শ্রদ্ধেয় শহীদ, তারিখ: ২০ ফেব্রুয়ারী’১৩
আমেরিকাতে ইস্টার্ন টাইমে ২১ শে ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়ার পর ফেসবুকে এই ছবিটা দেখতে পাই:
জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শান্তির বার্তা দিয়েছে, কিন্তু সেখানে আমাদের বাংলা ভাষাতেই শান্তি কথাটা লেখা নেই!
প্রথমেই বলি আমার ব্যক্তিগত প্রাপ্তিটি কি? সেই ক্লাস সেভেনে থাকতে ইন্জিনিয়ারিং ইনিস্টিটিউটে প্রথম “মুক্তির গান” দেখি। আমার কিশোর মনে প্রচন্ড দাগ কেটেছিলো “মুক্তির গান”। বাসায় ফিরে আমি ওই যোদ্ধাদের মত বলতে চেয়েছিলাম, জয় বাংলা। দুর্ভাগ্য আমার, কৈশোর পার হয়ে, যৌবনের শেষ প্রান্তে এসেও আমি দীপ্ত কন্ঠে স্লোগান তুলতে পারিনি। অবশেষে শাহবাগ আমাকে সুযোগ করে দিলো সেই অহংকারি উচ্চারনটির। আমি শাহবাগের কাছে চির-কৃতজ্ঞ।
খবরটা পেলাম দুপুরের দিকে, ফেসবুকে। কসাই কাদেরের যাবজ্জীবন কারাদন্ড হয়েছে। প্রথমে ভাবলাম হয় আমি ভুল দেখছি না হয় যে শেয়ার করেছে সে ভুল করেছে। সাথে সাথে বিডি নিউজে চেক করে দেখলাম কাহিনী আসলেই এইরকম; বিকেলে বা সন্ধ্যার দিকে কসাই হারামজাদার ভি সাইন ওয়ালা ছবি দেখে আরো মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। তখনো শাহবাগের খবর পাইনি আমি। সেদিনই বই মেলায় যাওয়ার কথা ছিলো।
আটটার দিকে সি,এন,জি নিয়ে রওনা দিলাম। বার্ডেম পর্যন্ত এসে দেখি রাস্তা বন্ধ। শ'খানেক মানুষ রাস্তা বন্ধ করে মোমবাতি জ্বালিয়ে বসে আছে। একজন ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলাম, সে বললো কসাই কাদেরের রায়ের প্রতিবাদ চলছে। কি মনে করে আমিও বসে পড়লাম উনাদের সাথে। এখান থেকেই আমার শাহবাগ সংগ্রামের শুরু। তবে এদিন বেশিক্ষণ থাকতে পারলাম না। মা সাড়ে দশটার দিকে ফোন দিয়ে দিয়ে বাসায় ফিরিয়ে আনল। তখনও আমি জানতাম না পরবর্তী ৭২ ঘন্টা হবে আমার জীবনের সবচেয়ে উত্তাল সময়।
এই তো সেদিন ছেলেটা পিচ্চি একটা বাবু ছিল; ধেই ধেই করে বড় হতে হতে আজ কত্ত বড় হয়ে গেছে চোখের সামনে, তবুও আমার কাছে সে বাবুই হয়ে আছে। যেন এক টুকরো সবুজ স্বপ্ন বড় এক পর্বতের শুভ্র শৃঙ্খ হতে চলেছে। আজকাল ছেলেটা কোথায় কখন কী করে, ভবিষ্যতে কী করবে- এইসব স্বপ্ন আর দুঃস্বপ্নের মাঝ দিয়েই ভোর-রাত পার করি। যদি দুই ভাই-বোনের জন্য সুস্থ সুন্দর একটা ভবিষ্যত্ না রেখে যেতে পারি, যদি এরা কষ্ট আর মলিন জীবন-যা
আপনি যদি ভাবেন, এই দাবী আদায়ের জন্য এভাবে ১৪ দিন রাজপথ আকড়ে না পড়ে থাকার দরকার ছিল না, তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন । জামাত শীবিরের রক্তচক্ষু, বহির্বিশ্বের চাপ এবং রাজনৈতিক ফায়দা লাভের অভিসন্ধিতে ভেস্তে যেত আমাদের এই প্রানের দাবী । এই আন্দোলনের মাধ্যমে দেশ, জাতি, রাজনৈতিক দল, সারা বিশ্বকে জোর গলায় জানিয়ে দেয়ার দরকার ছিল এটা সমগ্র জাতির দাবী এবং এই ব্যাপারে কোন আপোষ আমরা মেনে নেব না। আইন পদ্ধতিতেই আমরা এই নরপশুদের ফাসি চাই এবং