(প্রকৃত কমিউনিস্ট কে? প্রকৃত কমিউনিস্ট হচ্ছেন সেই জন, যিনি শত্রুকে ধ্বংস করেন, আর নিজেকে রক্ষা করেন: মাওসেতুং)
নব্বইয়ের ছাত্র-গণআন্দোলনের উত্তাল দিনগুলোতে রংপুর মেডিকেল কলেজের সিনিয়র ছাত্র শাহীন ভাই (শাহীন রহমান) ছিলেন আমাদের হিরো। তিনি তখন সর্বহারা পার্টির একটি গ্রুপের ছাত্রকর্মী। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে প্রায়ই হাতবোমা ব্যবহার হতো। এই বোমা বানাতে গিয়েই শাহীন ভাইয়ের বাম হাতের কব্জি উড়ে যায়।
দাঁড়ি-গোঁফে সুদর্শন এক হাতী শাহীন ভাই ঢাকায় বেড়াতে এলে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের পুঁচকে ছাত্রকর্মীরা ঘিরে ধরতাম তাকে। মধুর কেন্টিনে কী টিএসসিতে তাকে ঘিরে চলতো জমাট আড্ডা। প্রাণ প্রাচুর্যে ভরপুর শাহীন ভাইয়ের গল্পের ঝুলিও যেনো আর হালকা হয় না।
আর 'ঘোড়া দেখলেই খোঁড়া রোগের' মতো শাহীন ভাইকে দেখলেই আমরা একেকজন একেক রকম রোগ নিয়ে হাজির হতাম। শাহীন ভাইও স্বভাবসুলভ ভঙ্গীতে সেসব অসুখের বিচিত্রসব চিকিৎসা দিতেন।
যেমন, কেউ হয়তো তাকে বললো, শাহীন ভাই, কয়েকদিন ধরে পেটের খুব অসুখ। চা খাওয়া কী বন্ধ করে দেবো?
তিনি একেবারে যেনো আৎকে উঠতেন, আরে বলো কী মিয়া! মোটেই চা বন্ধ করা চলবে না। ঘন ঘন চা খাও, দুদিনেই পেটের অসুখ পালানোর জায়গা পাবে না। হেঁকে উঠতেন, কই রে, কে আছিস? এখানে চট করে এক কাপ চা!...
আবার আমি হয়তো বললাম, শাহীন ভাই, কয়েকদিন ধরে খুব কাশি হচ্ছে। সিগারেট খাওয়া কী বন্ধ করে দেবো?
তিনি একেবারে হা-হা করে প্রায় তেড়ে উঠতেন, উঁহু, মোটেই সিগারেট বন্ধ করবে না। বরং সিগারেট খাওয়া আরো বাড়িয়ে দাও। দেখবে কাশি ভালো হয়ে গেছে। আমার মনে হয়, নিকোটিন ডাউন হওয়ার কারণেই কাশি হচ্ছে!
এরপর এক হাতে ম্যাচ ঠুকে তিনি একটি সস্তার সিগারেট ধরিয়ে বাড়িয়ে দিতেন আমার দিকে।
শাহীন ভাইয়ের হাতের লেখা ছিলো, যাকে বলে মুক্তাক্ষর, ঠিক তাই। মাত্র ডান হাতটিকে সম্বল করে তিনি রাত জেগে রাখতেন অনুরোধের আসর। কতোদিন এক প্যাকেট সিগারেট আর একটি ম্যাচের বিনিময়ে তাকে দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছি শত শত পোস্টার। পরিচিত, স্বল্প পরিচিত, এমন কী অপরিচিতদেরও অনুরোধ রাখতেন তিনি।
তাকে দেখেছি কতোদিন, কী ভীষণ কসরত করে কাগজ বা কাপড়টিকে স্থির রেখে পোস্টার বা ব্যানার লিখতে!
