এক. শুরুতেই হোঁচট খেলো দেশের একমাত্র ২৪ ঘন্টার নিউজ চ্যানেল সিএসবি নিউজ। কাগজপত্র ‘জাল’ এই অভিযোগে কাল সন্ধ্যা থেকে সরকার বন্ধ করে দিয়েছে এই বেসরকারি টিভি চ্যানেলটি। খুব অল্প দিনেই এই চ্যানেলটি দর্শকদের মন জয় করেছিলো।
এখন এর সংবাদকর্মীদের সামনে এক দীর্ঘ অনিশ্চয়তা। পেশাগত ঝুঁকির মুখে পড়েছেন ঢাকার প্রায় ৪০০ সংবাদ কর্মী। ঢাকার বাইরে বেকারত্বের খড়গ নেমে আসছে আরো ৬০০ সংবাদ কর্মীর ঘাড়ে।
দুই. যে প্রক্রিয়ায় সিএসবি নিউজ তড়িঘড়ি করে বন্ধ করে দেওয়া হলো, সেটি আদৌ দরকার ছিলো কি না? সন্ধ্যায় র্যাব ( রক্ষী বাহিনী এগেইন ব্যাক?) সদস্যরাসহ সরকারি কর্তারা টিভি চ্যানেলটির উত্তরার সদর দফতরে গিয়ে এর অনুষ্ঠান সম্প্রচার বন্ধ করেন।
সিএসবি’র পরিচালক (সম্পাদকীয়) নিয়াজ মুরশেদ বারবার সরকারি কর্মকর্তাদের অনুরোধ করেছিলেন, অনুষ্ঠান বন্ধ রাখার বিষয়ে একটি ঘোষণা কিছুক্ষণ প্রচার করার পরেই টিভি চ্যানেলটির সম্প্রচার বন্ধ করে দিতে। কিন্তু কেউ তার অনুরোধে কান দেননি। কেনো?
পাঁচ - দশ মিনিটের জন্য অনুষ্ঠান বন্ধ রাখার একটি ঘোষণা সিএসবিতে প্রচার করা হলে দেশের কি এমন ক্ষতি হতো? এর কয়েক কোটি দর্শক ও বিজ্ঞাপন দাতারা যখন কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ করেই টিভি চ্যানেলটির সম্প্রচার বন্ধ দেখলেন, তখন তারা কি ধারণা করলেন বর্তমান সেনা সমর্থিত অস্বাভাবিক তত্ত্ববধায়ক সরকার সম্পর্কে?
একই ঘটনা দেখা গেছে গত বিএনপি - জামায়াত জোট সরকারের আমলে। কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হুট করে বন্ধ করে দেওয়া হয় জনপ্রিয় আরেক বেসরকারি টিভি চ্যানেল একুশে টিভি। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা মেটাতে ওই রাতেই ইটিভির যন্ত্রপাতি খুলে নিয়ে বসানো হয় বিটিভির স্টেশনে!
তিন. ২২ আগস্ট কারফিউ ভঙ্গের অভিযোগে যৌথ বাহিনী প্রায় ৩০ জন সংবাদকর্মীকে আটক ও হয়রানী করলে সে রাতে সিএসবি খুব সাহসের সঙ্গেই এই খবরটি প্রচার করে। পরদিনও তারা প্রচার করে সংবাদটি ফলোআপ। আর সে দিনই তথ্য উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, জরুরি আইন ভঙ্গের দায়ে সরকার সিএসবিকে সতর্ক করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
চার. সিএসবি’র অনুষ্ঠান প্রচার বন্ধ, এই খবরটিও এনটিএন বাংলাসহ অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল তথ্য বিবরণীর সংবাদ বিজ্ঞপ্তির বরাত দিয়ে প্রচার করছে। বোঝাই যায়, তারাও এখন সিএসবি নিয়ে সতর্ক। তাদের ওপরও সংবাদ প্রচারে চাপ আছে; টক শো বন্ধ রয়েছে প্রায় দু সপ্তাহ হয়ে গেলো। ...
দেশের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক প্রথম আলো (‘প্রথম আলো পড়তে হয়, নইলে পিছিয়ে পড়তে হয়!’) অবশ্য আরেকটু সরেস। তারা তথ্য বিবরণীর সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ছাড়াও সিএসবি’র সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটিও ছেপেছে। সেখানে নিজেদের কোনো তথ্য - পর্যাবেক্ষণই নেই। ভাবখানা এমন, এটি তো নিছকই একটি যন্ত্রের মৃত্যূ, কোনো সম্ভাবনাময় গণমাধ্যমের নয়। তাই এই নিয়ে এতো মাতামাতির কি আছে?
পাঁচ. সিএসবি’র সাংবাদিকদের প্রায় সকলেরই বয়স অনুর্দ্ধ ত্রিশ। আবার অনেক ছাত্র - ছাত্রীও পড়াশুনার পাশাপাশি এতে কাজ করছিলেন। তাই অনেক ভুলত্র“টিসহ এটি তরতর করে বেড়ে উঠছিলো। ছোট্ট চারাগাছ থেকে সিএসবি নিউজ একদিন মহিরুহে পরিনত হবে, এমনই আশা করেছিলাম আমরা পেশাদার সাংবাদিকরা। কিন্তু...
