(আমি মূলত একজন পাঠক। নারী সপ্তাহ উপলক্ষে একটি ছোট্ট গল্প লেখার চেষ্টা করেছি। গল্পের প্রতিটি উপকরণ আমার নিজের জীবন অথবা আমার পরিচিত মানুষদের জীবন থেকে নেওয়া।)
হ্যালো...... এই যে ভাইয়া, শুনছেন?
আমাকে বলছেন?
জী, আপনাকেই বলছি।
বলুন।
এসেছি নিজের কথা বলতে। আমরা মেয়েরা আজীবন বাবার কথা, ভাই বোন, স্বামী সন্তান, সংসারের কথা বলি। নিজের যে দুটা কথা আছে তা আর বলা হয় না... কাওকেই না।
ছোটবেলা থেকেই শুরু করি।
সচলে আমার প্রথম লেখা। হাত কাঁপছে। সাত বছর ধরে সচল পড়ছি। লেখার সাহস করিনি কখনো। কত বড় বড় লেখক এখানে! কিন্তু 'নারী সপ্তাহের' আহবানে আজ আর পাঠক হয়ে বসে থাকতে পারলাম না। বানানে খুব কাঁচা আমি, বিশেষ করে 'র' আর 'ড়'। সময় অভাবে অভিধান দেখে ঠিক করে নিতে পারলাম না বলে দু:খিত। তাই সম্ভব হলে বানান ভুলগুলো ধরিয়ে দিতে তুলিরেখাকে অনুরোধ করব।
একদিন খবর পেলাম ছোট ফুপা মৌলবাদী হয়ে গেছেন। খবরটা শুনে হাসব না কাঁদব বুঝতে পারলাম না। কারণ আমার সেই সুদূর অতীতের কথা মনে পড়ে গেল।
আমার ছোটবেলায় মাসুদ রানা পড়াটা খুব একটা ভালো চোখে দেখা হত না - ইঁচড়ে পাকা বলে মনে করা হত ৷ তবুও লুকিয়ে চুরিয়ে প্রাইমারি স্কুলের গন্ডি পার হওয়ার আগেই পড়া শুরু করলাম ৷ অ্যাকশন, এডভেঞ্চার আর লাস্যময়ী নায়িকা ভরপুর কাজী আনোয়ার হোসেনের এই অসাধারণ সিরিজ নিশ্চয়ই অনেকের মনে দাগ কেটেছে ৷ আরেকটু বড় হয়ে যখন ইংরেজিতে নানা থ্রিলার পড়া শুরু করলাম, তখন আবিস্কার করলাম এ গল্প তো আমার পড়া ! কাজীদা মাসুদ রানার বোতলে ভরে আগেই খাইয়ে দিয়েছেন ৷
উঠল বাই তো মন্দারমনি যাই। যাই ক্যামনে? বাড়ি থেকে সাতশ কিলোমিটার ডিঙিয়ে কোলকাতা। সেখান থেকে দীঘার বাস ধরে চালখোলা বলে একটা গঞ্জ আছে সেখান থেকে নেমে ট্রেকার ধরে মন্দারমনি।
এই কথাগুলো কোনদিন কাউকে বলিনি খুব কাছের দুই একটা বন্ধু ছাড়া। আমার স্বামীও জানেনা। জানলে যে সে খারাপ ভাবে নেবে তাও না। সে যথেষ্ট উদার মনের মানুষ। কিন্তু বলতে পারিনি। যদি কোনদিন একবার রাগের মাথাতেও কিছু বলে ফেলে আমি মরে যাব। আর আমার মনে হয় ছেলেরা আসলে ব্যাপারগুলো বোঝেনা। হয়তো আমি ভুল। কিন্তু সাহস হয়না।
যেহেতু আজ বৃষ্টি হয়নি আর অফিস থেকে বেরুতেও দেরি হয়েছে তাই অনেকটা হালকা চালেই ওঠা সম্ভব হয়েছে বন্ধু পরিবহণে। শাহজাদপুর বাস স্ট্যান্ডের টং দোকান থেকে প্রাণ ডাল ভাজার প্যাকেট কিনে নিয়ে অনেকটা আয়েশি ভঙ্গিতেই বাসে উঠা গেলো। যদিও বাসের ভিতরে দাঁড়িয়ে থাকার ভবিতব্যকে বদলে দেয়ার মতো বড় কোনো অঘটন শহরটাতে ঘটেনি বলে দাঁড়িয়েই থাকতে হলো। তবু যেহেতু বৃষ্টি হয়নি আর ভদ্রস্ত অফিসগুলো আগেই ছুটি হয়ে গেছে তাই এখন পর্যন্ত কেউ পা মাড়িয়ে দেয়নি। এমনকি ভীড়টা এতোটাই সহনীয় যে, আমি ডালভাজার প্যাকেটটা খুলে খাওয়া শুরু করার আশায় একটু পরপর নেড়েচেড়ে দেখছি। মাঝে মাঝে তাকিয়ে দেখছি চারপাশ। সবকিছুকেই ধীর মাধুর্যমণ্ডিত মনে হচ্ছে। এই মনে হওয়া অবশ্য বন্ধু পরিবহণের থেমে থাকার কারণেও হতে পারে। শাহজাদপুর থেকে উঠার পর এটি বেশিদূর আগায়নি। বাসের ড্রাইভার জানালা দিয়ে মুখ বের করে উদাস মনে বসে আছে।
[আমি যে আজ সচলে কিছু একটা লিখতে যাচ্ছি এর কোনো দায়-দায়িত্বই আমার না, সকল দায়-দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নিবেন আয়নামতি এবং ষষ্ঠ পাণ্ডব। ওনাদের সাথে আমার পরিচয় গুডরিডস সূত্রে এবং কিছুদিন ধরে আমি ওনাদের ঝাড়ির উপরে আছি এবং ওনাদের ঝাড়ি খেয়ে আমার বোধোদয় ঘটায় (কারো কারো মতিভ্রম ও মনে হতে পারে) ব্লগে পোস্ট করছি। এটি একটি বুক রিভিউ। যা আমি গুডরিডসে লিখেছিলাম তার সামান্য পরিবর্তিত ভার্সন।]