এক. পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও এর সাবেক গেরিলা দল শান্তিবাহিনীর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মানবেন্দ্র নারায়ন (এমএন) লারমা বলেছিলেন, নেতৃত্বের মৃত্যূ আছে, আদর্শের মৃত্যূ নেই। তীক্ষè দূরদৃষ্টির এই মহান দেশপ্রেমিক নেতার এই কথাটি যে আক্ষরিক অর্থেই কতোটা সত্যি, তা বোঝা যায়, তার মৃত্যূর পরেও জনসংহতি সমিতি তথা শান্তি বাহিনীর আদর্শিক অবস্থানের দৃঢ়তা দেখে।
বাংলাদেশ নামক বাংলা ভাষাভাষীর রাষ্ট্রর জন্মলগ্নেই এমএন লারমা সেই ’৭৩ সালেই বুঝেছিলেন, আঞ্চলিক শায়ত্বশাসন ছাড়া ভাষাগত সংখ্যালঘু পাহাড়ি আদিবাসীর মুক্তি নেই। তাই তিনি স্বতন্ত্র সাংসদ ও জনসংহতি সমিতির আহ্বায়ক হিসেবে সংসদ অধিবেশনে তুলে ধরেছিলেন পাঁচ দফা দাবি নামা। এগুলো হচ্ছে:
... “ক. আমরা গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা সমেত পৃথক অঞ্চল হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রামকে পেতে চাই। খ. আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের অধিকার থাকবে, এ রকম শাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন চাই। গ. আমাদের জাতীয় অস্তিত্ব সংরক্ষিত হবে, এমন শাসন ব্যবস্থা আমরা পেতে চাই। ঘ. আমাদের জমি স্বত্ব Ñ জুম চাষের জমি ও কর্ষণ যোগ্য সমতল জমির স্বত্ব সংরক্ষিত হয়, এমন শাস ব্যবস্থা আমরা পেতে চাই। ঙ. বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চল হতে এসে পার্বত্য চট্টগ্রামে এসে যেনো কেহ বসতি স্থাপন করতে না পারে, তজ্জন্য শাসনতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থার প্রবর্তন চাই।”...
এই সব দাবিনামার স্বপক্ষে এমএন লারমা তাঁর সংসদের ভাষণে বলেছিলেন, “...আমাদের দাবি ন্যায় সঙ্গত দাবি। বছরকে বছরকে ধরে ইহা একটি অবহেলিত শাসিত অঞ্চল ছিলো। এখন আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ পার্বত্য চট্টগ্রামকে পৃথক শাসিত অঞ্চল, অর্থাৎ আঞ্চলিক স্বায়ত্ব শাসিত অঞ্চলে বাস্তবে পেতে চাই।”...
কিন্তু এমএন লারমার দাবি সে সময় চরম অবজ্ঞা করে সরকার।
দুই. এমএন লারমাই বাংলাদেশে প্রথম পাহাড়ি আদিবাসী গোষ্ঠিকে সশস্ত্র করে তাঁদের মুক্তির পথ দেখান। তিনিই প্রথম গেরিলা যুদ্ধকে সঠিকভাবে এ দেশের প্রেক্ষাপটে সূত্রায়ন, নেতৃত্বদান ও পরিচালিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
চরম দেশপ্রেম ও আতœত্যাগ থাকা স্বত্বেও, গেরিলা যুদ্ধের রণনীতি ও রণকৌশলকে ৭০ দশকের চীনাপন্থী বিপ্লবীরা সেই অর্থে সঠিকভাবে সূত্রাবদ্ধ, নেতৃত্বদান ও পরিচালনায় ব্যর্থ হয়েছিলেন। এ সব কারণে সাধারণ জনগণের ক্ষোভকে বিপ্লবী চেতনায় পরিনত করতে না পেরে তারা শেষ পর্যন্ত হয়ে পড়ে ছিলেন জনবিচ্ছিন্ন গোষ্ঠি বিপ্লবীতে।
তিন. লক্ষ্যনীয় সংসদ অধিবেশনে উত্থাপিত এমএন লারমার ওই পাঁচ দফাই আরো পরে সংশোধিত ও পরিমার্জিত আকারে জনসংহতি সমিতির পাঁচ দফায় পরিনত হয়। এই সংশোধিত পাঁচ দফার ভিত্তিতেই এমএন লারমার মৃত্যূর (১০ নভেম্বর, ১৯৮৩) পরেও অনুজ জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমার নেতৃত্বে শান্তিবাহিনী গেরিলা যুদ্ধ অব্যহত রাখে।
একই সঙ্গে শান্তিবাহিনীর মূল দল জনসংহতি সমিতি সরকারের সঙ্গে আলোচনার পথও খোলা রেখেছিলো; যার সূত্রপাত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিলো এমএন লারমার জীবন দশাতেই।
