অনেকেই হয়তো অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের কথা শুনে থাকবেন। পাথরযুগীয় সভ্যতার জন্য পৃথিবীজোড়া যাদের পরিচিতি আছে। নৃতত্ববিদ্যায় অস্ট্রেলিয় আদিবাসীরা তাই একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। এই আদিবাসীরা নিজেদেরকে “কুরি” বলে পরিচয় দিয়ে থাকে। এরা স্বাস্থ্যবান এবং বাদামী-কালো চামড়ার অধিকারী। গড় উচ্চতা পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চির মতন (এক দশমিক ছয় আট মিটার) হয়ে থাকে। এদের চোখের রঙ সাধারণত গাঢ় বাদামি, চুলের রঙও তাই; তবে অনেকের চুলের রঙ লালচে অথবা সাদাটে-লালচে হতেও পারে। এদের ভ্রুজোড়া মোটা, চোয়াল বড় আর চুলগুলো কোকড়া হয়ে থাকে।
নৃবিজ্ঞানীদের মতে অস্ট্রেলিয় আদিবাসীদের জাতিগতভাবে আলাদা করা বেশ দুষ্কর। কিছু নৃবিজ্ঞানীরা এদেরকে ‘অস্ট্রালয়িড জাতি’ বলে থাকেন। এদের কিছু কিছু বৈশিষ্ট্যের সাথে এশিয়ান এবং পলিনেশিয়ানদের মিল পাওয়া গেছে। ধারণা করা হয় যে পঞ্চাশ হাজার বছর আগে এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় এলাকা থেকে অস্ট্রেলিয়ায় এসে এসব আদিবাসীরা বসতি স্থাপন করে।
ঐতিহ্যগতভাবে অস্ট্রেলিয় আদিবাসীরা শিকারী। তাদের প্রয়োজনীয় খাবার তারা শিকারের মাধ্যমে সংগ্রহ করতো নতুবা অন্য কোনও উৎস থেকে আহরণ করতো। চাষাবাদে এদের কোনই অভিজ্ঞতা ছিলনা। পশু শিকারের কাজে এরা নানারকম অস্ত্র ব্যবহার করত যাদের মধ্যে বর্শা এবং বুমেরাং-এর নাম উল্লেখযোগ্য। গৃহপালিত পশু হিসেবে এদেরকে শুধুমাত্র ‘ডিংগো’ পালন করতে দেখা যায়। ‘ডিংগো’ হচ্ছে বিশেষ প্রজাতির কুকুর যা শুধুমাত্র অস্ট্রেলিয়াতেই পাওয়া যায়। অস্ট্রেলিয় আদিবাসীদের মধ্যে প্রায় পাঁচশত বিভিন্ন উপজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে। এদের প্রত্যেকের ভাষায় ভিন্নতা আছে। এসব আদিবাসীরা শুধুমাত্র বিভিন্ন ধরনের অলংকার পরিধান করে থাকত। তবে এসব অলংকার তৈরিতে তারা কোন ধরনের ধাতু ব্যবহার করতো সেই উত্তর আজো মেলেনি নৃবিজ্ঞানীদের কাছে। কিছু কিছু উপজাতি শীত নিবারনের জন্য ক্যাঙ্গারুর চামড়া ব্যবহার করত। অস্ট্রেলিয় আদিবাসীদের বিবাহপ্রথা, সামাজিকপ্রথা, ধর্মানুভূতি এবং ধর্মীয় আচার-আচরণ -এগুলো বেশ উন্নতমানের ছিল।
১৭৮৮ সালে ইউরোপিয়ানরা এসে অস্ট্রেলিয়ায় বসতি স্থাপন করতে শুরু করে। সে সময় থেকে শুরু করে ১৯০০ সাল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয় আদিবাসীদের সংখ্যা ৫০০,০০০ থেকে আশঙ্কাজনকভাবে কমে গিয়ে মাত্র ৫০,০০০ -এ এসে দাঁড়ায়। যার পেছনে প্রধানভাবে দায়ী করা হয় ইউরোপ থেকে নিয়ে আসা নানান অসুখ-বিসুখকে। এসব অসুখ প্রতিরোধের কোনও ব্যবস্থাই আদিবাসীদের কাছে ছিলনা। এছাড়াও ইউরোপিয়ানরা অনেক আদিবাসীদের হত্যা করে যেটিকে এদের সংখ্যা কমে যাবার আরেকটি কারণ হিসেবে দায়ী করা যায়। এখনো অনেক আদিবাসী তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় তাদের ঐতিহ্য বজায় রেখে চলার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তবে বেশিরভাগ আদিবাসীরাই শহুরে এলাকায় এসে বসত গড়েছে, অথবা কৃষিকাজে মনোযোগী হয়েছে।
