তীব্র তাপহাদের ভেতর নাগরিক কোলাহলমুক্ত হিম হিম ঠাণ্ডা একটি ঘর। এক দিকের দেয়াল জুড়ে সার সার টেলিভিশন, সব কটিতে এক সঙ্গে দেশি-বিদেশি সংবাদ প্রচার হচ্ছে। আরেক দিকে এইচপি কম্পিউটারে মুহূর্তে টাইপ হচ্ছে দারুন সব তাজা খবর। এরপর সংবাদগুলোকে ঠিকঠাক করে অবিশ্বাস্য দ্রুততায় উভ (আউট অব ভিশন),গ্রাফিক্স, অথবা ফুটেজ আর ভয়েজ দিয়ে উভ-সিংক, প্যাকেজ তৈরি করা।...
রানডাউন...ঘড়ির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে স্টেশন পলিসি নিয়ে দৌড়ঝাঁপ। একেবারে শেষ সময়ে ধরিয়ে দেয়া স্টার সাংবাদিকের ব্রেকিং-স্টোরি। ...রান, রান অ্যান্ড রান।...
মাঝে মাঝেই রিপোর্টারদের, প্রতিনিধিদের, সংবাদদাতাদের মুহূর্মুহূ টেলিফোনে ঝনঝন করে কেঁপে ওঠে পুরো নিউজ রুম। প্রধান প্রতিবেদক, বার্তা সম্পাদক, রান ডাউন ম্যান, প্রোডাকশন ম্যানেজারের ব্যস্ততা বাড়ে। সংবাদ-প্রসব বেদনায় কাতরায় টিভি স্টেশন। দারুন হট্টোগোলে মাথার শিরা-উপশিরা দপদপ করে লাফায়।
বদ্ধ জানালা দিয়ে বাইরে তাকালে আম্বর শাহ মসজিদ-মাদ্রাসার কেবলই নির্লিপ্ত চাউনি। বাইরের জগতের সঙ্গে যোগাযোগ শুধু তথ্য-স্বার্থ সংশ্লিষ্ট। এমন কী বৃদ্ধ মাতা যখন ঢুকে পড়েন সেল ফোনে, বাবু, ভাত খেয়েছো? অভ্যাস বসে, হ্যাঁ বা না বলেই মুখ ফসকে বেরিয়ে আসে সংবাদ-যন্ত্র মানুষের মুখস্ত বুলি, কোনো খবর আছে?
*
আচ্ছা, এমনও তো হয়, লেখাই যার জীবন, তিনি এক সময় লিখতে ভুলে গেলেন!
মানে, তিনি চাইছেন, তিনি কিছু লিখবেন। গভীর রাতে পিঁপড়ের মতো সার বেধে যে সব কালো হরফ শরীর বেয়ে পিলপিল করে উঠে আসে, যে সব কথামালা স্বপ্নের ভেতর ঘুনপোকার মতো কুটকুট করে কেটে চলে মাথার খুলি, তাই তিনি এক সুন্দর সকালে বিন্যাস্ত করবেন তার নিজের নিজস্ব খেরোখাতায়। কিন্তু কিছুক্ষণ খুটখাট করে তিনি অবাক হয়ে দেখলেন, নাহ, কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। সবকিছু আউট অব ভিশন, উভ-সট।
শুনতে পাওয়া যায়, কবি হেলাল হাফিজ নাকি উনসত্তরেই জীবনের শ্রেষ্ঠ কবিতাটি লিখে ফেলেছিলেন--কোনো কোনো প্রেম আছে, প্রেমিককে খুনি হতে হয়...এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়!
এরপর ৮০-৯০ দশকে কিছু খুচরো কবিতা মকশ করার কী দারুন প্রয়াস! তসলিমার প্রেমে লিখলেন, ভালবেসে নাম রেখেছি তনা, তাই কী তুমি তুলেছিলে অমন বিষের ফনা? অথবা, আমার মতোন কজনার আর হৃদয় হয়েছে নষ্ট, কজনা আর দিতে পারে, এমন হৃষ্ট-পুষ্ট কষ্ট?...লাল কষ্ট, নীল কষ্ট, পাথর চাপা ঘাসের কষ্ট, হরেক রকম কষ্ট আছে, কষ্ট নেবে? কষ্ট।...