তখনই জানতে পারি, পোস্টার লেখার কলা-কৌশল। শাহীন ভাই পোস্টার লেখার জন্য আইসক্রিমের কাঠির এক কোনা তেড়ছা করে কেটে কলম বানিয়ে নিতেন। তারপর দেশি রঙের শিশিতে সেই কাঠি ডুবিয়ে লিখতেন পোস্টার। আঁকতেন লিটিল ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদ। আর মোটা হরফের জন্য তিনি ব্যবহার করতেন ম্যাচের খোল!
*
সেই শাহীন ভাই '৯০ এর আন্দোলনের পর গোপন সর্বহারা পার্টির আত্নকলহ আর খুনোখুনি দেখে পার্টি ছাড়েন। ডাক্তারী পাশ করেও তিনি ডাক্তারীতে যান না। এই দল সেই দলের রাজনীতির অলিগলি বুঝে তিনি যোগ দেন সিপিবির সার্বক্ষণিক কর্মী হিসেবে। প্রেম করে বিয়ে করেন চারুকলার ছাত্রী বিনু আপাকে। পরে তিনি সিপিবির মুখপত্র সাপ্তাহিক একতা প্রকাশের দায়িত্বও পালন করেন।
ততদিনে আমি পুরো দস্তুর পেশাদার সাংবাদিক। সিপিবি কী বামফ্রন্টের জনসভা বা সংবাদ সম্মেলনের তথ্য সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে শাহীন ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হতো। তার কাছে সব সময়ই পেতাম আলাদা কদর।
তিনি এক কোনে আমাকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসা করতেন ব্যক্তিগত খবরাখবর। জেনে নিতেন সামান্য বেতনে সাংবাদিক হওয়ার জন্য আমার 'স্ট্রাগল ইন সায়েন্সের' কঠিন পাঠ! জোর করে পকেটে ঢুকিয়ে দিতেন দু-একটি একশ টাকার নোট। আহ! আমাদের শাহীন ভাই!
এই ভাবে হঠৎ হঠাৎ শাহীন ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। ব্যস্ততার সুযোগে তিনি ক্রমেই দূরাগত হতে থাকেন। মাঝে মাঝে তার সঙ্গে দেখা হলে আর আগের মতো আমাদের আড্ডা হয় না।
গত বছর শুনতে পাই, বিনু আপা কী একটি কঠিন অসুখে মারা গেছেন!
আমার মনে পড়ে, কপোত-কপোতির হাসিমাখা মুখ। শাহীন ভাই-বিনু আপাকে কতোদিন দেখেছি চারুকলার উল্টো দিকে মোল্লার চায়ের দোকানে ভর দুপুরে গল্পে মেতে উঠতে।
কালো মতোন মায়াময় মুখের বিনু আপার কাঁধে সব সময় ঝুলতো একটি শান্তিনিকেতনী ঝোলা। আমাকে দেখলেই দুষ্টুমী করে বলতেন, এই বিপ্লব, বলো তো বিপ্লব কতদূর?
আমিও চটপট জবাব দিতাম, এই তো আপা, বিপ্লব আসন্ন প্রায়! এই মাত্র খবর পেলাম, বিপ্লব এখন তেজগাঁ রেল ক্রসিং পার হয়েছে। কমলাপুর রেল স্টেশনে বিপ্লব এসে পৌঁছালো বলে! হা হা হা!...
গত বছর ধানমণ্ডি রুটের বাসে শাহীন ভাইয়ের সঙ্গে হঠাৎ দেখা। তার পাশের সিট ফাঁকা পেয়ে আমি বসে পড়ি। তিনি নিজেই থেকেই বলে ওঠেন, বিনুর খবর শুনেছো তো? তার গলা ভেঙে আসতে চায়। আমি হরবর করে অনেক কথা বলতে গিয়ে কিছুই বলতে পারি না। একহাতী শাহীন ভাইয়ের ডান হাতটি ধরে চুপ করে থাকি। পাথর সময় ভেঙে বাস চলে তার নিজস্ব গন্তব্যে।...
