১৯৭১-র ডিসেম্বরে আল–বদর হেডকোয়ার্টারে পাওয়া গিয়েছিল এক বস্তা চোখ।
অমানুষিক, জান্তব, নির্মম, নৃশংস এই তথ্য আমায় তাড়া করে আজীবন। পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও আল-বদরদের নির্যাতনের যতটুকু প্রমাণ আমরা পেয়েছি তাতে বোঝা যায় এই চোখগুলো তুলে নেওয়া হয়েছিল জ্যান্ত মানুষের মুখমণ্ডল থেকেই।
কী দেখেছিল সেই চোখেরা শেষ মুহূর্তে?
চে আর্নেস্তো গ্যেভারার শাণিত চোখে প্রথমবারের মত আমার চোখ পড়ে সেগুলো তখন নিস্প্রভ হয়ে গেছে, কারণ আমি তাঁর মৃতদেহের ছবি দেখছিলাম। তাঁর চোখ দুটি চেয়ে আছে, সেই দৃষ্টি এক গোলার্ধ থেকে ছুটে আসে অন্য গোলার্ধে, বাংলার খবরের কাগজে ছাপা হওয়া সেই ছবি দেখে মনে হয়েছিল যীশুর মত টলটলে চোখ নিয়ে অভিমান ভরা দৃষ্টি ছুঁড়ে দিচ্ছে কেউ, এটি জীবন্ত চোখ সে মৃত্যু এত দশক পরেও তাড়া করে তাঁর সেই মৃত অভিমান।
হতশ্রী এক রাক্ষুসে পোকা যে কিনা ভেসে ভেসে জলার কোণে কোণে খুঁজে ফিরত ব্যাঙ্গাচি বা দুর্বল ছোট মাছ, তাঁর হঠাৎ যেন শখ হল জল ছেড়ে ডাঙ্গায় উঠবার। সেই অভিযানের লোভেই অনেক কষ্টে সৃষ্টে প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে সে জলার যে কোন গাছ, বিশেষ করে ঘাসজাতীয়গুলোর প্রান্ত বেয়ে , কখনো বা ডাঙ্গায় ঘষতে ঘষতে চলত সে অন্তকালের মত। জলে সাবলীল সাঁতরে বেড়ালেও তার বাহিরে পোকাটির অবস্থান বড়ই করুণ, কুৎসিত শুককীটের মত শরীরের মাঝখানে
স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শে রবীন্দ্রনাথ ১৯১২ সালে শিলাইদহ কুঠিবাড়ীতে অবস্থান করেছিলেন দীর্ঘ সময়ের জন্য। কষ্টকর চিন্তাসাধ্য লেখালেখির উপরে নিষেধাজ্ঞা থাকায় তিনি তখন নিজের কিছু কবিতা ইংরেজিতে অনুবাদ করেছিলেন। মূলত ১০টি ভিন্ন ভিন্ন কাব্যগ্রন্থ থেকে কবিতাগুলো নেওয়া হলেও এর অর্ধেকই ছিল গীতাঞ্জলির।
এক সময়ের প্রেমিকা পোলিনকা খানতেভা ছিল রাশান স্তেপের মেয়ে, একেবারে দীঘল ঘাসের বনের ধারে রূপকথার শৈশব কাটানো মানুষ। স্তেপ বলতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে মাইলের পর মাইল দিগন্তের ওপার পর্যন্ত চলে যাওয়া তৃণভূমি, যার মধ্যে দিয়ে হেঁটে চলেছে কিশোর ম্যাক্সিম গোর্কি। আবার অন্য মহাদেশের তৃণভূমি শুনলেই যেমন প্রেইরির ছোট্ট মেয়ে লরা ইঙ্গলসের কাঠের কুটির, পাম্পাসের ঘোড়সওয়ার গাউচো, সাভানার মাসাই এলমোরান, আর হাঙ্গের
গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের (গ্যাবো) বাবাকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনি কোনো সময় উপন্যাস লিখতে চান নি? উনি নাকি একটি বিষয় নিয়ে যাও বা লিখতে চেয়েছিলেন, বেশ চিন্তা-ভাবনা করেছিলেন, এক সন্ধ্যায় গ্যাবো ফোন করে একটা শব্দের ব্যাপারে জানতে চাইলেন তিনি বুঝে যান যে গ্যাবো নিজেই সেই ঘটনা নিয়ে লিখতে আরম্ভ করেছে, তাই আর উপন্যাস রচনায় মনোনিবেশ করেন নি।