অনেক বছর ধরে অস্ট্রেলিয় সরকার আদিবাসীদের অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। ১৯৩০ সালে আদিবাসীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে সকল পর্যায়ে তাদের সমঅধিকারের দাবিতে। প্রায় দশ বছর পর আদিবাসীরা অনেক ক্ষেত্রেই তাদের সমঅধিকার অর্জন করতে সমর্থ হয়। ১৯৬৭ সালে আদিবাসীরা তাদের ভোটাধিকার অর্জন করে। এর আগে অস্ট্রেলিয়ার কোনও নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার ছিলনা। অস্ট্রেলিয়ার অনেক এলাকায় ১৯৬৭ সাল থেকে শুরু করে আজো আদিবাসীরা সরকারের কাছে তাদের পৈত্রিক জায়গাজমি ফিরিয়ে দেবার আবেদন করে আসছে। কিছু কিছু জায়গাজমি তাদেরকে ফেরত দেওয়া হলেও অধিকাংশ জমিই সরকারের দখলে রয়ে গেছে। যেগুলোর মালিক চার লক্ষ দশ হাজারের মতন অস্ট্রেলিয় আদিবাসীরা।
তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট
মন্তব্য
নৃতত্ত্ববিদ্যায় আমাদেরকে বলা হয় প্রোটো-অস্ট্রালয়েড । মহা অভিবাসনের ইতিহাস অনুসারে, মানুষের পূর্বপুরুষদের যেই ধারাটি অস্ট্রেলিয়ায় পা রেখেছিল তাদের ঠিক আগের দলটি হল প্রোটো অস্ট্রালয়েড ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
এই তথ্যটা জানা ছিলনা কদু ভাই। লেখাটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
----------------------------------------
--------------------------------------------------------
তবে গ্রেট মাইগ্রেশনের টাইম নিয়ে একটু বিস্তারিত আলাপ পারলে, ভালো হইতো।
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
এসব নিয়ে তথ্য খুঁজতেছি, দেখি আগামীর লেখায় পারলে দিয়ে দেব।
তোমাকে ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
-----------------------------------
--------------------------------------------------------
শিক্ষণীয় পোস্ট।
ভূঁতের বাচ্চা কি কবিতা লেখা ছেড়ে দিল নাকি?
ছড়া-কবিতা-গল্প লেখার জন্য তো অন্যান্য সম্মানিত জনপ্রিয় সচলরা আছেন তাই ওসব দিকে গেলে ধরা খাওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর। তবে কবিতা লেখার জুইত পাইতেসিনা এটাও আরেকটা কারণ, সঠিক পরিমাণে জুইত না পাইলে কবিতা লেখা বেসম্ভব আরকি !
-----------------------------------
--------------------------------------------------------
আপনি তো কোন প্রতিযোগিতায় অংশ নেননি যে ধরা খাবেন। সম্মানিত সচলরা তাঁদের মতো করে লিখবেন, আপনিও লিখবেন আপনার মতো করে। তাই এত কথা বাদ দিয়ে তাড়াতাড়ি ছড়া-কবিতা-গল্প লেখায় হাত দেন। পরের পোস্টের জন্য যেন আবার তিন মাস অপেক্ষা না করতে হয়।
আরে না কিসের প্রতিযোগিতা !!!
