
আমার কিন্তু এই শীত ভালই লেগেছে! প্রথম শীতাভিজ্ঞতা কিনা!
ছবিগুলো দারুন হয়েছে। আরও ছবি চাই।
===অনন্ত ===
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ!
আমার শুধু ডিসেম্বার থেকে ফেব্রুয়ারীর শীতটা একদম পছন্দ না বাকি সময়টা বেশ ভালোই লাগে।
বেশি জোস সব ছবি ... বুড়াঙ্গুল
গতবার এই সময়ে আমি গিয়েছিলাম উইন্টারলুডে ... সাথে রুমমেট বালিকার যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ব্যাটে-বলে করতে পারি নাই তাই একাই গেলাম ... বিকালের দিকে গিয়েছিলাম, রাতে স্কাল্পচার এত সুন্দর লাগে জানতাম না ... টুটাফাটা সাইবারশটে অনেক ছবি নিয়েছিলাম, খোমাখাতায় আছে, তবে সেইগুলি তোমার ছবির ঠ্যাংয়ের কাছেও যায় নাই
উইন্টারলুডে গেলা, বীভারটেইল খাও নাই?
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...
কি বলেন! আপনার ছবি গুলা অনেক জোস! নাহ আসলেও DSLR আপাততএকদম ভাল্লাগেনা। টুটাফাটা সাইবার শটদের জয় হোক!
আর বীভারটেইল... আবার জিগায়!
এই জিনিসগুলা সামনা-সামনি দেখতেই বেশি সুন্দর। ছবিতে রাতেরবেলারগুলায় আলোর কেরামতি ব্যাপক লাগলো।
আরো বেশি বেশি ফটুক তোলেন। ফটোব্লগ চাই।
- মু্ক্ত বয়ান
সত্যিই তাই! সামনাসামনি দেখলে অনেক সুন্দর লাগে।
আপনার মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
বরফশিল্প দেখে একটা কথাই মনে হলোঃ মানুষ পারেও বটে !!!
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
সেটাই!!!!
সাঙ্ঘাতিক অবস্থা দেখি
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
জ্বি
কঠিন অবস্থা!
=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;
=======================
কোথাও হরিণ আজ হতেছে শিকার;
- কাত করে দেয়া ছবিসব!
আজকে সন্ধ্যাবধি হিমাঙ্কের নিচে তাপমাত্রা গায়ে মাখাতে হয়েছে। চলবে আরও কিছুদিন। দাপ্তরিকভাবে মার্চের কুড়িতে বসন্ত শুরু হওয়ার কথা থাকলেও মনে হচ্ছে না মধ্য-এপ্রিলের আগে গাত্র থেকে মোটা কাপড় নামবে!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
হেহে অনেক ধন্যবাদ! হিমাঙ্কের নিচে মানে কত? আমাদের এবার -৩০ পর্যন্ত নেমেছিলো(মাত্র)
টিভিতে দেখছিলাম.. সামনের বছরে যাওয়ার আশা রাখি, ইনশাল্লাহ।
ঘুরে যান, খুব ভালো লাগবে।
আপনার সাইবারশটে আরো ভালো ছবি তুলতেন এই ক্যামেরাতেও আপনার হাত এসে যাবে চিন্তা করেন না...ভালো লাগলো ছবিগুলো...
জ্বি আমারো সাইবারশটের ছবি গুলো ভাল্লাগে। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
অটোয়া উইন্টারলুড দেখার সৌভাগ্য হয়েছে এইবার -- ঠান্ডায় জমতে জমতে ।
ভালো লেগেছে আপনার ছবিগুলা ।
আমি ভেবেছিলাম আমি ইউ এস বাসী । এখন দেখি একই গ্রামবাসী
---
ইমতিয়াজ মির্জা ।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আরে আপনি অটোয়াতে থাকেন!
প্রথমবার উইন্টারলুড দেখলেন আপনারতো খুব ভালো লাগার কথা!
দারুণ !
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
কঠিন!!!
চোখ ট্যারা করা সব ছবি!
হিংসাইলাম ।
__________________________
হৃদয় আমার সুকান্তময়
আচরণে নাজরুলিক !
নাম বলি বোহেমিয়ান
অদ্ভুতুড়ে ভাবগতিক !
_________________________________________
ওরে! কত কথা বলে রে!
দারুণ সব ভাস্কর্য!
"Life happens while we are busy planning it"
-------------------------------------------------------------------
স্বপ্ন নয় — শান্তি নয় — ভালোবাসা নয়,
হৃদয়ের মাঝে এক বোধ জন্ম লয়
নতুন মন্তব্য করুন