শান্তিবাহিনীর প্রায় দুই দশকের রক্তক্ষয়ী বন্দুক যুদ্ধ আর পাহাড়ি - বাঙালির রক্তের মধ্য দিয়ে অবশেষে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত হয় ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তিচুক্তি। এই শান্তিচুক্তিরও মূল কথা, পাহাড়ে সীমিত আকারে হলেও আঞ্চলিক শাসত্ব শাসন প্রতিষ্ঠা করা। তবে ভূমি সমস্যার সমাধানসহ শান্তিচুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো এখনো বাস্তয়ন না হওয়ায় পাহাড়ি আদিবাসী জীবনের ভাগ্যের তেমন কোনো পরিবর্তনই আসেনি, সেটি অবশ্য ভিন্ন প্রসঙ্গ।
চার. বৃহত্তর বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রবল জোয়ারের বিপরীতে এমএন লারমাই প্রথম জুম্ম (পাহাড়ি) জাতীয়বাদী চেতনায় পাহাড়ের ১৩টি ক্ষুদ্র জাতীস্বত্বাকে সংগঠিত করেছিলেন; যাদের ব্রিটিশ ও পাকিস্তান সরকার তো মানুষই মনে করেনি, ‘উপজাতি’ বানিয়ে রেখেছিলো। আর স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু তো তাদের বাঙালিই হয়ে যেতে বলেছিলেন!
এ কারণে পাহাড়ি নেতা এমএন লারমা সত্যিকার অর্থেই জুম্ম জাতীয়তাবাদের অগ্রদূত।
পাঁচ. পরিশিষ্ট: সংবাদপত্রের খবরে এমএন লারমার জীবন, সংগ্রাম ও মৃত্যূ সংবাদ:
এমএন লারমার মৃত্যূর আটদিন পর তাঁর নিহত হওয়ার খবরটি দৈনিক ইত্তেফাক -- ‘শান্তিবাহিনী’ প্রধান মানবেন্দ্র লারমা নিহত -- এই শিরোনামে ১৯৮৩ সালের ১৮ নভেম্বর প্রথম পৃষ্ঠায় দুই কলামে সংবাদ আকারে প্রকাশ করে।
প্রকাশিত ওই খবরে বলা হয়: বাংলাদেশ জাতীয় পরিষদের প্রাক্তন সদস্য, তথাকথিত শান্তিবাহিনীর প্রধান এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির চেয়ারম্যান মি: মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা নিহত হইয়াছেন।
নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাত দিয়া গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাত্রে আমাদের রাঙ্গামাটি সংবাদদাতা জানান, মি: লারমা গত ১০ই নভেম্বর সীমান্তের অপর পারে ভারতে ইমারা গ্রামে বাগমারা নামক স্থানে শান্তিবাহিনীর কল্যানপুর ক্যাম্পে প্রতিদ্বন্দ্বী শান্তিবাহিনীর ‘প্রীতি’ গ্র“পের সদস্যদের হামলায় নিহত হইয়াছেন।
বিভক্ত শান্তিবাহিনীর মধ্যে মি: মানবেন্দ্র চীনপন্থী ও ঘাতক প্রীতদলের নেতা প্রীতি চাকমা ভারতপন্থী বলিয়া পরিচিত।
মানবেন্দ্র লারমার সহিত তাঁহার বড় ভাইয়ের শ্যালক মনি চাকমা, খাগড়াছড়ি হাই স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক অপর্ণা চরম চাকমা, কল্যানময় চাকমা ও লেফটেনেন্ট রিপনসহ শান্তিবাহিনীর আটজন সদস্য ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান। শান্তিবাহিনীর ছয়-সাতজন কেন্দ্রীয় নেতাও এ হামলায় আহত হয়।
ভারতীয় ভূখণ্ডে অবস্থিত এই ক্যাম্পে শান্তিবাহিনীর কেন্দ্রীয় নেতা সন্তু লারমা, রূপায়ন দেওয়ান, ঊষাতন তালুকদারসহ অন্যান্য নেতার ভাগ্যে কি ঘটিয়াছে, তাহা এখনো জানা যায় নাই। সন্তু লারমাকেই মানবেন্দ্র লারমার পর শীর্ষ নেতা বলিয়া মনে করা হইত।
কল্যাণপুর ক্যাম্প অপারেশনের ঘটনা সম্পর্কে জানা গিয়াছে যে, ক্যাপ্টেন এলিনের নেতৃত্বে প্রীতিগ্র“পের আট-দশজনের একটি সুইসাইডাল স্কোয়াড লারমা গ্র“পের শিবিরে সশস্ত্র অভিযান চালায়। প্রীতি কুমার চাকমা বর্তমানে তাহার দলবল লইয়া পানছড়ি এলাকায় লারমা গ্র“পের সদস্যদের খুঁজিয়া বেড়াইতেছে।