এই শব্দটা শুনলেই তো আমার একটা করে হার্টবিট মিস হয়ে গেল মনে হয় !
---------------------------------
--------------------------------------------------------
তাহলে এবার ছড়া-গল্প-কবিতা লেখায় হাত দেন তো!
ভূঁতদের আবার হার্ট থাকে নাকি যে হার্টবিট মিস করবে?
থাকে থাকে ! এমন বে-রহম কথা বলতে নাই বিডিআর ভাই !
----------------------------------
--------------------------------------------------------
মূল বইয়ের নাম মনে নাই, অনুবাদের বইটার নাম "আমারে কবর দিও হাঁটুভাঙার বাঁকে" এই বইটার কথা মনে হয়া গেলো। আমেরিকার আদিবাসীদের ইতিহাস... খুব কষ্টকর...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
মূল বই এর নাম হলো "Burry My Heart at Wounded knee".
ধন্যবাদ আপুনি। যোগাড় করতে পারলে বইটা অবশ্যই পড়ব।
-----------------------------------
--------------------------------------------------------
দারুণ একটা জিনিস শুরু করলেন
কয়েকবার মুমুকে বলেছিলাম অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের সংস্কৃতি নিয়ে ছবিসহ কিছু লিখতে
এইবার আপনাকে পাওয়া গেলো অস্ট্রোলয়েড
শুরু করেন দেন
মুমুর তো কোনও কথাই মনে থাকেনা। সচলের সবাই মিলে গনপিটুনি দিলে কাজ হইতে পারে। এদের নিয়ে আরো লেখার ইচ্ছে আছে।
---------------------------
--------------------------------------------------------
হা হা হা আসলেই, লীলেন ভাই আমাকে অনেকবার বলসিল লেখার জন্য, আলসেমি করে লেখা হয়নি।
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
ভাবতেসি যে তোমার জরিমানা হিসেবে কি ধার্য্য করা যায় ? নতুন একটা ছড়া পেলে মন্দ হয়না !
---------------------------
--------------------------------------------------------
খুব ভালো পোস্ট টুত সাথে কিছু ছবি থাকলে আরো ভাল হত। এবোরিজিনালদের নিয়ে আরো লেখা লিখ।
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
কি যে ছবি দিবো ঠিক করতে পারছিলাম না তাই আর দেয়া হয়নি। আদিবাসীদের শিল্পকলা নিয়ে আমার আগ্রহ আছে। গতকাল কদু ভাইও বলছিল ওদের চিত্রকর্ম নিয়ে লিখতে।
-----------------------
--------------------------------------------------------
আদিবাসীদের নিয়ে যে কোন লেখাই বেদনাদায়ক। Burry My Heart at Wounded Knee পড়ার আগে আমার ধারনাই ছিল না সভ্যতার নামে উন্নত দেশের মানুষগুলো কী বর্বর আচরন করেছে আমেরিকার আদিবাসীদের সাথে। সভ্য ইউরোপীয়ানরা রেড ইন্ডিয়ান আদিবাসীদের দেশ দখল করে ঘোষনা দিয়েছিল, তারা নতুন 'দেশ' আবিষ্কার করেছে, নতুন 'জাতি' নয়। কারন সেই দেশের অধিবাসিরা জাতি হিসেবে ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না। আবিষ্কার করার এক শতকের মধ্যে আদিবাসীদের সংখ্যা কোটি থেকে হাজারে নামিয়ে এনেছিল। আদিবাসি মানুষেরা গরুর চেয়েও অধম ছিল তাদের কাছে। কারন সভ্য ইউরোপ নরখাদক নয়। তাই দিন দিন তাদের সংখ্যা নিশ্চিহ্ন করেছে।
মনে পড়ে যায় আধুনিক সভ্যতা ইনকা ধ্বংস করেছে, অ্যাজটেক ধ্বংস করেছে, ক্যারিব-আরাওয়াক জনগোষ্ঠিকে নিশ্চিহ্ন করেছে। এই শতকেও দেখছি পরমানু অস্ত্র প্রহসনে ইরাকের মতো একটি দেশের উপর ধ্বংসের গজব চালিয়ে গেছে জাতিসংঘকে কাঁচকলা দেখিয়ে। মজার ব্যাপার হলো সবগুলো ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে স্বঘোষিত মানবতার অজুহাত দেখিয়ে।
অষ্ট্রেলীয় আদিবাসীদের ধ্বংসলীলা নিয়ে তথ্যবহুল কোন বই আছে কী?