*
আজ বিকেলে লালমাটিয়ার একটি বেসরকারি অফিসের সামনে আবার শাহীন ভাইয়ের সঙ্গে দেখা। হঠাৎ করেই যেনো বেশ খানিকটা বুড়িয়ে গেছেন তিনি। দাঁড়িতে ছোপ ছোপ সাদা রং। রোদে পোড়া মুখের এখানে সেখানে ভাঁজ পড়েছে।
কুশলাদী বিনিময়ের পর তার কথায় হতাশা ছড়ায়, বিপ্লব, জানো তো, গত এক বছর ধরে এই অফিসে কাজ করছি। কিন্তু আর ভালো লাগছে না। ভাবছি, আবার পার্টির কাজে হাত দেবো। আবার 'একতা'টার হাল ধরবো।
তিনি বলে চলেন, অথচ দেখো, আমাদের কতো কী করার কথা ছিলো! কিন্তু তা আর হলো কই? আমরা তো কিছুই করতে পারলাম না। দাউদ ভাইও (বর্ষিয়ান কমিউনিস্ট তাত্ত্বিক দাউদ হোসেন) কিছু করতে পারলেন না। উমর ভাই (বদরুদ্দীন উমর) একদিকে, আর আনু ভাই (আনু মুহাম্মাদ) আরেক দিকে। তুমিই বলো, কোনো মানে হয়, এই সবের? পাশের নেপালের কমিউনিস্ট পার্টির কাছ থেকেও আমরা কিছু শিখতে পারলাম না!
*
আমি তাকে বলতে পারিনি, এই সব ফসিলাইজড বামনেতা আর তাদের পার্টির ওপর, আমার কোনো আস্থা নেই, শ্রদ্ধাও নেই। আমার সব শ্রদ্ধা শাহীন ভাই, আপনার আত্নত্যাগের ওপর, আপনার লাল টুকটুকে স্বপ্নের ওপর। কমরেড, লাল সালাম! ...
---
নেপালের মাওবাদী কমিউনিস্ট নেতা বাবুরাম ভট্টরাই এর সাক্ষাৎকার : জনযুদ্ধের লক্ষ্যই ছিলো রাষ্ট্রের পুনর্গঠন।
বলতে ভুলে গেছি, আপনার বেশিরভাগ লেখাই ছুঁয়ে যায়। এটাও ছুঁয়েছে...
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
সবাই অনেক ধন্যবাদ।
দীর্ঘ তাত্ত্বিক মন্তব্য করার জন্য, দাউদ হোসেনের নামটির সংশোধনী দেওয়ার জন্য আপনাকে আলাদা করে ধন্যবাদ জানাচ্ছি@ ফারুক ওয়াসিফ।
তবে আপনার বোধহয় একটু বোঝার ভুল হয়েছে।
আমি কিন্তু বদরুদ্দীন উমর বা আনু মুহাম্মদের নাম ধরে শ্রদ্ধাহীনতা বা আস্থাহীনতার কথা বলিনি। বরাবরই আমি তাদের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ, লেখালেখি এবং গণআন্দোলন গড়ে তোলার উদ্যোগকে আন্তরিকভাবে শ্রদ্ধা করি।
আসলে অল্পকথায় আমি বলতে চেয়েছি, বর্তমান কমিউনিস্ট পার্টিসমূহ ও বাম নেতৃত্বর বেহাল অবস্থার কথা। আমি জানি না, তারা দেশ বা বিপ্লব উদ্ধারের জন্য কী কী মহৎ কর্ম করে চলেছেন!
তবে এই সব ফসিলাইজড বামদের আমি কিন্তু শেষ পর্যন্ত মিল্লাত বামই বলবো; এরা এমন কী টাইগার বামও হতে পারেন নি!
শাহীন ভাইকে আমি চিনি 'শাহিনুর রহমান' নয়, 'শাহীন রহমান' হিসেবে। বিশেষভাবে শ্রদ্ধেয় তিনি। তাঁর রংপুরপর্ব একদমই অজানা ছিল, প্রেসক্রিপশন দেয়ার ধরনটাও।
তাঁর জীবনের একটা পার্ট (স্টেপস টুওয়ার্ডস ডেভেলপমেন্ট) কি হাইড করা হলো?