উল্লেখ্য, গত ১০ই নভেম্বর মতিবান পুলিশ ক্যাম্পের এক মাইল পূর্বে প্রীতি গ্র“প লারমার মামার বাড়িতে অবস্থানরত শান্তিবাহিনীর সদস্যদের উপর আক্রম চালায়। উক্ত আক্রমনে অবশ্য কেহ হতাহত হয় নাই।
মি: মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতীয়দের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি নামে একটি সংগঠন গড়িয়া তোলেন। সাবেক সংসদ সদস্য মি: রোয়াজা ছিলেন উক্ত সংগঠনের সভাপতি এবং মি: লারমা ছিলেন সাধারণ সম্পাদক। ইতিপূর্বে পাহাড়ি ছাত্র সমিতির মাধ্যমে মানবেন্দ্র লারমা পার্বত্য চট্টগ্রামের শিক্ষত তরুণদের সংগঠিত করেন।
১৯৭০ এর নির্বাচনে মি: লারমা স্বতন্ত্র প্রার্থী রূপে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিত পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালের সাধারণ নির্বাচনেও মি: লারমা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। গণপরিষদে তিনি একটি খসড়া সংবিধান উপস্থাপন করিয়াছিলেন। লারমা সংসদ সদস্য হিসাবে নিয়মতান্ত্রিক সংগ্রাম পরিচালনাকালে পাহাড়ি ছাত্র সমিতিসহ তরুণদের সহিত তাহার ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়।
১৯৭৪ সালে মি: লারমা জনসংহতি সমিতির একটি সশস্ত্র গ্র“প গঠন করেন, পরে উহা শান্তিবাহিনী রূপে পরিচিতি লাভ করে। ১৯৭৬ সালে শান্তিবাহিনীর মধ্যে বিভক্তি দেখা দেয়। মি: লারমা চীনাপন্থী ও প্রীতি কুমার চাকমা ভারতপন্থী নীতি গ্রহণ করেন। ১৯৮১ সালে শান্তিবাহিনী সম্পূর্ণ রূপে দ্বিধা-বিভক্ত হয়। এই সময় আতœকলহে শান্তিবাহিনীর শতাধিক সদস্য নিহত হয়। ১৯৮১ সালের সেপ্টেম্বরে, ১৯৮২ সালের আগস্টে এবং ১৯৮৩ সালের জুলাই মাসে দুই গ্র“পের মধ্যে বড় ধরণের সংঘর্ষ হয়।
মি: মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা ছাত্রাবস্থা হইতেই বামপন্থী রাজনীতির সহিত জড়িত ছিলেন। তাঁহার পিতার নাম চিত্তকিশোর লারমা। তাঁহাদের আদিবাড়ি ছিলো কোতয়ালী থানার মহাপুরম গ্রামে। কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের ফলে ওই এলাকা প্লাবিত হওয়ায় তাহারা পানছড়ি এলাকায় চলিয়া যান। মি: লারমার স্ত্রীর নাম পঙ্কজিনী লারমা। তাহার দুই পুত্র রহিয়াছে। কিন্তু তাহাদের নাম জানা যায় নাই।
মি: লারমা ১৯৫৮ সালে মেট্রিক পাস করেনএবং ১৯৬০ সালে চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ হইতে আইএ এবং ১৯৬৩ সালে বিএ পাস করেন। এ সময় সরকার বিরোধী কার্যকলাপের দায়ে তাহাকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু নবীন অপরাধী হিসাবে তাহার দণ্ড হৃাস করিয়া নির্দিষ্ট সময়ে থানায় হাজিরা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এ সময় তিনি দীঘিনালা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন এবং পরে বিএড ও এলএলবি পাস করেন।
(লেখাটি একই সঙ্গে পাহাড়ের ছোটকাগজ 'মাওরুম' এ প্রকাশিত। ১০ নভেম্বর এমএন লারমার ২৪ তম মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হচ্ছে সকল শহীদ দেশ প্রেমিক বিপ্লবীকে।।)
মন্তব্য
পুনশ্চ: ক. ১৯৭৪ সালে এমএন লারমা বাকশালে যোগ দেন। তবে এর পর পরই তিনি আত্নগোপনে চলে যান। এর আগে তিনি রাঙামাটি কমিউনিস্ট পার্টিও গঠন করেছিলেন বলে জানি। সিরাজ সিকদারের নেতৃত্বাধীন পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টি পাহাড়ে যে জনযুদ্ধ গড়ে তুলতে চেয়েছিলো, এমএন লারমার তাতে সক্রিয় সমর্থন ছিলো।...
