মঁ ব্লা, আল্পস্ পর্বতমালা আর ইউরোপের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ (ইউরোপে মঁ ব্লার সাথে সাথে অনেকে জর্জিয়ার এলবুর্জকেও সর্বোচ্চ ধরে থাকে), পৃথিবীতে যেখানে ফি বছর সবচেয়ে বেশী অভিযান চলে, খ্যাতির বিচারে মাউন্ট এভারেস্টের পরপরই যার অবস্থান সেই হল ফ্রান্সের আল্পসে অবস্থিত মাউন্ট ব্ল্যাঙ্ক, যাকে ফরাসীরা নাম দিয়েছে মঁ ব্লা অর্থাৎ শ্বেত ললনা !
সপ্তম শ্রেণীতে পড়ি তখন, নতুন নতুন বই পড়ার প্রবল নেশা সারাক্ষন আচ্ছন্ন করে রাখে, নতুন কিছুকে জানার, নতুন কিছুকে চেনার জন্য কচি মন সর্বদাই আঁকুপাঁকু করে। বাড়ীতে রাখা হত দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পত্রিকা দৈনিক ইত্তেফাক, তার শুক্রবারের সংখ্যাটি ছিল বড়ই আকর্ষণীয়, নানা রঙ্গিন ছবির সাথে দেশ-বিদেশের জ্ঞান-বিজ্ঞানের চিত্র-বিচিত্র নানা খবরের ভাণ্ড।
দিগন্ত ছোঁয়া পাহাড় সারি, পর্বতমালাও বলা যায়- কিছু কিছু পাহাড় চূড়া যে ২০০০ মিটারেরও বেশী উঁচু!
নিকষ কালো আদিম গুহা, পরতে পরতে রহস্য, ইতিহাসের সুলুক সন্ধান, কোন পাথরের স্তরের নিচে কি আছে জানার কোন উপায় নেই, সাঁঝের আঁধারে ডানা মেলে গুহার আশ্রয় থেকে বাহির হয় বাদুড়ের ঝাক, প্রবেশের বিশালাকার মূল প্রবেশ পথটি দেখলে মনে হয় ডাইনোসরদের আস্তানা। হয়ত হবেও বা ! গুহাটি যে ২০ মিলিয়ন বছরের পুরনো!
১২৮৪ সাল। মধ্যযুগের জার্মানির ছায়া ঘেরা, পাখি ডাকা, শান্তিময় ক্ষুদে এক পাহাড়ি শহর হ্যামিলনে দেখা দিল আচমকা মহা উপদ্রব- ইদুর! হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ সুবিশাল ইদুরের পাল, তাদের অত্যাচারে বেড়াল তো বেড়াল, মানুষের অস্তিত্ব টেকানোই দায় হয়ে পড়ল সেই পাহাড় ঘেরা উপত্যকায়। অবশেষে রূপকথার গল্পের মত দেখা দিলেন মহান ত্রাতা, নানা বর্ণের ডোরাকাটা রঙচঙে নকশাদার পোশাক পরা এক বাঁশিওয়ালা। নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে সে আশ্বাস দিল বিনাশ করে ছাড়বে ইদুরের দলকে।
প্রতিশ্রুতি মোতাবেক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে ঝোলা থেকে এক অদ্ভুত বাঁশি বের করে অদ্ভুততর সুর সৃষ্টি করে চলল অবিরত, সেই মোহনীয় সুরেই মাতোয়ারা হয়ে দিকবিদিক ভুলে ইদুরের দল শুরু করল তার পিছু চলা। এক পর্যায়ে খরস্রোতা ভাইজার নদীর কিনারে এসে চতুর বাঁশিওয়ালার চালে সমস্ত ইদুরের পাল লাফিয়ে পড়তে লাগল সেই বহমান হিমশীতল জলে, খড়কুটোর মত ভেসে গেল তারা দূর কোন অঞ্চলে অথবা খরস্রোতা অথৈ জলের নিচে ঘটল সলিল সমাধি। হামিলন হল ইদুর মুক্ত।
প্রাইমারী স্কুলে পড়ার সময় পৃথিবীর দুর্গম সব স্থানে দুঃসাহসী অভিযাত্রীদের সাড়া জাগানো ভ্রমণকাহিনী নিয়ে সংকলিত মনমুগ্ধকর এক বই আমাদের পারিবারিক পাঠাগারে স্থান পায়, এতদিন পড়ে সেই চমৎকার বইটির নাম আর খেয়াল নেই, কিন্তু প্রথম অধ্যায়টির নাম মনে হলে এখনো মনের অজান্তেই শিহরণ বোধ করি ‘দুধের মত দেশের খোঁজে’। গ্রীনল্যান্ড আর তার উত্তরে হাজার হাজার মাইল বিস্তৃত দুধ সাদা প্রান্তর নিয়ে মনকাড়া বর্ণনা, আর সেই বিস্তীর্ণ প্রান্তরের কেন্দ্রবিন্দুতে আছে চির রহস্যে মোড়া, শত শত বছর ধরে অ্যাডভেঞ্চারপিপাসুদের আকর্ষণ ভৌগোলিক উত্তর মেরু। সেই প্রথম সুমেরু, আর্কটিক তুন্দ্রা, সেখানকার প্রাণিজগৎ আর অধিবাসীদের সাথে পরিচয়।
খানিক আগেই এবড়ো-থেবড়ো লাল ধুলোর রাস্তা ছেড়ে মসৃণ কালো পীচ ঢালা পথে উঠেছি, প্রচণ্ড রৌদ্রে সহযাত্রীরা সবাই অস্থির হয়ে উঠলেও ভাল রাস্তার কারণে বাহনের গতি খানিকটা বৃদ্ধি পাওয়ায় সবাই খুশী, এমন সময় বলা নেই- কওয়া নেই বেমাক্কা ধা করে এক সজোর ব্রেক চেপে দাড়িয়ে পড়ল আমাদের চার চাকার গাড়ী! ঘটনা কি ?
ভোররাতের মৃদু নরম আলোর বন্যায় ভাসছে ভূমধ্যসাগর, অদূরেই চিক চিক করে জানান দিচ্ছে এর সুবিশাল অস্তিত্ব, এর কোলে গড়ে ওঠা সুপ্রাচীন এথেন্স নগরীর বুকে দাড়িয়ে আমি বঙ্গসন্তান অপেক্ষা করছি সূর্যদেবতা অ্যাপোলোর ঘোড়ায় টানা রথে করে অগ্নিপিণ্ড সূর্যগোলকের আবির্ভাবের। এথেন্স, আধুনিক সভ্যতার জন্মক্ষেত্র, ইতিহাস এখানকার আকাশে-বাতাসে, প্রতি কোণে কোণে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের সূতিকাগার, কলার উম্মেষ, দর্শনের আবির্ভাব