................................................................
আমার সমস্ত কৃতকর্মের জন্য দায়ী আমি বটে
তবে সহযোগিতায় ছিল মেঘ : আলতাফ হোসেন
... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী
আপনাদেরও ধন্যবাদ।
আপনি ঠিকই বলেছেন @ মুজিব মেহদী।
আসলে ওনার ভালো নামটি লেখার পর আমারও নাম নিয়ে কিছুটা সংশয় ছিলো। আপনি বলার পর এই রাতে '৯০ এর ছাত্র নেতা আহাদ আহমেদের কাছ থেকে তার সঠিক নামটি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছি।
এসটিডির নাম কিন্তু সচেতন বা অবচেতনভাবে লুকানো হয়নি। তাৎক্ষণিকভাবে লিখতে গিয়ে আমার মনে হয়েছে --লালমাটিয়ার একটি বেসরকারি অফিস-- এ কথাটুকুই বলাই যথেষ্ট। আর এই অফিসে তার কাজ করার কথা লেখায় উল্লেখ আছে।
- একেকজন শাহীন ভাইয়ের কাহিনীগুলো প্রায় একই রকমের হয় কেনো জানি!
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
অফটপিকঃ
জসিমুদ্দীন মণ্ডল কি বেঁচে আছেন এখনো? @বিপ্লব রহমান/ ফারুক ওয়াসিফ/সুমন চৌধুরী
----x----
...অথবা সময় ছিলো;আমারই অস্তিত্ব ছিলোনা
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
জসিমউদ্দীন মণ্ডল বেঁচে আছেন এখনো। ত্যাগী নেতা। কমিউনিস্ট আদর্শের প্রতি অবিচল।
কিন্তু হতাশ হয়েছি তার বক্তব্য পড়ে। কিছুদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের প্রকাশনা প্রমিথিউস-এ তার বক্তব্য পড়ে একদমই ভালো লাগেনি। মনে হয়েছে, সময়ের সাথে নিজেকে আপডেট করার যে বিষয়টা থাকে, সেটা থেকে তিনি অনেক দূরে।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
লেখার জন্য বিপ্লব ও সাল সালাম ।
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
লেখাটা ছুঁয়ে গেলো বিপ্লব ভাই। শাহীন ভাইয়ের মতোই উচ্ছ্বল ছিলেন বিনু আপা।
শাহীন ভাই মাঝখানে একতায় কি কম সময় দিয়েছিলেন? কি জানি! তবে আমি মাস ছয়েক কাজ করেছি একতায়। প্রচণ্ড চাপ নিয়ে কীভাবে কাজ করতে হয় সেটা দেখেছি শাহীন ভাইকে করতে। তার সবচেয়ে বড় গুণ (আমার মতে), তিনি কাউকেই না বলতে পারেন না। যে কেউ গিয়ে লেখা চাওয়ার বা যে কোনো ব্যাপারে সাহায্য চাইলে তিনি কাউকে ফেরাতে পারেন না। আমি অন্তত তাকে ফেরাতে দেখিনি।
একটি বিষয় আমার খুব খারাপ লাগে। এদেশে কমিউনিস্টদের সবার লক্ষ্য প্রায় একই। ছোটোখাটো কর্মকৌশলের কারণে একজনের আরেকজনের কাছে বিচ্ছিন্ন। এমনকি লক্ষ্য ও গন্তব্য পুরোপুরি অভিন্ন হওয়ার পরও ওয়ার্কাস পার্টি এবং সিপিবির একীভূত হওয়ার প্রক্রিয়া একসময় শুরু হওয়ার পর বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। বদরুদ্দীন উমর, আনু মুহাম্মদরা একা বা আলাদা থেকে কাজ করছেন। আবার সিপিবি বা ওয়ার্কাস পার্টিকেও দেখিনা, তাদেরকে সাথে নিয়ে কাজ করার উদ্যোগ নিতে।