বোধগম্য কারণেই জনসংহতি সমিতির কাগজ পত্রে এই সব তথ্যের কোনো উল্লেখ পাওয়া যায় না।
খ. কিছুদিন আগে এই লেখাটি খসড়া হিসেবে নিজের ব্লগে জমা রাখতে গিয়ে ভুলবশত কয়েক ঘন্টার জন্য প্রথম পাতায় প্রকাশ হয়ে গিয়েছিলো। সেখানে সহব্লগার সুমন চৌধুরী এমএন লারমাকে শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন, লেখাটিকে সর্বোচ্চ রেটিং দিয়েছিলেন।
তো এই লেখাটি সম্পাদনা করে আবারো খসড়ার ঘরে জমা রাখতে গিয়ে তার মন্তব্যটিকে অনেক অনিচ্ছায় ছেঁটে ফেলতে হয়েছে। এ জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত, লজ্জিত।
আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
বিপ্লব রহমান আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই নিপীড়িত জাতিসমূহের আলোর দিশারী এমএন লারমার মৃত্যূবার্ষিকীকে সামনে রেখে এই গুরুত্বপূর্ণ লেখাটির জন্য। আপনি পাহাড়ে ছিলেন অনেকদিন। সেই জায়গা থেকেই আরো কিছু বিষয় জানতে চাচ্ছি- প্রীতি গ্রুপের কি হয়েছিল পরবর্তীতে? এমএন লারমার স্ত্রী-ছেলে-মেয়ের বর্তমান অবস্থা কি? তারা কি দেশে আছেন?
আপনাকেও ধন্যবাদ।
আমি কিন্তু কখনোই পাহাড়ে ছিলাম না। তবে পেশাগত কারণে অনেকদিন ধরে পাহাড়ে যাতায়ত করছি। মাঝে মাঝে বেড়াতেও যাই সেখানে। একাধিকবার দুর্গম পাহাড়ে যাওয়ার সৌভাগ্যও হয়েছে।
প্রীতিগ্রুপের অধিকাংশ সদস্য এরশাদ সরকারের সময়েই অস্ত্র সমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। তাদের দলনেতা প্রীতিকুমার চাকমা এখন ভারতে অবসর জীবন যাপন করছেন। ১৯৯৬ সালে ত্রিপুরার আগরতলায় তার সঙ্গে আমার সাক্ষাত হয়। আমি ছবিসহ তার একটি সাক্ষাতকার নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তিনি কোনো কথাই বলতে রাজি হননি। এমন কি ছবি তুলতেও তার আপত্তি ছিলো।...
এমএন লারমার স্ত্রী পঙ্কজিনী চাকমা এবং ছেলে জয়েস লারমা ও মেয়ে পারমিতা লারমা ভারতেই বসবাস করেন। সে সময় অনার্সের ছাত্র জয়েসের সঙ্গে আমার আগরতলাতেও দেখা হয়েছে। সামান্য কুশল বিনিময় করেছি মাত্র।
আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
ভালো লাগল। নিজের অভিজ্ঞতার কথাও কিছু লিখুন পাহাড় নিয়ে, আগে বোধয় কিছু পড়েছিলাম।
..............................................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!
মানবেন্দ্র লারমাকে শ্রদ্ধা
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
মানবেন্দ্র লারমার স্মৃতিতে শ্রদ্ধা ।
লেখাটা পড়তে গিয়ে একটা প্রাসংগিক ভাবনা জাগলো ।সাধারনভাবে চাকমারা অন্যান্য আদিবাসীদের মতোই রাজানুগত । কিন্তু ৭১ এ তাদের রাজা ত্রিদিব রায় পাকিস্তানের পক্ষে সক্রিয় থাকলেও সাধারন চাকমারা কেনো বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নিলো? কেনো রাজার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধাচরন করে অনেকে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্রধারন করলো?
রাজপরিবারের কেউ না হয়েও মানবেন্দ্র লারমাই কিভাবে আদিবাসীদের নেতা হয়ে উঠলেন? তাদের এই আন্দোলনে রাজপরিবারের ভূমিকা কি?