দিব। ধৈর্যহারা হয়ে অযৌক্তিক ভাবে "দ্রুত ফাসি চাই, এক্ষনি ফাসি চাই " বললে আমাদের নায্য দাবীও সবার কাছে মনে হবে বেআইনী, ক্ষতিগ্রস্থ হবে দেশের আইন ব্যবস্থার সুনাম এবং সর্বোপরি আইনের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা। আইনের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা আছে বলেই, উত্তাল শাহবাগের দোড়গোড়ায় বঙ্গবন্ধু মেডিকেল থেকেও গোলাম আজমের গায়ে একটা ফুলও ( পড়ুন জুতা ) কেউ মারে না। আইনী প্রক্রিয়াতেই আমরা এই ঘাতক দালালদের বিচার করে ঝামা ঘষে দিব ডেভিড বার্গম্যানের মত সুযোগ সন্ধানীদের মুখে যারা " মব জাস্টিস " বলে উড়িয়ে দিতে চায় জনতার এই দাবীকে । তাই বলে কি রাজপথ ছেড়ে দিব ? কখনোই না। প্রশ্নই আসে না। আবার আসুন পেছনে ফিরে তাকাই । ৫২ তে ভাষা, ৭১ এ স্বাধীনতা , ৯০ এ গনতন্ত্র কিছুই কি এত দ্রুত পেয়েছি ? খুব কি সুখকর ছিল সেই দিন গুলো। ? তাহলে এত অল্পতেই কেন আমাদের এই হতাশা ? এত অল্পতেই কেন আমরা ক্লান্ত ?? আরো যে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। বিজয় আসবেই ।
সারাদিনের পরিশ্রমের ফল এই বর্ণানুক্রমিক তালিকা। ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে সরাসরি জড়িত জামায়াতে ইসলামী গত ৪১ বছরে বাংলাদেশে একটি অপ্রতিরোধ্য অর্থনৈতিক সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হযেছে। দলটির এই অর্থনৈতিক মহাদানবটিই এখন আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। জামায়াতে ইসলামীর সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রতিষ্ঠানের তালিকাটি সবার জানার স্বার্থে সংকলন করলাম।
শাহবাগের প্রজন্ম চত্ত্বরে গড়ে ওঠা আন্দোলন আমাদের গোটা জাতিকে একটি ক্রান্তিকালীন পর্যায়ে নিয়ে এসেছে! আজকে সময় এসেছে আত্ম-উপলব্ধির, সময় এসেছে আত্ম-সমালোচনার, সেই সাথে শত্রু মিত্র-কে বোঝার – যা আমাদেরকে ভবিষ্যতের পথনির্দেশনা প্রদান করবে।
দার্শনিক ফুরিয়ের প্রগতির সম্ভাবনায় এতটাই আপ্লুত ছিলেন যে, ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন, মানুষ একদিন স্বীয় ক্ষমতাবলে সমুদ্রকে পরিণত করবে লেবুর শরবতে, যখন পৃথিবীতে হোমারের মত কবি থাকবে তিন কোটি সত্তর লাখ, নিউটনের মত বিজ্ঞানী থাকবে তিন কোটি সত্তর লাখ, মলিয়ের মত নাট্যকার তিন কোটি সত্তর লাখ। ফুরিয়েরের ভবিষ্যতবাণীতে অতিশয়োক্তি রয়েছে, কিন্তু একই সঙ্গে রয়েছে স্বপ্ন, যার দৌলতে প্রগতির পথে পা বাড়াতে পারে চিরকালের
ফাল্গুনের হঠাৎ বৃষ্টিতে কিছুটা বিস্রস্ত শাহবাগ প্রজন্ম চত্তর। ভোর হলেই শুরু হবে পিশাচের ঘোষিত সদম্ভ হরতালের সময়। আগের রাতেই নৃশংসভাবে নিহত হয়েছেন ব্লগার রাজিব। ব্যাক্তিগতভাবে না চিনলেও, রাজাকারের ফাঁসির দাবিতে মাঠে নেমেছিলেন বলেই তাকে যেতে হলো অকালে। শুধু হত্যায় থেমে থাকেনি তারা, অনলাইনে এবং কিছু চিহ্নিত সংবাদমাধ্যমে তার নাস্তিক পরিচয়, তার লেখা ব্লগকে (?) আলোচনায় এনে প্রমাণ করার চেষ্টা চালানো হলো