ফ্রয়েডের ইগো প্রবলেম এখন প্রায় প্রতিটি বামপন্থীর প্রধান সম্পদ। না হলে এদেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হতে খুব বেশি সময়ের দরকার হতো না।
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
কমরেড লও লও লও সালাম ।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
মানুষ শেষপর্যন্ত কোথায় পৌঁছায় সেটাই তার সম্পর্কে শেষ কথা নয়, কিন্তু কোথায় সংগ্রামের শেষ হয় সেটা বোঝার জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ।
একজন ত্যাগী কমিউনিষ্টের যে ভাবমূর্তি আপনি দাঁড় করিয়েছেন, তিনি কিন্তু একজন সফল মানুষ। স্টেপস টুওয়ার্ডস ডেভেলপমেন্ট নামে একটি এনজিও বানিয়েছেন এবং তিনি তার শীর্ষ কর্মকর্তাদের একজন। এখন পর্যন্ত এটিই এখন পর্যন্ত তাঁর সম্পর্কে শেষ কথা। সেকারণে এনজিও না বলে 'একটি বেসরকারি অফিস' বললে মনে খটকা লাগে। আমি নিশ্চিত নই, সম্ভবত এরকম খটকা থেকেই সুমন বেলেছন,
'কিন্তু শ্রেণী সংগ্রামের ভ্যানগার্ড হিসাবে লাল পতাকাটা আছে। লাল ঝান্ডা উঁচা কইরা রাখছে এই শাহীন ভাইরাই।'
এরকম অনেক ত্যাগী কমিউনিষ্টরাই বাংলাদেশের এনজিও সৌধ গড়ে তুলেছেন, শক্তিশালী করেছেন ডানপন্থি দলগুলোর হাত, সচিব হয়েছেন, হয়েছেন কর্পোরেট সাংবাদিকতার ‘প্রফেট’। আর যারা সুবিধার সিঁড়ি বেয়ে ওঠেননি বা উঠতে পারেননি, হারিয়ে গেছেন দারিদ্র্যের গহ্বরে, তাদের ত্যাগ কে মনে রাখে?
তাই বলে শাহীন ভাইয়ের মতো মানুষের অবদানকে হালকা করে দেখা বা এখনকার মানুষটিকে হেয় করার পপাতি আমি নই। মানুষের অনেক দিক থাকে। আপনার মতো করেই আমি সেগুলোকে মানবিকভাবেই দেখতে ভালবাসি।
তবে এসব কিছুর কারণেই বা ভুয়া বামনেতাদের কারণেই বিপ্লব হচ্ছে না, সেটা মনে করি না। নেপালেও এরকম ভুয়ারা বহাল তবিয়তেই ছিলেন, তাতে প্রচণ্ডদের কাজ থেমে থাকেনি। মধ্যবিত্ত বাম অভিলাষের দৌড় বেশিদূর যায় না, কোনো দেশে যায় নাই। এদেশের বাম রাজনীতির জš§ জমিদারের পুত্র ও বিলাত ফেরতদের মাধ্যমে। তারা ছিলেন সব পাওয়া মানুষদের জগতে, দাগের এপারে। এঁদের অনেকেই দাগের ওপারে, গরিব মানুষের জগতে গিয়েছেন আবার দম ফুরালে ফিরেও এসেছেন নিজ শ্রেণীর কাছে। রাশিয়াা বা চীনের ছাতা ধরা শেষ হলে বসে পড়ে জীবন গোছাতে লেগে গেছেন। নেপালের ওরা কিন্তু দাগের ওপারে গিয়েই ঘাঁটি গেড়েছিল। তাই ওরা টাইগার বাম। তবে আরেক প্রকার বামও আছেন, তারা হলেন বিধি বাম।
বিপ্লবদা, সামনাসামনি আপনি তো আমাকে তুমিই বলেন, এখানেও বলবেন। আমার ভাল লাগবে।
আচ্ছা, কাউকে সম্মান জানাতে আমরা যে ভাষাসৈনিক, স্যালুট ইত্যাদি সামরিক অভীধা ও সম্ভাষণ করি, আমার ধারণা এটা দশক ব্যাপী সেনাযুগের ছাপ যা আমাদের ভাষায় ঢুকে পড়েছে। এই সেনাতন্ত্রের আমলে সেগুলো অন্তত প্রতিবাদস্বরূপ বাদ দেয়া যায় না! আসুন আমরা সিভিল সম্ভাষণের যুগে ফিরে যাই