-----------------------------------------
'প্রিয়তম পাতাগুলো ঝরে যাবে মনে ও রাখবেনা
আমি কে ছিলাম,কি ছিলাম--কেন আমি
সংসারী না হয়ে খুব রাগ করে হয়েছি সন্ন্যাসী
হয়েছি হিরন দাহ,হয়েছি বিজন ব্যথা,হয়েছি আগুন'
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
বিপ্লব! (উভয় অর্থে)
চালায় যান বিপ্লব ভাই - বাংলাদেশের পাহাড়িদের বিষয়ে আরো লেখালেখি সবার পড়া দরকার।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
আবারো সবইকে ধন্যবাদ।
হাসান মোরশেদ,
আপনার প্রশ্নের জবাবে সংক্ষেপে বলছি।
... ১৯৬০ সালের কাপ্তাই জল বিদ্যূত প্রকল্পে লাখ লাখ পাহাড়ি উদ্বাস্তু হলেও এর বিরুদ্ধে রাজ পরিবার কোনো ভূমিকা না রাখায় সেই সময়েই সম্ভবত তারা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। যে কারণে ১৯৭১ সালে চাকমা রাজা ত্রিদিব রায়ের পক্ষে তেমন কোনো অনুসারী ছিলো না। তার বিরুদ্ধাচারণ করেই আদিবাসী পাহাড়িরা সে সময় মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন; মুক্তিবাহিনীকে সক্রিয়ভাবে সাহায্য করেন।
আর পাহাড়ে বরাবরই রাজ পরিবারের ভূমিকা ছিলো শোষকের। আমি এ - ও শুনেছি, রাজ পরিবারগুলো ক্রস করে বাঁশের বেড়া বুনে ঘরবাড়ি বানাতো বলে সাধারণ পাহাড়িদের তেমন করে ঘরবাড়ি বানানোর অনুমতি ছিলো না!
এমএন লারমাই প্রথম পাহাড়ি ছাত্র সমিতি এবং জনসংহতি সমিতি তথা শান্তিবাহিনীর ব্যানারে পাহাড়িদের রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত করেন, তাদের নেতা হয়ে ওঠেন। সে সময় জনসংহতি সমিতির নির্দেশে এর কর্মীরা পাহাড়ে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে গড়ে তোলে অসংখ্য বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। জনসংহতি সমিতির শীর্ষ স্থানীয় নেতারা সবাই ছিলেন স্কুল শিক্ষক। এ কারণেই শান্তিবাহিনীর আন্দোলনকে বলা হয়-- মাস্টার্স রেভ্যূলেশন।
এছাড়া মানবেন্দ্র ও তার অনুজ সন্তু নিজে রাজ পরিবারের 'রায়' , 'তালুকদার', 'দেওয়ান' -- ইত্যাদি পদবীর প্রতিবাদে 'চাকমা' পদবী বাদ দিয়ে 'লারমা' পদবী ব্যবহার শুরু করেন। 'লারমা' (লাল কবুতর) হচ্ছে চাকমাদের একটি গোত্রের নাম।
শান্তিবাহিনীর দীর্ঘ সশস্ত্র সংগ্রামে রাজ পরিবারের কোনো ভূমিকাই ছিলো না। তবে বর্তমান চাকমা রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের সময় জনসংহতি সমিতির পক্ষে আইনগত পরামর্শ দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তার এ পর্যন্ত সমস্ত গবেষণা, লেখালেখিসহ অন্যান্য ক্রিয়াকাণ্ড সাধারণ আদিবাসী পাহাড়িদের পক্ষেই।
পাহাড়ে চাকমা, বোমাং ও মং রাজ পরিবারের এখন তেমন কোনো গুরুত্বই নেই। এটি এখন একটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বিষয় মাত্র।
আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
বিপ্লব ভাই,
গত ৯ তারিখে সচলে একটা লেখা পাঠিয়েছিলাম এমএন লারমাকে নিয়ে। আজকে পর্যন্তও এখানে তা প্রকাশিত হয়নি। গতকাল ঢাকা যাওয়ার আগে সকালে কর্তৃপক্ষকে সন্দেশের মাধ্যমে ম্যাসেজ পাঠালেও তার উত্তর তারা এখনও পর্যন্ত দেয়নি। যাক, আমার লেখাটা সামহোইনে দেয়া হয়েছে।
http://www.somewhereinblog.net/blog/mrhittikablog/28744292 পড়তে পারেন।
জুয়েল বিন জহির
সামহোয়ারিনে লেখাটি পড়লাম। আপনার স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গীর সঙ্গে একমত। ...
এমএন লারমা, লাল সালাম!
আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
নতুন মন্তব্য করুন