এই কবি নাকি অনেকদিন ধরে কিছু লিখতে পারছেন না। এক সময় বলপয়েন্ট-নিউজপ্রিন্ট, পরে টাইপ রাইটার, ইলেক্ট্রনিক্স টাইপরাইটার, আর এখন কম্পিউটার। খুটখাটই সার, কিন্তু তেমন লেখা আর হলো কোথায়? অক্ষরের জগত, কথামালার জগত, ছন্দের জগত--এখন বুঝি সবই শুধু ধোঁয়া, ধোঁয়া...যাকে বলে, উভ-সিংক।...
*
সেই কোন আমলে রামকৃষ্ণবাবু বাহ্যজ্ঞান শূন্য হয়ে বলেছিলেন, এসেছিস যখন, একটা দাগ রেখে যা!
যেনো করপোরেট বিজ্ঞাপনও শেখাচ্ছে একই কথা, দাগ থেকে যদি দারুন কিছু হয়, মন্দ কী! সার্ফ এক্সেল! দাগ থেকেই দারুন কিছু!...
অর্থাৎ কী না, শেষে দাগাদাগিই সার, হে প্রিয় খেরোখাতা। ওই যে রব বাউল কালীগঙ্গার পারে গেয়েছিলেন না, সাঁইজীর গান:
কেহ বলা-কওয়া করে,
মাছ ধরতে সেই সাগরে
যেথা নদীটির হয় তিনধারা...
মাছ ধরতে গেলাম সেই সাগরে,
ওঠে শুধু শামুকের ভাড়া
আন্দাজী মোর চাঁদমারা
পারে কই হলো মোর মাছ ধরা?
অর্থাৎকী না, ব্লগরব্লগর সার, সারৎসার।।
---
ছবি: অন্তর্জাল।
মন্তব্য
দারুন লাগলো লেখাটি। টিভি সাংবাদিকতা ভালোই চলছে তাহলে...
---------------------------------
জ্ঞানীরা ভাবলেন খুব নাস্তানাবুদ করে ছাড়া গেছে...আআআহ...কি আরাম। বিশাল মাঠের একটি তৃণের সাথে লড়াই করে জিতে গেলেন।
ছোট্ট তৃণের জন্য অপরিসীম ঘৃণা।
দাগ থেকে যদি দারূণ কিছু হয়, তবে তো দাগই ভালো।
এই যে তুমি এলোমেলো অনেকগুলো চিত্রকল্পে দাগ কেটেছো আমার মনে।
তোমার বর্ণিত প্রায় সবকটা চিত্রকল্পের সঙ্গেই আমার কমবেশি জানাশোনা, ওঠাবসা।
এবার ঢাকায় কতোজনের সঙ্গেই না দেখা হলো দীর্ঘ সাড়ে ছয় বছর পর। কিন্তু কি আশ্চর্য কবি হেলাল হাফিজের সঙ্গে তো দেখা হলো না!
এমনকি তোমার সঙ্গেও না!
চারটি মাস আমার কেমন করে কেটে গেলো?
সচলায়তনে আমি তোমার একজন অনুরাগী পাঠক। তোমাকে এখানে দেখামাত্রই তোমার বাবার কথা মনে পড়ে আমার।
হাবু বেশ বড়সড়,গাবুটা তো পিচ্চি
হেরে গিয়ে হাবু বলে--উৎসাহ দিচ্ছি!
সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।
---
রিটনভাই,
আপনার মন্তব্য আমাকে আবারো লিখতে উৎসাহিত করবে। তবে সময় পাওয়া সত্যিই খুব মুশকিল।
বই মেলায় সচলের আড্ডায় যাওয়ার সত্যিই খুব ইচ্ছে ছিলো। কিন্তু ওই যে 'চাকর' কথাটির সঙ্গে একটি 'ঈ' প্রত্যয় যোগ করেই তো 'চাকরী' হয়, তাই না? অফিসের চাপে যেতে পারিনি।
আমার নকশালাইট বাবা ভালো আছেন। জীবনের শেষ দিনগুলো কাটিয়ে দিচ্ছেন শুধু বই পড়ে। ভালো মতোন দেখতে পান না। তবু তার বই পড়া চাইই।...