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
একজন ত্যাগী কমিউনিষ্টের যে ভাবমূর্তি আপনি দাঁড় করিয়েছেন, তিনি কিন্তু একজন সফল মানুষ। স্টেপস টুওয়ার্ডস ডেভেলপমেন্ট নামে একটি এনজিও বানিয়েছেন এবং তিনি তার শীর্ষ কর্মকর্তাদের একজন। এখন পর্যন্ত এটিই এখন পর্যন্ত তাঁর সম্পর্কে শেষ কথা। সেকারণে এনজিও না বলে 'একটি বেসরকারি অফিস' বললে মনে খটকা লাগে।
শাহীন ভাই এসটিডিতে কাজ করেন, এটি প্রথমে লেখায় সেভাবে না আসলেও পরে মন্তব্যের ঘরে কৈফিয়তসহ উল্লেখ করেছি। তিনি এসটিডির শীর্ষ কর্মকর্তা বা সফল মানুষ কী না, তা আমার সত্যিই জানা নেই। লেখাতেই বলা আছে তার সঙ্গে বহুবছরের যোগসূত্রের দূরত্বের কথা।
আপনি মেধাবী লেখক, মেধাবী পাঠকও নিশ্চিয়। একটু মন দিয়ে লেখাটি আরেকবার পড়বেন প্লিজ। ...
আমি শুধু আমার শাহীন ভাইকে নিজস্ব চোখের আলোয় দেখতে চেয়েছি (এই কারণে ক্যাটাগরি বলা হয়েছে, ব্লগরব্লগর ও দিনপজ্ঞি)। আশাকরি লেখকের এই স্বাধীনতাটুকু আপনি মূল্য দেবেন।
আপনার বাদবাকী অভিমতের বিষয়ে কোনো প্রতি মন্তব্য নেই।
----
সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ বিপ্লব ভাই। আমি বুঝতে পেরেছি মনে হয়। তবে আমি এ জায়গায় আপনার মনোযোগ আকর্ষণ করতে চেয়েছি যে, শাহীন ভাই একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জায়গায় 'একটি স্বনামধন্য এনজিও'র শীর্ষ কর্মকর্তা'লিখলে আপনার পুরো লেখার স্পিরিটটা খোয়া যায়। ওইভাবে একবার পড়ে দেখেন প্লিজ।
তুমি থেকে আমার আপনি-তে প্রমোনের জন্য মোবারকবাদ।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
আমি বুঝতে পেরেছি মনে হয়। তবে আমি এ জায়গায় আপনার মনোযোগ আকর্ষণ করতে চেয়েছি যে, শাহীন ভাই একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জায়গায় 'একটি স্বনামধন্য এনজিও'র শীর্ষ কর্মকর্তা'লিখলে আপনার পুরো লেখার স্পিরিটটা খোয়া যায়।
উহুঁ। ...খুবই দুঃখিত। আমার মনে হয় না, আপনি বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। আমি বলেছি:
তিনি এসটিডির শীর্ষ কর্মকর্তা বা সফল মানুষ কী না, তা আমার সত্যিই জানা নেই। লেখাতেই বলা আছে তার সঙ্গে বহুবছরের যোগসূত্রের দূরত্বের কথা।
আর স্পিরিটটি লেখকের একান্তই থাক।
এই ব্লগে আমি এ পর্যন্ত কাউকে 'তুমি' সম্বোধন করিনি। এমন কী আমার বাল্যসখা সহ ব্লগার শামীম হককেও। কাজেই বার বার এই বিষয়টির অবতারণা এই আলোচনায় নিতান্তই অপ্রাসঙ্গীক।
অনেক ধন্যবাদ।
মন্তব্য প্রতিমন্তব্য এ মাথা আওলাইয়া গেছে । কে যে ঠিক -বিপ্লব না ফারুক ?
