আমার কড়ে আঙুল ধরে নেভা হাঁটছে আর অবিরাম প্রশ্ন করে যাচ্ছে এটা কি, ওটা কি? আর প্রতিটিই জবাবের পর অবধারিত পরের প্রশ্ন- 'কেন'? মেয়ের কাছে পৃথিবীর সবজান্তা আমি উত্তর দিয়ে যাচ্ছি অবিরাম। 'এটা? এটা হচ্ছে ডাস্টবিন। ময়লা ফেলে।'
'কেন?'
'রাস্তা নোংরা হয়ে যাবেতো তাই সবাই একজায়গায় ফেলে; এটাতে ফেলে।'
১
প্রদীপ বিরক্ত মুখে পঞ্চম কাপ চা হাতে নিয়ে বসে আছে চায়ের দোকানে। সকাল থেকে কিছুই পেটে পড়ে নি। চিনি বেশি দিয়ে চা খেলে ক্ষুধা কমে যায়। কিন্তু খালি পেটে চিনি বেশি দিয়ে পরপর পাঁচ কাপ চা খেলে যে বমি ভাব শুরু হয় তা জানা নেই প্রদীপের। এখন তার বমি পাচ্ছে। প্রানপন চেষ্টা করছে বমি আটকানোর। সে বমি বিষয়ক চিন্তা ভাবনা বাদ দেয়ার চেষ্টা করলো। অন্য দিকে মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করছে প্রদীপ। উজ্জ্বল আসলে চায়ের দাম তো দেবেই সাথে কিছু টাকাও দেবে।
-স্যার, দেখেনতো আমাকে কেমন লাগছে?
তিথির কথা শুনে আমি মুখ তুলে তাকাই। তিথি (আমি হুমায়ূন পাগলা মানুষ। উনার লেখা আমি গিলি। পড়িনা। তাই ছাত্রীর আসল নাম উহ্য রেখে নাম দিলাম ‘তিথি’) আমার ছাত্রী। আজকে শুক্রবার তাই জুম্মার নামাজ পড়ে পাঞ্জাবী আর খুলি নাই। দু’টো ভাত মুখে দিয়েই চলে এসেছি পড়াতে। আমাকে দেখেই তিথির মুচকি হাসি।
- স্যার আপনি বসেন। আমি আসছি। দশ মিনিট।
শেষ বিকেলে বসে ছিলাম ক্যাম্পাসের মুক্তমঞ্চের সিঁড়িতে । লাল রঙের সূর্যটা মুক্তমঞ্চের পিছনের আকাশমণি গাছের পাতার আড়ালে অদৃশ্য হচ্ছিল ক্রমশ ।
হু হু করে বাতাস হচ্ছে সেই দুপুর থেকে । অদূরের ঝোপঝাড়ের আড়াল থেকে আসা গাঁজার গন্ধ, ঝালমুড়ি বিক্রেতার ঝালমুড়ির গন্ধ আর মহুয়া ফুলের গন্ধ
মিলে কেমন যেন মাতাল মাতাল আমেজ ।
কিচ্ছু বদলায়নি এই ক’বছরে ।
কবি বলেছিলেন -
তোমার পতাকা যারে দাও
তারে বহিবার দাও শক্তি।
বাংলা ভাষাতে একটি বহুল আলোচিত উক্তি হলো কাচায় না নোয়ালে বাঁশ পাকলে করে টাশ্ টাশ্। এর মানেটা হলো ছোট বেলা থেকেই যদি শিক্ষাটা সঠিকভাবে না দেয়া হয় তাহলে বুড়ো বয়সে যাই করেন তাতে কাজ হবেনা। আমরা ইদানিং অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। এগুলো সামনে আসছে আর আমরা সোচ্চার হচ্ছি। প্রতিবাদের ভাষাতে সেগুলো রুখে দিচ্ছি কিন্তু আসলেই কতটা উপকার এতে হচ্ছে?
গ্রীষ্মকালে আমায় যখন কেউ প্রশ্ন করে, পাহাড়ে ক্যান যাস? জবাবে হাসিমুখে ভারিক্কি চালে বলে দিই “আমাকে জিজ্ঞেস করলে এই প্রশ্নের উত্তর কোনদিনই পাবিনা”। উক্তিটা আমার না, বিশ্বখ্যাত মার্কিন পর্বতারোহী এডমুণ্ড ভিশ্চাসের। শীতকালে পাবলিক যখন মুচকি হেসে শুধায় “কিরে ঘরে বসে আছিস ক্যান, পাহাড়ে উঠবি না?” তখন মুখ লুকিয়ে বলতে হয় মা’র পিটুনি আর বউর বকুনির ভয় ছাড়াও স্বীকার করতে হবে ওই তুষারআবৃত শৃঙ্গ জয়ের সাহস আমার নেই। এই বয়সে পিছলে পড়ে হাড়গোড় ভাঙার হুটকো ঝামেলায় নিজেকে জড়াতে চাইনা।
কুত্তারে যে ভদ্রসমাজে কুকুর নামে ডাকা হয় সেটা হয়ত সবুজবাগ মহল্লার লোকজন ভুলে গিয়েছিলো অথবা কুত্তাকে তারা কখনো কুকুর নামে ডাকার প্রয়োজনীয়তা বোধ করে নাই। কিন্তু যখন সবুজবাগ মহল্লায় একটা মালিক বিহীন পা-ভাঙ্গা বিলাতি কুত্তার আবির্ভাব হয় তখন ওই কুত্তাকে "বিলাতি কুত্তা" কইতে তাদের সংকোচ লাগে। আবার "বিদেশি কুকুর" শব্দদ্বয়েও তারা ঠিক স্বাছন্দ বোধ করেনা। তখন তারে তারা টমি নামে ডাকা শুরু করে। টমি কেন?
১
"এখনও বিবর্ণ স্বপ্ন আমার, নীরবে এঁকে যায় ধূসর রঙে আমায়। শূন্যতায়।
বাস্তবতার নিয়মে মন, সবই যেন শূন্যতা এখন। হঠাৎ আমি হারিয়ে আজ, সত্ত্বার বিপরীতে বসবাস। শূন্যতায়। "
মাথা নিচু করে হাঁটতে থাকা নাহার ভেবে পায়না কোন্দিকে যাবে। অফিস থেকে বেরিয়ে বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত চলে গিয়েছিলো পুরোনো অভ্যাস বসত। গত ন'মাস সে এই একই রুটে চলেছে। বাসের কিছু নিয়মিত হ্যালপার পরিচিত
হয়ে গিয়েছিলো। ওদেরই একজনের তাগাদায় হুস হয়। সেই শুরু উদ্দেশ্যহীন হাটা। উদ্দেশ্যহীন ঠিক না, বলা যেতে