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
কম্প্রোমাইজরে ভাই কম্প্রোমাইজ
বাহ ! শেষ লাইনটা দারুন লাগলো।
বিপ্লব ভাই তো এখন টিভিতে। দেখি আপনার সাথে একদিন দেখা করতে যাবো, যেদিন আপনাদের অফিসে বিস্তর সুন্দরী মডেলরা আসবে। আগাম দাওয়াত নিয়ে রাখলাম, পরে কিন্তু না বলতে পারবেন না
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
সম্প্রতি ধু.গো.র সঙ্গে দেখা হয়েছে বুঝি?
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
নাহ ! আমার আইডিয়া ইউনিক। এ ব্যাপারে হিমু ভাই যৎকিঞ্চিত অবগত আছেন।
আসবো কবে বলেন ?
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
কিছুটা অফটপিক।
টিভি দেখি খুবই কম। তবে সেদিন একটা প্রোগ্রামের উপস্থাপিকার ঢং দেখে পিত্ত জ্বলতে শুরু করলো।
আপনি কি আরটিভি-তে? তাইলে, ভাই, আপনাগো তারকালাপের উপস্থাপিকা সিমিরে (নাম ভুল বললাম কি?) কইয়েন, কারণে-অকারণে ইংরেজিতে না মাততে। এইটাই হয়তো ফ্যাশান। কিন্তু মেজাজ চইড়া যায়!
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি তুষ্ট আত্মপ্রেমেই। এর সুবিধে হলো, প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ নেই
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
উভ তো হলো ....এইবার একটা প্যাকেজ ছাড়েন।
নতুন রুপে বিপ্লব রহমানের আগমনে (বিপ্লব)
---------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে
-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে
যাক, পাঁচুদা ইন! গুরু, আমার জন্যে গোটা দুয়েক সংবাদপাঠিকা বাছেন। তাঁদের আমি বড়ই ভালোবাসি।
হাঁটুপানির জলদস্যু
মাতা যখন ঢুকে পড়েন সেল ফোনে, বাবু, ভাত খেয়েছো? অভ্যাস বসে, হ্যাঁ বা না বলেই মুখ ফসকে বেরিয়ে আসে সংবাদ-যন্ত্র মানুষের মুখস্ত বুলি, কোনো খবর আছে?
একবার মুখ ফাস্কে এই ধরনের কিছু একটা বলে ফেলেছিলাম আম্মাকে, রাত্রে খাওয়া পাইনি।
আহারে
ভালো মানুষটারে বাঘে খাইলো...
খুব শক্তিশালী কলম আপনার!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
আরররররে!!!!!!!!!!!!!!!!
মিষ্টি খাওয়াইবেন না? হিমুর প্রিয়তমা টারজানা খানের সাথে পরিচয় হয়েছে?
কি মাঝি? ডরাইলা?
ম্যালা দিন পরে আপনার লেখা পাইলাম বিপ্লব ভাই
ক্যামন আছেন আপনি?
দুর্ধর্ষ ব্লগর ব্লগর... !!
---------------------------
থাকে শুধু অন্ধকার,মুখোমুখি বসিবার...
---------------------------------
বাঁইচ্যা আছি
আচ্ছা, এমনও তো হয়, লেখাই যার জীবন, তিনি এক সময় লিখতে ভুলে গেলেন!
