[justify]কামরায় আলো নেই, দূর কোনে তখন-ও একটা পিদিম জ্বেলে চানাচুর বিক্রি করে মানুষ, পিদিমের আলো ট্রেনের দুলুনির সাথে নিরাভরণ একটা ছায়া রেখে দুলে যায়; সেই ম্লান আলোতে গাদাগাদি করে বসে থাকা, দাঁড়িয়ে থাকা দেহাতী মানুষের ছায়া পড়ে। পূর্ণিমা রাত, আমি আর আমার সমবয়সী খালাত ভাই বসে আছি দরোজার পাদানি’তে কাগজ বিছিয়ে। প্রায়ান্ধকার একটা লোকাল ট্রেনের ভুতুম ছায়া চরাচর গ্রাস করা জোছনার সাথে হেলে-দুলে চলতে থাকে-
গান ছাড়া এই জীবন অচল সব প্রহরে। সেই ছেলেবেলা কোথায় কবে শব্দের আবাহনে সুর-তাল-লয়-ছন্দ সমস্বরে এসে জীবনটাকে এইভাবে বেধে ফেলেছে জানা নেই, জানা নেই গান বিচ্যুত সময়গুলো’তে আসলে কতটা ভাল থাকি, কিন্তু এতোটুকু বুঝি গান ছাড়া এই জীবন অচল যখন-তখন!
[justify]নানু’র শরীর খারাপ, দেখতে যাওয়া দরকার কিন্তু আমার কারণে যাওয়া আটকে গেছে। আমার অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়েছে, ভাইবা যেদিন শেষ সেদিন সবাই মিলে রওনা হবো সিদ্ধান্ত নেয়া হল, সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমরা সবাই একত্রিত হবো টুটুল ভাইয়ার বাসায়। আমরা মানে আমরা তিন মামাতো-খালাতো ভাই আর দুই ভাগ্নে -- দলনেতা টুটুল ভাইয়ার নেতৃত্বে তখন আমাদের কাজ হচ্ছে বই পড়া, মুভি দেখা, গান শোনা, গান গাওয়া আর হুট-হাট যে
যে শহীদ তুমি স্থিত, যে শহীদ তুমি সংহত,
যে শহীদ তুমি মুক্তির মিছিলে আজও প্রেরণা-
এত জল তবু গাঙেয়, এ পাললিক তুমি শ্রয়,
হে শহীদ তুমি আপামর আলোয় আলোর দ্যোতনা --
এসো কাঙ্ক্ষিত, এসো অবারিত, এসো আগুন এসো প্রাণ পললে...
ও মাটি’র শুধু মূর্ছনা, যত ত্যাগ তত বন্দনা,
ও মাটি তুমি জননী জন্মভূমি এতো আকুলতা-
যে আঁচল ধরে ধমনী, যে মাতা শুধু গরবিনী
যে সবুজ ধরে এতো অহং এতদূর বারতা --
‘ওই দেখ না
ছন্দ-মিলের আনাগোনা-
পথের উপর নাচল কি-হে একটা চড়াই?’
“চড়ুই কোথা, একটা ময়ূর, রূপের বড়াই,
টিপ দিয়েছে টিয়ে!”
‘বল কী এ!’
“বাউণ্ডুলে ফিঙেটাকে-ও যাচ্ছে দেখা
একলাটি সে একলা একা
যাচ্ছে হেঁটে, খঞ্জনা তার পিছু পিছু--”
‘বল কী হে- এতকিছু!’
“বলছি শোনো তবে-
খুব তাকালে দেখতে পাবে
ঘুঙুর বেঁধে নাচছে ভীষণ মুনিয়া’টি;
দাঁত দু’পাটি
খুলে রেখে নাইতে গেছেন হাঁড়িচাচা,
[justify]ওহোহ-হোওওওওও! বাড়ী’র কাছ থেকে হালিম ভাইয়ের চিৎকার ভেসে আসে, সাথে একটা ছয়-ব্যাটারি’র টর্চ তিনবার জ্বলে আবার নিভে যায়। আমরা (আমার বন্ধু নরজুল দ্রষ্টব্য) সবাই বসে আছি স্কুল ঘরের বারান্দায়, সেখান থেকে সমস্বরে আমরা-ও চিৎকার দেই- ওহোহ-হোওওওও!
[justify]একটা বৈদ্যুতিক প্রবাহ বয়ে গেল যেন! বিয়ে, আবার দুই দুইটা বিয়ে একসাথে, একই বাড়ীতে! অস্থির খুশী’তে কি করবো বুঝতে না পেরে আমি আর আমার ছোট বোন একদম বোবা হয়ে গেলাম!
নিরল ভোরের কাছে রাত যেতে বাকি --
প্রতিটি রাতের শেষে সন্ধ্যারা জানে নাকি-
প্রহরের সব গান শিশির হৃদয়!
দূরে নই দূরাগত- তবু মনে হয়,
এ-শুধু দ্বন্দ্বের নামে ধুপছায়া দামী --
দোয়াতের চেনা খামে নিখুঁত প্রণামী;
ফেরানো না-ফেরা মুখে যতটা বিষাদ --
তার বেশি নীরবতা -- দূরত্বের সাধ!
একা নয় কেউ যারা তারাও একাকী!
দূরে -- তারপর একা হলে একা থাকি;
মানুষে নৈকট্য মোহ সদালাপী তাই --
এবং দেয়ালের একপাশ সংক্ষেপে গৃহী হলেও মোড়কে উৎপন্ন সফল সুখে’র দায়ভার পার্শ্ববর্তী দেয়ালের কানে কেবল-ই মন্ত্রণা দেয় পরবাসী... হে বিভেদ, হে দ্বন্দ্ব কিংবা ইতর লোভের জলে ঢিল ছোঁড়া হৃত হাত -- জলে বাড়ে জলধি যদি, কর্মে কার্পণ্য বাড়ায় স্তুতি আর যতি-হীন অপলাপ...
এবং আমার ইচ্ছে-সুখের খুব অনাবিল সলতে শিখায় রং মেশে তাই টাপুরটুপুর
যায় ঝরে যায় বিহ্বলতা -- দূরাগত প্রজাপতি তোমার রঙে রাঙায় দুপুর
এক সনাতন ছন্দ ভীষণ, নাম যেন-কি গেছি ভুলে!
নাম ভুলানো ছড়া তোমার জড়িয়ে গেছে একজীবনের সকল সুখে,
একজীবনের সকল রাতে ঘুমপাড়ানো মাসি-পিসীর সরল চোখে
ঘুমের ঘোরে জেনে যাওয়া জীবন মানে কৌতূহলে
কাটিয়ে দেয়া আধেক জীবন -- জীবন তোমার নাম দিয়েছি দ্রোহ!