6 এটা কি ৬ না নয় । নদীর এপার থেকে আমি ৬ দেখছি কিন্তু ওপার থেকে ত' আরেকজন দেখছে ৯ । কে ঠিক?
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
আমি তাকে বলতে পারিনি, এই সব ফসিলাইজড বামনেতা আর তাদের পার্টির ওপর, আমার কোনো আস্থা নেই, শ্রদ্ধাও নেই। আমার সব শ্রদ্ধা শাহীন ভাই, আপনার আত্নত্যাগের ওপর, আপনার লাল টুকটুকে স্বপ্নের ওপর। কমরেড, লাল সালাম! ...
আমারো
লাল সালাম!
----
স্পর্শ
বুঝতে পেরেছি....
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
ফারুক ওয়াসিফ এর "একজন ত্যাগী কমিউনিষ্টের যে ভাবমূর্তি আপনি দাঁড় করিয়েছেন, তিনি কিন্তু একজন সফল মানুষ। স্টেপস টুওয়ার্ডস ডেভেলপমেন্ট নামে একটি এনজিও বানিয়েছেন এবং তিনি তার শীর্ষ কর্মকর্তাদের একজন। এখন পর্যন্ত এটিই এখন পর্যন্ত তাঁর সম্পর্কে শেষ কথা। " এই মন্তব্য সঠিক হিসেবেই মানছি (যেহেতু কবি মুজিব মেহদিও স্টেপস টুওয়ার্ডস ডেভেলপমেন্ট ' কথা তুলেছেন )
এবং একমত পোষন করছি ফারুকের সাথে ।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
ঠিক আছে @ নুরুজ্জামান মানিক |
বিপ্লবদা,
শাহীনুর রহমান রংপুর মেডিকেল কলেজে জাসদ ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন বলে তাঁর এক সহযোদ্ধা মারফত জানি।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
তাই? ....আমি তো জানতাম উনি সর্বহারা পার্টির (সবিপ) সঙ্গে জড়িত ছিলেন। '৯০ এর ছাত্র নেতা আহাদ আহমেদও কাল আমাকে এ কথাই নিশ্চিত করেছিলেন। ...
তবে ১৯৮৭-৮৮ তে আমি নিজেই তাকে ঢাকায় দাউদ হোসেনের কমিউনিস্ট কর্মী সংঘে সক্রিয় দেখেছি। সে - ও তো অনেক বছর আগে!...
---
সবাইকে আবারো অনেক ধন্যবাদ।
সেটা ঠিক। রংপুর থেকে ফিরে উনি বিতর্ক পত্রিকা গোষ্ঠীর সঙ্গে ছিলেন কিছুদিন। এটা বলেছেন মাহমুদুজ্জামান বাবু। ওনারা একসঙ্গেই নাকি মামলায় পড়েছিলেন ।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
হুমম।...
মন্তব্য
বরাবরের মতই চমতকার লেখা। এই রকম আরো ছাড়েন।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
আমারো নাই। শতচ্ছিন্ন টুকরাগুলির বাহারি নেতাদের কারো কাছেই সমর্পিত হইতে পারি নাই। সেই যোগ্যতা তাদের নাই।
কিন্তু শ্রেণী সংগ্রামের ভ্যানগার্ড হিসাবে লাল পতাকাটা আছে। লাল ঝান্ডা উঁচা কইরা রাখছে এই শাহীন ভাইরাই।
শাহীন ভাইকে লাল সালাম।
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
স্যালুট...