মানে, তিনি চাইছেন, তিনি কিছু লিখবেন। গভীর রাতে পিঁপড়ের মতো সার বেধে যে সব কালো হরফ শরীর বেয়ে পিলপিল করে উঠে আসে, যে সব কথামালা স্বপ্নের ভেতর ঘুনপোকার মতো কুটকুট করে কেটে চলে মাথার খুলি, তাই তিনি এক সুন্দর সকালে বিন্যাস্ত করবেন তার নিজের নিজস্ব খেরোখাতায়। কিন্তু কিছুক্ষণ খুটখাট করে তিনি অবাক হয়ে দেখলেন, নাহ, কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। সবকিছু আউট অব ভিশন, উভ-সট।
এই নিয়ে আপনার আরেকটি লেখা প্রিয় পোস্টে যুক্ত হলো। মাঝে মাঝে প্রশংসা -ট্রশংসা করতে ইচ্ছে হয়না। শুধু পড়ে যেতে হয়। শাহীন হাসানের কবিতার মত আপনার লেখাও অনেক গুলো নিঃশ্বাস নিয়ে পড়ে গেলাম। আমি নিজে একজন চুনোপুটি লেখক । আমারো যে কি হলো...কিছু লিখতেই ভাল্লাগে না। আসলে লেখা আসেই না।আমিও মনে হয় লিখতে ক্রমশঃ ভুলে যাচ্ছি।
শুনতে পাওয়া যায়, কবি হেলাল হাফিজ নাকি উনসত্তরেই জীবনের শ্রেষ্ঠ কবিতাটি লিখে ফেলেছিলেন--কোনো কোনো প্রেম আছে, প্রেমিককে খুনি হতে হয়...এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়!
বিপ্লব'দা, আপনাকে এবং যদি অন্য কারো নজরে এই মন্তব্যটি পড়ে,তাদের সবাইকে জিজ্ঞেশ করছি, হেলাল হাফিজের সাথে যোগাযোগ কিংবা তার কোন খবর কি কেউ দয়া করে জানাতে পারেন?? খুব খুব কৌতূহল এই অসাধারণ কবিকে জানবার। অনেক ধরেই চেষ্টা করছি।
যাই হোক, আপনি যে খুব ব্যাস্ত হয়ে সচল কে ভুলে যাননি ,তা-ই অনেক। মা ফোন করলে না হয় ভুলেই কোন খবর জানতে চাইলেন...সে না হয় বুঝলাম। কিন্তু আমাদের যেন কখনো বলতে না হয়... এই বিপ্লব'দার কোন খবর আছে???? উনার লেখাতো আর পাই না...
বুঝলেন???
---------------------------------------------------------
পৃথিবীর সব সীমান্ত আমায় বিরক্ত করে। আমার বিশ্রী লাগে যে, আমি কিছুই জানিনা...
---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন
নতুন চাকুরির জন্যে শুভেচ্ছা। আপনাকে টিভিতে দেখব কবে? আরটিভিতো এখানে আসে না। হয়ত অপেক্ষা করতে হবে।
সৃষ্টিশীল মানুষ হঠাৎ করে ক্ষ্যান্ত দিলে সেটি খুব কষ্টেরই বটে। অভ্যেসের বিরুদ্ধ যে এটি আর একটি চাপ কাজ করে।
যে কোন কিছু সৃষ্টির ব্যাপারে আমি খুব স্বেচ্ছাচারী। মানে যখন মনের তাগিদ হবে তখনই করি। ফরমায়েসী কাজে আমার খুবই কষ্ট হয়। আমার ভাল লাগছে না একটি টপিক অথচ বলা হলো একটি রিপোর্ট কর এ নিয়ে - কি ভয়ঙ্কর! তাই অবাক হয়ে ভাবি সাংবাদিকতার কাজ নিশ্চয়ই খুব কষ্টের।
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।
---
কবি হেলাল হাফিজের সঙ্গে অনেকদিন যোগাযোগ নেই@ নিঝুম।
---
আপনার কথার সত্যতা আছে@ রেজওয়ান।
কিন্তু যন্ত্র-মানুষের লেখা-না লেখা ইচ্ছে নিরপেক্ষ; গণমাধ্যমে এটিই শেষ বাস্তবতা।
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
মহা ব্যস্ত তাইলে । খুব ভালো লাগল লেখাটি
-------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
নতুন মন্তব্য করুন