এদের নিয়ে তথ্যবহুল বইয়ের অপ্রতুলতা স্বীকার করতেই হবে। অথবা বই বের হলেও সেগুলো পর্দার আড়ালে থেকে যায়। আদিবাসীদের নিয়ে তেমন গবেষণাও হয়না বোধকরি, যা নিঃসন্দেহে দুঃখজনক। আপনার মন্তব্যটা একদম হৃদয় ছুঁয়ে গেল।
--------------------------------------
--------------------------------------------------------
(তানিয়া কেমন আছেন?)
ওদের সাথে প্রতিদিনই কয়েকবার করে দেখা হয়। মাঝেমধ্যে হাঁটার পথে বলে ওঠে, 'হাই মাইট'! মাইট মানে বন্ধু।
তখন সে আকন্ঠ পান করে আছে।
'ক্যান য়্যু গিভ মি টু ডলারস, আই নিড ই' ফর বাস ফেয়া ট্য গোয় হোয়েম '
পকেটে কি আর আজকাল টাকাপয়সা থাকে? শুধু ক্রেডিট আর ডেবিট কার্ড। 'সরি আই ডোয়েন্ট হ্যভ এনি ...'
'অর রাইট, নো ওয়ারিস, চিয়ার্স'
বলে হনহন করে হাঁটা শুরু করে। একেবারে আমাদের দেশের কৃষক-শ্রমিকের পোড়খাওয়া মুখের মতন।
বাস ভাড়ার কথা বলে ভিক্ষে করা ডলারগুলো নিয়ে আবার পাবে গিয়ে মদ গিলে আসে এরা। এদের মধ্যে কেউ কেউ আবার খাবার কেনার জন্য ভিক্ষে করে বেড়ায় ট্রেনে অথবা ব্যস্ত রাস্তায়। নিজভূমে পরবাসীর মতন অবস্থা আরকি এদের ... দেখলে মাঝেসাঝে খুবই কষ্ট লাগে তাই।
--------------------------------
--------------------------------------------------------
এই তো চলছে আরকি ...... ধন্যবাদ মাহফুজ ।ভালো থাকুন
জটিলটুং !!!
( আপনে যে ভুতের বাচ্চা, জানতামনা ;] )
ওরে বাবা ! কোন ভাষার শব্দ এইটা ?
-------------------------
--------------------------------------------------------
আসোলেই
ছবি না দিলে ক্যামনে কি...
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
এই দিন দিন না আরো দিন আছে ... আজকে না দেখাইলেও তাই সমস্যা নাই আপুনি আগামীতে অবশ্যই দেখাবো !
-------------------------------
--------------------------------------------------------
হুমমমম!
ভূতের ছাও, দেখি, জ্ঞানগর্ভ নিবন্ধ লেখায় যথেষ্ট দক্ষ!
আচ্ছা, ভূত-সমাজে (বা সাম্রাজ্যে) আদিবাসী বলে কিছু আছে?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
যৌনদুর্বলতায় ভুগছি দীর্ঘকাল। দুর্বল হয়ে পড়ি রূপময়ী নারী দেখলেই...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
ওরে বাবা ! গরীবের লেখায় সন্ন্যাসীদার পদধূলি ...
ঠিক ধরেছেন আমাদের সমাজে আসলে সবাই আদিবাসীই।
---------------------
--------------------------------------------------------
তথ্য বহুল পোষ্ট ভূত ভাই
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
কেমন আছো নিবিড় ?
পড়েছ জেনে খুশি হলাম।
---------------------------
--------------------------------------------------------
নতুন মন্তব্য করুন