আজ সকালবেলা হঠাৎ আমার কম্পিউটারে রাখা বিভিন্ন ফোল্ডার ঘাটতে ঘাটতে একটা ফোল্ডারে চোখ আটকে গেলো- a historical post card
বেশ কিছুদিন আগের কথা। আজ থেকে ২/১ বছর আগে মুক্তিযুদ্ধের উপর একটি মাল্টিমিডিয়া তৈরির কথা ভাবছিলাম কয়েকজন বন্ধু মিলে। যদিও কাজটা শেষ পর্যন্ত আর করা হয়নি। সে সময় একবার গিয়েছিলাম ডাকটিকেট সংগ্রাহক এম. এ. সালামের কাছে। দেশ এবং দেশের বাইরেও বেশ কয়েকবার তার সংগৃহীত ডাকটিকেটের প্রদর্শনী হয়েছে। সেদিন এদেশের প্রথম প্রকাশ হওয়া কিছু ডাকটেকেটের পাশাপাশি তিনি এই পোস্টকার্ডের একটি স্ক্যান কপি আমাকে দিয়েছিলেন। অবশ্য আসল পোস্টকার্ড থেকে না, তার এক ডাকটিকেট প্রদর্শনীতে প্রকাশিত স্যুভেনির থেকে । আসল কপিটা তার বাড্ডার বাসায় স্থাপিত ডাকটিকেট জাদুঘরে আছে।
এই চিঠিটি যিনি লিখেছেন তার নাম বি. আর. মোল্লা। তিনি এম. এ. সালামেরই একজন আত্মীয়। বিভিন্ন হাত ঘুরে চিঠিটি এম. এ. সালামের হাতে এসেছে। চিঠিটি লেখা হয়েছে ২৩ শে মার্চ আর পোস্ট করা হয়েছে সম্ভবত ২৬ শে মার্চ। সালটা ঠিক বলতে পারছি না। কারন, চিঠিতে তারিখ যে অংশে লেখা সে অংশটা একটু ছিঁড়ে গেছে। এম. এ. সালাম হয়তো আমায় সালটা বলেছিলেন, এখন মনে নেই। তবে ‘৪’ লেখাটা স্পষ্ট। আর চিঠির বিষয়বস্তু পড়লেই ধরে নেয়া যায় ১৯৪৮/১৯৪৯ সালে লেখা।
চিঠিটি বি. আর. মোল্লা লিখেছিলেন তার মামার কাছে । প্রথমদিকে কিছু পারিবারিক কথা লেখা আছে। চিঠির মূল কথাগুলো উদ্ধারের চেষ্টা করছি (ছবিতে ইংরেজিতে মূল কথাগুলো লেখা রয়েছে। স্ক্যান কপিটি বেশ ভালো নয়। কিছু ভুল হতে পারে সেজন্য ক্ষমাপ্রার্থী)-
‘কিন্তু যা করি তাহা কিছুই ভালো লাগে না, কারন আমরা বাঙ্গালী খোদা তাল্লার কাছ হইতে যে কি আনিয়াছি তাহা বলতে পারি না, কারন মুসলমানের হাত হইতে গেল ইংরেজদের হাতে রাজত্ব শিখিতে হইলো ইংরেজি, আবার জোরে যে বাহু বলে আনিয়া স্বদেশ পাকিস্তান তাও আবার রাষ্ট্রভাষা উর্দু হবে। এখন দেখা যায় আমরা বাঙ্গালী চীর কাল শুধু রাষ্ট্রভাষাই শিখিয়া যাইতে হবে। কিসের সংসার উন্নতি কিসের চাকরি, শুধু আনিয়াছি আমার খোদা তাল্লার নিকট হইতে রাষ্ট্রভাষার কপাল। এই আমাদের কাজ কিন্তু খোদা তাল্লাই বিচার করিবে। তবে আমরা বীরের মতো পাঞ্জাবীর উপর আক্রমন করিতে প্রস্তুত হইতেছি। আপনারাও তৈয়ার হন, একবার তাহাদের সাথে লড়িব, জয় নাহয় পরাজয়।’
মাঝে মাঝে অনেকেই বলতে শুনি, বাঙ্গালী যুদ্ধে গিয়েছিলো হুজুগে। অনেক বয়ষ্ক মানুষও দেখি এই কথাটি বলেন। পায়ের রক্ত মাথায় উঠে যায়। তাৎক্ষনিকভাবে ভালো কোন জবাব মাথায় আসে না। আজ মনে হয় এই জবাবটি পেলাম। পাকিস্তান জন্মের মাত্র ২/৩ বছর পর রাষ্ট্রভাষার জন্য যে ছেলেটা তার মামাকে পাঞ্জাবীদের উপর ঝাপিঁয়ে পড়ার কথা বলে সে দেশের মানুষ প্রায় ২৫ বছর পর হুজুগে যুদ্ধে গেছে? এর উত্তর অবশ্যই ‘না’...বাঙ্গালী জাতি মনে প্রানেই যুদ্ধে গিয়েছিলো...। প্রয়োজনবোধে বারবার যুদ্ধে যাবে, যেখানেই কোন অপপাকিস্তানের ভ্রুণ জন্ম দেয়ার চেষ্টা চলবে...