হ্যাট্স অফ।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল
লাল সালাম কমরেডস
-----------------------------------------
রাজামশাই বলে উঠলেন, 'পক্ষীরাজ যদি হবে, তা হলে ন্যাজ নেই কেন?'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
এসব মানুষগুলোর কথা শুনলে নিজের ভেতরের মানুষটাকে অনেক বেশী অপূর্ণ মনে হয় ! ধন্যবাদ বিপ্লব' দা, দূর্ধর্ষ এই লেখার জন্য ।
কমিউনিস্ট বিশ্বের পতনের পর এই ত্যাগী খাঁটি মানুষগুলি কীভাবে আমাদের রাজনীতিতে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেলেন! এঁদের বেশিরভাগই না পারলেন নিজেদের আদর্শের পতাকা উড্ডীন রাখতে, না পারলেন স্রোতে গা ভাসাতে। নিদারুণ অপচয় ছাড়া আর কী!
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
বিপ্লবদা আমারো পার্টি নাই। কিন্তু যদি আমি বলতে পারতাম ঐটা আমার পার্টি তাহলে গর্বই হতো। সেই কমিটমেন্টের গর্ব থেকেও আমি বঞ্চিত। কিন্তু আমি বিপ্লব নিয়া রোমান্টিক দুঃখবাদীতার খাতক নই। এবং এক কথায় সিপিবি থেকে আনু মুহাম্মদ পর্যন্ত খারিজ করবার নৈতিক স্পর্ধাও আমার নাই। যারা মাঠে আছে তারা কমিউনিস্ট না হোক, কোনো না কোনো ভূমিকা পালন করছেন। আনু মুহাম্মদ কমিউনিষ্ট নেতা নন আজ, কারণ তাঁর বা বিদ্যমান দলগুলোর বিবেচনা এক জায়গায় নাই। এ জন্যই আমি তাঁকে মহত করছি না। কিন্তু তিনি একটি খুবই গুরুত্বপূর্ন কেজো ভূমিকা পালন করছেন। পলিটকাল ইকোনমিতে বিশ্বব্যাংক ধারার বিরোধিতা এবং তেল-গ্যাস-বিদ্যুত-বন্দর ও কয়লা রক্ষা আন্দোলনে বিশেষত ফুলবাড়ীর বীরোচিত লড়াইয়ে। এ কথা গুলো আনু মুহাম্মদের সাফাই হিসাবে নয়, তাঁর এবং আমাদের আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নেয়ার খাতিরে। আবারো বলছি এটা কেজো ভূমিকা। শুণ্যতার মধ্যে এর দরকার আছে।
''তিনি বলে চলেন, অথচ দেখো, আমাদের কতো কী করার কথা ছিলো! কিন্তু তা আর হলো কই? আমরা তো কিছুই করতে পারলাম না। দাউদ ভাইও (বর্ষিয়ান কমিউনিস্ট তাত্ত্বিক দাউদ হায়দার) কিছু করতে পারলেন না। উমর ভাই (বদরুদ্দীন উমর) একদিকে, আর আনু ভাই (আনু মুহাম্মাদ) আরেক দিকে। তুমিই বলো, কোনো মানে হয়, এই সবের? পাশের নেপালের কমিউনিস্ট পার্টির কাছ থেকেও আমরা কিছু শিখতে পারলাম না!''
এদেশে কিছু না করতে পারার দায় কমিউনিষ্ট নামধারীদের আছে, কিন্তু তারা তো আকাশ থেকে আসেননি, তাঁরা এসেছেন আমার-আপনার শ্রেণী থেকে। সেকারণে এদেশে আপনার নামের বাস্তবায়ন না হওয়ার একটা কারণ এদেশের মধ্যশ্রেণীর গঠনের মধ্যেই পাবেন। আর আমি কোনো অবসন্ন বিপ্লবীর প্রতি করুণামিশ্রিত সহানুভূতিরও বিপক্ষে।
একারণেই আপনার ওপরের অসাধারণ হৃদয়াবেগের ভাষার পর এই কথাগুলি
যেন এক তড়িঘড়ি সমাধানের চেষ্টা। যা আপনিও জানেন, হয় না। রাতের স্বপ্ন মধুর দিনের স্বপ্ন অনেক কঠিন।
আরেকটি কথা, আপনি বোধহয় দাউদ হায়দার বলতে দাউদ হোসেনকেই বুঝিয়েছেন।
মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।