কাল সন্ধ্যায় সিএসবির রিপোর্টার, আদরের ছোট বোন উর্মি টেলিফোনে চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বললো, ভাইয়া, আমাদের টিভি চ্যানেল বন্ধ!... নিউজ রুমে সবাই কান্নাকাটি করছে।...
আমি তখন তাকে কিছুই বলতে পারিনি। ...সিনেমার ফ্রিজ শটের মতো আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে একের পর এক গণমাধ্যম বন্ধ হয়ে যাওয়ার ইতিকথা। আর অনিয়মিত বেতনে ধুঁকে ধুঁকে ‘সাংবাদিক’এর জীবন টেনে নিয়ে যাওয়া অসংখ্য সহকর্মীর ক্লান্ত -বিধ্বস্ত মুখ।।
*সিএসবি নিউজ বন্ধ হওয়ার বিস্তারিত সংবাদটি পড়ুন এখানে
মন্তব্য
বাংলাদেশের মত একটা দেশে ২৪ ঘন্টার একটা নিউজ চ্যানেল আসাটাই একটা অনেক বড় সাহসের ব্যাপার ছিলো। একটাই মাত্র। সেটাও গেলো বন্ধ হয়ে। কোন মানে হয়? একুশে টিভির সম্প্রচার নিয়ে নানা বাহানার অভিজ্ঞতার পর এই আশা কি করা যায় যে এই চ্যানেলটা আবার চালু হবে?
--তিথি
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
মিডিয়ার উপর হাত দিলে আর কিছু বাকী থাকেনা ,,, প্রথম আলো কিন্তু ইটিভির জন্য খুব লিখেছিল ,,এবার মনেহয় জলপাই-সিনড্রোমে ভুগছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
তিথি,
ওই প্রশ্ন আমারো।
জ্বি.বা,
জলপাই-সিনড্রোম তো তাদের হওয়ার কথা নয়। শুনতে পাই, ওদের নাকি জলপাইয়ের বিশাল বাগান আছে!
আপনাদের অনেক ধন্যবাদ।
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
কি আর কমু!
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
আজব যতো কাজকারবার ।
-----------------------------------
'আমি ও অনন্তকাল এইখানে পরস্পর বিস্ময়ে বিঁধে আছি'
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
ব্যাপার না। ১৫ কোটি মানুষ আমরা। মুখে মুখে ছড়িয়ে পরা তো আর থামাতে পারবে না। মানুষ শুধু মুখ বা বেতার তরঙ্গে কথা বলে না। বন্ধ করুক টিভি, চেপে ধরুক মুখ, বাঁধুক চোখ, পিছমোড়া করুক হাত। আমরা তো মানুষ। গাছের পাতায় বাতাসের ধ্বনি থেকে আমরা সঙ্গীত রচনা করতে পারলে এটুকু ভাব প্রকাশ করতে পারবো না কেন?
Quills মুভিটার কথা মনে পড়ছে খুব। মার্কেস দ্য সাদ যদি অন্তরীণ হয়েও লিখে যেতে পারে, আমরা কেন পারবো না?
মন চায় জলপাই আছড়াইয়া রোদে শুকাইয়া আচার বানাইয়া তাতে ইন্দুর মারার বিষ মাখাইয়া জামাতীগোরে খাওয়ায়...
জলপাই ও গেল...রাজাকারও গেল...
দৃশা
এবার ঢাকায় গিয়ে আমি অবাকই হয়েছিলাম সিএসবির সংবাদ প্রচার দেখে। মনে মনে ভেবেছিলাম সিএসবি একদিন বাংলাদেশের বিবিসি টুয়েন্টিফোর নিউজ সার্ভিসের মতো হবে। বাংলাদেশের মিডিয়া বিপ্লব দেখে দেশে ফেরার স্বপ্ন দেখেছিলাম আমি,হায় !! বিধিবাম..... সেই স্বপ্ন এখন অনিশ্চিত গন্তব্যে ...
মাঝে মাঝে মনে হয় ,বাংলাদেশের সাংবাদিকদের তুলনায় আমরা বোধকরি প্রবাসে ভালো আছি, এখানে কোন বাঁধা নেই,নিয়মিত টক শো করছি,সংবাদে কোন প্রকার নাক গলানোর বিষয় নেই... এখন খবর পাই চারপাশে সব সময় গোয়ন্দোরা কড়া নজরে রেখেছে আমাদের, দেশে পাঠানো হচ্ছে সাংবাদিকদের কালো তালিকা।
রীতি মত বেতনভূক্ত জলপাই প্রহরা বসানো হয়েছে বিদেশী মিশনগুলোতে!
নিজের নামে ব্লগিং আদৌ কতদিন করতে পারবো জানিনা...
--------------------------
জল ভরো সুন্দরী কইন্যা, জলে দিছ ঢেউ।
হাসি মুখে কওনা কথা সঙ্গে নাই মোর কেউ।
-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে
সিএসবি কাজ করছিল ভাল; কিন্তু যে কারণে একে বন্ধ করা হয়েছে সেটা মিথ্যা না সত্যি?
সাংবাদিকগুলো না খেয়ে মরে গেলেতো ভালই, ভেজাল থাকলনা...
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
অদ্ভুত আঁধার এক...
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
নতুন মন্তব্য করুন