প্রায় কৈশরে আব্দুর রব বাউলের গান শুনি কুষ্টিয়ার ছেঁউরিয়ায় লালন সাঁইয়ের মাজারে, 'এ সব দেখি কানার হাট - বাজার।'.. যেমন তার কোকিল কন্ঠ, তেমনি তার দোতারার মূর্ছনা! আর যে অল্প কয়েকজন বাউল সাঁইজির তত্বকথা জানেন, রব বাউল তাদেরই একজন।
তো আমার গোল্ড মেডেলিস্ট ফটো সাংবাদিক বন্ধু সাহাদাত পারভেজ এর ছবির সৌজন্যে আবারো অনেক বছর পর রব বাউলকে যেনো ছুঁয়ে দেখলাম। তবে ছবিটি বিমল দাস বাউলের; যৌবনে রব বাউল বেশভূষায় অনেকটা এরকমই ছিলেন। ...
এখনো বুঝি তার গান ভেসে আসছে, '...এক কানা কয় আরেক কানা রে, চল দেখি যাই ভব পারে, নিজেই কানা পথ চেনে না, অন্যরে করে পারাপার, এ সব দেখি কানার হাট - বাজার'...
তো সেই সময় রব বাউলকে জিজ্ঞেস করি সাঁইজির কথা। উনি বলেন তার মতো করে 'দেখাশুনা' অন্য এক লালন ফকিরের কথা। কুষ্টিয়ার আঞ্চলিক উচ্চারণে রব বাউল বলেন, ' এই কালিগঙ্গা দিয়াই তো সাঁইজি ভাসি আসিলেন। আসি কইলেন, গান হইলো জ্ঞান; গান হইলে জ্ঞান হয়। আর জ্ঞান হইলে দিদার হয়; দিদার হইলে তাকে পাওয়া যায়!'...
আবারো প্রায় শিশুতোষ প্রশ্ন, 'রব ভাই, আপনি কি সাধু? সাধু কে?'
রব বাউলের দোতরার তাল কেটে যায়। ...কানের ভেতর গোঁজা রক্তজবাটিকে হাতের মুঠোয় ধরেন। জাহিদ ভাইয়ের কাছ থেকে ইশারায় এক বিঘতি নকশা করা 'বাঁশিটি' (কল্কে) চেয়ে নেন। জবা ফুলটিতে একটু পানি দিয়ে চেপে ধরেন বাঁশির আগুনে। এক কি দুফোঁটা জবা ফুলের রস নিঙড়ে দম দেন বাঁশির মুখে। ধ্বক করে জ্বলে ওঠে বিনয়ী বাউলের একান্ত সুর।
বলেন, 'দেখাশুনা হইছে যার, তিনিই সাধু। যেমন সাঁইজি; যেমন আমার গুরু মহিম সাঁই(বাঁশিসহ করজোড়ে প্রনাম)। বাকি কথা গানেই বলি?'
আবারো কোকিলকন্ঠীর গান...'সালাতুল, মেরাজুল, মোমিনিনা, জানতে হয় না, সাঁঝের দেনা। বিশ্বাসীলে দেখাশুনা, এই ভবে তে।...সহজ মানুষ ভজে দেখ না রে মন, দিব্য জ্ঞানে।'...
*এই লেখাটির কিছু অংশ আগে প্রকাশিত।
মন্তব্য
'আমি সত্য না হইলে গুরু সত্য কোন কালে'?
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
ছবিটা চমৎকার!
কিছু গানের লিংক দেয়া যায়! @ বিপ্লব রহমান
ছবির কৃতীত্ব সাহাদাত পারভেজের। এই ছবিটি আমাকেও খুব মুগ্ধ করেছে। ...আমার পিসিতে সাউন্ড কার্ড কাজ করছে না। এ জন্য এখনই লিঙ্ক দিতে পারছি না বলে দুঃখিত।...
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
পড়লাম।
আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
লেখাটা পড়ে আরেকটা গানের কথা মনে পড়ে গেলে
'কানায় দেখে আধলায় শোনে/ ল্যাংড়ার নাচনা...
আজ লালন সাঁইয়ের মৃত্যূবার্ষিকী। সাঁইজিকে স্মরণ করে এই লেখাটা কাল রাতে হঠাৎ করেই আবারো লিখলাম।...
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
ভাল্লাগলো পড়ে। ছবিটা সুন্দর খুবই।
-- আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
ঠিক তাই; তিথি আপু একই সঙ্গে ফাজিল এবং বদমাশ।
আর কী যে চমৎকার সব লেখা! তার 'স্মৃতির নৌকা' লেখাটি তো চরম মুগ্ধতা নিয়ে পড়লাম। এই লেখাটি অনায়াসে ছেলেবেলার দ্বিতীয় পর্বে আসতে পারে। তার বাকী লেখাগুলোও পড়ছি।
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
অরূপ'দা আর বিপ্লব'দা মিলে খালি খালি আমারে বকাবকি করতেসে! আমি খেলব না।
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
নতুন মন্তব্য করুন