মন্তব্য
ছবিটা পিসিতে সেভ করে নিয়ে জুম করে দেখলে কিছুটা বোঝা যাবে বোধহয়...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
খুঁজে যাই শেকড়ের সন্ধান…
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ব্যাক্তিগত ব্লগ | আমার ছবিঘর
অবশ্যই নয় ।
মুক্তিযুদ্ধকে 'হুজুগ','অপরিকল্পিত উন্মাদনা','আবেগের বাড়াবাড়ি' এইসব বলার মুল উদ্দেশ্যই হলো মুক্তিযুদ্ধকে খাটো করা ।
এতো বড় একটা ঘটনা হুট করে ঘটেনি । তার জন্য দীর্ঘ প্রস্তুতি ছিল ,তার রাজনৈতিক দর্শন ছিলো এমন কি সামরিক পরিকল্পনা পর্যন্ত ছিলো ।
গনহত্যা শুরু হলো ২৫ মার্চ রাতে । ১৭ এপ্রিল একটা পুর্ন সরকার গঠিত হয়ে গেলো,গঠিত হলো সামরিক বাহিনী, যুদ্ধের নেতৃত্বে এগিয়ে এলেন প্রধান সেনাপতি, ১১টা সেক্টর ভাগ হলো,সেক্টর কমান্ডার রা দায়িত্ব নিলেন-বিশ্বব্যাপী শুরু হলো কুটনৈতিক তৎপরতা । মাত্র তিন সপ্তাহের মাথায় এতো গুছিয়ে এইসব গুরুত্বপুর্ন কাজ গুলো করা গেলো কোন পরিকল্পনা ছাড়াই?
মুক্তিযুদ্ধ অবশ্যই কোন লক্ষ্যহীন গনবিস্ফোরন ছিলোনা ।
----------------------------------------
পাখীটা উড়ে যেতেই চাঁদ উঠে পড়লো-
আজো সেই রক্তমাখা মুন্ডুটাই উঠলো ।।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
অসাধারণ সংগ্রহ, দারুণ পোস্ট! বিপ্রতীপকে ধন্যবাদ, বি.আর. মোল্লাকে সশ্রদ্ধ স্যালুট!
হাঁটুপানির জলদস্যু
হুজুগ, mass hysteria, গণ্ডগোল - কতোরকমই তো শোনা হলো। কিচ্ছু এসে যায় না। আমরা যুদ্ধই করেছিলাম। এবং জয়ী হয়ে ফিরেছি।
আহমদ ছফা একবার একটি দুর্দান্ত কথা বলেছিলেন। তাঁর কথার সারমর্ম, যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেনি বা চায়নি তারা নিজেদের অক্ষমতা ঢাকার কৌশল ও অজুহাত হিসেবে এইসব উদ্ভট তত্ত্ব আবিষ্কার করে।
অসাধারণ একটি ডকুমেন্ট উদ্ধার ও শেয়ার করার জন্যে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। এটি সংগ্রহে রাখছি, যাতে প্রয়োজনে কারো কারো মুখের ওপর ছুঁড়ে দিতে পারি।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
সহমত।
অসাধারণ ডকুমেন্ট ।
শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
আসলেই দূর্দান্ত কথা!!
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
খুঁজে যাই শেকড়ের সন্ধান…
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ব্যাক্তিগত ব্লগ | আমার ছবিঘর
হুজুগে না তো! জামাতী নেতা দু'একদিন আগে মুক্তিযুদ্ধের আসল মোটিভেশন গোমর ফাঁক করে দিয়েছেন -- সুন্দরী ভারতীয় রমণীর সাহচর্য। এত বছর পরে এটাও শুনতে হলো এক সুন্দর বাংলা ভাষী সত্যিকার পি, এইচ,ডি র সরকারের আমলে। গবেষণা বটে। পুরস্কার দেন নি বটে, কিন্তু নিরুৎসাহিতও করেন নি। ফক্রু সাহেবের স্ক্রু ঠিকই আছে জানি, সবই তো ওপরের নির্দেশ। । তাই জামাতীরা আর তার প্রধান দোসর মইনুল আর মতিন যা খুশী বলে পার পেয়ে যান। মতিন অবশ্য ফক্রু সাহেবের আত্মীয়ও বটেন।
"বাঙ্গালী যুদ্ধে গিয়েছিলো হুজুগে" - কোন কুত্তার বাচ্চায় কয় এই কথা?
হাসান মোরশেদ লিখেছেন:
এই অকাট্য সত্যটি যারা অস্বীকার করে, তারা মানুষ-পদবাচ্য নয়।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
জটিল একটা ডকুমেন্ট।
হাসান ভাই আর জুবায়ের ভাইয়ের কমেন্টে বিপ্লব।
ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল
এটা অনেক পুরনো লেখা - হঠাৎ-ই ঘুরতে ঘুরতে চোখে পড়লো আজ। অসাধারণ একটি ডকুমেন্ট বি. আর. মোল্লার এই চিঠি! আর এই লেখাটিও 'priceless'। ব্রাভো, বিপ্রতীপ!
কিছু লোক পাকিদের লাথি-গুতা খেয়ে এখনও তাদের পা-চাটে;আমাদের জাতি হিসাবে আত্নসম্মানবোধ কবে হবে?
নতুন মন্তব্য করুন